#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 6)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
শুপ্তির ঘরে গিয়ে দেখি শুপ্তি অবনিকে কোলে নিয়ে আছে। আমি যেতেই একটু হেসে উঠে বললো,আর কয়েকটা দিন থেকে গেলে হতো না।
না, আর থাকা যাবে না। এখান থেকে গিয়ে বাড়িতে কয়েকটা দিন থাকবো। তারপর ঢাকায় চলে যাবো।
এরপর অবনিকে কোলে নিয়ে আমার একটা স্বর্ণের ব্রেসলেট পরিয়ে দিলাম। এটা আমাকে আম্মু অনেক আগে বানিয়ে দিয়েছিলো। আর আমার খুব পছন্দের ও ছিলো এটা। এটা আমি আমার তরফ থেকে অবনিকে দিয়ে দিলাম।আর মন থেকে চাকরির লাম,এই নিষ্পাপ শিশুটা যেনো তার বাবা-মা কারোর মতো না হয়।
এই পদ্ম এটা কি করছো, স্বর্নের ব্রেসলেট ওকে পরিয়ে দিলে যে।
এটা ওর জন্য ছোট্ট একটা উপহার। আমি তো কোনো জব করি না তাই বেশি কিছু দিতে পারলাম না। তাই আমার পছন্দের একটা জিনিস দিয়ে গেলাম।
শুপ্তি চোখেঁ পানি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,জানো পদ্ম আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি, আমি জানি তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে, তোমার তুলনা হয় না। আমি যখন অভ্রের সাথে সম্পর্ক করেছি তখন একটা জিনস লক্ষ্য করেছি, ওর চরিত্রে সমস্যা থাকলেও ওর মন মানসিকতা অনেক ভালো ছিলো। ও সবসময় মানুষের পাশে দাড়াতো। কেউ অসুস্থ হলে বা কারো বিপদে ও সবসময় এগিয়ে যেতো, তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি। এজন্য যে, আমিও অনেক রিলেশন করেছি, আমিও ঠকেছিলাম, আমিও বিবাহিতো ছিলাম এটা লুকিয়েছি, আমি ওকে শা*স্তি ও দিয়েছি আবার ওকে ভালো পথে আনার চেষ্টা করেছি। তবে আমি এখন অনেকটাই সফল জানো, অবনি হওয়ার পর থেকে আমার প্রতি ওর কেয়ার বেড়ে গেছে, আগের থেকে অনেকটা যত্ন করে আমার।
বাহ্ , ভালো হলেই তো ভালো। আমিও চাই তোমরা ভালো থাকো। মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলো।
মেয়েটা যেনো তোমার মতো হয় পদ্ম। সত্যি তোমার মতো ভদ্র আর ভালো মনের মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি, সবসময় শান্ত থেকে কথা বলো।
আমি একটু হেসেঁ অবনিকে দিয়ে চলে আসলাম ওখান থেকে। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে মামার সাথে বাড়িতে আসলাম।
,,
বাড়িতে আসতেই দেখি সোফায় একটা সুন্দর সুদর্শন ছেলে বসে আছে। উজ্জ্বল ফর্সা, চাপ দাড়ি, হেসেঁ হেসেঁ আব্বুর সাথে কথা বলছে।নিচের দাঁতের একপার্শে আরেকটা বাড়তি দাঁত যেটা দেখতে আরো ভালো লাগছে। কিন্তু ছেলেটাকে অনেকটা চেনা চেনা লাগলো, মনে হলো আগেও কোথায় দেখেছি।
আমি রুমে টুকতেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,
-এই কি আমার পদ্ম,যাকে সামনাসামনি দেখেছি পাঁচ বছর আগে, তখন কতো পিচ্চি ছিলো মেয়েটা, সেই সময় আমার হার্টবিট কাঁপিয়ে ছিলো, আর এখন যেনো আমাকে বাঁ*চ*তেই দেবে না। ফর্সা মুখ ঘেমে গিয়ে মুক্তের মতো লাগতেছে।
কি ব্যাপার কি ছেলেটা এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো।মনে মনে বলে আমি আমার ঘরের দিকে আসতে যাবো তখনি আব্বু বললো, কি রে পদ্ম মা, তোর নিলয় ভাইয়ার সাথে কথা না বলেই চলে যাচ্ছিস যে
কিইইইহহহহ,, এটা নিলয় ভাইয়া। ইশশশ রে এতোক্ষন থেকে এতো চেষ্টা করে এটাই মনে করতে পাচ্ছিলাম না।
এর মধ্যে নিলয় ভাইয়া বলে উঠলো, কথা বলবে কি মামা, তোমার মেয়ে বোধহয় আমাকে ভূলেই গেছে। ছোটোবেলায় তো আমি আসলে আমার থেকে চকলেট না পেলে কা*ন্না করে ভাষাতো। আর এখন দেখেও যেনো দেখছে না।
আব্বু জোড়ে হেসেঁ উঠে,মামার সাথে কথা বলতে লাগলো।
-আমি ওনার কথা শুনে ভিষন লজ্জা পেলাম, কি এই মানুষটা, ছোটোবেলায় কি না কি করেছি সেসব কি এখনৌ মনে আছে নাকি।
আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম আপনি কি আগের মতো আছেন নাকি, এখন কতো বড় হয়ে গেছেন। মোটা হয়েছেন, আপনাকে দেখে চিনবো কেমনে।
-ওওওও তার মানে তুই আমাকে সত্যি চিনতে পারিস নি
-না
-এটা কোনো কথা, আমি বাড়িতে এসেই সবকিছু ফেলে তোকে দেখার জন্য এখানে আসলাম আর তুই আমাকে চিনতেই পারলি না
-না মানে, অনেক আগে দেখেছিলাম তো তাই
-পরে কেনো দেখিস নি
-আপনি কি বাড়িতে ছিলেন নাকি। দেখবো কিভাবে
-ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, চাইলেই দেখতে পারতি। যাই হোক বাদ দে, তোর চকলেট তোর ঘরে রাখা আছে, একদম বিদেশি চকলেট।
-কিইইহহ, তুমি থাকো আমি যাই
-একবার আপনি একবার তুমি, আগের মতোই রয়ে গেলি পাগলি।
-আমি আর কারো কোনো কথা না শুনে দৌড়ে আমার রুমে চলে আসলাম। চকলেট আমার বরাবরি ভীষণ পছন্দের(আমারো)। চকলেট কাছে থাকলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেতেই থাকি।
নিলয় ভাইয়াকে আমি বড় ভাইয়ের মতোই ভাবি। আর উনিও সবসময় আমাকে আগলে রাখতো। উনি বাড়িতে থাকতে প্রায় আমাদের এখানে আসতো। আমাকে কখনোই বকতো না উনি। আম্মু কিছু বললে যেভাবেই হোক আম্মুকে বুঝিয়ে বলতো,ও ছোট মানুষ কিছু বোঝে না।
,,
সন্ধ্যার সময় নিলয় ভাইয়া রুমে এসে বললো ঘুরতে যাবি পদ্ম। আমি কেনো জানি না করলাম না, এখানে এসে একদিনো কোথাও ঘুরতে যাই নি। ঢাকায় থাকতে ফুপির সাথে মাঝে মধ্যে শুধু শপিং এ গিয়ে একটু কাছাকাছি কোথাও গেছি এছাড়া আর ঘুরি নি। এরপর ঢাকায় গেলে হয়তো এখানে আর ঘোরা হবে না।তাই বললাম হুমম চলেন যাই,
-পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে হাটছি, এখান থেকে একটু সামনে গিয়ে রিকশা নিয়ে ত্রিশ মিনিট গেলে চিকলি ওয়াটার পার্ক(রংপুর)। অনেক সুন্দর একটা জায়গা। অনেক আগে একবার এসেছিলাম দিনে। রাতে কখনোই আসা হয় নি।
-রিকশায় পাশাপাশি বসে আছি,পদ্মকে আজ যেনো একটু বেশি সুন্দর লাগছে,একবার হারিয়েছি আর হারাতে চাই না। আজকেই গিয়ে মা কে সবটা জানাবো। যতো তারাতারি সম্ভব আমি আমার পদ্ম ফুলকে আমার অর্ধাঙ্গিনি হিসেবে চাই।
-ঠিক ত্রিশ মিনিট পর রিকশা এসে থামলো। পার্কে এসে মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো।রাতের বেলা চিকলি পার্ককে যেনো আরো আকর্ষণীয় লাগছে,চারদিকে লোকজন এ ভর্তি, একদিকে ফুসকার দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম,বেশি ঝাল দিয়ে একপ্লেট আর ঝাল ছাড়া একপ্লেট ফুসকা নিলাম। কারন নিলয় ভাইয়া ঝাল একদমি খেতে পারে না। আর আমি ঝাল ছাড়া ফুসকা খেয়ে ফুসকার স্বাদ পাই না।
ফুসকা খেয়ে উনি আমাকে বাচ্চাদের খেলনার দোকানে নিয়ে গেলেন, গিয়ে অনেক ধরনের খেলনা নিলেন।
-এসব কার জন্য নিলয় ভাইয়া
-তুর্যের জন্য
-আমার ছোট ভাইয়ের নাম তুর্য। আমার কাছে বেশি আসে না ও। আসলে অমি যখন ফুপির বাড়িতে যাই তখন ও অনেক ছোট ছিলো। এরপর বাড়িতে আসলেও এক, দুই রাতের বেশি থাকি নি। তাই বেশি কোলে আসে না।
-এরপর আরো কিছুক্ষণ ঘুরে বাড়িতে চলে আসলাম।
-খেলনাগুলো আমার হাতে দিয়ে নিলয় ভাইয়া কোথায় যেনো চলে গেলো। আমি নিয়ে তুর্যকে দিতেই ও দৌড়ে আমার গালে একটা চুমু খেলো। আমি অবাক হয়ে কান্না করে দিছি, যে তুর্য আমার কোলে আসতো না ও নিজে থেকে আমাকে চুমু খেলো। আর কোলে এসে বসলো।
আমি খেলনাগুলো দিয়ে ওর সাথে খেলতে লাগলাম।
-রাতের খাবার খেয়ে বেলকোনিতে একা একা দাড়িয়ে আছি, পেছন থেকে নিলয় ভাইয়া বললো আসবো।
-হ্যাঁ ভাইয়া আসুন, কিছু বলবেন
-আসলে তোকে কিছু বলার ছিলো পদ্ম
-হ্যাঁ ভাইয়া বলুন
এরপর নিলয় ভাইয়া যা যা বললো তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ছিহ এমনটা কল্পনাও করি নি আমি। সব ছেলেরা এক রকম,,
চলবে,,
আজকের পর্বটা অনেক অগোছালো হয়ে গেলো, জ্বর আসছে, সারাদিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারি নি।কি না কি লিখলাম ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❌কপি করা নিষেধ ❌