নিশির অন্তিম প্রহরে পর্ব -০৭+৮

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

(বিঃদ্রঃ চরিত্রটাকে ঠিকমতো ফুটিয়ে তোলার জন্য এই পর্বে কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা অনেকের পছ’ন্দ নাও হতে পারে। তার জন্য আমি দুঃখিত।)

হাতটা সম্পূর্ণ এগিয়ে আসার আগে হা রিন পেছন ফিরে তাকালো। পেছনে ফিরে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কারণ তার পেছনে কায়ান দাঁড়িয়ে আছে।

” আনেংহাসেও কায়ান ওপ্পা।” ( হ্যালো, কায়ান ভাইয়া)

” আনেংহাসেও হা রিনসি। বাসায় যাচ্ছো নাকি?”

” হ্যাঁ।”

” চলো তাহলে আমরা একসাথে যাই।”

কায়ান ছোট হা রিনকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে যেতে লাগলো। হা রিন কায়ানে গলা জরিয়ে ধরে নানা কথা বলছে আর মাঝে মাঝে হাসছে।

রাতে খাবার পর্ব শেষ করে এনাক্ষী কিছুক্ষণ আগেই শুয়েছে। মাত্রই তার চোখ জোড়া লেগে এসেছিলো আর তখনই উপর থেকে একটা শব্দ শোনা গেলো। শব্দ শুনে এনাক্ষী ধরফরিয়ে উঠে বসলো। তার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে গিয়েছে। সে প্রথমে ভাবলো চুপচাপ কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়বে কিন্তু লি রিনের কথা মনে পড়তেই সে সাহস সঞ্চয় করে বিছানা থেকে নামলো।

আস্তে করে দরজাটা খুলে বাইরে উঁকি দিলো এনাক্ষী৷ করিডোরে একটা ছোট লাইট ব্যতিত আর কোন আলো নেই চারিপাশে। ভয়ে তার বুক ঢিপঢিপ করছে। নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো সে। এনাক্ষী যতই উপরে উঠছে তার মনে হচ্ছে সে অ’ন্ধকা’র জগতে প্রবেশ করছে। তিন তলায় উঠে এসে এনাক্ষী পড়লো বিপাকে। অন্ধকারের কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

” এনাক্ষী তুই একটা গা’ধা। ফোনটা কি সাজিয়ে রাখার জন্য কিনেছিলি। হে ঈশ্বর র’ক্ষা করুন।”

মনে হাজারো ভ’য় নিয়ে এনাক্ষী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আচমকা সে নিজের ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস অনুভব করলো। একটা শুকনো ঢোক গিললো এনাক্ষী।

” এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো?” শুদ্ধ কোরিয়ান ভাষায় কোন বয়স্ক মহিলা বললো। মহিলার কন্ঠস্বর শুনে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো এনাক্ষী।

” আনেংহাসেও হাইলমনি।”

” তুমি এতোরাতে এখানে কি করছো?”

” আসলে আমি কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছিলাম তাই দেখতে এসেছি।”

” ও আচ্ছা। আসলে আমরা কিছু জিনিস নিয়ে যাওয়ার সময় অন্ধকারের ফলে হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো। তুমি চিন্তা করোনা, যাও ঘুমিয়ে পড়ো। সাবধানে যেও।”

” নে, আনেংহি জুমুসেও।” ( আচ্ছা, শুভ রাত্রি।)

এনাক্ষী দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। ঘরের যাওয়ার আগে সে কি মনে করে একটা কায়ানের দরজায় নক করলো। কিন্তু কায়ান দরজা খুলোনা। এনাক্ষী ভাবলো হয়তো কাজ করে সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি তাই গভীর ঘুমে আছে। সেও আর বেশি কিছু না ভেবে নিজের ঘরে চলে এলো।

বন্ধুদের সাথে পার্টি করে আজো রাত করে বাড়ি ফিরছে পার্ক জিসু। আজকে অতিরিক্ত সজু(একধরনের এল’কো’হল) খাওয়ার ফলে সে অনেক নে’শাগ্র’স্ত হয়ে আছে। হেলেদুলে সে কোনবতে নিজের এপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ দরজায় কাঁপা কাঁপা হাতে কোনবতে পাসওয়ার্ড টাইপ করলো সে। ঘরে ঢুকে ব্যাগটা মাটিতে ছুঁড়ে মারলো এবং ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো জিসু। প্রলাপ বকতে বকতে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটে। জিসুর নে’শা অনেকটা কেটে গিয়েছে। সে সোজা হয়ে বসলো, ব্যথায় মাথা ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে। কোন প্রকারে বিছানা থেকে নেমে সে ওয়াশরুমে গেলো।

ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করার পর জিসুর এবার নিজেকে হালকা লাগছে। চুল মুছতে মুছতে সে নিজের ফোনটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বিছানার কোথাও সেটা পেলোনা। হঠাৎ তার মনে পড়লো ফোন তো তার ব্যাগে ছিলো কিন্তু সারা রুম খুঁজেও সে তার ব্যাগটা পেলোনা। এবার জিসুর চিন্তা হতে লাগলো। টাওয়ালটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সবকিছু চেক করতে লাগলো সে।

” আ’ই’স… সি’বা’ল।” রে’গে বললো জিসু। হঠাৎ সে রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ শুনতে পেলো। এমনিতেই ব্যাগ খুঁজে না পাওয়াতে সে রে’গে আছে তারউপর শব্দ শুনে আরো রে’গে গেলো। সে ভাবলো হয়তো কোন চো’র হবে। তাই একটা ফুলদানী নিয়ে রান্নাঘরে দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো। একজন ব্যক্তি পেছন ফিরে কাপে চামচ নাড়াচাড়া করছে। কোন অচেনা ব্যক্তিকে নিজের বাড়িতে এভাবে সাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে দেখে জিসু আরো রে’গে গেলো।

” সি’বা’ল। হু আর ইউ? তোর সাহস দেখছি অনেক। আমার বাড়িতে এসে আবার কফি বানিয়ে খাচ্ছিস। আজকে তোকে এমন শিক্ষা দেবো যে বিছানা থেকে উঠতে পারবিনা।”

” কফি খাবে?” শান্ত স্বরে বললো ব্যক্তিটি।

জিসু লোকটা কথা শুনে থ হয়ে গেলো। সে এতো কিছু বললো আর তার পরিবর্তন লোকটা কিনা এই কথা বললো। এভাবে বলছে যেন এটা সেই ব্যক্তির বাড়ি আর জিসু এখানে বেড়াতে এসেছে। এবার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে জিসু হাতে থাকা ফুলদানিটা মাটিতে ছুঁড়ে মারলো। মূহুর্তেই শব্দ করে ভেঙে গেলে সেটি।চিৎকার করে বললো জিসু,

” গে’সিক’গি(খারাপ ভাষা)। জিনজা?(রিয়েলি) তুই আমার বাড়িতে এসে আমাকে বলছিস এ কথা। আজকে তো তোকে আমি মে”রেই ফেলবো।”

জিসু সারাঘর উলোটপালোট করে ফেললো কিন্তু ব্যাগটা পেলেনা।

” তুমি কি এটা খুঁজছো?”

জিসু ঘাড় গুঁড়িয়ে দেখলো লোকটার হাতে তার ব্যাগ।

” তুই আমার ব্যাগ নিয়েছিস, সি’বা’ল…..।”

জিসু দৌড়ে লোকটার দিকে এগিয়ে এসে তাকে ধা’ক্কা দেবে তার আগেই লোকটা ভা’রী কিছু একটা দিয়ে তার মাথায় বারি দিলো। থমকে গেলো জিসু, চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে সে। কিছুসময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো সে। আবারো লোকটার দিকে এগিয়ে আসবে তার আগেই পুনরায় তার মাথা আবারো আ”ঘা”ত করা হলো। সহ্য করতে না পেরে জিসু এবার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢ’লে পড়লো। জিসুকে মাটিতে ঢলে পড়তে দেখে ক্রু’র হাসলো লোকটি। ঘুরে একবার দরজা দিকে তাকালো। জিসু ঘরে ঢোকার পরে খেয়ালই করেনি যে তার দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয়নি। তার এই ভু’লটাকেই সৎ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছি লোকটি।

জ্ঞান ফেরার পর জিসু নিজেকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধা পেলো। এতোটাই শক্ত করে তাকে বাঁধা হয়েছে যে তার ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ব্যথায় মনে হচ্ছে তার মাথাটা ছিঁ”ড়ে যাবে।

” সি’বা’ল, আমার দড়ি খো’ল। এই তোর সাহস, ভী”তু একটা। একবার আমি ছাড়া পাই তোকে আমি জা’নে মে’রে ফেলবো৷ খোল আমার দড়ি।”

লোকটা একটু মাঝারি সাইজের পাত্র এনে নিচে রাখলো। কিছুসময় পর জিসুর নাকে কড়া কফির গন্ধ এসে বারি খেলো।

” তুই আবার কফি বানিয়েছিস। এই কফি কি তোর বা’পে কিনে দিয়েছে নাকি? তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। প্রথমে আমার বাড়িতে ঢুকেছিস, তারপর কফি খেলি, আমার মাথায় আঘাত করে আমাকে বেঁধে রেখেছিস এখন আবার এতোগুলা কফি বানালি। তুই কি চাইছিস? দেখ তোকে আমি ভালোভাবে বলছি আমাকে ছেড়ে দে। আর বেশি দেরি করলে আমি তোকে সত্যিই মেরে ফেলবো। আমাকে খোল সে’ক্কি’য়া।আ…” জিসু খুব করে চেষ্টা করছে নিজের বাঁধন খোলার জন্য কিন্তু সে যতই চেষ্টা করছে এতে তার আরো বেশি ক”ষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাতদুটো অনেকখানি ছিঁ”ড়ে গিয়েছে।

লোকটা কিছু বললোনা। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো জিসুর দিকে। আলতো হাতে জিসুর গালে হাত বুলাতে লাগলো। জিসু মুখ সরিয়ে নিতে চাইলে লোকটা আরো শ’ক্ত করে চেপে ধরলো।

” গে’সি’কগি… আমার মুখ থেকে হাত সরা তুই৷”

” তোমার মুখটা অনেক সুন্দর। একেবারে মোমের পুতুলের মতো দেখতে তুমি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছুক্ষণ পর মোমের মতোই তোমার চেহারাটাও গ’লেও যাবে।”

” এই তুই এসব কি বলছিস? তুইও খে’য়ে পা’গ’ল হয়ে গিয়েছিস নাকি?”

লোকটা জিসুর কথায় উওর না দিয়ে নিচে রাখা পাত্রটা হাতে তুলে নিলো। পাত্র থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। লোকটা যতই এগিয়ে আসছে জিসুর নাকে তখনই কফির কড়া স্মেল এসে বারি খাচ্ছে। এবার জিসুর ভ’য় হতে লাগলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

” এই কি করছিস তুই? আমার কাছে আসছিস কেন? দূরে যা, একদম কাছে আসবি…. আ…… ওম্মা…।” পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ব্য’থায় জিসু আ’র্তদা’ন করে উঠলো। লোকটা গরম কফিটা আস্তে আস্তে তার মাথার উপর থেকে ঢালছে। মাথা থেকে শুরু করে শরীরের যে অংশে কফি পৌঁছেছে সে অংশই তী’ব্র জ্বালা অনুভব করছে জিসু। অনবরত চিৎ’কার করে যাচ্ছে সে কিন্তু লোকটা তার কাজ থামালোনা। স্বাভাবিক ভাবেই উপর থেকে কফি ঢালতে লাগলো, যেন কোন কাপে সে কফি ঢালছে।

চলবে…….#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

রাতের পরে আগমন ঘটেছে নতুন সকালের, এক নতুন দিনের। তবে জরে পড়েছে আরো একটা প্রাণ, সেই প্রাণের নাম পার্ক জিসু। আ’হাজা’রিতে ভে’ঙে পড়েছে জিসুর পরিবার। শহরে আবারো একটা মা’র্ডা’র হতে দেখে সবাই এবার অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে ভ’য় কাজ করতে শুরু করেছে তীব্রভাবে।

ইনস্পেক্টর হান তার টিমকে নিয়ে বর্তমানে অবস্থা করছে জিসুর এপার্টমেন্টে। জিসুর মৃ’তদেহটা দেখে হানের কষ্ট হলো। তার পুরো শরীরে কফির দাগ লেগে আছে। বিভিন্ন জায়গায় কালো কালো হয়ে গিয়েছে, আবার কিছু কিছু জায়গায় ফোঁসকা পড়েছে। তার বাঁধনগুলো খুলছে অফিসাররা।

” জেসংহামনিদা জিসুসি(সরি জিসু)। আমাদের ব্যর্থতার কারণে তোমার প্রা’ণ গেলো। আমরা ব্যক্তিটিকে ধরতে ব্যর্থ বলে আজ তোমাকেও প্রাণ হা’রা’তে হলো।”

” স্যার, ব’ডি কি নিয়ে যাবে?”

” হুম আর ডাক্তার বোহাকে বলো রেজাল্টটা যেন একটু তাড়াতাড়ি দেন।”

কাং হু লাশের সাথে নিচে চলে গেলো। হান পুরো বাড়িতে ঘুরে দেখছে। রান্নাঘরে এসে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। সন্দেহজনক জিনিসগুলো ব্যাগে ভরে বাকিদের নির্দেশন দিলো কোন সূত্র পাওয়া যায় নাকি সেটা খুঁজে বের করতে। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেও কি মনে করে হান আবারো চেক করতে লাগলো। না কফির কোন জার এখানে নেই।

” তারমানে খু’নি এখান থেকে কফির জার সাথে করে নিয়ে গিয়েছে যেন আমরা তার আঙ্গুলের ছাপ না পাই। তারমানে সে মা’র্ডা’র করার সময় আরো যা যা জিনিস ব্যবহার করেছিলো সব জিসুর বাড়িতে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছিলো এবং খু’নি আরো কিছু তার সাথে করে নিয়ে গিয়েছে। ইনস্পেক্টর লি তেমু আপনি দ্রুত কিচেনে থাকা সব ফিঙ্গারফ্রিন্ট সংগ্রহণ করুন এবং দড়িটা থেকেও সংগ্রহণ করুন। কিছু তো অবশ্যই পাওয়া যাবে।”

রান্নাঘর থেকে হান বেরিয়ে এসে দেখলো কাং হু ছবি তুলছে।

” কিছু পেলে কাং হু?”

” না স্যার। কিন্তু স্যার এটা কি ধরণের খু’নের পদ্ধতি? কফি দিয়ে কেউ কাউকে মার্ডার করতে পারে এটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। আচ্ছা স্যার আপনার কি মনে হয় যে লি রিন এবং পার্ক জিসুর খু’নি একজনই?”

” আমার তো একজনই মনে হচ্ছে কাং হু। দু’টো মা’র্ডা’রেই খু’নি অদ্ভুত পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। দু’জনকেই জী’বিত থাকা অবস্থায় হ’ত্যা করা হয়েছে।”

” এখন আমরা কি করবো স্যার? সাধারণ জনগণ তো এবার আরো উত্তেজিত হয়ে উঠবে।”

” আমি জানিনা কাং হু। তবে আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়টা সলভ করতে হবে।”

কায়ানের দরজায় কড়া নাড়লো এনাক্ষী। দরজা খোলার পর হাসিমুখে কায়ানকে শুভ সকাল জানালো সে।

” কি ব্যপার এনা, আজকে এতো সকাল বেলা।”

” এমনিতেই এলাম তোমাকে দেখতে। কাল রাতে কোথায় ছিলে? দরজায় কড়া নেড়েছিলাম কিন্তু তোমার রেসপেন্স না পেয়ে ফিরে গিয়েছি।”

” কখন এসেছিলে তুমি?”

” রাতে।”

” ও তাহলে আমি মনে হয় ঘুমিয়ে ছিলাম তাই শুনতে পাইনি। এক মিনিট রাতে মানে? তুমি রাতে আবার ঘর থেকে কেন বের হয়েছিলে?”

কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো,

” আসলে ঘুম আমার কাছে আসবে তখনই উপর থেকে শব্দ শুনে পাই। কিসের শব্দ সেটা দেখার জন্যই আসলে বেরিয়েছিলাম। একজন গ্র্যান্ডমা এর জিনিস অন্ধকারে পড়ে গিয়েছিলো ওটা তারই শব্দ ছিলো।”

” তুমি রাতের বেলা একা বের হয়েছিলে। তাও আবার উপরের তলায় একা গিয়েছিলে। এনাক্ষী তুমি এতোটা কেয়া’রলেস কেন? কিছুদিন আগে কি হয়েছে তোমার কি তা মনে নেই? বারবার তোমাকে সাব’ধান করেছি এই ব্যপারে তাও তুমি কি করে এধরণের কাজ করেছো আমি ভাবতেই পারছিনা।”

” আচ্ছা আচ্ছা সরি, এতো রাগ করছো কেন। অফিস যাবো আজকে?”

” হুম।”

আচমকা এনাক্ষী খেয়াল করলো সোফায় কিছু কালো রঙের কাপড় পড়ে আছে।

” তোমার সোফায় কাপড় কেন? অফিস যাচ্ছো তো এসব ঘুছিয়ে রাখবেনা।” এনাক্ষীর কথা শুনে কায়ান অজানা কারণে ঘা’বড়ে গেলো। দ্রুত কাপড়গুলো গুটিয়ে নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো।

” ও আসলে আমি ভু’লে গিয়েছিলাম।”

” তাহলে তুমি অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নাও, আমি পরে আবার আসবো। সাবধানে যেও।”

কায়ানের ঘর থেকে বের হতেই এনাক্ষী ফিলিক্সের দেখা পেলে। কিন্তু সে তাকে ডাকবে তার আগেই ফিলিক্স দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেলো।

” অদ্ভুত। এভাবে ছুটছে যেন তার পেছনে কেউ তাড়া করছে। এই শহরে আসার পর যাকেই দেখছি সবাই মাঝে মাঝে অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করে। কি আশ্চর্য।”

সকাল দশটার মতো বাজছে। সবকাজ শেষ করে এনাক্ষী নিজের ব্রেকফার্স্ট নিয়ে টিভি ছেড়ে বসেছে। সবেমাত্র পানিটা সে মুখে নিয়েছিলো কিন্তু সেটা গলা দিয়ে পেটে যাওয়ার আগেই বেরিয়ে এলো। কাশতে লাগলো এনাক্ষী তবে সে দ্রুত নিজেকে ধাতস্থ করে টিভিতে মনোযোগ দিলো। একজন মহিলা নিজের মিষ্টি গলায় স্পষ্ট কোরিয়ান ভাষায় খবর পাঠ করছেন এবং বর্তমানে তিনি পার্ক জিসুর মৃ’ত্যুর খবর বলছেন। আরো একটা মৃত্যুর খবর শুনে এনাক্ষীর গলা শুকিয়ে এলো। সে দ্রুত পানি খেয়ে নিজের গলা ভিজিয়ে নিলো। ভ’য়ে বুক ধুরধুর করছে তার।

” হে ঈশ্বর কি হচ্ছে এসব! এই শহরে এসেছি বছরও হয়নি এখনই এসব। কে করছে এসব? আমার কি এই শহরে আসা উচিত হয়নি? আমি কি ফিরে যাবো নিজের শহরে নাকি এখানে থেকে সব স’হ্য করে ঠিকে থাকবো? হে ঈশ্বর আমাকে কোন পথ দেখান।”

টিভি বন্ধ করে দিলো এনাক্ষী। আর শোনার ক্ষমতা যে তার নেই।

থানায় বর্তমানে শোনা যাচ্ছে একজন সন্তান হারা মায়ের আ’র্তনা’দ। সবাই চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জিসুর মা পার্ক বোরাম মেয়ের শোকে পাগল প্রায়। দীর্ঘক্ষণ কান্না করার পর তিনি থেমে যান, নিজেকে সামলে নিয়ে প্রস্তুত করেন প্রশ্নের উওর দেওয়ার জন্য। হান ওনাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।

” আপনি ঠিক আছেন?”

” হুম।”

” আমরা কি এবার প্রশ্ন করতে পারি?”

” করুন।”

” আমার মেয়ে পার্ক জিসু কি ম’দ্যপা’ন করে?”

” হ্যাঁ, হাই স্কুল থেকে।”

” আপনারা কি তাকে বারণ করেননি ম’দ্যপা’ন করতে?”

” করেছিলাম কিন্তু জিসু আমাদের কারো কথা শুনতো না। নিজের মনের মতো সে চলতে পছন্দ করতো।”

” আপনাদের মেয়ে আপনাদের সাথে থাকতোনা কেন? কেন সে নিজের বাড়ি থেকে এতো দূরে আলাদা এপার্টমেন্ট নিয়ে থাকতো?”

” কারণ তার এই ধরণের চলাচল আমাদের কারোই পছন্দ ছিলোনা। আমরা তাকে এসব ছেড়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলতাম। যার কারণে সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।”

” এপার্টমেন্টের ভাড়া, পড়াশোনা খরচ, বারে যাওয়ার ওন(টাকা) সে কোথা থেকে পেতো?”

” তার বাবাই তাকে ওন দিতো। তিনি চাইতেন মেয়ে দূরে থাকলেও যেন স্বচ্ছলভাবে থাকতে পারে।”

” কালকে তার সাথে আপনাদের কারো কথা হয়েছিলো?”

” হ্যাঁ। বারে যাওয়ার আগে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিলো।”

” কি ধরনের কথা?”

” সবসময় যেমনটা হয়ে থাকে। তাকে বারে যেতে বারণ করায় সে রে’গে ফোন কেটে দিয়েছিলো।”

” দুঃখিত এই প্রশ্নটা করার জন্য কিন্তু আপনার মেয়ে পার্ক জিসুর কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?”

” হ্যাঁ আছে তবে আমি তাকে চিনিনা।”

” নাম জানেন? কিংবা তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?”

” না আমাকে এসব জিসু কখনই বলেনি কারণ আমি এসব পছন্দ করিনা৷ তবে আপনি তার ফ্রেন্ড হোন ইয়ানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে হয়তো কিছু জানতে পারে।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here