#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৪
__________________________
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো সূচনা।ফোন হাতে নিয়ে কল লা’গালো মিহুকে।তিনবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো মিহু।মিহু ফোন রিসিভ করতেই সূচনা বললো-
–‘কই ছিলি?এত দেরি কেন হলো রিসিভ করতে।
–‘আরে বাবা ঘুমাচ্ছিলাম।আর দেরি কোথায় হলো?মাত্র তিনবার রিং হয়েছে।
–‘হুহ।শোন।
–‘বল,,
–‘আজকে আমাদের বাসায় আসতে পারবি?
–‘আজকে?
–‘হ্যা,,
–‘আচ্ছা দেখি আম্মুকে বলে।
–‘ঠিক আছে আন্টিকে জিজ্ঞেস করে বল আমায়।
–‘আচ্ছা।
ফোন রেখে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো সূচনা।
.
.
ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো সূচনা। আর বারবার তাকাচ্ছে ফোনের দিকে,মিহুর ফোনের অপেক্ষায়। কিন্তু ফোনই করছে না সে।তার ওপর ফোন ও রিসিভ করছেনা।মেজাজ তার চ’রম পর্যায়ে।কলিং বেলের আওয়াজে ভ্রুকুটি করে তাকালো সূচনা।আবারো কলিং বেলের আওয়াজ।রান্নাঘর থেকে মিসেস দিশা গ’লা উচি’য়ে বললেন-
–‘দরজা খুলছিস না কে সূচি?কা’নে কি তালা দিয়েছিস হ্যা।খো’ল তাড়াতাড়ি।
–‘খুল’ছি খু’লছি।এমনিতেই মে’জাজ খা’রাপ তারওপর আবার কে জ্বালাতে এসেছে কে জানে।
বিড়বিড় করতে করতে দরজা খুললো সূচনা।দরজা খু’লতেই কেউ শক্ত করে ঝাপ’টে ধরলো তাকে।হতবিহ্বল সূচনা।আচমকা আক্রমণে বুক ধ্বক করে উঠলো এক মূহুর্তের জন্য।আগুন্তক ব্যক্তির দুই বাহু ধরে ছা’ড়িয়ে নিল নিজেকে।আরে এ তো মিহু।সূচনার দিকে তাকিয়ে দাঁত কে’লিয়ে হাস’ছে সে।যার দরুন সূচনার রা’গ বেড়ে গেলো আরও।তার মাথায় চা’টি মে’রে বললো-
–‘কয়টা ফোন দিয়েছি হ্যা? ফোন রিসিভ করিসনি কেন?ফোন দিয়ে জানাতে বলেছিলামনা?
–‘উফফফ,, জা’ন। আস্তে একটা একটা করে প্রশ্ন কর।আর আগে ভেতরে তো আসতে দিবি নাকি বাইরে দাড় করিয়ে ই ক্লাস নিবি?
সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘আয়।
সোফায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে মিহু বললো-
–‘দেখ তোকে যদি ফোন দিয়ে বলে দিতাম তাহলে কিন্তু তুই সারপ্রাইজড হতে পারতিনা।তাই বলিনি।সারপ্রাইজ দিলাম এখন।
–‘সারপ্রাইজ না ছাই,হা’র্ট এট্যা’ক হয়ে যেত এখনই।
–‘এতটুকুতেই এই অবস্থা।তোর হা’র্ট এত দুর্বল?
মিহুর কথায় মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল সূচনার।তার কথার প্রতিত্তোরে কিছু বললো ও না সে।শুধু মলিন হাসলো।তা দেখে মিহু বললো-
–‘আ’ম সরি আমি মিন করে বলিনি।রা’গ করিসনা প্লিজ।
সূচনা স্মিত হেসে বললো-
–‘রা’গ করিনি একটুও। তুই যা আম্মুর সাথে দেখা করে আয়।
–‘সত্যি তো?
–‘হ্যা সত্যি।
–‘আচ্ছা।
.
.
.
বিকেল সাড়ে চারটার মতো।গা’ল ফু’লিয়ে বিছানায় বসে আছে মিহু,,মাঝেমধ্যে আড় চোখে দেখছে সূচনাকে,,তার ভাব ভঙ্গি বোঝার জন্য। কিন্তু ফলাফল শূন্য।তাই মিহু আবারো বললো-
–‘সূচনা চল না যাই এমন করিস কেন?সামনেই তো। জাস্ট যাব,খাব, চলে আসব।কি হবে গেলে।তুই তো এতদিন বলেছিস পরীক্ষা শেষ হলে যাবি।এখন এমন করছিস কেন?
–‘বলেছিলাম কিন্তু,,
–‘আমি কিন্তু রা’গ করছি সূচি।(মুখ বা’কিয়ে)
অগ্যতা রাজি হতে হলো সূচনা কে।এত করে বলছে মেয়েটা,না রাজি হয়ে কি পারে।মিহু যদি রা’গ করে তার সাথে তাহলে তার কি হবে?যদিও রা’গ তার ক্ষণিকের তবুও।সূচনা রাজি হওয়ার পর মিহু আরেক বায়’না জুড়ে দিল।শাড়ী পড়ে যেতে হবে।তা শুনে সূচনা বললো-
–‘এখন কিন্তু আমি যাবইনা মিহু।
–‘তুই শাড়ী না পড়লে তোকেও নিবনা আমিও যাবনা।
–‘মিহু
–‘সূচি
–‘উফফ,,আমি পড়বোনা।
–‘উফফ,,বলেছিনা পড়বি।
–পড়বোনা।
মিহু কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো-
–‘পড়বি।প্লিজ।
সূচনা মুখ ল’টকিয়ে বললো-
–‘ঠিক আছে।
বিজয়ের হাসি হাসলো মিহু।
–‘তোকে আসতে বলাটাই এখন ভুল মনে হচ্ছে।
–‘হিহিহি।আচ্ছা শোন,,লাস্ট যে বেবি পিংক কালার শাড়ী কিনেছিলাম দুজন,সেটা পড়বি।আমি আমার শাড়ী, হিজাব সব নিয়ে এসেছি।
সূচনা ভ্রুকুটি করে তাকালো। বললো-
–‘মানে সব প্রিপ্লেন্ড।
–‘ইউ নো মিহু কখনো প্ল্যানিং ছাড়া কাজ করেনা।এখন তাড়াতাড়ি কর তোকে রাজি করাতে যেয়ে অনেক সময় অপচয় হয়ে গেছে। ফাস্ট ফাস্ট।
মিহুর কথা শুনে স্মিত হাসলো সূচনা।মেয়েটা আস্তো একটা পা’গলি।
.
.
–‘উফফ আন্টি তুমি একদম টেনশন করোনা তো,আমি আছি তো।আর সামনেই তো যাচ্ছি মাত্র ষাট টাকা ভাড়া লাগবে যেতে আসতে।তাহলে বুঝো কতটুকু দূরত্ব। কিছু হবে না যাব আর আসবো।
মিসেস দিশা আমতা আমতা করে বললেন-
–‘ঠিক আছে তুই নিয়ে যাচ্ছিস এজন্য যেতে দিচ্ছি নাহলে কিন্তু দিতামনা। সাবধানে যাস দুজন আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।
–‘হ্যা আম্মু,,তুমি টেনশন করো না তো।
–‘হুম।
মিহু দুষ্টুমীর স্বরে বললো-
–‘এক কাজ করো আন্টি তুমি শাড়ীটা চেন্জ করে একটু রেডি হয়ে আসো,,তোমাকেও সাথে নিয়ে যাই।এমনিতেও তুমি আর আমিতো মিতা ই।একসাথে না হয় ঘুরলাম একটু।
–‘আমার কি সেই সময় এখন তোরা যা।
–‘এটা কি বললে?তুমি এখনো দেখতে মাধুরী দীক্ষিত এর মতো সুন্দর,তোমাকে নিয়ে বের হলে আমরা দুইজন তো পাত্তাই পাবনা আর তুমি বলছো সেই সময় নেই।এটা কোনো কথা।
মিহুর কথায় সূচনা মুখ টিপে হাসছে সাথে মিহুও। তা দেখে মিসেস দিশা বললেন-
–‘তবে রে।মজা করা হচ্ছে আমার সাথে।যা তাড়াতাড়ি না হয় কান মু’লে দিব দুইটার।
–‘আম্মু হিজাব পড়া কান মু’লে দিবে কিভাবে?হিহিহি।
কথাটুকু বলেই সূচনা আর মিহু কেটে পড়লো রান্না ঘর থেকে।মিসেস দিশা রান্নাঘরে দাড়িয়েই হাসতে লাগলেন।মনে মনে দোয়া করলেন -‘তার মেয়ে দুটো যেন সারাজীবন এভাবেই হাসিখুশি থাকে।
.
.
–‘আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
রিকশায় বসে মিহুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো সূচনা।
মিহু সামনের দিকে চোখ রেখেই বললো-
–‘প্রথমে লেকের দিকটায় যাব তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে থাকব।ওখানে নতুন একটা রেস্টুরেন্ট হয়েছে সেখানে যেয়ে তাদের পাস্তা আর কোল্ড কফিটা ট্রাই করবো।এই দুইটা নাকি বেস্ট তাদের।রিভিউ দেখেছি অনেক তাই ট্রাই করব।তারপর বাসায় যাব।
–‘ওহ।
–‘হুম।
.
.
দিনের শেষে ধরনীতে থেমে গেছে চারপাশের কর্ম কোলাহল।চারিদিকে বিরাজমান নৈসর্গিক নীরবতা।যেন অন্য রকম এক প্রশান্তি।র’ক্তিম সূর্যের র’ক্তিম আভায় পৃথিবী যেন নিজেকে অন্য কোনো রঙে সাজাতে ব্যস্ত।এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাধুরী দেখতে ব্যস্ত দু’জন কিশোরী।লেকের স্বচ্ছ পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় তাদের পা জোড়া।লেকের চারিদিকে বাগানবিলাস, সন্ধ্যা-মালতি আর টগর ফুলের মে’লা।
টগর ফুল সূচনার পছন্দের ফুলের মধ্যে একটা।কেন যেন অনেক বেশি মুগ্ধকর মনে হয় সাদা,স্বচ্ছ এই ফুলকে।যেন সবুজ শিয়রে মুক্তো দানার ন্যায়।লেকের এই দিকটা এখনো পুরোপুরি সচ’ল না।এই দিকটায় তেমন লোকের আনাগোনা ও দেখা যায় না।তাদের থেকে একটু দূরে একটা আট-নয় বছর বয়সী ছেলে।হাতো তার বেলীফুলের গাজরা। হেটে হেটে বিক্রি করছে,হা’ক ছাড়ছে-একটা নিন দশ টাকা। গাজরা দশ টাকা।’ তা দেখে মিহু গ’লা উঁচিয়ে ডা’ক দিল-
–‘এই ছেলে এদিকে আসো তো।
তার ডা’ক শুনে ছেলেটা এগিয়ে আসলো তাদের দিকে। পড়নে তার ঢিলেঢালা একটা শার্ট আর একটা পুরোনো প্যান্ট।শার্টের কয়েক জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে ফু’টো হয়ে গেছে।ছেলেটার চেহারাতে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ।এতটুকু বয়সে কোথায় খেলাধুলা করবে,পড়ালেখা করবে তা না করে উত্তপ্ত রোদে,বৃষ্টিতে ভিজে, শীতের তীব্রতা সবকিছু উপেক্ষা করে রাস্তায় ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে।মায়া হলো দু’জনের।সূচনা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো-
–‘একটা গাজরা কত করে বিক্রি করো?
–‘দশ টাকা কইরা বে’চি।কয়’টা নিবেন কন।
–‘আচ্ছা,, দুইটা দাও।
–‘ঠিক আছে বিশ টাকা দেন।
ব্যাগ থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে ছেলেটার হাতে দিল সূচনা।তা দেখে ছেলেটা বললো-
–‘আমার কাছে তো এত টাকার ভাংতি নাই।বিশ টাকা দেন।
–‘ভাংতি দিতে হবে না পুরোটা রেখে দাও।
–‘ না আপা আমি পুরা টাকা রাখতে পারতামনা,,দুইটা নিছেন বিশ টাকা ই দেন।
মিহু জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার কাছে কয়টা গাজরা আছে?
ছেলেটা হাতের গাজরা গুনে বললো-
–‘এগারোটার লা’হিন আছে।কেন?
–‘দশটা দাও।আর একশো টাকা নাও।
সূচনা ও বললো-
–‘হ্যা।এবার তো সমস্যা নেই?
ছেলেটা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বললো-
–‘না আফা এহন সমস্যা নাই।নেন।
হালকা হেসে তার হাত থেকে গাজরা গুলো নিল সূচনা।
মিহু আবারো জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার নাম কি?
ছেলেটা হাসি টেনে ই জবাব দিল-
–‘আমার নাম শান্ত।
–‘সুন্দর নাম।
এর মধ্যে ই আযানের মধুর ধ্বনি।ছেলেটা তাড়াহুড়ো করে বললো-
–‘আমি এহন যাই। আযান পইরা গেছে।
–‘ঠিক আছে যাও।
ছেলেটা যেতেই সূচনা আর মিহু ও চলে আসলো সেখান থেকে।
.
.
রেস্টুরেন্টে বসে আছে সূচনা আর মিহু।তাদের অর্ডারের অপেক্ষায়।টুকিটাকি কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে। কথার এক পর্যায়ে মিহু বললো-
–‘আমার কিন্তু প্রণয় ভাইয়ার কথাগুলো ভালো লেগেছে। দেখ সে কিছু জানেও না সেই ব্যাপারে। তুই বলতে চাইলেও সে শুবতে রাজি হলো না।উল্টো বললো -অতীতে এমন টুকটাক সবারই থাকে।সে চাইলেই তোকে উল্টা পাল্টা কথা বলতে পারতো।তোকে খা’রাপ কিছুও বলতে পারতো কিন্তু তা না করে কত সুন্দর করে বোঝালো তোকে।সবাই কিন্তু এমন হয় না সূচি।আজকাল সুন্দর মন আর মানসিকতার মানুষ পাওয়া বড্ড কঠিন।আর এমন মানুষ পেয়ে তাকে হারিয়ে ফেলা আমার মতে জীবনের সবচেয়ে বো’কমি হবে।যা করবি ভেবে চিন্তে করিস।বুঝেছিস?
–‘হুম।
তারপর নীরবতা দু’জনের মধ্যে। হুট করেই মিহু বলে উঠলো-
–আরে ভাইয়া কেমন আছেন?
মিহুর কথা শুনে তার দিকে তাকালো সূচনা।মিহুর দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে তাকাতেই চমকে গেলো সে।
#চলবে