প্রণয়ের সূচনা পর্ব -২০

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazi_Shifa
#পর্ব_২০
___________________________
বিস্মায়াবিষ্ট চোখে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে দিনা।কিছু বলতে ও পারছে না।তার দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করছে জাওয়াদ।দিনা এতক্ষণ চুপ থাকলে ও এবার আর পারল না। গলার স্বর উঁচু রেখে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আপনি কী ফাজলা/মো করছেন আমার সাথে?খেলনা মনে হচ্ছে আমাকে?

জবাব দিল না জাওয়াদ,ফেন স্ক্রল করতে ব্যস্ত সে।দিনা আবার ও জিজ্ঞেস করলো-

–‘কথা বলছেন না কেন?

জাওয়াদ বিরক্তি তে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক আওয়াজ বের করল।বললো-

–‘কী বলব?কী জানতে চাও?

–‘নিচে কী হচ্ছে এসব?আপনি হুট করে আঙ্কেল-আন্টিকে কেন নিয়ে এসছেন?

–‘তুমি নিশ্চয়ই অতটা অবুঝ না,এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা কেন নিয়ে এসেছি।

–‘বুঝতে পেরেছি এজন্যই তো জানতে চায়ছি কেন নিয়ে আসলেন হঠাৎ করে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না একবার ও।

–‘প্রয়োজন মনে করিনি।

–‘আমার মতামত আপনার কাছে কিছু ই না?

–‘তোমার মতামত নেয়ার কি আছে? এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আমাদের।এখন বিয়ের জন্য তোমার মতামত লাগবে কেন?

–‘আমি বিয়ে করবনা।

–‘কী বললে?

–‘আমি বিয়ে করবনা।

–‘এজন্য ই তো মতামত চাইনি।

–‘তাহলে কী জোর করবেন?

–‘সেটাই তো করছি।

–‘আপনি,,

–‘আমি অনেক ভালো আমি জানি, তুমি এতদিন বিয়ের কথা মুখ ফুটে বলতে পারছিলে না কিন্তু আমি তো বুঝে গেছি এজন্য আম্মু-আব্বুকে নিয়ে এসেছি, বিয়ের ডেট দিতে।ডেট ফিক্সড ও হয়ে গেছে।

দিনা আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলো তাকে থামিয়ে দিল জাওয়াদ।ভাব নিয়ে বললো-

–‘আরে থ্যাঙ্কিউ দিয়ে ছোট করো না, আমারই লাভ।বাই দা ওয়ে জিজ্ঞেস করলেনা ডেট কবে?

দিনা আগ্রহ নিয়ে সাথে সাথে ই ঐ জিজ্ঞেস করলো-

–‘কয় তারিখ?

জাওয়াদ মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘একটু আগেই তো বিয়ে করবনা বলে চিৎ/কার করছিলে,এখন আবার ডেট জানার জন্য ম/রে যাচ্ছে। নাটক বা/জ।

দিনা ভ্রুকুটি করে তাকালো। কিন্তু জাওয়াদ আর মুখ খুলল না।
.
.
.
জাওয়াদ ও তার মা-বাবা চলে গেছে সন্ধ্যার পরপর ই।আজ রবিবার,আগামী শনিবার দিনা আর জাওয়াদ এর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। ইসহাক সাহেব রাজি হতে চাননি,প্রথম মেয়ের বিয়ে তার মধ্যে এত তাড়াহুড়ো করলে কী হয়?তার ওপর ছেলের শশুর বাড়ীর লোকের সাথে এমন একটা দুর্ঘ/না হলো।এখন এসব?কিন্তু জাওয়াদ এর বাবা জাকির সাহেব আর তার মা মিসেস ইভার ভাষ্যমতে – এনগেজমেন্ট তো হয়ে ই গেছে, মেয়ের ওপর কিন্তু আমাদের ও অধিকার আছে, আমাদের ও তো মেয়ে তাহলে নিয়ে যাই একেবারে। এখন আর দেরি করবেন না।প্রণয় ও বললো রাজি হতে, কিছু হবে না।ইসহাক সাহেব আর না করেননি। বিয়ে তো দিতেই হবে তাহলে আর ঝা/মেলা করে লাভ কী?

তিথি আর ইরা মিলে একের পর এক কথা বলে লজ্জায় ফেলছে দিনাকে।সূচনাও আছে কিন্তু তার দৃষ্টি ইরার ওপর।সেদিন তার সাথে কথা বলার পর থেকে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত দেখানোর চেষ্টা করছে ইরা।এই যেমন – যেখানে কথা কম বলার প্রয়োজন সেখানে বেশি বলা,যেখানে বলা প্রয়োজন সেখানে চুপ থাকা,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে কোনো ছোট কথাতেই আবার দম ফাটি/য়ে হাসার মতো কথায় গম্ভীর হয়ে বসে থাকে।সূচনা লম্বা শ্বাস নিল,কার মনে কী আছে তা বোঝা দায়,উল্টা পাল্টা ধারণা করাটাও তার কাছে বি/চ্ছিরি একটা ব্যাপার।এতে অপর পাশের মানুষটার কষ্ট কমে বৈকি বাড়ে।বারবার ইরাকে জিজ্ঞেস করাটা তাই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। দিনার দিকে চোখ পড়তেই সূচনা লক্ষ্য করল দিনা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
চোখ যেন এটাই বলছে, “ছাইড়া দে মা কাই/ন্দা বাঁচি।”
সূচনা কোনোরকম হাসি চাপিয়ে ইরা আর তিথির উদ্দেশ্যে বললো-

–‘তোমরা দু’জন আসো তো,তোমাদের ডেকেছে তোমাদের ভাইয়া।

তিথি ভ্রু কুচকে বললো –

–‘তুমি মিথ্যা বলছ না তো?

–‘আর না রে বাবা,চলো।

–‘ঠিক আছে, চলো।(ইরা)
——————————————–
প্রণয় সোফায় বসে একটা ডায়েরি নিয়ে নাড়চাড়া করছে।বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ইরা আর তিথি।সূচনা কাবার্ডে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে তাদের দেখছে।বিরক্ত হলেও ইরা কিছু বলছে না,অন্য সময় হলে তো কিছু না কিছু বলত কিন্তু এখন চুপচাপ।তিথি চুপ থাকল না,বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললো-

–‘আমি জানতাম বরাবরের মতো আজকেও তুমি এমন করবে।রুমে ডাকবে,আসব,পনেরো মিনিট বসিয়ে রাখবে তারপর পাঁচ মিনিট কথা বলে অপমান করে রুম থেকে বিদায় করবে।

–‘হ্যা,,ঠিকই ধরেছিস।তিথি তুই এত বুদ্ধিমতি কবে হলি রে।

–‘সেই পিচ্চি কালের থেকেই তিথি বুদ্ধিমতি শুধু তোমরাই পিচ্চি পিচ্চি বলে অপ/মান করো।

–‘আচ্ছা তাই?

–‘হু,, ভাইয়া শোনো বিয়ের পরে তো হানিমুনে যায়,তোমরাও যাবে সাথে আমাকেও নিও প্লিজ। আমি না এখন পর্যন্ত দূরে কোথাও ঘুরতে যাইনি।

তিথির কথা শুনে কাশতে লাগল সূচনা।প্রণয় ও কিছুটা অস্বস্তি তে পড়ল।ইরা মুখ চেপে হাসি আট/কালো।পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রণয় দাতে দাত চেপে বললো-

–‘দুঃখীত, আমার ভুল হয়েছে, এটাকে বুদ্ধিমত্তা বলে না অকালে পা/কা বলে।

–‘ভাইয়াআআ,,

–‘তিথি কানের সামনে কিচিরমিচির করিস না।কাজ আছে অনেক, তোদের ফ্রেন্ড দের মধ্যে কাকে ইনভাইট করবি না কি করবি লিস্ট করে দেয় আর কী কী ফাংশন আপনারা চান তাও প্ল্যান করুন অতি দ্রুত।

–‘আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে কী আবিদ আঙ্কেলের কমিউনিটি সেন্টার এ দিবি?(ইরা)

–‘হ্যা ঔটাই একমাত্র উপায় এজন্য টেনশন কম হচ্ছে। সকালে ফোন দিয়ে কথা বলব আঙ্কেলের সাথে।

–‘আচ্ছা,,

–‘হ্যা তোরা প্ল্যান কর,জানা আমাকে।

–‘ঠিক আছে,,

–‘এখন যা আর তি তি তুই সাইডে আয় কথা আছে।

–‘আমার পড়া আছে গেলাম আমি, ইরাপু চলো তো।

ইরার আগে তিথি বের হয়ে গেল রুম থেকে।হাতের কাছে পেলে যে প্রণয় তাকে শাস্তি দিবে তার অভিজ্ঞতা আছে তার। এর আগে ছোট খাটো অনেক শাস্তিই পেয়েছে সে।

তারা যেতেই সোফা থেকে উঠে দরজা আট/কে দিল প্রণয়।সূচনা তখনও কাবার্ডের সাথেই হেলান দিয়ে ছিল।প্রণয়কে উঠতে দেখে সোজা হয়ে দাড়ালো সূচনা।দরজা আটকে সোজা সূচনার সামনে এসে দাড়ালো প্রণয়।ফাঁকা ঢোক গিলে গলা ভিজালো সূচনা।হাত দিয়ে গোছানো চুলকে ই ঠিক করতে লাগল।প্রণয় বা’কা হেসে বললো-

–‘এমন করছো কেন? এখন কিছু করার মুড নেই আমার।অবশ্য আমি যা করি হুটহাট করি,বলে কয়ে করি না।বুঝেছ?

একটু থেমে আবার বললো-

–‘তিথিটা আজকাল বেশি পে/কে গেছে। তবে কথা কিন্তু ঠিক বলেছে হানিমুনে তো যাওয়া দরকার নাহলে কিছু হবে কিভাবে?আমি ইতিমধ্যে একটা প্ল্যান ও বানিয়েছি।জিজ্ঞেস করো কী?

সূচনা মুখ আড়ষ্ট হয়ে মুখ ভার করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

–‘গুড কোয়শ্চেন। দিনার বিয়ের পর তুমি আর আমি ঔ জানালা দিয়ে পালাবো।আগে থেকেই টিকিট কে/টে রাখব।এই জানালা দিয়ে পালিয়ে যাব হানিমুনের উদ্দেশ্যে।তারপর তিনজন হয়ে ফিরব।ভালো প্ল্যান না।

সূচনা বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো প্রণয়ের দিকে। কাঠ কাঠ গলায় বললো –

–‘আপনি কী পা/গল? মানুষ হানিমুনে কি বছরের জন্য যায় যে দুইজন থেকে তিনজন হয়ে ফিরব।

–‘গাধি,তিনজন হয়ে ফিরব মানে,তিনজন হওয়ার প্রসেসিং শুরু করার প্রথম ধাপ নিব।তার পর না হবে তিনজন।

চোখ টিপ মে/রে শেষোক্ত টি করলো প্রণয়।সূচনা কিছু বলার আগে প্রণয় ভাবুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আচ্ছা তুমি এতকিছু জিজ্ঞেস করছো কারণ কী? সত্যি ই হানিমুনে যাবে? এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলে বাহ বাহ।

সূচনা ইতস্তত করতে লাগল।সে তো আগ্রহ বশত জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল, খেয়াল করেনি অতটা।সূচনার মৌনতার কারণ সম্পর্কে জানে প্রণয়।তাই আর অস্বস্তিতে রাখল না।নরম কণ্ঠে শোধালো-

–‘এত ঘাবড়ানো লাগবে না,আমি এমনিই বলছিলাম। রিল্যাক্স।

প্রণয়ের কথায় সত্যি ই স্বস্তি পেল সূচনা।কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য ই।প্রণয় আবার ও চোখ মে/রে বললো-

–‘ হানিমুনে না গেলেও কিন্তু সম্ভব।

চোখ গর/ম করে তাকালো সূচনা।দাত কিড়মিড় করে বললো-

–‘আমার না এখন একটা প্রশ্ন ই জাগছে যে,আব্বু আপনাকে কীভাবে পছন্দ করলো আমার জন্য? মুখের মধ্যে যতসব ছি/হ মার্কা কথা।বিয়ের দিন কি এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলেন?

–‘নাহ প্রণয় এক্সচেঞ্জ হয়নি তার স্বভাব এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে। তোমাকে দেখলেই আমার কেমন কেমন যেন লাগে।

সূচনা কিছু টা নিচু স্বরে বললো-

–‘আপনি এত কাছে আসলে আমারও কেমন যেন লাগে,একটু সরুন।

প্রণয় হেসে বললো-

–‘যাও ছেড়ে দিলাম,তবে ক্ষণিকের জন্য, আবার আসবে তুমি,তখন ছাড়বনা একবারও, লুকিয়ে রাখব এই খানে।

শেষ কথাটুকু বলতে যেয়ে বু/কে হাত দিয়ে দেখাল প্রণয়।সূচনা মাথা নিচু করে নিল।অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটল অধর কোণে।যে হাসির কারণ সূচনার অজানা।
______________________________
মাঝে কেটে গেছে তিনদিন।আজ বৃহস্পতিবার। দিনার মেহেদী আজকে।সকাল থেকেই তোড়জোড় লেগে গেছে পুরো বাড়িতে।সকাল থেকে ব্যস্ত প্রণয় আর ইসহাক সাহেব। মিসেস আফিয়া ও বেজায় ব্যস্ত, তার সাথে ব্যস্ত হাতে কাজ করছে সূচনা।মিহুর সাথে প্রায় এক সপ্তাহের মতো কথা হয়নি সূচনার।মিহুকে এ বাড়িতে আসতেও দেয়নি। তিথির কাছ থেকে জেনেছে সূচনা, মিহুকে নাকি এ বাড়িতে তেমন একটা আসতে দেয় না।যাও আসে মিহু তার পরিবারের বিরুদ্ধে। মিহুর ছোট বোন আছে একটা পিহু।সেটা জানে সূচনা।দু-একবার গিয়েছে তাদের বাড়িতে।কিন্তু ও নাকি আজ পর্যন্ত পা রাখেনি এ বাড়িতে।এ বাড়ির মানুষরা তাকে চিনলেও সে তাদের চিনে না।ব্যপারটা অদ্ভুত ঠেকেছে সূচনার কাছে। কিন্তু তিথি বাচ্চা মানুষ তাই বেশি খুঁটিয়ে দেখেনি।মিসেস আফিয়ার দুই বোন মিসেস আনহা আর রিমা।মিসেস আনহার এক ছেলে দুই মেয়ে।নিহা,ফিহা আর নিষাদ। মিসেস রিমার একটাই মেয়ে তনয়া।আজকে সকালেই এসেছে সবাই। আসার পর থেকে তাদের মুখের ভাব দেখে সূচনা স্পষ্ট বুঝতে পারছে এখানে তাদের মধ্যে কারোরই তাকে খুব একটা ভালো লাগছেনা।সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করতে গিয়েছিল কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছে তাকে।শুধু ফিহা নামের মেয়েটা এগিয়ে এসেছিল, মিষ্টি হেসে বলেছিল –

–‘কেমন আছো ভাবি?

সূচনা অবাক হয়েছিল, যেখানে কেউ তার সাথে কথা বললনা৷ এড়িয়ে গেল সেখানে এই মেয়েটা একাই কথা বললো তাও কত সুন্দর করে সম্বোধন করল।ভাবনায় মত্ত থাকা অবস্থায় অসাবধানতা বশত চুলোয় বসানো গর/ম কড়াইয়ে থাকা তেল চামচ থেকে ছি/টকে এসে হাতে লেগে যায়।অনেক বেশি ই গর/ম ছিল বিধায় মুখ দিয়ে মৃদু স্বরে ‘আহহ’ শব্দটা বেড়িয়ে যায় সূচনার।মিসেস আনহা,রিমা তারা পাশে টুল টেনে বসে কথা বলছিল।মিসেস আফিয়া ও সূচনার পাশেই রান্না করছিলেন আরেক চুলোয়।তার শব্দ শুনে মিসেস আফিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাকে নিয়ে। তাড়াতাড়ি করে কল ছেড়ে পানি দিতে থাকলেন সূচনার হাতে।হাত জ্ব/লছে প্রচুর, ঠোঁটে ঠোঁট চে/পে সহ্য করছে সূচনা।তবে হাতের ক্ষত থেকে ছোট্ট হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করলো কিছু কথা।না চাইতেও চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্রু।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। আজকে কিন্তু গঠন মূলক মন্তব্য চাই,সবাই পড়ে পড়ে চলে যায় কেন 🥺। মন্তব্য করবেন🤐 হ্যাপি রিডিং ❤️।ভালোবাসা সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here