পরিশিষ্ট পর্ব ২০+২১

#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২০

দরজা খুলে অহিকে দেখেই রোদ্দুরের বুকে ব্যথা শুরু হলো।অহির হাসিতে সে নিশ্চিত খুন হয়ে যাবে।সে অপলক অহির দিকে চেয়ে রইলো।অহির পাশ থেকে অপূর্ব বলল,

—“ভাইয়া, দরজা থেকে সরে দাঁড়ান।নাকি ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?”

রোদ্দুর থতমত খেয়ে সরে দাঁড়াল।সবাই ভেতরে ঢুকলো।রোদ্দুর অপূর্বর মাথায় হালকা করে চাটি মেরে শাহানাকে বলল,

—“খালামণি,মা রান্নাঘরে!বাকি সবাই ঘুমায়!”

শাহানা বলল,

—“রোদেলারা এখনো এসে পৌঁছায়নি?”

—“না!”

শাহিনুর আর কিছু বলল না।রোদ্দুর অহির দিকে চেয়ে কিছু একটা ইশারা করলো।অহি তাকে পাত্তা দিল না।

অহির কলেজ টিচার বাবা আশরাফ হোসেন রোদ্দুরকে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,

—“তোমার মা বলল যে তোমার পাগলামি সেরে গেছে।এখন সুস্থ হয়ে গেছো।কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না!এতবড় মুরুব্বি মানুষকে দেখেও সালাম দিচ্ছো না!তোমার সাথে আমার বহুদিন পর সাক্ষাৎ হলো!”

রোদ্দুর হিমশিম খাচ্ছে।তার টিচারবেশী খালুর সবার থেকে শ্রদ্ধা আর সালাম পেয়ে অভ্যস্ত।একটু তো খেয়াল রাখা উচিত ছিল!সে ঝটপট বলল,

—“আসসালামু আলাইকুম বাবা!স-স্যরি!খালুজি!”

আশরাফ হোসেন গম্ভীর চোখে সোফায় গিয়ে বসলেন।হাত নেড়ে রোদ্দুরকে পাশে বসতে বললেন।হঠাৎ পাশে কুটিকে শুয়ে দেখে চমকে বলল,

—“হলি কাউ!এ এখানে ঘুমিয়ে কেন?”

তার মৃদু চিৎকারে কুটির ঘুম ভেঙে গেল।সে উঠে আশরাফের দিকে আগুনঝরা দৃষ্টিতে তাকাল।তার কত সাধের ঘুম!আশরাফের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের রুমে গেল।ফ্রেশ হতে হবে!

ততক্ষণে রোদ্দুর খালুর পাশে বসে গেছে।আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে বার বার তাকাচ্ছে।কারণ অহি আর ছোটখালা রান্নাঘরে ঢুকেছে।

—“রোদ্দুর! ”

—“জ্বি খালুজি!”

—“শাহিনুর আপা বহুদিন আগে মাঝরাতে ফোন দিয়ে প্রচুর কান্নাকাটি!তোমার নাকি মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।ঠিকমতো খেতে পারছো না,কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারছো না,হুটহাট গান ধরো,রাত জেগে চোখের নিচে কালি ফেলো,হুট করে কবিতা আওড়ায়,বিড়বিড় করে কার সাথে যেন কথা বলো ইত্যাদি!তোমার মায়ের ধারণা তোমায় মহিলা জ্বীনে ভর করেছে।সেজন্য তিনি পীরসাহেবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।কিন্তু আমার ধারণা তুমি নতুন করে কারো মায়ায় জড়িয়েছো!”

রোদ্দুর খুকখুক করে কাশলো।আশরাফ হোসেন চশমাটা খুলে বুকপকেট থেকে টিস্যু বের করে তার কাচ পরিষ্কার শুরু করলেন।তারপর গম্ভীর গলায় বললেন,

—“তোমার খালার প্রেমে যখন আমি পড়ি তখনও আমার সেইম অবস্থা হয়েছিল।খেতে পারি না,কিচ্ছু করতে পারি না,সারাক্ষণ মাথার মধ্যে শাহানা ঘুরে বেড়ায়,দৌঁড় ঝাপ করে!কি এক্টা অবস্থা।তুমি এর আগে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।সাথে আমাদের সবার বেইজ্জতি করেছো।এখন বলো,তুমি এবার কোন শয়তানের বাচ্চার প্রেমে পড়েছো?মেয়ের বাবা-মার ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করতে হবে!বাবা মা পাগল ছাগল কি না,বেদ্দপ কি না,রাজনীতির সাথে জড়িত কি না ইত্যাদি আরো অনেক কিছু!বুঝতে হবে আম গাছে আম ধরে,আঙ্গুর ধরে না!”

রোদ্দুরের প্রচুর হাসি পাচ্ছে।সে নিজেকে সামলে রান্নাঘরের দরজায় আরেক নজর দিল।অজান্তার ওড়নার ঝুলন্ত এক অংশ চোখে পড়ছে।তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,

—“খালুজি,আপনি ঠিক ধরেছেন।নতুন করে ইয়ে মানে…বুঝতেই পেরেছেন।তবে মেয়ে অনেক ভালো।পৃথিবীতে একজনই আছে।কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ের বাবাকে নিয়ে।”

—“হলি কাউ!মেয়ের বাবা চোর ডাকাত,গুন্ডা-বদমাশ রাইট?”

—“ইয়ে মানে!তেমন না!এমনিতে অনেক ভালো।কিন্ত মাথায় একটু গোলমাল আছে।দু একটা নিউরনে সমস্যা! তাছাড়া মন ভালো! ”

—“চিন্তার বিষয়!আচ্ছা যাও!সমস্যা নেই।মেয়ের বাবার সাথে কথা বলিয়ে দিয়ো আমায়।মেয়ে পাগল না হলেই হলো।তুমি তো আর মেয়ের বাবাকে বিয়ে করবে না।বিয়ে করবে মেয়েকে!মেয়ের বাবা পাগল হলেও সেটা ফেস করবে তোমার শ্বাশুড়ি!কি বলো?”

—“একদম খাঁটি কথা বলেছেন খালুজি!”

আশরাফ হোসেন চোখে চশমা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন।যাওয়ার আগে বললেন,

—“তোমার বাবাকে ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে নিচে পাঠাও তো।নয়টা বাজতে চলল!”

রোদ্দুর মাথা নেড়ে ধুপধাপ পা ফেলে উপরে গেল।কয়েক মিনিট আগে অহি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে উপরে উঠেছে।সে প্রায় দৌঁড়ে রোদেলা আপুর রুমে ঢুকলো।কিন্তু আশাহত হলো সে।রোদেলা আপুর রুমে অপূর্ব শুয়ে শুয়ে ফোনে গেইম খেলছে।

রোদ্দুরকে দেখেই অপূর্ব বলল,

—“বুবু এ রুমে নেই!”

রোদ্দুর পাত্তা না দিয়ে বলল,

—“কি রে অপূর্ব!তুই নাকি ইদানীং তোর স্কুলের একটা মেয়েকে লাইন মারার চেষ্টা করছিস?”

—“ভাইয়া,সব মেয়ের তো আর অপূর্বর মতো ভাই নেই যে লুকিয়ে দরজা খুলে নিজের বোনকে দেখার ব্যবস্থা করে দিবে!উল্টো আমাকে গাছে ঝুলিয়ে রাখবে!”

রোদ্দুর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বের হয়ে আসলো।অহি কোথায় গেল?সে দ্রুত ছাদেও একটা চক্কর দিয়ে আসলো।নাহ!নেই!পরমুহূর্তে ক্ষীপ্রপায়ে নিজের রুমে ঢুকলো।

অহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাবে পিন গাঁথছিল।অহিকে দেখে যেন তার মনের ভেতর শান্তির বন্যা বয়ে গেল।রোদ্দুর বিছানায় বসে আড়চোখে অহির দিকে তাকিয়ে বলল,

—“কি করছিস অজান্তা?”

অহি শান্ত গলায় বললো,

—“হিজাব খুলে নতুন করে বাঁধছি।”

রোদ্দুর বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—“বাসায় কি রুম টুমের অভাব পড়েছে?তোর যত খোলাখুলির কাজ সব আমার রুমে করতে হবে?”

অহি হাসতে নিয়েও হাসলো না।গম্ভীর কন্ঠে বলল,

—“আপনি কেমন আছেন রোদ্দুর ভাই?”

অহির ছোট্ট একটা প্রশ্নে রোদ্দুরের হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেল।সে শক্ত হাতে বেডশিট চেপে বলল,

—“রাতে ফোন করলাম,ধরিসনি কেন?”

অহির হিজাব বাঁধা শেষ।সে ঘুরে দাঁড়িয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।হাসিমুখে বলল,

—“আপনি সারাদিন আমার খোঁজ নেননি সেজন্য!আমি এতগুলো কল করলাম!টেক্সট করলাম বাট আপনি?একটারও উত্তর দিলেন না!তারপর আপনার হুট করে গভীর রাতে মনে পড়বে আর ফোন দিবেন!আমি রিসিভ কেন করবো?”

—“আমি দিনে ব্যস্ত ছিলাম।”

—“আমিও রাতে ঘুমাতে ব্যস্ত ছিলাম।”

অহির হাসিমুখের এই উত্তর যেন রোদ্দুরের বুকে আগুন ধরিয়ে দিল।এই আগুন সে অহিকে দিয়েই নেভাবে।জ্বলন্ত চোখে একবার দরজার দিকে তাকালো।দরজা ভেড়ানো!

সে সটান উঠে অহির দিকে এগিয়ে গেল।এক টানে অহির হিজাব এলোমেলো করে দিল।অহি বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,

—“এত কষ্ট করে বাঁধলাম আপনি এলোমেলো করে দিলেন কেন?”

—“আমি যে এত কষ্টে নিজেকে গুছিয়ে রাখি,সেই আমিকে এলোমেলো করে দেয়ার সময় একবার মনে হয় না আমারো কষ্ট হয়?”

অহি মায়াভরা দৃষ্টিতে রোদ্দুরের চোখে চোখ রাখলো।আলতো করে ডান হাতটা রোদ্দুরের বুকে ছোঁয়াল।রোদ্দুর আর সইতে পারলো না।এক ঝটকায় অহিকে বুকে জড়িয়ে নিল।

রোদ্দুরের হাত ক্রমেই শক্ত হয়ে আসছে।অহির গলার কাছে একটা সুঁচ পিন বিঁধছে অনেকক্ষণ হলো।সে সরে আসতে চাইলো।কিন্তু রোদ্দুর ছাড়লো না।সুঁচ পিন গেঁথে যাচ্ছে গলায়।সে হাঁসফাঁস করে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই ছাড়ুন!সুঁচ পিন আমার গলায় বিঁধে যাচ্ছে।”

—“বিঁধুক!আমারো বুকে বিঁধছে।”

—“আমি ব্যথা পাচ্ছি।”

—“আমিও পাচ্ছি!”

—“আমি সহ্য করতে পারছি না।”

অহি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে রোদ্দুর আরো চেপে ধরে বলল,

—“আমিও সইতে পারছি না।”

অহি আর পারলো না।রোদ্দুরের বুকে এক কামড় বসাতে সে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে সরে গেল।তোতলানো স্বরে বলল,

—“অজান্তা,তুই কি পাগল?”

অহি সেদিকে কান না দিয়ে ডান হাতের আঙুল গলায় বুলালো।একটা আঙুল সামনে এনে দেখে এক ফোঁটা রক্ত!সে চমকে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই, আপনি একটা পাগল!শুধু পাগল নয়!মহাপাগল!এই দেখুন সুঁচ বিঁধে আমার কাঁধের কাছে থেকে রক্ত বের হয়েছে।”

—“আমারো তো বুকে বের হয়েছে।পিন এখনো গেঁথে রয়েছে।”

সত্যি সত্যি রোদ্দুরের বুকের ডান পাশে একটা সুচ খাড়া হয়ে গেঁথে আছে।কিন্তু রোদ্দুরের মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই।অহি মৃদু চিৎকার করে বলল,

—“আপনি একটা পাগল!বদ্ম উন্মাদ।আপনাকে আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না।”

বলেই এক দৌঁড়ে বের হয়ে গেল অহি।রোদ্দুর বাঁধা দিল না।সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিনটা খুললো।রক্ত বের হয়নি।তবে একটু ব্যথা পেয়েছে।সে তো ভেবেছিল, এমনেই বুকে জ্বালাপোড়া করছিল।সত্যি সত্যি সুঁচ গেঁথে গেছে ধারণাতে ছিল না।

ড্রেসিং টেবিলের উপর অনেকগুলো সুঁচ পিন, সেফটিপিন এখনো ছড়ানো ছিটানো।অহি তুলে নিতে হয়তো ভুলে গেছে।

রোদ্দুর বিছানায় বসে দরজার দিকে তাকালো।দরজা সামান্য খোলা।অহি রাগ করেছে কি না সে বুঝতে পারছে না।যদি রাগ করে সত্যি সত্যি?তাহলে কিভাবে ভাঙাবে?হঠাৎ রোদ্দুরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

দ্রুত বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াইফাই অন করলো।তারপর ইউটিউবে ঢুকে হিজাব টিউটোরিয়াল দেখা শুরু করলো।অহি তো সবসময় হিজাব পড়ে।তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য হিজাব পড়া শেখা যায়!

টেনে টেনে তিনটে ভিডিও দেখে রোদ্দুর রুমে ওড়নাজাতীয় কিছু খুঁজলো।প্র্যাক্টিকাল শিখতে হবে।কিন্তু রুমে কোনো ওড়না না পেয়ে সে লম্বা টাওয়ালটা হাতে নিল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও টা অন করে ফোনটা চোখের সামনে রেখে নিজের মাথায় টাওয়াল পেঁচালো।

অনেক চেষ্টার পর, প্রায় চল্লিশ মিনিট পর রোদ্দুর মাথায় পাওয়ালটা হিজাবের মতো পেঁচাতে সক্ষম হলো।আয়নায় সামনে পিছে ঘুরে ঘুরে,বিভিন্ন ভঙ্গি করে নিজেকে দেখতে লাগলো।পরমুহূর্তে হাসিমুখে বলল,

—“বাহ!সুন্দর তো!ছেলেদেরও এভাবে হিজাব বেঁধে বাইরে বের হওয়া উচিত।অজান্তাকে হিজাব বেঁধে দিলে নিশ্চিত অনেক খুশি হবে!”

হঠাৎ কারো গগনবিদারী চিৎকারে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রোদ্দুর।এক হাত দরজাতে রেখে বিস্ফারিত নয়নে,মুখ হা করে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আছে অপূর্ব!

অপূর্ব এসেছিল ব্রেকফাস্টের জন্য রোদ্দুরকে ডাকতে।রোদ্দুর ভাইয়াকে এভাবে সাদা ফুলেল ট্রাউজার,কালো ফতুয়ার সাথে মাথায় হিজাব পড়তে দেখে ভয় পেয়ে গেল।রোদ্দুর কয়েক পা এগিয়ে এসে অপূর্বকে বলল,

—“হেই ব্রোহ!দেখ তো হিজাব বাঁধা কেমন হয়েছে?”

অপূর্ব এক চিৎকার দিয়ে রুম থেকে বের হলো।নিচে নামতে নামতে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই আবার পাগল হয়ে গেছে!তার মাথা এখনো ঠিক হয়নি।”

——————–

বাস আগে থেকেই ভাড়া করা ছিল।প্লান ছিল সকাল নয়টার বাসে সবাই রাজশাহী যাবে।কিন্তু সবাই এক জায়গা হতে হতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল।দশটার দিকে তারা সবাই বাসে উঠলো।

বাস ছেড়ে দিয়েছে।জানালা দিয়ে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।এতক্ষণে শাহিনুর স্বস্তি পেল।সে বসেছে জানালা ঘেঁষে।তার বাম পাশে কুটি।কুটি শাহিনুরকে অভারটেকে করে মুখ বাড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

শাহিনুর বিরক্ত হয়ে বলল,

—“এই কুটি!মুখের সামনে এসে নিঃশ্বাস ছাড়বি না।পৃথিবীতে কি জায়গা কম পড়েছে যে তোর বিষাক্ত গরম কার্বনডাই-অক্সাইড আমার মুখে ফেলতে হবে?”

কুটি শাহিনুরের দিকে চেয়ে বলল,

—“বড় মা এমন করেন ক্যা?একটা জিনিস শান্তিতে দেখতে দেন না।আপনে একটা অশান্তি!”

—“কুটি খবরদার!আমার রাগ উঠাবি না।তোকে কিন্তু জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিব।”

কুটি সোজা হয়ে বসে বলল,

—“আমারে ফ্যালতে গিয়া নিজেও পইড়েন না আবার!আপনার যা শরীল!”

—“কি!তুই আমাকে মোটা বললি?আমি তোর কাছে বসবো না।ড্রাইভার গাড়ি থামান।এক্ষুণি থামান!আমি সিট পাল্টাব!”

শাহিনুরের চিৎকারে বাসের সবাই নড়াচড়া শুরু করেছে।ছোট্ট একটা বাসভর্তি শুধু তারা নিজেরাই।অহির পরিবার,রোদেলার নতুন পরিবার, অহির ফুপুর পরিবার আর রোদ্দুর রা!সবমিলে বিশ জনের মতো!সবগুলো চোখ শাহিনুরের উপর।

ততক্ষণে ড্রাইভার গাড়ি সাইড করেছে।পান খাওয়া কুচকুচে ঠোঁটের মাঝবয়েসী এক ড্রাইভার ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল,

—“কেউ কি পিচ্ছাব করবনি?তাড়াতাড়ি শ্যাষ করেন ভাইসাবগণ!”

ড্রাইভারের পাশে বসেছিল অপূর্ব।ড্রাইভার আরো কিছু বলতে নিতে সে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে থামিয়ে দিল।দুই মিনিটের মধ্যে সিট পরিবর্তন করা হলো!মাঝামাঝি জায়গা রোদেলা আর সাদিদ পাশাপাশি বসেছিল।শাহিনুর উঠে গিয়ে সাদিদকে উঠিয়ে দিয়ে বলল,

—“সবসময় বউয়ের আঁচল ধরে থাকতে হবে কেন?বাসেও পাশাপাশি বসতে হবে?যাও তোমার শ্বশুর মশাইয়ের পাশে গিয়ে বসো।উনি একা আছেন!”

রোদেলা মায়ের হাত চেপে অনুরোধের স্বরে বলল,

—“মা!একটু থামো!”

সাদিদ লজ্জা মিশ্রিত মুখে উঠে একদম পেছনের সিটে গিয়ে তার নিঃসঙ্গ শ্বশুর মশাইয়ের পাশে বসলো।শাহিনুর রোদেলার পাশে ধপ করে বসে পড়লো।হঠাৎ করেই তার চোখ বামপাশের তিন নাম্বার সারিতে গেল।রোদ্দুর আর অহি পাশাপাশি বসে আছে।শাহিনুর বাজখাঁই গলায় বললো,

—“এই রোদ্দুর! তুই এত মানুষের মধ্যে অহির কানে কানে কি কস?যা,উঠ!পিছনে তোর খালুর পাশে গিয়ে বস!”

রোদ্দুর অসহায় মুখ নিয়ে উঠে গিয়ে তার খালু আশরাফ হোসেনের পাশে বসলো।শাহিনুর ঠিকমতো বাসে বসে বলল,

—“ড্রাইভার সাব!গাড়ি ছাড়ুন!আর কোনো থামাথামি নাই!”
#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২১ (অন্তিম অধ্যায়–প্রথম অংশ)

গ্রামের নাম বদলগাছি।অনেকটা আধুনিক,কারেন্ট আছে!থেকে থেকে কদাচিৎ ইট, সিমেন্টের ঘরবাড়ি দেখা যায়।চারিদিকে সবুজের সমারোহ।মাঠে সবুজ ধানগাছের সারি আর গাছপালার সবজত্ব চারিদিকে ঠিকরে পড়ছে যেন।সবুজ রঙ চোখে অন্য ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়!

অহিরা বদলগাছি গ্রামে যখন পৌঁছাল তখন শেষ বিকেল।সূর্য পশ্চিম কোণে ডুবুডুবু!বাস থেকে নেমে মাটির রাস্তা ধরে সবাই সারি সারি হাঁটা ধরলো।মিনিট বিশেক হাঁটলেই বাড়ি পাওয়া যাবে।

ছিনজা খিলখিল করে হাসছে আর দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে।পড়ে টড়ে হাঁটু ছিলে ফেলতে পারে এই ভয়ে রোদেলা চুপসে আছে।সে একটুপর পর ছিনজাকে বারণ করছে।কিন্তু ছিনজা কোনো বারণ শুনছে না।সে কারো হাত ধরে হাঁটবে না।একা একা হাঁটবে,লাফাবে!

রোদেলা পেছন ঘুরে তাকাল।সাদিদের যেন মেয়ের দিকে নজর নেই।সে এখন অহির বাবা আর তার বাবার সাথে হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করতে ব্যস্ত।ভালোই ভাব জমে গেছে।

অহি ছিনজাকে থামানোর চেষ্টা করছে।রোদেলা দ্রুত হেঁটে অহির কাছাকাছি হলো।কুটি এখন ছিনজার সাথে সাথে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে।

অহি রোদেলার দিকে চেয়ে হাসিমুখে বলল,

—“আপু কেমন লাগছে?”

রোদেলা অহির হাত চেপে ধরে বলল,

—“অহি রে!আমি ঠিক আছি!অনেক ভালো লাগছে।তোর কি হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে?”

—“না আপু!সামান্য একটু রাস্তা!আপু তোমার খবর বলো!সাদিদ ভাইয়ের সাথে কেমন সময় কাটছে?”

রোদেলা লজ্জা মিশ্রিত চোখে একবার পেছন ঘুরে সাদিদের দিকে তাকালো।সাদিদ তখন তার দিকেই চেয়ে ছিল।চোখে চোখ পড়তে রোদেলা সামনে তাকাল।অহিকে বলল,

—“পিচ্চি!তুই কিভাবে বুঝতে পারলি যে আমার সেই স্বপুরুষ সাদিদ?”

—“আপু সেদিন রিসেপশনে সাদিদ ভাইকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যেতেই আমার মনে কিছুটা খটকা লাগে।সাদিদ ভাইয়ের চোখেও কিছু একটা ছিল।তোমাকে নিজের বুকে আগলে নেয়া দেখে আমার কেমন যেন লাগে।তারপর একটু খোঁজ খবর নেই!সব ইনফরমেশন মিলে যায়!তোমাকেও সাদিদ ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে কেমন ছটফট করো।ব্যস!বুঝে গেলাম।তারপর সাদিদ ভাইয়ের সাথে সরাসরি কথা বলে আরো সিউর হলাম।রোদ্দুর ভাইকেও সব জানালাম।বাকিটুকু রোদ্দুর ভাই সাহায্য করলো।”

রোদেলা হাসলো।মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলল,

—“তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো না।তোদের সাহায্য ফিরিয়ে দিবো।তোদের জন্য সারপ্রাইজ আছে!”

হাঁটতে হাঁটতে তারা বাড়িতে পৌঁছে গেল।পুরনো ভিটে।চারিদিকে প্রচুর গাছগাছালি আর ছনের বনে ঘেরাও করা অদ্ভুত সুন্দর বাড়ি।শাহিনুরকে দেখেই জামিল আর তার বৌ এগিয়ে এলো।বুকে জড়িয়ে নিল সবাইকে।প্রায় বছর দুই পর তারা গ্রামে ঘুরতে এসেছে।শাহিনুরের বাবার কোনো ছেলে ছিল না।ছোটবেলা থেকে ইয়াতিম জামালকে ছেলের নজরে দেখেছে।টুকটাক কাজ করে দিতো সে!

শাহিনুরের বাবা মা মারা যাওয়ার পর জামাল এ বাড়িতেই বউ বাচ্চা নিয়ে থেকে যায়।এখন তার একটা ছেলে পড়াশোনা করে বিদেশে চাকরি করে।প্রচুর টাকা রোজগার করে।জামাল তার ছোট দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখেই আছে!

শাহিনুর ঘুরে ঘুরে বাড়ি দেখলো।তার সঙ্গী হয়েছে কুটি!বাড়িতে দক্ষিণ দিকে একটা টিনের ঘর।মাঝখানে বেড়া দেয়া।একরুমে চকিতে চকচকে চাদর বিছানো।পাশের সামান্য ছোট রুমে প্রচুর খড়ি,লাকড়ি রাখা আছে।সাথে রান্নাঘর।গ্যাসেরও ব্যবস্থা আছে। পশ্চিম আর উত্তর দিক মিলে বিশাল বড় এক তলা বিল্ডিং!সবমিলিয়ে আটটা রুম।মাঝে মাঝে তারা গ্রামে আসে সেজন্য বেশি করে রুম করা হয়েছে।এর মধ্যে দুটো রুমের সাথে এটাচড্ বাথরুম দেখে শাহিনুর খুশি হলো।

—“বড় মা!এতগুলান মানুষ আটটা রুমে আটবো?”

শাহিনুর স্বাভাবিক ভাবে বলল,

—“না হলে তুই আর তোর বড় বাজান উঠানে ঘুমাবি!বাপ মেয়ে রাতের তারা দেখবি!”

—“আপনে কি যে কন না বড় মা!তারচেয়ে আপনে বাজানের লগে সারাডা রাত উঠানে মাদুর পাইতা জোসনা দেখবেন।”

—“আমার জোসনা দেখার বয়স আছে?চল গাধা!খাতা কলম নিয়ে বসতে হবে।অনেক কিছু লিস্ট করতে হবে।খাতা কলম এনেছিস তো?”

—“জে বড় মা!”

বাড়িতে মোটর আছে।দক্ষিণের টিউবওয়েলের সাথে মোটর সেট করে তার সাহায্যে মদিনা ট্রাংকে পানি উঠানো হয়।সেখান থেকে প্রতিটি ওয়াশরুমে পানির ব্যবস্থা করা আছে।শাহিনুর ফ্রেশ হলো সবার পরে।ওয়াশরুমে ঢুকে অবাক হলো।একদম ঝকঝকে।নাহ!কারো সমস্যা হবে না।সবার দিন ভালো কাটবে।

রাতের খাওয়ার পর সবাই গল্প করতে বসলো।রোদেলা মায়ের থেকে লুকিয়ে অহি আর রোদ্দুরকে মুক্ত করে বাইরে বের করে দিল।ছাদে টাদে গল্পগুজব করুক!

সাদিদ রুমের এক কোণায় প্লাস্টিকের চেয়ারে অসহায় ভাবে বসে আছে।একটুপর পর রোদেলার দিকে তাকাচ্ছে।রোদেলার মায়ের কড়া হুকুম এখানে জোড়ায় জোড়ায় থাকা যাবে না!সে ভেবেছিল গ্রামে এলে সময় ভালো কাটবে,এই সুযোগে হয়তো রোদেলার একটু কাছাকাছি ও যেতে পারবে।কিন্তু সমীকরণ পুরো উল্টে গেল।

ছিনজা ঘুমিয়ে পড়েছে।রোদেলা তাকে শুইয়ে দিয়ে মায়ের পাশে বসলো।রোদ্দুর আর অহি বাদে সবাই রুমে আছে।রোদেলা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

—“আমি এখন একটা কথা বলবো।কারো প্রেশার যেন হাই হয়ে না যায়।”

বেশ কয়েক জোড়া চোখ তারদিকে বড় বড় করে তাকালো।রোদেলা এক নজর সাদিদের দিকে চেয়ে আবার সামনে তাকালো।তারপর এক নিঃশেষে বলল,

—“আমি ভাবছি কি গরু দিয়ে তো সবাইকে খাওয়ানোই হবে।বড়সড় অনুষ্ঠান তো হবেই।এই উপলক্ষে রোদ্দুরের বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?”

শাহানা চাপা স্বরে বলল,

—“মেয়ে কই পাবি রে রোদু?”

—“মেয়ে আছে তো খালামণি।তোমার মেয়ে।অজান্তা অহি।’

সবার মধ্যে পিনপতন নিরবতা।হঠাৎ আশরাফ হোসেন বলল,

—“মা রোদেলা!রোদ্দুরের পছন্দের মেয়ে আছে।ও একটা মেয়েকে পছন্দ করে।মেয়ে নাকি হিরের টুকরো।কিঞ্চিৎ সমস্যা মেয়ের বাবাকে নিয়ে।মেয়ের বাবার মাথায় একটু সমস্যা আছে।”

রোদেলা আমতা আমতা করে বলল,

—“ঘটনা হয়েছে কি খালু!রোদ্দুর আপনার মেয়েকে ভালোবাসে!ওরা দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে।”

কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ব্যাপারটা ধাতস্থ করতে সবার।তারপর ঘরে ছোটখাটো একটা ভূমিকম্প ঘটে গেল।আশরাফ হোসেন বাজখাঁই গলায় বললো,

—“হলি কাউ!রোদ্দুর তাহলে বলেছে আমার নিউরনে সমস্যা আছে?আমি মেন্টাল?কিন্তু মন ভালো?কি সাংঘাতিক!হবু শ্বশুর মশাইকে পাগল বলে?শাহানা!আমার হাত ধরো?আমি চোখে অন্ধকার দেখছি!’

তার কথা শেষ হতে না হতে শাহিনুর ধমকে বলল,

—“কুটি আমার আইস ব্যাগ নিয়ে আয়।এক্ষুনি মাথার সিঁথি বরাবর চেপে ধর।”

কুটি মুখ ভেঁচকে বলল,

—“বড় মা!আমরা গেরামে আছি।আপনের আইস ব্যাগ ঢাকাত রইছে।কলপাড়ে চলেন।মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালমু!”

—————–

অন্ধকার রাত!মিটিমিটি তারা জ্বলছে আকাশে।গ্রামের শীতল হাওয়া চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকছে যেন।দূরে যতদূর চোখ যায় ঘন গাছপালা।গ্রাম্য মাটির অদ্ভুত মিষ্টি বুনো একটা গন্ধ নাকে লাগছে।রোদেলা আর সাদিদ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“তোমার মনে হয় না আমার শ্বাশুড়ি মা একটু বেশি বেশি করছে?পর্যাপ্ত রুম থাকতেও কেন আমাকে শ্বশুর আর খালুশ্বশুরের সাথে ঘুমাতে হবে?তাও আবার তাদের মাঝে?”

রোদেলা মুচকি হাসলো।তার মায়ের মাথায় যত্তসব অদ্ভুত অদ্ভুত বুদ্ধি।তিনি কুটিকে সাথে নিয়ে খাতা কলমে একটা লিস্ট করেছে।সুবিশাল সে লিস্ট।যে কয়েকদিন গ্রামে থাকা হয়, রাতের বেলা কে কার সাথে ঘুমাবে সে লিস্ট!লিস্টে সাদিদের নাম পড়েছে তার শ্বশুর দের সাথে। রোদ্দুর আর অপূর্বকে টিনের ঘরটাতে থাকতে বলা হয়েছে।কারণ পরশু দিন রোদ্দুর আর অহির বিয়ে।বিয়ের পাত-পাত্রীদের কাছাকাছি থাকতে দেয়া যাবে না।একজন উত্তর দিকে তো আরেকজন দক্ষিণ দিকে।তার মায়ের কথা সবাই মানতে বাধ্য!

কেমন সব ছেলেমানুষী করে তার মা।কে বলবে এই মেয়ে ছোটবেলায় টপ স্টুডেন্ট ছিল!তার বাবার সাথে দেখা হবার পর তাকে এমন ভালোবাসলো যে পড়াশোনা সব ছেড়ে দিল।তাকে হাজার চেষ্টা করেও পড়ানো যায় নি।রোদেলা হেসে বলল,

—“আমার মায়ের মধ্যে থেকে কিশোরী ভাবটা এখনো যায় নি।দেখলেন না হুট করে গরু জবাই করে গ্রামের মানুষ দের খাওয়াতে চাইলো।আমার বাবাও রাজি হয়ে গেল!”

—“তুমি কার সাথে ঘুমাবে?”

—“ছিনজা, আমি আর অহি!”

—“তাহলে শ্বাশুড়ি মা?”

—“মা কুটির সাথে ঘুমাবে।সাথে হয়তো ফজিলা খালা।কোনো এক অদ্ভুত কারণে মা আ কুটি সবসময় ঝগড়া করে।আবার দুজন কাছাকাছি ও থাকে।”

সাদিদ অসহায়ের মতো বলল,

—“গ্রামে কতদিন থাকতে হবে এভাবে?”

—“চার পাঁচদিন হয়তো বা!কেন আপনার ভালো লাগছে না?”

—“হা হা।অনেক ভালো লাগছে।”

সাদিদের অদ্ভুত হাসির শব্দে রোদেলা তার দিকে তাকাল। তারপর সামান্য একটু এগিয়ে যেতে সাদিদ সাবধান করে বলল,

—“ছাদে রেলিং নেই।এত কিনারে যাবে না!”

রোদেলার পরণে পাতলা শাড়ি।প্রচুর শীত লাগছে তার।অনেক্ক্ষণ হলো দুজন ছাদে।সে শাড়ির আঁচলে দু হাত ঢেকে বলল,

—“নিচে চলুন!আমার শীত লাগছে প্রচুর!”

সাদিদ রোদেলার দিকে তাকালো।আজ আকাশে অর্ধ বৃত্তের মতো চাঁদ।সেই চাঁদের আবছা আলো রোদেলার মুখে এসে পড়েছে।তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।চুলগুলো হাত খোঁপা করা।কিঞ্চিৎ আলো চুলে পড়েও চিকচিক করছে।তাকে কেমন আলোময়ী লাগছে।সে বার বার সাদিদের জীবনে ফিনিক আলো নিয়ে আসছে।

সাদিদ কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেল।তার অদ্ভুত এক ইচ্ছে জাগছে মনের কোণে।ইচ্ছে টাকে প্রাধান্য দিয়ে দু পা এগিয়ে গিয়ে রোদেলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিল নিজের বুকের মাঝে!

রোদেলা চমকে উঠলো।তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।হাত পা ঠকঠক করে কাঁপছে।তার আটাশটা বসন্তে প্রথম কোনো ছেলে এত কাছে।সেই ছেলেটা আর কেউ নয়! তার ঝাকড়া চুলের স্বপ্ন পুরুষ!

সাদিদ রোদদেলার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,

—“শীত একটু কমেছে?”

রোদেলা চোখ বন্ধ করে বলল,

—“আমায় ছাড়ুন।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না!প-পরে যাব কিন্তু! ”

রোদেলার শরীরের কাঁপুনি সাদিদ টের পেল।রোদেলা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।সে এক হাতে রোদেলাকে ঘুরিয়ে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল।রোদেলা দুহাতে সাদিদের শার্ট আকড়ে নিজের সম্পূর্ণ ভর তার উপর ছেড়ে দিল।

——————-

আজ অনুষ্ঠান!গরু জবাই করে যোগাড় যন্ত্র হবে।সাথে সন্ধ্যায় গ্রামের মানুষের আশীর্বাদে রোদ্দুর আর অহির বিয়েটা হবে।কিন্তু সূর্যের আলো ফুটার আগেই একটা অঘটন ঘটে গেল।অনুষ্ঠান উপলক্ষে জামাল দূরের গ্যাসের হাট থেকে সে গরুটা এনেছিল, জবাইর আগে পরীক্ষা করে দেখা গেছে গরুর পেটে বাচ্চা।পরে সেটা আর জবাই করা হয়নি।এখন জামাল ছুটছে নতুন গরুর খোঁজে!

শাহিনুর সিঁড়িতে গালে হাত রেখে বসে আছে।কুটি তার পাশে গিয়ে মিনতি স্বরে বলল,

—“বড় মা!মাথায় পানি ঢালমু?”

শাহিনুর চেঁচিয়ে বললো,

—“তোর মাথায় ঢাল যা!”

—“বড় মা!মন খারাপ করচেন ক্যা?এইডা তো শুভ!পীরসাবগো নেক নজর পড়ছে হিম দাদার জীবনে।সেজন্যি গরু পেরেগনেন্ট হইছে।গরুর সংসার হইবো।গরু মা হইবো!এইডা তো ভালা।”

শাহিনুরের মন খারাপ ভাব অনেকখানি কমে গেল।সত্যি তো!গরুটা মা হচ্ছে এটা তো সুখবর!তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

—“কুটি,এদিকে আয়!তোকে একটা চুমা দেই।”

—“লাগতো না বড় মা!বাজান ডাহে আপনেকে!”

কুটি চলে যেতেই জামাল বিশাল বড় এক ষাঁড় নিয়ে হাজির হলো।কসাইরা সোৎসাহে ছুরিতে ছুরি ঘঁষা দিল।

রোদ্দুর এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।সারা রাত শক্ত চৌকিতে তার ঘুম হয়নি।ভোর রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল।অহি সবার থেকে লুকিয়ে এক কাপ চা আর বাটিতে একটু নুডলস নিয়ে রোদ্দুরের রুমে ঢুকলো।

রোদ্দুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।মুখটা তেলে চিকচিক করছে।আজ তাদের বিয়ে।আজকের সকালটা অহি অন্য ভাবে শুরু করতে চাইলো।সে মুখটা নিচু করে রোদ্দুরের কপালে চুমু খেল!

সরে আসতে নিতে রোদ্দুর চোখ বন্ধ রেখেই তার হাত চেপে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,

—“আমি তোকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি রে অজান্তা!”

(চলবে)

গল্পের সমাপ্তিতে এসে গেছি।আজ রাত আটটায় শেষ পর্ব পোস্ট করবো।সাদিদ-রোদেলার বিয়েটা হুট করে হয়ে গেছে। সেজন্য কাউকে দাওয়াত করতে পারিনি।এবার আর ভুল করিনি।রোদ্দুর+অজান্তা (রোজান্তা) এর বিয়েতে আপনাদের সবাইকে দাওয়াত রইলো।আপনাদের সবার বাসায় বহু আগেই কুরিয়ার করে বিয়ের কার্ড পাঠানো হয়েছে।আজ বিকেলের মধ্যে রাজশাহীর বদলগাছি (যদিও এই নামে গ্রাম আছে কি না সন্দেহ) গ্রামে চলে আসবেন!আসবেন কিন্তু!! 🥰
(চলবে)

আজ একটু লেট হলো পোস্ট করতে।দুঃখীত খুবই!🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here