#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৬
আজকাল আরসাল খুব ব্যস্ত থাকে, সবসময় কাজ আর কাজ করতেই থাকে। এখন তো প্রাইভেট পড়ানো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। আলিজার এই বিষয়গুলো এখন খারাপ লাগা শুরু হয়েছে। তার সময় কাটতে চায়না।
রাতে আরসাল বসে বসে ফোন ঘাটাঘাটি করছে আর আলিজা তার দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আরসাল খেয়াল করে আলিজা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” কি হয়েছে?(আরসাল)
” এটা তো তোমাকে আমার জিজ্ঞেস করা উচিৎ।
” কেন?
” ” ইদানীং তোমার ব্যাপার আমার ঠিক লাগছে না। কেমন যেন ইগনোর করছো বোধ হয় আমাকে।
” তুমি আমার ঘরের বউ, তোমাকে যেন আমি ইগনোর করতে যাব?
” সেটা আমি কি জানি, আমার যা মনে হলো আমি তাই বললাম।
” মনে হলেই কি সব ঠিক হয় নাকি? তুমি জানো আমি এখন ব্যস্ত থাকছি কয়েকটা ব্যাচ পড়াতে হয়।
” এত পড়াতে কে বলেছে তোমায়?
” ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হচ্ছে।
” ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমান নষ্ট করছো।
” বর্তমানে যদি এগুলো না করি তাহলে তো ভবিষ্যৎ এগুলো করতে পারব না। তখন তো বয়স হয়ে যাবে তখন বাসায় বসে থাকতে হবে।
” তোমার সাথে কথা বলাই ভুল, তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না।
” তোমার কি হয়েছে সেটা বলো তো!
” আমার কিছু হয়নি।
” সত্যিই কিছু হয়নি?
” হ্যাঁ কিছু হয়নি।
” তাহলে মুখ এমন করে আছো কেন শুনি?
” কেমন করে আছি?
” এই যে বাংলার পাঁচের মত!
” তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছো আরসাল।
” আরে বাবা কেমন চেঞ্জ হয়েছি বলবে তো নাকি?
” আমাকে কেমন সময়ই দাও না, অবহেলা করছো।
” তুমি কি প্রেমিকা যে এসব বলতে পারছো?
” বউকে প্রেমিকার মতই ট্রিট করা উচিৎ। এখন ছেলেরা প্রেমিকা নিয়েই বেশি ভাবে, বিয়ে করার পর তো পেয়েই গিয়েছে ভেবে আর কদর করে না।
” অনেক অভিমান দেখছি আমার বউয়ের।
” না আমার অভিমান কারও দেখতে হবে না, আমার কোন অভিমানই নেই।
” কে দেখবে শুনি?
” কারও দেখতে হবে না।
আরসাল আর আলিজার মান অভিমানের পর্ব চলছিল এমন সময় আরসাল তার মায়ের গলা শুনতে পায়। দুজন দুজনের দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় মা চিৎকার কেন করছে! আরসাল বিছানা ছেড়ে উঠে মায়ের রুমের দিকে দৌড় দেয়, আলিজাও পিছন পিছন চলে যায়।
রুমে গিয়ে দেখে নওরীন ওখানেই আছে, সে কান্না করছে।
” কি হয়েছে আম্মি?
” তোর বাবা…
এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে মোহনা। আরসালকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছেন তিনি। আরসাল কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে! কিন্তু তার তো জানতে হবে কি হয়েছে! মিসেস মোহনা কান্না করে যাচ্ছে আর সে তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তিনি কান্না থামাচ্ছেন না। আরসাল এবার নওরীনের দিকে তাকায়।
” এই নওরীন কি হয়েছে রে?
” ভাইয়া, বাবা…
” বলবি তো নাকি? কি হয়েছে বাবার?
” বাবার এক্সি*’ডেন্ট হয়েছে, হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়েছিল।
” কি!
” হ্যাঁ ভাইয়া বাবার অবস্থা খুব খারাপ।
” সবকিছু তো ঠিক ছিল আরসাল, হঠাৎ কি হয়ে গেল বল তো? তোর বাবার কিছু হলে আমি কি করব?
” আম্মি চিন্তা করো না বাবার কিছু হবে না দেখে নিও।(আলিজা)
” হ্যাঁ আম্মি বাবার কিছু হবে না, তুমি চিন্তা করো না।
” ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলো না প্লিজ।
” হ্যাঁ, কোন হাসপাতালে, চল তাড়াতাড়ি।
” আরসাল তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো প্লিজ, এই বাবাকে হারাতে চাই না প্লিজ।(আলিজা)
” কিছু হবে না বাবার, চিন্তা করো না। তুমি আম্মিকে নিয়ে বের হও প্লিজ আমি গাড়ি বের করছি।
” ঠিক আছে।
আরসাল আর দেরি না করে বাহিরে চলে যায়। বাসা থেকে সবাই বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
*******
সবাই বাহিরে বসে আছে, মি. নেওয়াজের চিকিৎসা চলছে ভেতরে আর এদিকে পরিবারের মানুষ চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নার্স এসে জানায় এ পজেটিভ র*ক্ত দুই ব্যাগ লাগবে কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে সেটা নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা প্রয়োজন নইলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। আরসাল জানে তাদের মধ্যে কারও এই গ্রুপের রক্ত নেই। তাহলে কি তার বাবা….
এমন সময় আলিজা উঠে দাঁড়ায়, আরসাল কিছু বলবে ঠিক তখনই আলিজা বলে ওঠে-
” আরসাল তুমি তাড়াতাড়ি এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা
করো আমি যাচ্ছি এক ব্যাগ আমি দিচ্ছি।
” তোমার এ পজেটিভ?
” হ্যাঁ, তুমি কথা বাড়িও না।
” তুমি…..
” আরসাল যাও প্লিজ আর দেরি করো না।
আলিজা নার্সের সাথে ভেতরে চলে যায়। আরসাল সব ভাবনা পিছনে ফেলে রেখে একজনকে কল দেয়। কল দেওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ হয়ে গেল।
“হ্যাঁ আরসাল বলুন।
” আপনার র*’ক্তের গ্রুপ কোনটা?
” এ পজেটিভ কেন কিছু হয়েছে?
” আপনি প্লিজ হাসপাতলে চলে আসুন।
” কি হয়েছে আরসাল?
” আমার বাবার বড় এক্সি*’ডেন্ট হয়েছে ।
” কি বলছেন?!
” হ্যাঁ।
” আমি আপনাকে বলেছিলাম আরসাল।
” আমি ভাবতে পারিনি আমার বাবা…..
” আপনাকে আমি সব জানিয়েছি আরসাল, এত কিছু ঘটে গিয়েছে সেখানে আপনার বাবা কিছুই না।
” আমার এসব ভাবতেই শরীর খারাপ করছে। আমার বাবার কিছু হলে আমি একদম ছাড়বো না ওকে।
” আপনার বাবার কি অবস্থা এখন?
” বাবার অবস্থা খুব খারাপ, র’*ক্ত লাগবে দুই ব্যাগ খুব র*ক্ত*’ক্ষরণ হয়েছে। আলিজা নিজে এক ব্যাগ দিতে গেল তখন আপনার কথা মাথায় এলো তাই আপনাকে কল দিলাম। আপনি প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসুন।
” আমি আপনার ওখানে আসলে কোন সমস্যা হতে পারে।
” কোন সমস্যা হবে না।
” আপনি এক কাজ করুন, আমি হাসপাতালে আসছি। হাসপাতালেই এক জায়গায় রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমার রক্ত দেওয়া হয়ে গেলে আপনি নিয়ে যাবেন। আমি আপনার পরিবারের সামনে গেলে কি হবে ভাবতে পারছেন!
” আচ্ছা আপনি আসুন আমি ব্যবস্থা করছি। এসে কল দিবেন আমাকে। আমি ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।
আরসাল কান থেকে ফোন নামাতেই দেখে কেবিন থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। আরসাল তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার ডাক্তারের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।
” কি হয়েছে ডাক্তার আঙ্কেল বাবা ঠিক আছেন তো?
” আরসাল….
” বলুন আঙ্কেল প্লিজ।
” আরসাল তোমার বাবা আর নেই, আমরা কিছুই করতে পারিনি তার জন্য। তিনি আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই।
কথা শেষ হতে না হতেই আরসালের মা আর নওরিন চিৎকার দিয়ে কান্না করে ওঠে। আরসাল ঠায় দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে দুই পা পিছিয়ে আসে। অন্যদিকে আলিজা কান্না করতে করতে বের হয়ে আসে। নওরীন দৌড়ে গিয়ে আলিজাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেই আছে।
” তুমি নিজের র*’ক্ত দিয়েও আমার বাবাকে বাঁচাতে পারলে না বউমণি। আমার বাবা কেন চলে গেল বলো তো! বাবার কিসের এত তাড়া ছিল আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার?
” আমি তো দ্বিতীয়বার বাবা হারা হয়ে গেলাম নওরিন। আমার মত অসহায় আর কে আছে বলো?
” থাকবি তোরা একটু! একদম কান্নাকাটি করবি না। আমার বাবার কিছু হয়নি বাবার কিছু হতেই পারে না । আঙ্কেল প্লিজ বলুন না বাবার কিছু হয়নি। আমার বাবার কিছু হতে পারে না।
” নিজেকে সামলে রাখো আরসাল। নিজেকে শক্ত রাখো তোমাকে এবার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে তুমি তোমার বাবার একমাত্র ছেলে তোমাকে যে শক্ত থাকতেই হবে আরসাল। নিজের মানুষগুলোকে শান্ত রাখো, তুমি যদি ভেঙে পড়ো তাহলে তাদের কি হবে বলতো! নিজেকে সামলাও বাবা, আমি আসছি.।
আরসাল দৌঁড়ে বাবার কাছে চলে যায়। বাবার মুখ ঢাকা দেখে আরসালের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।
” বাবা ও বাবা উঠো না প্লিজ, তোমাকে তো অনেক কথা বলা বাকি। সব সময় তো ভয় পেয়ে গেলাম তোমাকে। ভয়ে তো তোমাকে ভালোবাসা কথাটাও জানানো হয়নি বাবা। বাবা ও বাবা……
আমি তোমার খু*’নীকে একদম ছাড়বো না। তার পাপের ঘরা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে তাকে যে এবার শা*’স্তি পেতেই হবে। খুব কঠিন শা*’স্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য। বাবা একবার উঠে বসো প্লিজ, আমরা দুজনে মিলে ওকে আমরা শা*’স্তি দেব।
আরসাল বাচ্চা মানুষের মতো বিলাপ করে কান্না করতে থাকে। নওরিন , মিসেস মোহনা, আলিজা রুমে প্রবেশ করায় আরসাল নিজেকে সামলে নেয়। মিসেস মোহনা কান্না করতে থাকে , কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে যাবার মতো অবস্থা। নওরীন ও খুব কান্নাকাটি করছে। আলিজা একসাথে দুজনকে সামলে উঠতে পারছে না, তার নিজেরও যে কান্না থামছে না।
চারপাশে বিষাদের ছাপ পড়ে যায়। আরসালের ফোনে কল আসলে সেখানেই রিসিভ করে সে।
” আমার বাবার জন্য আর র*’ক্ত লাগবে না, আপনি ফিরে চলে যান। আমার বাবা আর নেই আমার বাবা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
ফোনের ওপাশ থেকে কিছু কথা বলা হয় আরসালকে। কথা শেষ হলে একসময় ফোন কেটে দেয় সে।
আরসাল এবার বাবার দিকে তাকায়। র*’ক্তাক্ত মুখ দেখে রাগে ক্ষোভে কষ্টে আবার কান্না করে দেয়। সে আজ বাবা নামক বড় গাছটার ছায়া হারিয়ে ফেললো। বাবার মতো দায়িত্ব সে কিভাবে পালন করবে!
আরসাল কান্না করতে করতে নিজেই বলে ওঠে, ” নাহ আর না, অনেক করে ফেলেছেন আপনাকে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। একা করে দেওয়ার শা*’স্তি, এত এত অপ*’রাধের শাস্তি আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি পেতে হবে মিস মীরা!!”
পেইজের রিচ নেই, সবাই কয়েকটা করে কমেন্ট করবেন, লিখে কমেন্ট করতে অলসতা কাজ করলে স্টিকার কমেন্ট করবেন।
চলবে……