#প্রণয়সন্ধি– ২৪ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
বাইরে ঝড়ো হাওয়া ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মুখরিত চারিদিক। শীত শীত লাগছে। এই সময় শানায়া খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করে। আগের সময় হলে মা’কে জ্বালাত খিচুড়ি খাওয়ার জন্য! এসবই ভাবছিল জালানার কাছে দাঁড়িয়ে। তখন কলিং বেল বাজল। জুবরান কাজ করছে। লোকটা অফিসে না গিয়ে বাড়ি বসে সারাক্ষণ কাজে ডুবে থাকে। শানায়াকেও যথাসম্ভব সময় দেয়। শানায়ার সাথে স্বাভাবিক হতে চাই শানায়া বুঝতে পারে। কিন্তু শানায়ার ভয় হয় এমন চলতে থাকলে ও জুবরানের গভীর মায়ায় পড়ে যাবে। জুবরান যদি আবার ওকে ছেড়ে চলে যায় তখন ম*রা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। জুবরান বলল
–‘ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? দেখছিস না আমি কাজ করছি। যা দরজা খোল’
শানায়া ভেংচি কেটে দরজা খুলে ডেলিভারি বয়কে দেখে একটু অবাক হলো। সব তো রান্না করা আছে তাহলে এখন আবার কীসের খাবার অর্ডার করছে? আগে জানলে কষ্ট করে রান্না করত না। লোকটা মর্জি তো সবসময় চলে শানায়া খাবারটা রিসিভ করে। দেখলো খিচুড়ি চমাকলো, থমকে তাকিয়ে রইলো। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। জুবরান বেড়িয়ে এসে টেবিলে বসে বলল
–‘ তারাতাড়ি খাবার দে। খিচুড়ি দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না’
শানায়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল
–‘ আপনি খাবার অর্ডার করবেন বললে আমি আর কষ্ট করে রান্না করতাম না’
–‘ আরেহ! আমি তো নিজেই জানতাম না। তোর আর আমার মনে হলো খিচুড়ি খাওয়া দরকার’
–‘ আমি কখন বললাম আমি খিচুড়ি খাবো?’
–‘ আমি তোকে চিনি’
শানায়া আর উত্তর খুজে পেল না। চুপচাপ খেতে। কাঁথার নিচে গিয়ে ফোন টিপতে লাগলো। ফেন্ডদের সাথেও কিছুক্ষণ কথা বলল। জুবরান কাজ শেষ করে এসে শানায়ার কাঁথা নিচে ডুকে শানায়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আকস্মিক ঘটনা বুঝে উঠতে সময় নিলো শানায়া ততক্ষণে জুবরান বেশ এগিয়ে গেছে। শানায়ার ঘাড়ে নাক ঘষছে। শানায়া থরথর করে কেঁপে হাত থেকে ফোন মুখের উপরে পড়লো। মনে হলো মাথার সব নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অনুভূতির সাগরে ডুব দেওয়ার আগেই শানায়া জুবরানকে ছাড়াতে ছাড়াতে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল
–‘ কী করছেন? ছাড়ুন’
–‘ বউকে আদর করছি জান’
জুবরানের মুখে ‘জান’ ডাক শুনে শানায়ার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। পরমুর্হুতে নিজে সামলিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ ছাড়ুন অসভ্যতামী করবেন না। আমি কিন্তু অন্য রুমে চলে যাব’
জুবরান মাথা উঠিয়ে শানায়ার মুখে দিকে তাকিয়ে বলল
–‘ এখনো তো কিছুই করলাম না অসভতামীর কী দেখলে’
–‘ আপনি ছাড়ুন আমাকে’
–‘ উহু্ আমার বিয়ে করা বউ আমার একান্ত কোলবালিশ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি না’
–‘ আশ্চর্য কোলবালিশ নাই না-কি!’
–‘ আছে আর তাকেই আমি জড়িয়ে আছি’
শানায়া ইতস্তত করে বলল
–‘ ছাড়ুন আমার কেমন লাগছে’
জুবরান দুষ্টুমি করে বলল
–‘ কেমন লাগছে বউ?’
শানায়া উত্তর দিল না মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। তা দেখে জুবরান বলল
–‘ এ-ই ভাবেই আমার বউবালিশ হয়ে থাকতে হবে। তাই অভ্যাস করে নাও বউ’
–‘ অসম্ভব।’
–‘ সম্ভব। তাই ঘুমের মুড নষ্ট করিস না। ঘুমা।’
শানায়া নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও পাড়ল না। জুবরান ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বিরবির করে বলল
–‘ কাল থেকে এ রুমের আশেপাশেও আসব না’
জুবরান শুনতে পেয়ে বলল
–‘ অন্য রুম লক করা। আর যেখানেই ঘাপটি মে*রে বসে থাকিস না কেনো আরও উঠিয়ে আনব’
–‘ গুন্ডা একটা’
কথাটা বলে জুবরানের পায়ে ঠাস করে লাথি মে*রে দিল। জুবরান অবিশ্বাস্য চোখে শানায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
–‘ স্বামীকে মা*রছিস? স্বামী নি’র্যা’তনের কে’স ঠুকে দিব’
শানায়া মুখ কাচুমাচু করে বলল
–‘ ইচ্ছে করে দি নি। আসলে কেমনে কেমনে জানি লেগে গেলো নড়তে গিয়ে। আপনি একটু সরে শুলে তো এমনটা হয় না’
–‘উহু বউয়ের কাছ থেকে আদর না পেতে পারি মা*রটাই না-হয় আদর ভেবে নিব’
শানায়ার বেশ খারাপ লাগছে লোকটা ওর পিছনে পড়ে আছে। কতটা ভালোবাসার কাঙাল হয়ে গেছে। এতোবছর পরিবার থেকে দূরে ওর জন্য এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
★★★
পাপড়ির টেস্টের রিপোর্ট দিয়েছে। ডক্টররা আশা দিতে পারছে না। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। যখন প্রবলেমটা ধরা পড়েছিল তখন থেকে ডক্টরের ততাবদ্ধানে থাকলে সমস্যা এতোটা কমপ্লিকেটেড হত না। মেডিসিন সহ প্রসেসিং চালিয়ে যেতে বলে আর মাসে চেকাপে আসতে বলেছে। হলেও একটা মিরাক্কেল হতে পারে বাট কোনো সিউওরিটি নেই।
সব শুনে পাপড়ি ছলছল চোখে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান ইশারায় আশসাস দিল। হাতটা শক্ত করে ধরে বাইরে আসল। ফাঁকা জায়গায় পাপড়িকে বসিয়ে বলল
–‘ এতো তারাতাড়ি ভেঙে পড়ছ কেনো? ডক্টর তো বলছে আমরা সবটা মেনে চললে একটা গুড রেজাল্ট পেতে পারি’
–‘ ওনারা তো এটাও বলেছে না-ও পেতে পারি’
–‘ সবসময় ব্যাড সাইড ভেবে ওভারথিংকিং করছ কেনো? আর না হলে না আমাদের বাচ্চা কাচ্চা লাগবে না। আমার তুমি হলেই চলবে’
–‘ তুমি এগুলো আবেগের বশে বলছ লাইফে তোমার একটা সময় মনে হবে। এই সময়টাই তুমি ভুল ডিসিশন নিয়েছ। আমি তোমাকে সুখ দিতে পারছি না’
–‘ কে বলল? তোমাকে দেখলে আমার সুখ, সুখ পাই।’
পাপড়ি হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল এই পাগল বরকে বুঝিয়ে লাভ নেই।
————-
সময় যাচ্ছে স্রোতের ন্যায়। শানায়া এই ক’দিনে জেনে গেছে ওর চলে যাওয়ার খবর রাহাত আর জুন মিলে জুবরানে কানে তুলেছে। এমন বন্ধু থাকতে আর শ*ত্রুর প্রয়োজন হয় না। কথাটার সাথে শানায়া পদে পদে প্রমাণ পাচ্ছে। অবশ্য রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু জুনের কান্না কাটিতে ওকে মাফ করে দিলো শেষ বারের মতো।
কাল থেকে রোজা শুরু চারিদিকে মিষ্টি শীতল বাতাস বইছে। অম্বরিতে নতুন চাঁদ। শানায়ার আর আগের মতো রোজায় আনন্দ হয় না ইদের শপিং, মেহেদী নাইট নিয়ে আর এক্সাইটিং কাজ করে না। কিন্তু একটা অদ্ভুত শান্তি মনে অনুভব করে যা আগে কখনো করত না। শানায়া আগের রোজার কথা ভাবছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে, এই বারান্দাটা শানায়ার প্রিয় হয়ে গেছে ক’দিনে বেশিরভাগ সময়ই বারান্দায় কাটে। শানায়া না চাইতেও জুবরানের প্রতি একটু একটু করে দূর্বল হয়ে গেছে। জুবরান অজু করে পাঞ্জাবি বারান্দায় শানায়ার পাশে দাড়িয়ে বলল
–‘ কী করছিস??’
শানায়া না তাকিয়ে বলল
–‘ চোখ নেই আপনার? ‘
–‘ আছে তো সেই চোখে শুধু বউকে ছাড়া আর কাউকে, কিছু দেখতে পাই না’
শানায়া জুবরানের দিকে তাকালো শুভ্র রাঙা পাঞ্জাবিতে তাকে সুদর্শন পুরুষ লাগছে। শানায়া চোখ জোর করে ফিরিয়ে নিল বলল
–‘ অজু করে এসে ফ্ল্যাট করছেন?’
–‘ বউয়ের সাথেই তো করছি!’
শানায়ার বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে এলো লোকটা সারাদিন কানের কাছে বউ, বউ করে মাথা পাগল করে দেয়।
–‘ আপনি যান তো নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে’
–‘হুম দরজা লাগিয়ে দাও। তুমি নিজেও নামাজ পড়ে না-ও ‘
জুবরান শানায়ার টোনাটুনির সংসার বেশ ভালোই চলছে। সকালে উঠে সারাদিন অফিস শেষে বাসায় এসে শানায়ার মুখটা দেখলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। রান্নার কাজে শানায়াকে হেল্প করে। দু’জন সারাদিনের গল্প করতে করতে ইফতারি করে। সেহরির সময় জুবরান শানায়াকে ঠেলে ঠেলে উঠাতে হয়। দুজনের আচ্ছা করে ঠুকাঠুকিও লেগে যায়। দুজন দুজনার খুব কাছের হয়ে গেছে।
শানায়া সারা ফ্ল্যাট গুছিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে যোহরের নামজ পড়ে কুরআন তিলয়াত করছিল। ওমনি কলিং বেল বেজে উঠল। শানায়া ভাবল জুবরান এসেছে সব গুচ্ছিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো। একাকে দেখছে? দম বন্ধ হয়ে আসল।
চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রণয়সন্ধি– ২৫ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
পরিবেশ থমথমে, গুমোট ভাব। সকলের চোখে মুখে বিস্ময়ের আস্তরণ। শানায়ার দম আটকে আসল। মন মস্তিষ্কে ভয় পাখিরা হানা দিল। আবার ভুল বুঝবে সকলে। শানায়া কথা বলতে গিয়ে দেখল বুক কাঁপছে কণ্ঠ নালি শুকিয়ে কাঠ। নুবাহান বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
–‘ পাখি তুই? এখানে?’
শানায়া অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল
–‘ ভিতরে আসুন’
শানায়ার মুখে ‘আপনি’ ডাক শুনে আরো চমকালো। জিনিয়া শানায়াকে দু’হাতে আগলে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ঝরঝর করে কেদে দিল। শানায়া কাঠ হয়ে দাড়িয়ে রইল। নিজেকে ছাড়িয়ে বলল
–‘ আপনারা আসুন অনেকটা জার্নি করে আসছেন। ফ্রেশ হবেন। আমি জুবরান ভাইয়াকে খবর দিচ্ছি’
নুবাহান তখন বিস্ময় কাটাতে পারি নি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ পাখি তুই বেঁচে আছিস?’
শানায়া চোখ নিচু করে ছিল নুবাহানের কথা শুনে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল
–‘ ম*রে গেলে খুশি হতেন?’
নুবাহান ব্যস্ত গলায় বলল
–‘ কী বলছিস পাখি? তুই জানিস তোকে কত খুঁজেছি? তুই… তুই এখানে কীভাবে?’
শানায়া সে কথার উত্তর দিল না কথা ঘুরিয়ে বলল
–‘ আপনাদের দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে আসুন রুম দেখিয়ে দিচ্ছি’
কথাটা বলে ব্যস্ত পায়ে দু’টো রুম খুলে দিল। অক্ষিকোটরের অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে! জিনিয়া কাতর চোখে তাকিয়ে আছে শানায়ার দিকে ও তাকাচ্ছে না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উপরে তাকালেই যে অক্ষিকোটরের মেঘ বাষ্প হয়ে নেমে আসবে। ওদেরকে রুম দেখিয়ে দিয়ে ও রুমে চলে এসে এতোক্ষণের চেপে রাখা কান্না বেড়িয়ে আসল। ব্যস্ত হয়ে জুবরানকে ফোন দিল একবার না দু’বার না তিনবারের বার ফোন ধরল। শানায়া অতিকষ্টে গ্রীবাদেশ থেকে স্বল্প বাক্য ব্যয় করে বলল
–‘ বাসায় আসুন। আপনার মা আর ভাই এসেছে।’
কথাটা শুনে জুবরান হতভম্ব হয়ে গেলো। পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ পেল না তার আগেই শানায়া ফোন কেটে দিল। রোজার সময় এখন অফিসে এখন বেশ কাজের চাপ। শানায়া কথা শুনে আর অফিসে মন টিকাতে পারল না। কাজ রেখে ছুটল বাড়ি। মনে মনে হাজার কল্পনা জল্পনা করতে করতে বাসায় পৌঁছাল।
বাসায় এসে কলিংবেল বাজতেই শানায়া এসে দরজা খুলে দিল। এতোদিন পর মা ভাইকে দেখে জুবরানের মনটা শান্ত হয়ে গেলো মা’কে জড়িয়ে ধরে মায়ের কান্না থামানোর চেষ্টা করল। শানায়া এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখল। নুবাহান বলল
–‘ পাখি দাড়িয়ে আছিস কেনো? রোজা থেকে কষ্ট হচ্ছে না তোর?’
নুবাহান শানায়াকে ছোট থেকে আদর করে পাখি বলে ডাকে। তার কারণ ও আছে শানায়া চঞ্চল, আর তোতাপাখির মতো কথা বলত।
শানায়া ছোট করে উত্তর দিল…
–‘ ঠিক আছি’
জিনিয়া ছেলেকে ছেড়ে শানায়ার কাছে আসল শানায়া দৃষ্টি লুকাতে ব্যস্ত। শানায়ার মুখ দু’হাতে ধরে বলল
–‘ এই বুড়ির ওপরে এখনো রেগে আছিস? আমি জানি রেগে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। তোর সাথে কম অন্যায় করি নি আমরা! তুই চলে আসার পর উপলদ্ধি করলাম। কী হারিয়ে ফেলেছি।’
শানায়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিনিয়া আবারও বলল
–‘ ক্ষমা কর না এই বুড়িটাকে। আবার বাড়ি ফিরে চল। তোদের ছাড়া বাড়িটায় ভালো লাগে না রে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে’
শানায়ার দৃঢ় কণ্ঠে বলল
–‘ মাফ করবেন। ওবাড়ি ছেড়ে চলে আসছি ফিরে যাবার জন্য নয়। সারাজীবনের জন্য চলে আসছি।’
–‘ এসব কী বলছিস মা? অভিমান, রাগ করে আছিস এখনো? ওসব কথা এখনো ধরে আছিস?’
জুবরান বলল
–‘ আম্মু জার্নি করে আসছ রেস্ট করো। আমি ও খুব টায়াড। শানায়া রুমে আয়’
জিনিয়া বেশ বুঝতে পারছে ছেলে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কষ্টে বুকটা মুচড়ে উঠল। নুবাহান প্রশ্নবিধ চোখ তাকিয়ে রইলো। কী থেকে কী হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় আসছে না। নুবাহান রুমে গিয়ে শানায়ার বাবা শাহাদাত হোসেনকে ফোন দিয়ে সব জানালেন তিনি মেয়ের খবর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ততখানিই বলল আজকের কোনো ফ্লাইট পেলেই চলে আসবে।
জুবরান রুমে আসার বেশ অনেকক্ষণ পর শানায়া রুমে আসল। জুবরান তখন ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে। শানায়া রুমে এসে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল
–‘ আপনি কী চান বলুন তো! আমাকে একটু একটু করে মে*রে ফেলতে চান? সেই দিনের প্রতিশোধ নিতে চাইছেন?’
জুবরান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ কী বলতে চাইছিস তুই?’
–‘ বুঝতে পারছেন না আপনি? আমাকে এখানে এনে আপনার ফ্যামেলিকে এখানে কী দেখাতে চাইছেন, আমি আপনি সংসার করছি? আবার আমাকে সবার সামনে দোষী বানাতে চান? তারপর সবাই এভাবে মে*রে ফেলতে চাইছেন? একবার তো মে*রে দিয়েছেন আবার কেনো আমার লাইফে আসলেন? আমি শান্তিতে ছিলাম এটা আপনাদের সহ্য হয়নি তাই না? তাই তো…’
শানায়া আর বলতে পারল না রুদ্রশ্বাস হয়ে আসছে। রাগে, কষ্টে, অভিমানে কেঁদে দিল। জুবরান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ওকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে এসে শানায়ার মাথাটা ওর উষ্ণ বক্ষে চেপে ধরল। শানায়া আহ্লাদী হয়ে জুবরানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল আর বলল
–‘ আমাকে প্লিজ শান্তি দিন… আমি… আমি শান্তি চাই। আমাকে প্লিজ এখান থেকে যেতে চাই। অনেক দূরে চলে যাব প্লিজ যেতে দিন।’
–‘ তোকে আমার কাছে রেখে দিব কষ্ট ছুঁতে দিব না। একটু সময় দে আমাকে।’
–‘ না না আপনাদের কাউকে চাই না আমার আমি আমি একা থাকতে চাই’
–‘ আমাকে একটু সময় দে। আমি সব ঠিক করে দিব প্রমিজ ‘
শানায়া অশ্রু সিক্ত চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ সব ঠিক করে দিবে বললে কী সব আদেও ঠিক করা যায়? পরবেন আমার মনের গভীর ক্ষ*ত মুছে দিতে? পারবেন আমার মাকে ফিরিয়ে দিতে?আপনার মা বলল না তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিতে সব ভুলে যেতে আদেও কী সব ভুলে যাওয়া যায়? আপনি কী সব ভুলে যেতে পারবেন? আমি দুটো বছর সব মুখ বুজে সহ্য করে আসছি। মনে মনে চেয়েছি আপনি যেনো ফিরে আসেন আমার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ আসুক কিন্তু আসল না’
–‘ আমাকে বল কী হয়েছিল? না বললে বুঝব কীভাবে?’
শানায়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–‘ আপনি যখন বাসা ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকে বাসার কেউ আমার সাথে কথা বলত না। জানেন আমার খুব কষ্ট হতো, এমনকি আমার বাবা-মা ও না। এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় আমার সাথে কেউ গেলো না। অথচ যখন আমি এক্সাম হলে গিয়ে পৌছাতাম দেখতাম বাবা-মা’রা তাদের সন্তানকে কত আদর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে তখন আমার একা লাগত চারিদিকে সকলে অচেনা অপরিচিত কেউ আমার আপনা না…
চলবে ইনশাআল্লাহ