প্রণয়ের_দহন পর্ব ৮

#প্রণয়ের_দহন
#পর্ব_৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

দৌড়ে গিয়ে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আরিয়ান আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। আমি পাত্তা দিলাম না সেটা। আমার ওপর অভিমান করে আছে জানি। আমি ভালোবাসা দিয়ে সব অভিমান ভাঙিয়ে দিব। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা। আরিয়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে জুড়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমি পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেই। আমি ছলছল চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি।

একদম আমার কাছে আসবি না। একদম আমাকে জড়িয়ে ধরবি না। তোকে দেখলে আমার গা ঘিন ঘিন করে। অলটাইম আমার থেকে দুরে থাকবি। সামাজিক দূরত্ব বজায়া রাখবি। তুই করোনা ভাইরাস। তোর আশেপাশে যাওয়া যাবে না।

এবার আমি আরিয়ানের দিকে ভালো করে তাকালাম। আরিয়ানের বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। যেমন ভাবে বেরিয়ে গেছিলেন তেমন ভাবে ফিরে আসেননি। এলোমেলো চুল। শার্টের ওপরের দিকে দুইটা বোতাম। প্যান্টের এক পা টাকনু পর্যন্ত আরেকটা হাঁটুর একটু নিচে। আরিয়ান কেমন যেনো দুলছে। আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি পড়ে যেতে নিলে আমি ধরে ফেলি। উনার মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। আজকেও হয়তো ড্রিংক করেছেন।

আপনি আজকে আবার ড্রিংক করেছেন?

হুম করেছি। তাতে তোর কী?

কেনো করেছেন?

আমি তোর কাছে জবাবদিহিতা করব সেটা তুই ভাবলি কী করে? আমি কী করবো না করবো সব কী তোকে বলে করতে হবে? একদম আমাকে ধরবি না। আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না। তোর নিহানের কাছে যা। তুই তো ঐ নিহানকে ভালোবাসিস। নিহান বললে আমাকে খুন করে চলে যেতেও তুই দুই বার ভাববি না। দুরে সরে যা আমার থেকে।

আমার সম্পর্কে আরিয়ানের এমন ধারণা। নিহানের কথায় আমি আরিয়ানকে খুন করবো।

আরিয়ান ধাক্কা দিয়ে আবার আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলও। আরিয়ান আবার পড়ে যেতে নেয়। আমি গিয়ে আবার ধরে ফেলি। এবার আর আরিয়ান আমাকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারেনি। নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিয়েছে আমার ওপর। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলছে। উনাকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি আমি। উনাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কোনো মতে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।

উনাকে শুইয়ে দিয়ে যখনি চলে আসতে নিব। তখনি আমার শাড়ীর আঁচলে টান পড়ে। পিছনে ঘুরে দেখি উনার পিঠের নিচে আমার শাড়ীর আঁচল। আঁচলটা যখন ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসতে নিব। তখনি আরিয়ান ধপ করে চোখ খুলে আমার গাল দুটো চেপে ধরে।

আমাকে কী একটু ভালোবাসা যায় না? আমি কী এতটাই অযোগ্য তোর ভালোবাসা পাওয়ার। বল না? আমি তো নিহানের থেকে দেখতে খারাপ না। হয়তো নিহানের মতো বড়লোক নই। কিন্তু যা আছে তা দিয়ে তোকে সুখি করার ক্ষমতা তো রাখি। তোর কোনো ইচ্ছে আমি অপূর্ণ রাখব না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমি তোর ইচ্ছেগুলো পুরণ করার চেষ্টা করব।

আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আমি আরিয়ানের কথাগুলো সহ্য করতে পারছি না। কথাগুলো আমার কানের ভিতর দিয়ে তীরের মতো ঢুকছে।

তুই তো আমার আয়না। আমার বউ। তাহলে তুই কেনো নিহানের সাথে যাবি? তুই কোথাও যাবি না। তুই আমার সাথে থাকবি। তোকে আমি কোথাও যেতে দিব না। দরকার পড়লে তোকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখবো। রুমের দরজা লক করে বন্দি করে রাখব।

উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে হাতে ধরে টান দিয়ে উনার বুকের ওপর ফেলে দেন। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। উনি বিড়বিড় করে কিছু বলছেন। কিন্তু সেই কথাগুলো আমার কাছে স্পষ্ট না। কিছুক্ষণ পরে উনার সারা শব্দ না পেয়ে মাথা তুলে উনার মুখের দিকে তাকাই। উনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। হঠাৎ আমার নজর যায় উনার বুকের দিকে। উনার বুকের ওপর বেশ কিছু নখের আঁচড়।

হঠাৎই আমার বুকটা ধক করে ওঠে। উনি কী কারো সাথে ইন্টিমেট হয়েছেন? শুনেছিলাম নিজের স্ত্রীর কাছে ভালোবাসা না পেলে অন্য নারীতে আসক্ত হয়। ডিপ্রেশনে অন্য নারীর সাথে ইন্টিমেট হয়। আরিয়ানের ও কী এখন আর আমাকে ভালো লাগে না? অন্য কাউকে ভালো লাগে? না না আমি এসব কী ভাবছি? আরিয়ান শুধু আমাকেই ভালোবাসে অন্য কাউকে না। আরিয়ান শুধু আমার অন্য কারো নয়।

কিন্তু আরিয়ান তো ড্রিংক করেছে। নিজের সেন্সে নেই। যাকে বলে মাতাল। মাতাল অবস্থায় সবাই নিজের ভালোবাসার মানুষকে সব জায়গায় দেখতে পায়। অন্য কারো মাঝে নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পায়। কেউ যদি ইচ্ছে করে…..

না আর ভাবতে পারছি না। মাথা ভন ভন করছে। বুকের ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আমি আরিয়ানের কাছ থেকে ছাড়াতে চাইলে পারি না। একজন ছেলের শক্তির সাথে আর যাই হোক একটা মেয়ে কখনোই শক্তি দিয়ে পেরে ওঠতে পারে না।

উনার বুকের ওপর মাথা রেখেই শুয়ে পড়লাম। আমার চোখের পানি দিয়ে উনার বুকের কাছের শার্টি ভিজে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

_______________

সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজের মাথা বালিশে আবিষ্কার করলাম। পাশে হাত দিয়ে দেখি আরিয়ান নেই। আমি ফট করে চোখ খুলে ওঠে বসি। রুমে একবার চোখ বুলায় কিন্তু আরিয়ান নেই। ওয়াশরুমের দরজা খোলা তার মানে আরিয়ান ওয়াশরুমে নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সবে মাত্র ৭ টা বাঁজে। আমি বেলকনিতে যায়। কিন্তু সেখানেও আরিয়ান নেই।

আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। কিন্তু সেখানেও আরিয়ান নেই। বাবা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে। আনহা আপেল খাচ্ছে আর মুভি দেখছে। আম্মু কিচেনে রান্না করছে। আমিও আম্মুর কাছে গেলাম। মনটা আনচান আনচান করছে জিঙ্গেস করার জন্য আরিয়ান কোথায়?

কিন্তু লজ্জায় জিঙ্গেস করতে পারছি না। শাশুড়ীর কাছে তো আর জিঙ্গেস করা যায় না। নিজের স্বামী কোথায় গেছে? এটা জিঙ্গেস করার মতো লজ্জাজনক আর কিছু হতেই পারে না। আম্মু মনে হয় কিছু বুঝতে পেরেছেন। হালকা হেসে বলেন,

আরিয়ানের জন্য টেনশন করিস না। আরিয়ান হসপিটালে গেছে। অনেক সকালে গেছে তো তাই তোকে বলে যেতে পারেনি। আমাকে বলে গেছে তুই ঘুম থেকে ওঠলে তোকে বলে দিতে। নাহলে আবার তুই টেনশন করবি। আরশি আমি খুব খুশি হয়েছি তোরা দুজন দুজনকে মেনে নিয়েছিস এই জন্য।

আম্মু আরো অনেক কথা বলছে কিন্তু সেই কথাগুলো আমার কান দিয়ে ঢুকছে না। আমি তো আমার ভাবনায় মশগুল। কালকে রাতে ভেবে রেখেছিলাম সকালে ঘুম থেকে ওঠে জিঙ্গেস করব। উনার বুকের ওপর নখের আঁচড়গুলো কার? সকালে ওঠে উনার মুখটাই দেখতে পেলাম না। সমস্যা নাই উনি হসপিটাল থেকে আসলেই উনাকে জিঙ্গেস করব।

এর মাঝে আম্মুর ব্রেকফাস্ট তৈরি করা শেষ হয়ে গেলো। আমরা দুজন মিলে খাবারগুলো ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। তারপর চারজন এক সাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। ব্রেকফাস্ট শেষে আমি, আনহা আর আম্মু সোফায় বসলাম গল্প করার জন্য। আব্বু রেডি হয়ে অফিসে চলে গেছেন। গল্প করার মাঝেই আম্মু হঠাৎ বলে ওঠে,

আরশি তুই আর এখন থেকে শাড়ি পড়বি না। থ্রি-পিছ পড়বি। তোকে কে শাড়ি পড়ে বউ সেজে ঘুর ঘুর করতে বলছে। তুইও আনহার মতো এই বাড়ির মেয়ে। আনহা যেভাবে থাকবে তুইও সেভাবেই থাকবি। বাচ্চা একটা মেয়ে শাড়ি সামলাতে গিয়ে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলিস।

আম্মুর কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে ওঠে। সত্যি এমন শাশুড়ী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সত্যিই আমি ভাগ্যবতী। তাই তো মায়ের মতো একটা শাশুড়ী পেয়েছি।

_______________

বিকেলবেলা আমি আর আনহা বসে বসে টিভি দেখছি। তখনি আরিয়ান আসে। কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে যায়। আমিও উনার পিছু পিছু চলে যায়। উনি রুমে গিয়ে ফুল পাওয়ারে ফ্যান ছেড়ে গলার টাই ডিলে করছেন আমি গিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম।

কীরে এমন সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আপনার বুকের ওপর নখের আঁচড়গুলো কার?

যার থাকার কথা তার।

দেখুন একদম হেয়ালি করবেন না। সত্যি করে বলুন তো কোনো সাথে মেয়ের চক্কর টক্কর চলছে না তো?

সেই কথা আমি তোকে কেনো বলবো?

কেনো বলবেন নাহ? অবশ্যই বলবেন। আপনি বলতে বাধ্য। আমি আপনার স্ত্রী। আপনার সম্পর্কে সব কিছু জানার অধিকার আমার আছে।

আরিয়ান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে আমার গলা থেকে উড়না খুলে নেন। আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে আমার গাড়ে কামড় বসিয়ে দেন।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here