নুর পর্ব ১৫+১৬

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-15

মেহেরাব লেকের পাড়ে বসে আছে। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে লেকের স্বচ্ছ পানির দিকে। ছোট ছোট রঙিন মাছ খেলা করছে। দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি সুন্দর অপরুপ সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তায়ালার সকল সৃষ্টি অতুলনীয় সুন্দর। আচ্ছা মহান আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু। তিনি কি মেহেরাবের অতি পছন্দের লেকচারার কে ক্ষমা করবে না? তিনি মানুষ হিসেবে ভালো ছিলেন। কারও সাথে পাঁচে ছিলেন না। অতি নিরিহ ধরনের ভদ্রলোক ছিলেন।
তাহলে কেন মাফ করবেন না? মেহেরাবের এতোটা কষ্ট কখনো হয়নি যখন তার বাবা মা আলাদা হয়েছিল। মা কি অবলীলায় তার নতুন বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেলো তাকে একা ফেলে। বাবা একগাদা গভর্নেন্সর উপর তার দায়িত্ব দিয়ে দ্বায় মুক্ত হলেন। প্রতিদিন তিনি কোন কোন বিজনেসের মিটিংয়ে আঁটকে যেতেন। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন দেশে ঘুরে বেড়াতেন নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিজনেস ট্রিপে।কখনো কখনো মাসের পর মাস ফিরতেন না বাড়ি। বাড়ি ফিরতেন না বললে ভুল হবে। বাবার অসংখ্য বাড়ি। কোন এক বাড়িতে তার ছোট ছেলে আছেন সেটা তিনি ভুলে যেতেন। ফিরে আসতেন একগাদা খেলনা নিয়ে।
মেহেরাবের তখন খেলনা গুলো ছূরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করতো, বাবা আমি শুধু তোমাকে চাই। তোমার এবং মায়ের সাথে একটি পরিবার নিয়ে বাঁচতে চাই।
কিন্তু মেহেরাব তা বলতে পারতো না।
ছোট মেহেরাব বুঝেছিল পাশ্চাত্যের সভ্য লাইফস্টাইল। এখানে আবেগের কোন মূল্য নেই। নেই ভালোবাসার মূল্য। ভালোবাসা যেখানে ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। টাকা সকল সুখের মূল। বাবা যেমন নাস্তিক ছিলেন ঠিক তেমনি মেহেরাবকেও সেভাবে গড়ে উঠেছিল।
বাবা বলতো-মাই চাইল্ড! মাই লিটল কিং। ধর্ম হলো দূর্বল হৃদয়ের লোকদের নিজেদের অক্ষমতা, দুঃখ, কষ্ট ভুলে থাকার একটি নিছক কল্পনা।
ডলার দিয়ে সবকিছু কেনা যায়।তোমার কাছে যত বেশি ডলার থাকবে ততবেশী সুখের সাগরে থাকবে। লাইফ হলো আমোদপ্রমোদের সুখের সাগর। এটা তোমার লাইফ। তুমি ঠিক করবে তুমি কিভাবে লাইফ লিড করবে। আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ভাবে তোমার নিজের স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দিলাম।
তুমি যেভাবে খুশি সেভাবে নিজের লাইফ লিড করবে।
কখনো ধর্ম নামক নিছক কল্পনা কে বিশ্বাস করবে না। মনে রেখো ধর্ম তোমাকে পৃথিবীর সকল সুখ থেকে বঞ্চিত করবে।
মেহেরাবের এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, বাবা ধর্ম নিছক কল্পনা নয়, ধর্ম হলো একমাত্র সত্যি।ধর্ম হলো সকল সুখের ঠিকানা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র উনার ইচ্ছে তে। পৃথিবীতে আমরা কিছুদিনের অতিথি। পরকাল আমাদের আসল ঠিকানা। যেখানে অনন্তকাল থাকতে হবে। পৃথিবীর কিছুদিনের সুখের চেয়ে পরকালের বেহেশতের সুখ অতুলনীয়।
পৃথিবীর সুখের সাগরে ডুবে থেকে ধর্মকে অবিশ্বাস করলে পরকালে জাহান্নামে ঠাঁই হবে। অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে আমাদের। ধর্ম হলো একমাত্র বিশ্বাস।
মেহেরাব কারও উপস্থিতি টের পেলো। এক সেকেন্ডে অনুভব করেছে কে দাড়িয়ে আছে। কার অস্তিত্ব রয়েছে।
মেহেরাব না তাকিয়েই বলল- কিছু বলতে চাও ক্যান্ডল?
মোম মেহেরাবের পাশে বসলো। মেহেরাব কিছু বললো না।
হাত মোজা সহকারে লেকের পানিতে হাত ডুবালো।
রঙিন মাছ গুলো ধরার চেষ্টা করলো। মেহেরাব একটা রঙিন মাছ ধরে মাছটা তুলে দিলো মোমের হাতে।
মাছটা নিস্তব্ধ হয়ে হাতে পড়ে রইলো। মোম তৎক্ষনাৎ মাছটা ছেড়ে দিলো পানিতে। মাছটা নিজের প্রাণ ফিরে ফেলো। মেহেরাব এতোক্ষণ মোমের কান্ড দেখলো।
-দেখেছেন মাছটা কিভাবে তার প্রাণ ফিরে পেলো? মাছের জায়গা পানিতে। পানি ছাড়া মাছের অস্তিত্ব অসম্ভব। ঠিক তেমনই মানুষের অস্তিত্ব হলো ধর্মে। ধর্ম ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব অসম্ভব।
ধর্ম একমাত্র সত্যি!
কোনো অমুসলিমের মৃত্যুতে আমাদের কী করা উচিত? উল্লাস করা নাকি দুঃখ করা?
❂ যদি কোনো অমুসলিম তথা কাফির ইসলামের সাথে শত্রুতা না করে নিরীহভাবে জীবনযাপন করে এবং এভাবেই মারা যায়, তবে তার ব্যাপারে মুমিনের মনে এজন্য দুঃখ আসবে যে, সে ঈমানহারা হয়ে কবরে চলে গেলো। তবে, তার প্রতি কোনোরকম ভালোবাসা দেখানো যাবে না। আবার তাকে নিয়ে উল্লাস করারও কিছু নেই।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা মৃতদের গালি দিও না; কেননা তারা তাদের কৃতকর্মে পৌঁছে গেছে।’’ [সহিহ বুখারি: ১৩৯০]
.
❂ তাদের জন্য কি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে? ‘‘শান্তিতে থাকুন’’ (RIP—Rest in peace) ইত্যাদি বলা যাবে?
.
উত্তর হলো, না। তাদের জন্য কোনোভাবেই ক্ষমাপ্রার্থনা করা যাবে না এবং তাদের কল্যাণ কামনা করা যাবে না। ইসলামের জন্য আবু তালিবের অবদান বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সে ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেনি। নবীজি দাঁত কামড়িয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে কাফির অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকেন আল্লাহর কাছে। তখন আল্লাহ্ আয়াত নাযিল করে বলেন—
.
‘‘নবী ও মুমিনের উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদিও তারা আত্মীয় হয়—একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’’ [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৩]
.
এবার বলুন, যে-আবু তালিব তার জীবন বাজি রেখে ভাতিজা মুহাম্মাদকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি নেই, তবে আপনি আর কার জন্য শান্তি কামনা করেন?
.
মুশরিক তথা কাফিরের ব্যাপারে ইসলামে কেন এত কঠোরতা যে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না?
.
উত্তর হলো: যে আল্লাহ্ আপনাকে মায়ের পেট থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত রিযিক দিয়েছেন, এই পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগ করিয়েছেন, সেই আল্লাহ্কে আপনি বিশ্বাস করেন না। আপনার মত নিমকহারাম আর কে আছে? আল্লাহ্ কত সুন্দর করে বলছেন—
.
‘‘কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফর করছো, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন অতঃপর জীবিত করবেন, তারপর তারই নিকট তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তিনিই জমিনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমান সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর সবকিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত।’’ [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮-২৯]
.
❂ যদি কোনো কাফির মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে থাকে এবং সারাজীবন মুসলিমদের ক্ষতির চেষ্টা করে থাকে, তবে তার মৃত্যুতে মুসলিমরা আনন্দ করবে। এটাই সুন্নাহ।
.
‘আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবু জাহলের মাথা কর্তনের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হলে তিনি দুই রাকাত (শুকরিয়ার) নামাজ পড়লেন।’ [ইবনু মাজাহ: ১৩৯১]
.
❂ সাধারণভাবে কোনো কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, সে যতই আপন হোক।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই জালিম।’’ [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৩]
.
এমনকি কেউ কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব করলে নিজেই কাফির হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আল্লাহ্ সতর্ক করে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদের আওলিয়া (বন্ধু বা অভিভাবক) হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা (বরং) একে অপরের বন্ধু। যে কেউ তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে (হবে) তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের হিদায়াত দেন না।” [সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৫১]
.
❂ তাহলে কি আমরা জীবিত কাফিরদের সাথে সর্বদা খারাপ আচরণ করবো? ইসলাম কি এটাই বলে?
.
উত্তর হলো, না। বরং আমরা সবার সাথেই সদাচরণ করবো। প্রয়োজনে তাদের সাথে লেনদেনও করবো। তবে, আমাদের ভালোবাসা কেবল মুমিনদের জন্য থাকবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’’ [সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ০৮]
আমরা নিরুপায়। আমাদের কিছু করার নেই। উনাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। মহান আল্লাহর অসীম দয়া। উনি বেঁচে থাকলে আপনি উনাকে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারতেন। কিন্তু এখন তিনি আল্লাহর দায়িত্বে আছেন। আপনি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন। উনি জ্ঞানে গুন নীত। সকল জ্ঞানের আধার।
প্রফেসরের বিষয়টা উনি দেখবেন। তিনি যতটুকু করেছেন ততটুকুর ফল ভোগ করবেন পরকালে।এটাই নিয়ম। সবার জন্য প্রযোজ্য।
মন খারাপ করবেন না।
মনে দুঃখ পুষবেন না। চোখের পানি মুছুন। ছেলেদের কাঁদলে নাকি মানায় না।
মেহেরাব মোমের কথা গুলো এবং হাদিস গুলোর মর্ম বুঝতে পারলো। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো।
চোখের পানি মুছে ফেললো।
মন কে আরও দৃঢ় করলো।
.
মোম গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। মেহেরাব তাকিয়ে আছে। বরাবরের মতো মোম এবার তার থেকে পালানোর জন্য লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেলো না।
মেহেরাব উঠে দাঁড়ালো।
যেভাবেই হোক মোম কে তার নিজের কাছে এনে রাখতে হবে। মোমের প্রতি কিসের এতো টান সেটা সে এখনও বুঝতে পারেনি। তবে মোম কে দেখলেই তার নিঃসঙ্গতা দূর হয়ে যায়। জীবনে যত অন্ধকার আছে তা আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। বেঁচে থাকার মানে বের হয়ে যায়।
বেপরোয়া স্বাধীন জীবন তার ভালো লাগেনা। কোথাও বন্দি হয়ে পরাধীন থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
.
কিছুদিন পর মেহেরাব একটা চিঠি পেলো। চিঠি বললে ভুল হবে এটা একটা রেজিস্ট্রি চিঠি। তাকে আবার কে রেজিস্ট্রি চিঠি পাঠাবে?
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে মেহেরাবের হট শাওয়ার নিতে হয়।
শাওয়ার নিতে নিতে ভাবলো
বাবা কে জানাতে হবে বিয়ের কথা বিশেষ করে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে সেই কথা।
বাবা সহজ চিজ নয় সেটা মেহেরাব নিজেকে দেখে বুঝতে পারে। সে সন্তান হিসেবে নিজের সকল আচার-আচরণ বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। মেহেরাব বিয়ে বিয়ে খেলা খেলতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা কে অনুভব করতে পেরেছে। একজন মুসলিম নারীর তার হৃদয়ে বসেছে বলেই সে আসল সত্যিটা অনুভব করেছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। নিজের নাস্তিকতার নাম পাল্টিয়েছে।বাবার নাম কিং লায়ার। তিনি তার নামের সাথে ছেলের নাম মিলিয়ে রেখেছিলেন কিং ফায়ার। বাবার যে বয়স তাতে কোন মুসলিম মেয়ের প্রেমে পড়ে বিয়ে করতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুব কম। বাবা বলেন -মাই লিটল কিং, মাই চাইল্ড, ডলার থাকলে সবার সব আছে। ডলার দিয়ে সকল মেয়েকে জয় করতে পারবে।
বাবা তো জানেনা ডলার দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না। পৃথিবীর এমন কিছু সুখ আছে যা ডলার কখনো দিতে পারেনা এবং মোম হচ্ছে ঐরকম একটি সুখ যা ডলার দিয়ে জয় করা অসম্ভব।
তার বাবা হলো কঠোর নাস্তিক। বাবার জীবনের একটাই ধর্ম। সেটা হলো ডলার, ডলার এন্ড ডলার। নিজেকে নিজের ইশ্বর ভাবেন তিনি। আসতাগফিরুল্লাহ!!
বাবা কে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে অবশ্যই।
যেভাবে হোক তিনি লেকচারারের মতো তার বাবা কে মরতে দেবেন না ধর্ম ছাড়া। বাবা কে বোঝাতে হবে পৃথিবীর একটাই স্রষ্টা। এক অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি সকল ক্ষমতার উর্ধে। উনার সমক্ষ আসমান-জমিনে কেউ নেই। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমরা হলা তার দাস। বাবাও হলেন অতি নগন্য দাস।
বাবা নিশ্চয়ই প্রথমে বড় ধাক্কা খাবেন। তিনি ধর্মে বিশ্বাসী নন। অথচ তার একমাত্র উত্তরাধিকারী সন্তান ধর্মে বিশ্বাসী হয়েছে, মুসলিম হয়েছে। মুসলিম মেয়ে কে বিয়ে করেছে।
বাবা কি খুব রাগ করবেন? নাকি মেহেরাব কে ত্যাজ্য ঘোষণা করবেন?
নাকি এরচেয়ে ভয়ংকর কিছু করে বসবেন মেহেরাব এবং মোমের সাথে।
টাওয়াল জড়িয়ে সে রেজিস্ট্রি করা খাম খুলে চিঠিটা পড়লো।
একটা অকল্পনীয়! অবিশ্বাস্য ঘটনা।
আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো মোম সহজ মেয়ে নয়। বিয়ের পর থেকে মেয়েটা বিয়ে সম্পর্কে একটা কথাও বলেনি। তলে তলে সে এতো তাড়াতাড়ি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবে মেহেরাবের ভাবার বাহিরে ছিলো।
মেহেরাব বেডে গা এলিয়ে দিলো।
খুব ভালো চাল দিয়েছো ডিয়ার ওয়াইফ।
ঝড় শুরুর আগে প্রকৃতি স্তব্ধ হয়ে যায় তুমিও ঠিক তেমন ভাবে আমার অগোচরেই ডিভোর্সের প্রস্তুতি নিচ্ছিলে স্তব্ধ হয়ে৷মোমের সাইন রয়েছে, মেহেরাব একটা সাইন করলেই এই সম্পর্কের ইতি। বাহ! কত সহজ সবকিছু।
সকালে মোম মাঠের একপাশে নরম ঘাসে বসে বসে গাণিতিক একটা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছিলো। মেহেরাব ডিভোর্স পেপারটা মোমের কোলে ছূরে মারলো।
আশেপাশের সবাইকে মেহেরাবের লোকেরা ইশারা দিয়ে জায়গাটা খালি করতে বলল।
মোম শান্ত চোখে মেহেরাবের দিকে তাকালো।
মেহেরাবের কপালের দুটো রগ ফুলে উঠেছে।
রাগে ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে আছে। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল- হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি কে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার? এতো বড় সাহস কোথায় পেলে?
তুমি চুপচাপ থেকে ঠিকই আসল কাজটা করে ফেলেছো আমার আড়ালে।
আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি সহজ চিজ নও।
– আমি মানুষ। সহজ চিজ নই এটা জানা কথা।
আমি এখানে পড়তে এসেছি। ডিগ্রী নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাব। দেশের লোকেদের জন্য কিছু করব।
আপনার সাথে সংসার করার জন্য আসিনি।
আপনার সাথে বিয়েটা আমার সম্মতি অনুসারে হয়নি।
এমনকি আপনিও আমার সাথে সুখে সংসার করার জন্য আমাকে বিয়ে করেন নি।বিয়ে মানে হলো দুটো মানুষের মনের মিলন। তাহলে এটা কে কি বিয়ে বলে? হ্যাঁ আল্লাহর কালাম পড়ে প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমদের সাক্ষ্যিতে বিয়েটা হয়েছে। বিয়েটা পবিত্র। কিন্তু পূর্ণ হয়নি। পূর্ণ হবে তখন যখন আমার অবিভাকরা বিয়েতে সম্মতি দেবে।
এবং সবচেয়ে বড় কথা আমার সম্মতি থাকবে।
আপনি একজন মুসলিম। আপনি নিশ্চয়ই এসব জানবেন।
-জানি এবং বুঝতে পারলাম তোমার কথা গুলো। বিয়ে মানে পবিত্র বন্ধন। বিয়েটা যেভাবে বা যেকারণে হোক হয়েছে এবং বিয়েটা পবিত্র। যেটুকু অপূর্ণতা রয়েছে তা
তুমি রাজি থাকলেই হবে। আর রইল তোমার অবিভাবক। আমি তোমার দেশে গিয়ে সম্মতি নিয়ে আমাদের বিয়েটা পূর্ণ করব।
-অবিভাবকের সম্মতি পরের কথা। আমি নিজেই তো সম্মতি দিচ্ছি না। আপনি ইতিমধ্যেই বহু ঝামেলা করেছেন, যন্ত্রণা দিয়েছেন। এনাফ ইজ এনাফ। আমাদের বিয়ের কোন ভিত্তি নেই। আমরা কেউ কাউকে পছন্দ করিনা।
মেহেরাব মুখ ফুটে বলতে পারলো না সে মোম কে পছন্দ করে।
মোম আবার বলল- তাহলে কেন আমাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখব? যে বিয়েটায় মনের মিল নেই।
আপনার এবং আমার রাস্তা আলাদা।
আপনি আপনার মতো থাকবেন এবং আমি আমার মতো। আমাকে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করবেন না।
তালাক সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল। তবুও হালাল।
এই নিন ডিভোর্স পেপারে সাইন দিন।
আমাকে শান্তি তে পড়াশোনা করতে দেবেন আশা করি।
মেহেরাবের হাত ডিভোর্স পেপার৷
#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-16
-কি হলো?
সাইন করুন।
ওয়াদা করছি আপনাকে কোন ঝামেলায় জড়াতে হবে না। শুধু সাইন দেবেন।
ব্যাস আপনার কাজ শেষ।
আমার লয়ারেরা রয়েছেন। উনার সকল ফর্মালিটি তৈরি করে ফেলেছেন। আমার সাইন করা হয়েছে। আপনি শুধু সাইন করবেন।
আপনি না বুঝতে পেরে রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এখন তো আপনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তাইনা?
মেহেরাব মাথা নাড়ালো।
-তাহলে আর কি। কোন ঝামেলায় রইলো না আপনার সাথে আমার।নাম মাত্র বিয়ে নামক যে ঝামেলা রয়েছে সেটা রেখে কি লাভ।
তালাক দিয়ে দিন। আপনি আমি দুজন আলাদা হয়ে যাব৷
ব্যাস, আপনি আমি দুজন মুক্ত।
মেহেরাব পাথরের মতো জমে গিয়েছে। মোম তাকে যুক্তি তর্ক দিয়ে আটকিয়ে ফেলেছে।
সে এখন এখান থেকে বের হবে কিভাবে?
-কথা বলুন?
মেহেরাব মাথা নাড়ালো।
-আরে বাবা, মাথা নাড়ালে হবে না।
মুখ ফুটে কিছু বলুন?
-আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাইনা।
মোম মাথায় হাত দিলো।
এতোক্ষণ মোম তাহলে কি বোঝালো? কাকে বোঝালো?
-আপনি কি বলছেন বা কি চাচ্ছেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
দয়া করে আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন।
আমরা কেন বিয়েটা টিকিয়ে রাখব?
-আমি এই বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চাই তাই।
-এটা কোন কথা হলো না।
-তোমার আমার বিয়ে হয়েছে এটাই আসল কথা।
-আপনার সমস্যা কোথায় বলবেন?
এটলিস্ট এটা তো বলবেন আপনি কেন এখন বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছেন?
এই বিয়েটা টিকিয়ে রাখাতে লাভ ক্ষতি কি সেটা তো বলবেন?
আমাদের বিয়ের কোন ভিত্তি নেই কারণ আমাদের বিয়ে নর্মাল ভাবে হয়নি। আমাদের মধ্যে রিলেশন ছিলো তাই লাভ ম্যারেজ হয়নি, ফ্যামিলি ম্যারেজও হয়নি এমনকি আমরা দুজন দুজন কে পছন্দ করিনা।
আমাদের বিয়ের কারণ ছিলো, হেট, রিভেঞ্জ, পাওয়ার। আপনি আমাকে হেট করতেন তাই রিভেঞ্জ নিতে বিয়ে করে নিজের ইচ্ছে মতো কষ্ট দেওয়ার জন্য ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন পাওয়ার দিয়ে।
এখন তো আপনি মুসলিম। এসব মন্দ মন মানসিকতার কাজ। এটা অনুধাবন করেছেন। নিজের ভুল গুলো বুঝতে পেরেছেন। এখন নিশ্চয়ই আমার থেকে রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমাকে কষ্ট দেবেন নিজের স্ত্রী বানিয়ে?
এমন কোন প্ল্যান আছে নাকি?
-আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে বলছি এমন কথা চিন্তাও করিনা, সপ্নেও ভাবি না।
-তাহলে?
-আমি আমি আমি……।
-আপনি আপনি আপনি……?
মেহেরাব আমতা আমতা করছে। পুরো লাইন বলতে পাচ্ছে না।
-আরে বাবা, আপনি কি কচি খোকা? আসল কথাটা বলুন?
সবকিছুর তো একটা কারণ থাকে।
-অফকোর্স কারণ থাকে।
মোম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। মেহেরাব সেই দৃষ্টিতে ধরা দিতে চায়না তবুও ধরা খেলো। ঐ যে বলল কারণ থাকে।
তার মানে দাঁড়ালো মেহেরাবেরও কারণ রয়েছে। এবং মোম সেটাই জানতে চাচ্ছে। কারণ না বলে মেহেরাবের নিস্তার নেই।
মেহেরাব এক পা দুই পা করে পিছুতে লাগল।
একটু পেছনে তাকালো।
ঐ তো কিছুটা দূর তার গাড়িটা গার্ডসরা পাহারা দিচ্ছে। এক পা করে পিছিয়ে পিছিয়ে এক লাফে গাড়িতে উঠে পালানো যাবে। ব্যাস, মোমের হাত থেকে এবারের জন্য বেঁচে যাবে।
মোম মেহেরাবের দিকে এগিয়ে এসে দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়ালো।
চোখ দিয়ে ইশারা করলো – আজ না বলা পর্যন্ত নিস্তার নেই আপনার।
যদিও নেকাবের আড়ালে মোমের চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে না। ঝাপসা ঝাপসা
চোখের ভাষা অনুভব করতে পারে সে।
.
.
মেহেরাবের ফোনে ক্রিংক্রিং আওয়াজ হলো।
-কল রিসিভ করতে হবে।
একটু ওয়েট করো। আর্জেন্ট কল। কারণ বলার জন্য ঢের সময় রয়েছে।
মেহেরাব হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল- মাই গড! আই কান্ট বিলিভ। আমার ক্লাসের সময় হয়েছে। লেকচারার এরপর আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমি ক্লাসে যাব।
টা টা সি ইউ সুন।
মোমের উত্তরের অপেক্ষা না করেই মেহেরাব লম্বা লম্বা পা ফেলে লাফিয়ে লাফিয়ে ক্লাসের দিকে রওনা হলো।
মোম হতভম্ব!
.
মেহেরাব একটা গাণিতিক হিসেব মিলাতে পাচ্ছেনা।
পেপারে অসংখ্য কাটাকুটি করছে সে।
সেই সময় ফোনের আওয়াজ হলো ক্রিংক্রিং।
ওপাশ থেকে লাইন কাটার আওয়াজ হলো খট করে।
মোম আবার নাম্বার ডায়াল করলো।
মেহেরাব নাম্বার দেখে খট করে কেটে দিলো।
তাকে এখনো পাগল কুকুর কামড় দেয়নি যে সে যেচে মোম নামের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে।
মোমের কল রিসিভ করা মানেই ডিভোর্সের কারণ এবং ডিভোর্স পেপারে সাইন দিতে বলবে।
সুন্দর যুক্তিতর্ক এবং হাদিস এবং মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সে মেহেরাব কে এমন ভাবে বুঝিয়ে ফেলবে মোম কে ডিভোর্স দিলে মেহেরাবের প্রচুর লাভ। লাভের উপর লাভ। মোম অতি ভয়ংকর কথা গুলো মিষ্টি মিষ্টি করে বলতে পারে এবং মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলোও গলায় কাঁটা বিঁধবে এমন ভাবেও বলতে পারে।নারীদের বোঝা মুশকিল বিশেষ করে প্রাচ্যের নারীদের বোঝা আরও মুশকিল।

-মাই চাইল্ড! মাই কিং। বাবা আগুন কেমন আছো?
-ড্যাড, আই এম ফাইন। তোমার বিজনেস ট্রিপ হোপ সো ভালো চলছে।
-হলি কাউ! এক্সিলেন্ট! আমরা আরও কিছু প্রজেক্ট পেয়েছি।
-ওয়াও! কংগ্রাচুলেশনস ড্যাড।
-থ্যাকস মাই লিটল কিং।
-ড্যাড তোমার লেট হচ্ছে মেবি। ওয়েস্ট ইউর টাইম।
ফোন রাখি?
-নো নো। আই এম ফ্রী।
তাইতো তোমাকে কল করলাম। এতোদিন প্রচন্ড বিজি ছিলাম তাই তোমাকে কল দিইনি।
-আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড ড্যাড। ইউ আর ভেরি ভেরি বিজি। তুমি ২৪ আওয়ার বিজি থাক আই নো ড্যাড।
-বাবা আগুন।
বিজনেসের জন্য থাকতে হয়।
ওয়ার্ল্ড এখন চলছে টাইমের উপর। এক সেকেন্ড টাইম লস্ট মানে লাইফ লস্ট। এক সেকেন্ডে কত মিলিয়ন ডলার আয় করা যায় তা তুমি জানো না।
একদিন তুমি জানবে লাইফের রিয়েল সত্যিটা কি। তুমি তো একদিন আমার সবকিছুর মালিক হবে। তোমার সুখের জন্যই তো আমি পরিশ্রম করি প্রতি সেকেন্ড।
যেমনটা তুমিও করবে তোমার সন্তানের জন্য।
-আমার সন্তান?
-ইয়েস মাই চাইল্ড।
তোমারও একদিন সঙ্গী হবে। কন্টাক্ট ম্যারেজ হবে। তোমার উত্তরাধিকারের জন্য তোমার নিজের সন্তান থাকতে হবে।
মেহেরাব মোমের কথা ভাবলো। মোম তাকে ডিভোর্স দিতে রিতীমত হুমকি দিচ্ছে।
সে তো ভালো মতো স্বামী হতে পারলো না তো বাবা কি করে হবে।
-মাই চাইল্ড।
তোমাকে বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন?
তুমি আমার এখানে চলে এসো। এখানকার নারী সঙ্গ তোমার বিষন্নতা এক সেকেন্ডই দূর করে দেবে। এখানকার নারীরা
খুব সুন্দরী আকর্ষণীয়া।
তুমি বোর ফিল করবে না। ভালোই এনজয় করবে। সুন্দর সময় কাটাবে।
মেহেরাব লাইন কেটে দিলো।
বাবা আবার কল দিচ্ছ৷ মেহেরাব সুইচ অফ করে দিলো ফোনের৷
মেহেরাব চোখ বন্ধ করলো।
মোমের সাথে প্রথম পরিচয় হতেই মেহেরাবের কাছে মনে হচ্ছিল মোমের মধ্যে কিছু একটা আছে। যা মোমের কাছে তাকে টানছে।
মোম কে সে তখনও দেখেনি। কখনো দেখার বাসনা জাগেনি। সুন্দরী মেয়েদের মুখশ্রী দেখে মেহেরাব অভস্ত্যত।মোম থাকুক না সবার থেকে আলদা। মোম কে না দেখে দেখেও মেহেরাব অভস্ত্য হয়ে পড়েছিলো।
মোমের বোরখা কোন সাধারণ বোরখা নয়। ভয়াবহ বোরখা! চোখ গুলো পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই চোখ গুলো কি আছে নাকি নেই। বোরখা পোশাক টা এমন ঢিলে যে শরীরের অবয় বোঝার ক্ষমতা কারও নেই মহান আল্লাহ ছাড়া, মোম কি মোটা না চিকন নাকি মাঝারি এটাও মেহেরাব জানেনা।
পর্দা করা মোমের কাছে বিশ্বের সকল মেয়ে মেহেরাবের কাছে বোরিং। তাছাড়া সেদিন মেহেরাব মোমের যে শ্যামল মুখশ্রী দেখেছে তাতেই সে মুগ্ধ। আর কখনো মোমের মুখ না দেখেই সে বাঁচতে পারবে। বিশ্বের সকল প্রেমিক স্বামীর কাছে স্ব স্ব স্ত্রী সবচেয়ে আলাদা, আকর্ষণীয়া, সেরা।
ঠাস করে একটা আওয়াজ হলো। মেহেরাব চোখ মেলে তাকালো। প্রথমবার মোমের থাপ্পড়ের আঘাতটা আবারও সে এখন অনুভব করলো।
মেহেরাব গালে হাত দিয়ে হতভম্ব!!
মেয়েটা কি তাকে একফোঁটাও একা থাকতে দেবেনা? মেহেরাবের প্রতিটি মোমেন্টে শুধু মোমের অনুভূতি।
মেহেরাবের নিঃসঙ্গ, অবহেলিত, বেপরোয়া জীবন এখন আগুনে জ্বলসে মোমের আলোয় আলোকিত। পাথরের হৃদয়ে অনুভূতির গোলাপ ফুটেছে।
.
মেহেরাব মোমের সামনে বেশ কয়েকদিন যাবৎ যাচ্ছে না। আড়ালে দূর থেকে দেখেছে শুধু। মেহেরাব নব মুসলিম। সে সদ্য জন্মানো শিশুর মতো। হাদিস সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।
সে আটঘাট বেঁধে তৈরি হয়ে মোমের সামনে যেতে চায়। সে নিজের চাওয়াপাওয়া পূরন এবং মোম কে পাওয়ার জন্য এমন কিছু হাদিস অবশ্যই খুঁজে পাবে। ততদিন পর্যন্ত সে আড়ালে থেকে মোমের গতিবিধি লক্ষ্য রাখবে।
মোমের সামনে পড়া মানে মেশিগানের সামনে পড়া।
গোপন সূত্র খবর পাওয়া গিয়েছে মোম ডিভোর্স পেপার সাথে নিয়ে ঘোরে।
মেহেরাব কে দেখা মাত্রই সাইন করিয়ে নেবে এই আশায়।
মোম মেহেরাবের বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেট, পরিচিতদের থেকে খোঁজ নেয় নিয়মিত। মেহেরাবের খোঁজ কেউ জানেনা। মেহেরাব যেন নিখোঁজ হয়েছে, একেবারে ডুব দিয়েছে কোথাও।
মোম কখনো ভাবেনি এভাবে মেহেরাবের পেছনে সে ঘুরবে।
সে নিশ্চিত মেহেরাব তার আশেপাশে রয়েছে। তার পেছনে ঘুরতে দেখে হাসছে।
কিছুদিন পর মেহেরাবের গাড়ি ইউনিভার্সিটির সামনে ব্রেক করলো।
কোথাও মোম নেই, তাহলে নামা যাবে। দৌড়ে হলে ঢুকে গেলেই হবে।
মেহেরাব চাচ্ছেনা মোমের সামনে সাজ সকালে ধরা পড়ে চিৎকার চেচামেচি করতে।
মেহেরাব নামতেই মোম কোথা থেকে এসে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে পেপার বের করে মেহেরাবের হাত একটা কলমও ধরিয়ে দেওয়া হলো।
মেহেরাব এবার আর মোম কে ভয় পেলো না।
সে পরিষ্কার করে বলল- সাইন করব না। ডিভোর্স হচ্ছে না।
আমার তোমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়েছে তাই বিয়ে টিকিয়ে রাখব।
আমি এখন তোমার থেকেও বেশি আল্লাহ তায়ালার কাছে নেকি বান্দা। আমার সকল মাফ করা হয়েছে ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথেই। তুমি পাশে থাকলে অবশ্যই আমি মৃত্যু পর্যন্ত এমন নেকি বান্দা হয়ে থাকতে পারব।
এমন একজন কে তোমার স্বামী হিসেবে পাওয়া সৌভাগ্য। তুমি আমাকে কোন কারণে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো?
মোম বলল- আপনি তো আপনার কথা বললেন। আমার সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? আমার অতীত জানেন?
-না। জানতে চাইনা। বিয়ে মানে নতুন জীবন। আমরা নতুন জীবন শুরু করব।
-প্রতিটি মেয়ের জীবনে সুন্দর একটা সপ্ন থাকে। সে একজন নেকি বান্দার স্ত্রী হবে। আমারও ছিলো সপ্ন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আমার সপ্ন সপ্ন হিসেবে আমি রেখে দিতে চাই।
আমি কোন নিয়ের সম্পর্কে জড়াতে চাইনা। আল্লাহ তায়ালার এবাদতে মশগুল থাকতে চাই।
– পরিস্থিতি যেমন থাক সেটা আমি বুঝতে চাইনা।
বিয়ে অনিবার্য বেঁচে থাকার জন্য।
সহিহ বুখারী
৬৭ বিয়ে-শাদী
৬৭/১. অধ্যায়ঃ
বিয়ে করার অনুপ্রেরণা দান শ্রবণ করি।
এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ ‘তোমরা নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দ মত বিয়ে কর।’ (আন-নিসা ৪:২)‎

سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ أَخْبَرَنَا حُمَيْدُ بْنُ أَبِي حُمَيْدٍ الطَّوِيلُ أَنَّه“ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلٰى بُيُوْتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَسْأَلُوْنَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أُخْبِرُوْا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوْا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَدْ غُفِرَ لَه“ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه„ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُوْمُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ÷ وَأَتْقَاكُمْ لَه“ لَكِنِّي أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [১] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [২] [মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)

[১] যে কোন ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে ‘ইবাদাতের সময়, পরিমাণ, স্থান, অবস্থা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবেগ তাড়িত হয়ে ফারযের মধ্যে যেমন কম বেশি করা যাবে না; তেমনি সুন্নাতের ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ বা তার ‘আমালের পরিবর্তন করা যাবে না। নফল ‘ইবাদাতেও কারো সময় থাকলে বা নিজের খেয়াল খুশি মত করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামে সলাত, সওমের পাশাপাশি ঘুমানো, বিয়ে করা, বাণিজ্য করা ইত্যাদিও ‘ইবাদাতের মধ্যে গণ্য যদি তা সাওয়াবের আশায় এবং সঠিক নিয়মানুসারে পালন করা হয়।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

[২] আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, মানুষ মানুষের স্তরেই থাকতে পারবে না। মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য খেলে বা একেবারেই খাদ্য পরিত্যাগ করলে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিবে। একাধারে সওম পালন করলেও একই অবস্থা দেখা দিবে। তাই আল্লাহর রসূল আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করলে দুর্ভোগ ও বিপর্যয় আসবে। খ্রীস্টান পাদ্রীদের অনুসৃত বৈরাগ্যবাদ ও দাম্পত্য জীবনের প্রতি লোক-দেখানো অনীহা তাদের অনেককেই যৌনাচারের ক্ষেত্রে পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে।
ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ পন্থা হল বিবাহ। পরিবার গঠন, সংরক্ষণ ও বংশ-বিস্তারের জন্যই বিয়ে ছাড়া আর কোন বিধি সম্মত পথ নেই। এর মাধ্যমেই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন পবিত্র ও কলুষমুক্ত হয়ে নৈতিকতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হতে পারে। এ জন্যই ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করলে আল্লাহ্‌র চিরাচরিত বিধান এবং নবী – এর সুন্নাত হিসেবে বিয়ে করা ফরয আর এ অবস্থায় অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হলে সওম পালন করার বিধান দেয়া হয়েছে। আবার শারীরিক দিক থেকে সমর্থ হলে আর ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে করা মুসতাহাব। আর জৈবিক চাহিদা শূন্য হলে বিয়ে করা মুবাহ্‌। আবার এ অবস্থায় যদি মহিলার পক্ষ থেকে তার বিয়ের উদ্দেশ্যই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এরূপ স্বামীর শারীরিকভাবে সমর্থ নারীকে বিয়ে করা মাকরূহ।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এখন বলো? তুমি কি আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূলের আদেশ নির্দেশ উপেক্ষা করতে চাও?
-না। তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। আমার অতীত ভয়ংকর।
আমি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাইনা।
প্লিজজ তালাক দিন এখন এই মুহুর্তে। নতুবা আমার অন্য ব্যবস্থা করা আছে।
ইসলাম নারীদের তালাক দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। সেই পথ অবলম্বন করব।

ঠাস করে একটা আওয়াজ হলো। মোম ঘটনা কি ঘটেছে তা কিছুক্ষণ বুঝতে পারলো না। মোম বিশ্বাস করছে না, বুঝতে পাচ্ছে না, এটা কি কল্পনা নাকি সপ্ন, এখুনি কাশফিয়া তার উপর বরফ ঢেলে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে।
.
মোম কে থাপ্পড় মারা হয়েছে। থাপ্পড়টা কে মেরেছে? মোম নিজেই নাকি মেহেরাব?
-শুধু হালকা ডোজ দিলাম। এরপর হবে কামড় ডোজ, তারপর হাড়গোড় ভাঙার ডোজ। তালাকের নাম ২য় বার উচ্চারণ করলে তোমার জিহ্বা আমি ছিঁড়ে ফেলব পাজি মেয়ে।
তোমার আমার ডিভোর্স হবে না। কারণ, কারণ, কারণ….. আমি তোমকে এখন পছন্দ করি। এবং তোমার কাছেই আমার একমাত্র শান্তি।তোমার কাছে আমি থাকতে চাই। মহান আল্লাহ তায়ালা তোমার মাধ্যমে আমাকে সত্যিটা অনুভব করতে শিখিয়েছে। তোমার অতীত জেনে আমার লাভ নেই। আমি অতীতের সবকিছুর উপরে বিয়েটা টিকিয়ে রাখব।
আমরা স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে হানিমুনে সুইজারল্যান্ড না গিয়ে হজ্জে যাব সৌদিআরব। মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে প্রদক্ষিণ করে সাক্ষ্য দেব, মহান আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তিনি সকল ক্ষমতার উর্ধে। যা কিছু সৃষ্টি তিনি তার সৃষ্টা। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।
মোম গালে হাত দিয়ে ভয়ংকর হতভম্ব!!
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here