নুর পর্ব ২৭+২৮

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-27-28
#27
[ তোমাকে উনার হাতে তুলে দিলাম এর জায়গায় উনাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম লেখায় উনাকে তোমাকে শব্দ গুলোর টাইপিং ভুল হয়েছে, আমি তখনই ঠিক করেছি টাইপ তবে ভুলটাই অনেকে কপি করেছে, এটা আমার দ্বায় নয়, দ্বায় কপি রাইটারদের]
কাঁচের জানালায় খটখট আওয়াজ হচ্ছে।
কেউ নক করছে গাড়ির জানালায়।
জানালার কাঁচ খুলতেই মেহেরাব তার হাসিমাখা মুখ প্রদর্শন করলো।
-হ্যালো ব্রাদার। সালাম নেবেন।
আমাকে কাইন্ডলি লিফট দেবেন?
গাড়ির মালিক কিছু বলার আগেই মেহেরাব গাড়িতে উঠে পড়লো।
মেহেরাব হাত বাড়িয়ে বলল- মাই নেইম ইজ মেহেরাব ইসলাম খান।
-মাই নেইম ইজ আসলাম শেখ।
হ্যান্ডশেক পর্ব শেষ হলে মেহেরাব তাকে ড্রাইভ করতে বলল। একটু ইউনির্ভাসিটির যে বাস গুলো ট্যুরের জন্য রওনা দিয়েছে তাদের মধ্যে দশ নাম্বার বাসকে খুঁজতে বলল। বাস টায় তার ওয়াইফ রয়েছে।
আসলাম বুঝে উঠতে পারলো না সে কি রাগ দেখাবে নাকি ধমক দেবে।
-আরে ব্রাদার। আমাকে দেখবেন পরে। আগে বাসটা খুঁজে দিন। বাসটা ধরতে হবে।
ওয়াইফ কে ছাড়া সাতদিন থাকা অসম্ভব। আগে বুঝিনি।
যে মাত্র বাস রওনা দিয়েছে অমনি মনে হচ্ছে আমার পৃথিবীতে টিকে থাকা অসম্ভব ওয়াইফ ছাড়া।
বাই দ্যা ওয়ে আপনি ভালো ড্রাইভ জানেন তো?
মোম চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
প্রথমে কেন যেন মনটা খারাপ লাগছিল। এখন কিছুটা কমেছে।
পেছনে একদল স্টুডেন্টের হাসি শোনা যাচ্ছে। দলের কেউ নিশ্চয়ই গল্প করছে। হাসির গল্প। অন্যরা সেটা শুনে হাসছে।
মোম একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলো। মেহেরাব কিছু বইয়ের কালেকশানও দিয়েছে। বেড়ানোর পর রাতে যেন মোম পড়ে সময় কাটাতে পারে অথবা যখন একা লাগবে তখন পড়ার জন্য। কারণ বই একজন মানুষের ভালো বন্ধু। বই কখনো ধোঁকা দেয়না কাউকে।
মেহেরাবের মুখে এমন ভারি কথা শুনে মোম একটু চমকে গিয়েছিল। মেহেরাব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফানি লোকেদের মধ্যে একজন। অনেকটা মোমের বড় ভাইয়ার মতো।
মোম বই পড়াতে মগ্ন এদিকে মেহেরাব আসলাম কে ড্রাইভিংয়ের ডিরেকশন দিতে দিতে মগ্ন।
-আরে ব্রাদর একটু স্পীড দিন।
আসলাম আরও জোরে স্পীড দিলো।
-আরে ব্রাদার আপনি কি এখনো ফিডার খান?
আসলাম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
-নাতো।
-দুধের ছেলেদের মতো ড্রাইভ করছেন কেন?
হাই স্পীডে ড্রাইভ করা শিখে নিন কোন ড্রাইভিং স্কুল থেকে।
ওহ আল্লাহ বাসটা কোথায়?
কোথা হারিয়ে গেলো দশ নাম্বার বাস?
আরও স্পীড, আরও স্পীড।
আসলাম মেহেরাবের তাড়া শুনে হাই স্পীড দিলো। এতেও কাজ হলো না। মেহেরাব চিৎকার করে বলছে ব্রাদার আপনি ফিডার খান আর লুকাবেন না।
প্রায় ট্যুর স্পটে এসে পড়লাম তবুও আপনি দশ নাম্বার বাসটা খুঁজে পেলেন না?.
আসলাম বুঝে উঠতে পাচ্ছে না কি হচ্ছে।
সে কেন মেহেরাবের কথা শুনছে? তার মোমের কাছে অন্য একটা লোক যেতে চাচ্ছে আর সে কিনা লোকটাকে নিয়ে যাচ্ছে।
যেচে সে মোম কে অন্যের কাছে তুলে দিচ্ছে ।
একে বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

-স্টপ, স্টপ, স্টপ।
ব্রাদার স্টপ।
আসলাম ব্রেক কষলো।
মেহেরাব গাড়ি থেকে চটপট নেমে অন্যপাশ দিয়ে ঘুরে
ড্রাইভিং সিটে বসা আসলামের পাশের দরজা খুলে তাকে ঠেলেঠুলে ভেতরে সরিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
মেহেরাব স্টেয়ারিং ধরে আসলাম কে বলল- ব্রাদার এবার দেখবেন ড্রাইভিং কাকে বলে। কত প্রকার কি কি উদাহারন, আলোচনা, সমালোচনা সহ।
সাঁই সাঁই করে ড্রাইভ করছে মেহেরাব হাওয়া বেগে প্ল্যানের মতে উড়ে উড়ে সর্বোচ্চ স্পীডে।
মেহেরাব এতো জোরে জোরে ব্রেক কষছে যে আসলাম গড়াগড়ি খাচ্ছে গাড়ির ভেতর।
মেহেরাব হাসিমাখা মুখ নিয়ে জোরে জোরে বলল- ব্রাদার একে বলে ড্রাইভিং। সি।
ঐ তো দশ নাম্বার বাস।
কুয়াশার মধ্যে হালকা দেখা যাচ্ছে দশ নাম্বার বাসের পেছনে দশ লেখা টা।
মোম অন্য মনস্ক হয়ে বই পড়ছিলো। ইসলামিক বই।
মেহেরাবের রুচি আছে। দারুণ বই এবং ঘটনা গুলোর পর্যালোচনা ইসলামিক ভাবে গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোমের মনে হচ্ছে কেউ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
কে হতে পারে?
মেহেরাব?

মোম নিশ্চিত হয়ে জানালার বাহিরে তাকালো।
কালো গাড়ির জানালা দিয়ে মেহেরাবের হাসিমাখা মুখ দেখা গেলো।
এক হাতে ড্রাইভ করছে, আরেক হাতে হাত ইশার করছে মোম কে।
মোমও হাত দিয়ে ইশারা করলো।
মেহেরাব গাড়ি নিয়ে দশ নাম্বার বাসের সামনে ব্রেক কষে থামলো।
আসলাম হার্ট অ্যাটাক করতে করতে কোনরকম বাঁচলো মেহেরাবের ড্রাইভিং থেকে।
আসলামের পোশাকআশাক ওলট-পালট। মাথার চুলে এলোমেলো। মনে হচ্ছিল সে সিডরের মধ্যে পড়েছিল।
ঝরে সে গাছের মতো ভেঙে ভেঙে গিয়েছে।
-ব্রাদর চলি। মেনি মেনি থ্যাংকস। আপনি না থাকলে আজ ওয়াইফের কাছে আসতে পারতাম না। আল্লাহর মেহেরবানি।
জীর্নশীর্ণ আসলাম রাস্তার একপাশে গাড়ি নিয়ে দশ নাম্বার বাসে মেহেরাব মোম কে চলে যেতে লাগলো।
মেহেরাব তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলো মোমের সাথে। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে আসলাম তুমি মোম কে হারিয়েছো। মোম শুধু আমার।
মেহেরাব কে আসলাম পিষে ফেলতে চেয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে নিজেকে নিজেই পিষে ফেলতে!!!!
মোম মেহেরাবের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
-এভাবে দেখোনা। লজ্জা করছে। ফিলিং শেইম শেইম।
মোম দৃষ্টি সরিয়ে জানালার দিকে তাকালো।
মেহেরাব তার জন্য এতো বড় বড় ঝুঁকি কেন নিতে যায়।
অহেতুক ঝুঁকি!
মেহেরাব সাহস করে মোমের হাত ধরে বলল- আই এম সরি। কি করলে সরি একসেপ্ট করবে? চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে পড়ব?
মোম মেহেরাবের হাত ধরে ফেললো। মেহেরাব যা দুষ্টু খামখেয়ালি। তাতে সত্যি সে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়বে। মেহেরাব বলতে লেট করতে পারে, সেটা সাথে সাথে করতে লেট হয়না।
-আরে বাবা অভ্যাস আছে। আমার কিছু হবে না।
দাড়াও দেখাচ্ছি লাফিয়ে।
-জাস্ট সেটআপ।
চুপ করে বসে থাকুন। নড়বেন না। যদি আপনি লাফিয়ে পড়েন তো আমিও লাফিয়ে পড়ব। আর হ্যাঁ আমার কিন্তু অভ্যাস নেই। চাটনি চেনেন?
-না।
-আমাকে দেখে চেনে নেবেন।
সাঁই সাঁই করে মেহেরাব ড্রাইভিং করছিলো। মনে হচ্ছে প্ল্যান চলছে আসমানের কুয়াশায়। ভাবা যায়৷

মোম একটা বই নিয়ে মুখের কাছে ধরে রাখলো।
মেহেরাব বইটা স্পর্শ করে বলল-উল্টো ভাবে ধরেছো।
মোম খানিকটা অস্বস্তিতে পড়লো মেহেরাবের কাছে ধরা পড়ে।
-দেখি তো একটা বই পড়ি।
তোমাকে বেশকটি বই দিয়েছিলাম প্যাকেট করে।
কোনটা পড়া যায় বলো তো?
মোম একটা ইসলামিক বই ধরিয়ে দিলো মেহেরাবের হাতে।
-বইটি একদম পারফ্যাক্ট আপনার জন্য।
নব মুসলিম হিসেবে আপনার বইটি পড়া উচিৎ। তাহলে জ্ঞান বাড়বে। বুঝতে পারবেন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ।
মেহেরাব মাথা নাড়িয়ে পড়তে লাগলো।
মোম ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিলো কোন বিষয়টি মেহেরাবের আগে পড়া দরকার।

ইসলামী আকীদা কাকে বলে এবং এর গুরুত্ব কতটুকু?*
প্রশ্ন: আমরা ছোটবেলা থেকেই আলহামদুল্লিলাহ কোরআন পড়া শিখেছি এবং যদি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, সৎ পথে থাকার চেষ্টা করি। এরপরও আমাদের কি আকিদা জানা খুবই জরুরি? বা আকিদা সম্পর্কে জানার ফজিলত কি তা জানতে চাই।

উত্তর:
*আকীদা বলতে কী বুঝায়?*

আকীদা শব্দের অর্থ হল,মানুষ যা বিশ্বাস করে বা মেনে চলে। আকীদা ও ঈমান একই অর্ধবোধক। অর্থাৎ বিশ্বাসের অপরনাম আকীদা। সুতরাং আকীদার গুরুত্ব কতটুকু তা সহজেয় অনুমেয়।

*এ সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল ফাউযান রাহ. বলেন:*

“ইসলামী আকীদা হল, সেই চেতনা ও বিশ্বাসের নাম যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। নাযিল করেছেন অনেক আসমানী কিতাব। শুধু তাই নয় বরং তিনি সমগ্র মানুষ ও জিন জাতির উপর সেই বিশ্বাস পোষাণ করা অপরিহার্য করেছেন।
যেমন আল্লাহ বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
“এবং আমি জিন ও মানুষ জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন জীবিকা চাইনা এবং চাইনা যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক।” (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬-৫৭)
তিনি আরও বলেন:
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
“এবং তোমার প্রতিপালক চূড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।” (সূরা ইসরাঃ ২৩)
তিনি আরও বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
“এবং আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (তথা আল্লাহ ছাড়া যে সকল জিনিসের ইবাদত করা হয়) সেগুলো থেকে দূরে থাক।” (সূরা আন নাহল: ৩৬)
উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সমস্ত নবী-রাসূল এ আকীদার আহবান নিয়ে পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন। সমস্ত আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল এ আকীদারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য এবং এর বিপরীত সকল বাতিল বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করার জন্য।
সৃষ্টি জগতের মধ্যে যাদের উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হয় তাদের প্রত্যেককে এই আকীদা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং যে বিষয়টির এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করার। কারণ,এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে। আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا
অর্থঃ “সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৬) একথার মানে হল, যে এ আকীদা হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গোমরাহী ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারেনা।
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ
অর্থঃ তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তো প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত । (সূরা হজ্জঃ ৬৩)”
[উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]

*আকীদার গুরুত্ব কতটুকু?*

ঈমান-আকীদা শুদ্ধ না হলে নামায-রোযা সহ কোন ইবাদই আল্লাহর নিকট গ্রহনীহ হবে না। যেমন কেউ যদি শিরকী আকীদা পোষণ করে তাহলে যত ইবাদতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যদি শিরক করো তবে তোমার সকল আমল নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে।” (সূরা যুমার: ৬৫)

*সঠিক আকীদা সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জনের আবশ্যকতা*
জেনে রাখুন, (আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদরেকে তাওফীক দান করুন) ইসলামী আকীদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আকীদা বলতে কী বুঝায়, আকীদার উপর আর কী কী জনিসি নির্ভর করে, বিপরীত আকীদাগুলো কী কী, কী কারণে আকীদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যমেন বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বষিয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অরহার্য।
আল্লাহ বলেন:
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ
“অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তোমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”
ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবেঃ
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ
“অধ্যায়ঃ কথা বলা এবং আমল করার আগে জ্ঞানার্জন করা।”
এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন।
[উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইসলামী আকীদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
মেহেরাব আরও কিছু বিষয় বই থেকে পড়লো।
তার সব সময় এই সমস্ত বই পড়া দরকার।

কেউ কোন কথা বলছে না। চুপচাপ। পথিমধ্যে মেহেরাবের আনা টিফিনবাক্সের খাবার খাওয়া হলো। মেহেরাব সার্ভ করে দিয়েছিল। খাবার সময়ও কেউ কোন কথা বলেনি।
মেহেরাব অন্যদের সাথে হঠাৎ গল্পগুজব করতে লাগলো ঘাড় ঘুরিয়ে।
মোম বই পড়ায় মনোযোগ দিতে পারলো না। মেহেরাবের গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে তার।
মোম সপ্ন দেখছে সে কার সাথে যেন ঘুরছে কুয়াশার মধ্যে। মুখটা অস্পষ্ট।
তবে অনুভূতিটা চেনা। খুব কাছের। খুব আপন।
বাসের হর্ণে মোম চোখ মেলে তাকালো।
মেহেরাবের ঘাড়ে মাথা রেখে,দুই হাত মেহেরাবের গলায় ঝুলিয়ে মোম ঘুমিয়ে আছে। মেহেরাব মুচকি মুচকি হাসছে। আর চোখ দিয়ে ইশারা করছে। কি আশ্চর্যের কথা! কি ভয়ংকর ঘটনা!
মেহেরাব এক গাল হাসিমাখা মুখে বলল- সুইটহার্ট ঘুম ভালো হয়েছে?
মোমের মনে হচ্ছে দৌড়ে কোথাও পালাতে। আড়ালে লুকাতে ইচ্ছে করছে।
কি লজ্জার ঘটনা! মোমের মুখটা কাঁদো কাঁদো ভাব। এখুনি সে কেঁদে দিতে পারে।
মেহেরাব হাসি থামাতে চাচ্ছে তবুও পাচ্ছেনা।
অন্যপাশে তাকিয়ে রইলো মেহেরাব। মোম জানে মেহেরাব হাসি আড়াল করতে চাচ্ছে। মোমের অসহায় নিরীহ সিচুয়েশন দেখে মেহেরাব হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে।
হামবার্গারে বাসগুলো থামলো। দলে দলে স্টুডেন্ট গুলো নামছে বাস থেকে।
সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। এখন দুপুর। মেহেরাব মোম কে নিয়ে নামতে পারলো না।
মোম লজ্জায় চুপচাপ বসে আছে। মেহেরাব তার জন্য খাবার আনতে গেলো।
মোম জানালা বাহিরে তাকিয়ে চমকে গেলো।
আসলাম কে মনে হলো দেখলো।
-হ্যালো ম্যাম।
মোম মেহেরাবের দিকে তাকালো।
-কি ভাবছো? লাভিং হাসব্যান্ডের কথা?
এখন খেয়ে নাও প্লিজ।
চলো খাওয়া শুরু করি।
মোম চিন্তায় কিছু খেতে পাড়লো না। মনে হচ্ছে কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ তো তাদের দেখছে।
-কি হলো খাচ্ছো না কেন?
আমি খাইয়ে দিচ্ছি দাড়াও।
মেহেরাবের চাপাচাপি তে মোম কিছুটা বীফ বার্গার আর একটু কোক খেলো।
মোম কারও স্পর্শ পেলো।
মেহেরাব বলল- কি ভাবছো?
কি হয়েছে?
-নাথিং।
-আমি জানি কি ভাবছো।
মোম একটু ঢোক গিলে বলল- কি?
-ভাবছো আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমানোর ঘটনা তাইনা?
মোম কিছুটা লজ্জা পেলো।
আজকাল মেহেরাবের আচরণে মোম লজ্জা পেতে শুরু করেছে। আগে লজ্জা পেতো না।
মেহেরাব এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছে।
মেহেরাব মিটিমিটি হাসছে। মোম আরও বেশি লজ্জা পাচ্ছে।
মোম একটা বই নিয়ে মুখের উপর রাখলো। মেহেরাবের দৃষ্টির আড়াল হওয়ার চেষ্টা। তা না হলে লজ্জা পেতে পেতে আজ মরতে হবে মোম কে৷
যতবারই মোম আড়ালে মেহেরাবের দিকে তাকাচ্ছে ততবারই মেহেরাবের দৃষ্টির সাথে তার দৃষ্টিপাত হচ্ছে।
কি যে দুষ্টু মেহেরাব!!
ট্যুর স্পটে পৌঁছানোর পর মোম কে হোটেলের রিসিপশনে বসিয়ে
মেহেরাব ইউনিভার্সিটির টিচারদের সাথে রুম ঠিক করতে গেলো।
মোম এদিক ওদিক তাকিয়ে আশপাশটা দেখে নিলো।
মনোরম পরিবেশ। সমুদ্রের আলাদা একটা ঘ্রাণ রয়েছে।
সমুদ্রের ঘ্রাণ যেন ভেসে বেড়াচ্ছে চারপাশে।
আসলামের মতো কাউকে ফের দেখা গেলো।
লোকটা আইসক্রিম খাচ্ছিলো। মোম মেহেরাব কে চোখ বুলিয়ে নিলো।
রিসিপশনে দাড়িয়ে ইশারা করলো আরও পাঁচ মিনিট।
মোম আবারও লোকটার দিকে তাকালো। কোথাও নেই। এইমাত্র ছিলো লোকটা। আইসক্রিম খাচ্ছিলো।
তবে কি চোখের ভুল?

.

♥আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২৭। এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৯১] 
.
চলবে…….💔💔💔
.
.
#নূর♥
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-28
মোমের জন্য আলাদা সিঙ্গেল কামরা নেওয়া হয়েছে। মাঝামাঝি সাইজ। একদম পরিষ্কার তকতকে। গোছানো। মেহেরাব পরিষ্কার করেছে।গুছিয়ে দিয়েছে।কামরায় দুটো জানালা এবং দরজা৷
জানালা এবং দরজা গুলোতে ভারী নীল পর্দা। জানালার পর্দা গুলো গুলো হাওয়ায় উড়ছে। পুরো কামরা হিম শীতল। একটা জানালার পর্দা সরাতেই সমুদ্রের হাওয়ায়
শরীর জুড়িয়ে গেলো। কি সৌন্দর্য! সমুদ্রের আসল সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখা সবাই বলে। তবে দূর থেকেও অন্যরকম সৌন্দর্য সমুদ্রের সেটা কি সবাই জানে?
মোম অন্য জানালার পর্দা টানতেই পাহাড় দেখতে পেলো।এক পশলা সূর্যের আলো মোমের মুখে এসে পড়লো। মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো। কি মিষ্টি রোদ। যদিও এখন তুষারপাত নেই তবুও কিছুদিন আগের তুষার গুলো পাহাড়ের গায়ে দেখা যাচ্ছ৷ঠিক যেমন ভালোবাসার মানুষ দূরে চলে গেলে তার ভালোবাসার রেস থেকে যায়। হালকা বরফে সাদা সাদা হয়ে আছে পাহাড়। মনে হচ্ছে বরফ তার ভালোবাসার চাদরে পাহাড়কে জরিয়ে ধরে রেখেছে। যেভাবে মেহেরাব মোম কে তার ভালোবাসায় জরিয়ে ধরে রেখেছে।
মোমের হঠাৎ মেহেরাবের কথা মনে পড়ছে।
মোম জানালা থেকে সরে এলো।

কাছে থেকে যে ভালোবাসা অনুভব করা যায়না, দূর থেকে সেই ভালোবাসা পুরোটা না হলেও বেশ কিছুটা অনুভব করা যায়।। কিছু কিছু ভালোবাসা দূর থেকেই ভালোবাসতে হয়।
মোম বিছানায় বসে পড়লো। পাশেই টেবিলে রাখা কিছু খাবার পানি।এবং কিছু শুঁকনো গোলাপ। গোলাপ গুকো শুঁকিয়ে মনে হচ্ছে আরও বেশি সৌরভ দিচ্ছে। তাজা থাকলে হয়ত এতোটা সৌরভ ছড়াতো না৷ কামরার একপাশে চমৎকার সব রঙিন মোম। হরেক রকম মোম। হরেক রংয়ের মোম। সন্ধ্যার পর আগুনে জ্বলসে আলোকিত করবে মোমের আলোয়৷ মেঝেতে মোটা মোটা সব কার্পেট।
কামরা টা আসলেই খুব সুন্দর। এতো সুন্দর করে মোমও গুছাতে পারতো না৷
সবকিছুই মেহেরাবের কৃতিত্ব।
কামরাটা তে মেহেরাবের অস্তিত্ব জুড়ে দিয়েছে মেহেরাব। জীবন্ত জীবন্ত কামরা টা।
মোম অনুভব করতে লাগলো সে যেন কোন মায়ায় আঁটকে যাচ্ছে। মায়া সবার জন্য ভালো না। সবকিছু চলে যায় থেকে যায় মায়া। কেউ চলে গেলে সবকিছু নিয়ে যায় সাথে,শুধু রেখে যায় মায়া। মায়া টায় ভালোবাসা।
দরজার পর্দা নড়ছে।পর্দায় কারও অবয় দেখা যাচ্ছে।
কেউ কি আছে পর্দার ওপাশে?
হঠাৎ মোমের মনে আতঙ্ক অনুভব হলো। সে ছাড়াও কাম রায় আরও কেউ আছে। তাকে লক্ষ্য করছে।
মোম পর্দার কাছে যেতেই দুই পা পিছিয়ে গেলো।
মৃদু হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।
পর্দার আড়াল থেকে মেহেরাবের হাসিমাখা মুখ বের হয়ে এলো।
মেহেরাবের হাসিতে কামরা টাও যেন মৃদু হেঁসে উঠলো।
-পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ।
-আমার রুচি তাহলে ভালো।
-অবশ্যই। আপনার রুচি খুব সুন্দর।
মেহেরাব মোমের দিকে তাকালো।।
-কি দেখছেন?
-আমার রুচি।।
দেখেছো কি সুন্দর আমার রুচি ?
মোম কথা ঘোরালো।
আপনি বিশ্রাম নিন।
অনেকটা রাস্তা ছিলো। জার্নি করে এসেছেন।
-বিশ্রাম নিতেই তো এসেছি।।
-মানে?
মেহেরাব বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
-কি দেখছো?
কি ভাবছো?
মোমের চিন্তিত মুখ দেখে মেহেরাব এক গাল হেঁসে দিলো।আরে বাবা আমি দুটো কামরার ব্যবস্থা করেছি। তোমার আমার আলদা আলাদা৷ এই দেখ চাবি আমার কামরার। জাস্ট কুল সুইটহার্ট।
মোমের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো মেহেরাব।
গালে হাত দিয়ে বলল-আমার বিশ্রাম।তোমাকে দেখলে আমার সকল ক্লান্ত দূর হয়ে যায়। আমার শান্তি তুমি।
মেহেরাব হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো।
-আচ্ছা তাহলে চলি। তুমি বিশ্রাম নাও।
-আপনি এখানে বিশ্রাম নিতে পারেন। আমার কোন অসুবিধে নেই।
মেহেরাব ফিরে তাকালো।
-না। থ্যাংকস।
মেহেরাব চলে গেলো।
মোমেট মনটা হঠাৎ শূন্য হয়ে গেলো। মোম বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। মেহেরাব মোমের রুমে এসে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লো কম্বল নিয়ে।বেলকনি থেকে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকে শুধু সৌন্দর্য আর সৌন্দর্য।মোম মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তা কে অজস্র ধন্যবাদ দিলো।
মেহেরাব এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। মোমের যাওয়া দরকার কামরায়।
মোম বেলকনি থেকে ফিরে এসে দেখে মেহেরাব গভীর ঘুমে। শীতে মেহেরাবের শরীর তিরতির করে কাঁপছ৷
কম্বল টা গায়ে জরিয়ে দিয়ে মেহেরাবের মাথায় হাত বুলাতে যাবে তক্ষুনি কি মনে করে যেন মোম উঠে দাঁড়ালো।
মেহেরাবের ঘুম ভাঙলো শাওয়ারের পানি পরার আওয়াজে। মোম মাথা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয়ে এলো।
মোমের পরনে হলুদ লম্বা স্কার্ট। এই প্রথম মেবি মেহেরাব মোম কে বোরখা ছাড়া দেখলো। মোম কে দেখতে মনে হচ্ছে অন্য কোন পৃথিবীর নারী। ভুল করে এই দেশে এসেছে। কাটা কাটা নাক মুখের ছিপছিপে গড়নের মিষ্টি চেহেরা। মোম হচ্ছে সেই মেয়ে যাকে দেখলে ঘোর লেগে থাকে চোখে। শ্যামলা রংয়ের নারীদের মধ্যে এক ধরনের আলাদা আকর্ষণ আল্লাহ তায়ালা দান করেন। চোখের দেখা দেখলেই প্রবল আকর্ষণে কাছে যেতে ইচ্ছে করে। এতোটাই আকর্ষণীয় হয় এই সমস্ত নারীরা যারা প্রচন্ড আকর্ষণে নিজেদের কাছে আসতে বাধ্য করে সবাই কে।
মেহেরাবের ধারণা ছিলো মোম অলওয়েজ বোরখা পড়ে থাকে। এমনকি গোসলের সময়ও, ঘুমুনোর সময়ও। যেন বোরখা ছাড়া মোমের কোন ড্রেস নেই। অলওয়েজ বোরখা আর বোরখা।
-তুমি যে বোরখা ছাড়া আরও ড্রেস পরতে জানো সেটা জানা ছিলো না।
চোখ বন্ধ অবস্থায় আধশোয়া হয়ে মেহেরাব কথাটা বলল।
মোম ওড়না জরিয়ে বলল- এখন তো জানলেন আমি অন্য ড্রেসও পরতে জানি।
-জানলাম। আমার ধারণা ছিলো না তুমি অন্য ড্রেস পরতে জানো।
তুমি ঘুমোনোর সময়ও বোরখা পড়ো এটাই জানতাম, আই এম শিউর।
মোম হঠাৎ হেঁসে দিলো।
মেহেরাবও এক গাল হেঁসে দিলো।
-যাক, তুমি হাসতেও জানো তাহলে।
-আমি সব জানি।
মেহেরাব মোমের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। দুই হাত দিয়ে মোমের গাল স্পর্শ করে চোখে চোখ রেখে বলল- কথাটা সত্যি নয়।
মোম অস্পষ্ট স্বরে বলল-কোন কথাটা?
-ঐ যে বললে সব জানো।
তুমি আমাকে ভালোবাসতে জানোনা।
মোম নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
মেহেরাব আবারও বলল- কথাটা একদম সত্যি। একশত ভাগ খাঁটি। কোন সন্দেহ নেই।
তুমি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকো না। যা সত্যি তা সত্যি।
তুমি তো সত্যি কথা পছন্দ করো। অকপটে সত্যি বলো।
তাহলে নিচের দিকে তাকাচ্ছো কেন? তোমার তো দোষ নেই।
মেহেরাবের গলা ধরে এলো।
চোখ ভিজে উঠেছে।
না মোম কে কিছু বুঝতে দেবে না সে। তাহলে মোম কোথাও না কোথাও গিল্টি ফিল করবে। মেহেরাব কে মোম ভালোবাসে না সেটা সবচেয়ে কষ্টের। যখনই মনে হয় তখনই কষ্টটা কোটি কোটি গুন বেড়ে ফিরে আসে মেহেরাবের হৃদয়ে। সবচেয়ে কষ্ট হয় মোমের কষ্টের জন্য। মোমের নিশ্চয়ই তারচেয়ে বেশি কষ্ট পেতে হয়েছে কিংবা হচ্ছে। মেহেরাব সেই কষ্ট গুলোর দিন গুলোতে মোমের পাশে থাকতে পারেনি। তার অনুপস্থিততে মোম কে কেউ কষ্ট দিয়েছে ভাবতেই রাগে কষ্টে ক্ষোভে আক্রোশে পরিণত হয় হৃদয়।
মেহেরাবের আফসোস হয় কেন সে মোমের দেশে জন্মগ্রহণ করেনি। এতো দূরে জন্মগ্রহণ করার কোন মানে ছিল? আল্লাহ তায়ালার যদি তাদের মিলিয়ে দেওয়ার ভাগ্য নির্ণয় করেছিল তবে এতদিন পর এই দেশে কেন? মোমের দেশেই আসলামের আগে মিলিয়ে দিতে পারতো।
তাহলে তো আসলাম মোমের জীবনে আসতে পারতো না।
মোম কে কষ্ট পেতে হতো না আর মেহেরাবকেও এখন কষ্ট পেতে হতো।
দুটি হৃদয়ের মধ্যে চলছে নিরবতা। পরিবেশটা থমথমে।
ওয়াশ রুমে পানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। টপটপ করে ফ্লোরে পানি পড়ছে।
মোম চোখে মুখে পানি দিলো।
পানির আড়ালে চোখের পানি গুলো মিশে গেলো। কিন্তু মনের কষ্ট গুলো মিশতে চাচ্ছেনা কারও সাথে।
মেহেরাবের চোখের পানি গুলো কম্বলের নিচে ঢাকা পড়েছে। কিন্তু মনের কষ্ট গুলো ঢাকা পড়েনি কারও সাথে।
দুটি মন আজ কান্নায় ভরে গেলো। ভিজে গেলো জোড়া আঁখি পল্লব গুলো ।
আল্লাহ তায়ালার দুনিয়া বড় বিচিত্র। আল্লাহ তায়ালা তাদের নিয়ে কোন সমীকরণ দাঁড় করিয়েছে তা কেউ জানেনা।
জুতো হাতে নিয়ে মোম হাঁটছে। সমুদ্রের বালু গুলো পায়ে সেঁটে যাচ্ছে। নরম বালুভেলায় হাঁটছে খুব ভালো লাগছে।
পা গুলো নরম বালুবেলায় পা রাখার কারণে বালুভেলায় তার ছাপ পড়ছে। আর সেখানে গর্তের মতো সৃষ্টি হয়ে পানি জমছে সাথে সাথে। পানি গুলোও কিছুক্ষণের মধ্যে পরিষ্কার স্বচ্ছ হয়ে উঠে। নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সেই পানিতে। কখনো কখনো সামুদ্রিক মাছও এখানে পাওয়া যায়।
বালু ভেলার সমুদ্রের উল্টো দিকের বনে এক প্রকার আধিবাসীরা বাস করে। তার বালু ভেলায় পায়ের ছাপের পদ্ধতিতে মাছ ধরার কৌশল অবলম্বন করেন।
জুতো হাতে নিয়ে মোম দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রে। একটু পর পর ঢেউ এসে তার গায়ে ঝাঁপটা দিয়ে যায়।
পা গুলো সমুদ্রের ফেনায় ডুবে যায়। ফেনা গুলো আছড়ে পড়ে পায়ে। গরম ফেনা। বেশ একটা আরামদায়ক অনুভূতি হয় গরম ফেনায়।
মেহেরাব সমুদ্রের তীরে কিছু শিশুদের সাথে ফুটবল খেলছে। অবশ্য মেহেরাবকেও শিশু বলা চলে। সে বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু স্বভাব এখনো শিশু শিশু।
একটা ফুটফুটে মেয়েকে মোমের দিকে আসতে শুরু করলো।
মোম হাঁটু গেঁড়ে মেয়ে শিশুটির সামনে বসলো।
গালদুটো টেনে টেনে দিলো।
শিশুটিও মোমের গাল টেনে দিলো।
-কিছু বলবে?
-নো?
শিশুটি চমৎকার কয়েকটি ঝিনুকের মালা মোমের হাতে দিয়ে মেহেরাব কে দেখিয়ে দিলো।
মেহেরাব হাতের আঙুল ঠোঁটে ছুঁয়ে মোম কে ইশারা করলো।
একটু পর আবার আরেকজন শিশু এসে মোম কে ঝিনুকের মালা দিয়ে গেলো।
সমুদ্রে থাকা পুরোটা সময় জুড়ে মোমকে এমন ঝিনুকের মালা দিয়ে যেতে থাকলো একেকজন শিশু।
মোম মেহেরাবের সাথে বীচে বসে আছে। মেহেরাব মোম কে কোন কারণে একটু এড়িয়ে চলছে।
সাধারণত মোম কে সে বিরক্ত করতে চাচ্ছে না। মোম এখানে একাই এসেছিল। ভুলক্রমে মেহেরাবও চলে এসেছে। মোম কে আলাদা ভাবে কোম্পানি দিয়ে মেহেরাব মোমের ট্যুরের মজা নষ্ট করতে চায়না৷ মোম থাকবে মোমের মতো। মোমের আশেপাশে মেহেরাব থাকতে পারলেই হলো।
মেহেরাব মোমের কপাল ছুঁয়ে দিলো। মোম একটু কেঁপে উঠলো।
-কপালে বালু লেগে আছে। সেটাই ক্লিয়ার করতে চাচ্ছিলাম।
-আপনার তো সারা গায়ে বালু লেগে আছে।
-বালু গায়ে মাখতে ভালো লাগে তাই মেখেছি।
তাছাড়া গায়ে বালু মাখা একধরনের ঔষধ।
-যাইহোক,আপনি এখুনি পরিষ্কার হয়ে আসুন। দেখতে কেমন যেন লাগছে।
আমার বমি বমি লাগছে।
-আমার গায়ে সামান্য বালু লেগে আছে যেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে কিন্তু তোমার মনে যে অন্যকেউ রয়েছে সেটা কি করে পরিষ্কার করা হবে?
মোম হঠাৎ একটু হকচকিয়ে গেলো।
-আমার গায়ে বালু তোমার সহ্য হচ্ছে না, বমি বমি লাগছে কিন্তু তোমার সাথে ঐ লোকটা লেগে রয়েছে সেটা কিভাবে আমি সহ্য করব,?
মোমের কিছু বলার ছিলোনা। কি বলবে মেহেরাব কে সে জানেনা।
আসলাম তাদের সামনের বেঞ্চে বসে সি-ফুড খাচ্ছে।
চারপাশে তার অগণিত গার্ডস।
মেহেরাব চোখ বন্ধ করে বেঞ্চে শুয়ে আছে। মোম তার পাশেই বসে রয়েছে।
আসলাম বার বার কেন ওদের মধ্যে আসে? নিজের জীবন কে সে তো গুছিয়ে নিয়েছে। মোম কে সে তো প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করেছে টোপ হিসেবে। প্রয়োজন শেষ হতেই ফেলে চলে গিয়েছে। এখন কি চায় আসলামের? আর কিভাবে কষ্ট দেবে মোম কে? এখন তো মোম একা কষ্ট পাবেনা। তার সাথে মেহেরাবও কষ্ট পাবে।
খাবারের ট্রে হাতে কয়েকটা লোক নিয়ে আসলাম এসে দাঁড়ালো।
-দুপুরের খাবার নিয়ে এলাম তোমাদের জন্য ।
মেহেরাব বলল- আপনি কি আমাদের চাকর? আচ্ছা আপনার বেতন কত দিই?
সুইটহার্ট এর বেতন দিয়েছিলাম গতমাসে?
-হা! হা!
কি খাবে তোমরা?
মেহেরাব বলল-আপনি ওয়েটার?
-আপনি বেশ রসিক৷হা! হা!হা!।
-বিকেল হয়ে আসছে। জায়গাটা বিপদজনক।
কতক্ষণ থাকবে তোমরা?
-আপনি কি আমাদের গার্ড? আপনাকে কবে নিয়োগ দিয়েছিলাম মনে পড়ছে না।
আপনি কি জানেন কবে?
-আপনি খুব রসিক তো।
রসবোধ আছে আপনার৷ আই লাইক ইট।
-ঠিক আছে আমি রসিক। আপনার ভালো লেগেছে। আমি ধন্য। এবার আপনি বিধেয় হন। আউট।
-হা!হা!হা! আমার সাথে রসিকতা করছো। ঠিক করো সমস্যা নেই।
-আমি আপনার দুলাভাই যে আপনার সাথে রসিকতা করব?
অবশ্য আপনাদের প্রাচ্যের মেয়েকে যেহেতু বিয়ে করেছি সেহেতু প্রাচ্য জাতির ইয়াও ছেলে মেয়েরা আমরা শালি শ্যালক। হিসেব মতো আমি আপনার দুলাভাই হই। ব্রাদার ইন লো।
আসলামের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো।।
আসলাম বলল-কিছু কথা আছে আপনার সাথে। জরুরি।
-আমারও কিছু কথা আছে আমার ওয়াইফের সাথে। জরুরি। আপনি আসতে পারেন।
আসলাম এক ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে। মেহেরাব এতোক্ষণ রিসকতা করলেও এখন সিরিয়াস ভাবে আসলামের দিকে তাকিয়ে আছে।
মোমের গলা মনে হয় শুকিয়ে চৌচির। এখুনি এ-ই দুজন কেয়ামত ঘটিয়ে ফেলবে।
আসলাম বলল- আমার কথা না শুনে যেতে পারবে ভেবেছো?
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখ। তোমাকে বালুচাপা দিয়ে মেরে আমার লোকেরা বালুতে চাপা দিয়ে দেবে। পিঁপড়াও টের পাবেনা৷
মেহেরাব কর্কশ গলায় বলল- পারলে আমাকে মেরে ওকে নিয়ে যা। তোর কি লজ্জা করেনা?
অন্যের ওয়াইফের দিকে তাকাতে? নজর দিতে?
-কথা সাবধানে বলবে।
তোমার সামনে কে দাড়িয়ে আছে জানো? সেদিনের ছেলে হয়ে আমার সাথে লড়তে যেওনা৷
ভালো করে ফার্স্ট এবং লাস্ট বার বলছি আমার রাস্তা থেকে সরে পরবে।মোম আমার প্রিয়তমা। আমার স্ত্রী। একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে আমাদের দুজনের মধ্যে। মাঝখানে তুমি কে? আমার অবর্তমানে তুমি আমাদের মধ্যে ঢুকেছে জোর করে৷
তোমাকে মাফ করে দিলাম।
নিজের রাস্তা মেপে নাও।।
মেহেরাবের কানে মনে হচ্ছে কেউ গরম লোহা গলিয়ে ঢেলে দিচ্ছে। মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করলো। সমুদ্রের মতো নীল চোখ দুটো দিয়ে আগুন জ্বলছে যেন।
শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠেছে। বাহিরের একটা লোক বলে সে কে?
মোম মেহেরাবের লোহার মতো মুষ্টিবদ্ধ হাতে হাত রাখলো। মেহেরাবের আঙুল গুলোর ফাঁকে নিজের আঙুল গুলো ঢুকিয়ে নিলো।
মোম অস্ফুটে স্বরে বলল- দয়া করে চলুন আমরা চলে যাই। লোকটা পাগল। পাগলরা পাগলের প্রলাপ বলে।
একজন সুস্থ মানুষ কখনো এধরনের কথা বলে না। আপনি কি বলবেন? অন্যের স্ত্রীর দিকে নজর দেবেন?
-এসব হারাম কাজ-কারবার। পাপ লাগবে।জাহান্নামে জ্বলতে হবে। কি যে বলো।
-তাহলে তো হলোই,চলুন যাওয়া যাক। নিজের রাগ শান্ত করুন।
-শান্ত হতে পাচ্ছিনা।
-চেষ্টা করুন। অবশ্যই পারবেন৷ আল্লাহর সাহায্য নিন।
রাগ থেকে মুক্ত থাকার আমলঃ
শয়তানের শত্রুতা হতে নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁরই নিকট আশ্রয় চাইতে বলেছেন। কারণ শয়তান মানুষের বিনাশ ও ধ্বংসের মধ্যে আনন্দ পায়। শয়তানের যাবতীয় কুমন্ত্রণায় মানুষ সর্বপ্রকার অন্যায়ে লিপ্ত হয়। প্রচণ্ড রাগ বা ক্রোধ তার একটি। প্রচণ্ড রাগ বা ক্রোধের সময় করণীয় সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম আমল রয়েছে।

আমলটি হচ্ছে-

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম।

অর্থ : ‘আমি অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’ (বুখারি, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

মুসনাদে আবি ইয়ালার মধ্যে উল্লেখ হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দুটি লোকের ঝগড়া বেধে যায়। রাগে একজনের নাসারন্দ্র ফুলে ওঠে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যদি লোকটি এই কালিমা পড়ে তবে তার রাগ এখনই ঠাণ্ডা এবং স্তিমিত হয়ে যাবে।(তাফসিরে ইবনে কাসির)

মেহেরাব মোমের হাত দুটো ধরে আসলামের কাছ থেকে চলে এলো। মেহেরাবের আপাতত রাগ কিছুটা কমেছে।
পাগলের প্রলাপ,পাগলের প্রলাপ বলতে বলতে মেহেরাব মোম কে নিয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্টে চলে এলো।
মোম বসে আছে। মেহেরাব পায়চারি করছে পকেটে দুই হাত রেখে।
-আমি কে? হু আই এম?
আমি নাকি মাঝখানে ঢুকে পড়েছি। আল্লাহ তায়ালা জানে মাঝখানে কে ঢুকেছে। কে কার রাস্তার মাঝখানে।
আমাকে বলে তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে? আমাকে বলে?আমাকে বলে?
-আপনি শান্ত হোন।
লোকটা পাগল। এই বলে স্বান্তনা দিন নিজেকে।
-কিভাবে শান্ত হব বলো? লোকটা শুধু পাগল হলে চিন্তা করতাম না। সে তো চতুর পাগল, ক্ষমতাবান পাগল।
আমাকে ওপেন থ্রেট করলো তাও আবার আমার ওয়াইফ কে নিয়ে। আমার সামনে আমার ঘরের বউয়ের উপর নজর দিয়েছে।
কিং ফায়ারের বউ তুমি। তুমি কোন টেনশন করবে না। ওকে আমি কি যে করব।
-কি করবেন?
আপনি আগের মতো নন। মনে রাখবেন। পাপপুণ্য বিচার করে কাজ করতে হবে।
মেহেরাব হাঁটু গেঁড়ে বসে মোমের গালে হাত দিয়ে বলল- মনে রাখি। আমি একজন মুসলিম। আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস সাবধানে সহিসালামতে নিতে হবে।
যা করব হালাল ভাবেই করব৷
“মহান আল্লাহ তায়ালা, আজ ভালো হয়ে গেলাম বলে,দুনিয়ার মানুষের রং পাল্টাতে শুরু করেছে।
মেহেরাব রেস্টুরেন্টে মোমের অপজিটে বসে আছে। পাশাপাশি বসলে মোম কে ভালো করে দেখা যায়না।
মোম টেবিলের উপর ঝিনুকের মালা গুনছে।
নয়শো আটানব্বই, নয়শো নিরানব্বই, একহাজার।
-পুরো একহাজার ঝিনুকের মালা।
-জানি। তোমার উপহার।
তেমন ভাবে তোমাকে কোন উপহার আগপর্যন্ত দিইনি।
তোমার পছন্দ আমি জানিনা, তবে বুঝেছি তুমি অন্যদের মতো সচারাচর উপহার পছন্দ করবে না। তোমার জন্য আলাদা হালকা কিছু করতে হবে। যেটা আমি ছাড়া কেউ কখনো এর আগে তার ভালোবাসা কে দেয়নি। তাই আমি তোমাকে একহাজার ঝিনুকের মালা দিলাম।
মোম ঝিনুকের মালাগুলো তে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কাঁদছে। চোখ ভিজে উঠেছে তার।
কিছু অতি নগন্য সস্তার ঝিনুকের মালা যে এতো দামী এক্সপেন্সিভ গিফট হতে পারে তা জানা ছিলো না।
মেহেরাব মোমের চোখের পানি আঙুলের ডগায় নিয়ে বলল-তুমি কাঁদছো? গিফট পছন্দ হয়েছে।
-খুব হয়েছে। এই ঝিনুকের মালা গুলোর প্রতিটা ঝিনুক এক একটা কোহিনূর হিরের থেকেও দামী আমার কাছে। এক একটা ঝিনুক এক একটা ভালোবাসা।
বিশাল আকৃতির সামুদ্রিক মাছ জায়গা নিয়েছে টেবিলের প্রায় অর্ধেক টা। ভাজা মাছ টা তেল চপচপে করছে। দেখতে অসাধারণ।
বিশাল আকৃতির ভাজা গলদা চিংড়িও রয়েছে।
-খেতে কেমন?
– অসাধারণ। অতি সুস্বাদু।
আমি প্রাচ্যের মেয়ে। আমরা মাছ পছন্দ করি। মাছ প্রধান খাদ্য। বিশেষ করে আমি বাঙালি। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি।
-বিশেষ উৎসবে কি তোমারা রাইস ফিস খাও? এটা কি ঐতিহ্য।
– না। ভাত মাছ আমাদের রোজকার খাবার। একবেলা ভাত না খেলে মর মর ভাব হয়। মনে হয় না জানি কতদিন ধরে অনাহারে আছি।
প্রতিদিন খাবারে ভাত এবং মাছ অবশ্যই থাকবে।সপ্তাহে পাঁচদিন মাছ এবং দুদিন গোশত প্রতিটি উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত বাঙালির খাবার। এগুলো হলো অমৃতের সমান৷
-বুঝতে পারলাম তোমরা এজন্যই এতো পিছিয়ে। দেশের উন্নি করতে পারও নি।
-মানে?
-ভাত, মাছ, গোশত এসবে প্রচুর ফ্যাট।তোমরা প্রতিদিন তিনবেলা এসব ফ্যাট জাতীয় খাবার খাও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। জন্মলগ্ন থেকে মৃত্য লগ্ন পর্যন্ত এসব ফ্যাটি খাবার খাও। খাওয়াদাওয়ার পর বিশ্রাম নিতে হয়।
মোম তেল চপচপে মাছের টুকরো মুখে দিয়ে বলল-
-অবশ্যই। তা আর বলতে।
ভালো মন্দ পেট ভরে খাওয়ার পর লম্বা একটা ঘুম দিলে মনে হয় জীবনটা যেন একটা বেহেশত।
মোম এতোক্ষণ চামিচ দিয়ে খাচ্ছিল। এখন হাত দিয়ে খেতে লাগল। মাছের তেলে হাত চপচপে হয়ে আছে। মুখটাও তেল মেখে একাকার৷ মেহেরাব টিস্যু দিয়ে মোমের গাল ঠোঁটের পাশে মুছে দিয়ে বলল-
-বড়ই আজব বাঙালি। ইশশ,
চিন্তা ভাবনা অতি নগন্য। দুইবেলা খেয়ে ঘুমোতে পারলেই তোমাদের আর কিছু চাইনা। তোমাদের অতি পছন্দের বিনোদন হলো সমালোচনা, চোগলখোরি। তিনবেলা পেট ভরে ভাত, মাছ, গোশত খেয়ে অন্যের সমালোচনা করতে পারলে আর কিছু চাওনা তোমরা।
খালি খাও, ঘুমাও,এবং। সমালোচনা।
এসব করতে করতে সময় চলে যায়। তাহলে ক্রিয়েটিভ কাজ গুলো কখন করবে?
আর একটা বড় সমস্যা জানো কি?
মোমের মুখ ভর্তি খাবার।
কোনরকম মাথা নাড়ালো।
-তোমরা মিথ্যে মিথ্যে সম্মানের অহংকার করো। বরাই করো। সবকিছুতেই বড় ছোট ভেদাভেদ করো। তোমাদের চিন্তা ভাবনা অতি পুরাতন। নতুন ভাবে কিছু বুঝতেও চাওনা৷ বুঝতে চাওনা সকল কাজ এক সমান। বড় ছোট কিছু নেই।
আমাদের দেখ, আমরা হতে পারি জঘন্য মন মানসিকতার তবুও সকল কাজ কে সম্মান করি। এবং ছোট বড় সকল কাজ করে থাকি।
আসলে মূল কারণ হলো খাওয়াদাওয়া।ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম করতে যাও। অকারণে বিশ্রাম নেওয়া হলো অলসতা। মস্তিষ্ক হয় শয়তানের কারখানা।এসব ফ্যাট খাওয়ার পর বিশ্রামের দরকার হয় তখন এধরনের চিন্তা আসে অলস মস্তিষ্কে।
একারণেই তোমরা পিছিয়ে।
তোমাদের এতো সুন্দর আত্মত্যাগের দেশের নাম পর্যন্ত অনেক দেশ জানেনা। ইনফ্যাক্ট আমিও জানতাম না।
তোমাকে চেনার পরই জানলাম।
মোমের মুখ ভর্তি খাবার গলায় আঁটকে পড়েছে। ফেলতেও পাচ্ছেনা, গিলতেও পাচ্ছে না। এতো বড় অপমান।
আচ্ছা মেহেরাবদের দেশ সভ্য নামের অতি অসভ্য দেশ সেটা কি মেহেরাব জানেনা? এই দেশে তো সকল অপকর্মে আইন তৈরি হয়েছে। বিয়ে বলে কিছুই নেই, সবকিছু হয় কন্ট্রাকে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। ধর্মের বালাই বলতে নেই।
মোমরা দেশে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে ভালো আছে অন্তত ঘরে ঘরে অপকর্ম চলেনা। এসবের আইনও নেই। মোম কি এখন মেহেরাব কে এসব কথা বলে? তাহলে মেহেরাবেরও রাইট নেই মোমের দেশ সম্পর্কে এসব বলার।
-পানি খাও। ছিঃ ছিঃ করোনা। আমি জানি আমরা সভ্য নামের অসভ্য দেশ।
তবুও যা সত্যি তাই বললাম। মেহেরাব দুষ্টু হাসি হেঁসে বলল-সত্য খুব তেঁতো। সেটা জানি।
-তাহলে আমিও কিছু সত্য বলি?
যদি বলি আমদের প্রাচ্য দেশ পিছিয়ে আছে আপনাদের কারণে।
-মানে?
-আপনারা হ্যাঁ আপনারা ইংরেজরা আমাদের উপমহাদেশ কে শুষে নিয়ে নিজেদের দেশের উন্নতি করেছেন।
মেহেরাব একটু কেশে উঠলো। সে জানেনা প্রাচ্যের লোকরা আর কিছু পারুক না পারুক পুরোনো প্রতিশোধ নিতে জানে। দেশপ্রেম রক্তে রক্তে।
-আপনারা স্বর্নের মহাদেশকে রুপা বানিয়ে দিয়ে ছিলেন। এরপর ভারত-উপমহাদেশ খণ্ডিত হয়ে নতুন নতুন দেশের সৃষ্টি হয় রুপা থেকে পিতল- তামাতে ।
তারপর পাকিস্তানিরা সেই পিতল তামাকেও শুষে নিয়ে নিলো। আমরা যুদ্ধবিগ্রহ করে দেশটা কে লোহা হিসেবে স্বাধীন করেছি।
মেহেরাব একগ্লাস পানি খেয়ে বলল- দেশটা এখন কি পজিশনে রয়েছে?
-দস্তা।
তবে এই দস্তাও বেশিদিন থাকবে না।
-কেন?
-দেশের সাহায্যের নামে আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলো লুটেপুটে খাওয়া শুরু করেছে।
-আহারে! বড়ই দুঃখ। দস্তার দেশটা এখন তো ধুলোবালির মাটির দেশ হয়ে যাবে।
-মজা নিচ্ছেন?
-আই এম সিরিয়াস।
তোমাদের মাটির দেশগুলোই ভালো। আমাদের এখানকার অনেকেই তোমাদের দেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া সবুজবীথি দেখে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছে আজীবন সেখানেই থেকে গিয়েছে।
নেটে দেখেছি তোমাদের দেশ। দেশের ইতিহাস। বাঙালি জাতি বড়ই অত্যাচারীত, নিপিড়ীত, অধিকার বঞ্চিত।
অনেক ইচ্ছে তোমাদের দেশে যাওয়ার। তোমরা দেশপ্রেমিক মানুষ। আত্মপ্রত্যয়ী। আমার ভালোবাসা, আমার প্রান যেখানে জন্মগ্রহণ করেছে সেই দেশের মাটিতে পা রাখার খুব ইচ্ছে।
-শুনুন আমাদের দেশ অবশ্যই দেশপ্রেমের দেশ। সোনার বাংলার প্রতিটি মাটির রক্ত দিয়ে কেনা। এগুলোর সাথে অবশ্যই মুসলিম শব্দটা এড করবেন৷দেশটি মুসলিম দেশ। ধর্মপ্রাণ দেশ বাংলাদেশ। আমরা অলস হলেও এখনো জীবন দিতে প্রস্তুত ধর্মের জন্য। অন্তত আসল ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আপনাদের থেকে। ধর্মকর্মে আমার ঝোঁক রয়েছে প্রবল আপনাদের থেকে । তাছাড়া আপনাদের দেশের মতো স্বার্থপর নই। বিপদেআপদে সাহায্য করি অন্যদেশ গুলো কে বিনা স্বার্থে। সুযোগে সৎ ব্যবহার করিনা কখনো কোন অসহায় দেশের সাথে।
-হার মানলাম। এবার খাও আল্লাহর দোহায়।
-আমি একাই খেয়ে যাচ্ছি।
আপনি তো তেমন কিছু খাচ্ছেন না। মাছ খাচ্ছেন না কেন?
-খাচ্ছি।
-শুধু চিংড়ি খাচ্ছেন। বাই দ্যা ওয়ে চিংড়ি কোন মাছ নয়।
-জানি। আসলে মাছ খেতে ভয় করে।
-মানে?
-কাঁটার জন্য ভয় করে।
এজন্য কখনো মাছ খাওয়া হয়না। মাছের টেস্ট কেমন আই হ্যাভ নো আইডিয়া।
হাসতে হাসতে মোম কুটিকুটি।
আপনার ভয় করে মাছ খেতে? কাঁটার জন্য? এতো বড় ডিঙি ছেলে আপনি হা! হা!হা!।
মেহেরাব যেন অতি লজ্জাকর একটি কাজ করেছে যেজন্য মোম এখনো হেঁসে হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। মেহেরাবের এই পরিস্থিতি অতি লজ্জাকর পরিস্থিতি ফিলিং হচ্ছে।
-আচ্ছা আমি খাব আর আপনি মাছ খাবেন না, তা কি হয়? মাছ না খেলেন অন্তত মাছের ঝোল তো খাবেন। নিন হ্যাঁ করুন। আমি মাছ খাব আর আপনি ঝোল হা!হা!হা!।
মোম মাঝের তেলের ঝোলে আঙুল চুবিয়ে মেহেরাবের মুখে দিলো।
মেহেরাব নিরুপায় হয়ে মাছের তেলের ঝোল খেলো।
আশা করে ছিল মোম মাছের কাঁটা বেছে খাইয়ে মাছের স্বাদের টেস্ট করাবে।
মেহেরাব মোমের আঙুল শুষে নিয়ে বলল-একবার মাছ খেতে গিয়ে কাঁটা বিঁধিয়ে ছিলাম গলায়। সেজন্য মাছের প্রতি ভয় ঢুকে গিয়েছে।তুমি একবার ভালোবেসে মনে কষ্ট পেয়েছিলে। সেজন্য তোমার মনেও ভালেবাসার প্রতি ভয় ঢুকে গিয়েছে।
আমি মাছ খাইনা কাঁটার জন্য।তুমি আমাকে ভালেবাসতে পারোনা ভয়ের জন্য। সিম্পল।
মেহেরাব চোখের পানি লুকিয়ে কথা তৎক্ষনাৎ ঘুরিয়ে বলল- মাছের তেল সুস্বাদু নাকি তোমার আঙুল সুস্বাদু? মোমও তৎক্ষনাৎ চোখের পানি লুকিয়ে ফেলে বলল- আল্লাহ তায়ালা আঙুল মশলা-লবন দিয়ে তৈরী করেনি যে আমার আঙুল সুস্বাদু হবে।
.
মেহেরাম মোম কে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসার পথে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিল।
মেহেরাব মোমের পিছনে পিছনে থেকে যায়। মোম অনেকটা এগিয়ে যায় সামনে মেহেরাবের থেকে।
হঠাৎ মোমের সামনে আসলাম এসে দাঁড়ালো।। সানগ্লাস খুলে বলল- আসসালামু আলাইকুম প্রিয়তমা।
মোম না দেখা শোনার ভান করে হাঁটতে লাগলো।
আসলাম হাত দিয়ে পথ আটকালে।
-আপনি অন্যের স্ত্রীর পথ আগলে দাঁড়াতে পারেন না। আপনি একজন মুসলিম। আমাদের ধর্মে বেগানা নারী-পুরুষের কথাও বলার অনুমতি নেই।
-জাস্ট সেটআপ। তুমি আমার এবং আমি তোমার জন্য বেগানা নই। আমরা একে-অপররের জন্য জন্ম নিয়েছি।। আমাদের মধ্যে একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। সেখানে তৃতীয় একজন রগচটা ঘাড় বাঁকা লোক কে কেন তুমি এলাউ করেছো? সে জোর করে আমাদের ভালোবাসার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
তাকে আমি বুঝিয়েছি। এবার তুমি বুঝিয়ে বলো।
-তারপর?
-আমার কাছে ফিরে আসবে। তোমার আসল স্বামী, তোমার আসল ভালোবাসার কাছে।
-আপনি একটা পাগল। পাগলের প্রলাপ শুনতে ভালো লাগেনা।
-শুনতে হবে তোমাকে। আমি মানছি ভুল করেছি। সেজন্য অনুতাপে জ্বলছি। আল্লাহ তায়ালা মানুষের ভুল কে ক্ষমা করে দেয়। আর সেখানে তুমি কেন ক্ষমা করছো না?
-আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন কিন্তু আমি ক্ষমা করতে পারব না। কারণ ক্ষমা চাওয়ার অর্থ নির্দোষ স্বামীকে ছেড়ে বেগানা পরপুরুষের হাত ধরা। এটা মহাপাপ। এই কুকর্ম করে পাপী হতে চাইনা আমি।
-মোম আমাকে রাগিও না। প্লিজ। আমার সম্পর্কে একটু হলেও জানো। আমি বেগানা আর ঐ লোকটা তোমার স্বামী। কথাটা সপ্নেও ভাবতে পারিনা।
-এটাই সত্যি।
-সত্যিটা পাল্টাতে আমার বেশি সময় লাগবে না। বাধ্য করোনা আমাকে কঠোর হতে। আমার ভালোবাসা এতো সস্তা নয়। তুমি শুধু আমার। দরকার হলে আবার আমি তোমার জন্য বেগানা থেকে স্বামী হব খুব তাড়াতাড়ি। সেজন্য তোমার ঐ মেহেরাব কে….।
-মানে?
-মানেটা সহজ। মেহেরাব কে মরতে হবে।
জীবনে বহু পাপ হয়েছে আমার দ্বারা। লাস্ট একটা পাপ করে তোমাকে পেয়ে তওবা করে নতুন জীবন শুরু করব।
-উনাকে মেরে তওবা করবেন মানে কি? উনি নির্দোষ। বিরোধ আমার সাথে। আল্লাহ তায়ালা জেনেশুনে আপনার পাপের তওবা কবুল করে নেবে?
-উনি দয়ালু। রাহমানির রাহিম। অবশ্যই ক্ষমা করবেন। উনার নাম এমনি এমনি দয়ালু হয়নি।
-উনি নির্দোষ। আমাকে খুব ভালোবাসেন।
-এটাই ওর অপরাধ। তোমাকে শুধু আমি ভালোবাসি।
-কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না৷
-সেটা তোমার বিষয়। আমি তোমাকে ভালোবাসলেই হলো। এটাই বিষয়।
তুমি আমার কথায় রাজি হলে নির্দোষ লেকটা কে আঘাত করতে হবে না।
আমার একটা ইশারায় তোমার নামে মাত্র সাদা চামড়ার স্বামীর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷ তুমি যদি চাও মেহেরাব বেঁচে থাকুক তো ওকে তালাক দাও। আমি তোমাকে আবার বিয়ে করব। আল্লাহর কসম তোমার প্রতিটা কষ্ট আমি ভালোবাসায় পরিণত করব। কোনটা পছন্দ করবে? সিদ্ধান্ত তোমার।

.
.
.
♥আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২৮। পুরুষ ও নারী উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৯৫]
.
চলবে…..💔💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here