#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০২
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“কিছুক্ষণ হওয়ার পরও যখন নিজের গালে কোনো ব্যথা অনুভর করলাম না তখন পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি আরাফ ওই মেয়েটার হাত ধরে আছে আর মেয়েটা আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে”। আরাফ একবার আমার দিকে তাকিয়ে ওই মেয়েটাকে বলে উঠলো…
‘কলেজ মা’রা’মা’রি করার জায়গা না তৃণা’।
‘আরাফ তুমি দেখলে না এই থার্ড ক্লাস মেয়েটা আমাকে ধা’ক্কা দিলো’।
‘ও তো তোমায় ইচ্ছে করে ধা’ক্কা দেয় নি। ও খেয়াল করে নি তোমাকে। আর তোমার সাথে ধা’ক্কা লেগে ও নিজেই পড়ে গেলো সেটা তুমি দেখলে না’?
‘আরাফ তুমি এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার হয়ে কথা বলছো? লাইক সিরিয়াসলি? আর ও পড়ে গেছে তাই না? ও ইচ্ছে করে পড়ে গেছে সবার সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য। এসব মেয়েদের আমি ভালো করেই চিনি হুহ’।
‘চুপ করো তৃণা। ওর মুখ দেখে তোমার হচ্ছে ও ইচ্ছে করে পড়ে গেছে? নিজে যেমন সবাইকে তেমন ভাববে না বুঝলে। মানুষকে সম্মান দিতে শিখো’।
‘আরাফফ’?
‘সরো সামনে থেকে’।
“আমি এতোক্ষণ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি আর চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু ঝরে পড়ছে। আসলে কেউ কখনো এভাবে থার্ড ক্লাস মেয়ে বলে নি তো তাই তৃণার কথাটা আত্মসম্মানে লেগেছে। আরাফ এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো”। তারপর একটু বিচলিত কন্ঠে বললো…
‘আরে আপনি তো ডান হাতে চোট পেয়ছেন, র’ক্ত বের হচ্ছে। আসুন আমার সাথে’।
‘আমি ঠিক আছি’।
‘কোথায় ঠিক আছেন? আমি ব্যথা পেয়েছেন আমি জানি। আর সবসময় এতো তাড়াহুড়ো করেন কেন? একটু দেখেশুনে চলতে পারেন না’?
“আমাদের কথার মাঝেই আরাফের ইশারায় রিমি দৌঁড়ে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসলো। আরাফ কখন আমার হাত টেনে নিয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছে আমি খেয়াল’ই করি নি”। স্যাভলনের কারণে যখন ক্ষত স্থানে জ্বা’লা অনুভর করলাম তখন ডুকরে কেঁদে উঠতেই আরাফ ধকমের স্বরে বলে উঠলো…
‘এই মেয়ে একদম চুপ। তুমি কি বাচ্চা নাকি? একটুতেই কাঁদো কেন? এতো সহজ-সরল হয়ে যেও না। দুনিয়ায় এতো সহজ-সরলের কোনো দাম নেই’।
‘আমি কিছু না বলে শুধু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি’।
‘নাও হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় ফার্মেসী থেকে ব্যথার ঔষধ নিয়ে যাবে বুঝলে’।
‘আমি কিছু বললাম না’।
“রিমি আর আমি একটা রিক্সা নিয়ে কলেজ থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রিক্সায় বসে বসে আমি আরাফের কথাগুলো ভাবছি। যেখানে সবাই বলে আরাফ বড়লোকের ছেলে হওয়ায় অহংকার বেশি সেখানে ওর আজকের কাজকর্মে তো একটুও মনে হলো না ওর মধ্যে অহংকার আছে। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম। রিমির আলতো ধা’ক্কায় আমি ভাবনা থেকে বের হয়ে এলাম”। রিক্সা থেকে নামতেই রিমি বলে উঠলো…
‘কিরে কি ভাবছিস’?
‘কই কিছু না তো’।
‘আরাফ ভাইয়ার কথা ভাবছিস নিশ্চয়ই’।
‘আরে না, ধুররর’।
‘বুঝি বুঝি বন্ধু’।
‘ঘোড়ার ডিম বুঝো তুমি’।
‘আচ্ছা আরাফ ভাইয়া তোকে এতো কেয়ার করলো কেন? উনি তো কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলতে চান না’।
‘তুমিও যেখানে মনু, আমিও সেখানে। আমি জানমু কেমনে এসব’?
‘তাই তুমি কিছু জানো না’?
‘সত্যি কিছু জানি না। বাসার ভিতরে চল এবার’।
‘না রে আজকে যাবো না, বাসায় কাজ আছে একটু। তুই সাবধানে যা’।
‘ঠিক আছে তাহলে ফোন দিস’।
‘আচ্ছা’।
“আমি আর কিছু না বলে রিমিকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ঢুকে ওয়াশরুমে গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভা’ঙ’লো। কিন্তু মাথা ব্যথা আর প্রচন্ড জ্বরে চোখ খুলতে পারছি না। হাত আর কোমরের ব্যথায় জ্বর চলে এসেছে। আম্মু আমাকে ধরে ধরে উঠিয়ে একটু খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে শুইয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণ পরেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম। সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ছুটে গেলো। আস্তে আস্তে উঠে বসলাম কিন্তু এখনো মাথা ভার হয়ে আছে আর শরীরও দূর্বল। তাই আম্মু আজকে কলেজ যেতে নিষেধ করলো। তাই আমি রিমিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম যে, আজকে কলেজ যাবো না। সারাদিন শুয়ে-বসে থেকেই সময় কে’টে গেলো। রাতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো তাকিয়ে দেখি রিমি ফোন দিয়েছে”। তাই কল ধরে কানে দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো….
‘কিরে এখন কেমন আছিস’?
‘আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে ভালো আছি’।
‘কালকে কলেজ যাবি না’?
‘হ্যা যাবো’।
‘জানিস আজকে আরাফ ভাইয়া এসে আমার কাছে তোর খোঁজ করছিলো’।
‘কি বলিস’?
‘হ্যা আমি বললাম যে, তোর শরীর ভালো না তুই আজকে আসবি না তখন মুখটা কালো করে চলে গেলো। ব্যাপার কি রে’?
‘আরে এখানে ব্যাপারের কি আছে ভাই? উনি আমার অবস্থা দেখেছিলেন তাই হয়তো মানবিকতার খাতিরে আমার খোঁজ করেছন’।
‘কি জানি? আমার তো ডাল মে কুচ কালা লাগতা হে’।
‘চুপ থাক ভাই। তুই লেখাপড়া শেষ করে গোয়েন্দা হইস। সব জায়গায় সন্দেহ করোস’।
‘সন্দেহ সন্দেহ গন্ধ পেলে আমি কি করমু’।
‘চুপ থাকতে কইছি না তোরে’।
‘আচ্ছা বাবা চুপ করলাম, রাগিস না’।
‘হুম। কি করিস’।
‘শুয়ে আছি, তুই’?
‘আমিও’।
“এভাবে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কে’টে দিয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুকে ক্রল করছিলাম হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ এলো। মেসেজ’টা ওপেন করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম”। কারন মেসেজ’টা ছিলো…
“তুমি কি পারবে,
আমাকে একটা বৃষ্টিভেজা কদম ফুল এনে দিতে?
ঐ সুন্দর গাছটার থেকে।
ভেজা কদমের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে দেবে তোমার ভালবাসা,
আমার মনে, প্রানে;
তোমাকে অনুভব করবো অন্তরের গহীনে।
আমার সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে তোমাকে আহব্বান করবো আমার দিকে,
হৃদয়ের অন্তরালে।
যখন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে,
আমি গিয়ে দাঁড়াব ঐ কদম গাছের নিচে।
তুমি ছড়িয়ে পড়বে আমার উপর,
বৃষ্টির ফোটা হয়ে, ভেজা কদমের পাপড়ি হয়ে।
আমাকে কানে কানে বলবে,
ভালোবাসি, তোমায় ভালোবাসি”।
“হঠাৎ এমন একটা কবিতা দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর সেই নাম্বার’টায় কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এটা কে হতে পারে? আর এমন কবিতা কেই পাঠাতে পারে? আবার ভাবলাম হয়তো ভুল করে আমার নাম্বারে মেসেজ’টা চলে এসেছে। কিন্তু কবিতাটা অনেক সুন্দর ছিলো। যে এতো সুন্দর কবিতা লিখতে পারে সে মনের দিক থেকেও মনে হয় অনেক সুন্দর হবে। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম কালকে সকালে আবার কলেজ যেতে হবে”।
“সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভা’ঙ’লো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। তারপর নাস্তা করে আম্মুকে বলে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম”। কলেজে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে কলেজের ভিতর ঢুকতে গিয়ে একটা জিনিস দেখে আমি চমকে উঠলাম….
#চলবে….
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ)