পিচ্চিদের সংসার পর্ব শেষ

#___পিচ্চিদের__সংসার_(৩য়/ শেষ পর্ব)
লেখক সালাহউদ্দিন তারিক

— “ তুমি এখন থেকে আর আমার স্কুলে যাবে না”, হঠাৎ করেই কথাটা বলে উঠে অপরিচিতা।

— “ কেন আমি তোমার স্কুলে গেলে সমস্যা টা কি?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রকিব।”

— “ সেটা তোমার শুনতে হবে না। আমি বলেছি, তো আর যাবে না।”
— “ তুমি বললেই হলো নাকি। আমাকে আগে বলো তুমি কি হইছে!”

— “এতো কিছু জানতে হবে না বল্লাম না।আগে তো এতো কিছু জানতে চাইতে না। বলতে তুমি যা বলেছ তাই হবে। এখন এতো কিছু জানতে চাইতেছ কেন?”

রকিব আর কিছু বলে না।রাগ করে চলে যায় অপরিচিতার সামনে থেকে। বাকিটা সময় যখনই অপরিচিতার সামনে পরে তখনই অন্য দিকে ফিরে চলে যায় রকিব। বিষয়টি অপরিচিতার নজর এড়াতে পারে না। অপরিচিতা রাতে ঘুমানোর সময়
দেখে রকিব বাম কাত হয়ে শুয়ে আছে। অথচ সে সব সময় ডান কাত হয়ে অপরিচিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। অপরিচিতা তার সামনের দিকে শুতেই অন্য দিকে ঘুরে যায় রকিব। অপরিচিতা আবার তার সামনের দিকে শুতেই সে আবার ঘুরে যায়। অপরিচিতা গালে হাত দিয়ে রকিবকে নিজের দিকে ফিরাতে চায় কিন্তু রকিব তার হাত সরিয়ে দেয়।

অপরিচিতা আবার ও রকিবকে নিজের দিকে ফিরাইতে চাইলেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে সোফায় শুয়ে পরে। অপরিচিতাও মনে কষ্ট নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করেই অফিসে চলে যায় রকিব।অপরিচিতার সাথে একটা বার কথা ও বলে না সে। অপরিচিতা বার বার ফোন দেয় কিন্তু তার ফোন কেটে দেয়। অপরিচিতা ও খেয়ে-দেয়ে একা একাই স্কুলে চলে যায়।

অপরিচিতার স্কুল ছুটি হয়ে যায়। সে বাইরে দাড়িয়ে থাকে কেননা স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়েই যায় রকিব। কিন্তু ১৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরেও আসে না সে। অপরিচিতা বারবার হাত ঘড়ি দেখে। সময় চলে যায় ৩০ মিনিট তবুও আসে না রকিব। হয়তোবা রাগ করেছে তাই আগে আগে চলে গেছে যাতে তাকে নিয়ে যেতে না হয়। ঐ দিকে অপরিচিতা বাড়ি থেকে যে পরিমাণ টাকা নিয়ে বের হয় হয়েছে তা দিয়ে বাসায় পৌঁছানো ও সম্ভব নয়।

আর এই শেষ বেলায় কি হেঁটে যাওয়া সম্ভব! এই রাস্তায় কখনো হাটে নি অপরিচিতা। সব সময় গাড়িতে বা বাইকে রকিবের সাথে এসেছে। ৪০ মিনিট হয়ে গেছে তবুও আসে না রকিব। এই মুহুর্তে কাঁদতে ইচ্ছে করে তার। একটুকুন কথার জন্য এমন রাগ করবে রকিব যে ওকে নিতেও আসল না। সে কি বাড়িতে গিয়ে আমাকে না দেখে একটা বারের জন্য ও ভাবেনি যে আমি পৌঁছাতে পারব কিনা। এসব ভেবে ভেবে চোখের কোনায় কয়েক ফোঁটা জলের দেখা দেয়। চোখ মুছে হাঁটতে শুরু করে অপরিচিতা। অনুমানের উপরে পথ চলতে শুরু করে সে। একটা স্টেশন যেতে যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যায় প্রায়।টাকা গুনে দেখে যে এই স্টেশন হতে হয়ত এই টাকাতেই যাওয়া যাবে। গাড়িতে উঠে রওনা হয় বাড়িতে। অর্ধেক রাস্তা যেতেই মাগরিবের আজান এর ধ্বনি আসতে শুরু করে।
.
.
রকিব আপন মনে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিল। আজান হতেই নামাযের জন্য রওনা হয়। তখনই পিছনে থেকে তার মা ডাক দেয় তাকে, “ রকিব বাবা বৌমা এখনও তো এলো না। তুই এসেছিস সেই কখন।এখন মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে এখনো যে এল না!”

— “ কি বলতেছ আম্মু ও এখন ও আসে নাই?”
— “ না তো এখনো এল না।কেন তুই দেখিস নাই যে বৌমা আসে নাই?”

— “আমি তো কাজ করতেছিলাম।ভাবলাম ও হয়তো তোমার সাথে।”
“ এখন কথা না বলে যা দেখতো কোন সমস্যা হলো নাকি।”

রকিব আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।
অপরিচিতা ততক্ষণে এলাকার বাজারে চলে আসে। গাড়ি থেকে নেমে ২০ টাকা ভাড়া দিতেই ড্রাইভার বলে ভাড়া ৩০ টাকা। অপরিচিতা বলে যে আসলে তার কাছে আর টাকা নেই। ড্রাইভার কিছুতেই মানতে চায় না। বলে টাকা নেই তো গাড়িতে উঠলে কেন। অপরিচিতার তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে আজ রকিবের জন্য এভাবে অপমান হতে হচ্ছে তাকে। রকিবের উপরে রাগ জমে যায় তার। হাত ঘড়িটা তাকে রকিবই দিয়েছিল। রকিবের দেয়া ১ম উপহার এটা। কিন্তু এখন ঝামেলায় পরেছে যখন উদ্ধার তো হতেই হবে। হাত ঘড়িটা খুলে ড্রাইভারকে দিয়ে বলে, “এইটা নিয়ে নিন।এর দাম ৪০০ টাকা হবে। ২য় হেন্ড হিসেবে আপনি ২০০ দিন।আপনার ১০ টাকা রেখে ১৯০ টাকা ফেরত দিন।”
অপরিচিতার এই কান্ড দেখে ড্রাইভার আরেকটু রাগে কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই বিষয় টা খেয়াল করে গাড়ির অপর এক যাত্রী। সে ড্রাইভার কে বলে, “ গাড়ি ছাড়েন, বাকি টাকাটা আমি দিয়ে দিবনে। আপু আপনি যান সমস্যা তো মানুষের ই হয়। অপরিচিতা হয়ত অন্য সময় এই ভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নিতো না। কিন্তু এখন তার কিছুই করার নেই তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীর কথায় সায় দিল।

বাজার থেকে বাড়ি ৪-৫ মিনিটের রাস্তা। হাঁটা শুরু করে দেয় সে। রকিব ও বাইক নিয়ে আসতেছে। হেড লাইটের আলোতে অপরিচিতার শরীরটা পারতেই হাইড্রলিক্স ব্রেক করে সে। অপরিচিতা সামনে আসতেই বাইকে উঠতে বলে। কিন্তু রাগে ফুলতে ফুলতে না করে জোরে হাটতে থাকে সে। রকিব কোন ভাবেই অপরিচিতাকে বাইকে উঠাতে পারে না। অপরিচিতা হেটেই বাড়িতে চলে আসে।

রকিবও নামাজ শেষ করে বাড়িতে আসে। সন্ধ্যার পর থেকে অনেকবার রকিন দেরী হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে কিন্তু অপরিচিতা কোন উত্তর দেয় না।

রাতে অপরিচিতা সবার সাথে খেতে না আসায় রকিব খাবার নিয়ে ঘরে যায়। অপরিচিতাকে খেতে চায় না। শেষে রকিব নিজ হাতে খাইয়ে দিতে নেয়। অপরিচিতা ধাক্কা মেরে খাবার ফেলে দেয়।
রবিকের বাবা বিষয়টি একটু খেয়াল করতেই ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে, “বৌমা কি হয়েছে? ”

— “আমি স্কুল ছুটি হওয়ার পর থেকে পনে একঘন্টা( ৪৫ মিনিট) রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি।আর ও আমাকে না নিয়েই বাড়িতে চলে আসে। আমার কাছে গাড়ি ভাড়া ছিল না তাই কতোটুকু হেঁটে আসতে হয়েছে।তারপর গাড়িতে উঠে বাজারে আসি। গাড়ি ভাড়া দেয়ার পরে ড্রাইভার বলে আরো দশ টাকা দিতে হবে। আমি যখন বলি যে আমার কাছে আর টাকা নেই, তখন আমাকে অপমান করে এতো এতো গুলো কথা শোনায়।” বলেই কাঁদতে থাকে।

রকিবকে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে তার বাবা। বাইরে এনেই একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। অতঃপর বলে,
— “ তুই কোন সাহসে বৌমাকে না নিয়ে চলে আসছস। বৌমা কি এই রাস্তা চিনে নাকি ঠিক মতো। আরেকদিন যদি কোন দিন শুনেছি যে এমন হয়েছে তবে দেখবি খালি কি অবস্থা করি।”

রকিব থাপ্পড় খেয়ে হা করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। আর ভাবতে থাকে এটা সে কি করল। ও যদি রাস্তা না চিনে অন্য দিকে চলে যেত তবে! রকিব চোখের কোনায়ও জল উঁকি দেয়। রকিব ঘরে গিয়ে দেখে অপরিচিতা তখনও কাঁদছে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে অপরিচিতার কাছে যায় সে। অপরিচিতা তখনো চোখ ডলতে ডলতে কাঁদতে ব্যস্ত। রকিব পিছন থেকে অপরিচিতা কে জড়িয়ে ধরে।

অপরিচিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। রকিব তাকে আবার নিজের দিকে দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে সরি সরি বলতে থাকে। তবুও অপরিচিতা শান্ত হয়না রকিবের বুকে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। রকিবের হঠাৎ করেই অপরিচিতার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।

হঠাৎ এমন আক্রমণে অপরিচিতা নিশ্চুপ হয়ে যায়। রকিবের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে অঝোর। আর বলতে থাকে, “ তুমি কি করে পারলে এই কাজটা করতে আমি যদি ভুলে অন্য রাস্তায় চলে যেতাম। রাতের অন্ধকারে কোন সমস্যায় পরতাম।”

— “ আমি কি করব তবে, কালকে ঐ কথা বললে কেন তবে। তাই তো যাইনি আমি।”
— “ আমি বলেছি ঠিক আছে। তুমি তো আর বলনি যে তুমি সত্যি সত্যিই যাবে না।আর তুমি যে যাবে না তবে কত টাকা ভাড়া দরকার হয় তাও তো দিয়ে যাওনি আর কোন কোন স্টেশন থেকে কোন গাড়িতে উঠব তাওতো আর বলে দাওনি।”

অপরিচিতার প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারে না রকিব। অপরিচিতার কপালে আলতোভাবে একটা চুমু দিয়ে আবারও সরি বলে বুকে জড়িয়ে নেয়। আর বলে, “ এখন বলতো আমাকে যেতে মানা করেছিলে কেন?”

— “ তুমি আমাকে দিয়ে আসো। আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো এজন্য অনেকে অনেক কথা বলে।
— “ তুমি তাদের বলে দিবে যে আমি তোমার স্বামী হই। শেষ আর কিছু বলতে পারবে না।

— “ আমি কাউকে বিয়ের কথা বলিনি। বললে সবাই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে। স্যাররাও বলবে এই বয়সে বিয়ে দিয়েছে বাপ মার কোন কান্ড জ্ঞান নাই। মূর্খ পরিবার। এই জন্যই বলতে পারি না।”
— “ তোমাকে যারা বাজে কথা বলে তাদেরকে বলে দিবে যে আমি কি হই। এর পরে তারা যদি কিছু বলে তবে বলুক।আর স্যারেরা যদি বিয়ে নিয়ে কোন কথা বলে তবে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিবে।”

— “ প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিলে কি হবে। উনিও যদি বলে তবে কি করব?”
— “ প্রিন্সিপাল যদি কিছু বলে তবে আমার পরিচয় বলবে তারপরও যদি কিছু বলার সাহস করে তবে আমাকে জানাবে।”

— “ আরেকটা কথা তোমাকে বলিনি যদি রাগ করো তাই। উপরের ক্লাসের একটা ছেলে কয়দিন ধরেই ডিস্টার্ব করছে। ও নাকি ওখানকার মেম্বার এর ছেলে আর খুব বাজে ছেলে তাই ভয়ে কিছু বলতে পারি না।”
— “ ও বুঝেছি কি নাম ছেলেটার রিহাম না? ”

— “ হুম রিহাম, কিন্তু তুমি কি করে চিন?”
“ আমি তো ঐ স্কুলের পাশের কলেজেই পড়েছি তাই। ওকে শুধু একবার বলো যে তোমার বিয়ে হয়েগেছে আর তোমার স্বামীর নাম রকিব। এত টুকুন বললেই হবে দেখবে ভাবী ভাবী বলে সম্মান করবে।”

— “ কেন উনি কি তোমাকে চিনে নাকি?”
— “ চিনে না খালি বেশ ভালো করেই চিনে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ থাকতে একবার আমার কলেজে এসে ফাজলামো করতেছিল। ফেল করার কারনে এখন ১০ এ পরে নয়ত আরো উপরের ক্লাসে পড়ত। তা ঐ দিন আচ্ছা মতো দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই দেখলে সালাম দিয়ে চলে।”
— “ ওকে দেখা যাবে কত টুকু।”

এভাবেই ভুল বুঝাবুঝি দুষ্টুমি আর ভালোবাসায় রকিব ও অপরিচিতার সংসার চলতে থাকে। একদিন রকিব বলে, “আজকে আমার বেতন বেড়েছে কে কি চাও বলে ফেল।”

— “ভাইয়া আমার জন্য একটা রংতুলি আনবে”, রকিবের কথা শেষ হতেই লাফিয়ে বলে তার ছোট বোন।

— “ আমার কিছু লাগবে না এখন। তারপরেও তুই যদি দেস কিছু তবে ইচ্ছে মতো দিস।” বলে রকিবের বাবা।
— “ আমার জন্য তেমন কিছু লাগবে না। তবে তোর যদি মন চায় তবে একটা শাড়ি দিতে পারিস সামনের ঈদের জন্য।” বলল রকিবের মা।

অপরিচিতাকে চুপ দেখে বলে,
— “তোমার কি লাগবে বলে ফেল ঝটপট।”
— “ ঝটপট কেন বলব আমি এখন বলবই না।”
— “ তা কখন বলবে?”
— “ রাতে বলব।”
— “ আচ্ছা ঠিক আছে তবে।”

রাতের আঁধারে ছাঁদে বসে আছে দুজন তখন হঠাৎ করে অপরিচিতা বলে, “ আমি যা চাই তা দিবে তো?”
— “ আগে বলো তারপর বলছি।”
— “ উহু আগে কথা দিতে হবে।”
— “ যদি সাধ্যের মধ্যে হয় তবে দিব।”
“ আমার একটা বাবু লাগবে, কি দিবে তো?

— “ কি? এই কথা কে শিখিয়েছে হুম? তুমি নিজেই তো এখনো বাচ্চা।”
— “আমি জানতাম তো এই কথাই বলবে। আমি বাচ্চা হুম আমি বাচ্চা? আমার ক্লাসমেট একটার বাবু আছে কি সুন্দর কিউট একটা মেয়ে ওর। আমারও তেমন একটা বাবু চাই।”

— “ দেখ একটা কথা বললেই হয় না তুমি আরেকটু বড় হও তারপর।মেট্রিক পরীক্ষা দেও আগে।”
— “ পরীক্ষার এখনো ১৪ মাস বাকি আমি এতোদিন কি করব তবে।আমার এখনই চাই।”

— “ আরে বাবু কি বাজারে পাওয়া যায় নাকি যে এখুনি এনে দিব। বল্লাম তো আগে একটু বড় হও তারপর।”
— “না আমার এই বছরই একটা বাবু চাই। এই তুমি চাও না আমাদের একটা বাবু থাকুক। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করবে আমাকে মা বলবে তোমাকে আব্বু বলবে। সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় এসে ওর সাথে খেলবে।”

— “ দেখো আমি বুঝি ব্যাপার টা কিন্তু একটু বুঝার চেষ্টা করো।তুমি এখন নিয়মিত ক্লাসে যাও।তখন কি আর যেতে পারবে। আর এখন যদি বাবু নেই দেখা যাবে তোমার পরীক্ষার সময় বাবু একদম ছোট থাকবে তখন ওকে কে দেখবে বল।
— “কে দেখবে আবার আল্লাহ দেখবে।”
— “ আল্লাহ তো সবাইকেই দেখে কিন্তু বাবুর কথাটা ভিন্ন বাবুকে নিয়ে তুমি পরীক্ষা দিবে কি করে।”

— “ পরীক্ষা দিব কিভাবে আর।সবাই যেভাবে দেয় সেভাবেই।আর দরকার পরলে পরীক্ষা দিব না তবুও আমার বাবু চাই ই চাই।”
— “ পরীক্ষা দিবে না মানে।”
— “ দিব না মানে দিব না যদি বেশিই সমস্যা হয় তবে দিব না। আমি তো আর চাকরী করার জন্য পড়িতেছি না।পড়িতেছি শিখার জন্য।”

— “ তোমার হঠাৎ কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে আমি বুঝতেছি নাতো কিছু। হঠাৎ এই রকম বাবু বাবু করতেছ কেন?”
— “কিছু ই হয়নি আমার। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৪-৫ মাস হয়ে গেছে। যদি এখন বাবু না নেই তাতে যদি আল্লাহ রাগ করেন আর আমাদের আর বাবু না হয় তখন কি হবে? দেখ না কত মানুষ বাবু নিতে চায় না পরে নিবে নিবে বলে। পরে দেখা যায় ওদের আর বাবু হয়ই না। আমি কিছু জানি না আর তুমি আর না করো না প্লিজ আমি চাই যে আল্লাহ তায়ালা উনার খুশিতে আমাদের একটা নেক সন্তান দেন।”

— “ দেখো এটা একটা বাচ্চামো। এটা এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তোমার বয়স সবে মাত্র ১৭ বছর এর মধ্যেই! প্লিজ আমি চাইনা যে তুমি অতিরিক্ত কষ্ট পাও। আরেকটু বড় হও।
— “ আমি অতো কিছু বুঝি না। বাবু হওয়ার আগে আমার বয়স ১৮ হয়েই যাবে। আর তুমি এতো টেনশন করছো কেন! তুমি আমার পাশে থাকলে আমি যে বাঁধার সামনা করতে পারব। শুধু তুমি একটু ভরসা দিও।”

— “ তুমি ভেবে বলছো তো। ভালো করে চিন্তা করো।”
— “আমি আর কিছু চিন্তা করতে চাইনা। আমি সব কিছু বুঝেই বলেছি। অনেক ভালোবাসি তোমাকে আজ প্রথম কোন কিছু চাইছি তুমি না করোনা প্লিজ।”

রকিব অপরিচিতাকে পাঁজা কোলে উঠিয়ে নিয়ে বলে, “ কি এখানেই থাকবে না ঘরে যাবে।”
— “ জানিনা দুষ্টু একটা নামাও কোল থেকে।”
— “ নামাবোনা এই ভাবেই নিয়ে যাই।”
— “ লাগবে না নামাও শেষে আবার ফেলে দিয়ে আমার কোমড় ভাঙবে।”

রকিব রাগ করে ধুত বলে নামিয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করে। অপরিচিতা ও পিছুপিছু যায়।
— “ ওলে বাবা লে মাহারাজের রাগ দেখ। কি আমার পালোয়ান আসছেরে একথা বলায় রাগকরেছে। ”
— “ আমার শক্তি নেই তাই না তবে রে আজ তোমার খবর আছে।”
— “এই এই ছাড়ো ছাড়ো একদম কোলে নিবে না আমাকে। তোমার উপরে কোন বিশ্বাস নেই।”
— “ একটু আগেই না বললে আমি পাশে থাকলে সব করতে পারবে এখন কি হলো!
— “ ওটা তো আবেগে বলেছি। আচ্ছা ঠিক আছে রাগ করতে হবে না। এবার চলো।
.
.
.
কয়মাস পরে অপরিচিতার অর্ধবার্ষিক
পরীক্ষা চলছে। বিকালে পরীক্ষা শেষ হবার পরে রকিব তাকে নিয়ে আসতে যায়। দেখে অপরিচিতার মুখ কেমন যেন শুকনা শুকনা লাগছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। রকিব কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই মুখ চিপে হাসতে থাকে। বাড়িতে আসার পরে আবার জিজ্ঞেস করে কিন্তু কিছুই বলে না অপরিচিতা।
রাতে ঘুমানোর আগে অপরিচিতাকে সাজুগুজু করতে দেখে রকিব প্রশ্ন করে, “ এই কি হয়েছে তোমার বলো তো দেখি তখন জিজ্ঞেস করলাম শুধু হাসলে এখন আবার রাতের বেলায় সাজুগুজু করতেছ?”

— “ একটা খুশির খবর আছে বুঝেছেন মহারাজ!”
— “ কি এমন খুশির খবর শুনি একটু।”
— “ এভাবে তো বলা যাবে না। কাছে আসো আরেকটু কানে কানে বলি।”
— “হুম বলো এবার।”
— “ আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন মহারাজ।”
— “সত্যি?”
— “হুম সত্যি এই মাসে একদিন ও অসুস্থ হইনি। আবার আজকে পরীক্ষা দিই সময় খারাপ লাগছিল তাই আগে আগে খাতা দিয়ে দিই পরে বের হতেই বমি হইছে। বাড়িতে এসে চেক করতেই পজিটিভ রেজাল্ট আসছে।”

রকিব আর কিছু না বলে অপরিচিতাকে কোলে তুলে নেয়। অপরিচিতাও রকিবের গলা জড়িয়ে বুকের সাথে লেপ্টে যায়। অপরিচিতার কানে কানে বলে, “খুব ভালোবাসি তোমায়।খুব ভালোবাসি।”
অপরিচিতা ও বলে, “ আমিও ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি। এবার আস্তে আস্তে আমাকে নামিয়ে দাও এখন আমি একা নই। আমরা দু’জন, তুমি ওজন রাখতে পারবে না।”

কথা শেষ না হতেই রকিব তাকে নামিয়ে দিয়ে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার কান্ড দেখে অপরিচিতা হাসতে হাসতে বলে, “ইহ্, নিজেকে খুব বুঝদার ভাবে। আর আমি নাকি অবুঝের মতো কথা বলি। একটা কথা বল্লাম দুষ্টমি করে আর উনি গাল ফুলিয়ে আছে।”

রকিব কেবল বোকার মতো হা করে তাকিয়ে থাকে। এতে অপরিচিতা আবারও বলে, ‘ কি হয়েছে! কোলে নাও আমাকে।’

রকিব মুচকি হেসে বলে, ‘তুমি এমন কেন?’
— ‘ আমি আবার কি করলাম।’
— ‘ আমি কত একটা রোমান্টিক মুডে ছিলাম আর তুমি একটা কথা বলে সব ঝমেলা পাকিয়ে দিলে।’
— ‘ এহ্ আসছে রোমান্টিক মুড ওয়ালা। কথার মানে বুঝে না আবার কথা কয়। ধুর এতো কষ্ট করে সাজলাম আর সব ভেস্তে দিলে। ‘
অপরিচিতা একটা কৃত্রিম রাগ দেখাতেই। রকিব তার গাল দু’টো চেপে ধরে বলে, “আমার না বিশ্বাসই হতে চাইছে না। সত্যি আমি বাবা হবো!’
অপরিচিতা রকিবের বুকে মাথা রেখে বলে, “সত্যিই, আমারও যেন বিশ্বাস হতে চায় না। এই আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে। কোলে করে ছাঁদে নিয়ে যাবে! সেই দিনের মতো যেদিন আমরা প্রথম জোছনা স্নান করেছিলাম। তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমি পুরোটা জোছনা উপভোগ করতে চাই।’

রকিব কিছুই বলতে পারে না। শুধু প্রেয়শীকে শক্ত করে জাড়িয়ে ধরে বলে।
” ভালোবাসি প্রিয়। তোমার সকল আবদার পূরণ করা হবে।”
.
.
.
কয় মাস ধরে অপরিচিতা স্কুলে যায় না। সে বুঝতে পারে ছোট্ট শিশুটা ভিতর থেকে তার সুস্থতার জানান দিচ্ছে । একদিন রাতে হঠাৎ প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকে অপরিচিতা। রকিবের মা বারবার অপরিচিতাকে সাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু রকিব কোন ভরসা পায় না। সে তাড়াতাড়ি গাড়ির ব্যবস্থা করে অপরিচিতাকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ এবং হাসাপাতালের ডাক্তার অন্য কোন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে তাই আসতে দেরী হবে বলে বসিয়ে রাখতে চায়। রকিবের মন সায় দেয় না। তাই এম্বুলেন্স ঠিক করে তাড়াতাড়ি ঢাকাতে নিয়ে যায়।

আল্লার অশেষ রহমতে নরমাল ভাবেই ডেলিভারি হয় অপরিচিতার। একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় অপরিচিতা। কাঁপা কাঁপা হাতে বাবুকে কোলে নেয় রকিব। বাবুর দিকে তাকাতেই খুশিতে অশ্রু ঝরে তার।

বাবুকে নিজের মায়ের কোলে দিয়ে রুমে গিয়ে অপরিচিতার পাশে বসে রকিব। অপরিচিতার চেহারায় তখনও ক্লান্তির ছাপ। স্ত্রীর হাতটা মুঠোয় নিয়ে কপালে লম্বা একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয় সে। ভালোলাগায় চোখ বুঁজে আসে অপরিচিতার। মাথায় হাত বুলিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে বলে রকিব। স্বামীর হাতের তালুতে মাথা রেখে চুপটি করে শুয়ে থাকে অপরিচিতা। স্ত্রীর ঘুমন্ত নিস্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে তার মাঝে। আবারও একটা চুমু দিয়ে দেয় কপালে। একটুখানি নড়েচড়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে অপরিচিতা। রকিব তার হাতটা সরিয়ে নেয় না। চুপ করে বসে থাকে প্রেয়শীর পাশে। আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার ক্লান্ত চেহারার দিকে।

মনে মনে একবার আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়। আর একবার নিজের বাবাকে। নিজেই নিজেকে বলতে থাকে, ‘দেখ এমন একজন বাবা কয় জনের কপালে থাকে। যে কিনা তোকে এতো ছোট বয়সেই এমন সুন্দর একটা সংসার উপহার দিয়েছে।’

সন্ধ্যার সময়ে বাবুর একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড দেয় সে। ক্যাপশনে লিখে দেয় ধন্যবাদ বাবা আমাকে এতো তাড়াতাড়ি দ্বায়িত্বশীল করার জন্য। দোয়া করো যেন আমিও তোমার মতোই আদর্শ বাবা হতে পারি।

#__সমাপ্ত____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here