প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -১৮

#প্রণয়ের_আসক্তি
১৮.
#WriterঃMousumi_Akter

পৃথিবীতে অনেক কিছুর ই আসক্তি আছে তার মাঝে ভয়ংকর আসক্তি হলো কাউকে ভালবাসা।সব আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা যায় একটা সময় কিন্তু ভালবাসার আসক্তি থেকে এক জনমে চেষ্টা করেও বেরিয়ে আসা যায় না।নিরব মৃথিলাও আসক্তিতে জড়িয়েছে, দুজন দুজনের প্রতি ভালবাসার আসক্তিতে।হসপিটালের কেবিনে ছোট্ট বেডে নিরবের বুকে মাথা দিয়ে সুয়ে আছে মৃথিলা।ভয় ছিলো শুধুই বাহানা নিরবকে কাছে টানার প্রবল ইচ্ছা লজ্জায় প্রকাশ করতে না পেরে ভয়ের বাহানায় নিরবের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছে।নিরব একজন প্রকৃত প্রেমিক প্রেয়সীর চোখে স্পষ্ট দেখছিলো তাকে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছা।প্রেয়সীর চোখে তাকিয়ে বুঝতে বাকি ছিলো না তাকে কাছে চাইছে সে।বাইরে ভীষণ ঝড়বৃষ্টি ভেতরে দুজন ভালবাসার মানুষ আপণ মনে দুজন কে আপন করে নিয়েছে।জন্মের পর অনেক গুলো রাত মৃথিলা পার করেছে তবে আজকের মতো শান্তির রাত মৃথিলা এর আগে কখনো পার করে নি।জীবন কখনো এতটা সুন্দর হতে পারে মৃথিলা আগে জানতো না।নিরবের বুকে মাথা রেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে শান্তি আর নিরাপদ জায়গা মাথা রেখেছে সে।বাইরে প্রচন্ড ঝড়ের মতোই প্রণয় আসক্তি নিরব মৃথিলার ভেতরে।ভয় পেওনা আমি আছি নিরবের এই একটা স্ট্রং কথা মৃথিলাকে সাহস জুগিয়েছে ভীষণ ভাবে।প্রেয়সীর গালে, চোখে, কপালে,ঠোঁটে অসংখ্য চুম্বনে আদর ভালবাসায় রাত টা স্পেশাল করে তুললো নিরব।এই রাত টা ছিলো তাদের কাছে ভালবাসাময় প্রণয়ের রাত।এই প্রণয় টা ছিলো পবিত্র প্রনয়।

পরের দিন সকালে দুজনে বাসায় চলে আসে।মৃথিলা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

_________________________________
“মৃথিলা হসপিটাল থেকে এসছো অনেক ক্লান্ত তুমি আজ কিন্তু একটুও চুলার কাছে যাবে না।আজ নিরব তার বউ কে স্পেশাল আইটেম রান্না করে খাওয়াবে।”

“মৃথিলা এক গাল হেসে দিয়ে বললো,আপনার বউ এর কিছুই হয় নি।আপনার বউ এখন সম্পুর্ন সুস্থ। ”

“সুস্থ হোক তবুও আমি আজ রান্না করবো।আমার সুন্দরী বউ কালো হয়ে যাচ্ছে।আম্মু বলবে তার বৌমাকে দিয়ে রান্না করিয়েছি তিনবারের জায়গা ছয়বার রান্না করিয়েছি।আম্মুর নিষ্পাপ ছেলেটাকে এভাবে অপরাধী করে পানিসমেন্ট খাওয়াতে চাও তাইনা?”

“আম্মুর ছেলেটাকে তো আমি একটুও নিষ্পাপ দেখলাম না।ভারী অসভ্য আর দুষ্টু।”

“অসভ্যতা করতে চাই একটু সুযোগ দিবা প্লিজ।যেটুকু অসভ্যতা করেছি অনেক কৌশলে। বউ তো কাছেই যেতে দেয় না।শুধু আমাকে দূরে সরিয়ে রাখে।আর এখন আদর, ভালবাসা কে অসভ্যতার উপাধি দেওয়া হচ্ছে।হে পুরুষ জাতি তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো আমার বউ এর কথা।বউ হলো ভালবাসার নিজস্ব সম্পত্তি।তাকে ভালবাসতে গেলেই শুনতে হয় অসভ্যতার উপাধি।”

“আমি কিন্তু শ্বাশুড়ি কে ফোন দিয়ে বলে দিবো তার নিষ্পাপ ছেলের কুকির্তী।”

“কি বললে তুমি আম্মুকে বলবে?কি বলবে শুনি।”

“বলবো প্রিয় শ্বাশুড়ি মা আপনার এই আদরে বাদর ছেলেটা আমি ঘুমোলে রোজ রাতে চুরি করে চুমু দেয়।কিন্তু প্রায় রাতে আমি টের পেয়ে যায়। বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকি।”

“আচ্ছা তার মানে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে থাকা হয়েছে।আমার মতো একটা ইয়াং ড্যাশিং হট লুকিং ছেলের চুমুর স্বাদ এমনি ভাল হওয়ার কথা।এইজন্য না বোঝাত ভান ধরে থাকা হয়েছে তাইনা।?”

“ওয়েট করূণ আপনি কল দিয়েছি আমি।”

“আরে সত্যি বলবে নাকি।মান সম্মান যা ছিলো তাতো এইখানেই শেষ দেখছি।”

ফোনের ওপাস থেকে নিরবের আম্মু বললো কেমন আছো মা মৃথিলা।

হ্যাঁ মা আমি ভাল আছি আপনি কেমন আছেন মা।

মা ডাক টা শুনেই নিরব অবাক হয়ে গেলো।এতদিন সে ম্যাম ম্যাম করেই ডেকেছে।আজ একদম নিজের মায়ের মতো করে বলছে।

নিরবের আম্মু ও আজ ভীষণ খুশি।মৃথিলার মুখে মা ডাক শোনার ভীষণ ইচ্চা ছিলো তার।নিরবের আম্মু বুঝতে পেরেছে মৃথিলা তার ছেলেকে মেনে নিয়েছে।না হলে তার সাথে এইভাবে কথা বলতো না।

“নিরবের আম্মু বললো,ভাল আছি মা।তোমরা এবার ফিরে এসো।আমি আর একা থাকতে পারছি না।শেষ বয়সে তোমাদের সাথেই কাটাতে চাই।”

“মৃথিলা হেসে দিয়ে বললো হ্যাঁ মা খুব শিঘ্রই চলে আসবো আপনার ছেলেকে বলে দিন যেনো এখান থেকে নিয়ে যায়।”

“ঠিক আছে মৃথিলা বলে দিবো।ওখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো।”

“যেখানে আপনার ছেলে আছে কিসের অসুবিধা হবে বলুনতো।”

“কখনো মন খারাপ করবে না তুমি।খারাপ লাগলেই আমাকে ফোন দিবে।”

“আপনি ছাড়া এখন আর আমার কে আছে মা।সব ই তো শুনেছেন মা।জীবন আর ভালবাসা আমার সাথে কিভাবে মজা করলো।সবাই আমার আপন কিন্তু কেউ আমার না।জানেন মা খুব কষ্ট হচ্ছিলো সঠিক সময়ে আপনার ছেলে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।চারদিকে তাকিয়ে দেখি আমার আপন বলতে আর কেউ নেই আমার যাওয়ার মতো জায়গা নেই তখন আপনার ছেলের চোখে দেখেছিলাম আমার প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা।”

“আমি সব জানি মা।অনেক আগেই সন্দেহ হতো আমার।তাইতো তোমাকে মেয়ে বানাতে চাইতাম। যাক এখন সব ঠিক আছে এটাই অনেক বড় কথা।তোমার মা আমি আছি তো।মায়ের অভাব তোমার রাখবো না মা।ভালো থেকো মা।”

—————————————————

বাবা নিরব আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি হয়তো একটা মিথ্যা পরিচয় দিয়েছি মানুষকে মিথ্যা বলেছি যে মেধা আমার মেয়ে নয় মৃথিলা আমার মেয়ে।মৃথিলা আমার কলিজার টুকরোর চেয়ে কম কিছু না।আমার ব্যাক্তিগত যে সম্পত্তি তার সব ই মৃথিলার নামে করে দিয়েছি সেটা মেধার আম্মু জানে না।আমি আমার মেয়েকে ঠকায় নি। আজ কতগুলো রাত আমি ঘুমোই না।আমি বা মেধা কেউ যে মৃথিলাকে ভালবাসি নি এটা ঠিক না।তবে মেধার আম্মু মৃথিলাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।সন্তান হারা ছোট্ট একটা মেয়েকে ট্রেন লাইনের পাশে পেয়েছিলাম আমি।একটা মানুষ তার চোখ মুখ ঢাকা সাথে তার ওয়াইফ ও ছিলো। তারা তখন মৃত্যু পথযাত্রী ছিলো।আমার হাত ধরে টেনে বলেছিলো প্লিজ আমার মেয়েকে বাঁচান।আমার মেয়েকে পারলে নিজের সন্তানের পরিচয়ে বড় করবেন।আপনার ঠিকানা টা দিয়ে যান।যদি কখনো ফিরে আসি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো।আপনার কাছে অনুরোধ করছি ভাই আমার মেয়েটাকে বাঁচান।এই আশে পাশেই ওরা আছে যারা আমার পরিবার কে মারতে চাই।আপনি যদি আমার মেয়েকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের পরিচয় দেন তাহলে ওরা বুঝে যাবে ও আমাদের সন্তান।আপনাত কাছে অনুরোধ আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমার মেয়েকে আপনার মেয়ের পরিচয়ে বড় করবেন।তখন মেধার আম্মুর জরায়ু অপারেশন করা।মেধা ছাড়া আর কোনো সন্তান আমাদের হবেও না।সেদিন বাসায় গিয়ে মেধাকে বললাম তোমার জন্য বোন এনেছি।মেধা ভীষণ খুশি হলো।কিন্তু মেধার আম্মু মেনে নিলো না।এতিম খানায় রাখতে বললো।আমার পরিবারের সবাইকে ডেকে বললাম এই মেয়েটা বড় হলে জানবে ও আমাদের সন্তান আর মেধাকে বলবো কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।আরো কিছু কারণ ছিলো।সবাই মেনে নিলেও মেধার আম্মু মেনে নেয় নি।নিজের মেয়ের পরিচয় সে আড়ালে রাখতে রাজি ছিলো না।ছোট্ট মৃথিলাকে মেধার আম্মু কোনদিন একটু কোলে নেয় নি।আমি সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকে দুধ বানিয়ে খাইয়েছি।আলাদা রুমে রেখে মানুষ করেছি।আমার হাতে ধরেই বড় করা মেয়েটাকে।আমার মেয়েকে আমি কতটা ভালবাসি সেটা আমি জানি।আমার মনের মাঝে মৃথিলাকে নিয়ে ছিলো ভীষণ চিন্তা।এখন তোমার কাছে মৃথিলা আছে আমার আর কোনো চিন্তা নেই।

ইতি এক হতভাগা বাবা।

মৃথিলার বাবার মেইল টা পড়ে ভীষণ মন খারাপ হয়ে নিরবের।মানুষ টা একটা অসহায় বাচ্চাকে কতই না কষ্ট করে মানুষ করেছে।উনার প্রতিটি কথার মাঝে এক একটা দীর্ঘশ্বাস।তবে ওনার ওয়াইফ এতটা বাজে মহিলা কেনো?ছিঃমেয়ে মানুষ এতটাও বাজে হতে পারে।মৃথিলার দিকে তাকালেই মনে হয় নারী মানেই বিশাল ভালবাসার অংশ।ওই দিকে মেধার আম্মুকে দেখে মনে হয় ভালবাসার কলঙ্ক।বাকি রইলো মেধা।মেধা একটা মিথ্যাবাদী। তবে ভাল খারাপ এর মাঝে অবস্হান করছে।তবে নিজের ভালবাসার মানুষ অন্যর হলে সেদিকে রিয়্যাক্ট করা ঠিক আছে।বাট আগেই এত মিথ্যা বললো কেনো?মেধা যে কোনো কিছুর জড়িত সেটাই বা কিভাবে বলি।ওর বয়স ই বা কত।কাহিনী যেটায় হোক বের করে ফেলবো।

“নিরব মৃথিলাকে ডেকে বললো,
মৃথিলা কিছু কথা জানতে চাই। ঠিক ঠিক উত্তর দিবে তো তুমি।”

“জ্বী দিবো বলুন না কি জানতে চান।”

“আচ্ছা তোমার বাবা কি কখনো তোমার মায়ের মতো করতেন।বা মেধা কি খারাপ ব্যবহার করতো।”

“বাবা আমায় ভীষণ ভালবাসেন।বাবারা যেমন হয় উনিও তেমন।বাবার ভালবাসায় কোনো খুঁত নেই।”

“আমার মনে হয় মৃথিলা উনাদের কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না।যা হবার তাতো হয়েই গিয়েছে।সত্য মিথ্যা যাচাই হয়ে গিয়েছে।তুমি তোমার বাবার সাথে কথা বলো।”

“বাবার জন্য আমার ও খুব খারাপ লাগছে।ওই ভাল মানুষ টা কেনো আমার বাবা হলেন না বলতে পারেন।বাবা মায়ের মাঝে আমাকে নিয়ে অসংখ্যবার ঝগড়া হয়েছে।আমার সব সময় মনে তো আমি বাবার নিজের মেয়ে বলে বাবা আমাকে সব সময় সাপোর্ট করেন।শুধু মনে হতো মা আর আপু আশ্রিতা কারণ আমাকে কিছু বললেই বাবা তেড়ে যেতেন।”

“যাবে তোমাদের বাড়িতে।”

“সাথে আপনি থাকলে যাতে পারি।”

“নিরব বললো কিভাবে ভাবলে তোমায় একা ছাড়বো।”

সুপ্তি একটা ইমারজেন্সি মেইল পাঠিয়েছে।নিরবের টিমেই কাজ করএ সুপ্তি।রিফাতের গার্লফ্রেন্ড সুপ্তি।মৃথিলা সুপ্তি নাম ল্যাপটপে দেখে বললো,ওই মেয়েটা কে?আপনার এক্স বুঝি।এখনো আপনাকে মেসেজ করে কেনো?নিরব ল্যাপটপ চাপতে চাপতে বললো হুম।হুম শুনে মৃথিলা বললো কিহ আপনি হুম বলছেন।এইভাবে ঘরে বউ রেখে মহিলাদের সাথে কথা বলছেন ছিঃছিঃ।নিরব বললো শীট বলেই আরেক হাত দিয়ে মৃথিলার মুখ চেপে ধরলো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here