প্রণয়াসক্ত হাওয়া পর্ব -০১

‘আপনি কেমন হাসবেন্ড? আপনার সামনে আমাকে অন্যকেউ পছন্দ করে বলে দাবী করছে অথচ আপনি চুপ আছেন, কিচ্ছুটি বলছেন না তাকে।’ রায়া ক্রো’ধ নিয়ে কথাটি বলল রাবির উদ্দেশ্যে।
রাবি স্বাভাবিক ভ’ঙ্গিতে তাকিয়ে ঠান্ডা ভাবে জবাব দিলো,
‘আমাদের বিয়ে একটি চুক্তি। আই এম নট ইন্টারেস্টেড!’
‘পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয়েছে আমাদের। এটাকে আপনি চুক্তি হিসাবে নিচ্ছেন কেন?’
‘সি, আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না। আমার এবং তোমার পরিবারের সকলের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে। নাউ, এটা আমার কাছে চুক্তিই!’
‘ব’ল’দা বে’ডা। চুক্তি কাকে বলে ঠিকমতো বুঝে না। আ’জা’ই’রা লজিক শোনায়।’ বিরক্ত নিয়ে বিড়বিড় করে বলল রায়া।
নতুন কয়েকজন গেস্ট এসেছে তাদের কাঁপল পিক ক্লিক করতে। রাবি তখন রায়ার সঙ্গে বেশ স্বাভাবিক আচরণে ছবি তুলে। কাউকে বুঝতে দেয় না মনে মনে সে চরম বিরক্তিতে হাতড়াচ্ছে। সকলের সামনে রাবির এমন স্বাভাবিক ভাবভঙ্গি দেখে রায়া ভেতরে ভেতরে ক্ষো’ভি’ত। এক পলক নজর ফেলে অতীতের কিছু স্মৃতিতে মসগুল হলো।

সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে রায়া। ইতিমধ্যে বাবার বন্ধুর ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। প্রথম পর্যায়ে মা’কে নানা অজুহাত দেখালেও বাবার সামনে সেসব অজুহাত বেশিক্ষণ টেকসই হয় না। নেহাৎ বাবাকে ভ’য় পায় বলে এক ধমকে বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে। প্রথমে চেনাজানা হীন অচেনা একজন পুরুষকে স্বামী হিসাবে মানতে না রা জ ছিল। তবে সে ভেবেছিল তার বন্ধুর ছেলে রাবি হয়তো তাকে বুঝবে। তাকে প্রথম পর্যায় বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু তেমনটি হয় না। ইমাম শেখ এর দুই ছেলে-মেয়ে রাবি ও তার মেয়ে রিনি। চারজন পরিবারের ছোট্ট সংসার তাদের। তার কাপড়ের বিশাল ফ্যাক্টরি রয়েছে। রাবিকে সে আমেরিকায় পড়াশোনা করিয়েছে। সেখান থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনারের কাজ শিখে বাংলাদেশে এসে বাবার ব্যাবসায় সহযোগিতা করছে। তবে তার ইচ্ছে বড়ো ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া। পরিবারের বাকি তিনজন নরম স্বভাবের লোক হলেও রাবি ছিল তাদের চেয়ে জ টি ল প্রকৃতির। কথা কম বলা গু’রু’গ’ম্ভী’র স্বভাবের সে। বা’স’র রাতেই সেটি রায়া বুঝতে পারে। রায়া তাকে সালাম করে দাঁড়াতেই রাবি গ ম্ভী র কণ্ঠে বলেছিল,’প্রথম ফর্মালিটি পালন হলে আমরা নামাজ পড়তে পারি? তোমার উপহার নেও।’ অবাক হয়ে দেখেছিল বারিকে রায়া। একটি সিম্পল ডায়মন্ডের রিং ছিল সেই ছোট্ট বক্সের মধ্যে। সম্ভবত বা’স’র ঘরে স্বামী সযত্নে নববধূকে পড়িয়ে দেয়। তার ক্ষেত্রে হয় উল্টো। সেটি হাতে নিতে দেরি হলে রাবি বিছানার ওপর রেখে বাথরুমের দিকে এগোয়। ঘুমাবার সময় হয় আরো বি প ত্তি। রাবি মাঝখানে কোল বালিশ রেখে ঘুমিয়েছে। যা করার কথা তার, তা করছে রাবি। সবিস্ময় হয়ে রিম শুধু রাবিকে দেখেছিলই কাল। আজ তাদের বৌভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
রাবির এক চাচাতো ভাই রায়ার সৌন্দর্যের প্রসংশা করে তার বেশ পছন্দ হয়েছে বলে দাবী করে। এবং এ-ও বলে আগে রায়ার খোঁজ পেলে তার আগে সে বিয়ে করতো। বন্ধুর এমন রসিকতায় রাবি কোনো রিয়েক্ট করে না দেখে ক্ষেপে যায় রায়া। এখন তার মনে হতে থাকে মানুষের সঙ্গে নয়, কোনো কলা গাছের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তার। যার মধ্যে নেই কোনো র’স’ক’ষ, না আছে রোমান্টিকতার ছোঁয়া। নেহাৎ সে স্টেজে বসে আছে, অন্যথায় নিরালায় বসে থাকলে কপাল চা’প’ড়া’তো!

রাবি হঠাৎ রায়ার হাতের ওপর হাত রাখলো। রায়া বি স্মি ত নজরে তাকাতে রাবি কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘আমাকে একটু প্র’টে ক্ট করো।’
কপাল কুঁচকে গেলো রায়ার। জিজ্ঞেস করল,
‘প্র টে ক্ট কেন করব?’
‘সামনে দেখো মেরুন রঙের গাউন পরিধান একটি মেয়ে এগিয়ে আসছে। ও আমার সিনিয়র চাচাতো বোন বাবলি।’
রায়া রাবির নজর অনুসরণ করে তাকায়। রাবি ফেল বলে,
‘ছোট বেলায় আমার জো’র করে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একটি অ ন্ধ কা র রুমে আটকে রেখেছিল। আমি সেদিন খুব ভ’য় পেয়েছিলাম। বাট তবুও তাকে ভালোবাসি বলে স্বীকার করেনি। কেঁদে দেওয়ার পর সে আমাকে ছে’ড়ে দেয়। এবং পরবর্তীতে সে আমাকে এটা বলে থ্রে’ট দেয় তাকে ভালো না বাসলে আমার….।’ এতটুকু বলে থামে রাবি। বাকিটুকু বলতে চাইছে না লজ্জায়।
রায়া ভ্রু কুঞ্চন করে জানতে চাইলো,
‘আপনার?’
‘হোয়াট এভার, তুমি আমাকে জাস্ট প্র টে ক্ট করো। শী ইজ ভেরি ডে’ঞ্জা’রা’স!’
মৃদু হাসি ফুটে রায়ার ঠোঁটে। প্রথম স্বামীর হাতের স্প’র্শ পেলো, হোক সেটি অন্য কারণ বশত! ফের কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে বাবলি তড়িঘড়িতে এগিয়ে আসে তাদের নিকট। একে তো সে ক্ষে’পে আছে রাবির বিয়ে হওয়াতে। তার ওপর রাবি রায়ার হাত ধরে রেখেছে। সে চো য়া ল শ’ক্ত করে রাবির উদ্দেশ্যে বলল,
‘হাত সরা রাবি। তুই কীভাবে বিয়ে করিস এই ভি খি রি মেয়েকে। তোর বাপের পছন্দ একদম ভালো না। ওর তোর বউ হওয়ার যো গ্য তা রাখে না।’
রায়ার মন নিমিষেই বি ষ ণ্ণ তা র ঘি’রে ধরে। সে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দুলাল আলি সরকারি চাকরি করেন। তাদের পরিবার এতটাও গরীব নয় যে ভি খা রি বলে কেউ আঙুল তুলবে। রাবি রায়ার হাত আরেকটু শ’ক্ত করে ধরলো। আঙুল ওর পানে তাক করে বলল,
‘সি, ওর কপালে কী ভি খা রি লিখাটি রয়েছে? নেই! ও আমার ওয়াইফ। বাংলাতে যাকে অর্ধাঙ্গিনী বলে। এখন সে শেখ বংশের পুত্রবধূ। আপনার এসব অহেতুক কথা বলা বেমানান।’
‘মুখে বুলি ফুটেছে তোর তাই না। কতদিন থাকে তোর এ বউ আমিও দেখবো।’ ঝাঁ ঝা লো কণ্ঠে বলল।
‘দ্বিতীয় জনম বলে যদি কিছু থাকে। তাহলে সে-ই জনমেও আমি তার অর্ধাঙ্গিনী হবো।’ ক্রো ধ স্বরে বাবলিকে কথাটি শুনালো রায়া।
বাবলি রা গা ন্বি ত নজরে তাকিয়ে রয় তার পানে। রায়া একজন খাদেমদারকে ডেকে একটি কোকের বোতল নেয়। সেটির ডাকনা সরিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে এক চুমুক খেয়ে রাবির সামনে তাক করে ধলর। রাবি থতমত খেয়ে তাকায়। রায়া কী করতে চাইছে সেটি সে বুঝতে পেরেছে। মনে মনে বলল,
‘শীট! এটা না করলেই নই।’
তবে সে স্বাভাবিক ভাবে বাবলির সামনে সেটি হাতে তুলে চুমুক বসায়৷ বাবলি তাদের মধ্যকার এমন প্রেম আদান-প্রদান দেখে ফুঁসতে ফুঁসতে নেমে পড়ল। রাবি বোতলটি রিমের হাতে দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে ওয়াশরুমে এলো। ঠোঁটে অনবরত পানি দিয়ে ধুঁ তে আরম্ভ করল। এক পর্যায়ে রা গ ও বিরক্ত নিয়ে বলল,’ড্যা ম!’ উচ্চারণ করল।
রাবির ঠোঁট লালচে হয়ে যায় অতিরিক্ত ছোঁয়ার ফলে। পরিশেষে টিস্যু দ্বারা মুখ মুছে বেরিয়ে আসে। স্টেজে বসে রায়াকে এক পলক দেখে রা গে নজর সরিয়ে নিল। রায়া রাবির ঠোঁটের পানে নজর ফেলে মুচকি হেসে হাত মুখের ওপর রেখে বলল,
‘ঠোঁট সাবান দিয়ে ধুঁয়েছেন নাকি সো ডা দিয়ে?’ বলে ঠোঁট ভাজ করে হেসে ফেলে। রায়ার হাসিতে রাবির রা গ বৃদ্ধি পেল। ক্ষি প্ত স্বরে বলল,
‘প্রয়োজন ছিল না ওটা করার।’
রায়া নিরুত্তর থেকে হাসে। সে ইচ্ছে করেই করেছে। এক কথায় যাকে বলে সুযোগে সৎ ব্যবহার। হাসি দেখে রা গে র বশে নজর ঘুরিয়ে রাখে রাবি। এই মেয়ে তার কপালে কতটা সুখ-দুঃখ বয়ে আনবে পরবর্তীতে সেটাই দেখার পালা।

অনুষ্ঠান শেষ হয়। রায়াদের বাড়িতে রাবিকে যেতে হয়। গুরুজনদের রীতিনীতি পালন করে দু’জনকে বাড়ির ভেতরে আনা হয়। রায়ার চাচাতো-মামাতো ভাইবোন’রা রাবির সঙ্গে আড্ডা দিতে বসলে রায়া রুমে আসে বিয়ের লেহেঙ্গা পরিবর্তন করতে। পিন গুলো খুলে ওড়না ফেলার সময় রাবি উপস্থিত হয়। রায়া পুনরায় ওড়না গায়ে জ ড়ি য়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘এখানে কেন আপনি? আপনার তো বাহিরে থাকার কথা।’
‘বাহিরে বলতে?’
‘আপনার শা লা-শা লি দের সঙ্গে।’
‘ওরা আমাকে ইরিটেট করছে। আমার রেস্ট দরকার।’
রা গে মুখশ্রী ঘু চে এলো রায়া। নিরুত্তর থেকে একটি থ্রিপিস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধরলে রাবি ডেকে থামায়।
‘ওয়েট রায়া, এসবের মানে কী?’
‘কোনসব?’
‘খাট ফুল দিয়ে সাজানো কেন? আর ওরা আমার কাছে বা স র ঘরের টাকা চাইছে কেন? আমাদের বা স র না কাল শেষ।’
রায়া বিড়বিড় করে, ‘গ র্দ ভ।’ বলে নৈঃশব্দে রুম ত্যাগ করল।
রাবি তার উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হলো। এক নজরে রুমটির চারদিক দেখেনিল। সম্ভবত ফ্ল্যাটের চারটি রুম। এ রুমে ড্রেসিং টেবিলের, পড়ার টেবিল, মিনি সোফা ও আলমারি রয়েছে। বেশ গুছানো রুমটি। নিঃসন্দেহে রায়া মার্জিত রুচিশীল মেয়ে বোঝা যাচ্ছে। বিছানার এক প্রান্তে বসতেই রায়া একজন বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে ভেতরে আসলো। বাহিরে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এটা রায়ার নানি। রাবি তাদের দেখে ওঠে দাড়ালো। রায়া গমগমে গলায় নানির উদ্দেশ্যে বলল,
‘তোমার নাতিজামাই জানে না ফুল দিয়ে কেন রুমটি সাজানো হয়েছে। তুমি তাকে বুঝিয়ে বলো।’
পান চিবোনো ভঙ্গিতে রচনা খাতুন বললেন,
‘বোঝানোর কী আছে। আইজ আমার লগে হের বা স র হইবো এটা কইলেই তো হয়।’
হতবাক হয়ে রাবি উৎকণ্ঠিত গলায় ‘হোয়াট’ উচ্চারণ করল।
রায়া খিলখিল করে হেসে ফেলে। নানি ক ঠি ন উত্তর দিয়েছে। যার ফলে রাবির বি ব র্ণ মু খ!
.
.
.
#চলবে?

#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[১]
#সুমাইয়া_মনি

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। ছোট্ট সাধারণ ভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছি। আশা করি নতুন জোড়া শালিকদের ভালো লাগবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here