#নিয়তি
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
#পর্ব—৮
__________________________
এবার বলুন, কে আপনাকে সাহস দিয়েছে এগুলো করার, আমি বলেছিলাম??
নন্দিনির অগ্নি দৃষ্টি এরিয়ে যাওয়ার মত নয়, তবে তুর্জ একটা ধির স্বাস নিয়ে নন্দিনির হাত তার শার্টের কলার থেকে ছারিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,কেন ভুলটা কোথায়?
তুমি বিয়ে করোনি আমায়? জদি করে থাকো তাহলে আমি তোমার স্বামী হই তাহলে সমস্যা টা কোথায়, কোন সমস্যা বা কারন থাকলে বলো এখনি সব ঠিক করে দিচ্ছি!!
নন্দিনির চোখ এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, কারন তুর্জের কথা সত্য, বিয়ে যখন করেছি তাহলে সমস্যা কোথায় ছবি বা রিলেশনশিপ দেয়ায়,
নাকি নিলয় কে নিয়ে ভয় সে কষ্ট পাবে সেই ভয়!! আর পাবে কেন সেই তো আমায় ছেরে চলে গেছে আমিতো ছারিনি, তবু কেন ওর জন্য মন আনচান করে, ওকে দেখাবো বলেই তো বিয়েতে মত দিয়েছিলাম তবে আজ কেন মন সায় দিচ্ছেনা ওকে দেখাবার।
মনে মনেই ভেবে যাচ্ছে নন্দিনি,
তুর্জ হাতে তুরি মেরে বললো হ্যালো!! কোথায় হারালে, শুনো তোমার সমস্যা হলে সব কেটে দেই কেমন, আমি চাই না এ নিয়ে তোমার মন খারাপ হক!!
তুর্জ নন্দিনির মোবাইল হাতে নিতেই নন্দিনি মোবাইটা ছো মেরে নিয়ে বলে উঠলো লাগবেনা থাক,
এখন আর কেটে লাভ কি!
বলেই রুম ছেরে বেরিয়ে গেলো,
সারা দিন নন্দিনি একবারের জন্য তার রুমে আসেনি, আর তুর্জ ডাকতেও যায়নি,
তুলিকে নিয়ে সপ্নার রুমেই কাটিয়েছিলো সময়, কারন সোহাম বাড়ি নেই,
সপ্নাকে তাদের বাচ্চার কথা জিগ্গাস করতেই সপ্না হালকা হাসি দিয়ে বললো তা কে বললে আমার বাচ্চা নেই??
তুলিতো আমারও মেয়ে, আর নিজের গর্ভের সন্তানের কথা জদি জানতে চাও তাহলে!!!
তোমার ভাসুর এখন বাচ্চা চায় না, কারন তিন বার বাচ্চা নষ্ট হওয়ার পর শরিল অনেক দুর্বল হয়ে পরেছিলো, আর সোহাম চাকরিটা ছেরে নিজের ব্যাবসা গুছাচ্ছে তাই অন্য বোঝা বইতে চায় না,
গল্পের আসল লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা।
সপ্নার কথায় নন্দিনি কিছুটা অবাক সন্তান কখনো বোঝা হয় নাকি!!
যাক হয়তো একেক জনের একেক রকম মানসিকতা, তাই চুপ থাকাই শ্রেয়,
~~~~~~~~
আজ অনেক দিন পর সালাম সাহেব এসেছেন নিলয়দের বাড়িতে,
নিলয়ের বাবা উঠে আপ্পায়ন না করতে পারলেও মুখে খুব সমাদর করেছে,
নিলয়ের মা চা নাস্তা টেবিলে রাখতেই সালাম সাহেব মলিন হাসি দিয়ে বললো না ভাবি অন্য এক দিন আজ কিছু খাবোনা।
কেন ভাই সাহেব আগেতো এসে চা না খেয়ে যেতেন না তাহলে আজ কেন এমন করছেন?
তখন আসতাম মনের ফূর্তিতে চা খেতাম, কারন টাও অন্য রকম ছিলো এখন না আপনাদের মনের পরিস্থিতি ভালো না আমার!!
তাই…….আর কিছু বলার আগেই নিলয়ের বাবা সালাম সাহেব কে থামিয়ে বললো থাকনা ওসব কথা ,
সালাম সাহেব আবার মুখে হালকা টেনে বললো হুম ঠিক আছে,
তা সেদিন নন্দিনি এসেছিলো তো কিছু বুঝতে পারেনি তো???
নিলয়ের মা চোখের নোনা জল টা লুকিয়ে বললো না ভাই বুঝতে দেইনি ওকে বলেছি নিলয় বহুদূর এগিয়ে গেছে, আর নন্দিনি ও জেনো এগিয়ে যায়।
সালাম সাহেব প্রশান্তির হাসি মুখে এনে বললো বাচাঁলেন ভাবি, আমি জানি তুর্জ খুব ভালো তাই তো ওর কথা মতই সব করেছি মেয়ে আমার ভালো আছে!!!
বলেই উঠে চলে গেলো, জাওয়ার সময় শুধু বললো কখনো ভাবিনি ভাবি এমনটা হবে কোথাকার জিনিস কোথায় নিয়ে পৌছেছে সব উলট পলট হয়ে গেছে,
গল্পের আসল লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা।
নিলয়ের বাবা চোখের চশমাটা খুলতে খুলতে বললো সবই তো ভাই #নিয়তির খেলা আমরা আর কি করব!!
কথাটা শুনে আর এক দন্ড দারায় নি সালাম সাহেব, মনে অনেক বড় পাথর নিয়ে ঘুরছে, তা কবে হালকা হবে কে জানে,,,,,
~~~~~ রাতে খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত সোহাম মনের আনন্দে খাবার চিবুচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে মনটা বেশ ফুফুরা,
তবে বার বার ফোন আসছে সপ্না তেমন খেয়াল না করলেও নন্দিনি ঠিক খেয়াল করছে, কারন সে আজ তুর্জের পাশে বসেনি সোহামের এক পাশের চেয়ারটায় বসেছে ওর অন্যপাশ টায় সপ্না।
নন্দিনি হালকা নুডুলস খেয়েছে তার খিদে নেই আর তুর্জ ঠেলে ঠুলেও খাওয়াতে পারলোনা।
তুলিকে নিয়ে কাজের মেয়ে হাটছে তুলির ঘুম ঘুম ভাব তাই একটু কোলে নিয়ে হাটলেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে জাবে,
সেই
কখন থেকে সোহামের ফোনটা বাজছে আর সে বার বার কল কাট করছে, এক সময় বিরক্ত হয়ে খাবার ছেরে উঠে গেলো,
সপ্না জিজ্ঞাসা করাতে বললো অফিসের দরকারি কল তুমি খেয়ে নাও আমি একটু ছাদে আছি,
শিলা বেগম খেয়ে চুপচাপ উঠে গেলো আর যেতে যেতে বললো বড় বৌ মা আজ আমায় আজ দুধ দিও না খেতে ইচ্ছা করছে না,
বলেই শয়ন কক্ষের দরজাটা বন্ধ করে দিলো, অবশ্য কোন ছিটকিনি লাগায় না উনি একা মানুষের বাস এই রুমে,
তাও আবার কিসের এত আবরন, তাই দরজা যাতে ধাক্কা দিলে খুলে যায় ,
নন্দিনি রুমে এসে চুপচাপ একপাশে শুয়ে পরে,
তুর্জ আগে থেকেই রুমে উপস্থিত, তুলি ঘুমিয়ে গেছে বসে বসে তুলির মাথায় হাত বুলাচ্ছে তুর্জ,
নন্দিনির কি এক পলক চেয়ে বললো ঔষধ খেয়ে নাও,
আর কাল বিকেলে রেডি থেকো!!!
নন্দিনির শুধু উওর দিলো জ্বি….
সকাল সকাল রেডি হয়ে তুর্জ বেরিয়ে পরলো,
কারন সব কাজ শেষ করে জলদি বাড়ি ফিরতে হবে ৩ টায় ডক্টরের কাছে যেতে হবে তাই,
নন্দিনিও সময় মত রেডি হয়ে আছে,
তুর্জ বাড়ি এসেছে খুব ক্লান্ত হয়ে, তাও বেরুতো হবে,
তাই নন্দিনিকে ৫ মিনিট বলে ওয়াসরুমে চলে গেলো গোসলটা করে তুর্জ একটু হালকা ফিল করছে,
তার পর তুলিকে চুমু দিয়ে সপ্নার কাছে রেখে বেরিয়ে পরলো,
ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যান্ডেজটা খুলে নিলো, কোন সমস্যা নেই,
হালকা ঔষধ লিখে দিয়ে বিদায় দিলো।
তুর্জ আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে, পাশে নন্দিনি বসে আছে অন্যমনস্ক হয়ে,
তাই খেয়ালই করেনি গাড়িটা বাড়ির দিকে না ঘুরিয়ে, অন্য রাস্তার মোড় নিয়েছে,
একটু পর গাড়ি থামালো তুর্জ তবে বেশ অবাক বাড়ির দিকে যাইনি তাও কিছু বললোনা!
নন্দিনি গাড়ি থেকে নামবে তখনই চোখে পড়লো বাহিরে মানুষের চলাচল রাস্তার পাশে দোকান পাঠ, হা হয়ে তুর্জের দিকে তাকাতেই তুর্জ বাকা হাসি দিয়ে বললো নামো।
নন্দিনিও বাধ্য মেয়ের মন চুপচাপ নেমে গেলো নামতেই খেয়াল করলো শপিং মলের সামনে ওরা,
তুর্জ একা একাই হেটে চলছে মলের ভিতরে নন্দিনিও কোন উপায় না দেখে তুর্জের পিছন পিছন হাটছে তবে হাটছে বললেও ভুল হবে এক রকম দৌরাচ্ছে,কারন তুর্জের সাথে পা মিলাতে পারছেনা নন্দিনি,
তাই তুর্জ বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে,
নন্দিনি শাড়ির কুচি ধরে হাটছে আর তুর্জকে অনুশরন করছে,
দুকদম আরো চলতেই নন্দিনির চোখ আটকে গেলো তুর্জের পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে!!!
এটা কে আর বেশ হেসে হেসেই কথা বলা হচ্ছে??
নন্দিনি এবার শাড়িটা একটু উচু করে জোরে জোরে পা ফেলছে,
কিছুটা কাছে যাওয়ার পর হালকা শুনতে পেলো স্যার আজকে আপনায় পুরো হিরোর মত লাগছে জাস্ট ওসাম……
নন্দিনি ওদের কাছে গিয়ে গলায় খকখকানি দেয়,এতে সেই মেয়ে আর তুর্জ দুজনেই নন্দিনির দিকে ফিরে,
তুর্জ নন্দিনির একহাত ধরে কাছে এনে বললো she is my wife…..
মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো ঠিক, কিন্তু মেয়েটার পরিচয় জানা হল না, তাই নন্দিনি আবার তুর্জকে জিজ্ঞাস করলো উনি কে????
তুর্জ হালকা হেসে বললো ওও ভুলেই গেলাম, উনি হলেন সোমাহ ভাইয়ার পি এ, মিস এনি।
ওহ আচ্ছা,, তবে নন্দিনির তুর্জের পাশে এই এনি টাকে সজৎ হচ্ছেনা,
খুব সুন্দরি বটে তাই যেকেও ফিসলে যাবে,
নন্দিনি তুর্জের হাতটা ধরে একটু সরিয়ে দিলো ঐ এনি নামক ভাইরাস টার থেকে, কাছে এনে বললো চলুন কোথায় জাচ্ছিলেন নাকি মন চাইছেনা এখান থেকে সরতে!!
কিছুটা সন্দেহ জনক ভাবেই, তবে তুর্জ বেশ বুঝতে পারছে, তার খিটখিটে মেজাজি বৌটা এবার খেপেছে,
তুর্জ নন্দিনিকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরো একটু কথা বললো, ওয়াও এনি তোমায়ও বেশ লাগছে আজ,
তা চলোনা আমাদের সাথে হালকা কিছু শপিং করার ছিলো তা তুমি এলে তোমার পছন্দে কিছু শার্ট নিবো।
এনি কিছু বলবে তার আগেই নন্দিনির ভয়ংকর হাসি আর সাথে একটা বাক্য,
চলুন না আজ আমি আপনার জন্য শেষ কাপর পছন্দ করেদিই, তুর্জ বেচারা ভয় ভয় নিয়ে বললো শেষ কাপর মানে???
ওমা বুজলেন না আজকেই পছন্দ করে দিবো, পরে একদিন না হয় এনি আপু পছন্দ করে দিবেন। আর আজ হয়তো উনি কোন কাজে এসেছেন তা আপনার জন্য উনার কাজের ক্ষতি হতে পারে তাই উনাকে ডিস্টাব করে লাভ নেই।
বলেই তুর্জের হাতটা খামচে ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো,
এনি বেচারি এসেছিলো একটু ঘেসাঘেসি করতে তাও হল না মেয়ে টা বড্ড চালাক,
আজ তুর্জের পিছু নিলে নিজের কিছু শপিং হয়ে যেতো। তাই এনির মুখ মলিন।
এনি মুখটা মলিন করেও আবার কি ভেবে একটা সয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে এলো,
তুর্জ হাটছে আর নন্দিনিকে দেখছে, একটু গিয়ে তুর্জের হাত টা ছেরে নন্দিনি বললো কি হল আপনিনা কেনা কাটা করবেন,
তাহলে না কিনে শুধু হেটেই যাচ্ছেন কেন?
নন্দিনির পশ্নে তুর্জ একটু দারিয়ে বললো ওমা তোমিনা বললে আজ তোমার পছন্দের কেনা কাটা হবে, তাইতো আমি তোমার সাথেই চলছি!!!
নন্দিনি তুর্জের হেয়ালি কথা বেশ বুঝতে পারছে মনে সে কোন শোরুমে না ঢুকলে আজ সারা দিন হাটিয়ে মারবে।
নন্দিনি একটা দোকানে ঢুকে গেলো তুর্জও পিছু পিছু নিলো তুর্জের জন্য বেশ কয়েকটা শার্ট পেন্ট নিলো সপ্না ভাবির জন্য একটা শাড়ি নিলো, মায়ের জন্য একটা কাতান শাড়ি নেয়া হল তুলি মামনির তো আছেই খেলনা আরো বহু কিছু,
তবে নন্দিনির মনটা বেজাই খারাপ করান সবার জন্য সব কিছু নিলো আমাকে একবার জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করল না??
এটা কেমন মানুষরে বাবা, আমি কি এলিয়েন নাকি আমায় চোখে পড়েনা!!!!
সব কেনা শেষে তুর্জ বিল দিয়ে ব্যাগ গুলো নিয়ে হাটা শুরু করলো,
নন্দিনির মনটা তেমন ভালো না থাকলেও তুর্জকে বুজতে দেয়া চলবেনা, তাই হালকা হাসি নিয়ে ওর সংগে তাল মিলিয়ে হাটছে,
একটা কসমিটিক্স এর দোকানের সামনে আসতেই চুড়ির দিকে নজর গেলো,আসলে রেশমি চুড়ি নন্দিনির উইক পয়েন্ট তাই চোখ বার বা চুড়ি গুলার দিকে গিয়েই আটকাচ্ছে,
মনে মনে বিলাপ করছে নন্দিনি “ইস সাথেতো কোন টাকাই নেই, চাইবো নাকি উনার কাছ থেকে ধার হিসাবে।
না না কি জানি কি ভাবো থাক অন্য একদিন এসে নিয়ে জাবো,
ধিরে ধিরে কচ্ছপের মত হাটছো কেন??
বাড়ি জাওয়ার নিয়ত নেই নাকি,
তুর্জের আওয়াজে নন্দিনির ধ্যান ভংগ্গো হল,
দুজনেই জোরা পায়ে পা চালিয়ে গাড়িতে এসে বসলো,
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা বাড়ি,বাড়ি এসে তুলিকে কোলে করে নিয়ে ব্যাগ থেকে একেক করে আনা খেলনা ও জামা দিচ্ছে,
খেলনা পেয়ে তুলি মহা খুশি হাতে তালি দিচ্ছে আর খিল খিল করে হাসছে,
মায়ের শাড়ি আর সপ্না ভাবির শাড়ি টা দিয়ে তুর্জ রুমে এলো হাতে শপিং ব্যাগ কয়টা নিয়ে।
ব্যাগ দুটো রেখে তুলি আর নন্দিনির দিকে একনজর তাকিয়ে আবার ওয়াস রুমে ঢুকে গেলো,
নন্দিনির নজর এবার ব্যাগের উপর , আরে ওনার জামা তো আর তুলির জামা আমি সাথে নিয়ে চলে এসেছিলা তাহলে এগুলো কার??
উনিকি মায়ের আর ভাবির শাড়ি দিয়ে আসেনি……..
নন্দিনি তুলিকে বসিয়ে খেলনা হাতে দিয়ে ব্যাগ গুলার কাছে এগিয়ে এলো….
চলবে।