নষ্ট_গলি
পর্ব -২১
লেখা-Mim
পরদিন বিকালে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা হিসেব মিলাচ্ছেন সোহানের বাবা নজরুল সাহেব। গতরাতে সালমানও যখন ফোন রিসিভ করলো না তখন তিনি ফোন করলেন অফিসের ম্যানেজার ইকবালকে। ইকবাল তার যথেষ্ট বিশ্বস্ত কর্মচারী। ইকবালকে দিয়ে সব খবর বের করা যাবে সেই আশায় তিনি ফোন দিলেন। গতরাতে ফোনে যা শুনলেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। কান বন্ধ হয়ে আসছিলো তার। এমনকি এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে উনি বধীর হয়ে আছেন। যথেষ্ঠ ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা সামাল দিতে হবে। ম্যানেজারপর ভাষ্যমতে সোহান পুরোপুরি এই মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সোহানের সাথে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলা মানেই অহেতুক সময় নষ্ট করা। ছেলের সাথে কথা বলে কোনো প্রকারের কূল কিনারা করতে পারবেন না সেকথা নজরুল সাহেব ভালোই জানেন। ছেলে তো তার কথা শুনবেই না, উল্টো ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে মেয়েকে সাথে নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাবে। পরে এতবড় ব্যবসা সামাল কে দিবে? সালমানকে দিয়ে তেমন একটা ভরসা পান না নজরুল সাহেব৷ সোহানের বিজনেস পলিসি একদম হিংসে করার মতো। মাঝেমাঝে নিজের ছেলেকেই হিংসে হয় নজরুল সাহেবের। আবার গর্বও হয় খুব। সোহান বিজনেস জয়েন করার পর থেকে লাভের হার বেড়েছে তিনগুন। এই ছেলেকে হাতছাড়া করাটা হবে পুরোপুরি বোকামি৷ এতবড় বোকা নজরুল সাহেব নন। যা করার আড়াল থেকে করতে হবে৷ তিনি কিছুই জানেন না এমন ভাব নিয়ে বসে থাকতে হবে৷ বিশেষ করে সোহানের মায়ের কানে তো ভুলেও এ কথা দেয়া যাবে না। সে জানলে আজই ছেলের বাসায় যেয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলবে। মাথাটা ভনভন করছে নজরুল সাহেবের। ছেলের রুচির এতটা অধঃপতন হজম করতে পারছেন না তিনি।
একটা শপিং সেন্টারের সামনে এসে গাড়ি থামলো সালমানের। সাথে মায়াও আছে৷ শিমুর সাথে পরিচয় করানো হবে মায়াকে। তাই আজ এখানে আসা। ফুডকোর্টে বসে আছে শিমু৷ দূর থেকে সালমানকে দেখতে পাচ্ছে সে। সাথে করে একটা মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে। মায়া হবে হয়তো৷ সালমান বলেছিলো গতকাল মায়ার কথা। যতটুক শুনেছে মায়া তারচেয়ে আরও বেশি সুন্দর। মাথার চুলগুলো খুব দ্রুত ঠিক করে নিচ্ছে শিমু। সেই সাথে সালমানের উপর বিরক্ত হচ্ছে। তার তো উচিত ছিলো মায়াকে সাথে করে নিয়ে আসছে এই কথাটা বলা। তাহলে আরেকটু ভালো করে সেজে আসা যেতো। হবু শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনে যতটা সম্ভব নিজেকে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করার তুমুল প্রচেষ্টা প্রতিটা মেয়ের মধ্যেই দেখা যায়। শিমুও তার ব্যাতিক্রম না। রাগটাকে আপাতত আড়াল করে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা টেনে নিলো শিমু। আজ শিমুর পাশে মায়াকে বসার জায়গা করে দিলো সালমান। সালমানের মতে বিয়ের আগে এই দুজনের ভাব হওয়াটা অতি জরুরী। একদম কলিজার বান্ধবী টাইপ ভাব। তাহলে বিয়ের পর দ্বন্দ্ব হওয়ার আশংকা ৮০ শতাংশ কমে যাবে৷ বেশ ভালোই খোশ গল্প চলছে মায়া শিমুর মাঝে। শিমুর একটা বিশেষ গুন আছে৷ সে খুব দ্রুত মানুষকে আপন করতে জানে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ওদের দুজনের হাসির আওয়াজে আশপাশের টেবিলের লোকজন ওদেরকে দেখছে৷ সালমান উপভোগ করছে ব্যাপারটা। দুজন অপরিচিত মেয়ে কিভাবে আধাঘন্টার মধ্যে কলিজার বান্ধবী হয়ে যায় আবার ১৫ মিনিটের মধ্যে জানের দুশমন হয়ে যায়। মেয়ে জাতটাকে সালমানের কাছে প্রায়ই বড্ড বিচিত্র মনে হয়। এদের কারো সাথে মিশতেও দেরী নেই আবার ঝগড়া করতেও দেরী নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আপন মনেই হেসে উঠলো সালমান। ঘাড় ডানদিকে ঘুরাতেই একটা টেবিলে চোখ আটকে গেলো সালমানের। সোহানের বয়সী একজন লোক মায়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। বেশ তৃপ্তি নিয়ে মায়াকে দেখছে লোকটা। মায়া যখনই অট্টহাসি দিচ্ছে তখন লোকটাও ওকে দেখে মুচকি হাসছে। লোকটার ভাবগতি বিশেষ ভালো ঠেকছে না সালমানের কাছে। বেশ বিরক্তি নিয়ে লোকটার দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে সে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো মায়া। সালমান কোথায় তাকিয়ে আছে সেটা দেখার জন্য সোজা তাকালো মায়া। ভয়ে দম আটকে যাচ্ছে মায়ার। মূহূর্ত্বে ঠোঁটের কোন থেকে হাসি সরে গিয়ে চোখে মুখে ভয় জায়গা করে নিয়েছে। শিমু খানিকটা অবাক হয়ে মায়াকে জিগ্গেস করলো
– কোনো সমস্যা মায়া?
শিমুর কথা শুনে মায়ার দিকে তাকালো সালমান। মায়া এখনও লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা মায়ার দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে একটা হাসি দিচ্ছে৷ সালমান মায়ার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো
– লোকটাকে চিনো তুমি?
– হুম?…না।
– তাহলে তাকে দেখে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? আর লোকটা সেই কখন থেকে তোমাকে দেখছে। কাহিনী কি?
সালমানের প্রশ্নে আরও ঘাবড়ে গেছে মায়া। এসির মধ্যেও ঘামতে শুরু করেছে সে৷
– মায়া কোনো সমস্যা হলে বলো। ব্যাটাকে এখনই সাইজ করে আসি।
– আমি বাসায় যাবো।
– কেনো?
– প্লিজ….
– সালমান আর কথা বাড়িও না। বেচারী ভয় পাচ্ছে। ওকে জলদি বাসায় নিয়ে যাও। পরে ধীরে সুস্থে ঘটনা শুনতে পারবে।
মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সালমান। গাড়িতে শিমুও বসে আছে। যাওয়ার পথে ওকে বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে যাবে। মায়া বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাচ্ছে৷ লোকটা পিছু নিয়েছে ওর। সোহানকে খুব প্রয়োজন এখন। খুব বেশি প্রয়োজন। অতীত ওর পিছু নিয়েছে৷ ওকে এক্ষুনি লুকাতে হবে। লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না মায়া। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চোখে বারবার পানি এসে জমছে। মাথা ঘুরাতে শুরু করেছে মায়ার। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে এখনি মরে যাবে। সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। এতটাই শক্ত করে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে যেনো অতীতটা ওদের মাঝে না আসতে পারে।
(চলবে)