#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৫
আইরাতের আগে থেকেই জার্নালিস্ট/রিপোর্টার প্রফেশন টার ওপর বেশ ঝোক ছিলো। সে তো ভেবেই নিয়েছিলো যে রিপোর্টার হবে। আর হয়েও গিয়েছিলো। এস এ রিপোর্টার আইরাতের রেকর্ড বেশ ভালো ছিলো তবে একজন ভিপি কে নিয়ে হুট করেই না বুঝে নিউজ করার ফলে আজ চাকরি টাকে তার হারাতে হলো। এগুলোই ভাবছে আর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াচ্ছে আইরাত। রাগ হচ্ছে এখন, প্রচুর রাগ। এতোই রাগ যে মন চাইছে নিজের সামনে যা পরছে তাই যেনো ভেঙে একেবারে চুরমার করে দিক কিন্তু তা আর পারছে না। একসময় আইরাতের রাগ গুলো তার চোখের অশ্রু তে পরিণত হয়। রাগ আর সামলিয়ে রাখতে না পেরে কেদেই দিয়েছে। তবুও চোখের জলবিন্দু গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পরার আগেই তা হাতের উল্টো পাশ দিয়ে দ্রুত মুছে ফেলে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। বেশ সময় পর বাসায় ফিরে আসে। আর আইরাত কে দেখেই অনামিকার কেমন সন্দেহ হয়। অনামিকা কপাল কুচকে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আইরাত যখন আলতো করে তার চোখ তুলে তাকায় তখন অনামিকা আরো সিওর হয় যে কিছু না কিছু তো একটা হয়েছেই। আইরাত হলরুমে সোফাতে ধপ করে বসে পরে। ব্যাগ টা সাইডে রেখে দুইহাত দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরে।
অনামিকা;; কিরে কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না মা (একদম আস্তে)
অনামিকা;; আরে কি হয়েছে বল না। কারো সাথে ঝগড়া করেছিস বা কেউ কি কিছু বলেছে?
আইরাত;; আমার চাকরি টা চলে গিয়েছে।
অনামিকা;; কি? কিন্তু কীভাবে?
আইরাত;; একজন কে নিয়ে একটু ভূল নিউজ বানিয়েছিলাম তাই। কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমি ইচ্ছে করে কিছুই করি নি। আমি কিছুটা প্রুভ পেয়েছিলাম তার এগ্যানস্টে কিন্তু কে জানতো যে সেইগুলোও ভূল।
অনামিকা;; তুই যখন ভার্সিটি শেষ না করেই এই রিপোর্টারের কাজে জয়েন করলি আমি তোকে তখনই বলেছিলাম যে আগে নিজের স্টাডি টা একদম কমপ্লিট করে নে তারপর এর থেকেও ভালো ভালো জবের অফার আসবে কিন্তু তুই শুনলি না আমার কথা।
আইরাত;; মা, কথা সেটা না। ভার্সিটি থেকে যে কানেকশন একেবারেই অফ রেখেছি আমি তা কিন্তু না। শুধু ভার্সিটিতে যাই না তেমন অর্থাৎ বেশি একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলে যাই না কিন্তু আমি পড়াশোনা ছাড়ি নি। আর তুমি তো জানোই আমার কতো ইচ্ছে ছিলো এই প্রফেশনে কিন্তু গেলো সব।
অনামিকা;; এই মেয়ে মন খারাপ করিস কেনো! তোর বাবা তোর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছে তাতে তোর মতো আইরাত আরো পাঁচ টা পালা যাবে।
আইরাত;; মা ব্যাপার টা টাকা-পয়সার না। আমার খারাপ লাগছে চাকরি চলে গেলো, আর টাকার জন্য যে আমি ওই চাকরি টা করতাম তাও না।
অনামিকা;; শোন আমি বলি কি যে যা হয়েছে হয়েছেই। এইসব বাদ দিয়ে এখন থেকে তুই রেগুলার ভার্সিটি যাওয়া শুরু কর। পুরো দমে নিজের পড়াশোনায় মন দে। ইনশাআল্লাহ রেজাল্ট ভালো কর আর তারপর তোর যা ইচ্ছে অর্থাৎ যে জব করতে মন চায় তাই কর। কোন মানা নেই, কোন বাধা নেই। তব হ্যাঁ যে কাজ গুলোতে ঝুঁকি বেশি মানে এই ধর মিডিয়া-প্রেস বা রাজনীতি এগুলো না ওকে!
আইরাত;; আমি জানতাম যে তুমি এখন এই কথা গুলোই বলবে।
অনামিকা;; তো বলবো না। আচ্ছা শোন!
আইরাত;; হুম
অনামিকা;; আচ্ছা অবনিও না তোর সাথেই একই ভার্সিটিতে পড়ে?
আইরাত;; হ্যাঁ আমরা সেইম ভার্সিটি আর সেইম প্রফেশনেও ছিলাম।
অনামিকা;; এটা পার্টটাইম জব?
আইরাত;; হ্যাঁ, বলা যায়। তবে বজ্জাতের হাড্ডি আরেকজন আছে তো।
অনামিকা;; কে?
আইরাত;; দিয়া আর কে।
অনামিকা;; বাহহহ, তিন বজ্জাত এক জায়গায় দারুন হলো।
আইরাত;; আরে ধুর ছাই আগে খেতে দাও দেখি রাগের চোটে ক্ষুদা লেগে গেছে আমার।
অনামিকা চলে যায় টেবিলে খাবার বাড়তে। আর আইরাত হাত-মুখ ধুয়ে আসতে যায়।
।
।
অয়ন;; ভাই কাজ হয়ে গিয়েছে।
আব্রাহাম;; গুড।
অয়ন;; আচ্ছা এখন আমাকে আগে একটা কথা ক্লিয়ার কর তো!
আব্রাহাম;; হুয়াট?
অয়ন;; মেয়েটা কে? মানে চাকরি টা খেয়ে দিলি কেনো?
আব্রাহাম;; নিজেও জানি না শুধু এই টুকু জানি যে মেয়েটাকে আমার চাই।
অয়ন;; মানে?
আব্রাহাম;; ওই মেয়েটাকে আমার চাই খুব করে চাই। এই কয়েকদিনে এই টুকু তো বুঝে গেছি যে ”যেভাবেই হোক আমার ওই মেয়েটাকে লাগবে আজীবনের জন্য। এট এনি কোস্ট”।
অয়ন;; হুমম বুঝলাম।
আব্রাহাম;; রাখি
আব্রাহাম ফোন টা কেটে দিয়ে নিজের ল্যাপটপের দিকে তাকায়। চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা টা খুলে দুইহাত ভাজ করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে একমনে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। আর সেখানে আর কারো না আইরাতেরই ছবির স্ক্যাচ।
।
।
পরেরদিন সকালে আইরাত খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পর। সাধারণত আইরাত এতো সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে না তবে আজ উঠে পরেছে। কীভাবে সে নিজেও জানে না। অন্যান্য দিন আইরাতকে সকালে ঘুম থেকে তোলার জন্য অনামিকার এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয় তাও যেনো ঘুম ভাঙে না। ঘুম থেকে ওঠেই অফিসে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি লাগিয়ে দেয়। কিন্তু এখন যখন আর চাকরি নেই, অফিসে যেতে হবে না তখন আইরাত আপনা আপনিই ঘুম থেকে ওঠে পরেছে কোন ডাক দিতে হয়নি তাকে। আইরাত বিছানাতে বসে এটাই ভেবে তারপর ক্ষীণ এক দম ফেলে ওঠে পরে। পেছনের চুল গুলোকে ছোট্ট একটা কাটা দিয়ে বেধে ফেলে। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল বাজে ৬ টার কাছাকাছি। আইরাত ভাবলো বাইরে বের হয়ে রাস্তা টা একটু হেঁটে আসুক। ভোরের আবহাওয়া টায় কেমন এক মনোমুগ্ধকর ভাব থাকে, যেনো প্রকৃতির এক আলাদা ছোয়া লেগে থাকে। এই সাজ-সকাল বেলা হাঁটতে গেলে ব্যাপার টা মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা সফট ব্রাউন কালারের জামা পরে চুলগুলো ছেড়ে দিয়েই সোজা বের হয়ে পরে। তবে যাওয়ার আগে একবার অবনি কে ফোন করে যে সেও হাঁটতে বের হবে কিনা। আইরাত আর অবনির বাসা বলতে গেলে মাত্র ৫-১০ মিনিটের দূরূত্বে। আইরাত অবনিকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু ধরে না অবশেষে ধরে অবনির ছোট ভাই রাফি। আর সে কিছুটা তোতলা।
রাফি;; হ্যালো
আইরাত;; কিরে পিচ্চি তোর বোন কই?
রাফি;; আপু তো ঘুমায়।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
রাফি;; তুমি কি কিতু বলবে?
আইরাত;; বাইরে হাঁটতে বের হচ্ছিলাম তো ভাবলাম তোর বোন কেও নিয়ে যাই তা উনি তো ঘুম থেকেই উঠেন নি।
রাফি;; ওহ আত্তা এই কতা, তমস্যা নেই আমি আতি তো। আমি যাবো।
আইরাত;; আচ্ছা তাহলে বাসার সামনে থাকিস।
রাফি;; আত্তা।
আইরাত ফোন কেটে দেয়। যাওয়ার আগে অনামিকার রুমে একবার উঁকি দিয়ে যায়। নাহ সে এখনো ঘুম। আইরাত চলে যায়, মা’র ঘুম ভাঙার আগেই আবার বাসায় চলে আসতে হবে। অবশ্য কিছুই বলবে না তবুও সে তো ঘুম না বলেই বাইরে যাচ্ছে পরে বাসায় না পেলে খোঁজাখোঁজি শুরু করবে।
আইরাত বাইরে বের হতেই এক দমকা হাওয়া এসে গায়ে লাগে। আর আইরাত চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করে, আহহহ শান্তি। পরিবেশেও কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ লেগে আছে। আইরাত আস্তে আস্তে হাটা শুরু করে দেয়। সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ, দুইপাশে বড়ো বড়ো গাছ। মাটির ওপরে ঘাস গুলোতে বেশ শিশির বিন্দু লেগে আছে। পাখির কিচিরমিচির স্পষ্ট কানে আসছে। ভোরে যে ফুলগুলো ফোটে তা থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে চারিদিকে। হাতে গোনা কিছু মানুষ রাস্তায় আছে এখন। কেউ রাস্তা ঝাড় দিচ্ছে, আবার মসজিদ থেকে কিছু মানুষ বের হলো হয়তো নামাজ শেষ করে। সত্যিই বেশ ভালো লাগছে। ঠিক কতো দিন পর যে এতো ভোরে রাস্তায় বের হয়েছে আইরাত তা তার মনেই নেই। হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ৬ টা বেজে ৭ মিনিট। আরো কিছুটা দূর হেঁটেই আইরাত দেখে যে ছোট চায়ের দোকানের সামনে পিচ্চি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোকান দারের সাথে বকর বকর করছে। আইরাতের আর বুঝতে সময় লাগে না যে ওই অবনির ভাই রাফি। চায়ের দোকান টার এক পাশেই বড়ো একটা গেইট রয়েছে আর তাই অবনিদের বাসা। সেখান থেকেই এসে হইতো এই চায়ের দোকানে বসেছে রাফি। এটা তার প্রতিদিনকার কাজ। আইরাত গিয়ে রাফি কে পেছন থেকে “ভুউউউ” করে চমকে দেয়। এতে রাফি এতোই জোরে চমকে গিয়েছে যে আইরাতের সাথে সাথে যে বয়স্ক এক দোকান দার ছিলো তিনিও হেসে দিয়েছেন।
আইরাত;; কিরে ভয় পাইছোস?
রাফি;; এভাবে তেউ তমকায়?
আইরাত;; আহারে তোতলু টা।
রাফি;; আমি, আমিহ তোতলু না। (দুইবার দম ছেড়ে)
আইরাত;; হইছে বুঝছি। এখন চল হাঁটি।
রাফি;; আত্তা।
আইরাত;; হাত দে ধরি নইলে হারিয়ে যাবি।
আইরাতের কথা মতো রাফিও তার হাত টা আইরাতের হাতে দিয়ে দেয়। তারপর হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত রাফির সাথে অনেক ফ্রি। নিজেরই ভাই মনে করে। আর রাফি অনেক কিউট। আইরাত আর রাফি হাঁটছিলো তার মাঝেই রাফির কত্তো প্রশ্ন। আইরাপু এইটা কি, ওইটা কি, আইরাপু এটা দিয়ে কি করে, ওটা দিয়ে কি করে? আরো কতো কি। সামনেই ছোট্ট একটা নদীর মতো ছিলো, হাতে কয়েকটা পাথর কুড়িয়ে নেয় আইরাত আর রাফি দুজনেই। দুজনেই নদীতে ঢিল দিচ্ছে। আসলে দেখছে যে তাদের মাঝে কার পাথর ঠিক কতো দূর যায়। এভাবেই প্রায় বিশ মিনিটের মতো হাঁটাহাঁটি করে তারা বাসায় আসার জন্য রওনা দেয়। আইরাত প্রথমে রাফি কে তার বাসায় দিয়ে তারপর নিজের বাসায় আসবে। আইরাত রাফির হাত ধরে ধরে হাঁটছিলো তখনই হঠাৎ রাফি বলে ওঠে…..
রাফি;; আইরাপু!
আইরাত;; হুমমম
রাফি;; জানো তুমি না এত্তো এত্তো ভালো গো।
আইরাত;; বাব্বাহ, তাই!
রাফি;; হ্যাঁএএএএ।
আইরাত;; কেনো বলতো?
রাফি;; এইযে আমাতে কত্তো আদল কলো। ঘুলতে নিয়ে যাও, খেলো।
আইরাত;; হুমম হলো তোর পাম-পট্টি দেওয়া।
রাফি;; আলে না না পাম তাম দিত্তি না সত্যি বলতি। জানো আমার না একতা ইচ্ছে আছে অনেক বেশি।
আইরাত;; তা কি ইচ্ছে শুনি!
রাফি;; আমি যদি আলো (আরো) একতু বলো (বড়ো) থাকতাম নইলে তুমি যদি আলো একতু ছোত থাকতে তাহলে কতোই না ভালো হতো বলো।
আইরাত;; এখানে ভালোর কি আছে?
রাফি;; অনেক কিতু, তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে কলতে পালতাম। বিয়ে কলে তোমাকে আমার সাথে কলে এক্কেবারেই নিয়ে তলে যেতাম।
রাফির কথা শুনে আইরাতের মুখ হা হয়ে যায় আর সাথে বেশ হাসিও পায়। রাফির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের কোমড়ে দুই হাত রেখে আইরাত বলে ওঠে…….
আইরাত;; হায়রে কি পাকনা পোলারে। এই তোর দুধের দাঁত পরেছে হ্যাঁ। আর আমি,, আমি তোর ঠিক কতো বড়ো হবো তার ধারণা আছে তোর। এহহহ নাক টিপলে দুধ পরবে আর সে কিনা আমাকে বিয়ে করতে আসছে দিবো না একটা কান মলা। আগে বড়ো হ ভাই তুই। তোতলামি টা অন্তত আগে বাদ দে।
রাফি;; তালপল কি তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে কলবে?
আইরাত;; ওরেএএএএএ শয়তান দাঁড়া তুই, আজকে তোর খবর আছে। তোর মায়ের কাছে বিচার দিবো আজকে দাঁড়া।
এই বলেই আইরাত রাফির পেছনে ধাওয়া করতে লাগে আর রাফির খিলখিল করে হেসে ছুটতে লাগে। তবে ছুটতে ছুটতেই হঠাৎ রাফির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। তা দেখে রাফিও থেমে পরে। আর আইরাত গিয়ে আবার রাফির হাত ধরে ফেলে। আইরাত কপাল কুচকে সামনে তাকায় একটা কালো রঙের গাড়ি। গাড়ির উইন্ড গ্লাস খুলে একজন বলে ওঠে…..
রাশেদ;; আপনি আইরাত ম্যাম রাইট?
আইরাত;; আব… হ্যাঁ আমিই আইরাত। আপনি কে?
রাশেদ;; আমাকে হয়তো আপনি চিনবেন না তবে আমি চিনি। চলুন আপনাকে আপনার বাসার সামনে নামিয়ে দেই।
আইরাত;; না না আপনাকে চিনি না জানি না হুট করেই কেনো গাড়িতে উঠবো। আমরা যেতে পারবো প্লিজ আপনি যান।
রাশেদ;; আসলে আমি আব্রাহাম চৌধুরী স্যারের গার্ড। আর উনিই আমাকে আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলেছেন।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছ আচ্ছা বুঝলাম এবার। তাহলে তো আরো দরকার নেই। আপনি প্লিজ যান আর আপনার আব্রাহাম স্যার কেও বলে দিয়েন যে আমার কোন ধরনের কোন হেল্প লাগবে না। নিজের টা নিজে বেশ করতে পারি আমি। সো প্লিজ যান।
এই কথা বলেই আইরাত রাফির হাত ধরে সোজা সেখান থেকে চলে আসে। আর রাশেদ আব্রাহামের বলাতেই অফিসে এতো সকালে কিছু কাজের জন্য গিয়েছিলো। রাশেদ তো আইরাত কে কিছুটা হলেও চিনে। রাশেদ কাজ শেষ করেই আসছিলো আর আব্রাহামের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো। আইরাত কে দূর থেকে দেখেই রাশেদ দ্রুত আব্রাহাম কে বলে আর আব্রাহাম বলে সে আইরাত কে যেনো ড্রপ করে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসে আর ভিডিও কল অন-ই রাখতে। রাশেদ তাই করে। সে গাড়ি থামিয়ে আইরাতের সাথে কথা বলছিলো আর সবই আব্রাহাম দেখছিলো। ড্রাইভিং সীটের সামনে ফোনে ভিডিও কল অন করে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাতে আব্রাহাম আইরাত কে দেখছে তবে আইরাত গাড়ির ভেতরে নজর না দেওয়াতে আব্রাহামকে দেখতে পারে নি। আর আইরাত কি কি বলেছে তা সবকিছুই আব্রাহাম শুনেছে। সব শুনে যেনো আব্রাহাম বেশ রেগে গেলো। আইরাত এক প্রকার তাকে এটিটিউড দেখালো যা আব্রাহামের বেশ লেগেছে। আইরাত চলে গেলে রাশেদ ফোন টা হাতে নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
রাশেদ;; স্যার…
আব্রাহাম;; এবার আইরাত দেখবে যে ত্যাড়ামি কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি!
এই বলেই আব্রাহাম কল কেটে দেয়। আইরাত রাফিকে নিয়ে তার বাসার সামনে এলে রাফি চলে যায়। আর আইরাতও তার বাসায় চলে আসে। এখন তো আর অফিস নেই আর ভার্সিটি কিছুদিন পর হয়তো যাবে তাই এখন কিছুদিন রেস্ট। আইরাত বাসায় এসে দেখে তার মা রান্নাঘরে কাজ করছে।
আইরাত;; উঠে পরেছো?
অনামিকা;; হ্যাঁ, বাইরে গিয়েছিলি তুই?
আইরাত;; হ্যাঁ ভাবলাম একটু রাস্তা হেটে আসি। তাই আর কি।
অনামিকা;; ভার্সিটি আবার কবে থেকে যাবি ভাবলি কিছু?
আইরাত;; অবনি আর দিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। দিয়া তো রোজ ভার্সিটি যায়, ওর কাছ থেকে যতো নোট”স আছে তা কালেক্ট করতে হবে আর অবনি যাবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে হবে।
অনামিকা;; আচ্ছা।
এভাবেই সময় যায়। দুপুরের দিকে অনামিকা ছাদে আচার শুকোতে দিয়েছিলো। আইরাত এখন ছাদের রেলিং এ বসে হাতে আস্তো একটা আচারের বোয়াম নিয়ে মনের সুখে খাচ্ছে। দিয়া কে ফোন করেছিলো দিয়া বললো সে তো এখন আর তার বাসায় যেতে পারবে না তাই বিকেলের দিকে যেনো ভার্সিটির ক্যাম্পাসে এসে পরে। ভার্সিটি সারাদিনই ওপেন থাকে। আইরাতও হ্যাঁ বলে দেয়। হঠাৎ আচার খাওয়ার মাঝে তৌফিকের ফোন আসে। আইরাত কপাল কুচকে ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে কানে রেখে দেয়।
আইরাত;; হ্যালো।
তৌফিক;; হ্যালো ট্যালো বাদ দে খবর জানিস কিছু?
আইরাত;; খবর থেকে আপাতত বিরতি নিয়েছি আমি।
তৌফিক;; আমি সিরিয়াস।
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা বল কি হয়েছে?
তৌফিক;; মিস.আইরাত আফা আপনার চাকরি কোন ভুয়া রিপোর্ট করার জন্য যায়নি বরং আপনার চাকরি খেয়েছে স্বয়ং আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী বুঝলেন।
আইরাত;; কিহ? মাথা খারাপ হয়েছে তোর মানে উনি আমার চাকরি কেনো খাবেন। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে আর আমি যে কাজটা ভূল করেই করে ফেলেছি তাও তিনি জানেন তাহলে আমার চাকরি উনি কেনো কেড়ে নিবেন?
তৌফিক;; মেনেজার কথা বলছিলো আর আমি সবকিছু স্পষ্ট শুনেছি। বিশ্বাস না হলে তুই নিজেই আব্রাহাম স্যার কে জিজ্ঞেস করে নিস।
আইরাত;; আচ্ছা আমি দেখছি।
এই বলেও ফোন কেটে দেয় আইরাত। তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কপাল কুচকে হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে। আনমনেই কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে মুখের মধ্যে থাকা আচার টুকু গিলে ফেলে। আব্রাহাম তার চাকরি কেনো খেলো। আইরাত দ্রুত তার অফিসের একজন সিনিয়র আপু কে ফোন করে। অর্থাৎ আইরাত যে অফিসে কাজ করতো আর কি, ওই মেয়েটার সাথে আইরাতের বেশ ভালোই সম্পর্ক। আব্রাহামের সাথে দেখা করতে হলে অবশ্যই আইরাত কে এপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। তাই আইরাত ট্রাই করছে যে সে ওই মেয়েটাকে বলে আব্রাহামের সাথে আইরাতের এপোয়েন্টমেন্ট টা ফিক্সড করে দেয়। যেই ভাবা সেই কাজ।
আইরাত;; হ্যালো নিপা আপু!
নিপা;; হ্যাঁ আইরাত কেমন আছো?
আইরাত;; হ্যাঁ ভালো। তুমি?
নিপা;; ভালোই। কিছু দরকার?
আইরাত;; অনেক বেশিই দরকার।
নিপা;; হ্যাঁ তাই বলি, দরকার না পরলে তো আবার আমাকে মনেই করো না।
আইরাত;; ধুর আজাইরা কথা বলো না তো। তোমার সাথে সারাদিন বসে থাকলেও তুমি বলবে যে দরকার ছাড়া মনে করি না।
নিপা;; আচ্ছা যাই হোক কি হেল্প লাগবে তাই বলো।
আইরাত;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আছে না।
নিপা;; হুমম
আইরাত;; তার সাথে আমার এপোয়েন্টমেন্ট ফিক্স করে দিতে হবে তোমার।
নিপা;; ওকে, আজ নাকি কাল?
আইরাত;; আজ মানে যত দ্রুত সম্ভব।
নিপা;; আচ্ছা। তো এইদিকে সব ঠিক ঠাক করে আমি তোমাকে জানাচ্ছি কেমন?
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত ফোনটা রেখে দেয়। আস্তে আস্তে বিকেল ঘনিয়ে এলে আইরাত ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে যায়। সেখানেই দিয়া আর অবনি আছে। দিয়া আর অবনি বকর বকর করলেও আইরাত যেনো নিজ চিন্তায় মগ্ন। তা খেয়াল করে দিয়া বলে….
দিয়া;; কিরে এতোদিন পর ক্যাম্পাসে আসলি তাও এমন করে থুম মেরে বসে আছিস কেনো? চাকরি চলে গেছে দেখে মন খারাপ?
আইরাত;; আরে না রে।
অবনি;; তো?
আইরাত;; কিছু না এমনি। বাই দি ওয়ে আমি আগামীকাল থেকেই ভার্সিটি আসবো। বাসায় বসে বসে আর ভালো লাগে না। সময় যেনো যেতেই চায় না।
দিয়া;; হ্যাঁ আয় আয় দ্রুত আয়, আমারও একা একা ভালো লাগে না তুই আসলে তাও মজা হবে।
আইরাত;; হুমম।
তাদের আড্ডা দেওয়ার মাঝেই হঠাৎ নিপার ফোন আসে আইরাতের কাছে।
আইরাত;; হ্যালো।
নিপা;; হ্যাঁ আইরাত তোমার এপোয়েন্টমেন্ট ফিক্স।
আইরাত;; তাহলে কি আব্রাহাম চৌধুরীর অফিসে এখনই যাবো?
নিপা;; হ্যাঁ যেতে পারো।
আইরাত;; আচ্ছা।
নিপা;; আচ্ছা হুট করেই উনার সাথে দেখা কেনো বলতো?
আইরাত;; বেশি না শুধু কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো উনাকে ব্যাস।
নিপা;; ওকে তো যাও তুমি।
আইরাত;; থ্যাংক ইউ সো সো সো মাচ আপু।
নিপা;; ওয়েলকাম বোনু।
এই বলেই আইরাত ফোন রেখে দেয়।
আইরাত;; তোরা থাক, আমি এখন উঠি রে।
দিয়া;; মাত্র আধা ঘন্টা হলো এসেছিস আরো একটু বোস।
আইরাত;; না রে কিছু কাজ আছে আমার যেতে হবে।
অবনি;; তাহলে কাল থেকে তুই ভার্সিটি রেগুলার আসছিস?
আইরাত;; হ্যাঁ
অবনি;; তবে আমার তো জব আছেই আমি তো চাইলেও রেগুলার আসতে পারবো না। তোরা কত্তো আড্ডা দিবি আর আমি একা।
দিয়া;; আরে আমাদের কাছ থেকে সব পড়া জেনে নিস আর আসবি রেগুলার না আসলেও মাঝে মাঝে আসবি সমস্যা কি।
আইরাত;; আর অফিস তো সকালে এখন বাসায় গিয়ে তোর আর কাজ কি। এখানে বসে দিয়ার সাথে আড্ডা দে পরে যাস।
অবনি;; হ্যাঁ আচ্ছা।
আইরাত তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। একটা ট্রক্সিতে উঠে পরে। অফিসে যেতেও প্রায় অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। একটা সময় টেক্সি থেকে নেমে পরে। নিজের সামনে তাকিয়েই দেখে ইয়া বড়ো বড়ো অক্ষরে আব্রাহামের নাম লিখা। আইরাত তা দেখে কিছুটা ভেংচি কাটে। ভেতরে চলে যায়। ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসে পরে। এখানে আইরাতের সাথে সাথে আরো তিনজন বসে আছে। তারাও হয়তো আব্রাহামের সাথেই দেখা করার জন্য ওয়েট করছে। তবে তার কিছুক্ষন পর হঠাৎ লোকগুলো উঠে চলে যায়, আইরাত বসে থাকে। কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর একজন গার্ড এসে আইরাত কে বলে যে আব্রাহাম স্যার অফিসে এই মূহুর্তে নেই। আইরাত কিছুটা রেগে চলে আসে। এপোয়েন্টমেন্ট আছে জেনেও অফিসে নেই। অযথা এই মানুষ গুলোকে বসিয়ে রাখার কোন মানে হয়। পরে জানতে পারে যে আব্রাহাম কাজে ব্যাস্ত অনেক। আইরাতের আর কি করার মনমরা হয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। অফিসের বাইরে আসতেই হঠাৎ আইরাতের চোখে পরে একটা ডার্ক ব্লেক কালারের গাড়ি। আরো একটু খেয়াল করে দেখলে আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই আব্রাহামের গাড়ি। আইরাতের বেশ রাগ হলো। মাথায় যেনো ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। সাইড ব্যাগ টা আরো একটু ঠিক করে কাধে ঝুলিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। দুইহাত ভাজ করে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আনমনেই কতোক্ষণ কিছু একটা ভেবে নেয়। মাথায় যেনো বাত্তি জ্বলার মতো শয়তানি বুদ্ধি এসে হাজির হয়ে গেলো। আইরাত তার ব্যাগের সাইড চেইন টা খুলে কিছু একটা খোঁজতে লাগে। আর তা পেয়েও যায়। একটা গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক। আইরাত সম্পূর্ণ লিপস্টিক টা বের করে নেয়। তারপর তা ডান হাতে নিয়ে গাড়ির উইন্ড-এর দিকে বেশ কিছুটা ঝুকে পরে। ইচ্ছে মতো উইন্ড তে লাল লিপস্টিক দিয়ে ঘষা দিতে লাগে। আব্রাহামের গাড়ির উইন্ড টা যেনো লিপস্টিক দিয়ে একেবারে লেপ্টে দেয় আইরাত। লিপস্টিক টাও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তবে আইরাত যখন লিপস্টিক দিয়ে উইন্ড তে লাস্ট একটা মার্ক করতে যাবে তখনই ভেতর থেকে উইন্ড টা আস্তে করে নিচে নেমে আসে। আইরাত এতোক্ষন এক শয়তানি হাসি হেসে এগুলো আকাম করছিলো তবে উইন্ড টাকে নিচে নামতে দেখে তার মুখের হাসি ধুপ করে উধাও। গাড়ির ভেতরে চোখ পরতে আইরাতের কলিজা টা কেমন ধক করে ওঠে। আব্রাহাম এক হাত দিয়ে তার কানে ফোন ধরে রেখেছে আর আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আইরাত মেকি একটা হাসি দিয়ে শুকনো কিছু ঢোক গিলে। লিপস্টিক টা আবার সুন্দর করে নিজের ব্যাগে রেখে দেয়। এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে কিছুই করে নি, ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। আব্রাহাম এবার রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে আইরাতের দিকে, যা দেখে আইরাতের যায় যায় অবস্থা। আইরাত দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরতে ধরলে আব্রাহাম এক নিমিষেই গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের হাত ধরে হেচকা এক টান দেয়। এতে আইরাত ভরকে যায়।
।
।
।
।
চলবে~~