#নষ্ট_গলি
পর্ব-৩৪
লেখা-মিম
আজ অফিস যাবে না সোহান৷ মায়া অসুস্থ। অসুস্থ বউকে ঘরে ফেলে অফিসে যাওয়ার মানুষ সে না। সারাদিন বউয়ের আগে পিছে ঘুরেই সময় কাটাবে। ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া আর সালমান। ফোনে একটু জরুরী কথা বলার আছে, এটা বলে সেখান থেকে সরে বেডরুমে এসে দরজা আটকালো সোহান। জাহিদের নাম্বারে ডায়াল করেছে সে।
– জ্বি স্যার।
– স্বপনের কথা মনে আছে?
– ঐ যে সোনারগাঁ থাকে সেই ছেলেটা?
– হ্যাঁ।
– জ্বি স্যার আছে তো।
– নাম্বার আছে ওর?
– আছে।
– এস এম এস করো তো একটু।
– এক্ষুনি করছি স্যার।
জাহিদের কলটা কাটতেই সোহানের মায়ের কল চলে এলো। সামান্য ভ্রুঁ কুঁচকালো সোহান। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তো উনি ফোন করেন না। নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন পড়েছে তাই ফোন করেছে।
– হ্যালো…..
– ভালো আছো সোহান?
– হ্যাঁ আছি। তুমি ভালো আছো?
– এইতো। তারপর খবর কি তোমার? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
– হঠাৎ আমার দিনকালের খবর নিচ্ছো?
– নিতে পারি না বুঝি?
– কখনও তো নাওনি। এজন্য একটু অবাক হলাম আর কি।
– বউ কেমন আছে?
– ওহ! বুঝেছি। আসল কথা হচ্ছে বৌয়ের কথা বিস্তারিত জানার জন্য কল করেছো। দিনকাল কেমন যাচ্ছে সেটা জানার জন্য না৷ আমিও তো বলি, কি ব্যাপার হঠাৎ আমার মায়ের কি হলো? ফোন দিয়ে সোহানের খোঁজ নিচ্ছে!
– সবসময় রুডলি কথা বলাটা কি জরুরী?
– আমি এমনই। ছোট থেকেই এমন। সমস্যা হচ্ছে ছোট থেকে তুমি তো আমাকে বড় করোনি। আমার সাথে তেমন একটা মিশে দেখোনি। তাই আমার কথার ধরন তোমার কাছে বাজে মনে হয়।
– বিয়েটা করেছো আমাকে জানালে না কেনো?
– জানালে কি হতো?
– কি হতো মানে? আমি কি কেও না?
– কখনো কেও ছিলে নাকি?
– তুমি বুঝতে পারছো সোহান? তুমি এভাবে বিয়ে করে সংসারদারী শুরু করে ফেলেছো এখানকার লোকজন জানাজানি হলে কি পরিমান সমালোচনা হবে?
– হ্যাঁ জানি৷ একটা ঘটনা নিয়ে সোসাইটির মানুষরা কতটুকু সমালোচনা করতে পারে তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে? তোমার আর বাবার পরকীয়া নিয়ে তো কম সমালোচনা শুনিনি। বলতে পারো সমালোচনা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। আর আমি মায়াকে বিয়ে করেছি। পরকীয়া করছি না। আমাদেরকে নিয়ে যেটা হবে সেটা হলো আলোচনা। সমালোচনা না।
– তোমার আমার কি সম্পর্ক ভুলে গেছো?
– নাহ ভুলিনি তো।
– তাহলে এসব ব্যাপার নিয়ে কথা কেনো বলছো।
– খুব গায়ে লাগছে?
– বেয়াদবির শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছো।
– সেটা তো কবেই পৌঁছেছি।
– হ্যাঁ জানি। খুব ভালো করেই জানি তুমি যে কতটা বেয়াদব।
– জেনে শুনে কেনো এসেছো আমার সাথে কথা বলতে?
– নিজের সন্তানের কাছ থেকে জুতার বাড়ি খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। তাই তোমাকে ফোন করে জুতার বাড়ি খেলাম।
– সন্তান সন্তান করো না তো। তোমার মুখে সন্তান শব্দটা মানায় না। তুমি দুই ছেলের মা সেই কথা একটা সময় বলতে লজ্জা পেতে। এমনও সময় গেছে দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে আমাকে আর সালমানকে তুমি বোনের ছেলে বলে পরিচয় করিয়েছো।
– ওগুলো যাস্ট ফান ছিলো।
– ফান ছিলো না কি ছিলো সেগুলো বুঝার মত যথেষ্ট বয়স তখন আমার হয়েছিলো।
– তুমি তোমার ওয়াইফের সামনে এসব বলছো?
– হ্যাঁ বলছি। বউকে আগে ভাগেই সব জানিয়ে রেখেছি। প্রেম করা তো এখনও ছাড়োনি। চট্টগ্রামে কোনো পার্টিতে গেলেই তো তোমার আর বাবার পরকীয়া নিয়ে কানাঘুষো চলে। সেসব আমার বউয়ের কান পর্যন্ত আসতে কতদিন? তাই আগে ভাগেই বউকে শুনিয়ে রাখছি।
– শুনাও। যত পারো বাপ মায়ের বেইজ্জতি করো৷ অমানুষ হয়েছো একটা। নূন্যতম রেসপেক্ট আমরা কেও তোমার কাছ থেকে পাইনা। এখন এসব বউকে শুনিয়ে ওকেও বেয়াদব বানাচ্ছো। আজ তুমি বেয়াদবী করছো। কাল থেকে তোমার বউও যোগ হবে তোমার সাথে। দুইজনে মিলেমিশে আমাদের ইনসাল্ট করো। বেয়াদব কোথাকার।
শেষের কথাগুলো প্রচন্ড চিৎকার করে বললেন রিমা। পুরো শরীরে মনে হচ্ছে কেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। ছেলের অপমানের কথা নজরুল সাহেবকে জানানোর জন্য কল করেছেন। ফোনের স্ক্রিনে রিমার নাম দেখে মিটমিটিয়ে হাসছেন নজরুল সাহেব। গায়ে জ্বালা উঠেছে রিমার। ভুলেও কল রিসিভ করা যাবে না। আর নয়তো বিষ ঝাড়বে উনার উপর। বিষটা ঝেড়ে ফেললে তো রিমার গায়ের জ্বালা মিটে যাবে৷ কোনোমতেই মিটতে দেয়া যাবে না। নিজের জ্বালা নিজেই নিয়ে ঘুরেছেন পুরো একটাদিন। কাওকে সেই যন্ত্রণার কথা বলতে পারেননি। রিমাকেও সেই সুযোগ দিবেন না। যেমন উনি জ্বলেছেন তেমনি রিমাকেও জ্বলতে হবে।
মায়ের কলটা কাটার পর স্ক্রিনে দেখলো জাহিদের নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। স্বপনের ফোন নাম্বারটা এস এম এস করেছে জাহিদ। নম্বরটায় কল করলো সোহান। চারবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো স্বপন।
– আসসালামু আলাইকুম ভাই।
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম। ভালো আছো স্বপন?
– এইতো ভাই। আপনি ভালো আছেন?
– হ্যাঁ। তারপর দিনকাল কেমন যায়?
– আপনাদের দোয়ায় যাচ্ছে ভাই। হঠাৎ আমাকে স্মরন করলেন যে। কোনো দরকার?
– একটা কাজ করে দিতে হবে।
-কি কাজ?
-জানি ওসব ছেড়ে দিয়েছো। তবু আমার রিকুয়েস্ট কাজটা করে দিতেই হবে। তোমাকে ছাড়া বিশ্বস্ত কাউকে পাচ্ছি না।
– আরে ভাই, আপনার সাথে আমার হিসাব আলাদা। আপনি শুধু বলেন কি করতে হবে।
– একটাকে তুলে আনতে হবে৷ আমার বাসায় আটকে রাখবে দুইদিন। সারারাত টর্চার করবে। খবরদার মেজর ইনজুরড যেনো না হয়। কিন্তু মরনের ভয় এমন ভাবে ভেতরে ঢুকাবে যাতে মায়া নামের কেও এই পৃথিবীতে আছে সেটা ভুলে যায়। আর ওর কাছে কয়েকটা ভিডিও ক্লিপ আছে। কোথায় কোথায় রাখা আছে জানি না। ওর কাছ থেকে ওর বাসার চাবি নিয়ে ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ, মেমোরী কার্ড যা পাও সব নিয়ে আসবে। একটাও যেনো বাদ না যায়।
– মায়া কে ভাই?
– আমার ওয়াইফ।
– ওহ! ভাবীর সাথে উনার কি সম্পর্ক?
– কোনো সম্পর্ক নেই। আগে এ্যাফেয়ার ছিলো। এখন আমার ওয়াইফকে কন্টিনিউ ব্ল্যাকমেইল করছে৷ যা তা অবস্থা। মজা লাগছে না এই ছেলের তামাশা। এটার একটা দফারফা করা জরুরী।
– বুঝেছি ভাই। কাজ হয়ে যাবে।
– কিভাবে কি করবে সামনা সামনি দেখা করে ডিটেইলস বলবো। ঠিকাছে?
– জ্বি ভাই। কবে আসবো?
– আগামীকাল সন্ধ্যার পর আসো।
– আচ্ছা।
মাথা থেকে অর্ধেক চিন্তা দূর হয়েছে। বাকিটা কাজটা হয়ে গেলে এরপর দূর হবে। উফফ! কোথাকার ইমন! মাথাটা হ্যাং করে দিচ্ছে একদম। সামনে পেলে একটা হলেও দাঁত ভাঙবে এই ব্যাটার। কামড়ানোর শখ চিরতরে মিটাবে এবার।
(চলবে)
/