#পূর্ণশশী (রিপোস্ট)
পর্ব-৭
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
________________________
ড্রয়িংরুমের শো কেসে থাকা ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিজের ঘরে এলাম। পুরো বাক্স তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন ঘুমের ঔষধ পেলাম না। ছাঁদে অংশের বলা শেষের কথা গুলো শোনার পর থেকে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছি না। মন বলছে মরে যাওয়া উত্তম আমার মত মানুষের। কেমন প্রেমিকা আমি ভালোবাসার মানুষের ভালোটাই বুঝি না। আমার দাদী বলতেন, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তানদের নাকি ভাগ্য খারাপ হয় । আজ দাদীর কথাটা সত্যি মনে হচ্ছে আমার। ইশ, দাদী বেঁচে থাকলে আজ বলতাম আমায় একটু উপায় বলে দিতে এই খারাপ ভাগ্য কে ভালো করার।আজ বড্ড অসহায় লাগছে নিজের অদৃষ্ট মেনে নিতে।
ছাঁদে –
“শশী করবে আমায় একটু সহযোগিতা কষ্ট গুলোকে সরাতে?”
আকুল গলায় অংশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল। নিজের মনের ক্ষোভ, দুঃখ সব ভুলে সাড়া দিলাম অংশের কথায় আমি শুনতে চাই তার মনে কি আছে। অংশ আমার হাত ধরে নিয়ে গেল ছাঁদের কিনারায় ঠিক রেলিংয়ের পাশে। আমি তখনও স্তব্ধ হয়ে শুধু তাকে দেখছি। কি করে দূর করবো তার কষ্ট গুলো? সে কি ঠকায়নি আমায়? অবশ্যই ঠকিয়েছে নতুবা কেন আমায় ছেড়ে তার বসের মেয়েকে বিয়ে করলো। নিঃসন্দেহে মেয়েটি সুন্দরী বয়সেও ছোট কিন্তু তাই বলে সে কি আমায় আমার সৌন্দর্য দেখেই ভালোবাসে নি? ও তো দেখেছে আমি কেমন আমার চেয়েও সুন্দরী অপরুপা মেয়েরা ক্যাম্পাসে তাকে প্রপোজ করেছে। আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর মেয়েটিও তাকে ইশারায় ইঙ্গিতে প্রেমের বার্তা পাঠিয়েছে। কই তখনও তো তার চোখে মোহময়ী, অতুলনীয়া আমিই ছিলাম। সবাইকে পেছনে ফেলে আমাকেই বেছে নিয়েছিলো তবে এখন কেন অন্য মেয়ে আসবে তার জীবনে! এখন কারণ খুঁজতে গেলে শুধু একটাই কারণ বের হয় আর তা হলো মেয়েটি কোটিপতির মেয়ে। আমার বাবার চেয়েও দশ গুণ অর্থ সম্পদ বেশি আছে মৌশির বাবার। হ্যা হতে পারে এই একটাই কারণ। আমি আমার মনের অসন্তোষ চিন্তায় বিভোর থাকতেই অংশ আমার মুখের সামনে বিরিয়ানি তুলে ধরলো লোকমা বানিয়ে। আমি প্রথমে হাতের খাবার পরে তার মুখে ছলছল দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। আমার চাহনির অর্থ অংশ বরাবরই ভালো অনুমান করতে পারে আজও অপেক্ষা করছি জানার জন্য কতটুকু বুঝতে পারলো সে। হুম, বুঝেছে সে বাম হাতে আমার বাহু ধরে বসিয়ে আবার খাবার মুখের কাছে ধরলো, “আগে খাবারটা খাও আমি সব বলবো। আজ ধোঁয়াশা ভরা মনের কুয়াশা সরিয়ে তোমায় সবটা বলবো। আমি জানি আমার শশী স্বভাবে বাচ্চা হলেও মনের দিক থেকে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ একজন মানুষ । এমন একজন মানুষ যার মনে রাগ থাকে কিন্তু ঘৃণা কখনো ঠাঁই পায় না।”
অংশ নিজের মত করে বলে চলছে আমি চুপচাপ শুনছি আর তার এগিয়ে দেওয়া গ্রাস মুখে পুরে নিয়েছি। টপটপ করে অশ্রু ঝরছে শ্রাবণধারার মতোই কিন্তু তা আমার একার নয়৷ এই মুহুর্তে দুনিয়া থেমে গেছে কোন এক মায়াবী শক্তিতে। আমার মনের ভাবনা এতটুকুতেই থেমে নেই ভাবনার অতলে একটা সুক্ষ্ম আলোর রেখা ভেসে উঠছে। হয়তো সব কথার শেষে অংশ বলে উঠবে, শশী আমরা আবার এক হয়ে যাবো ঠিক আগের মতো। আমার জীবনে তুমি আর তোমার জীবনে আমি। মৌশি বা পূর্ণ নামক তৃতীয় কিংবা চতুর্থ কোন ব্যক্তি থাকবে না৷ আদৌও কি সম্ভব এমনটা? আমার সকল ভাবনার অতল থেকে টেনে হিঁচড়ে অংশ এক বাস্তবকে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।
তার বলা কথা ছিলো এমন, “আমার যে অফিসে প্রথম চাকরি হয়েছিলো মানে মৌশির বাবার কোম্পানিতে সেই অফিসে মৌশি প্রায়ই আসতো তার বাবার কাছে। মৌশি আমাকে প্রথমবার দেখেছিলো তার বাবার কেবিনে। আমি কোন একটা মিটিং করছিলাম বলতে পারো সেই মিটিংটা ছিলো নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার৷ তখন মৌশির বাবা ছাড়া প্রায় সবাই খুব পছন্দ করেছিলেন আমার কাজ ইভেন আমাকেও। মৌশি কোন পারমিশন ছাড়াই কেবিনে ঢুকেছিলো। আমি তখনও দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম আর মৌশি গভীর মনযোগে আমায় দেখছিলো। তার বাবা মেয়ের দৃষ্টির মানে আর গভীরতা খুব ভালো করেই টের পেয়ে আমায় অপছন্দ করা সত্বেও প্রমোশন দেন। তার কিছুদিন পর থেকেই মৌশির অফিসে যাওয়া আসা বেড়ে যায় আগের থেকে। আমার সাথে কথাও বলতো টুকটাক আর আমি তাকে বয়সে বাচ্চা ভেবেই স্নেহ করতাম। দেখা হলেই মাথায় হাত রেখে চকলেটও দিতাম কিন্তু সেখানে অন্যরকম কোন অনুভূতির জায়গা ছিলো না। আমার পুরো সত্তা জুড়ে তখন আমার শশীই ছিলো। কিন্তু আমার স্নেহের দেওয়া চকলেটের মানে মৌশির কিশোরী মন অন্যকিছু ভেবে বসে। আমি বছর খানেক পর্যন্ত টেরই পেলাম না তার আমার সাথে কথা বলার মানে। নিতান্তই বাচ্চা ভেবে আমার স্নেহটুকু তাকে দিতাম। কিন্তু তার জন্মদিনে যেদিন বস মানে তার বাবা আমায় ডেকে বললেন মৌশির জন্মদিনে থাকতেই হবে। আমি মুখের উপর না করতে পারিনি। কিন্তু তোমার আর মৌশির জন্মদিন একই দিনে তাই আমি বেশিক্ষণ দেরি না করে চলে আসি। রাতে লুকিয়ে তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমার জন্মদিন সেলিব্রেট করি৷ সেটা ছিলো তোমার প্রথম জন্মদিন আমার জীবনে আসার পর। শশী মানে তো চাঁদ আর আমার জীবনের চাঁদ তো তুমি ছিলে।”
এতটুকু বলে অংশ প্রলম্বিত একটা শ্বাস টেনে নিলো। আর আমি নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছি তার মুখে। কি বলল শেষ শব্দটা অংশ ‘ছিলে’! সকল প্রশ্নের জবাবের ইতি এখানেই ঘটে এখানে আর বসে থাকার কোন মানে হয় না। আমি মুখের খাবারটুকু আর গিলতে পারছি না। কষ্টের দলা গলায় আটকে গেছে আমার৷ পাগল করা ভালোবাসারা পাগল করে দিয়েছে আমায় মানসিক ভাবে। কিন্তু পারলাম না চলে যেতে অংশ আমার হাত ধরে আবারও বসিয়ে দিয়েছে৷
“শশী এখনও অনেক কিছু জানা বাকি আছে তোমার৷ সবটা না বলে আমি আর বাঁচতে পারবো না। ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব নয় কিন্তু ভালোবাসার মানুষটার চোখে ঘৃণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব । প্রতি সেকেন্ড মৃত্যুর সাথে লড়াই করার সমান৷ আমি পারবো না এভাবে বেঁচে থাকতে। আর পারছি না আমি গত তিনটা মাস আমার জীবনে রাত কেটেছে জেগে থেকে৷ সকালের ঘুমটাও আমায় দুঃস্বপ্নের যন্ত্রণা সহ্য করিয়েছে সবসময়।”
অংশ আমার হাত ধরে মাথা নিচু করে বলে চলছে অনর্গল যেন এই মুহুর্তে তার মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ কোন ভাবেই এই পরীক্ষায় ফেইল করা চলবে না তাই সে তার সবটা ঢেলে জবাব দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তার এই চেষ্টা আমার নিঃশ্বাস নাক পর্যন্ত এসে যেন আটকে গেছে। বুক ভার হয়ে গেছে আমি বোধ হয় এখানে জমদূতের সাথে বিদায় নেব এই ধরাকে বিদায় দিয়ে। অংশ আবার বলল, “মৌশির জন্মদিনে অনেকটাই আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছিলো তার অনুভূতিগুলো যখন সবার থেকে একটু বেশি আর আলাদা একটা প্রায়োরিটিও আমায় দিচ্ছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম এমনিতেই সবটা কিন্তু পরে মনে হলো আমি তার বাবার অফিসের একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী মাত্র। আমাকে এতোটাও কেয়ার করার পেছনে শুধু মাত্র ভালোলাগা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না অন্য কোন কারণ আছে৷ এরপর যতোটা সম্ভব হয়েছে আমি মৌশিকে এভোয়েড করেছি তোমাকেও বলতাম ওর কথা৷ তুমিও তো জানতে সবটা বলো! এরপর তোমার পরের জন্মদিনে তো আমার আর তোমার ঝগড়া হলো মৌশিকে নিয়ে মনে আছে?”
আমি মাথা নাড়লাম অংশের কথায়। হ্যা,আমার মনে আছে আমি বলেছিলাম ও যদি ওই মেয়ের বার্থ ডে তে যায় তবে আমায় হারাবে সারাজীবন এর জন্য । অংশ আবার বলল, “তুমি যখন বলছিলে আমি মৌশির জন্মদিনে গেলে তোমায় হারাবো সারাজীবন এর জন্য তখনই মৌশি এসেছিলো আমার কেবিনে৷ তুমি তখনও লাইনে ছিলে। মৌশি আমায় সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলো।”
হুম মনে আছে আমার আর মৌশির গলার আওয়াজ পেয়েই আমি কল কেটে দিয়েছিলাম রাগে। অংশ হাতে আরো এক লোকমা খাবার নিয়ে আমার মুখের কাছে ধরলো৷ খাবো না আমি আগেরটুকুই তো এখনও গলায় আটকে আছে।
“আমি সেদিন তোমার কল কেটে দেওয়া দেখেই রাগে মৌশিকে ধমকে উঠেছিলাম। আর সেদিনই বলেছিলাম তোমার কথা। খুব অপমানও করেছিলাম এমনকি রাগে হাত উঠাতে যাচ্ছিলাম। এর পরের ঘটনা ছিলো আমার থেকে তোমায় আলাদা করার ষড়যন্ত্র। কিভাবে কি হয়েছে আমি জানি না৷ শুধু জানি এরপর মৌশি প্রায় ছয় থেকে সাত মাস আমার চোখের সামনে আসেনি। আমি ভেবেছি মেয়েটা হয়তো আমার সেদিনের ব্যবহারে ভয় পেয়েছে৷ কিন্তু গত তিন মাস আগে….. ”
এ পর্যায়ে অংশ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“মৌশির বাবা তিন মাস আগে আমায় মিটিং এর কথা বলে অফিসে কিছু কাগজ দেয়। আর তাতে কোম্পানির কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকতার সাইন নেয় নতুন প্রজেক্টের জন্য । কথা হয় সেই প্রজেক্ট এর প্রোফিট এর এক তৃতীয়াংশ শুধু এই কয়েকজন কর্মকর্তার থাকবে কারণ, এই কয়েকজন এর উপর বস আগের কাজ গুলোতে খুব খুশি হয়েছেন। আর সেই কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে আমার নামও ছিলো। আমি জানি না কি হয়েছিলো আমার সেদিন আমি প্রথম দুইটা কাগজ চেইক করে বাকি গুলো না পড়েই সব গুলো সাইন করেছি৷ সব গুলো লিগ্যাল ডকুমেন্টস ছিলো তাই আমি সেদিন মৌশির বাবার কোন চালই ধরতে পারিনি। আমার সাইন এর পর যখন অন্য কর্মকতাদের দিকে পেপারস গুলো দেওয়ার ছিলো তখন বস আমায় বললেন নিজের কেবিনে চলে যেতে৷ আমার মনে তখন একটু খটকা লাগলো কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ থাকলো না কারণ আমার পরই আমার কলিগ জামিল কাগজ হাতে নিতেই বস তাকেও বললেন, জামিল সাহেব আপনিও সাইন করে নিজের কেবিনে চলে যাবেন। আর এ কথা শোনার পর মনে কোন সন্দেহ রইলো না আমি ভাবলাম হয়তো সবাই সাইন করে চলে যাবে। এক সপ্তাহ পর যখন মৌশিকে বিয়ের প্রস্তাব রাখলো তার বাবা আর আমি ওই মুহুর্তেই জবাবে ‘না’ জানিয়ে দিয়েছি। এরপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে আমায় ফোর্স করতে থাকে মৌশিকে বিয়ে করতে৷ আমি ওই মাসেই জবটা ছেড়ে এসেছি৷ এর পর তো মৌশির বাবা আমায় একটা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার এর কপি পাঠিয়ে পুলিশ কেইস করার হুমকি দেয়। তাতেও আমি দমে যায় নি কিন্তু… কিন্তু তার বাবা আমার পুরো পরিবারকে ফাঁসানোর প্ল্যান করে । পূর্ণ আর বাবার নামও বাদ দিবে না তাই বাধ্য হয়ে আমি মৌশিকে বাড়ি নিয়ে আসি৷ আমার ধারনা ছিলো সবটাই মৌশির চাল নয়তো তার বাবা যেই ব্যক্তি আমায় পছন্দই করতেন না সে কেন তার মেয়ের জন্য আমাকে প্রপোজাল দিবে৷ তখন তো আমার দুনিয়া ভেঙেচুরে টুকরো হয়ে গিয়েছিলো। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তখন পাগল বিক্ষুব্ধ ছিলাম। বাড়িতেও ঝামেলা তৈরি হয় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসায়। সবাই জানতো শশী হবে এ বাড়ির বউ। হঠাৎ করে এমন এক কোটিপতির মেয়েকে বাড়িতে তুলে এনেছি এতে ভয়ও পেল সবাই অনেকটা। ভেবেছে টাকার লোভে পড়ে আমি তোমায় ছেড়েছি। হাজারটা কথা শুনতে শুনতে মনের ভেতর এক রাগ আমায় কাবু করে নিলো। তোমায় কল দিলাম অনেক কিছুই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম৷ তুমি বলেছিলে রাত পোহালেই তোমার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে যাবে। হলোও তাই রাতটা কোনমতে আমার ছাঁদে কাটলেও সকালটা শুরু হয় হাসপাতালে তোমার কেবিনের বাইরে। ডক্টর যখন বলল আর একটু দেরি হলেই হয়তো তোমায় মৃত্যুদূত সঙ্গে নিয়ে যেত। কথাটা শুনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। দূর থেকে তোমার ফ্যাকাশে মুখটা দেখেই আমি বেরিয়ে সোজা বাড়ি আসি। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি যেই আমি কখনও কোন মেয়েকে ধমক টাও দিতে ইতস্তত করতাম সেই আমি মৌশিকে মেরেছিলাম। বেল্ট দিয়ে আঘাত করেছিলাম তাকে এমনকি…. আমি খুব জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার এক পর্যায়ে মৌশি খাটের কোণায় লেগে তলপেটে আঘাত পায়। সেই আঘাতে মৌশিকে হসপিটালে এডমিট রাখতে হয় দু’দিন আর…..”
অংশ আবার থেমে গেল। আমি আগ্রহভরা নয়নে চেয়ে আছি “আর কি বাকি আছে!”
“সেই আঘাত মৌশির সন্তান ধারণ ক্ষমতা কেড়ে নেয়। আমি আমার শশীকে মৃত্যু মুখে দেখেছি। কি করে ছেড়ে দিতাম তাকে বলো?”
আমি তাকে শাস্তি দিতে ছেয়েছিলাম। ডিভোর্স এপ্লাইও করেছিলাম কিন্তু হাসপাতালে পড়ে থাকা শশীর নিস্তেজ মুখটা দেখার পর শুধু মনে হয়েছে মৌশির এই দুনিয়ায় থাকার কোন অধিকার নেই। যেখানে আমার শশীর নিঃশ্বাস থেমে যাওয়ার ভয় থাকবে সেখানে মৌশির জায়গা নেই। কিন্তু আমার দেওয়া শাস্তি তাকে মৃত্যুর চেয়েও বড় শাস্তি দিয়েছে। তবুও মন শান্ত হয়েছিলো আমার এক পৈশাচিক আনন্দ হয়েছিলো। মন বলছিলো অপরাধী তার শাস্তি পেয়েছে কিন্তু আমি তখনও জানতাম না আমি এক নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দিয়েছি। হাসপাতালে মৌশিকে যখন তার বাবা আর দাদী দেখতে আসে সেদিন তার দাদীর কাছে জানতে পারি মৌশির মা নেই। তার আর কোন ভাই বোনও নেই৷ সে চুপচাপ শান্ত স্বভাবের এক মেয়ে যার পুরো দুনিয়া শুধু পড়ালেখায় সীমাবদ্ধ। কখনো শখ, আহ্লাদ বলতে নাকি কিছুই ছিলো না। বাবা পাগল মেয়েটার এক মাত্র বন্ধু তার বাবাই ছিলো। শৈশব থেকে কৈশোরকাল তার দুনিয়ায় তার বাবা আর দাদী ছাড়া কারো জায়গা ছিলো না এমনকি তার ক্লাসমেটসও কেউ না। সেই মেয়েটা হঠাৎ করেই আমায় দেখে আমার সাহচার্যপ্রাপ্ত হতে চায় তখন তার বাবা কোন দিক না ভেবেই আমার হাতে তার মেয়ের হাত রাখতে চায়। আমি ফিরিয়ে দিলে তিনি ষড়যন্ত্রের পথে আগান। কন্যার সুখের কথা ভেবে নিজের বিবেকবুদ্ধি হারিয়ে সবটা করেন। হয়তো নিজের ভুল গুলোও বুঝতে পেরেছেন আর তাই আমার কাছে ক্ষমা চান বাড়িতে এসে সবার সামনে এমনকি আমার পায়েও ধরতে চান। আমি জানি শশী যতোটা কষ্ট আমি পাই তোমায় হারিয়ে ঠিক ততোটা তুমিও। ভালোবাসায় আমরা দু’জন বিনা দোষেই শাস্তি পেয়েছি। শাস্তি পেয়েছে মৌশিও আর এখন আমার ভাইকেও পেতে হচ্ছে । সবার অপরাধ বোধ হয় ‘ভালোবাসা’। আমরা চারজনই ভালোবেসেছি আর দুঃখ চারজনই পাচ্ছি। কিন্তু আমি বড় ভাই হয়ে আমার ভাইকে…….”
এ পর্যায়ে অংশের গলার স্বর উঁচু হয়ে গেছে। অংশের জীবনে আমার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে পূর্ণ তা যেন আমার অবচেতন মন ঠিক বুঝে নিয়েছে। কিন্তু আমার কারণে মৌশি যে তার সবটা হারিয়ে ফেলেছে৷ হোক না আঘাত অংশ করেছে কিন্তু কারণ তো আমি। ওই রাতে আমি যদি সুইসাইড করার চেষ্টা না করতাম তবে কি অংশ আঘাত করতো মৌশিকে? আমি তখনও ভালোবাসা ছিলাম অংশের যখন মৌশি তার বউ হয়ে এ বাড়িতে পা রাখে৷ আর আমায় অমন মৃত্যু পথে দেখেই সে ক্ষতি করেছে মৌশির আর ক্ষতির পরিমাণটা এ দুনিয়ার কোন কিছুর বিনিময়েই পূরণ করা সম্ভব নয় কোন কালেই নয়। মাতৃত্ব আর সতীত্ব এই দু’জিনিসেই একটা নারীর সত্তা টিকে থাকে৷ একজন নারী বিয়ে হলেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় না। স্বয়ংসম্পূর্ণ তো তখন হয় যখন সে নিজের প্রাণে আরো একটা প্রাণ ধারণ করে। আর মৌশির সেই ক্ষমতাটাই তো শেষ হয়ে গেছে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই অংশও দাঁড়ালো। এক পলক দেখে নিলাম অংশের মুখটা আর আজকেই শেষ বার দেখছি। আর সাধ নেই এই প্রিয় মুখটা দেখার। অংশের ফর্সা মুখটা উজ্জ্বল আলোতে খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছে। থাক না অংশকে পাওয়ার ইচ্ছের মত এই ইচ্ছেটাও অপূর্ণ৷ এক জীবনে সবটা ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেলে তো বেঁচে থাকার কোন মূল্যই থাকবে না। পাওয়ার মাঝে না পাওয়ার স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতা তো সবার থাকে না আমারও নেই। ইচ্ছে গুলোকে অপূর্ণ রেখেই না হয় গেলাম৷ আমি পা বাড়িয়েছি নিচে যেতে ঠিক তখনি পেছন থেকে জাপটে ধরলো অংশ আমায়। কাঁদছে পাগলটা৷ আমিও কাঁদছি এবার নিঃশব্দে । জড়িয়ে ধরেছে আমায় অংশ অথচ আমি আমার হাত দু’টো উঠাতে পারছি না একটু ছুঁতে তাকে। মিনিট কয়েক তার বুকেই মাথা রেখে চুপ থেকে তারপর চলে এসেছি নিচে। অনেকটা জোর করেই তাকে ছাড়িয়ে এসেছি৷ অংশ বলেছিলো তার কষ্ট গুলোকে তার বুক থেকে সরিয়ে দিতে সহযোগিতা করতে৷আমি পারবো না এতোটা মহান হতে তাই আবারও আত্মহত্যার ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে৷
চলবে
(জানি না গল্পের কাহিনি একটু বেশিই খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিনা। প্লিজ আপনারা একটু জানাবেন। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। )