নষ্ট_গলি
পর্ব- ১৯
লেখা: মিম
.
ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া আর সালমান। ফোনে কথা বলছে সোহান। কলিংবেল বেজে উঠলো বাসার। সোফা ছেড়ে উঠে এসে গেইট খুলে দিলো মায়া। একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড রকমে বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে। চুল আউল-ঝাউল হয়ে আছে। চোখ নাক ফুলে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। মেয়েটাকে চিনে না মায়া। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাও ওকে দেখছে। একদম পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটেখুটে দেখছে মায়াকে মেয়েটা। কয়েক সেকেন্ড বাদে মুখ খুললো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা।
– তুমিই কি মায়া?
– হ্যাঁ।
– সরো এখান থেকে। আমি ভিতরে যাবো।
– কেনো সরবো? কে আপনি?
মায়ার প্রশ্ন শুনে সোফা ছেড়ে উঠে আসলো সালমান। আলিশা দাঁড়িয়ে আছে গেইটের বাহিরে। এতরাতে আলিশাকে দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত সালমান। এই মেয়ে যখনই আসে কোনে না কোনো ঝামেলা বাঁধায়৷ আজও নির্ঘাৎ ঝামেলা করবে। তারউপর চোখ মুখ ফুলে আছে। তারমানে বাসা থেকে ঝগড়া করে এখানে এসেছে।
– তুমি এখানে কেনো?
– তোমার ভাই কোথায়?
-,ভাই কোথায় সেটা বলা জরুরি না। জরুরি হচ্ছে তুমি এতরাতে এখানে কেনো সেটা জানা। কেনো এসেছো?
– সোহানকে ভীষন প্রয়োজন।
– ভাইয়া বাসায় নেই। যাও এখান থেকে।
– আমি জানি ও ঘরেই আছে৷ প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দাও
– সালমান, ইনি কি আলিশা?
– হ্যাঁ। তুমি জানো ওর কথা?
– হুম জানি। তোমার ভাই বলেছিলো। উনার সাথে এতরাতে কি কাজ আপনার?
– সেটা তো তোমার জানার প্রয়োজন নেই। যার কথা আমি তার সাথেই বলবো।
– উনি আর আমি আলাদা না৷ উনাকে বলা যে কথা আমাকে বলা একই কথা। আপনি আমাকে বলতে পারেন।
– তোমাকে কেনো বলবো?
– না বলতে পারলে চলে যান।
– এটা সোহানের বাসা। ওর বাসায় কে আসবে কে যাবে সেটার ডিসিশন ও নিবে। তুমি না।
পিছন থেকে এসে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো সোহান। আলিশাকে ভালোভাবে দেখছে সে।
– এটা মায়ার বাসা। আমার না। যেদিন বিয়ে করেছি সেদিন থেকে এই ঘর সংসার ওর নামে করে দিয়েছি। এই ঘরে কে আসবে কে যাবে সেসব ডিসিশন আামার বউ নিবে। আমার বউ। বুঝতে পারছো কথাটা? আমার গার্লফ্রেন্ড না, ও আমার বউ।
– তাহলে আমি কে?
– তুমি রুপমের বউ।
– রুপম যে আমাকে তোমার জন্য ঘর থেকে বের করে দিলো?
– আমার জন্য? কেনো? আমি কি করেছি?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি সেসব তুমি রুপমকে বলেছো। ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আব্বুও বাসায় যেতে নিষেধ করেছে। তোমাকে ভালেবেসেই তো ঘর ছাড়তে হয়েছে আমাকে। এখন তোমার ঘর ছাড়া আমি কোথায় যেয়ে উঠবো?
– আমার তো কোনো ঘর নেই। চিটাগাং যেটা আছে সেটা বাবার। এখানে যেটা আছে সেটা আমার বউয়ের। ও যদি তোমাকে ঘরে থাকতে দেয় তাহলে থাকতে পারো আমার কোনো আপত্তি নেই। কি গো? থাকতে দিবে ওকে এখানে?
– একদম না। আলিশা আপুকে বর্তমানে আমার কাছে কুমীর মনে হচ্ছে। খাল কেটে কুমীর ঢুকানোর মতো বোকা আমি না। যদি উনি হাজবেন্ড বাচ্চাসহ আমার বাসায় আসে তাহলে অবশ্যই মেহমানদারী করবো। দেখেন আপু ভালো ঘরের মেয়েরা এতরাতে হাজবেন্ডের ঘর ফেলে সাবেক প্রেমিকের বাসায় এসে উঠে না। সোহান যদি সিঙ্গেল থাকতো তাহলে নাহয় অন্য কথা ভাবতাম। কিন্তু সোহান তো আার একা নেই। উনার সাথে আমি আছি। আপনার এখানে এতরাতে আসাটা খুবই দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। আর রুপম ভাই আমার হাজবেন্ডের জন্য আপনাকে ঘর থেকে বের করেনি। আপনার দোষেই আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে৷ বিয়ের পর কোনো বউ তার হাজবেন্ডকে ফেলে পুরোনো প্রেমিকের পিছনে ছুটবে এটা কোনে পুরুষই মেনে নিবে না। বাসায় যান। রুপম ভাইকে সরি বলেন। নিজের সংসারকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন।
– সংসার সোহানের সাথে করার কথা ছিলো। রুপমের সাথে না।
– তাহলে করলেন না কেনো সোহানের সাথে সংসার? রুপম ভাইয়ের সাথে সংসার করছেন কেনো?
– শোনে মেয়ে, তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে৷ সরো তো এখান থেকে। সোহানের সাথে কথা বলতে দাও।
– আপনাকে আমার আরো বেশি অসহ্য লাগছে। আসলে আমি এত ছ্যাচড়া মেয়ে মানুষ দেখে অভ্যস্ত নই তো তাই। তবু হজম করছি। মাথা যথেষ্ঠ ঠান্ডা রেখে কথা বলছি। মনে হয় বেশিক্ষণ ঠান্ডা রাখতে পারবো না। আপনি এখান থেকে চলে গেলেই বোধহয় আপনার জন্য ভালে হবে। আর নয়তো কখন আবার কি করে বসি!
– সোহান তোমার ওয়াইফ আমার সাথে মিসবিহেভ করছে।
– হ্যা করছে। এটা ওর বাসা। ওর বাসায় ও যা খুশি করতে পারে। আমি বলার কে?
– তুমি কি গাধা হয়ে যাচ্ছো? তোমার তেজ কোথায় গেছে? আগে তোমার উপর কোনো কথা বলতে পারতাম না। এখন তোমার বউ বলে কিভাবে?
– তোমার প্রশ্নের মাঝেই উত্তর আছে। বউ… তুমি ছিলে প্রেমিকা। আর মায়া হচ্ছে বউ। যে অধিকারটা প্রেমিকাকে দেয়া যায় না সেটা বউকে দিতে হয় না। বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে অধিকারটা তার হয়ে যায়। পার্থক্যটা বুঝতে পারছো? অযথা নিজের সাথে মায়াকে কম্পেয়ার করো না। আমার জীবনে মায়া আর তোমার অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা।
আলিশা এগিয়ে এসে সোহানের হাত ধরে কিছু একটা বলতে এগিয়ে আসছিলো। বাঁধ সাধলো মায়া। সোহানের দিকে আলিশার এগিয়ে যাওয়া হাতটা ধরে ফেললো মায়া।
– আপনি বেডরুমে যান। আমি আলিশা আপুর সাথে কথা বলে আসছি।
সোহান নিজের রুমে চলে গেলো। রুপমকে ফোন করেছে সে। আলিশার দিকে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়া। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে মায়ার।
– আমি প্রচন্ড রকমের হিংসুটে স্বভাবের। অন্য মেয়ে আমার হাজবেন্ডের দিকে তাকালে আমার সহ্য হয় না। আর সেখানে আপনি রাত বিরাতে মেসেজ, ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন। বাসায় এসে হাজির হয়েছেন। আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও উনার হাত ধরতে চাচ্ছেন। আপনি কি আসলেই মেয়ে মানুষ? একটা মেয়ে এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হয়? ছিঃ! আপনি একটা জঘন্য মেয়ে মানুষ। চুপচাপ নিজের ঘরে ফেরত যান। আমাদেরকে বিরক্ত করতে আসবেন না। সারাদিন শেষে কোথায় হাজবেন্ডের সাথে একটু সময় কাটাবো তা না। কোথ্থেকে ফালতু ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে গেট লাগিয়ে দিলো মায়া। বাহিরে দাঁড়িয়ে লাগাতার গেট ধাক্কা দিচ্ছে আলিশা। প্রচন্ড চেঁচামেচি করছে ও৷ মায়া বেডরুমে যেয়ে সোহানকে বললো
– উনি তো খুব সিনক্রিয়েট করছে। লোকজন শুনছে এসব৷
– রুপমকে ফোন দিয়েছি। ও নিতে আসছে ওকে।
– আচ্ছা উনি কি পাগল?
– ভবের পাগল। স্বার্থে টান পড়লে পাগলামি শুরু করে।
মিনিট পনেরো পর রুপম এসেছে আলিশাকে নিতে। এতক্ষন দরজায় ধাক্কা দিয়েই গেছে আলিশা। হাত জ্বালা করছে খুব। তবু থামেনি ও। হাতে রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে গেছে। রুপম এসে কিছুক্ষণ টানা হেঁচড়া করেছে আলিশাকে। শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে সোহানের দরজায় এসে ধাক্কা দিচ্ছে। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন দাঁড়িয়ে ওদের তামাশা দেখছে। অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসেও জড়ো হয়েছে এখানে। প্রচন্ড লজ্জা লাগছে রুপমের। দিশেহারা হয়ে আলিশাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো রুপম। ঝড়ের গতিতে কার ড্রাইভ করছে সে। আলিশা রুপমের হাতে মুখে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর দিয়েই যাচ্ছে আর মুখে যা আসছে তাই বলছে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে রুপমের। আর সহ্য হচ্ছে না তার এসব যন্ত্রনা। অনেকটা দূরে এসে গাড়ি সাইড করে থামালো সে। স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদছে রুপম। মনের বোঝাটা হাল্কা করার খুব বেশিই প্রয়োজন ছিলো ওর। দম আটকে মারা যাবার উপক্রম হচ্ছিলো। চোখের পানির সাথে বুকের ভিতরের চাপটা একটু একটু করে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চলবে,,,,