#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আজ থেকে নতুন ভার্সিটিতে যাত্রা শুরু এনাক্ষীর। সে তৈরি হয়ে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাসে পৌঁছে গিয়েছে। ভার্সিটিতে পৌঁছে এনাক্ষী সর্বপ্রথম প্রফেসার জিওনের সাথে দেখা করে।
” গুড মর্নিং প্রফেসার।”
” গুড মর্নিং এনাক্ষী। সবঠিক আছে?”
” জ্বি প্রফেসার। আপনার সাহায্য ছাড়া এতোদূর আসা সম্ভব হতোনা।”
” ভালো মতো ক্লাস করো। যেহেতু তুমি ল্যাঙ্গুজ কোর্স করেছো আশা করছি খুব বেশি সমস্যা হবেনা তবে কোন সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতে পারো।”
” ধন্যবাদ প্রফেসার। এবার আমি ক্লাস যাই।”
” ঠিক আছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করো।”
প্রফেশার জিওন থেকে বিদায় নিয়ে এনাক্ষী লিফটের কাছে এসে দাঁড়ালো। এখন তার সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুসময় দাঁড়ানোর পর লিফট এলে এনাক্ষী তাতে উঠে পড়লো। কিন্তু যখন লিফটের দরজা বন্ধ হবে সেইসময় একটা মেয়ে দৌড়ে লিফটের দিকে আসতে লাগলো। এনাক্ষী চেয়েও লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকাতে পারেনি ফলে মেয়েটিকে ছাড়াই বাকিরা উপরে উঠে গেলো।
ক্লাসে গিয়ে এনাক্ষী মাঝের একটা সিটে বসে পড়লো। কিছু সেকেন্ড পরেই মিস ক্লাসে চলে এলো যার কারণে এনাক্ষী কারো সাথেই কথা বলার সুযোগ পায়নি। মিস পড়া শুরু করবে সেইসময় একটা মেয়ে দৌড়ে এলো। এনাক্ষী তাকিয়ে দেখলো হাঁপাচ্ছে মেয়েটি। মিস তাকে তাড়াতাড়ি বসতে বললো এবং পড়া শুরু করে দিলো। পড়ার মাঝে এনাক্ষী হঠাৎ খেয়াল করলো দৌড়ে আসা মেয়েটি তার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকানোর কারণটা এনাক্ষী বুঝতে পারলোনা, তার একটু অস্তিত্ব হতে লাগলো বিধায় তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো।
ক্লাস শেষে এনাক্ষী যখন উঠে দাঁড়াবে তখন সেই মেয়েটি তার পথ আটকে দাঁড়ালো। এনাক্ষী এবার ভালো করে মেয়েটির দিকে তাকালো। কাঁধ পর্যন্ত চুল তাতে সুন্দর করে ব্যাং কাট করা, ফর্সা গায়ের রং, কোমড়ে হাত দিয়ে চোখগুলো ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি আঙ্গুল উঁচু করে এনাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” তুমি সেই মেয়েটা না যে লিফটে ছিলে? তোমার সাহস কত বড় আমি দৌড়ে আসছি দেখেও তুমি লিফটটা থামওনি। তুমি জানো এরজন্য তোমাকে আমি কত বড় শা’স্তি দিতে পারি?”
মেয়েটির কথা শুনে এনাক্ষী শুকনো ঢোঁক গিললো। এই দেশে র্যাগিং এর পরিমাণ কতটুকু সেই সম্পর্কে তার কিছুটা হলেও ধারণা আছে। প্রথম দিনই র্যাগিং এর শিকার হয়ে সে মানসম্মত হা’রা’তে চাইনা।
” সরি, আমি লিফট থামাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা থামেনি।”
” রাখো তুমি তোমার সরি। তোমার জন্য আমাকে কতগুলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসতে হলো। পা জোড়া এতো ব্য’থা করছে। এর শা’স্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।”
” প্লিজ তুমি এরকমটা করোনা। আমি বুঝতে পারেনি, প্লিজ।”
” কোন প্লিজ না। তোমার শা’স্তি হচ্ছে তুমি আমার বাড়িতে এসে আমার পা মালিশ করে দেবে। আমি ভালো বলে সবার সামনে কিছু করছিনা। যদি না আসো তবে সবার সামনে শা’স্তি দেবো। এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে যাও।”
এনাক্ষী কাঁদো কাঁদো মুখ মুখে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। তার এখন ভিষণ কান্না পাচ্ছে।
” এই শহরটা আসলেই আমার জন্য খা’রা’প। প্রথমে বিল্ডিং এর ঘটনা এবার ভার্সিটিতে এসে এতো জ’ঘ’ন্য ঘটনা। দেগুতে থাকার সময় তো কত ভালো ছিলাম কিন্তু সউলে আসার পর থেকে একেক পর এক বাজে ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঈশ্বর তুমি এই বাচ্চাটার উপর একটু কৃপা করো। এখন আমি করি করবো? বাড়িতে যদি এসব জানতে পারে আমাকে আর এই শহরে থেকে পড়াশোনা করতে দেবেনা। আবার না গেলেও সবার সামনে অপ’মা’নিত হতে হবে। ঈশ্বর তুমি কোন পথ দেখাও।”
কি করবে সেটাই চিন্তা করতে করতে হাঁটছিল এনাক্ষী। আচমকা ব্যাগে টান পড়াতে সে খানিকটা পেছনের দিকে ঝুঁকে গেলো। সে পেছনে ফিরে দেখলো ক্লাসে থাকা সেই মেয়েটি। এনাক্ষী চোখ নামিয়ে নিলো। নিচু কন্ঠে বললো,
” কিছু বলবে?”
আচমকা মেয়েটি হেঁসে ফেললো। হাসির শব্দ শুনে এনাক্ষী চোখ তুলে দেখলো মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
” ও মাই গড। তুমি এতোটা বোকা এবং ভীতু আমি বুঝতে পারিনি। ইশ, দেখো মুখটা পুরো শুকিয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি কান্না করে দেবে। এই মেয়ে তুমি এতোটা ভীতু কেন? এতো ভীতু হলে এই ভিনদেশে চলতে পারবে।”
আচমকা মেয়েটির মুখে মিষ্টি কথা শুনে এনাক্ষী বিভ্রান্ত হয়ে গেলো আর তা মেয়েটির বুঝতে অসুবিধে হলোনা।
” সরি, আমি তখন মজা করছিলাম। তুমি নতুন তো তাই একটু মজা করেছিলাম কিন্তু তোমাকে দেখে মায়া হলো তাই আর বেশি দেরি না করে সত্যিটা বলতে চলে এলাম। তুমি রা’গ করো না, হ্যাঁ? আমি একটু এরকমই, সবার সাথে মাঝে মাঝে ছোটখাটো মজা করে থাকি।”
মেয়েটির কথা শুনে এনাক্ষীর মুখে খুশির আভা দেখা গেলো।
” সত্যি? তার মানে তুমি আমাকে শা’স্তি দেবে না?”
” আরে না, এই সামান্য ব্যপারে কি কেউ শা’স্তি দেয় নাকি? ক্লাসে দেখলাম একা বসে ছিলে। কোন ফ্রেন্ড পাওনি?”
” না এখনো কারো সাথে কথা বলা হয়নি।”
” তুমি চাইলে আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারো। আমাদের গ্রুপে কোন ফরেনার নেই। তুমি আমাদের সাথে যুক্ত হলে আমাদের ভালো লাগবে। তুমি কি হবে?”
” অবশ্যই।”
” আচ্ছা আমার নাম তো বলাই হইনি। আমি চোই হিতোমি আর তোমার নাম আমি জানি। এবার চলো আমার বন্ধুদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দি।”
হিতোমি এনাক্ষীর হাত ধরে তাকে ভার্সিটির মধ্যে থাকা কফি শপে নিয়ে গেলো।
” হ্যালো গাইস। এই দেখো আমি কাকে ধরে নিয়ে এসেছি। আমাদের নতুন বন্ধু এনাক্ষী বসু, সে একজন ফরেনার। এনাক্ষী আমি তোমার সাথে এদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ডো বিন(ছেলে), জি ওয়ান(ছেলে) এবং সিও ইয়েজি(মেয়ে)। আমাদের চারজনের সাথে আজ থেকে তুমি যুক্ত হলে।”
” আনেংহাসেও চিনগু।” (হ্যালো বন্ধুরা)
” আনেংহাসেও। ইউ আর সো বিউটিফুল, স্পেশালি ইউর আইস।” জি ওয়ান বললো। তার কথাকে সমর্থন করলো হিতোমি এবং ডো বিন। হিতোমি, জি ওয়ান এবং ডো বিন কিছুসময়ের মধ্যেই এনাক্ষীর সাথে মিশে গেলো, তার সম্পর্কে এবং তার দেশ সম্পর্কে তারা কথা বলতে লাগলো। এরকম মিশুক ফ্রেন্ড পেয়ে এনাক্ষী খুব খুশি হলো। তবে সে খেয়াল করলো সিও ইয়েজি এখনো পর্যন্ত তার সাথে কোন কথা বলেনি। বিষয়টা এনাক্ষীর খা’রা’প লাগলো তবে সে এই বিষয়ে বেশি মনোযোগ না দিয়ে নিজেই প্রথমে কথা বললো,
” হ্যালো ইয়েজি। কেমন আছো তুমি?”
” হ্যালো।” ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো ইয়েজি। এনাক্ষী চোখ ঘুরিয়ে বাকিদের দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি দেখে বাকিরা অপ্রস্তুত ভাবে হালকা হাসলো। হিতোমি টেনে ইয়েজিকে সাইডে নিয়ে গেলো।
” এসব কি ইয়েজি? এনাক্ষী তোমার সাথে নিজে থেকে কথা বলেছে আর তুমি কিনা তার সাথে এরকম ব্যবহার করলে। সে মনে ক’ষ্ট পেয়েছে তুমি বুঝতে পেরেছো।”
” হিতোমি তুমি কেন মেয়েটিকে আমাদের মাঝে আনলে? ওর ক্লাস আর আমাদের ক্লাস দেখেছো তুমি? কোথাই ও একটা ফরেনার আর কোথাই আমরা। ওর শরীরের রং আর আমাদের রং দেখেছো?”
” ইয়েজি তুমি এসব কোন ধরণের কথা বলছো? তুমি এখনো এসব মেনে চলো? মেয়েটা এখানে নতুন, আমাদের উচিত ফরেনার হিসেবে তাকে সাহায্য করা আর তুমি কিনা তার সাথে এরকম ব্যবহার করছো।”
” আমি জানিনা এসব। তুমি মেয়েটাকে বলো আমাদের মাঝ থেকে চলে যেতে। তার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব সম্ভব নয়।”
” তা হয়না ইয়েজি। এনাক্ষী ক’ষ্ট পাবে এতে।”
” তাহলে তোমরা থাকো ওই ফরেনার ডার্ক স্কিন টোনের মেয়েটাকে নিয়ে আমি গেলাম।”
ইয়েজি রাগ দেখিয়ে ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো। হিতোমি তাকে আটকাতে চেয়েও পারলোনা।
” কি হলো হিতোমি? ইয়েজি চলে গেলো কেন?” ডো বিন প্রশ্ন করলো।
” কোন সম’স্যা হয়েছে কি হিতোমি?” এনাক্ষী বললো। এনাক্ষীর কথা শুনে হিতোমি তাড়াহুড়ো করে বললো, ” না কোন সমস্যা হয়নি। ইয়েজির কিছু জরুরি কাজ ছিলো তাই চলে গিয়েছে। তুমি বলো কি বলছিলে। আমি কত কিছু মিস করে ফেললাম।”
এনাক্ষী কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারলো যে কোন সম’স্যা হয়েছে তবে মুখে কিছু বললোনা। স্বাভাবিকভাবে কথা চালিয়ে গেলো। হিতোমি, ডো বিন এবং জি ওয়ানের দিকে হতাশাভরা দৃষ্টিতে তাকালো। তার চোখের ভাষা দেখে দু’জনেই আসল ব্যপারটা বুঝতে পেরে গেলো।
চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ফোনে কথা বলার কারণে এনাক্ষী একটু অন্যমন্সক হয়ে পড়েছিলো। তাই ভু’লবশত একটা বয়স্ক ব্যক্তির সাথে তার ধা’ক্কা লেগে যাই। যার ফলে লোকটির হাতে থাকা কিছু জিনিস মাটিতে পড়ে গেলো। এনাক্ষী তাড়াতাড়ি জিনিস গুলো নিচে থেকে তুলে ওনার হাতে তুলে দিলো।
” জেসোহামনিদা হারাবোজি। জেসোহামনিদা, জেসোহামনিদা।” ( সরি গ্র্যান্ডপা। সরি, সরি।)
” গ্যানছানায়ও।” ( ঠিক আছে)
” জেসোহামনিদা।” অপ’রাধী কন্ঠে ক’রু’ণ স্বরে বললো এনাক্ষী। বয়স্ক লোকটি হাতের ইশারায় ঠিক আছে বলে চলে গেলেন। এদিকে ফোনে এনাক্ষীর মা এসব শুনে তাকে ব’কা দিতে লাগলেন। এনাক্ষী যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখন সে খেয়াল করলো নিচে কাগজে মোড়ানো কিছু একটা পড়ে আছে। এনাক্ষী তা হাতে তুলে নিলো। কিছু সেকেন্ড পরেই সে বুঝতে পারলো এটা ওই বয়স্ক ব্যক্তিটির। এনাক্ষী দ্রুত ফোন কেটে সেই দিকে দৌড় দিলো যে রাস্তা দিয়ে লোকটি গিয়েছে।
” হারাবোজি।”
বয়স্ক লোকটি পেছনে ফিরে এনাক্ষীর দিকে কপাল কুচকে তাকালো। এনাক্ষী ইতস্তত হয়ে জিনিসটা ওনার দিকে বাড়িয়ে দিলো। লোকটি জিনিসটি নিয়ে কোন কথা না বলে দ্রুত স্থানটি ত্যাগ করলো। ওনার এরকম ব্যবহারে এনাক্ষী কিছুটা অবাক হলো তবে সে ভাবলো হয়তো ধা’ক্কা লাগার কারণে লোকটি তার উপর রে’গে আছে।
.
.
পার্ক জিসুর বাড়িতে অনেক খুঁজে পুলিশরা একটা ছোট সিসিটিভি ক্যামেরা খুঁজে পেয়েছে। এটা পেয়ে তারা এক চিলতে আশার আলো পেয়েছিলো কিন্তু পরবর্তীতে তারা আবার হ’তা’শ হলো। কারণ গত তিনদিনের কোন ফুটেজই ক্যামেরাতে রের্কড হয়নি। হোন ইয়ান থেকে তারা জানতে পেরেছে এটা পার্ক জিসুই নিজের ঘরে লাগিয়েছিলো। তবে তারা একেবারে হ’তা’শ হয়নি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেই চেষ্টার কারণে এতোদিন পর তারা সামান্য কিছু হলেও সন্দেহজনক জিনিস খুঁজে পেয়েছে।
পার্ক জিসুর এপার্টমেন্ট থেকে কিছুটা দূরে একটা সিসিটিভিতে একজন সন্দেহজনক ব্যক্তিকে তারা দেখতে পেয়েছে। তাকে সন্দেহ করার মূল কারণ ব্যক্তিটির চেহারা একদমই বোঝা যাচ্ছেনা। পুরো শরীরে কালো রঙের কাপড় পরিধান করা, এমনকি হাতটা পর্যন্ত সে কাপড়ের আড়ালে রেখেছে। এভাবে কাপড়ের আড়ালে লুকে থাকার কারণে পুলিশ এটাও ঠিক মতো বুঝতে পারছেনা এটি কোন ছেলে নাকি মেয়ে।
” স্যার আমরা এখন কিভাবে খুঁজে বের করবো এই ব্যক্তিটি কে? কিংবা আসলেই কি এটি সেই ব্যক্তি কিনা। যদি আমাদের ভুল হয়ে থাকে?” কাং হু চিন্তিত স্বরে বললো।
হান স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে প্রতিউওরে বললো,
” একটু ধৈর্য ধরো কাং হু। এতোদিন ধৈর্য ধরার পর আমরা কিছু হলেও হাতে পেয়েছি। তাড়াহুড়ো করলে কিছুই হবেনা উল্টো আরো বিগড়ে যাবে। আমাদের ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যেতে হবে।”
” স্যার এই বিল্ডিংও তো সিসিটিভি ছিলো। সেখান থেকে খু’নি ফুটেজ ডিলিট করার সময় কেন কেউ দেখতে পেলো না?”
” গার্ড তো বলেছিলো সেই রুমে সে কাউকে যেতে দেখেনি। এখান কিভাবে লোকটি নিজের কাজ সম্পন্ন করেছে সেটা আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।”
.
.
” এনাক্ষী সাবধানে চালাও, পড়ে…..।”
কায়ান নিজের কথা শে’ষ করবে তার আগেই ধপ করে সাইকেল থেকে নিচে পড়ে গেলো। কায়ান এনাক্ষীর কাছে আসবে তার আগেই ফিলিক্স তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।
” তুমি ঠিক আছো?”
” হুম। সরি, তোমার সাইকেলটাকে আমি ন’ষ্ট করে দিলাম।”
” আরে সাইকেলের কিছু হয়নি। তুমি ঠিক আছো কিনা সেটা দেখো। দেখি হাতটা দেখাও।”
এনাক্ষীর হাতটা টেনে ফিলিক্স খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলো। ঘাস থাকায় অনেক বেশি ব্যথা না পেলেও হাতের তালুতে কিছুটা ছিঁ’ড়ে গিয়েছে।
” দেখো তো, একটু সাবধানে থাকবেনা। দেখি উঠো, আস্তে আস্তে উঠো।”
ফিলিক্স এনাক্ষীকে তুলে দোলনায় এনে বসালো।
” পা টেনে দেখো তো এনা ব্যথা পাচ্ছো কিনা।”
” এই নাও পানি খেয়ে নাও আর ওষুধ লাগিয়ে নাও।” পাশ থেকে নিচু স্বরে বললো কায়ান। এনাক্ষীর এতোটা সময় পর কায়ানের কথা মনে পড়লো। বোতলের ঢাকনা খুলে এনাক্ষীর দিকে বাড়িয়ে দিলো কায়ান।
” ওকে মলম লাগিয়ে দিও।”
ওষুধ এবং তুলো দোলনায় রেখে কায়ান বিল্ডিং এর ভিতরে চলে গেলো। এনাক্ষী চেয়েও তাকে ডাকলোনা। ফিলিক্স মলম লাগিয়ে দিতে চাইলেও এনাক্ষী বাঁধা দিলো। ব্যথা পাওয়া জায়গায়
মলম লাগিয়ে কিছুসময় দোলনায় বসে রইলো সে। পরবর্তীতে ফিলিক্স তাকে উপরে উঠতে সাহায্য করলো।
.
.
কায়ান আজ তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গিয়েছে। যার কারণে এনাক্ষী আজ তার দেখা পায়নি। ডোর লক করে এনাক্ষী ভার্সিটির জন্য বের হবে সেই সময় উপর থেকে ফিলিক্স নেমে এলো। ফিলিক্সকে দেখে সে মিষ্টি হেসে শুভ সকাল জানালো।
” কোথায় যাচ্ছো এনা?”
” ভার্সিটিতে। তুমি ব্যাগপত্র নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
” তুমি যেখানে যাচ্ছো সেইখানে মানে ভার্সিটিতে। তো তুমি কোন ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছো?”
এনাক্ষী তার ভার্সিটির নাম বলার পর ফিলিক্সের মুখে খুশির আভা দেখা গেলো।
” ওমা এনাক্ষী তুমি তো দেখি আমার ভার্সিটিতেই এডমিশন নিয়েছো। দেখো কান্ড, তুমি আমার ভার্সিটিতেই পড়াশোনা করছো আর আমি জানিই না।তো এনাক্ষী তুমি কি আমার সাথে ভার্সিটিতে যেতে চাইবে?”
” কেন নয় সিনিয়র। চলো তাহলে।”
এনাক্ষী এবং কায়ান নিজেদের সাইকেল জোড়া বের করে গন্তব্যের দিকে যেতে লাগলো। রাস্তায় তারা দু’জন বেশ ভালোই মজা করেছে।
সাইকেল পার্ক করার পর এনাক্ষী একটা বিজয়ের হাসি দিলো। কিছুসময় পর ফিলিক্সও নিজের সাইকেলটা পার্ক করলো।
” এনাক্ষী এতো জোরে চালিয়েছো কেমন করে? কিছুদিন আগেই চালানো শিখলে আর তাতেই এতোটা দক্ষ হয়ে উঠলে যে আমিও পারলাম না।” হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ফিলিক্স।
” দেখতে হবে না এটা কে।”
” হুম। কিন্তু তুমি ভেবোনা আমি হা’র মেনে নেবো। পরের বার দেখো আমি ঠিকই তোমাকে হারিয়ে দেবো।”
” দেখা যাবে মিস্টার ফিলিক্স এরি। পরেরবার আমিও আরো তৈরি হয়ে আসবো।”
” এনাক্ষী।”
অন্যকারো মুখে নিজের নাম শুনে এনাক্ষী থেমে যায়৷ তারা দুজন পেছনে তাকিয়ে দেখলো হিতোমি দৌড়ে তাদের দিকেই আসছে।
” এনাক্ষী তুমি এতোটা সময় পর এসেছো। আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ডো বিন এবং জি ওয়ান তো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে তোমার জন্মভূমি সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু তুমি এভাবে ঘেমে গিয়েছো কেন?”
” তাই নাকি! আসলে আমি আর ফিলিক্স ছোটখাটো একটা রেইস করেছি তাই ঘেমে গিয়েছি।”
হিতোমি ফিলিক্সের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো।
” আনেংহাসেও।” নিচু স্বরে বললো হিতোমি।
” আনেংহাসেও। আচ্ছা এনাক্ষী পরে দেখা হবে, আমি এবার আসি। সাবধানে বাড়ি ফিরে যেও আর সাইকেল সাবধানে চালিয়ে যেও।”
এনাক্ষী থেকে বিদায় নিয়ে ফিলিক্স দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। এনাক্ষী সেই দিক থেকে চোখ সরিয়ে হিতোমির দিকে তাকালো। সে এখনো সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
” হিতোমি।”
” হুম।”
” ওদিকে কি দেখছো? ক্লাসে যাবে না?”
” ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”
” তুমি কি ফিলিক্সকে চেনো? না মানে তোমরা তো আগে থেকেই পড়ছো।”
” হুম চিনবো না কেন। তুমি কি করে চেনো তাকে?”
” আমরা একই বিল্ডিং এ থাকি।”
এনাক্ষীর কথা শুনে হিতোমি যে বেশ খুশি হয়েছে সেটা তার কথায় স্পষ্ট বোঝা যায়।
” সত্যি? তাহলে একদিন যেতে হবে দেখছি। আচ্ছা এসো, দেরি হলে প্রফেসার চলে আসবে।”
চলবে…..