প্রণয়ে তুমি পর্ব -০৪

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৪
#writer_nahida_islam

তুমি পারবে মা। আমি এতো দিন খুজে ও কাউকে পাইনি যে আমার আবদারের যোগ্য। কিন্তু তোমাকে প্রথম দিন দেখে ই আমার ভালো লেগেছে। আমার উশৃংখল ছেলেটার লাইফটা গোছানোর জন্য তোমাকে আমার চাই মা। তুমি প্লিজ না করো না।

অতসী সাথে সাথে দাড়িয়ে পড়লো, মুহুর্তে ই বলে দিলে,

-স্যার এ কখনো সম্ভব নয়। আপনি কী চান আপনার ছেলের জন্য আমার লাইফ নষ্ট হয়ে যাক।

– মা রে আমার ছেলেটা এতোটা ও খারাপ না যে তোমার লাইফ নষ্ট করে দিবে। প্রথমে তোমার একটু কষ্ট হবে ও সাথে মিলিয়ে নিতে কিন্তু দেখবে একটা সময় সব ঠিক হয় যাবে। তোমার লেখাপড়া তোমার বাবার চিকিৎসা সব দায়িত্ব আমি নিবো মা। বিয়ে পর তোমার বাবা আমাদের সাথে ই থাকবে।

অতসী মুচকি হেসে বললো,

-লোভ দেখাবেন না স্যার, প্রয়োজনে আমি কাজ করবো তাও অন্যের বোঝা হতে চাই না। আমি খুব ই দুঃখীত আপনার কথা রাখতে পারবো না বলে।

অতসীর বাবা সবটা চুপ করে দেখছিলো, হঠাৎ ই নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো,

-অতসী মা তুমি ভেতরে যাও, তোমার বাবা মরে যায়নি যে তোমাকে ই সব ডিসিশন নিতে হবে।

-বাবা আমি তো খারাপের জন্য কিছু করছি না।

-ভেতরে যেতে বলেছি মা।

অতসী কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে যায়। অতসীর বাবা খুব স্বাভাবিক ভাবে উওর দেয়।

–আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন আমি আমার মেয়েকে রাজি করবো কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিবেন যে আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিবেন না।

কিবরিয়া চৌধুরী অতসীকে বাবার হাত ধরে বললেন,

-ভাই আমি আমার মেয়েকে যতটা না আদর করি অতসী মাকে তার থেকে বেশি ভালোবাসবো। অতসী মা আমার আরেকটা মেয়ে হয়ে থাকবে।

-কিন্তু বিয়ে হবে ঘরোয়া ভাবে। আগামী শুক্রবার।

-সে আপনি যেভাবে চান।

অতসী বাবার সাথে কিবরিয়া চৌধুরী কথা শেষ করে বের হয়ে গেলো। উনারা বের হওয়ার সাথে সাথে অতসী দৌড়ে বাবার রুমে আসলো, বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো,

-বাবা তুমি এমনটা কেনো করলে। এই ছেলে ভালো না বাবা।

অতসী দুইচোখ মুছে, মাথায় হাত ভুলিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বললেন,

-যে পরিবারের বাবা মা বোন এতো ভালো সে পরিবারে গিয়ে তুই খারাপ থাকবি না মা। আমি কদিন বাচবো, বল। আমি দেখে যেতে চাই তোর সুখ, তোর সংসার। তাহলে মরার পর কোনো আক্ষেপ থাকবে না।

অতসী চুপ করে শুধু বাবার কথা গুলো শুনলো,

-আর যদি মনে করিস যে তুই কষ্টে থাকবি বাবার কথায় ভরসা পাবি না। তাহলে দে কল দিয়ে বলে দেই এ বিয়ে হবে না।

অতসী এবার ও প্রতি উওরে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো। হয়তো ভাগ্যে এটা ই লিখা ছিলো। থাপ্পড় দেওয়ার পর থেকে ই জ্বালিয়ে খেয়েছে এ কদিন। বিয়ে করলে তো এ ছেলে জীবনটা নরক বানিয়ে ছাড়বে।

ইফাজের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দেখি ই বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। সারা রুমে পায়চারি করতেছে। তুষার বিছানায় বসে বসে মোবাইলে চেট করছে আর চোখে ইফাজকে দেখছে।

-তুই বিয়ে না করলে আঙ্কেল কে বল আমার আর অতসীর বিয়ে দিয়ে দিতে।

-এই চুপ করবি তুই, যা না তুই ই গিয়ে বল।

-না ভাই মানতে হবে অতসী দেখতে ও কিউট । ব্যবহার ও কিউট।

-তোর মাথা।
দাড়া এখন কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবো বিয়েতে কেনো রাজি হলো।

ইফাজ ফোন নিয়ে দিলো অতসীকে কল, রিং হচ্ছে কিন্তু অতসী ধরছে না।

অতসী ঠিক ই দেখছে ইফাজ কল দিচ্ছে কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব তাই ধরছে না।
ইফাজ সাথে সাথে মেসেজ পাঠালো।

-কল ধরবা নাকি তোমার বাসায় আসবো।

এবার অতসী আরো বেশি রেগে গেলো, কল রিসিভ করে বললো,

-শান্তি দিবেন না হে।

-তোমার জন্য আমি অশান্তিতে আছি আর উনি শান্তি খুজে।

-এই শুনেন আমি আপনার কোলে উঠে বসে নাই আপনাকে অশান্তি দেওয়ার জন্য।

-এখন বসো নাই ঠিক ই তো কদিন পরে আমাকে বিয়ে করে আমার মাথায় চেপে বসবা।

-আপনাকে একটা ভালো বুদ্ধি দেই। আপনি পালিয়ে যান।

-কাকে নিয়ে পালাবো আর কেনো পালাবো।

-আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না, তাই আপনি পালিয়ে যান।

-আমি কী তোমাকে বিয়ে করার জন্য জামাই সেজে বসে আছি নাকি। তুমি পালিয়ে যাও তোমার মুখ ও দেখতে চাই না বিয়ে তো অনেক দূরের কথা। আর এখন আমাকে এই মেয়েলি বুদ্ধি দিতে আসছো কেনো? তখন যে বলছিলাম দরজা খুলো না এটা তো আর কান দিয়ে যায়নি।

-তখন আমি আপনার কথা শুনিনি এখন আপনি আমার কথা শুনেন। আপনি পালিয়ে যান।

-তুমি পালিয়ে যাও, পালিয়ে যাওয়া মেয়েদের কাজ তাছাড়া আমার একটা সম্মান আছে।

-আপনার সম্মানের গুষ্টি তুষ্টি মারি কল কাটেন।

-এতো কল কাটেন কাটেন করো কেনো। আমার বাবাকে কল দিয়ে বলে যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো বিয়ে করবে না।

-এ কথা আপনার বাবাকে আপনি গিয়ে বলেন। কল দিয়ে খবরদার এসব ফালতু আলাপ করবেন না আমার সাথে। অসহ্য।

বলে ই অতসী কল কেটে দিলো। ইফাজ ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

-এই মেয়ে এতো বদ শয়তানের দাদি।

-তুই ও কম কিসে তুই ও শয়তানের দাদা।

-আচ্ছা বল তো তুই আমার বন্ধু নাকি ঐ মেয়েটার। তোরা যেভাবে ঐ মেয়ের সাপোর্ট দেস মনে হচ্ছে আমি কেউ না।

-সত্যি কথা তেতু হয় রে ইফাজ।

কথাটা বলে এক মুহুর্তে জন্য ও না দাড়িয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায় তুষার।

সন্ধ্যা হতে ই অতসী জানালার পাশে বসে বাহির তাকিয়ে আছে। বাবার সাথে অনেক রাগ হচ্ছে আবার ভাবছি বাবা জন্য তো আমি এখনও বেচে আছি আমার জন্য বাবা এতো কষ্ট করলো এখন বাবাকে কষ্ট দিবো কী করে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে অতসী গিয়ে দরজা খুলে দেখলো অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট। কিন্তু আসেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না। নিচে একরা চিরকুট পড়ে থাকতে দেখে অতসী উঠিয়ে খুলে দেখলো লিখা,

-আমার মিষ্টি বৌমার জন্য মিষ্টি পাঠালাম।

অতসী আনমনে মুচকি হেসে বললো, ছেলে চায় বিয়ে ভেঙ্গে দেই আর বাবা বিয়ের জন্য মিষ্টি পাঠায়।

ইফাজ তার মায়ের রুমে বসে আছে,

-তুই আমার রুম থেকে যা আমি ঘুমাবো কালকে আবার আমার নতুন বৌমাকে নিয়ে শপিং করতে যাবো।

-মা এই মেয়ে আমাকে সবার সামনে থাপ্পড় মারছে বিয়ে করলে তো লাথি দিয়ে রুম থেকে বের করে দিবো।

অনিতা বেগম ইফাজের সামনে তার বাবাকে ডাকতে ই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেছে। ইফাজের মা অট্টহাসি দিয়ে দরজা লক করে শুয়ে পড়লো।

পরের দিন সকালে, অন্তু গাড়ি নিয়ে এসেছে অতসীকে শপিং করতে নিয়ে যাবে বলে। অতসী গাড়িতে উঠতে ই দেখলো ইফাজ পাশে বসে আছে।

-নাচতে নাচতে চলে আসছে শপিং করতে।

-আপনার পা দিয়ে তো নাচি নাই তো আপনার এতো জ্বলে কেনো?

-আমি বলেছি আমার জ্বলে।

-চুপ করে বসে থাকুন নয়তো গাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

-এমন ভাব করছো যেনো তোমার গাড়িতে বসে আছি।

-আমি ও আপনার গাড়িতে বসে নেই।

-কথা পাড়া যাবে না এক নাম্বারের বদ মাইয়া।

-নিজে ইমাম সাহেব।

এবার ইফাজ রেগে গিয়ে অতসী হাতে জোরে চিমটি কাটতে ই অতসী চিৎকার দিয়ে উঠে।

চলব,

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here