নষ্ট গলি পর্ব ৩৩

#নষ্ট_গলি
পর্ব-৩৩
লেখা-মিম
ইমন বের হয়ে যাওয়া মাত্রই সোহানের নাম্বারে কল করলো জোনাকি। মাথার বালিশের কাছে মোবাইলটা বাজছে। একহাত বাড়িয়ে মাথার কাছ থেকে ফোনটা নিলো সোহান। স্ক্রিনে জোনাকির নাম দেখাচ্ছে।
– হ্যাঁ জোনাকি বলো।
– স্যার, ইমন আইছিলো।
– এরপর?
– মায়ারে খুঁজে। মায়ারে তার লাগবোই। কইলাম বিয়া হয়া গেছে। সে মানে না। মায়ার ভিডিও ছাইড়া আমার সামনে বইসা দেখতাছিলো। আর খবিশের মত হাসতাছিলো। মায়া চিল্লাইতাসে ভিডিওতে আর খবিশটা কইতাসে মায়ার চিল্লানি শুইনা নাকি আরো জোরে কামড়াইতে মন চাইতাসে তার। দাঁত বলে শিরশির করতাছে।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে সোহানের। নোংরা মেন্টালিটির মানুষ। মানসিক রোগী একটা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পিটালেই কামড়ানোর শখ মিটে যাবে।
– তুমি কি বলেছো?
– ভুলভাল বুঝাইসি। কইসি মায়ারে আইনা দিমু৷ তবে এখন না। আরো পরে। আপনে মায়ারে নিয়া বিদেশ ঘুরতে গেছেন।
– আচ্ছা। ভালো করেছো।
– তারে এখন কি করবেন স্যার? সে তো পিছ ছাড়বো না।
– ছাড়বে কি ছাড়বে না সেটা তো বুঝবোই।
– আইচ্ছা স্যার। আমার কিছু করতে হইলে জানাইয়েন।
– হুমম জানাবো।
মায়া এখনও ঘুমে। ওকে এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে সোহান। কি করা যায় ভাবছে সে। সবার আগে ভিডিওগুলো সরাতে হবে। ভিডিওর কপি কোথায় কোথায় আছে সব বের করতে হবে।
নড়েচড়ে উঠলো মায়া। মুখটা তুলে কোনোমতে একচোখ মেলে সোহানের দিকে তাকালো।
– গুড মর্নিং প্রিন্সেস।
-হুমমমমম।
আবার সোহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো মায়া। সোহানের বুকে নাক মুখ ঘষছে ও।
– উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না?
– উঠবো।
– কখন?
– একটু পর।
– নাস্তা কি খাবে?
– বিস্কিট খাবো। চায়ে ডুবিয়ে।
– ডক্টর গতকাল কি বলেছে শুনোনি?
– শুনেছি।
– বিস্কিট খেলে হবে? তুমি অনেক উইক হয়ে গেছো। হেলদি খাবার খেতে হবে৷
– আবার ডিম?
– হুম ডিম। সাথে একগ্লাস দুধ। রুটি বা পরোটা।
– ডিমে গন্ধ লাগে।
– কিচ্ছু করার নেই। খেতে হবে।
– খাইয়ে দিবেন আমাকে?
– হুম দিবো।
সোহানের গায়ের উপর থেকে বিছানায় নেমে এলো মায়া। ঝিম মেরে বসে আছে খাটে৷ মায়ার পিঠে হাত বুলাচ্ছে সোহান।
– খারাপ লাগছে মায়া?
– মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে।
– ঠিকমতো খাও কিছুদিন। ঠিক হয়ে যাবে।
খাট ছেড়ে নেমে গিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। সোহান গিয়েছে কিচেনরুমে। রতন পরোটা বানাচ্ছে। সালমান গতকাল রাতে বলেছে মাংস দিয়ে পরোটা খাবে। সোহান বললো চুলায় ডিম সিদ্ধ বসাতে। সেই সাথে দুধটাও জ্বাল দিতে বলে এসেছে।
– ভাইয়া…
– হুম?
– মায়ার অবস্থা কি এখন?
– এইতো। জ্বরটা নেই। শরীর এখনও দুর্বল।
– রাগটা কমাও৷ যখন তখন এভাবে ক্ষেপে যাওয়ার মানে হয় না।
– মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। ওকে এখানে এনে বলেছি এটা ওর সংসার। সংসার ফেলে চলে গেলো কেনো?
– ছোট একটা মেয়ে৷ বাবার কথাগুলো ও মেনে নিতে পারেনি। তাছাড়া ওর মনেও হয়তো এই কথাগুলো বারবার ঘুরে ও কোন জায়গা থেকে এসেছে। তোমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে যায় না। তাই বাবার কথাগুলো খুব গায়ে লেগেছে ওর।
– হুমম। রিএ্যাক্টটা একটু বেশিই করে ফেলেছি। মাথা ঠিক থাকে না। বুঝলি?
– জানি ঠিক থাকে না। তাই বলে এতটাও রিএ্যাক্ট করা ঠিক না।
– মাথাটা ঠান্ডা করতে চাই। কিন্তু হয় না।
– কখনো ট্রাই করেছো বলে তো মনে হয় না।
– উনাকে কিচ্ছু বলবে না। উনি খুব ভালো মানুষ।
কথাটা বলতে বলতে ডাইনিং রুমের দিকে আসছে মায়া।
– ভালোবাসা কত্ত! এতবড় ধোলাই খেয়েও বলছো উনি খুব ভালো মানুষ।
– হুম ভালোই তো। ভালো কে ভালো বলবো না?
– বুঝলি সালমান? যে আমাকে ভালোবাসবে সে আমার ভালোকেও ভালোবাসবে মন্দকেও ভালোবাসবে। আমি একটা খারাপ কাজ করলেও বুঝার চেষ্টা করবে আমি কেনো খারাপ কাজটা করলাম।
অফিসে যাবেন বলে তৈরী হচ্ছেন নজরুল সাহেব। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে সোহানের মা রিমা। ফোনে খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা দেখছেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড পর নজরুল সাহেবের দিকে হাতে থাকা ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নজরুল, দেখো তো একটু।
– কি দেখবো?
– ফোনটা হাতে নাও আগে।
কিছুটা বিরক্ত হলেন নজরুল সাহেব। অফিসে যাওয়ার সময় হলেই এই মহিলার এটা সেটা দেখাতে হয়। না দেখলেও বিপদ। ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলবে। বাধ্য হয়েই ফোন হাতে নিলেন তিনি।
একটা মেয়ের ছবি। চেহারা তেমন ভালো না। তবে বেশ স্মার্ট। স্মার্টনেসের আড়ালে চেহারার কমতিগুলো আড়াল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভালোই।
– কে এটা?
– সোহানের জন্য দেখেছি। আমার বান্ধবীর ভাইয়ের মেয়ে। ভালো না?
মোবাইলটা খাটের উপর রেখে আবার অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হওয়ার কাজে লেগে পড়লেন। কোনো উত্তর দিচ্ছেন না।
– নজরুল কিছু একটা জানতে চেয়েছি আমি। উত্তর দিচ্ছো না কেনো?
– কি বলবো?
– কেমন লেগেছে?
– সোহান বিয়ে করে ফেলেছে।
তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসলেন রিমা। মনে হলো মাথায় বাজ পড়েছে তার। ঠিকঠাক শুনেছে কিনা সেটা জানার জন্য আবার নজরুল সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন
– কে বিয়ে করেছে?
– সোহান।
– কাকে?
– একজনের সাথে এ্যাফেয়ার ছিলো।
– তুমি জানতে সব?
– হ্যাঁ।
– আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না?
– বললে কি হতো?
– কি হতো মানে? আমি কেও না?
– সেটা তুমি তোমার ছেলের সাথে বুঝে নাও। তোমার ছেলে কেনো তোমাকে জানায়নি সেই যুক্তি ও ভালো জানে।
– তুমি কেনো বলোনি?
– বিয়ে তো আমি করিনি৷ করেছে সোহান। ওর বিয়ের খবর ও না বললে আমি বলার কে?
নজরুল সাহেবের এ ধরনের অযৌক্তিক কথাবার্তা বরাবরই অসহ্য লাগে রিমার। এই লোকটাকেও অসহ্য লাগে। ছেলেগুলোও হয়েছে এই লোকের মতই। বিশেষ করে বড়টা। চরম বেয়াদব। আজকাল তো সে মা বলে ডাকাই ছেড়ে দিয়েছে। বিয়ে করেছে সেটা তো এটলিস্ট বলতে পারতো।
বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে নজরুল সাহেব। আর দশমিনিট বাদে সোহানকে কল করবে রিমা। তুমুল ঝগড়া হবে মা ছেলের মধ্যে। বাবাকে যেভাবে উত্তর দিয়েছে ঠিক সেভাবে মা কেও উত্তর দিয়ে দিবে৷ একদম গা জ্বালানো উত্তর। ভাবতেই পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন নজরুল সাহেব। ছেলের উত্তর পেয়ে নিজে পুরো একটাদিন জ্বলেছেন। এবার নাহয় রিমাও একটু জ্বলুক।
(চলবে)

/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here