নুর পর্ব ১৩+১৪

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-13
মেহেরাব হোস্টেলের রিসিপশন রুমে বসে আছে। সে আজ রোজা রাখতে পারেনি তবে দুপুর থেকে সে কিছু খায়নি।এক ফোঁটা পানিও না।সে এখন ম্যারিড।বিয়ের পর হাসবেন্ড এবং ওয়াইফ দুজন একই সূত্রে বাঁধা। যাবতীয় কর্মকাণ্ড একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয়। বিয়ের সময় কাজী সাহেবের কথা গুলো মেহেরাবের মনে আছে। তার ওয়াইফ মোম না খেয়ে আছে আর সে গপগপ করে খাবে একটু পর পর।তা হতে পারেনা। তবে তবে মেহেরাবের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। খুব ক্ষিদেও লেগেছে। যেখানে ওর একটু পর পর কিছু খাওয়ার অভ্যাস। আজান দিচ্ছে। আজ আর মসজিদে সরাসরি ইমামের সুরেলা আজান শোনা হলো না। মোমের ইফতার করা শেষ হলে মসজিদে যেতে হবে নামাজ পড়তে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
ঘড়ির দিকে তাকালো মেহেরাব। ঘড়িতে আজানের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মেহেরাব অন্য সময় হলে হোস্টেলে মোমের রুমে ডিরেক্ট চলে যেত।অতীতে গার্লস হোস্টেলের ভেতরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেছিল।এখনকার মেহেরাব এবং তখনকার আগুনের মধ্যে বেশ তফাত। এখন আর সে আগুন নয়। সে মুসলিম মেহেরাব। মেয়েদের হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ।সে মেনে নিয়েছে।মোম কেন আসছেনা? এদিকে মেহেরাবের পিপাসা পেয়েছে। ক্ষিদে লেগে পেটে হালকা ব্যাথাও অনুভব করছে সে।
মোম কি তাহলে আসবে না? একা একাই তাকে ছাড়া ইফতার করে ফেলবে? সে মোমের স্বামী। স্বামী কে ছাড়াই সে খাবে?
মোম আজানের পর পর মেহেরাবের সামনে উপস্থিত হলো। মেহেরাব খুশি হয়ে দাড়িয়ে চেয়ার টেনে বলল- বসো এখানে।
আমার লোকেরা এখুনি খাবার সাজিয়ে দেবে।
কয়েক জন বাবুর্চি টাইপ লোক তাড়াতাড়ি ইফতার সাজিয়ে দিলো রিসিপশনের টেবিলে।
মেহেরাব হাতে ইশারা করে রিসিপশন রুম সবাই কে খালি করতে বলল।
মোম কখনোই নেকাব খুলবে না। মেহেরাবও চায় না সে যাকে আজ পর্যন্ত দেখেনি তাকে অন্যকেউ দেখুক।
মেহেরাব খাবার সার্ভ করতে করতে বলল-লাইফে প্রথম খাবার সার্ভ করছি৷ এখানে মুসলিমদের ইফতারের মোটামুটি সকল আইটেম রয়েছে। রয়েছে সবচেয়ে মূল্যবান খেজুর। এখানে তিন রকমের খেজুর রয়েছে।
এই যে দেখছো এই খেজুর গুলো? এগুলো আমাদের মহা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খুব পছন্দ করতেন।
এই নাও খাও, হা করো।
আমি একটা খেজুর তোমার মুখে তুলে দিতে চাই। আমার ইচ্ছে।
-আমি এখন খেতে পারবো না।
-কেন?
মুখে খাবার থাকলে যেমন কথা শোনায় ঠিক তেমন কথা শোনা গেলো মোমের।
মোম কোন কথা বললো।
রিসিপশনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো।
একজন বাবা বয়সী লোক তার কিশোরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটির ঠোঁটে বালিকা বালিকা হাসি। বাবার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। অপূর্ব দৃশ্য।
মোমের বাবাও ঠিক একরকম কায়দায় হাঁটে এবং দুষ্টু হাসি ঠোঁটে লেগে থাকে। সেদিন গুলো কতটা শ্রুতিমধুর ছিলো।
মেহেরাব খেজুর রেখে মোমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। মোম আগেই ইফতার করে নিয়েছে আজানের কিছুক্ষণ সময়েই।
-নামাজ পড়ব। আমি গেলাম।
মোম লম্বা লম্বা পা ফেলে যেতে লাগলো। যেন এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে।
-খাবার গুলো কি করব স্যার?
মেহেরাব বাবুর্চির দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহত কন্ঠে বলল- এখানেই থাক।যাদের ইচ্ছে তারা খাবে। তোমরা চলে যাও।
মেহেরাবের ঘড়ির দিকে তাকালো। এখনই বের হতে হবে নইলে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে লেট হবে।
মেহেরাব ইসলাম ধর্মকে নিজের মধ্যে স্থাপিত করেছে। প্রায় সূরা সমূহ মুখস্থ করছে! শিখছে, ফজিলত বোঝার চেষ্টা করছে।
একেক সূরা একেক ফজিলতের অধিকারী।
যেমন তিন কুল সূরার ফজিলতঃ

১। সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা সকাল ও বিকাল ৩ বার করে পড়লে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যাবে ।
( সহীহ তিরমিযী হা: ২৮২৯)

২। প্রতি ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা একবার করে পাঠ করতে হবে । (আবু দাউদ হা:১৩৬৩)

৩। নবী (স:) রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একবার করে পড়ে হাতে ফুকে সমস্ত শরীরে একবার বুলিয়ে দিতেন । এভাবে তিনি ৩ বার করতেন।
(বুখারী তাও: হা:৫০৭০)

৪। যে কোন সময় অসুস্থতা অনুভব করলে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা পড়ে শরীরে ফুক দিতে হবে ।(বুখারী হা:৪৬২৯)

৫। জিন ও মানুষের বদনজর থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করে শরীরে ফুকতে হবে ।(সহীহুল জামে হা:৪৯২০)

সূরা ইখলাসের ফজিলতঃ

১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (মুসলিম ৮১২)

২)অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারি ৫০১৫)

৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। (সহীহুল বুখারি ৭৭৪)

নামাজের আগে এবং পড়ে ইমাম সাহেবরা যেসব হাদিস শোনায় তা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করে মেহেরাব।

মোম টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
পড়তে পড়তে তার চোখ ব্যথা করছে। কাল যম প্রফেসরের ক্লাস আছে। কে জানে কালও তাকে দাড়িয়ে থাকতে হবে সকল ক্লাসে। নিজের মনেই হাসি হেঁসে ফেললো যম প্রফেসরের কান্ড দেখে। এক মিনিট লেটের জন্য এতো বড় শাস্তি। মোম ঘুমুতে গেলো দুটোর সময়।
সেহেরির সময় কাশফিয়া তাকে নানাভাবে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করেছে।
ক্লাস গুলো দাড়িয়ে করার কারণে মোমের সারা শরীর অসাড়। সে ঘুমুতে চায়।

হাতী দিয়েও টেনে তোলা যাবে না তাকে।
-তুমি জাগবে নাকি আমি রুমে এসে জাগাবো?
মোমের চোখ আপনাআপনি খুলে গেলো।
-একবার রুমে এলে আজ আর ফেরত আসব না।
কাশফিয়া মোমের কানে ফোন ধরে রেখেছে।
মেহেরাব কথা বলছে ফোনে।
মোম এক লাফে বিছানা থেকে উঠলো।
খটমটে আওয়াজ হলো।
ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।
-আজ আমাদের বিয়ের পর প্রথম রোজা। আর তুমি কিনা সেহেরি খাবে না? ঘুম থেকে জাগছো না? আজকের দিন টা আমার জন্য স্পেশাল।
মোমের চোখ বুঝে আসছে।
দুটো খেজুর মুখে দিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে তিন মিনিটে সেহেরি খেয়ে নামাজ পড়ে সে একটা ঘুম দেবে। ১২টায় ক্লাস। সে ঠিক পনেরো মিনিট আগে ঘুম থেকে জাগবে। ঘড়িতে একটা এলার্ম দিতে হবে। মোম ছোট করে একটা হাই তুলে বলল- হুমমমমমম।
-আমি সেহেরি তে যা খাব তা সব তোমার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার লোকেরা হোস্টেল রিসিপশনে সেহরির খাবার প্যাকেট নিয়ে এসেছে।
আমি যেসব আইটেম খেয়ে প্রথম রোজা রাখব তুমিও সেসব খেয়ে রোজা রাখবে।
এখন যাও ওয়াশরুম যাও। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসো।
খাওয়া শেষ হলে কল দেব। প্রথম কলেই যেন রিসিভ হয় এবং অন্যকেউ যেন তোমার ফোন রিসিভ না করে। আমি আমার ওয়াইফের ফোনে কল দিয়েছি ওয়াইফের সাথে কথা বলার জন্য। অন্যকারও সাথে কথা বলার জন্য নয়। আই ডোন্ট লাইক দিস।
কাশফিয়া আর ক্যারলের চোখ ধাঁধিয়ে গেলো।
এতো মহা ভোজ।খাবার গুলো তে মুসলমানদের খাবারের শাহী শাহী ভাব আছে। শাহী কাবাব, শাহী কোরমা, শাহী বিরিয়ানি, ইত্যাদি ইত্যাদি! প্রায় ৫০ জনের সেহেরি। মেহেরাবের রুচি আছে। ওরা ভেবেছিল ঘাসযুক্ত কিছু হবে সেহেরি তে। এখানকার সবাই এসব ঘাস ঘষো পছন্দ করে। যেন বিয়ের দাওয়াত। কোনটা রেখে কোনটা খাবে কেউ বুঝতে পাচ্ছে না।
দুজনেই প্রথম শাহী কাবাব টেস্ট করলো। যা মুখে দিতেই গলে গেলো।
মোম তার ডেস্ক থেকে নিজের আনানো খেজুরের প্যাকেট থেকে দুটো খেজুর খেয়ে এক গ্লাস পানি খেলো।
তারপর ফোন সুইচ অফ রেখে বারান্দায় দাঁড়ালো। বাতাসে তার চুল উড়ছে।
নামাজ পড়ে সোজা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

আজানের সুরেলা আওয়াজ নব মুসলিম মেহেরাবের হৃদয় হরণ করে নেয়। সে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তের আজান মসজিদে উপস্থিত হয়ে শ্রবণ করে। মাঝে মাঝে ফজর ওয়াক্ত মিস হয়ে যায়। সেদিন সারাদিন চরম মন খারাপ হয়।কিছুই ভালো লাগেনা। আজ মোমের কান্ডকারখানার জন্য তার আজান শোনা মিস হলো। এই নিয়ে দেড়শো কল দিয়েছে মোমের ফোনে। সুইচ অফ রেখেছে।
মেহেরাব এখন মোমের হোস্টেল রুমের সাথের রোডে গাড়িতে বসে আছে।
সুইচ অফ জেনেও একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে মেহেরাব। মেহেরাব কে মোম ছাড়া কেউ এভাবে কেউ ইগনোর করেনি।
আজ ওয়াইফ বলে বেঁচে গেলো। তা না হলে……।মেহেরাব মোমের রুমের জানালা এবং
বেলকুনির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে।
এখন সকাল সাড়ে এগারোটা বাজে।
ফজরের নামাজ পড়েই সে হোস্টেলের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মোমের সাথে সেহেরিতে কথা বলার পর সে ওয়েট করছিলো সামনে খাবার সাজিয়ে। মোমের সেহরি খাওয়া শেষ হলেই মেহেরাব কল করে জেনে নিয়ে তারপর খাবে ঠিক করেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর কল দিতেই সুইচ অফ আসে।
মেহেরাব একের পর এক কল দিতেই থাকে। কিছুতেই কিছু হলো না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আজানের সময় হয়ে গিয়েছে। মেহেরাব ঝটপট দুটো খেজুর মুখে দিয়ে পানি খেয়ে নিলো। মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় তার ভেতর অজস্র অভিমান জমা হলো।
ইচ্ছে করছে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ছূরে মারতে পৃথিবীতে।
.
মোম ঘুম থেকে উঠে মাথা চুলকাতে চুলকাতে জানালার সামনে দাঁড়ালো।
চোখ বন্ধ করে শীতের বাতাসের ঝটকা অনুভব করতে লাগলো। কনকনে শীতে তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠলো বার বার। মোমের এই শীতের অনুভূতি দারুণ লাগে।
এক জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সেটা মোম লক্ষ্য করলো না। দিনের শুরুতেই মোমের ভেতর একটা ভালো লাগা কাজ করছে৷
মেহেরাব দূর থেকে আবছা আবছা একজন কে দেখলো জানালার ধারে।
অস্পষ্ট নয় তবে এটাই তার ওয়াইফ।
মেহেরাবের হঠাৎ মনে পড়লো তার ওয়াইফ কে আজ পর্যন্ত সে দেখেনি।
বোরখা ছাড়া সামনে নিয়ে কোনদিন হেঁটে গেলে সে যদি চিনতে না পারে? মোম যদি হারিয়ে যায় তবে তাকে খুঁজে বের করবে কিভাবে? সর্বনাশ! মেহেরাব একটা ঢোক গিললো।
.
.
মোম ফ্রেশ হয়ে অজু করে তৈরি হয়ে নিলো।
বাবা বলতো অবশ্যই অজু অবস্থায় থাকবে, কোথায় বের হওয়ার আগে অজু করে নেবে এবং সূরা, দোয়া দরুদপাঠ করে বের হবে।
ক্লাসের বেশি দেরি নেই। মোম তাড়াতাড়ি হোস্টেল থেকে বের হলো।
বের হতেই একজনের তীব্র দৃষ্টির সাথে তার দৃষ্টি বিনিময় হলো।
মোম আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কারও পরোয়া করেনা।
সে তার মতো হেঁটে হেঁটে মেহেরাবের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। মেহেরাব কে ক্রস করা মাত্রই হাতে স্পর্শ অনুভব করলো।
-তুমি কি একটু বেশি বেশি করছো না?
-কথা টা আমার বলা দরকার ছিলো।
-তাহলে বলো আমি শুনছি।
কি হলো বলো?
-ক্লাসে যাব।
ভদ্রভাবে বলছি হাত ছাড়ুন।
মেহেরাব হাত ছেড়ে দিলো।
-ফোন সুইচ অফ কেন?
আচ্ছা যাও কোন প্রশ্ন করব না। ফোন অন করে ক্লাসে যাও। তোমার ক্লাস শেষ হবে সন্ধ্যা নাগাত।
আমি দুপুরে আসব। ওয়েট করব তোমার জন্য। তোমাকে নিয়ে সন্ধ্যায় সোজা আমি রেস্টুরেন্টে যাব। আজ তোমার সাথে আমার প্রথম রোজা।
আমি রেস্টুরেন্ট বুক করেছি। স্পেশাল ভাবে তোমার আমার প্রথম ইফতারের আয়োজন হবে।
মোম চুপ করে থেকে বলল-এবার অনুমতি দিলে যেতে পারি?
-না। ফোন বের করো?
মোম পেছনে ঘুরে তাকালো।
মেহেরাব মোমের ভ্যানিটি ব্যাগে হাত দিলো।
মোম বাঁধা দিলো না। জানে লাভ নেই।
বাঁধা দিতে গেলে কথা বলতে হবে। মেহেরাবের সাথে মোমের তিল পরিমাণ কথা বলার মতো রুচি নেই!! এটা কি মেহেরাব বুঝতে পারে না? সে কি করবে না করবে তা ভেবে রেখেছে।
সময় হলে মেহেরাব বুঝতে পারবে মোম ইয়াসমিন ঠিক কি!
মেহেরাব মোমের ফোন বের করে সুইন অন করলো।
-এবার যাও! হ্যাভ এ সুইট ডে!
.
মেহেরাব জোহরের নামাজ পড়ে দাড়িয়ে আছে ভার্সিটির সামনে। আজ প্রচন্ড ঠান্ডা। ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে। মেহেরাবের গায়ে একটা শার্ট শুধু। ওভারকোট সে খুলে হাতে রেখেছে মোমের জন্য।
মোম ক্লাস থেকে বের হতেই তার গায়ে পরিয়ে দেবে।
মোম নিজের খেয়াল রাখতে পারেনা।এই ঠান্ডায় ওভার কোট নিয়ে বের হয়নি! দুষ্টু মেয়ে কোথাকার!!!
এখন বিকেল হয়েছে! বেচার মেহেরাব জানেনা তার দুষ্টু ওয়াইফ অনেক আগেই হোস্টেলে ফিরেছে।
আজ ১২টায় মোমের ক্লাস শেষ হয়েছে। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে বাকি ক্লাস গুলো অফ।
মোম কাশফিয়া ক্যারল তিনজন গরম তিনটা কম্বল নিয়ে আরামে ঘুমুচ্ছে। বাহিরে বরফ পড়তে শুরু করেছে। জানালা দিয়ে বরফের অপরুপ বৃষ্টি দেখতে দেখতে মোমের চোখ দুটো আবেশে বন্ধ হয়ে গেছে।
মেহেরাব প্রায় জমে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। ক্ষিদে তৃষ্ণা তার পেট ব্যথা করছে হালকা।গলা শুকিয়েছে। সে গতকাল দুপুরের পর থেকে তেমন কিছুই খায়নি!
মেহেরাব ভালোবাসার কাকে বলে জানেনা, বুঝেনা। মোমের প্রতি তার এতো টা টান কিসের সেটাও নিজে বুঝে উঠেনি এখন পর্যন্ত ।
.
.#নূর💔
Writer-Moon Hossain
Part-14
মেহেরাব ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।সেদিকে তার খেয়াল নেই। ওয়াইফের জন্য ওয়েট করে আছে সে। মেমের ১২টায় ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিলো। লেকচারার ক্লাসে এসেই তৎক্ষনাৎ তুষারপাতের ঘোষণা করেই বের হয়ে গেছেন।যাকে বলে ১২টায় ক্লাস শুরু হয়ে ১২টায় শেষ হয়ে গেলো। মোম আবারও ফোনের সুইচ অফ করে হোস্টেলে চলে যায়। মেহেরাবের কথা তার মনেও পড়েনি।
মেহেরাব যেকোনো কাজ করলে সেটা দায়িত্ব অনুসারে করে।সেটা ভালো কিংবা মন্দ হোক। সে দাড়িয়ে আছে তো দাড়িয়ে আছেই।
বরফের বৃষ্টিতে মেহেরাব ঠান্ডায় জমে একাকার।শরীরের প্রতিটি শিরা যেন কাঁপছে।শিরদাঁড়ায় রক্তের জায়গায় বাতাস চলাচল করছে এমন মনে হচ্ছে।
তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ মেলে তাকাতে পাচ্ছে না। আধবোজা চোখে সে ইউনিভার্সিটির দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে।
জনমানবহীন জায়গায় বরফের বৃষ্টিতে মেহেরাব দাড়িয়ে আছে পলকহীন চোখে।
চারপাশে শুধু বরফ আর বরফ। তুষার পাতের জন্য নিচে বরফের টিবি জমা হয়েছে।
পাশে থাকা রেস্টুরেন্টে সুরু জানালা দিয়ে অনেকে তাকিয়ে রয়েছে মেহেরাবের দিকে। সবাই ভাবছে কিং ফায়ার পাগল হয়েছে নাকি? খামাকা কেন বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বিনা ওভারকোটে?
মেহেরাব সত্যি পাগল হয়েছে। ঠিক কি কারণে পাগল হয়েছে সেটা সে নিজেও জানেনা।
.
আজানের সময় হয়েছে। ফ্লোরে একটা দস্তরখানা বিছিয়ে ইফতার সাজাচ্ছে মোম। কাশফিয়ারা কেউ হেল্প করলো না তাকে।
দুজন মুখ ভোঁতা করে বসে আছে ফ্লোরে।
মোম শরবতের গ্লাস দুজনের দিকে এগিয়ে দিলো।
মোম ঘড়ির দিকে তাকালো।
আজান দিচ্ছে। মোম খেজুর মুখে দেওয়ার আগেই দরজায় নক হলো।
হোস্টেলের লেডি টিচার হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
-দুঃখিত মাই চাইল্ড। এখুনি এক জায়গায় যেতে হবে। আমাদের কাছে বিশেষ খবর পাঠানো হয়েছে।
কাশফিয়া বলল- কাকে যেতে হবে?
-ক্যান্ডেল।
-কেন?
-দুঃখীত মাই চাইল্ড। আমি জানিনা।
ক্যান্ডেল চলো আমার সাথে।
মোম বোরখা পড়ে ওভারকোট গায়ে দিয়ে হোস্টেলের বাহিরে বের হলো।
তুষার পাতের জন্য চারদিক এক ধরনের নিস্তব্ধতা।
এমন সময় কেউ বাহিরে বের হয়না। তাকে একটা গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো।
হোস্টেল টিচার হাসি হাসি মুখে বলল- ক্যান্ডল মাই চাইল্ড। তোমার যাত্রা শুভ হোক।
-ধন্যবাদ ম্যাম।
হোস্টেল রুমের জানালা দিয়ে অনেক স্টুডেন্ট কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকে দেখছিলো।
মোম সবাই কে টা টা দিলো অভয় দিয়ে। পুরো হোস্টেল একটা বিশাল পরিবারের মতো তার কাছে।
গাড়িটা তাকে নিয়ে চলছে জনমানবহীন বরফের রাস্তা দিয়ে। মোম জানালা খুলে বাহিরে তাকালো।
চারদিকে এতো বরফ যে মনে হচ্ছে এটা বরফের শহর। আর সে কোন শাহাজাদী।
এই গাড়িটা ঘোড়ার গাড়ি।
তাকে নিয়ে বরফের বৃষ্টি দেখতে বের হয়েছে গাড়োয়ান।
কি সুন্দর দৃশ্য! কি সুন্দর পরিবেশ। রুপকথার রাজ্যের মতো লাগছে তার।
তুষার পাতের ঝাপটা তার মুখে লাগলো।
মোম সেটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করলো।
গাড়িটা একটা বিশাল দালানের সামনে থামলো।
তুষার পাতের জন্য বরফে ঢাকা পড়ে বাড়িটা সাদা ধবধবে হয়ে আছে। দেখতে ভালো লাগছে।
মোম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন কোন রাজমহলে ভেতরে চলে এসেছে সে।
ভেতরটা অসম্ভব সুন্দর! রাজকীয় আমলের চমৎকার সব ঝাড়বাতি! চমৎকার রংবেরঙের মোম আগুনে জ্বলে দগ্ধ হয়ে রংবেরঙের শিখা তৈরি হয়ে পুরো রাজপ্রাসাদ টা যেন আলোকিত করছে।
একটা লম্বা ফরেনার লোক এসে বলল- কাম উইট মি ম্যাডাম।
মেহেরাবের বেডরুমে মোম দাড়িয়ে আছে।
বাহির থেকে দরজা লক করা। দরজার ওপাশে ফরেনার লোকটা দুটো ডক্টর নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।
হল রুমের মতো বিশাল বেডরুম মেহেরাবের। চমৎকার সব আসবাবপত্র দিয়ে বেডরুম টা সাজানো। রুমের মাঝখানে বেড। বেডের উপর দেয়ালে বিশাল একটা ফ্রেমে বাঁধাই করা ফটো মেহেরাবের। ফটোতে মেহেরবের চোখ দুটো জীবন্ত। যেন তাকিয়ে আছে মোমের দিকে।
পুরো বেডরুমে অসংখ্য ফটো ফ্রেমে বাঁধানো সিচুয়েশনে শোভা পাচ্ছে দেয়ালে।
বেডের মাঝখানে ধবধবে সাদা কম্বল গায়ে ঝরানো মেহেরাব শুয়ে আছে।
চোখ দুটো বন্ধ।
কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে। যেন সদ্য জন্মানো শিশু।
মেহেরাবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মোম।
মেহেরাব কাউকে দেখতে পাচ্ছে। কারও স্পর্শ অনুভব করছে।
এমন সুন্দর চোখ মেহেরাব কখনো দেখেনি। ডাগরডোগর বড় বড় চোখ কালো মনির ঘনপাপড়ি যুক্ত। কি অসম্ভব মায়া, মমতা, স্নেহ চোখ দুটোতে। কাটা কাটা চেহারার শ্যামলা মুখ, বাঁশের বাঁশির মতো লম্বা চিকন নাক, হালকা গোলাপি গোলাপের পাতলা ঠোঁট, সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুক্তোর মতো ঝিকঝিক ঝলমলে দাঁত যা প্রতিবারের হাসির সাথে দেখা যাচ্ছে। সে যেমন ধবধবে সাদা বরফের মতো ঠিক তেমন আশেপাশে এমন ধবধবে সাদা মানুষ দেখে এসেছে সে। কখনো তেমন শ্যামবর্ণের মানুষ দেখেনি।
কি অসম্ভর আকর্ষণীয়া। যেন এই পৃথিবীর কেউ নয়।
মেহেরাব কি তবে মারা গেছে? মারা যাওয়ার পর কি সে কোন হুর দেখছে যার গায়ের রং শ্যামবর্ণ!
-আমি কোথায়?
আল্লাহ তায়ালা তুমি কোথায়?
আমি কি মারা গিয়েছি?
-আপনি বেঁচে আছেন। এবং নিজের বাড়িতে আছেন। নিজের রাজ্যে আছেন মিঃ কিং ফায়ার।
-তুমি কি তুমি?
-আমি আসলে আমি।
মেহেরাবের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। মেহেরাব মোমের গালে ঠান্ডা হাত রেখে তাকিয়ে আছে অপলকভাবে।
মেহেরাবের স্পর্শে মোম কেঁপে উঠলো। দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে আবেশে।
.
.
মেহেরাব এক ঝটকায় নিজের সেন্স ফিরে পেলো।
তড়িঘড়ি করে বেডে উঠে বসলো।
মোম বসে আছে তার সামনে, তার বেডে।
হ্যাঁ এটা সত্যি! সপ্ন নয় বা মৃত্যুর পরের জীবন নয়।
মেহেরাবের খালি গা। শুধু কম্বল ঝরানো ছিলো।
মোম বেডরুমে আসতেই ডক্টর বলেছিল ঠান্ডায় জমে গিয়েছে মেহেরাবের শরীর। মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
তার উষ্ণতার প্রয়োজন ইমিডিয়েটলি। যেহেতু তুমি উনার ওয়াইফ তো তুমি এই দায়িত্বটা নেবে।
মোম ইতস্তত করে মেহেরাবের বরফের ন্যায় ঠান্ডা হাত দুটো নিজের হাত দুটোর মাঝে নিয়ে ঘর্ষণ করেছিল। পায়ের তালুতেও ঠিক একইভাবে হাত দিয়ে ঘষেছিল। মেহেরাব তখন অচেতন ছিলো। তবে তার মস্তিষ্ক সজাগ ছিলো। মস্তিষ্কের ভাবনা গুলো একত্র হয়ে ঠোঁট দিয়ে বের হয়ে এসেছিলো অগোছালো কিছু লাইন । ক্যান্ডল মাই ক্যান্ডল, মাই সুইট হার্ট, মাই ওয়াইফ। ফরগিভ মি। প্লিজ ফরগিভ মি। হয়ার আর ইউ? আই ওয়ান্ট টু সি ইউ! প্লিজ কাম! প্লিজ কাম।
মোম শুনতে না চাইলেও এই কথাগুলো তাকে শুনতে হচ্ছিল। কেউ যেন তার কানে গরম লোহা ঢেলে দিচ্ছে এমন লাগছিলো।
তবুও মোম তার দায়িত্ব পালন করছিলো। নরম শ্লেষ্মা মাখানো হাত গুলো দিয়ে বুকে মালিশ করছিলো। একবার হাতে, একবার পায়ে, একবার বুকে, একবার পিঠে, একবার মাথায়, মুখে মালিশ করে গরম দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো তার কথাগুলো শুনে শুনে।
মেহেরাব দুই হাত দিয়ে শক্ত করে মোমের গাল স্পর্শ করে আছে।
তাকিয়ে আছে মোমের নেকাব বিহীন মুখের দিকে।
মোম নিজেও জানেনা কখন নেকাব থেকে পিন খুলে তার মুখ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।
যতক্ষণ বুঝেছে ততক্ষণে লেট। মেহেরাব তাকে খুব কাছে টেনে গাল স্পর্ষ করে তাকিয়ে রয়েছে সমস্ত ইন্দ্রয় দিয়ে। এক জীবনে যেন এটাই সবচেয়ে সুখের, শান্তির মোমেন্ট মেহেরাবের জন্য।
বাঙালি নারীদের শ্যামল সৌন্দর্য সম্পর্কে মেহেরাবের ধারণা ছিলো না। তবে তবে প্রাচ্যের সকল নারীরা অপরুপা, মায়াবী, যাদুকরী,ডাগরডোগর আখিপল্লবের শ্যামবর্ণের সৌন্দর্যের অধিকারী হয় সেটা ভাসা ভাসা শুনে এসেছে মেহেরাব।সবচেয়ে কাছে টানে তাদের লজ্জা মিশ্রিত চাহুনি, মুখশ্রী এবং লজ্জা মাখানো ব্যাবহার।
তার প্রমাণ এখন পাওয়া যাচ্ছে।
মেহেরাব কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। তার হৃদয় বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যেন চারদিকে মুখরিত হচ্ছে।
আর কোন মেয়ের সাথে এমন অনুভব করেনি সে।
প্রাচ্যের বাঙালি নারীদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তাদের লজ্জামিশ্রিত চাহুনি যা যেকেউ কে মুগ্ধ করতে বাধ্য করে।
পুরো বেডরুমে মোম আর মেহেরাব একা। দুজন খুব কাছে। একে অপরের হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে।
মেহেরাব মোমের কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো। এতে মোমের বড় বড় চোখ গুলো আরও বড় হয়ে গেলো।
মেহেরাব মোমের ঘন-কালো পাপড়িযুক্ত আখিপল্লব দুটোতে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো।
এক হাত গালে শক্ত করে স্পর্শ করে অন্য গালে দীর্ঘ গভীর ভাবে ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই মোম প্রতিবাদ করলো। হাত দিয়ে মেহেরাবের বুকে আঘাত করতে লাগলো।
মেহেরাবের মনে হচ্ছিল তুলোর তুলোর তুলতুলে নরম আঘাত।
মোম এবার নখ দিয়ে বুকে প্রচন্ড দীর্ঘ একটা আচড় কাটলো।
মেহেরাব মোমের দুই হাত এক হাতের মুঠোয় ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোমের ডাগরডোগর চোখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মেহেরাবের দৃষ্টির ভাষা ছিলো -এটা আমার রাজ্য! আমি এই রাজ্যের রাজা। তুমি আমার কাছে বন্দিনী!
মেহেরাব মোমের অন্য গালে ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই মোমের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ঝরে পড়লো মেহেরবের গালে। মেহেরাব চোখের পানির স্পর্শ অনুভব করতেই মোমের কাছ থেকে সরে গেলো।
মেহেরাব ভুলে গিয়েছিল প্রাচ্যের মেয়েরা কাঁদার জন্য বিখ্যাত। এমনকি তারা সুখের সময়ও কাঁদে এবং নিজের স্বামীর সোহাগের সময়ও চোখ থেকে পানি ফেলে। বোঝার উপায় নেই সেটা সুখের না দুঃখের।
মেহেরাব ভেবেছিল মোম কাঁদবে এই ঘটনায়। মোম কাঁদার জায়গায় তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহেরাবের দিকে।
মেহেরাব বলল-সাহস থাকলে হিট মি।এটা তো নতুন না। স্বামী কে আঘাত করার আগেই তোমাকে মাফ করে দিলাম। কাম অন হিট মি?
বলতে বলতেই মোম বালিশ দিয়ে মেহেরাব কে আঘাত করলো।
মুখের নেকাবটা আটকাটাতেই মেহেরাব নেকাব খুলে মোম কে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলো।
-মাই এঞ্জেল, মাই ডিয়ার তুমি এতোটা নির্দয় কেন?
-ডোন্ট টাচ মি।
-এমন নড়াচড়া করো না।
লাভ হবে না।
-ছাড়ুন আমাকে। এর ফল ভালো হবে না।
-না হোক।
মোম দুই হাত দিয়ে মেহেরাবের পিছে লম্বা লম্বা দীর্ঘ আঁচড় কাটতে লাগলো।
মেহেরাবের ব্যথা লাগলেও সে সয়ে গেলো।
মোমকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে শক্ত ভাবে হাত দুটো ধরে বলল- তোমার এই দুইহাত দুটো বড্ড যন্ত্রণা করছে। এই সেই হাত যা আমাকে আঘাত করে প্রতিনিয়ত। তোমার এলেম আছে।
আমার রাজ্যে এসে বিনা অস্ত্রে আমাকেই ঘায়েল করলে?
-এসব নাটক বন্ধ করুন।
আমি হোস্টেলে ফিরে যাচ্ছি।
আপনার কারণে আমার ইফতার করা হয়নি, মাগরিবের নামাজ কাযা হয়েছে।
মোম বিছানা থেকে উঠতেই মেহেরাব এক ঝটকায় মোম কে আবার জরিয়ে ধরে বলল- তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছো, আমি কিছু বলিনি, করিনি। বাট তোমার জন্য আজ আমার আছরের এবং মাগরিবের নামাজ কাযা হয়েছে।এশারের নামাজ পড়তে পারব কিনা সন্দেহ রয়েছে। গত দুই দিন ধরে আমি কিছু খায়নি, না ইফতারে, না সেহেরি তে। এর খেসারত তোমাকে দিতে হবে মাই এঞ্জেল।
মেহেরাব মোমের মুখে খাবার জোর করে ঢুকিয়ে বলল- চিবুতে থাক নয়তো গিলে ফেলো। তোমার আজ রক্ষে নেই। আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না তোমায় কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা চায় তুমি তোমার স্বামীর হাতে খাবে।
মোম মেহেরাবের হাতে খেয়ে নিলো। খেয়ে নিলো বললে ভুল হবে, মোম কে এক প্রকার গিলিয়ে দিলো মেহেরাব৷
মেহেরাবও মোমের হাতে খেয়ে নিলো।
মোমের হাতে খাবার তুলে সেটা নিজের মুখে নিজেই দিলো মেহেরাব।। এটা কে আর যায় হোক ওয়াইফের হাতে খাওয়া বলেনা।
মেহেরাব নিজেই পৌঁছে দিলো মোম কে হোস্টেলে।
মোম মানা করেছিল। সে মেহেরাবের সাথে যেতে চায়না এবং মেহেরাব অসুস্থ।
মেহেরাব মোমের গালে হাত রেখে বলেছিল- আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছি একদম। তুমি আমার সুস্থতা। আই এম অলরাইট।
মোম হোস্টেলে ফিরে কোন কথা বললো না। সোজা শুয়ে পড়লো।
মোম সহজে কাঁদে না। তবে পরের দিন তাকে কাঁদতে হলে মেহেরাবের কান্না দেখে।
মেহেরাব আগপর্যন্ত চোখের পানি ফেলেনি।
সে কাঁদতে জানেনা।
তবে আজ কাঁদছে।
মেহেরাবের ডিপার্টমেন্টের একজন লেকচারার মারা গিয়েছে গতকাল। ভার্সিটিতে শেষ বারের মতো তার মুখ দর্শনের জন্য আনা হয়েছিলো।
মেহেরাব কে লেকচারার ছেলের মতো দেখতো।
মেহেরাবও উনাকে অতি পছন্দ করতো তবে সেটা কখনো প্রকাশ করতো না। উপর থেকে মেহেরাব সবার চোখে হার্ড কিং ফায়ার হয়ে থাকে।
মেহেরাবের কান্নার আসল কারণ হলো অতি পছন্দের লেকচারারের পরকাল নিয়ে।
তিনি তো মহান আল্লাহ তায়ালা কে চিনতে পারেন নি যেমনটা মেহেরাব চিনেছে।
উনার জন্য দোয়াও করতে পাচ্ছে না মেহেরাব।

RIP মানে হচ্ছে Rest in peace অর্থাৎ পরকালে ভালো থাকবেন। কত সুন্দর একটা কথা। কিন্তু এই কথাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? আ
মানুষ গুলো সারাজীবন আল্লাহর নাফরমানী, আল্লাহর বিধিনিষেধকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে অশ্লীলতায় ডুবে ছিল তারা মরে গেলে পরকালে ভালো থাকবে?

এত সস্তা পরকালের জীবন! এত সস্তা আল্লাহর বিধি-বিধান!

একজন নাস্তিক মরলেও RIP লেখেন,
একজন কাফের মরলেও RIP লেখেন,
একজন ইসলাম বিদ্বেষী মরলেও RIP লেখেন,
আবার সারাজীবন অপকর্মে লিপ্ত ফাসেক ব্যক্তি মরলেও RIP লেখেন।

এই শিক্ষা ইসলামের কোন কিতাবে পেয়েছেন বলবেন কি?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরানুল কারিমে যা বলেছেনঃ-

“নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা সঙ্গত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।”(সূরা আত তওবা : ১১৩)

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা জ্ঞান করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে”। [সূরা বাকারা, আয়াত ৩৯]

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগণের এবং সমগ্র মানুষের লানত। এরা চিরকাল এ লানতের মাঝেই থাকবে। তাদের উপর থেকে আযাব কখনও হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না”। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৬১-১৬২]

একটা চোর, খুনি, ডাকাত, ধর্ষক, সন্ত্রাসী মরলে মানুষ যেমন ঘৃণা করে। ঠিক তেমনি একজন নাস্তিক, কাফের, ফাসেক, কুফুরি করা ব্যক্তিও ঘৃনিত। আর এটাই ইসলামী আক্বীদা। তাওহীদের শিক্ষা।
মেহেরাবের নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
খুব কষ্ট হচ্ছে। কি নির্মম পরকালে লেকচারার নিমজ্জিত হবে।
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here