প্রণয়াসক্ত পর্ব -০১

‘ও টেকা, ও পাখি তুমি উইড়া উইড়া আসো…উইড়া উইড়া আইসা তুমি’….

‘কত টাকা চাই’?

‘এ্যা’?

‘বলছি যে কত টাকা চাই’?

“আমি কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি নাতাশা আহমেদ। অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আর যিনি আমার গানের ভিতর ফোঁড়ন কাটলেন তিনি হচ্ছে বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান সোহেল চৌধুরীর ছোট ছেলে আরাফ চৌধুরী। কলেজের ক্রাশ বয়। মাস্টার্সে পড়েন। উনার সাথে কথা বলার জন্য প্রত্যেকটা মেয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে কিন্তু উনি কাউকে পাত্তা দেয় না। এমনকি কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলেন না। মেয়েদের থেকে একশ হাত দূরে থাকেন। মনে হয় মেয়েদের মধ্যে উনার এলার্জি আছে। সেই উনি নিজে থেকে এসে আমার সাথে কথা বললেন তা দেখে কলেজের সবাই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন”। আমাকে কিছু বলতে না দেখে উনিই আবার বলে উঠলেন….

‘কি হলো, বললেন না তো কত টাকা চাই’?

‘আমি টাকা চাই আপনাকে কে বললো’?

‘এই যে টাকার গান গাইলেন তার মানে আপনার টাকা চাই? তো বলুন কত টাকা লাগবে’?

‘টাকার গান গাইলেই টাকা চাই এমনটা ভাবলেন কেন’?

‘টাকা না লাগলে এই গান গাইলেন কেন’?

‘আমার ইচ্ছে। আপনার কি’?

‘হুহ্ যেই কাকের মতো কর্কশ গলা, তা দিয়ে আবার গান’?

‘এই এইই এইই আপনি কি বললেন’?

‘কই কিছু না তো’।

‘আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার গলাকে কাকের গলা বললেন’?

‘ওহ্ আপনি শুনে ফেলছেন? আপনার কান তো দেখি অনেক পরিষ্কার’।

‘আপনি না মেয়েদের সাথে কথা বলেন না? তো আমার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝ’গ’ড়া করছেন কেন’?

‘আমার সাথে কথা বলার জন্য তো প্রত্যেকটা মেয়ে অপেক্ষা করে আপনিও তার বাহিরে নেই তাই মনে হলো আপনার সাথে একটু কথা বলি। আর আপনি কি বললেন? আমি ঝ’গ’ড়া করছি? আমাকে কি আপনার মতো ঝ’গ’ড়ু’টে মনে হয়’?

‘কি আমি ঝ’গ’ড়ু’টে’?

‘তা নয় তো কি? কত টাকা চাই বললেই হতো দিয়ে দিতাম’?

‘আপনার টাকার গরম আমার সাথে দেখাতে আসবেন না, যত্তসব’।

“আরাফকে কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে আসলাম। মনে মনে আরাফের চৌদ্দ গুষ্টিকে উদ্ধার করে দিচ্ছি”। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো…

‘আমার চৌদ্দ গুষ্টিকে কেন উদ্ধার করছেন তারা কি করলো’?

‘আমি অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে’।

‘আপনি! আপনি আমাকে ফলো করছেন’?

‘ওমা না, ফলো করতে যাবো কেন? আমি তো ওখান থেকেই শুনতে পেলাম আপনি আমার চৌদ্দ গুষ্টিকে বকছেন তাই বলতে এলাম তারা কি করলো’?

‘উফফ অসহ্য, এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমি পা’গ’ল হয়ে যাবো’।

‘সমস্যা নেই, আমি পাবনা দিয়ে আসবো। আচ্ছা আগে থেকেই কি সিট বুকিং করে রাখবো’?

‘চোখ গরম তার দিকে তাকালামল’।

‘ওভাবে তাকাবেন না, প্রেমে পড়ে গেলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নাই’।

‘ধুররররর’।

“রাগে গজগজ করতে করতে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। সারাদিন পড়ালেখা, কাজের মধ্যে দিয়েই সময় কে’টে গেলো। রাতে ঘুমানোর সময় আরাফের কথাগুলো মনে পড়লো। ও তো মেয়েদের সাথে কথাই বলে না তাহলে? যাকগে কলেজের সবাই তো আর সমান না। খারাপ ভালো মিলিয়েই সবাই থাকবে। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে মোবাইলের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভে’ঙে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আমার বেস্টফ্রেন্ড রিমি’র ফোন”। কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো…..

‘এই হ’ত’চ্ছা’ড়ি কই তুই’?

‘ঘুমাচ্ছি’।

‘হ তুই ঘুমাইতেই থাক। আমি তোর জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হইয়া যাই’।

‘তুই রাস্তায় কেন’?

‘এএ ছেরি তোরে না কালকে কইলাম আজকে আমরা একসাথে কলেজে যামু’।

ওহ্ স্যরি স্যরি ভুলে গেছিলাম’।

‘হইছে, তোরে ১০ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি রেডি হয় আয়’।

‘আচ্ছা জানটুস’

“কল কে’টে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একটা নীল আর সাদার কম্বিনেশনের থ্রিপিস পড়ে নিলাম। চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি করলাম আর হালকা একটু লিপস্টিক আর চোখে একটু কাজল দিলাম। রেডি হয়ে কলেজ ব্যাগটা নিয়ে আম্মুকে বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। বাসা থেকে বের হয়ে একটু সামনে আগাতেই রিমি কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। আমাকে দেখেই রাগী চোখে তাকালো”। আমি একটু বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললাম…

‘দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছিস বুঝি’?

‘হ, আমার তো কাম নাই। সারাদিন তোর দুলাভাইরে নিয়েই নাচমু’।

‘আহা এতো রাগ করছিস কেন রে’?

‘তোরে ১০ মিনিটে আসতে কইছি। তুই আইছোস ২০ মিনিটে, পাক্কা ১০ মিনিট লেইট’।

‘হইছে ভাই এবার চল। এতো রাগ করতে হবে না। আমার মতো বাচ্চার সাথে রাগ করতে তোর বুক কাঁপে না’?

‘তুই বাচ্চা? সিরিয়াসলি? কয়েকদিন পর নিজেই বাচ্চার মা হয়ে যাবি’।

‘চুপ কর ভাই, চল এবার’।

“একটা রিক্সা নিয়ে আমি আর রিমি কলেজে চলে এলাম। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বসে বসে সবার সাথে গল্প করছিলাম”। এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো…

‘এই যে মিস বাদাম খাবেন’?

‘আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছে’।

‘কি হলো বাদাম খাবেন’?

‘আপনাকে বলেছি আমি বাদাম খাবো’?

‘না আমিই বললাম। খালি মুখে আড্ডা দিতে কি কারো ভালো লাগে? আসলে কথায় আছে না উপকারীর ভাত নাই’।

‘এতো উপকার আমার আবার হজম হয় না ধন্যবাদ’।

‘আপনি না অনেক ঝ’গ’ড়ু’টে’।

‘আমার না কাউকে মা’র’তে হাত নিশপিশ করছে’।

‘বাব্বাহ্ শরীরে হাড্ডি ছাড়া কোনো মাংস নাই সে আবার মা’রা’মা’রি করবে হাহাহা’।

‘আপনাকে তো আমি’….

‘আমি কিন্তু আপনার সিনিয়র। সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখুন’।

‘আপনি আমার সাথে ঝ’গ’ড়া করতে আসছেন কেন? আমি কি আপনার সাথে প্রথমে খুঁটাখুঁটি করতে গেছি’?

‘আমি ভালো কথা বলতে গেছিলাম। কারো সাথে খুঁটাখুঁটি করতে যাই নি হুহ্’।

‘আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা ধুরররর’

“আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। কলেজ থেকে বের হতে যাবো ঠিক তখনই কার সাথে যেনো ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম। কোমরে ব্যথা পেয়েছি। মুখ দিয়ে ছোট একটা আর্তনাদ বের হয়ে আসলো। রিমি দৌঁড়ে এসে আমাকে ধরে আস্তে আস্তে উঠালো। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ছোট ছোট ড্রেস পড়া মেয়ে রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই হাত উঠিয়ে আমাকে চ’ড় মারতে নেয়। আমি ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললাম”। কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও যখন নিজের গালে কোনো ব্যথা অনুভব করলাম না তখন পিটপিট করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম….

#চলবে

#প্রণয়াসক্ত
#সূচনা_পর্ব
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here