নীলাম্বুর গহীনে পর্ব শেষ

#নীলাম্বুর_গহীনে
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ১৬ (অন্তিম পর্ব)
.
.
সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকেল আর বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কিন্তু রুবাইয়ার মন এখনো শান্ত হয়নি। ক্ষণে ক্ষণে চোখ ভরে উঠছে নোনা জলরাশিতে। যতবারই আজ সে ইউশরার সম্মুখীন হয়েছে ততবারই লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে। স্থির দৃষ্টি রেখে হৃদয়ের গহীন থেকে অনুভব করতে চেয়েছে ইউশরার না পাওয়া আক্ষেপ গুলোর ব্যাথার গভীরতাকে। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমত করেনি আজ। অবশ্য মনের চার দেয়ালে বাস করা অস্থিরতার জন্যেই খিদে পায়নি আর সে খায়নি। মনের ভেতর কেবল একটি লাইন-ই ঘুরঘুর করেছে। ” মা কি আদৌ সুখী……. বাবার ভালোবাসায়!”
এরকম না যে তার সমুদ্রের জন্য মায়া হচ্ছে। সে যে তার বাবাকে বড্ড ভালোবাসে। আর তার বাবা তার মা’কে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু মা কী তার বাবাকে ততটা ভালোবাসে? না-কি শুধুই বোঝাপড়ার সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে নাম মাত্র সংসার করে। সে বিষয় নিয়েই যথেষ্ট শঙ্কা কাজ করছে রুবাইয়ার মনে।
হঠাৎই ইউশরার প্রবেশ হলো ঘরে। রুবাইয়াকে মন মরা অবস্থায় এক দৃষ্টিতে মাথার উপর চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
” কী ব্যাপার রুবাইয়া? এই সন্ধ্যাবেলা এভাবে শুয়ে আছিস যে? উঠে বস। সন্ধ্যাবেলা শুয়ে থাকা ভালো না, অলক্ষুণে জানিস না?”
রুবাইয়া শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল,
” মাত্রই শুয়েছি মা। আসলে গতকাল পুরোটা রাত সজাগ ছিলাম তো তাই আর কি শরীর টা কেমন যেন ম্যাজমেজ করছিল।”
” ও…..”
বলেই ইউশরা রুবাইয়ার পাশে বসল। আলতো করে রুবাইয়ার চুলের ভাজে হাত গুঁজে বিলি কাটতে কাটতে বলল,
” মন খারাপ? কোনো সমস্যা হয়েছে? ”
” না মা…. মন খারাপ হবে কেন? আমি একদম ঠিক আছি। আর এই দেখছ না আমি একদম নরমালি কথা বলছি।কোনো সমস্যা নেই। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”
” মা হই তোর। তোর ঘাড়ের প্রতিটি রগ আমার নখদর্পণে। তোর কখন কী মুড হয় তুই বুঝার আগে তোর মুখ দেখেই বুঝে ফেলি আমি। তাই বলছি, লুকাস না বলে ফেল কী হয়েছে। ”
রুবাইয়া এবার চুপ হয়ে গেল। ইউশরা বলল,
” আজ সারাদিন বাকি কাহিনীটুকু শোনার জন্য আর্জি করলি না যে? পুরো কাহিনী শুনতে শুনতে মায়ের বিয়ের কাহিনী শোনার ইচ্ছে ফুরিয়ে গিয়েছে বুঝি?”
” না মা সেরকম কিছু না। ভালো লাগছিল না তো তাই আর কি…..”
” হ্যাঁ, এবার আয় আসল কথায়….এই ভালো না লাগার কারণ টাই তো আমি শুনতে চাচ্ছিলাম। বলে ফেল মা কী হয়েছে তোর?”
রুবাইয়া বেশ কয়েক সেকেন্ড ইউশরার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলেই কলিং বেল বেজে উঠল। তাই রুবাইয়া নিজের মনের কথা ফিরিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” বাবা চলে এসেছে হয়তো! ”
ইউশরা বসা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতে যেতে বলল,
“হ্যাঁ, তোর বাবা-ই হবে। কিছুক্ষণ আগেই কল করে বলেছিল চলে এসেছে।”
বলতে বলতেই দরজার কাছে গিয়ে ছিটকিনি খুলে দিল ইউশরা। সামনে থেকে আশরাফ আয়মান জুতো খুলতে খুলতে বলল,
” কী গো দরজা খুলতে তোমার এতক্ষণ লাগে? কতটা পথ জার্নি করে এসেছি জানো না?”
” আরে তোমার মেয়ের ঘরে ছিলাম তো তাই আসতে আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে। ”
” ও”
বলেই অফিস ব্যাগ আর কিছু খাবারের ব্যাগ ইউশরার হাতে ধরিয়ে দিল আশরাফ। বলল,
” একটি প্যাকেটে রুবাইয়ার পছন্দের চিকেন ক্রাম চপ আছে। আর অন্যটিতে ইয়াসিনের প্রিয় ফালুদা। বের করে ওদের দাও আর তুমিও খাও।”
” তুমি খাবে না?”
” আরে সবার জন্যই এনেছি। আমি আগে গোসল টা দিয়ে আসি। তারপর খাবো। আর তুমি তো জানোই বাহির থেকে আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত না গোসল দেব ততক্ষণ পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। ”
” হ্যাঁ, সে কি আর নতুন কিছু। আচ্ছা শোনো বিছানার উপর তোমার কাপড় বের করে রাখা আছে। সেগুলো পড়ে নিও।
” আচ্ছা।”
বলেই রুমে চলে গেল আশরাফ। আর ইউশরা চলে গেল খাবারের প্যাকেট গুলো নিয়ে রান্নাঘরে।”
.
রাত ৯:৩০। অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিজ নিজ রুমে চলে গিয়েছে সবাই। আশরাফ যে বড্ড ক্লান্ত। আর এই ক্লান্ত মাখা শরীরে ইউশরার উপস্থিতি তার ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। তাই আজ এতো তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়া।
এদিকে রুবাইয়া ঘুমের উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়েছে ঠিকই কিন্তু তার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। বড় বড় চোখ করে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে জানালার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না মাখা আকাশ পানে। আর মনে মনে গেঁথে যাচ্ছে মায়ের জীবনী নিয়ে হাজারো কথামালা। হঠাৎই তার মনের বদ্ধ ঘরে উঁকি দিল কৌতূহল। তার বাবা মায়ের সম্পর্কের গভীরতা যাচাই করার এক বিশাল কৌতূহল। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসল রুবাইয়া। বিছানা থেকে এক পা নামাতেই মনে মনে ভাবল, ” সে কী ঠিক করছে? না না, এটা মোটেও ঠিক নয়। বাবা মায়ের সম্পর্ক নিয়ে কৌতূহল দেখানো টা মোটেও ঠিক হবে না।”
পা তুলে বিছানায় শুয়ে পড়তেই আবার মনে মনে ভাবল,
” সে তো আহামরি কোনো অপরাধ করছে না। কেবল তার মায়ের বলা ঘটনা অনুযায়ী সামান্য কৌতূহল দেখিয়ে বাবা মায়ের সম্পর্কের গভীরতা পর্যবেক্ষণ করতে ছুটছে। কেবলই তার মনের আত্মতৃপ্তির জন্যে। অস্থিরতার নিঃশ্বাসকে দমিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাসকে স্বাগতম করার জন্যে। এতে তো কোনো ভুল নেই। আর না আছে মহা কোনো ক্ষতি। ”
বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে গেল রুবাইয়া। ইউশরাদের ঘরের লাইট এখনো জ্বলছে। আর দরজাও প্রায় অর্ধেক খোলা। এই মুহূর্তে রুবাইয়ার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের কথা শুনতে ভয় করলেও অন্যদিকে কৌতূহলরা যেন তুমুল সাহস মনের কোণে সঞ্চার করছে। যার দরুণ ভয়েরা উধাও হয়ে কৌতূহলকে জায়গা করে দিয়েছে মনের ঘরে।
রুবাইয়া ঢোক গিলে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি দিল ইউশরাদের রুমে। আর দেখতে পেল আশরাফ ক্লান্তি ভরা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। পরনে তার পুরনো একটি সাদা শার্ট আর নীল প্যান্ট। যেটা অত্যন্ত টাইট। যেন এক্ষুনি প্যান্টের ভেতর থেকে পেট ফেটে বেড়িয়ে আসবে। আর পরনের শার্টিরও একই অবস্থা। প্রচন্ড চাপা। একটা বোতামও লাগানো যায়নি শার্টের। রুবাইয়ার মনে মনে কেমন যেন এক খটকা লাগল। ভ্রু কুচকে আরও ভালো করে তাকাতে দেখতে পেল ইউশরা পুরনো একটি সুতি লাল শাড়ি পড়ে পেছন থেকে এসে আশরাফকে জড়িয়ে ধরেছে। আর বলল,
” সমুদ্র!”
রুয়াইয়া যেন ৪৪০ ভোল্টের একটি ঝটকা খেল। মুখ ফসকে লঘু গলায় বলে উঠল,
” সমুদ্র…..আর বাবা!”
এদিকে রুবাইয়ার পাশাপাশি ঝটকা খেল আশরাফ নিজেও। পেছনে ঘুরে ভ্রু কুচকে বলল,
” তোমার আবার কী হলো? আজ হঠাৎ এই নামে ডাকছ যে? এই নামে ডাকা নিষেধ জানো না? ”
” কেন? শখ করেও ডাকতে পারি না বুঝি? কত দিন,কত বছর তো শুধু এই নামেই ডেকেছি। তখন তো নিষেধ করোনি। বিয়ের পর এমন কী হলো যে এই নামটা নিজের জীবন থেকে চিরতরে মুছে ফেললে। ”
” তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো বিয়ের পর না, কক্সবাজার থেকে আসার পর এ নামটা জীবন থেকে মুছে ফেলেছি। কেননা তুমিই বলেছিলে, এ নামটা আমার জীবনের একটা অভিশাপ। এর কারণেই আমার জীবন গতিহীন পথে অগ্রসর হচ্ছে। কূল কিনারাহীন পথে ধাবিত হচ্ছে। এ নামের জন্যেই আমি বেকার, কর্মহীন ইত্যাদি। তো সেসব কথা ভেবেই এই নাম মুছে আমার আসল নামই ডাক নাম করে তোলা।অবশ্য তোমার এটা জানার কথাও না, যোগাযোগ তো ছিল না মাঝের ক’দিন তাই। ”
ইউশরা এক চোখে তাকিয়ে আছে। বলল,
” সেদিনের কথাগুলো আজও মনে গেঁথে রেখেছ? প্রচুর কষ্ট দিয়েছিলাম তাই না?”
” না কষ্ট না, তবে ভালোও ছিল না। হাসি,দুষ্টুমির মাঝে আচমকা এরকম বিহেভ করেছিলে তো তাই আর কি মাঝেমধ্যে মনে পড়ে যায় এই আর কি….. তবে তোমার করা সেদিনের বিহেভ টার জন্যই কিন্তু আজ আমরা একসাথে। এটা স্বীকার আমাকে করতেই হবে। তা নাহলে আজ তুমি অন্যের সন্তানের মা হতে। আর আমার স্থান হতো একাকীত্ব ঘরের চার দেয়ালের মাঝে। ”
বলেই বড় করে নিঃশ্বাস নিল। আবার বলতে লাগল,
” বিশ্বাস করো ইউশরা কক্সবাজার থেকে আসার পরের ৫ টি দিন আমার জন্য যে কী পরিমাণ দুর্বিষহ দিন গিয়েছে কেবল আমি জানি। একটি জবের জন্য আমি এতো কষ্ট করেছি যা বলার বাহুল্য। নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে সবার দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরেছি। কিন্তু সফল হইনি। তখন বুঝতে পারলাম চাকরির বাজারে যোগ্যতার ভ্যালু জিরো। যার বড় জায়গায় হাত আছে সেই হিরো। আর তখনি বাবার নিকট নিজেকে সমর্পণ করি। যার ফলস্বরূপ দুদিন গড়ানোর আগেই উচ্চ লেভেলে জব পেয়ে যাই। আর পেয়ে যাই তোমাকে নিজের বউ রূপে। ”
ইউশরা নরম কন্ঠে বলল,
” সত্যিই বলছি সেই দিনটি ছিল আমার স্বপ্নের দিন। আমি ভাবতেও পারছিলাম না তুমি নিজে আমার বাড়ি বয়ে চাকরির মিষ্টি আর বিয়ের মিষ্টি নিয়ে এসেছিলে। আর কেউ না, কেবল মা দেখেছিল আমার সেদিনের কান্নার বেগ। সারা রাত মা’কে জড়িয়ে কেঁদেছি। এক তোমাকে পাবার খুশিতে আর দুই রাত পোহাতেই মা’কে ছেড়ে চলে যাবার কষ্টে। তবে তোমাকে পাবার খুশি টাই যেন আমাকে বেশি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল। তাই তো শত চেষ্টা করেও কান্নার বেগ কমাতে পারিনি। ”
সমুদ্র ইউশরাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলল,
” সে কি আমার অজানা? বাসর রাতে তোমার ফোলা ফোলা চোখ দুটো দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম কান্নার স্রোত কতখানি গড়িয়েছে।”
ইউশরা মুচকি হাসল। সমুদ্র আবার বলল,
” তবে বাসর রাতে কিন্তু আমার বেশ হাসি পেয়েছিল তোমার ওই হবু বর টার কথা ভেবে। আহা…. বেচারাটা কত বড় শকড টাই না খেয়েছিল তোমার বিয়ের কথা শুনে। তবে রাগও হয়েছিল শালার কত্ত বড় সাহস সেটা ভেবে। যে মেয়ের সাথে সর্বক্ষণ থেকেও তাকে না ছুঁয়ে কেবল চোখে চোখে রেখেছি সেই মেয়ের জন্য ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। বুকের পাটা কত! তখন ধরে আচ্ছামত দিতে ইচ্ছে করেছিল আমার।”
” তবে তোমাকে কিন্তু একটা কথা স্বীকার করতে হবে, আমাদের বিয়ের দিন সে চাইলেই অনেক কিছু করতে পারত। কেননা তার সাথে আমার বিয়ের কথা একেবারেই পাকা হয়ে গিয়েছিল। এমনকি তার আত্মীয় স্বজনও বিয়ের কথা জেনে গিয়েছিল। কিন্তু সে ওরকম কিছুই করেনি। যখন বাবা তোমার আমার সম্পর্কের কথা সবটা খুলে বলেছে উনি আরও হেসে বলেছেন, এটা কোনো ব্যাপার না। পছন্দ থাকতেই পারে। আর সেজন্যই আমি বলব লোকটি অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। তা নাহলে এতটা সেক্রিফাইজ করা অসম্ভব। ”
” তা ঠিক কিন্তু তারপরও আমার ভালো লাগে না, মন থেকেই সহ্য হয় না। আর মনের উপর তো কারো হাত নেই।”
সমুদ্রের কথা শুনে ইউশরা এবার জোরে হেসে দিল। বলল,
” হয়েছে হয়েছে পুরনো কথা বলে আর মেজাজ খারাপ করতে হবে না। তোমার চোখে চোখে রাখা মেয়েটিই তো তোমার বউ হয়েছে। এখন আর সেসব কথা ভেবে লাভ আছে?”
” হ্যাঁ, এটা ভেবেই তো সেগুলো ভুলে থাকি। কিন্তু আজ হঠাৎ করে পুরনো দিনে ফিরে গেলে যে? কক্সবাজারে শেষ দিনের পড়া সেই শার্ট,প্যান্ট পড়ালে আবার নিজেও সেই দিনের সেই লাল শাড়ি টি পড়লে। কাহিনী টা কি বুঝলাম না। একটু খুলে বলোতো?”
” কাহিনী আবার কী হবে! ইচ্ছে হলো তাই পুরনো দিনে ফিরে গেলাম। আর তোমার মেয়েকেও আমাদের প্রেম কাহিনী শুনিয়েছিলাম তো তাই আরও মনটা উতলা হয়ে উঠেছিল পুরনো দিনে ফিরে যেতে। ”
” ও…. তো ভালোই হয়েছে পুরনো দিনে ফিরে। কক্সবাজারে তোমায় এই শাড়ি পরনে দেখে আমার আনচান মন সেদিন যা করতে পারেনি আজ তা শোধে আসলে পুষিয়ে নিবে।”
” মানে!”
” সেদিন তোমার খোলা চুলে লাল শাড়িতে সমুদ্র পাড়ে তোমায় কী যে মোহনীয় লাগছিল কেবল আমিই জানি। নিজেকে যে কতটা কষ্টে কন্ট্রোল করেছি আল্লাহ মাবুদ ছাড়া কেউ জানে না। আর আজ এতবছর পর ওই একই শাড়িতে যখন তোমায় এতো কাছে পেয়েছি এমনি এমনি ছেড়ে দেব বুঝি? যুবক কালের শার্ট যেরকম পড়িয়েছ, যুবক কালের যৌবনও ফিরিয়ে আনব বুঝলে?”
বলেই ইউশরার খোপা করা চুলগুলো খুলে পিঠময় জুড়ে বিছিয়ে দিল সমুদ্র।
ইউশরা বলল,
” ইশ কী যে করো না। মাথা গিয়েছে তোমার। ”
” উহু মাথা আমার আগেও ঠিক ছিল আর এখনও একদম ঠিকাছে। সেদিন কিছু করিনি বউ ছিলে না বলে, আর আজ বুকে টেনে নিচ্ছি বউ বলে। হালাল কাজে সবসময় আমি দু পা এগিয়ে আর হারাম কাজে দু পা পিছিয়ে জানো না?”
” হ্যাঁ, সে আমার থেকে ভালো আর কে জানবে? বিয়ের আগে দেখেছি এক সমুদ্রকে আর বিয়ের পর অন্য সমুদ্রকে। আমি তো বিয়ের পর প্রথম প্রথম ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম তোমার এরকম রোমান্টিকতায় ভরা পাগলামো আচরণ দেখে। মনে মনে শুধু ভাবতাম, কী দেখে প্রেম করলাম আর বিয়ের পর কী পেলাম। পুরোই লুচু।”
” উহু এটাকে লুচু বলে না। এটা তো ভালোবাসা। আর এ ভালোবাসা পবিত্র। এ ভালোবাসায় রয়েছে স্বর্গীয় নেয়ামত। লুচু তো বলে বিয়ের আগে ছোঁয়াছুঁয়িকে। যা আমার মধ্যে কখনোই তুমি পাওনি। তাহলে আমি লুচু হলাম কীভাবে?”
” আহা দুষ্টুমি করি তাও বুঝো না? ”
বলে গাল ফুলালো ইউশরা। সমুদ্র সেই গালে চুমু খেয়ে বলল,
” দুষ্টুমি তো আমিও করি তুমি কেন বুঝো না?”
” যাও!”
” উহু যাও না, বলো কাছে এসো।”
ইউশরা এবার লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলল। আর সমুদ্র সেই লজ্জার সুযোগ নিয়ে ইউশরাকে পাজ কোলে তুলে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। আস্তে করে বিছানায় ইউশরার গা মেলিয়ে দিয়ে কানে কানে বলল,
” ভালোবাসি ইউশরা। ”
ইউশরা নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে। দম নিতেও যেন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার। বিয়ের পর পর সমুদ্র কাছে এলে নিঃশ্বাস যেমনটা ভারি হয়ে আসতো ঠিক সেরকম ভাবে আজও নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে ইউশরার। এতগুলো বছরে এই নিঃশ্বাসের ভেতর কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আজও আসেনি। সমুদ্রের সাথে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলেও আজও সমুদ্রের প্রতিটি ছোঁয়া ইউশরাকে ২৩/২৪ বছর আগের অনুভূতির মাঝে ডুব দিতে বাধ্য করে। বাধ্য করে নিজেকে ভাবতে ২৩ বছরের যুবতী।
সমুদ্র আলতো ছোঁয়ায় ইউশরার বুকের কাপড় কোমর অবধি নামাতেই রুবাইয়া জিহবায় কামড় দিয়ে উঠল। আর চোখে হাত দিয়ে দৌড় দিল নিজ রুমে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে রুবাইয়ার। সারাদিন যতটা না মন খারাপ ছিল এগুলো দেখে ও শুনে তার থেকেও বহুগুণ মন ভালো হয়ে গিয়েছে তার। আর ইচ্ছে করছে না কোনো কাহিনী শুনতে। হোক সে বাবা মায়ের বিয়ের কাহিনী। সমুদ্র ইউশরার মিল হয়েছে এতেই সে বড্ড খুশি। আস্তে করে ভেতর থেকে দরজা লক করে অন্ধকারের মাঝেই ইচ্ছেমত লাফাতে লাগলো রুবাইয়া। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা মেলিয়ে হাসতে হাসতেই কেঁদে দিল রুবাইয়া। চোখের জল মুছে ঠোঁটের কোণের হাসির রেখা বজায় রেখে লঘু গলায় বলল,
” এভাবেই ইউশরা সমুদ্রের ভালোবাসা মিশে থাকুক নীলাম্বুর গহীনে। ”
.
.
(সমাপ্ত)
শেষ পর্বে চমকটা কেমন হলো জানাবেন সবাই 😇😇😇

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here