নিয়তি পর্ব -১৩

#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব—১৩
_______________________

নন্দিনি হা হয়ে আছে তুর্জের দিকে, তুর্জ কিছু না বলে হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে আবার আগের মত শুয়ে পরল।

নন্দিনিও একটু নরে চরে হাতটা ধুয়ে শুয়ে পরলো….

~~~~

পর দিন সকলে কহিনুর বেগম হাজির, অবশ্য শিলা বেগমের ফোন পেয়েই এসেছে তবে তা নন্দিনিকে বলে নি,

শিলা বেগম অনেক ক্ষন কহিনুর বেগমের সাথে আড্ডা দিলো, তবে কহিনুর বেগমের আসার কারনটাও বলে দিলো, নন্দিনিদের ২/৩দিনের জন্য নিতে এসেছে,

কারন নন্দিনির বড় জেঠুর মেয়ের বিয়ে, গ্রামে জাবে সবাই মিলে,
তবে শিলা বেগম কেও জাওয়ার নিমন্ত্রর দিয়েছে কিন্তু সপ্নার মন ভালোনা , সোহাম ঠিক মত বাড়ি আসেনা তাই একা ওকে রেখে জাওয়া ঠিক হবে না।

নন্দিনি সুন্দর করে নিজের আর তুলির কাপর গুছিয়ে নিচ্ছে, তুর্জ এসে এসব দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করতেই, সব শুনলো।

তুর্জের ও জাওয়ার ইচ্ছা করছে তবে বলতে পারছে না, কহিনুর বেগম মেয়ের জামাইয়ের মুখ খানা দেখে হেসেই দিলো,

কারন তুর্জ কেদেঁ দিলো বলে, আর সবাই ভালে করে জানে তুলি ছারা তুর্জ থাকতেই পারবে না আর নন্দিনিতো আছেই, শিলা বেগম ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললো চুল আমার বাতাসে পাকেনি রে বাবা,

যা রুমে গিয়ে নিজের কাপর গুছিয়ে নে হয়তো ২/৩ দিন থাকতে হবে কাল গায়ে হলুদ,
আজ বিকেলে রওয়া দিবে,
তুর্জের মন এবার ফুর ফুরা, নিজের কেস গুলে এসিস্টেনকে দিয়ে ৩ দিনের জন্য মুক্ত হল,

তুর্জ রুমে এসেছে লাগেজটা হাতে নিতেই নন্দিনি তুলিকে ডেকে বললে আম্মু তোমার বাবাই কে বলে দাও উনার জামা কাপর নিয়েছি উনি জেনো দয়া করে রেডি হয়ে নেয়।

তুর্জ চাদঁ মাখা হাসি দিয়ে রেডি, তবে সপ্নাকে সাথে জাওয়ার জন্য অনেক জোর দিয়েছ, একটু হাওয়া বদল হলে ভালো লাগবে তাই।

সপ্না শুধু বলেছিলো আমি চলে গেলে ঘর সামলাবে কে তুমি যাও তুমি ফিরে এলে আমি লম্বা ছুটিতে জাবো”””””
নন্দিনি কখনোই এই ভারি ভারি কথার মানে বুঝতে পারেনা আর এটা নিয়ে এত মাথাও ঘামায় না,

কহিনুর বেগম চলে গেছে, বিকেলে সবাই বাসস্টেন্ডে থাকবে, গাড়ি করে জাওয়া গেলেও নন্দিনির বায়না গাড়িতে বসে জাবেনা বাসে জাবে বাসে অনেক মানুষ যে ভাবে জায় সেভাবেই জাবে।

“”””……..

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসস্টেন্ড পর্যন্ত গাড়ি করে এসেছে, তুর্জ বার বার নন্দিনির দিকে তাকাচ্ছিলো,

নিল রং এর একটা সিল্কি শাড়ি পরেছে নন্দিনি চুল গুলো খোলা রেখেছে মুখে তেমন সাজ নেই শুধু হালকা লিবস্টিক…..

বেশ লাগছে তুর্জের ইচ্ছা করছিলো ওকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে জাই….

নন্দিনিও তুর্জকে দেখেছে বহুবার আর চোখে ।

কালো রংগের একটা শার্ট পরেছে কালো প্যান্ট ও, তুলিও বেশ বাবার সাথে মানিয়ে কালো একটা ড্রেস পরেছে।

বাসস্টেন্ডে গিয়ে দেখে সালাম সাহেব ও কহিনুর বেগম আগে থেকেই উপস্থিত, বাস চলছে খুব দ্রুত গতিতে ,
সালাম সাহেব আর কহিনুর বেগম তুলিকে নিয়ে বসেছে, তাদের পিছনের সিটে তুর্জ আর নন্দিনি,,

নন্দিনি জানালার ধারে থুতনিটা রেখে বাহিরে হারিয়ে গেছে,
তুর্জ তো নন্দিনির দিকেই চেয়ে আছে,
জেতে জেতে প্রায় ৩ ঘন্টা লাগবে সেখান থেকে নাকি আরো ১ ঘন্টা মানে রাত হয়ে জাবে আরকি,

নন্দিনি বাসে বসে বহু আনন্দ করলে, বাসে বিক্রি করা আচার সে ইচ্ছা মত খেয়েছে, তু্র্জ বারন করেছিলো কারন এত টক আর ঝাল খেলে ক্ষতি হতে পারে।
…….

নন্দিনি বাসে ঘুমিয়ে পরেছে, জানালায় মাথা হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে, তবে বাসের ব্রেক লাগালেই সামনের সিটে ধাক্কা খেতে পারে,
তাই নন্দিনির মাথাটা আস্তে করে নিজের কাধে রেখে দিয়ে নিজের সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে,
সালাম সাহেব বেশ কয়েক বার দুজন কে দেখছে, সালাম সাহেব মনের ভিতর যে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে তা কি করে সরাবে,

নন্দিনিকে সত্যিটা জানানো দরকার নয়তো নিলয়কে সারাটা জীবন ভুল বুজবে, কি করে বলি নিলয় এমন কসম দিয়েছে তা ভংগ্গ করার ক্ষমতাও হয় নি,

একটা দির্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজের সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পরেছে,
কহিনুর বেগম সালাম সাহেবের এই উদাসি হওয়ার কারন বুঝতেই পারছে না, কেন উনি এমন থাকেন কি চিন্তা করে সারা দিন,

তুর্জ বেশ আরাম করে শুয়েছে কারন নন্দিনি তো আজ তার বুকটার মাঝখানে শুয়েছে, এই খালি বুকটা বহুদিন পর ভরা ভরা লাগছে,
…….

বাস থেকে নেমে একটা সিএন জি নিয়েছে, তুর্জ আর সালাম সাহেব সামনে আর কহিনুর বেগম তুলিকে নিয়ে পিছনে,

বাসে চোখ খুলে তুর্জের বুকে নিজেকে পেয়ে নন্দিনি রাগ হয় নি, কারন সব সময় মানুষটাকে ভুল বুঝা ঠিক নয়, হতেও পারে আমিই ঘুমের মাঝে চলে এসেছি,

প্রায় ৫০ মিনিট লাগলো বড় জেঠুর বাড়িতে আসতে, বাড়ির সামনে এসেই চোখ আটকে গেলো বেশ সাজিয়েছে বাড়িটাকে লাইট দিয়ে ভরে ফেলেছে অন্ধকার খুচিয়ে ফেলেছে আলোতে,
তুর্জ ভালো করে দেখছে বাড়িটা বেশ বড় সরই দুতলা বাড়ি, বাড়ির বাম সাইডে অনেক বড় বাগান বাগানে গাছপালায় ভর পুর, পুরো বাড়ি টা ওয়াল দিয়ে ঘেরা,
বেশ ভালোই লাগলো তুর্জের,
ভাড়া মিটিয়ে একটু কাছে আসতেই নন্দিনিকে নিয়ে টানা টানি আরে আপু এসেছে মা আপু এসেছে, বড় জেঠুর দুই মেয়ে,, / টুম্পা/ দিশা,
টুম্পার বিয়েতেই এসেছে ওরা, দিশা মাএ ক্লাস ১০ এর ছাএি,

দিশার চেচামেচিতে সবার নজরে চলে এসেছে বড় জেঠু বেশ সমাদর করে তুর্জকে ঘরে নিয়ে গেছে,
নন্দিনি গাল ফুলিয়ে রেখেছে আমায় কি কেও চোখে দেখেনি নাকি?? জামাই জামাই করে পাগল, দিশাটা ও দেখছি দুলাভাই দুলাভাই করে গলায় ঝুলছে, ধেত আমি কি পচা বাস্তা হয়ে গেলাম নাকি.

ভেতরে ঢুকে তুর্জকে সবাই বেশ খাতির জত্ন করছে,
নন্দিনি ফ্রেশ হয়ে টুম্পার রুমে গেলো, টুম্পা নন্দিনিকে দেখে কান্নায় ভেংগে পরেছে,

আর বললো–

আচ্ছা নন্দিনি বলতো মেয়েদের জীবন টা এমন কেন??
নিজের সব বিলিয়ে কেন এক জন কে আকরে ধরতে হয়.
মেয়ে হয়ে কি ভুল করেছি??★

কেন এই বিধান মেয়েদের কে নিজ বাড়ি মা বাবা ছেরে চলে জেতে হয়…★

নন্দিনি এই পশ্নের জবাব কি দিবে জানা নেই তবে এই মুহূর্তে টুম্পার মনের হাল বেশ বুজতে পারছে, কারন এই সময়টা সেওতো পার করে এসেছে, তবে এখন যে এই মনুষটার মায়ায় জরিয়ে গেছে আর মন চায় না বাড়ি ফিরে জাবার!!!

নন্দিনি মুচকি হাসি দিয়ে টুম্পার পাশে বসে বললো আসলে টুম্পা জানিস তর অবস্থায় আমিও ছিলাম, খুব কষ্ট হয়েছে কদিন,এখননা এই মানুষটা কে ছারতে কষ্ট হয়, আর বাড়ির কথা তেমন মনেও হয় না, তুলিকে নিয়ে দিন চলে জায়, সকালে নাস্তার ঝামেলা সেরে দুপুরের খাবার রেডি করা, উনার বলার আগেই উনার পোষাক রেডি করা, সব কিছুতে এতটাই ব্যাস্ত থাকি মনেই হয় না এটা আমার বাড়ি নয় স্বামীর সংসার, মনে হয় এটাই আমার নিজের ঘর, দেখবি তরও মন বসে জাবে চিন্তা করিস না, আর লিকন ভাই খুব ভালো মানুষ, তরা তো দুজন দুজনকে পছন্দো করিস, সবার তো এত সুখ হয় না।

সবার কপালে সব সয় না রে…..
তর হচ্ছে ইনজোয় কর……

টুম্পা নন্দিনির চোখের পানি মুছে জরিয়ে ধরে বললো কেন এমন হল নন্দিনি তর সাথে কেন?

টুম্পা আর নন্দিনির সেম বয়স তাই দুজন বোনের চেয়ে বন্ধুত্ব সূলভই বেশি।
দরজার বাহিরে দারিয়ে তুর্জ সব শুনেছে,
এমন কেন বললো নন্দিনি- সবার কপলে সব সয় না তাহলে কি ওঅন্য কাওকে পছন্দ করত? না না এ হতে দেয়া জাবেনা ও আমার বৌ আমার মেয়ে তুলির মা,

আমার তো এই রহ্যস বের করতেই হবে, তবে কাকে জিজ্ঞাস করব? টুম্পাকে! না না ওকে এসব বলে লাভ নেই,

রাতে তেমন আর কোন কথা হয় নি, সালাম সাহেব বেশ ক্লান্ত খাওয়া দাওয়া শেরে রুমে ঢুকে বেশ ঘুম দিচ্ছে,

তুর্জের মুখে কোন খাবারই উঠলনা বেশ কিছু রান্না করেছে তুর্জের পছন্দের তাও সে কিছু না খেয়ে ক্লান্ত হওয়ার বাহানা দিয়ে উঠে পরেছে,

বাড়ি ভর্তি মেহমান কাল কে টুম্পার গায়ে হলুদ, তাই সকাল সকাল উঠতে হবে,

তুলির সাথে দিশা আর টুম্পা বেশ মিশে গেছে, যা কিউট না তুলিটা ছোট্ট ছোট্ট দাতঁ গুলো দিয়ো হাসি দিলে যে কারো মন জয় হবেই হবে।

টুম্পা তুলিকে আজ রাতটার জন্য নিজের কাছে রাখতে চাইছে নন্দিনি রাজী না হয়ে পারল না কারন দিশা পায়ে জরিয়ে ধরে বলছে আপু দাও না আজরাত টা ওর সাথে ঘুমাবো…..

তুর্জ হাসি দিয়ে বললো আরে ওতো ঘুমাবে না সারা রাত যন্ত্রনা করবে!!

টুম্পা হাসি দিয়ে বললো তো আমরা কখন বললাম ঘুমিয়ে রাত পার করবো, ওর সাথে খেলবো চিন্তা করবেন না, ও আমাদেরও মেয়েই,

~~~~~

নন্দিনি আর তুর্জ পাশা পাশি শুয়ে আছে,কারো মুখে কথা নেই মাঝ খানে একটা বালিশ রেখে দিয়েছে,
তুর্জের মনের ভিতর শুধু সেই কথা গুলোই ঘুর পাক খাচ্ছে,

নন্দিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে, তুর্জ ভেবেছিলো হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,
তাই নন্দিনির আরেকটু কাছে গিয়ে ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ মেখে দিলো,
তবে নন্দিনি নিজের চোখটা মেলেনি সে দেখতে চায় ঘুমিয়ে গেলে তুর্জ কি কি করে।

তুর্জ অনেক ক্ষন নন্দিনির মাথায় হাত বুলিয়েছে,

খুব ইচ্ছা করছিলো নন্দিনিকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঘুমাতে তবে তা তো সম্ভব নয়,
ইচ্ছাটা মনের ভিতরে চেপেই শুয়ে পরেছে।

~~ সকালে বেশ তুর জুর চলছে সন্ধার অনুস্ঠানের জন্য,

মেহমানে গিজ গিজ বাড়ি,
তুর্জ বড় জেঠুর কাছে গিয়ে উনার হাত ধরে বলেছিলো, দেখুন জেঠু আপনার ছেলে নেই তো কি আমায় কি ছেলে ভাবা জায় না নাকি??

জেঠুর চোখ বেয়ে অঝর পানি, তুর্জ উনার চোখটা মুছে দিয়ে বললো আমার বাবা নেই আপনি আমার বাবা আর এই নন্দিনি আপনার ছেলে বৌ,

এটা শুনেই সবাই হাসিতে মেতেছে,
তুর্জ বেশ এটা ওটা টুক টাক কাজ করে বেরাচ্ছে,
বিকেলে কিছু দরকারে দিশা আর নন্দিনি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলে বড় জেঠু বাধা দিয়ে তুর্জকেও সাথে ঝুলিয়ে দেয়,
কারন নন্দিনি কখন আবার এক্সিডেন্ট করে ফেলে কে জানে,

………

মার্কেট থেকে বেরিয়ো গাড়ি তে দিশা আর তুর্জ উঠেছে, নন্দিনি গাড়িতে উঠে গ্লাসের দিকে তাকাতেই চোখ পরল খুব চেনা এক মানুষের উপর…..

গাড়ির দরজাটা মেলে সেই মানুষটার পিছু নেয়, আর ডাকতে থাকে নিলয় নিলয়…..

নিলয়ের গাড়ির স্পিডের সাথে নন্দিনির পায়ের স্পিড তাল মিলালো না,

নিলয়ে দেখে সে পাগল পাগল নিলয় এখানে কেন এসেছিলো, সে তো আমায় দেখেছে তাহলে দেখেও না দেখার ভান করে গাড়িতে উঠে গেলো??

নন্দিনি দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তায় পরে গেলো,পিছন থেকে তুর্জ এসেই নন্দিনিকে ধরে নিলো,
দিশা আর তুর্জ নন্দিনির পিছন পিছনই ছুটছিলো,

তুর্জের জরিয়ে ধরে শুধু বললো চলে গেছে সে চলে গেছে আজীবনের জন্য একবারও কি তার দেখা পাবেনা……

~~~

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here