পরিশিষ্ট পর্ব ১৮+১৯

#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১৮

রোদেলা এলোমেলো চুলে, ঘুম ঘুম চোখে অহির পেছন পেছন নিচে নামলো।ড্রয়িং রুমের সোফায় চোখ পড়তে চমকে উঠলো সে!সাদিদ এত রাতে কেন এসেছে?রোদেলা সামনে গিয়ে দাঁড়াতে সাদিদ এক নজর তার দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিল।সে উসখুস করছে।এখান থেকে ছুটে পালালে যেন বাঁচে।

কেউ কোনো কথা বলছে না।মনে হচ্ছে শোক দিবস উপলক্ষে নিরবতা পালন করছে!নিরবতা ভেঙে মুজিবুর রহমান প্রথম মুখ খুললেন!

—“বাবা সাদিদ!তুমি হঠাৎ এত রাতে? আই উইশ কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি!”

ফজিলা খালা সাদিদের হাঁটুতে চাপ দিয়ে বলল,

—“একদম ভয় ডর পাইবা না।চউখের পলকে কইয়া দেও!তুমি তো আর চুরি করতে আসো নাই বাপ।আর কেউ চুরি করতে আইসলে কলিং বেল চাইপা হগ্গল রে জাগায় না!”

ফজিলার মুখের কথা কুটি কেড়ে নিয়ে বলল,

—“খালা ডাকাইতরা তো সবাই রে জাগাইয়া গলায় রাম দা ধইরা ডাকাতি করে!”

শাহিনুর কুটিকে ধমক দিয়ে বলল,

—“তুই কথা না বলে ঠিক জায়গা আইস ব্যাগ চেপে রাখ।মাথায় ধরতে বলেছি।কপালে ধরোস কেন?”

কুটি নড়েচড়ে ঠিকমতো আইস ব্যাগ মাথায় ধরলো।সবাই চুপ হয়ে যেতে সাদিদ আমতা আমতা করে বলল,

—“আসলে ছিনজাকে আলাদা কোথাও এর আগে রাখা হয়নি।সবসময় আমার কাছেই থাকতো।আজ হঠাৎ এত দূরে সেজন্য ঘুম আসছিল না আমার।”

সবার যেন হুট করে মনে পড়লো সাদিদ চলে গেলেও ছিনজা রোদেলার কাছে রয়ে গেছে।সে বায়না ধরেছিল রোদেলা আন্টির সাথে থাকবে।কিছুতেই যাবে না।

সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।অহি এগিয়ে এসে বলল,

—“সাদিদ ভাই, আপনি কি ছিনজাকে এখন দেখবেন?ও রোদেলা আপুর রুমে ঘুমায়।কোনো কান্নাকাটি করেনি।অনেক রাত পর্যন্ত আমরা গল্প করেছি।”

সাদিদ এক পলক রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,

—“আসলে আমার এত রাতে আসার আরো একটা কারণ আছে।মিস রোদেলার রুমে আমি আমার চশমাটা রেখে গেছি।চশমা ছাড়া স্টাডি করতে সমস্যা হয়।কাল কলেজ যাওয়ার সময় লাগবে।”

শাহিনুর বিস্ফারিত নয়নে বলল,

—“তুমি আমার মেয়ের রুমে কি করছিলে?”

—“তেমন কিছু না আন্টি!”

—“তেমন কিছু করতে চেয়েছিলে?”

সাদিদ অবাক হয়ে শাহিনুরের দিকে তাকালো।থতমত খেয়ে বলল,

—“আন্টি বিকেলে একটু ফ্রেশ হওয়ার দরকার ছিল।তখন ওনার রুমের ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।হাত মুখ ধোয়ার সময় শার্টের পকেট থেকে চশমাটা বেসিনের উপর রেখেছিলাম।মিস রোদেলা আপনি কি পেয়েছেন?”

রোদেলাও অবাক হয়ে বলল,

—“হুঁ!আমি চশমা পেয়েছি এবং তুলে রেখেছি।আপনার কি বাসায় আর কোনো চশমা নেই?এটার জন্য রাত তিনটের সময় আসতে হবে?”

সাদিদ উসখুস করে এদিক ওদিক তাকাল।তার নিরবতাই রোদেলাকে ধাক্কা দিল।বুঝিয়ে দিল সে বোকার মতো প্রশ্ন করেছে।সাদিদ স্যারকে এভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে না সে!

সে দ্রুত রুমে গিয়ে একটুপরই চশমা নিয়ে নামলো।সাদিদের হাতে ধরিয়ে বলল,

—“এবার তাহলে সাবধানে যান।নাকি ছিনজাকে দেখে যাবেন?”

সাদিদ উঠে দাঁড়িয়ে তৎক্ষনাৎ বলল,

—“না না থাক!ছিনজা যেহেতু ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।আমি বরং যাই।সকালে বাবা এসে নিয়ে যাবে।”

রোদ্দুর এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলল,

—“অনেক রাত এখন সাদিদ ভাই।এত রাতে ড্রাইভ করে যেতে হবে না।আপনি বাকি রাতটুকু এখানেই থেকে যান।অজান্তা,গেস্ট রুম গুছানো আছে কি না দেখে আয় তো!”

অহি চলে গেল।সাদিদ সোফায় বসে পড়ে বলল,

—“তার কিন্তু প্রয়োজন ছিল না।”

শাহিনুর বিড়বিড় করে বলল,

—“বজ্জাত ছেলে,বিছানায় শুয়ে পড়ে বলিস তার কোনো প্রয়োজন ছিল না।আমি বরং বাড়ি গিয়ে ঘুমাই!”

তার কথা অবশ্য কারো কানে পৌঁছাল না।কয়েক মিনিট পরেই জটলা ভেঙে গেল।ড্রয়িং রুমের সাথের রুমটাতে সাদিদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো।

শাহিনুরের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে রোদেলা বলল,

—“মা,আমাকে ডেকে পাঠালে কেন?ঘুমাতে হবে আমার!মাথা ধপ ধপ করছে।”

শাহিনুর বিছানায় আধ শোয়া হয়ে খাটে হেলান দিলেন।রোদেলার দিকে চেয়ে বললেন,

—“মাথা কি তোর একার ধপ ধপ করছে?আমাদের করছে না?বিছানায় এসে বোস।কথা আছে!”

শাহিনুর কি কথা বলবে তা রোদেলা কিছুটা আন্দাজ করছে।নিজেকে প্রস্তুত করে হেঁটে গিয়ে মায়ের পাশে বসলো।এক পলক ওয়াশরুমের দরজায় তাকিয়ে বলল,

—“মা, বাবা কোথায়?”

—“স্টাডি রুমে।একবার ঘুম ভেঙে গেলে তোর বাপের আর সহজে ঘুম আসে না।পড়তে পড়তে বাকি রাতটুকু ওখানেই কাটিয়ে দিবে।”

—“মা,কিছু একটা বলবে তুমি।তাড়াতাড়ি বলো!”

এটুকু বলে রোদেলা হাই তুলল।সে মায়ের কাছে নিজেকে খুবই ক্লান্ত প্রমাণ করতে চাইছে।কারণ সে চাচ্ছে, এরপর তার মা যেই টপিকটা নিয়ে কথা বলবে সেটা না বলুক!

শাহিনুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,

—“আমি তোর এই বিয়েতে রাজি নই রোদু!তুই কেন আমার কথা মানতে চাইছিস না?সাদিদের মতো অমন বদের হাড্ডি ছেলের সাথে আমি তোর কিছুতেই বিয়ে হতে দিবো না।”

রোদেলা অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকালো।আজ রাতে তার বিয়ে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে সাদিদ স্যারের সাথে।চারদির পর বিয়ে।রোদ্দুর আর অহি কিভাবে সবাইকে বুঝিয়েছে রোদেলা জানে না।শুধু জানে সবাই রাজি,তার মা বাদে!সে নরম গলায় লজ্জার জলাঞ্জলি দিয়ে বললো,

—“মা,আমি ওই বদের হাড্ডি ছেলেটাকে ভীষণ ভালোবাসি।ওকে ছাড়া আমার লাইফে দ্বিতীয় কারো চিন্তাও করতে পারি না।”

—“রোদু,ওই ছেলেটা তো ঠিকই সংসার করেছে বউ বাচ্চা নিয়ে।কোনো একটা দূর্ঘটনা বশত বউটা মারা গেছে।আর তোর কাছে ফিরে এসেছে।যদি না আসতো?বউ যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তাদের নিয়েই তো সংসার করতো।তুই তখন কি করতি রে?”

—“তুমি জানো আমি কি করতাম মা!সারাজীবন এভাবেই একা একা বেঁচে থাকতাম।ভেবে নিতাম সেটাই আমার নিয়তি।তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতাম হয়তো!একটু বোঝার চেষ্টা করো মা!ওই মানুষটা যেমনই হোক,আমি ওকে ছাড়া আমার জীবন কল্পনা করতে পারি না।”

শাহিনুর শক্ত কন্ঠে বলল,

—“তুই যাই বলিস,অমন স্বার্থপর ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে দিবো না মানে দিবো না।”

রোদেলা মায়ের হাত ধরে বলল,

—“মা,বাচ্চাদের মতো কোরো না প্লিজ।এসব নিয়তির খেলা।সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার একাকী দুঃখের ভার সইতে না পেরে নতুন করে সাদিদকে পাঠিয়েছে।তুমি তাকে গ্রহণ করার সুযোগ দাও মা।আমাদের জন্য দোয়া করো।”

শাহিনুর রোদেলার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে রাগী গলায় বললো,

—“আমি রাজি না মানে রাজি না।এক বাচ্চার বাপের সাথে তোর বিয়ে দিবো না আমি।ওই ছেলে তোকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারবে না।সাথে এতোবড়ো একটা বাচ্চা আছে!”

রোদেলা মাকে জড়িয়ে ধরলো।জড়িয়ে ধরে বলল,

—“এত সুন্দর ফুলের মতো একটা বাচ্চাকে তুমি হিংসে করছো মা?অথচ এমন একটা বাচ্চার মায়ায় জড়িয়েই তুমি কিন্তু বাবার সংসারে এসেছিলে।অন্য একটা মায়ের সন্তানকে পরম মমতায় বুকে আগলে বড় করলে।তুমিও তো তখন একবারের জন্যও ভাবোনি যে বাবা তোমাকে ভালোবাসবে কি না!একটা বাচ্চার টানে তুমি নিজের সব বিসর্জন দিয়ে বাবাকে বিয়ে করলে!”

শাহিনুর রোদেলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দুহাত চেপে ধরে বলে,

—“এসব কি বলছিস তুই?”

শাহিনুর থরথর করে কাঁপছে।চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।সে লাল চোখে আবার পানির বন্যা।রোদেলা মাকে আবার জড়িয়ে অশ্রু সজল নয়নে বলল,

—“আমি সব জানি মা।আমি তোমার গর্ভের সন্তান নই।বাবা বিদেশে থাকাকালীন সময়ে একটা মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়।তাদের বিয়ে হয়।তার কয়েক বছর পর আমার জন্মের সময় কিছু একটা অঘটন ঘটে।মা মারা যায়।আমার দেড় মাস বয়সের সময় আমাকে নিয়ে বাবা বাংলাদেশ চলে আসে।বাবা তখন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর।কাকতালীয় ভাবে তুমি বাবার একমাত্র মাতৃহীন সন্তানের কথা জানতে পারো।তারপর নিজের জীবন, ক্যারিয়ার সব বিসর্জন দিয়ে বাবাকে বিয়ে করো।

আমাকে মায়ের স্নেহ দিয়ে লালন পালন করো।এর দু বছর পর তোমার গর্ভে রোদ্দুর আসে।তুমি কখনো আমাকে আলাদা নজরে দেখোনি।সবসময় নিজের সবটা দিয়ে আগলে রেখেছো আমাদের দু ভাই বোনকে।ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দাওনি তোমার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই!আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী মা।যে তোমার মতো একটা মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি।তার ছায়াতলে বড় হয়েছি।তোমার সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি।”

শাহিনুর কাঁদছে।রোদেলাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

—“এসব তোকে কে বলেছে?এসব তো আমি আর তোর বাবা ছাড়া কেউ জানে না!সবাইকে বলেছিলাম তোর বাবার সাথে আমার পূর্বেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল।লুকিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা।এ সন্তান আমার গর্ভের!আসলে তখন আমার বাবা আর ছোটমা দুজনই বেঁচে ছিল।শাহানাকে নিয়ে গ্রামে থাকতো।আমি ঢাকাতে হলে থাকতাম।সেবার ছোটখাটো একটা ঘটনার জন্য দেড় বছর পর গ্রামে যাই।তোর বাবাকে আর তোকে নিয়ে যাই।প্রথমে সবাই অনেক আপত্তি করলেও পরে মেনে নেয়!দু একজন হয়তো সন্দেহ করেছে।কিন্তু কেউ জিগ্যেস করেনি!তুই কেমনে জানলি রে রোদু?আমি সারাজীবন তোর থেকে সত্যিটা লুকিয়ে রাখতে চেয়েছি।আমি তোকে কষ্টে দেখতে পারবো না!”

—“কিভাবে জেনেছি জানতে চেয়ো না মা।তুমি শুধু আমার বিয়েতে অমত করো না মা।আমি কষ্টে থাকবো না মা!”

—“প্রকৃতি কেনো একই ঘটনা দু বার ঘটাতে চাইছে!আমার সাথে যা ঘটেছে তা আমার মেয়ের সাথে কিভাবে ঘটতে দিবো?”

অনেক্ক্ষণ পর রোদেলা মাকে ছেড়ে শাহিনুরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

—“মা,তুমি একদম কান্না করবে না।তোমার কলিজার টুকরো ভালো থাকবে মা।একটা সময় সাদিদ আমাকে ভালোবেসেই গ্রহণ করবে।ও যতই স্বীকার না করুক!ওর চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আজ থেকে দশ বছর আগে মা!মা,সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার পরীক্ষা নিবে।তোমার ভালোবাসার একটু প্রতিদান দিতে!ছিনজাকে আমি সবটা দিয়ে আগলে রাখবো না।আমি সুখী হবো মা!সুখী হবো!”

শাহিনুর মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলল,

—“দোয়া করি,তুই সুখী হ।সাদিদ তোকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসুক।ভালোবাসুক!”

——————-

চারদিন পর অনেকটা ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হলো রোদেলার।বিয়েতে উপস্থিত রইলো শুধু অহিদের পরিবার।রোদেলার দাদা দাদী বেঁচে নেই।তার একমাত্র ছোট কাকু বিদেশে সেটলড!বউ বাচ্চা নিয়ে আমেরিকার নিউজার্সি শহরে থাকে।তার বিয়ে উপলক্ষে বিয়ের দিন সন্ধ্যায় বিশাল বড় এক গিফট বক্স পাঠালেন!সামনের বছর উইন্টার সিজনে দেশে ফেরার কথাও বললেন!

অনেক দূরের আত্মীয় বলতে এসেছে অহির ফুপি-ফুপা।তারা চিটাগং সিটিতে থাকে।শাহিনুরের সাথেও অনেক ভালো সম্পর্ক বলে এসেছে।

বিয়েতে সবচেয়ে খুশি দেখা যাচ্ছে ছিনজাকে।সে তার নতুন মাকে বিভিন্ন ভাবে টর্চার করছে।রোদেলার কোল থেকে নামছেই না।ছিনজাকে কোলে নিয়েই রোদেলা কবুল বলে দিল!

বিয়ে শেষ হতে গ্রুপ ফটো তোলার জন্য সবাইকে ডাকা হলো।ছবি তুলবে অহির ফুপির সাথে আসা তাদের গাড়ির ড্রাইভার।

অহি গাউনের ওড়নাটা ঠিকভাবে নিয়ে রোদ্দুরকে খুঁজলো।সে বিয়ে উপলক্ষে শাড়ি পড়েছিল।কিন্তু রোদ্দুর এক পলক দেখেই তাকে ধমকে শাড়ি খুলাল।শাড়ি পড়লে নাকি তাকে ছাগলের মতো দেখা যায়।পরে সে লাল রঙের গাউন পড়েছে।অহি ঠিক করে রেখেছে বিয়েতেও সে শাড়ি পড়বে না।রোদ্দুরের পছন্দ নয়!

সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে সারিবদ্ধ ভাবে।রোদ্দুর দাঁড়িয়েছে রোদেলার আপুর পাশে।অহি এক দৌঁড়ে গিয়ে রোদ্দুরের গা ঘেঁষে দাঁড়াল।রোদ্দুর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

—“গা ঘেঁষে দাঁড়াবি না।সরে দাঁড়া!”

অহি মুচকি হেসে রোদ্দুরের আরো কাছে দাঁড়াল।ওড়না হাতে পেঁচিয়ে লুকিয়ে রোদ্দুরের আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল।রোদ্দুর মোচড়ামুচড়ি করে বলল,

—“ঘেঁষাঘেঁষি করার ইচ্ছে থাকলে রুমে গিয়ে করবি অজান্তা।এত মানুষের সামনে কেন?সরে দাঁড়া!”

—“আচ্ছা, সরছি!”

বলেই অহি ডান হাতে রোদ্দুরের পেটে সুড়সুড়ি দিল।রোদ্দুর ছিটকে বলল,

—“স্টপ!”

ড্রাইভারবেশী ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

—“ভাইসাব,মাছের মতো লাফান ক্যান?তিনডা ছবি নষ্ট করছেন?”

সবাই রোদ্দুরের দিকে কপট রাগী চোখে তাকাল।রোদ্দুর শাহিনুরকে টেনে এনে তার আর অহির মাঝে দাঁড় করিয়ে হাসার চেষ্টা করলো।

(চলবে)

তাদের বিয়ের আজ একুশ তম দিন।বাবার বাড়িতে সাত দিনের মতো থেকে গত সপ্তাহে ফিরেছে এখানে।আশপাশে চোখ ঘুরিয়ে সে ছিনজাকে খুঁজলো।কোথাও দেখতে পেল না।উঠে রান্নাঘরে এগিয়ে গিয়ে বুয়াকে বলল,

—“খালা,ছিনজা কোথায়?”

মধ্য বয়স্কা এক মহিলা কাজ করে এ বাড়িতে।তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,

—“ছিনজা তো ঘুমায়।সেই এগারোটার সময় ফিরছে স্কুল থেকে! ”

—“আর বাবা কোথায়?”

—“বড় সাব তো বাইরে বের হইলো দেখলাম।”

রোদেলা আর ঘাঁটলো না।নিজের রুমে ঢুকে গেল।ছিনজা বিছানায় হাঁটু মুড়ে শুয়ে আছে।রোদেলার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ছিনজার কপালে চুমু দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা!এত সুন্দর একটা মেয়েকে পাশে নিয়েই তো কয়েক জনম কাটিয়ে দেয়া যায়!

সাদিদ এখনো ফেরেনি কলেজ থেকে।তার কাজ আছে আরো!কলেজ যাওয়ার সময় তারা একত্রে যায়।কিন্তু ফেরার পথে আলাদা ফেরে।প্রায় দিনই সাদিদের কাজ পড়ে যায়।

রোদেলা ওয়াশরুমে ঢুকলো।শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়াল।ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেতেই তার ক্লান্তিভাব অনেকখানি উবে গেল।

সাদিদের সাথে তার সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি।এক বাসায় রয়েছে, কলেজ করছে নিয়মিত,টুকটাক প্রয়োজনীয় কথা হচ্ছে, ছিনজার সাথে হৈ হুল্লোড় হচ্ছে! ব্যস!এইটুকুই।

রোদেলা মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো।তার পরণে সবুজ রঙের সুতি শাড়ি।বিয়ের পর থেকে সে শাড়ি পরা শুরু করেছে।মাথার চুল ঝেরে এক পলক ছিনজার দিকে তাকালো।ছিনজা ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছে।এগিয়ে গিয়ে গায়ে চাদর টেনে সে নিচে নামলো কিছু খাওয়ার জন্য!

আধঘন্টা ধরে রোদেলা ছিনজার পাশে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু দু চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।আরো কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে সে উঠে দাঁড়ালো।

সাদিদের রুমটা বেশ বড়।দক্ষিণের দেয়াল ঘেঁষে একপাশ করে দুটো বুকশেলফ।প্রচুর বই তাতে!রোদেলা এগিয়ে গিয়ে পুরো বুকশেলফ ঘাঁটাঘাঁটি করলো।কিছু একটা পড়ে দু চোখকে ক্লান্ত করতে হবে।দু চোখ ক্লান্ত হলেই ঘুম আসবে!

হঠাৎ অনেকগুলো বইয়ের আড়ালে মোটা ফ্রেমের পুরনো এক ফটো এলবাম নজরে এলো রোদেলার।আগ্রহ নিয়ে ময়লা ঝেরে হাতে নিল সে!যাক!কিছুটা সময় কাটানোর সঙ্গী পাওয়া গেল।

রোদেলা ফটো এলবামটা হাতে নিয়ে ছিনজার পাশে খাটে হেলান দিয়ে বসলো।তারপর এলবাম খুললো।

প্রথম বেশকিছু পাতায় সাদা কালো ছবি।সাদিদের নানা-দাদার কারো।কয়েক পাতা উল্টাতে সে সাদিদের মায়ের ছবিও দেখতে পেল।সাত-আট বছরের সাদিদকে পাশে নিয়ে উঠা ছবি।রোদেলা ছবিটাতে পরম মমতায় হাত বুলালো।এরপর সাদিদের প্রাপ্ত বয়সের বহু ছবি।যার বেশিরভাগ বিদেশে তোলা।কিছু ভার্সিটি লাইফের।ঢাকা ইউনিভার্সিটির কার্জল হল ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখে চিনলো।

শেষের দিকে একটা ছবি উল্টো করে রাখা।সাদা পৃষ্ঠা দেখা যাচ্ছে শুধু।কৌতুহল নিয়ে ছবিটা টেনে বের করলো রোদেলা।চোখের সামনে মেলে ধরতেই তার পিলে চমকে উঠলো।কারণ ছবিখানা তার।তাও আবার কলেজ লাইফের।যখন তার সতেরো বছর বয়স ছিল!

কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটা উল্টে পাল্টে দেখা শুরু করলো রোদেলা।ছবিতে হোয়াইট কালারের কলেজ ড্রেস পরিহিত কিশোরী রোদেলা।

রোদেলার দু চোখ ফেটে অশ্রু ঝরা শুরু হলো।কত শত স্মৃতি তার এই সতেরো বছর বয়সটাকে ঘিরে।হঠাৎই তার মাথায় এলো এই ছবিটা সাদিদের কাছে কেন?এমন ছবি তো রোদেলার কাছে কখনো ছিল না।সত্যি বলতে সে নিজে থেকে ইচ্ছে কৃতভাবে কলেজের কোনো স্মৃতি রাখেনি।তাহলে সাদিদ তার ছবি পেল কোথায়?তাছাড়া ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আড়ালে থেকে লুকিয়ে তোলা।ছবিতে রোদেলা কলেজ লাইব্রেরীতে বই খুঁজছিল।তখন আড়ালে থেকে তোলা।তার সম্পূর্ণ মুখটা আসেনি!

তবে কি সাদিদ রোদেলার থেকে সত্যি কিছু লুকিয়ে রেখেছে?এর উত্তর একমাত্র সাদিদ দিতে পারবে।রোদেলা ছটফটে মন নিয়ে সাদিদের জন্য অপেক্ষা শুরু করলো!

———————–

সন্ধ্যাবেলা সাদিদ ফিরলো।ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় মেলে দিল।পায়ের জুতা পর্যন্ত খুললো না।রোদেলা ছিনজাকে ড্রয়িং রুমে পড়াচ্ছিল।সাদিদকে রুমে ঢুকতে দেখে সেও এলো।

সাদিদ অর্ধেক শরীর বাইরে আর অর্ধেক শরীর বিছানায় রেখে শুয়ে আছে।মুখটা কেমন চুপসানো।অনেক ধকল যাচ্ছে হয়তো।কিছুদিন পর স্টুডেন্টদের ফাইনাল এক্সাম!রোদেলার বড্ড মায়া হলো!

সে টাওয়ালটা হাতে ধরে বলল,

—“ফ্রেশ হয়ে আসুন।হালকা নাস্তা করে রেস্ট নিন!”

সাদিদ চোখ না খুলেই বলল,

—“রোদ,রোদ্দুর ফোন দিয়েছিল।আগামী শুক্রবার সবাই মিলে গ্রামে যাবে।তোমাদের নানুবাড়ি!রাজশাহীতে আর কি!আমাদেরও যেতে বলল সাথে।তোমায় কিছু বলেছে?”

—“না তো!হঠাৎ নানুবাড়ি যাবে কেন?কেউ তো বেঁচে নেই।অবশ্য নানুর ভিটেতে জামাল চাচা তার পরিবার নিয়ে থাকে।নানুর কোনো ছেলে নেই।আমার মা আর শাহানা খালামণি শুধু!”

—“তোমার মা নাকি কিসের মানত করেছে।রোদ্দুরের জন্য।গরু জবাই করে গ্রামের দুঃস্থ মানুষকে খাওয়াবে।কোন পীরসাহেব যেন বলেছে!”

রোদেলা ব্যাপারটা জানতো না।সে ভীষণ অবাক হয়ে বলল,

—“রোদ্দুরের আবার কি হয়েছিল?মানত করেছে কেন?”

সাদিদ বিছানায় উঠে বসলো।রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,

—“জানি না।ফোন দিয়ে বিস্তারিত শুনে নাও।যাবে?চলো ঘুরে আসি!শুক্রবার তো হলিডে।সাথে শনিবার আর রবিবার দুজন লিভ নেই?”

রোদেলা ভেবে বলল,

—“ঠিক আছে।ছিনজা কখনো গ্রাম দেখেনি।অনেক খুশি হবে ও!”

—“তাহলে আমরাও যাচ্ছি।পাক্কা!এখন দেখো তোমার শ্বশুর মশাই সাথে যাওয়ার বায়না ধরে কি না!”

—“সমস্যা কি!বাবাও যাবে!”

সাদিদ উবু হয়ে পায়ের জুতা খুলল।তারপর মুচকি হেসে রোদেলার থেকে টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।ছিটকিনি লাগাতে নিতে রোদেলা হঠাৎ মনে পড়ায় চেঁচিয়ে বলল,

—“ছিটকিনি লাগাবেন না!কথা আছে!”

সাদিদ অবাক হয়ে বলল,

—“গোসল করে এসে শুনি!”

—“নাহ!এক্ষুনি শুনবেন!আপনি একটা বজ্জাত! ”

—“তারপরের টুকু বলো!”

—“আপনি বলেছিলেন যে আমার সতেরো বছর বয়সের সময় আপনি আমাকে অন্যান্য স্টুডেন্টদের মতোই সাধারণ ভাবে ট্রিট করতেন।আমার আর অন্য দের মধ্যে আলাদা কোনো অনুভূতি কাজ করতো না।তাহলে আমার কলেজের ছবি আপনার কাছে এলো কি করে?তাও আবার লাইব্রেরি থেকে লুকিয়ে তোলা?”

সাদিদের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।সে বিস্ফারিত কন্ঠে বলল,

—“তুমি জানলে কি করে?তুমি কি আমার পুরো শেলভ তন্নতন্ন করে ঘেঁটেছো?”

—“আপনি বলুন,আমার ছবি আপনার কাছে ছিল কেন?”

সাদিদ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,

—“আরে ধুর!কি দেখতে কি দেখেছো।ওসব কিছু না!”

—“একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না।”

সাদিদ অসহায়ের মতো চেয়ে বলল,

—“আসলে তুমি আমার প্রথম ভালোলাগা ছিলে।কলেজ প্রথম দিন ক্লাসে ঢোকার সময় তুমি বললে,’স্যার আসতে পারি?’ চিকন সুতীক্ষ্ম মিহি সুর আমার যুবক মনে গিয়ে আঘাত করলো।আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি ফুটন্ত গোলাপ দাঁড়িয়ে আছে।প্রথম দেখাতেই তোমায় আমার ভালো লেগে গেল।প্রচন্ড ভালো লেগে গেল।সেদিনের পর থেকে সবসময় আমার মাথায় তোমার ভয়ার্ত চেহারাটা ভেসে বেড়াতো!তোমার চাহনি আমাকে ঘায়েল করে দিতো।আমি বুঝতে পারতাম তুমিও আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখো!কিন্তু আমি জানতাম কিছুদিন পর আমাকে বিদেশে বিভুইয়ে পাড়ি জমাতে হবে।সেজন্য নিজে থেকে আর হাত বাড়াই না।তোমার সাথে অন্যান্য মেয়েদের মতোই বিহেভ করি!তাছাড়া ওটা তোমার অল্প বয়সের আবেগ মনে করেছিলাম।

কিন্তু তুমি তখনো আমার মাথায় জোঁকের মতো বসেছিলে।জীবনের প্রথম ভালোলাগা,প্রথম ভালো বাসা যে ছিল!সেদিন লাইব্রেরিতে তোমাকে দেখে লুকিয়ে ফোনে একটা ছবিও তুলে ফেলি।কেন তুলি জানি না!শুধু এটুকু জানতাম তোমার সাথে আমার মিল হবে না!

বিদেশে যাওয়ার আগে তোমার ছবি প্রিন্ট করি।তুমি প্রিয়জনদের ফটো এলবামের বিশেষ জায়গায় জায়গা করে নাও।কিন্তু বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।কিচ্ছু পারি না।সারাদিন ক্লাস,নতুন ভাষা শেখা,ইংলিশ শেখা,ল্যাব,থিসিস সব নিয়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ি।আস্তে আস্তে তোমার থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে বা যেদিন তুষারপাত হয় বা কখনো মাঝরাতে ফট করে এলবাম খুলে বসতাম।তোমাকে তখন অনেক কাছের মনে হতো!

এরপর চার বছর পর যখন বাড়িতে আসি তখন কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছিত্তিমার সাথে বিয়ে হয়ে যায়।ছিত্তিমাকে আমি বিয়ের পর ভালোবাসি!তারপরের গল্প তো তোমার জানা!”

সাদিদ দ্রুত ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিল।এপাশে রোদেলা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো।সাদিদ তার থেকে সবসময় কেন সব লুকিয়ে রাখে?তার দু চোখ বেয়ে জল গড়ে।বুকের ভেতর ভালোলাগার অনুভূতি হয়।তাহলে সেও সাদিদের প্রথম ভালো লাগা ছিল?

চোখ মুছে সে চিল্লিয়ে বলে,

—“আপনি একটা বজ্জাত!সেদিন ছাদে কেন মিথ্যে বললেন?”

সাদিদ ওয়াশরুমের ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে ছিল।সে দরজার দিকে চেয়ে বলল,

—“আমি সেদিন সত্যিটা বললে তুমি বিশ্বাস করতে না রোদ!তোমার মনে সন্দেহ হতো,আমি হয়তো নিজের জন্য মিথ্যে বলছি!আমার জীবন থেকে অনেক প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেছে।নতুন করে আর কাউকে হারাতে চাই না!”

—“আপনি একটা ফাজিল, বেহায়া বজ্জাত লোক।আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।আপনি আজ পর্যন্ত কোনোদিন আমার সালামের উত্তর দিননি!যেন সালামের উত্তর দিলেই রোদেলাতে ফেঁসে যাবেন!”

—“আজ সালাম দাও!উত্তর দিবো!”

রোদেলার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে চোখ মুখ মুছে বলল,

—“আমি আর কোনোদিন আপনাকে সালাম দিবো না!”

——————–

আজ শুক্রবার!শাহিনুর সকাল থেকে চেঁচামেচি শুরু করেছে।কিন্তু কাউকে জাগাতে পারছে না!কেউ ঘুম থেকে উঠছে না কেন?রেডি হচ্ছে না কেন?সবাইকে তো নয়টার বাসে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে!

শাহিনুর রান্নাঘরের সাথের লাগোয়া ঘরটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে চিৎকার করলো,

—“এই কুটি?ফজিলা?তোরা কি খাবি বল?আমি রান্না করি!তোরাই তো এ বাড়ির মানুষ।আমি তো কাজের লোক।বল কি খাবি!”

কুটি ঢুলুঢুলু চোখে বের হয়ে আসলো।শাহিনুরকে দেখেও না দেখার ভান করলো।সে শাহিনুরকে অভারটেক করে সোফায় শুয়ে পড়লো।শুয়ে একটা হাই তুলে বলল,

—“বড় মা!গরম গরম পরোটা আর গরুর কলিজা ভুনা করেন তো!”

শাহিনুরের রাগে ফেটে পড়বে অবস্থা!এ বাড়ির কেউ তাকে মান্য করে না।সে এতটা ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছে?কেউ তাকে গোণতির মধ্যে রাখে না।সে অচিরেই এ ‘পাগলের কারখানা’ ছাড়বে!

সে কি!বাড়িটার নাম তো চেঞ্জ করা হয়নি!তার রোদ্দুর তো ভালো হয়ে গেছে।এখন সবসময় হাসিখুশি থাকে।বৃষ্টি নামক ঝঞ্ঝাটের কথাও স্মরণ করে না।এ সব কিছু পীরসাহেবের উছিলায় হয়েছে।শাহিনুর মনে মনে পীরসাহেবকে ধন্যবাদ দিল।

সোফার দিকে চেয়ে মাথা গরম হয়ে গেল। কুটি আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।রান্না না করুক,ফ্রেশ হয়ে রেডি হবে তো!ওকেও তো যেতে হবে!শাহিনুর রাগান্বিত গলায় বললো,

—“আমি এখন পাতলা খিচুড়ি রান্না করবো।দেখি তোদের দেয় কে?একা রান্না করবো,একা খাবো!তারপর একা রাজশাহী যাব।তোরা সব কটা মরার মতো ঘুমা!”

তিনি রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন।কুটি এক চোখ খুলে একবার রান্নাঘরের দিকে তাকালো।পরমুহূর্তে মুখ হাত দিয়ে চেপে হেসে ফেলল।মানুষটা এত ভালো কেন?

রোদ্দুর নিচে নেমে রান্নাঘরে উঁকি দিল।তার চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু জলরাশি।এগিয়ে গিয়ে শাহিনুরের শাড়ির আঁচলে মুছে ফেলল।

রোদেলা,রোদ্দুর দুটোই দিনের মধ্যে অন্তত একবার তার শাড়ির আঁচলে মুখ মুছবে।শাহিনুর এতে প্রচুর খুশি হয়।কিন্তু ছেলেমেয়ের বুঝতে দেয় না।আজও বিরক্ত গলায় বলল,

—“বাড়িতে কি কাপড়চোপড়ের অভাব পড়েছে?পড়লে বল! ভিক্ষা করতে বের হই।”

রোদ্দুর, রোদেলাও মিথ্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্যটা বুঝতে পারে।সে জন্য বার বার একই কাজ করে।রোদ্দুর দু হাত ঘষে বলল,

—“মা,অজান্তার সাথে কথা হয়েছে?”

—“একি কান্ড!আমার তো ধারণাতেই ছিল না।এই,তুই বেশ কিছু দিন হলো খালি অহি অহি করিস কেন?হুট করে ও বাড়ি চলে যাওয়া,এটা ওটা করা!কি সাংঘাতিক!পীর সাহেবের কাছে যেতে হবে আবার!”

রোদ্দুর বিড়বিড় করে বলল,

—“তোমার পীরসাহেবকে বলো,আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি অজান্তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারি।মানে বিয়েটা যেন হয়।”

মুখে বলল,

—“তোমার রুচি এত খারাপ মা?ইয়াক থু!অজান্তার চেহারা তো ছাগলের মতো।ওকে আমি পছন্দ করবো!ছি!আমি রুচি এত খারাপ নয়!”

—“এক চড় খাবি!তোর চেহারা দেখেছিস?তিন রাস্তার মোড়ে ছেঁড়া জামা গায়ে ভিক্ষা করা ছেলেটার চেহারাও তোর চেয়ে সুন্দর! ”

রোদ্দুর কিছু বলার আগেই কলিং বেল বাজলো।শাহিনুর ইশারা করতে রোদ্দুর দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল।সে জানে কে এসেছে!চারদিন পর আজ সরাসরি দেখবে!

দরজা খুলে অহিকে দেখেই রোদ্দুরের বুকে ব্যথা শুরু হলো।

(চলবে)

কেমন আছেন সবাই?🙃😍🥰

আগের পর্বের লিংক, পর্ব–১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here