#প্রণয়ের_ত্রিভুবন
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ০৯
সকাল সকালই অফিসে চলে গিয়েছে এহমার। বাসায় একাই আছে শুভ্রিলা। ফাইনালি আজকে ভালোবাসার মানুষটা আসবে বাসায়। ভেতরে ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। গুনগুন করে গান করতে করতে রান্নার কাজটা সেরে ফেলছে। আর এহমারও বলেছে আজ আসতে দেরী হবে। ব্যাস, শুভ্রিলাকে আর পায় কে!খুশিতে গদগদ হয়ে গিয়েছিলো এটা শোনার পর। কয়েক পদের রান্নাও করছে আজ। একটু পরেই কারো ফোন আসাতে চট করে যেয়ে রিসিভ করে নেয় সে। কানে ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই কর্ণপাত হয় কারো মেয়েলি কন্ঠ। ওহ, মা ফোন দিয়েছে।
বিনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে শুভ্রিলা,
–‘কেমন আছো মা?’
–‘আমরা এইতো আমাদের মতোই আছি, রোজটা যেমন থাকা হয়! তো তুমি কেমন আছিস? ‘
–‘আছি মা, বেশ ভালো!’ উৎফুল্লচিত্তে শুভ্রিলা বলে ওঠে।
–‘তা, তোমাকে এতো খুশি লাগছে কেন? ব্যাপার কি? ‘
–‘না না তে–তেমন কিছু নাহ তো, ওই এম–নি আর কি!’
–‘ ওহ আচ্ছা! আমার জামাই বাবাজীর কি খবর? ঠিক মতো দেখভাল করছে তো তোমাকে? ‘
–‘কি বলছো মা! আমি কি বাচ্চা নাকি আমাকে দেখভাল করতে হবে? আমি এমনিই অনেক ভালো আছি তো!’
–‘…..ওহ না আমি সেটা বলিনি। বলছিলাম তোর ঠিকমতো কেয়ার করে কি না!’
–‘হ্যা, তা করে খুব!’
–‘তো তোদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে না তো আবার?’
–‘……….
–‘কিরে চুপটি মেরে গেলি কেনো? আমি কি তাহলে সেটাই ধরে নিবো? ‘
–‘না–না! তা হয়নি! ও ওই মানে আমাদের মাঝে তো তেমন ঝগড়াঝাটি হয়না। বাই চান্স হলেও আমাদের বোঝাপড়া হয়ে যায় আম্মু!’
–‘শুভ্রি, তুমি কি কিছু গোপন করছো আমাদের থেকে?’
চুপটি মেরে যায় শুভ্রিলা! মুখে কথা আটকিয়ে আসছে যেনো।
——————————— ❀
দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ পেতেই উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে যেয়ে গেট খুলে দেয় শুভ্রিলা। টান টান উত্তেজনায় দরজা খুলেই সামনের দিকে আঁখিদ্বয় মেলে ধরে। সামনে থাকা আগন্তুককে দেখে ভীষণ অবাক-খুশি হয়। সামনে দাড়িয়ে থাকা সাফওয়ান তাকে দেখে মিট মিটিয়ে হাসছে। ফর্সা, সুঠাম দেহের লোক। নাকটা লম্বা, আর চুলগুলো হালকা বাদামী বর্ণের কোকড়ানো ধরনের। এপর্যায়ে সাফওয়ান বলে ওঠে,
–‘এ ভাবেই চেয়ে দেখবে? ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না? ‘
সাফওয়ানের কথায় যেনো ধ্যান ফিরলো শুভ্রিলার। ঠোঁটের এক চিলেতে হাসি বজিয়ে রেখে বলে,
–‘তা আবার বলতে! এসো ভেতরে এসো। আমি অনেক খুশি ডিয়ার!’
–‘মিসড্ ইউ অ্যা লট মাই জান! ইউ নো হোয়াট তোমাকে ছাড়া একেকটা রাত কেমন অসহায়ের মতো লাগে? ‘
–‘তাহলে বিয়ে কেনো করছো না? ‘ বাঁকা হাসি দিয়ে শুভ্রিলা বলে। তার কথায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়েই সাফওয়ান বলে ওঠে,
–‘হ্যাহ! তোমাকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে? জোক্ অব দ্যা ডে!’ তুবড়ি বাজিয়ে হাসতে হাসতে বলে সাফওয়ান।
–‘ওকে ফ্রেস হয়ে নাও ডিয়ার, আই নো তোমার উপর কতো ধকল গিয়েছে আজকে!’
শুভ্রিলার কথায় ওয়াশরুমে যায় সাফওয়ান। ফ্রেশ হয়ে খানিক পর বেড়িয়ে এলে দেখে শুভ্রিলা টেবিল সাজাতে ব্যস্ত।
সাফওয়ানকে বেড় হতে দেখে তাকে টেবিলের কাছে ডাক দেয় শুভ্রিলা। সাফওয়ান টেবিলের চেয়ারে না বসে শুভ্রিলার কাছে যায়। এক পর্যায়ে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে থাকে,
–‘তোমাকে ওই এহমারের বাচ্চাটা সারাদিন অনেক খাটায় তাই নাহ? জানো আমার ইচ্ছা হয় ওই এহমারটাকে খুন করে দেই!’
খুনের কথা শুনো আৎকে ওঠে শুভ্রিলা। ঠোঁট ভিজিয়ে নরম গলায় বলে,
–‘না না ও তেমন খারাপ না জান বিলিভ মি! আমার কথায় কথায় ও চলে। খালি ভয় পায় আমাকে হারিয়ে ফেলার। আমার কাছে এসব ম্যালোড্রামা ছাড়া কিছুই লাগে না হুহহহ্!’
–‘ওই এহমারটা দুপুরে খেতে আসবে নাকি? ‘
–‘একদম এসব নিয়ে টেনশান ফ্রি থাকো, আমি ওকে আগেই জিজ্ঞেস করেছি। তো ও বলেছে ওর ক্লায়েন্টস্ এর সাথে জরুরী মিটিং আসে আসতে সাড়ে দশটা অব্দি বাজতে পারে!’
‘যাকগে, সময় পাচ্ছি তাহলে।’ প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাফওয়ান। মনে আনন্দের বন্যা বইছে!
———————————–❀
বাসা থেকে মাত্রই চলে গেলো সাফওয়ান। শুভ্রিলার শরীরটা ঝিমিয়ে গিয়েছে। একটু ঘুমালেই নিস্তার। আর কিছুক্ষণ বাদেই এহমার এসে পড়বে। জলদি নিজের গেটআপ চেইঞ্জ করে ফেললো শুভ্রিলা। আঁচড়ানো চুলগুলোকেও কেমন উষ্কোখুষ্ক করে দিয়েছে। তাকে দেখে আর বোঝার সাধ্যি নাই যে বাসায় তার …. এসেছিলো। একসময় বাসার দরজায় কড়া নাড়ে এহমার। একছুটে যেয়ে গেটটা খুলে দিয়ে আসে শুভ্রিলা। তার ম্লান মুখ দেখে এহমার সাথেসাথেই প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
–‘শুভ্রু, তুমি ঠিক আছো? অসুস্থ নাকি? মুখটা এমন মলিন কেন? ‘
–‘নাহ ওই আরকি আজকে তোমার জন্য একটু রান্না বান্না করলাম তো, আর মাথা ব্যাথা করছিলো। আর কিছু না।’
অগত্যাই মিথ্যেটি বলে পার পেতে হয় শুভ্রিলাকে। এছাড়া যে তার কাছে আর উপায় ছিলো নাহ!
বাড়ি এতো গোছানো গাছানো আর এতোগুলো খাবারের আইটেম টেবিলে ফেলানো দেখে সন্দেহ হয় এহমারের। সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলেই বসে,
–‘বাসার থিম দেখে মনে হচ্ছে কেউ বেড়াতে এসেছিলো? ‘
–‘আরে না–না কি বলছো! কে আসবে আমাদের বাসায় আবার? ওই তোমার জন্য দুপুর বেলা এসব রান্না করেছি।’ মিথ্যের চাদরে সত্যিটা ঢেকেই চলছে শুভ্রিলা। এহমারের এবার সন্দেহের গন্ধটা যেনো কয়েকদফা তীব্র হয়। পূর্ণ দৃষ্টিতে শুভ্রিলাকে জিজ্ঞেস করে,
–‘সিরিয়াসলি শুভ্রু? তোমাকে আমি সকালেই জানিয়ে দিয়েছি আমার একেবারে রাতে বাসায় ফেরা হবে, এর আগে নয়। আর মিটিংয়ের পর সেখানেই ডিনার করবো এবং তোমাকে আমি খেয়ে নিতে বলেছি। আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে অনেক কিছুই লুকোচ্ছো, কাল থেকেই খেয়াল করে চলছি ব্যাপারটা।
এহমারের কথায় যেনো জালে ফেসে যায় শুভ্রিলা। সাথে সাথে কাঁদো কাঁদো চাহনি দেয় এহমারের দিকে। এটাই এহমারের দূর্বলতা আর শুভ্রিলার উৎকৃষ্ট হাতিয়ার!
–‘তুমি আমাকে এতোটা অবিশ্বাস করো? ‘ বাচ্চার ভাঙা গলায় শুভ্রিলা বলেই মিথ্যামিথ্যি ডুকরে কেঁদে ওঠে।
এতে যেনো অস্থির হয়ে পড়ে এহমার। সাথে সাথে শুভ্রিলাকে জড়িয়ে ধরে সামাল দিতে শুরু করে। কপালের কাছে ছোট্ট করে চুমু একে দেয়। শুভ্রিলাকে সাব্যস্ত করে বলে,
–‘সর্যি শুভ্রু! মাফ করে দাও তোমাকে এভাবে হার্ট করতে চাইনি। আমি জানি তো তুৃমি এরকম কিছু করতে পারো না। খালি আমার ব্যাকুল মনটা জানতে চাইলো তুমি কিছু লুকোচ্ছ নাকি!’
এহমারের অনেক বলাবলির পর ক্ষ্যান্ত হয় শুভ্রিলা। আজ তার কান্নার আরও অনেক কারণ আছে যেটা জানলে এহমার নিশ্চিত ভেঙে পরবে। বারবার এহমারের হৃদ মাঝারে মাথা রেখে কাঁদছে। আর তার কান্নাকেই সামাল দেওয়া এহমারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। যতো পল যাচ্ছে শুভ্রিলার কান্নার গলা ততো ভারী হয়ে উঠছে।
—‘শুভ্রু তোমার কান্না আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না, দয়া করে কান্না থামাও। আমার কষ্ট হচ্ছে। নয়তো আমিও কান্না চেপে রাখতে পারবো না!’
শুভ্রিলার চোখে চোখ রেখে বলে এহমার। এতে হালকা শান্ত হয় শুভ্রিলা। তবুও কোথা থেকে ভয়ের কথাগুলো মনে আসলেই কান্নাকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সে।
চলবে,
[