নিয়তির সংসার পর্ব ৩

#নিয়তির_সংসার
#পর্ব_০৩
#Mst_Liza

-ভদ্রতা শেখও নি? তুমি কি আমাকে চেনো? কি মনে করে আমার চোখ টিপে ধরলে পেছনের থেকে এসে? বেয়াদব মেয়ে দেখছো না আমি খেতে বসেছি?

কথাগুলো বলে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে খেতে বসলাম।সকলের দৃষ্টি আমার দিকে।কেউ খাচ্ছে না।আমি খাওয়া শেষ করে উঠে নিজের রুমে এলাম।বিছানায় এসে বসতেই দেখলাম উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।আর ওই বাচ্চা মেয়েটা দরজার কাছে এসে পাউরুটি হাতে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে উনার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।উনি ইশারায় মেয়েটাকে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলেন।মেয়েটা ছুটে আসতেই কোলে তুলে নিলেন উনি।হাসানোর চেস্টা করে বললেন মেয়েটাকে,

-আজ কি আমার পরীটা স্কুল যাবে?

মেয়েটা হালকা ডানে বামে মাথাটা নাড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,

-না।

উনিও মেয়েটার মতোন মুখ ফুলিয়ে জানতে চাইলেন,

-না কেন?

মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কোনো উত্তর দিলো না।উনি মেয়েটাকে এনে আমার সামনে দাড় করিয়ে হেসে উঠে বললেন,

-আদিবা এটা আমার মেয়ে।

আমি ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।মেয়েটা চোখ মুখ ছোট করে নিচু দৃষ্টিতে দাঁত দিয়ে পাউরুটি কামড়ে ধরে আছে।আমি হাত ধরে মেয়েটাকে নিজের কাছে টেনে আনলাম। মেয়েটা ভয়ে কেঁপে উঠলে হাত ছেড়ে দিয়ে মুখে কথা বললাম।জানতে চাইলাম আমি,

-তোমার নাম কি?

মেয়েটা ভয়ার্তক কন্ঠে ঠোঁট ছোট্ট করে উত্তর দিলো,

-তুলি।

-বেশ। নামটা ভালো।তো তুলি সম্পর্কের দিক থেকে আমি তোমার মা তাই তো?একটা কথা বলো তোমার মধ্য কি কি বদ অভ্যাস আছে?

আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইলো মেয়েটা।আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম,

-চুপ করে আছো কেন বলো?

চোখ ঘুরিয়ে উনার দিকে নিয়ে বললাম আমি,

-আপনার মেয়েটা খুব মিস্টি দেখতে।অনেক আদর দিয়ে ফেলেছেন ওকে। আমিও একটা সময় ছোট ছিলো যখন বাবা মায়ের অনেক আদর পেয়েছিলাম। যার জন্য যা চেয়েছি তাই দিয়েছে আমার বাবা মা।কখনো কারও তোয়াক্কা করি নি।আর আজ প্রথমবার আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বিয়েটা হয়েছে।কেন? কারণ ঠিক সময়টাতে আমি বাবা মায়ের কথাকে গুরুত্ব দিই নি।আপনিও কিন্তু বাবা হয়ে সেই একই ভুলটাই করছেন।এতো আদর দিয়েন না।আদরে বাদর তৈরি হবে আপনার মেয়ে।মেয়েকে একটু শাষণে রাখুন দেখবেন মানুষ তৈরি হয়েছে।

-মানে? আপনার কথা আমি ঠিক বুঝলাম না।

-না বোঝার মতো তো কিছু বলি নি।আচ্ছা বাদ দিন।আপনি অফিসে যাচ্ছিলেন না? নিশ্চিন্তে অফিসে যান। আমি আপনার মেয়েটাকে দেখবো।

-দেখুন আমি জানি আপনার প্রচন্ড রাগ।আপনি অন্য রকম। কিন্তু আমার মেয়ের সাথে একদম খারাপ বিহেভ করবেন না প্লিজ।বড্ড ভালো জানে আমার মেয়ে আপনাকে।ওর নজরে নিজেকে খারাপ করবেন না অনুরোধ রইলো।আর যদি বলেন কাল রাতের কথা। আপনার বিহেভ দেখে আমার জেদ উঠে গিয়েছিলো তারজন্য আপনার সাথে ওভাবে কথা বলেছি।আমি অফিসে যাচ্ছি। প্লিজ আমার মেয়েকে কস্ট দিবেন না।

-আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি অফিসে যান।

উনি চলে গেলে মেয়েটাকে এক ধমক দিয়ে কাছে ডাকলাম।মেয়েটা এক পা দু’পা করে কাছে আসলে টেনে বিছানায় বসালাম।আমার লাগোজটা খুলো যতো রকমের মেকাপ কসমেটিকস আছে দেখালাম।তারপর বললাম,

-সাজবে?

মেয়েটা মাথা ঝাকিয়ে না অর্থ বোঝালে।দিলাম এক ধমক।তারপর মেয়েটা মাথা কাত করে হ্যাঁ অর্থ বোঝালো।

আমি খুব সুন্দর করে মেয়েটাকে সাজিয়ে দিলাম।সাথে বললাম,

-চেহারার সৌন্দর্য ধরে রাখতে গেলে নিয়মিত মুখ ফেসিয়াল করতে হয়।আর শরীরের সৌন্দর্যের জন্য ডায়েট। আচ্ছা তোমার ফেভারিট হিরোইন কে? যার এক্টিং তোমার ভালো লাগে।

মেয়েটা থুতনিতে আঙুল দিয়ে একটু চিন্তা করে বলল,

-দিপীকা।

-গুড।দিপীকার মতোন হতে চাও? দাড়াও তোমাকে একটা চার্ট তৈরি করে দিই।সেই চার্ট অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া করবা।তুমি তো বাচ্চা মেয়ে সকালে শুধু চিপস খাবা। দুপুরে পাউরুটি। আর রাতে একটা আইসক্রিম। ঠিক আছে? একদম দিপীকা হয়ে যাবা।আর শোনো আমি যে এই চার্টটা করে দিয়েছি তোমাকে সেটা কাউকে বলবে না।তোমার বাবাকেও না।

মেয়েটা আহ্লাদী স্বরে বলল,

-এই শীতে আইসক্রিম? বাবাই খেতে দেবে না।

-আরে দেবে দেবে।তোমার বাবাই তো তোমাকে খুব ভালোবাসে।কতো মিস্টি একটা মেয়ে তুমি। যদি না দেয় বুঝবা তোমাকে বাবাই ভালোই বাসে না।আর ঠান্ডা লাগবে বোঝাতে আসলে ঘাঢ়ে উঠে বাইনা করবা।কেমন?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here