#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫০ (অংশ-০১)
প্রণয়ী স্কুলের মাঠে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তার পাশেই প্রণয় ঘাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। তার দৃষ্টি খোলা আকাশে নিবদ্ধ। সাদা ড্রেসে ধুলোবালি লেগে বাদামি বর্ণধারণ করেছে। প্রণয়ী ওর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। বিরস মুখে বললো,
“আজকে মাদার্স ডে! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!”
প্রণয় ভ্রু-যুগল একত্রিত করে ফেললো। ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“তোর মনে থাকেটা কী? এখানে থাকতে বিরক্ত লাগছে আমার। আগে জানলে এই দিনে স্কুলেই আসতাম না!”
“মা ছাড়া জীবন অনেক কষ্টের! তাই না, ভাই? আমাদের মা থাকলে অনেক ভালো হতো!”
প্রণয়ীর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো প্রণয়। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
“গাধী! পাপার সামনে এই কথা মুখেও আনবি না। পাপা যদি মন খারাপ করে, তখন?”
প্রণয়ী হালকা হেসে বললো, “আচ্ছা, বলবো না!”
কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এলে প্রণয়-প্রণয়ী গাড়িতে উঠে বসলো। প্রণয় ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো,
“পাপা কেন আসেনি?”
“স্যার ব্যস্ত ছিলেন! সার্জারী ছিল শুনলাম।”
প্রণয় গাল ফুলিয়ে বললো, “আচ্ছা!”
•
অরিত্রী সবেমাত্র পেশেন্ট দেখা শেষ করেছে। আজকের মতো তার ডিউটি শেষ। সন্ধ্যার আগেই আজ বাসায় চলে যাবে ভেবে খুশিমনে কফিটা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। এপ্রোনটা খুলতে যাবে এমনসময় নার্স ছুটে এসে জানালো,
“ম্যাম, ইট’স ইমার্জেন্সি। প্লিজ কাম উইথ মি!”
অরিত্রী এপ্রোনটা আর খুললো না। অগত্যা নার্সের সাথে ছুট লাগালো ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে। নার্স তাকে একটা কেবিনে নিয়ে গেল। আগে থেকেই বেশ কয়েকজন ডক্টর সেখানে ছিল। তাদের সাথে ডক্টর ক্লারাও ছিল। তিনি অরিত্রীকে দেখে বললো,
“কাম, ডিয়ার! এই পেশেন্টটা তোমার জন্য নতুন। নতুন এক্সপেরিয়েন্স হবে তোমার। এজন্য তোমায় ডেকে আনতে বলেছি।”
ডক্টর ক্লারার মুখে স্পষ্ট বাংলা কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিল অরিত্রী। পরে জানতে পেরেছিল, ওনার মা বাঙালি ছিলেন। এজন্য তার বাঙালিদের প্রতি অদ্ভুত টানও আছে। ওনার সাহায্য ছাড়া অরিত্রী হয়তো এতো ভালোভাবে নিজের জীবনটাকে এগিয়ে নিতে পারতো না। তার ডাক্তার হওয়ার পেছনে ডক্টর ক্লারার অনেক অবদান।
অরিত্রী এগিয়ে এসে ডক্টর ক্লারার পাশে দাঁড়ালো। সামনে পেশেন্টের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠল সে। মেয়েটার মুখের অর্ধাংশ পুড়ে ঝলসে গেছে একদম। অরিত্রী চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো। ডক্টর ক্লারার হাত খামচে ধরে বললো,
“ম্যাম, ওর এই অবস্থা কেন? কীভাবে হলো?”
“মেয়েটা স্টুডেন্ট। কেমিস্ট্রি ল্যাবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনাবশত ওর মুখে…. এখন এসব কথার সময় না। লেট’স স্টার্ট আওয়ার ট্রিটমেন্ট!”
ডক্টর ক্লারার কথা শুনে অরিত্রী চোখ খুলে তাকালো। সবাই ইতোমধ্যে নিজ নিজ কাজ শুরু করে দিয়েছে। অরিত্রী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কয়েকবার ঘনঘন পলক ফেললো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক দুর্বিষহ রাতের অস্পষ্ট দৃশ্যপট। অরিত্রী আবছা আবছা মনে করতে পারলো, কেউ একজন তার দিকে কিছু একটা ছুঁড়ে ফেলছে। কিন্তু পাশ থেকে আরেকজন এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললো, আর তাৎক্ষণিক কারো তীক্ষ্ণ আর্তনাদ অরিত্রীর কর্ণকুহরে বাজতে লাগলো৷
অরিত্রী মাথার চুল খামচে ধরে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে ওর। চোখ দুটো নিভে আসতে চাইছে। অকস্মাৎ দেহটা হেলে পড়তেই অর্থী এসে ওকে আগলে ধরে নিলো। চিৎকার করে বললো,
“ম্যাম! অরিত্রী সেন্সলেস হয়ে গেছে।”
ডক্টর ক্লারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আসতে পারলেন না। শুধু গলা উচিয়ে বললেন,
“ড. অর্থী, ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।”
অর্থী আর নার্স মিলে অরিত্রীকে একটা বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলো৷ অর্থী তাড়াতাড়ি অর্ণব কল দিলো। বললো,
“অর্ণব, তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়! অরিত্রী অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
অর্ণব হতভম্ব হয়ে বললো,
“হোয়াট? কীভাবে? আচ্ছা, আমি এখুনি আসছি!”
ডক্টর ক্লারা অরিত্রীকে চেকআপ করে বললেন,
“ব্রেইনে অতিরিক্ত প্রেশার দিয়ে ফেলেছে মেয়েটা! ওর খেয়াল রেখো, ড. অর্থী। সেন্স আসতে বেশ সময় লাগবে।”
ডক্টর ক্লারার কথার মাঝে অর্ণব ভেতরে প্রবেশ করলো। অর্ণবকে দেখে তিনি কিছুটা অপ্রসন্ন মুখে বেরিয়ে গেলেন। অর্থী বিষয়টা খেয়াল করলো। মনে একটু সন্দেহ জাগলেও প্রকাশ করলো না। অর্ণব অর্থীর সামনে এসে অরিত্রীর দিকে একবার তাকালো। চিন্তিত মুখে বললো,
“ও ঠিক আছে? কী হয়েছিল?”
“খুব চিন্তা হচ্ছে?”
অর্থীর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। অর্ণব সেটা দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,
“এখন অন্তত এসব ঢং বাদ দিতে পারিস? মেয়েটা অসুস্থ, তাই চিন্তা হচ্ছে!”
অর্থী নিজের মুখে কৃত্রিম অবাকতা ফুটিয়ে বললো,
“আচ্ছা? তুই যে ওকে নিয়ে এতো চিন্তা করিস, সেটার কোনো পরোয়া ও করে না। তোর এতো ভালোবাসার কথা তো অরিত্রী জানে না!”
“আগে জানতো! বুঝতো ও। কিন্তু এখন তো আমিই বুঝতে দেই না!”
অর্ণবের কথায় অর্থী মলিন হেসে বললো,
“ভালোবাসা অনেক অদ্ভুত জিনিস। মানুষের মাথা থেকে মুছে গেলেও মন থেকে সরে যায় না। অরিত্রীও সৌহার্দ্যকে কোনোদিন ভুলবে না। ওর মনে এই মানুষটা বেঁচে থাকবে সারাজীবন। তোরা যতই ওদের দূরে সরিয়ে রাখতে চাস না কেন!”
অর্ণব ক্রোধান্বিত চোখে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“সৌহার্দ্যের নাম তুই ওর সামনে উচ্চারণও করবি না। আমি চাই না তোর সাথে ওর সম্পর্ক নষ্ট করতে। এতো বছর চুপ করে ছিলি, এখনো মুখটা বন্ধ রাখ।”
অর্থী ঈষৎ হেসে বললো,
“আমি তো কিছু বলবো না! কিন্তু সত্যটা আর কতো বছর চেপে রাখবি? আজ অরিত্রী এসিড ভিক্টিম এক মেয়েকে দেখে সেন্সলেস হয়ে গেছে। কেন, জানিস? ওর মস্তিষ্কে মধুর কথা নাড়া দিয়েছে। একদিন না একদিন ও সবটা জানতে পারবেই! সেদিন ও তোর আর মোহনা আন্টির কোনো পরোয়া করবে না।”
অর্ণব বিরক্ত হয়ে বললো,
“তোর ঘ্যানঘ্যান শোনার চেয়েও অনেক দরকারি কাজ আছে আমার। অরিত্রীর জ্ঞান ফিরলে আমায় জানাস। আমি বাইরে গেলাম।”
অর্ণব অর্থীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। অর্থী ওর যাওয়ার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। এতো বছর ও যতবার দেশে গেছে, নিজের চোখে দেখে এসেছে, সৌহার্দ্য কতটা কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে দুটো বাচ্চা সামলেছে! তবুও ও চুপ ছিল। কারণ ও অরিত্রীর ডক্টর হওয়ার পথে কোনো বাঁধা দিতে চায়নি। কিন্তু এখন আর কোনো কারণ নেই সময় নষ্ট করার। ঐ নিষ্পাপ দুটো বাচ্চার জন্য হলেও ওকে কিছু একটা করতে হবে! সবার আগে ডক্টর ক্লারার সাথে কথা বলতে হবে। অর্ণবকে দেখে ওনার মুখে অসন্তোষের ছাপ স্পষ্ট ছিল। এর পেছনে কারণ কী?
•
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কিন্তু ঘরে এখনো আলো জ্বলেনি। প্রহর নিজের হাতে কফি বানিয়ে ঘরের সামনে এলে। দরজা ঠেলে খুলতেই শব্দতরঙ্গের কারণে নীরবতায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য ইতি ঘটলো। প্রহর ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে নিলে ফোনকলে পা থেমে গেল। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো, অর্থী কল করেছে। রিসিভ করে বললো,
“একটু ব্যস্ত আছি।”
ওপাশ থেকে অর্থীর ব্যস্ত কন্ঠ ভেসে এলো,
“আমার তো তোমার সাথে অনেক দরকারি কথা ছিল, ভাইয়া!”
প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো, “এখনই বলতে হবে?”
“তুমি ফ্রী হয়ে আমাকে একটু কল দিও। তোমার হেল্প লাগবে আমার, প্লিজ।”
“আচ্ছা, আমি কল ব্যাক করবো তোকে।”
অর্থী ফোন কেটে দিলো। সে জানে, প্রহর এখন কোথায় আছে! তাই ওকে বিরক্ত করলো না।
প্রহর কফির মগ দুটো বেডসাইড টেবিলে রাখলো। অন্ধকারে বাহির থেকে আসা অস্পষ্ট আলো কফি মগ থেকে ওঠা ধোঁয়াগুলো চোখে পড়ছে বেশ। প্রহর সুইচের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলো জ্বালাতে যাবে, এমনসময় মেয়েলি সুর ভেসে এলো,
“আলো জ্বালিও না। অন্ধকারেই শান্তি পাই আমি!”
প্রহর ক্ষীণ তেজদীপ্ত কন্ঠে বললো,
“তোমায় দেখতে এসেছি। আলো ছাড়া দেখবো কী করে? দেখতে না দিলে তোমায় স্পর্শ করতে চাই। একবার তোমায় ছুঁয়ে দেওয়ার অনুমতি দেবে আমায়, মধু?”
-চলবে…..
(কথা রেখেছি! এই পর্বের আরেকটা অংশ কালকে দিবো। সবার রেসপন্স কাম্য।)#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫০ (অংশ-২)
প্রহর আলো জ্বালালো না। অন্ধকারেও বাহির থেকে আসা আবছা আলোয় সবকিছুর অবয়ব স্পষ্ট। সে দৃপ্ত পায়ে মন্থর গতিতে এগিয়ে গেল বিছানায় হেলান দিয়ে বসা মানবীটির দিকে। ঘরজুড়ে পিনপতন নীরবতার মাঝে শুধু নিঃশ্বাসের ঘনতর শব্দ প্রবাহ কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
প্রহর বিছানার প্রান্তভাগে বসলো। মধুর হাতের ওপর হাত রাখতে সেকেন্ড পেরোনোর আগেই মধু একটানে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। দৃষ্টি জুড়ে কাঠিন্য ভর করলো ওর। প্রহর ম্লান মুখে তাকালো মধুর অবয়বের দিকে। বললো,
“কষ্ট দিয়ে কি খুব ভালো লাগে তোমার? তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসো না?”
মধুর কান্না পেল। চোখ ছাপিয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলো। সে কীভাবে প্রকাশ করবে নিজের অসহায়ত্ব? প্রহর কেন বুঝতে চায় না? নীরব কান্নার মাঝে হঠাৎই হেঁচকি উঠে গেল মধুর। প্রহর বুঝতে পারলো, মধু কাঁদছে। মধুর গালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই মধু ওর হাত সরিয়ে দিলো। প্রহর বিরস মুখে হেসে বললো,
“তোমার চোখের প্রতিটা অশ্রুকণা সাক্ষী দিচ্ছে, তুমি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসো!”
“আমার জীবনের একমাত্র আফসোস এটাই যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
প্রহর এবার দূরত্ব ঘোচালো। অকস্মাৎ মধুকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো। ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে, মধু দূরে সরার কথা ভাবার সুযোগও পেল না। মধুর চুলে অগুণিত বার ওষ্ঠ স্পর্শ করিয়েও ক্ষান্ত হলো না সে। নির্মল কন্ঠে বললো,
“যা ঘটে গেছে, সেটাকে তো আর বদলানো যাবে না! কিন্তু সামনের দিনগুলো তো আমার সুন্দর করে কাটাতে পারি, তাই না?”
মধু লেপ্টে রইলো প্রহরের বুকে। কয়েক মুহূর্ত এভাবে কাছাকাছি থেকে নিজের মনের তৃষ্ণা কিছুটা তো মিটে যাবে অন্তত! বারবার দূরে ঠেলে দেওয়ার নিয়ম টই মুহুর্তে একটু ভঙ্গ হলে খুব একটা ক্ষতি তো হবে না! ভেবেই মধু অবসন্ন কন্ঠে বললো,
“কী বলতে চাইছো?”
প্রহর দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মধুর মাথায় আরেকবার চুমু এঁকে বললো,
“যা হয়েছে, ভুলে যাও!”
মধু ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। অবাধ্য জলগুলো ঝরে পড়তেই মধু প্রহরকে ঝাপটে ধরে বলতে লাগলো,
“আমি কীভাবে ভুলবো, প্রহর? ভুলতে চাইলেও আমি ভুলতে পারি না। আমার জীবনের সাথে সবটা এমন ভাবে জুড়ে গেছে, আমি চাইলেও সেটা মুছে ফেলতে পারবো না। আয়নায় তাকালে নিজেকে দেখেই আঁতকে উঠি আমি। আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে, এক চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গেছে। কীভাবে আমার সামনের দিনগুলো সুন্দর করবো বলো? আমাকে যে বাকি জীবনটা ঘরবন্দী হয়ে কাটাতে হবে! লোকে আমায় দেখলে কী বলবে? আমি কীভাবে গিয়ে দাঁড়াবো মানুষের মাঝে?”
“তুমি যেমন ছিলে, ঠিক তেমনভাবেই দাঁড়াবে সবার মাঝে। আমি তো আমার সেই মধুকে দেখতে চাই, যে কারো পরোয়া করতো না। আজ তার মুখে যা শুনছি, সেগুলো বড্ড বেমানান ঠেকছে।”
“পরিস্থিতি সবটা বদলে দিয়েছে, প্রহর। মধু তো সেদিনই মরে গেছে, যেদিন ওর লোকের সামনে দাঁড়ানোর সব যোগ্যতা হারিয়ে গেছে। এখন আমি বেঁচে আছি শুধুমাত্র শ্বাস-প্রঃশ্বাসের জন্য, প্রাণহীন, নির্জীব হয়ে।”
প্রহর হতাশার সুরে বললো,
“তাহলে কি আমার কোনো মূল্য নেই তোমার জীবনে?”
“আমার জীবন তো শেষই হয়ে গেছে! তোমার জীবনে এখন আমার কোনো অস্তিত্ব থাকাই উচিত না। কেন এখনো আমার জন্য নিজের জীবনটাকে থামিয়ে রেখেছো? আমি তো কোনোভাবেই তোমার জীবনের পরিপূরক হতে পারবো না! আমার সেই যোগ্যতা নেই।”
প্রহর আলিঙ্গনের প্রখরতা বাড়িয়ে বললো,
“তুমি আমার বউ, আমার সহধর্মিণী। আমাদের দুজনের জীবন তো অনেক আগেই এক সুতোয় বাঁধা পড়ে গেছে! তোমার হয়তো আমায় প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার বেঁচে থাকার জন্য হলেও তোমাকে প্রয়োজন।”
“তাহলে আমার একটা কথা রাখবে?”
“বলো!”
“আমি একবার বাবা-মা আর ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাই।”
প্রহরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল। কন্ঠে দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে বললো,
“আমি কাউকে জানতে দেবো না যে, তুমি বেঁচে আছো। তুমি আমার সাথে থাকবে শুধুমাত্র আমার হয়ে! আর কারো ছায়াও আমি পড়তে দেবো না তোমার জীবনে।”
প্রহরের কঠোর গলায় বলা কথাগুলো শুনে মধু ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। বললো,
“চলে যাও তুমি! কখনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তুমি আমায় এভাবে আড়াল করে রেখেছো। এর জন্য তুমি কারো কাছ থেকে ক্ষমা পাবে না, প্রহর! তোমার আর আমার দূরত্ব কখনো মিটবে না।”
প্রহর মলিন হেসে বললো,
“কিন্তু আমি দূর থেকেই ভালোবাসবো, আজীবন ভালোবাসবো।”
•
অরিত্রীর জ্ঞান ফিরেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। অর্থী ওর পাশে এসে বসলো। কাঁধে হাত রেখে বললো,
“এখন কেমন লাগছে? ঠিক আছিস?”
অরিত্রী চোখ তুলে তাকালো। আনমনে বললো,
“একজন আমার গায়ে এসিড মেরেছিল, কিন্তু একটা মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ায় ওর মুখের ওপর এসিড পড়েছিল। এরকম একটা ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছিল। এটা কবে ঘটেছে? তুমি কি জানো?”
অর্থীর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। সে চকিত চোখে তাকিয়ে বললো,
“এগুলো তোকে কে বললো?”
“কেউ বলেনি। কিন্তু আমার কিছুটা মনে পড়েছে। তুমি কি জানো এর আগে-পরে কী হয়েছিল?”
অর্থী সচেতন চোখে বাইরের দেখা তাকালো। সপ্রতিভ কন্ঠে বললো,
“তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি তোকে দিবো। কিন্তু এখন না। অর্ণব আশেপাশেই কোথাও আছে। তোর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে, অরিত্রী! তুই সেগুলো পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে এসেছিস, তোর লক্ষ্যে পৌঁছেছিস। কিন্তু এবার তোকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। তোর জন্য যে অনেক প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় আছে!”
অরিত্রী অবুঝ মুখে বললো,
“মানে? আমি তোমার কোনো কথা বুঝতে পারছি না!”
“বোঝাবো তোকে! তুই শুধু….. ”
“কী বোঝাবি তুই?”
অর্ণবের গলা শুনে দুজনেই কিছুটা চমকে উঠলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো, অর্ণব ওদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। অর্থী হাসার চেষ্টা করে বললো,
“তেমন কিছু না। আমি তো ওকে এমনিতেই বলছিলাম! ওর মাথায় একটু পেইন হচ্ছে। তাই বুঝাতে চাচ্ছিলাম যে, সেন্সলেস হওয়ার পর এরকম একটু-আধটু পেইন হওয়াটা নরমাল।”
অর্ণবের কথাটা বিশ্বাস হলো না তেমন একটা! তবুও কিছু বললো। অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“চল, তোর মেডিসিন গুলো নিয়ে নিয়েছি। এখন বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিলেই শান্তি লাগবে দেখিস!”
অর্থী অরিত্রীকে ধরে নিয়ে গেল গাড়ি পর্যন্ত। ওদের বিদায় করে দিয়ে অর্থী ডক্টর ক্লারার কাছে গেল। ওনার কেবিনে নক করে বললো,
“ম্যাম, মে আই কাম ইন?”
ডক্টর ক্লারা হেসে বললেন,
“ইয়েস, এসো। অরিত্রী চলে গেছে।”
“ইয়েস ম্যাম! আমি এখন ওর ব্যাপারে কথা বলার জন্যই আপনার কাছে এসেছি। বিগত সাতটা বছর অরিত্রী আপনার আন্ডারে, আপনার খুব কাছাকাছি ছিল। তাই আপনার থেকে বেশি আর কেউ আমাকে হেল্প করতে পারবে না।”
ডক্টর ক্লারা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“হেল্প? কিসের হেল্প?”
“ম্যাম, আমি চাই অরিত্রীর যেসব স্মৃতি হারিয়ে গেছে, সেসব আবার ফিরে আসুক।”
“সেটা তো আমিও চাই! কিন্তু ওর মা মিসেস মোহনা আর কাজিন মিস্টার অর্ণব আমার কথা মানতে নারাজ। তাদেরকে আমি অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যেন বিডিতে অরিত্রীকে নিয়ে যায়। ওখানে গেলে ওর জন্য ব্যাপারটা পজিটিভ হবে।”
অর্থী চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তার মানে অর্ণব আর মোহনা আন্টি জেনে বুঝে সবটা করছেন?”
“হ্যা, অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে ওনারা অরিত্রীর-ই ক্ষতি করছেন। কিন্তু এটা তারা বুঝতে চাইছেন না।”
“আচ্ছা, তাহলে আমরা যদি অরিত্রীকে ওর জীবনে ঘটা সবকিছু বলে দেই, এতে তো কোনো সমস্যা হবে না, তাই না?”
“হবে। অলরেডি সাত বছর চলে গেছে। এখন আমরা হুট করে ওকে সবটা মনে করানোর জন্য প্রেশারাইজ করতে পারবো না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার চান্স বেশি। এক মাত্র উপায় হলো ওকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া। ওখানে গেলে ও চেনাজানা পরিবেশে নিজে থেকেই সবটা মনে করার চেষ্টা করবে।”
অর্থী হতাশ হলো। অরিত্রীকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া কখনো সম্ভব না। মোহনা আর অর্ণব এমনটা কোনো দিন ঘটতে দেবে না। ব্যর্থ মনে অর্থী বেরিয়ে গেল চেম্বার থেকে।
•
কারাগারের ছোট্ট একটা কোণে হাঁটুর ভাঁজে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে অরুণী। পরনে সাদা ধুলোবালি মিশ্রিত শাড়ির একপ্রান্ত মেঝেতে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। আজ সাত বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে অরুণী সূর্যের আলোও দেখে না। তার তো বেঁচে থাকার ইচ্ছে-ই মরে গেছে। আরমান আহমেদের লা*শের পাশে দাড়িয়ে সে নিজে আত্মসমর্পণ করেছিল। তার জীবনটা আজ কতই না সুন্দর হতে পারতো! কিন্তু একজনের খেলার গুটি হয়ে সেই সুন্দর জীবনটার এক বড় অংশ সে কারাগারেই কাটিয়ে দিলো। আর কয়েকটা মাস পরেই তার কারাদণ্ড শেষ হবে। অথচ নিজের মনে এখন এই জেলখানা থেকে বের হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে খুজে পাচ্ছে না অরুণী।
“পাপের তুলনায় শাস্তির বোঝাটা বড্ড কম হয়ে গেল। তবুও আত্মশুদ্ধি তো হলো! কী বলো, ড. অরুণী?”
-চলবে…..#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫১
অরুণী চোখ তুলে তাকালো। সৌহার্দ্যের প্রখর চোখের দিকে নজর পড়তেই মুখ জুড়ে শুকনো হাসি খেলে গেল ওর। পরক্ষনেই হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। শুভ্র ফিকে রঙের শাড়ির প্রান্তদেশ মেঝেতে গড়িয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। সৌহার্দ্যের মুখোমুখি চোখে চোখ রেখে দাড়ালো অরুণী। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে লৌহদন্ড ধরে উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো নিষ্পলক। সৌহার্দ্য বিব্রত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অরুণীর এমন নজর ওর একদম অপছন্দ। অরুণী হাসলো। বললো,
-আমার নজরে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, সৌহার্দ্য! আমার চোখ জুড়ে তোমার জন্য অঢেল প্রেম আছে, এটা সত্যি। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার কোনো সাধ বা তৃষ্ণা নেই।
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকালো। অরুণীর কাছে এমন কোনো কথা যেন একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল! অরুণীর নিজের ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবার। মেয়েটা হয়তো নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। সৌহার্দ্য বলার মতো কিছু পেল না। ক্ষণিকের নীরবতা শেষে অরুণী আবার বললো,
-অবাক হয়েছো? আমি কিন্তু সত্যি বলছি! দেরিতে হলেও তিক্ত বাস্তবতা বুঝতে পেরেছি আমি। যখন তোমাকে হারানোর বেদনায় আমার ভেতরে তীব্র দহন শুরু হয়েছিল, ঠিক তখনই আমার বাবা সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যা ইচ্ছে, তাই করেছি। কিন্তু দিনশেষে আমি প্রতারিত, আমার প্রাপ্তির খাতা শুন্য! আমার অপরাধের বোঝা বড্ড বেশি ভারী হয়ে গেছে। আমার হাত আমি বহুবার র*ক্তা*ক্ত করেছি। এই হাতের মালিক তোমায় ডিজার্ভ করে না, সৌহার্দ্য। দেরীতে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমায় পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তোমার আর আমার সম্পর্ক বদলেছে। তুমি অরিত্রীর বর! তোমার দিকে সেরকম চোখে তাকানোও আমার জন্য পাপ। আমি আমার পাপের বোঝা আর বাড়াতে চাই না। আমার মন আজ অকপটে মেনে নিতে বাধ্য যে, সৌহার্দ্যের প্রাণজুড়ে শুধুমাত্র চাঁদের অস্তিত্ব-ই সুন্দর!
সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যাক! দেরী করে হলেও অরুণী তার ভুলটা বুঝতে পেরেছে। সে ম্লান হেসে অরুণীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোমার জীবন আজ এই বদ্ধ কারাগারে কাটানোর কথা নয়, অরুণী! ডক্টর তুমি। হসপিটালে রোগীর কাঁধে ভরসার হাত রেখে তাদের সেবা করাটা তোমায় মানায়। কিন্তু তুমি সেটা বাদ দিয়ে আমার জীবন এলোমেলো করে দেওয়ায় মগ্ন ছিলে। আজ তোমার জন্য তরী আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, আমার বাচ্চা দু’টো এতো বছর মা ছাড়া থেকেছে, বড় হয়েছে। মা থাকা সত্বেও ওরা আজ মাতৃহীন। এসব কিছুর জন্য তোমায় আমি চাইলেও ক্ষমা করতে পারবো না, অরুণী।
অরুণী শুকনো হাসি দিয়ে বললো,
-ক্ষমার যোগ্য কোনো কাজ করিনি, তাই তোমার ক্ষমা আমি প্রত্যাশাও করি না। তুমি আমায় বাকি জীবনটা এই দম বন্ধকর জায়গায় কাটিয়ে দিতে দিলেও পারতে!
-তোমার অপরাধের তুলনায় তোমার শাস্তি আসলেই অনেক তুচ্ছ আর এটা আমার কারণেই হয়েছে। কারণ তরীর ইচ্ছেটা তুমি পূরণ করেছো। ও সবসময়ই চেয়েছে, ওর মায়ের খু*নী যথাযথ শাস্তি পাক। সেই শাস্তিটা ও নিজের হাতে দিতে চেয়েও পারেনি। তুমি ওর ইচ্ছে পূরণ করেছো। আরমান আহমেদকে যেই মৃত্যুটা তুমি দিয়েছো, এর চেয়ে বড় শাস্তি আর দেওয়া সম্ভব না। ওনার লা*শে*র দিকে কেউ তাকাতে পারেনি। তোমার করা সব অপরাধের পেছনে কলকাঠি তো উনিই নেড়েছেন! তাই তোমার প্রতি একটু সহানুভূতি থেকে সবটা করা। দু-এক মাসের মধ্যেই তোমাকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে কাটিও! ভালো কিছু করতে না পারলেও অন্তত অন্যায় কিছু করো না।
সৌহার্দ্য আর কালক্ষেপ করলো না। পা ঘুরিয়ে চলে গেল অরুণীর দৃষ্টি সীমার বাইরে। অরুণী অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে হাসলো। আনমনে বললো,
-তোমার বর অরিত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টির জন্য আমিই দায়ী। কিন্তু কিছু কিছু দূরত্বও অনেক প্রয়োজন! তুমি এটা একদিন বুঝবে, সৌহার্দ্য।
•
সৌহার্দ্য বাড়ি ফিরলো দুপুরের পর। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই বেডের দিকে চোখ পড়লো। প্রণয়-প্রণয়ী বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে। সৌহার্দ্য ওদের দিকে তাকিয়ে আনমনেই হেসে ফেললো। এগিয়ে গিয়ে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিলো।
ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে বসতেই সৌহার্দ্যকে দেখে দাদী বললো,
-রোজ রোজ দুপুরের খাবার দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর খাইলে চলবে? এতো দেরী করে বাড়ি ফিরিস ক্যান? একদিন একটু তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা কর!
সৌহার্দ্য খেতে খেতে বললো,
-কী করবো বলো, দাদী? ডক্টরদের জীবন এমনই হয়! হুটহাট ইমার্জেন্সি পড়ে যায়। আর তাছাড়া আজকে তো হসপিটালের জন্য দেরী হয়নি!
দাদী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে ক্যান দেরী হইসে?
-অরুণীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর কয়েকদিন পরই তো ওকে ছেড়ে দেবে!
দাদী মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন। সুজাতা সৌহার্দ্যকে খাবার পরিবেশন করতে করতে বললেন,
-কেন যে ওর সাথে দেখা করতে যাস! তোর বাবার সামনে ভুলেও একথা মুখে আনিস না।
দাদী বিরস মুখে বললো,
-ঐ মেয়ের সাথে আর দেখা করার দরকার-ই নাই তোর। ও তো ছাড়া পাইতেছেই! এখন নিজের মতো চলতে দে ওরে। ওর থেকে দূরে দূরে থাকাই সবার জন্য ভালো।
সৌহার্দ্য খেতে খেতে মাথা নাড়লো। খাওয়া শেষে ঘরে ঢুকতেই দেখলো প্রণয়ী ঘুম থেকে উঠে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য ওর পাশে বসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-ঘুম কেমন হলো আমার প্রিন্সেসের?
প্রণয়ী মুখ ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকালো না। কিছু বললোও না। প্রণয়ীর নীরবতা দেখা সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
-মন খারাপ? ইজ দেয়ার এনিথিং রোঙ্?
-আমাদের মা কবে ফিরে আসবে, পাপা?
প্রণয়ীর প্রশ্ন শুনে সৌহার্দ্যের মুখ মলিন হয়ে গেল। প্রণয় হুট করেই শোয়া থেকে উঠে বসে প্রণয়ীর মাথায় নিজের হাত দিয়ে আঘাত করলো। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-গাধী, তোকে কী বলেছিলাম? স্টুপিড মেয়ে!
সৌহার্দ্য প্রণয় আর প্রণয়ী দুজনকেই নিজের দুই পাশে বসালো। দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
-পাপা তোমাদের খুব একটা ভালোবাসতে পারে না, তাই না?
দুজনেই না-বোধক মাথা নাড়ালো। প্রণয়ী মলিন মুখ করে বসে রইলো। প্রণয় বললো,
-তোমাকে আমরা অনেক ভালোবাসি, পাপা। কিন্তু মাম্মাকেও অনেক মিস করি। আজকে মাদার্স ডে ছিল। এজন্যই প্রণয়ীর মুড অফ!
প্রণয়ী সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি কেন এতোদিন পর্যন্ত আমাদের মায়ের ছবি পর্যন্ত আমাদের দেখাওনি? আমাদের মা কেমন ছিল, পাপা?
সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-সে রূপের তরী ছিল। যদি আকাশের চাঁদ এবং তাকে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয়, তবে সবার দৃষ্টি তার দিকেই আঁটকে থাকবে। তার মেঝে গড়ানো আঁচল, ঢেউ খেলানো চুল, শুভ্র ও ঈষৎ রক্তিম রঙা মুখশ্রী আর সেই নিষ্পাপ হাসির বর্ণনা কেউ বলে শেষ করতে পারবে না। এমনকি আমিও না!
প্রণয় আর প্রণয়ী দুজনই সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে একসাথে বললো,
-মা কবে ফিরে আসবে, পাপা?
সৌহার্দ্য ম্লান মুখে হেসে বললো,
-যেদিন আমার অপেক্ষার পালা শেষ হবে!
-সাত বছরেও অপেক্ষার অবসান হলো না?
-অমাবস্যার অবসান ঘটিয়ে একদিনের ব্যবধানে।চাঁদের দেখা ঠিকই পাওয়া যায়। হয়তো আমাদের জীবনে অমাবস্যা সাতবছর ছিল! কিন্তু চাঁদকে তো একদিন দেখা দিতেই হবে, তাই না?
•
অর্থী বিরক্তি নিয়ে অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। অরিত্রী মনযোগ দিয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। অর্থী বললো,
-এই চান্স মিস করিস না, ইয়ার! সুযোগ জীবনে বারবার আসে না।
অরিত্রী হেসে বললো,
-তোমার মনে হয়, মা মানবে কোনোদিন?
-কিন্তু তোর লাইফে সবকিছুরই এক্সপেরিয়েন্স নিতে হবে।
অরিত্রী আনমনে বললো,
-ইচ্ছে তো আমারও হয়! কিন্তু আবার ভয়ও হয়। মনে সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছি না আসলে….
-চলবে…..
(পরবর্তী পর্ব কাল সন্ধ্যার দিকে দিবো। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।)