প্রণয়ের সূচনা পর্ব -৩১

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩১
_________________________
মাঝে কে/টে গেছে তিনদিন।এই তিনদিনে প্রণয়ের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ হয়নি সূচনার। সূচনা আর যোগাযোগ করে নি সেদিন রাতের পর।আর না প্রণয় করেছে।তবে ইরার কাছ থেকে কৌশলে দুজনেই একে অপরের খবর নিয়েছে টুকটাক।অবশ্য এ ব্যাপারে দুজনের কেউ ই অবগত না।সূচনার অভি/মানের পা/ল্লা যেন সময়ের সাথে বে/ড়ে গেছে।কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে সে প্রনয়কে মিস করছে তা ঢে/র বুঝতে পেরেছে সে।বিগত তিনদিনে তার খা/লি খা/লি অনুভব হয়েছে নিজের মধ্যে।কি যেন নেই নেই ভাব এমন।শুরুতে মানতে না চাইলেও আজ মানতে বা/ধ্য হয়েছে।এই তো সকালের ঘটনা।কাক ডা/কা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে প্রণয়কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে চক্ষু চ/ড়কগাছ সূচনার।এক মুহূর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিল প্রণয় যে বাসায় নেই, কিন্তু মনে পড়তেই যখন চোখ ড/লে ভালো করে তাকালো তখন উধা/ও।মানে সে কল্পনা করেছে। দিনের বেলাও কেউ কল্পনা করে? প্রণয় না থাকা স্বত্তেও মনে হয় আছে।এর মানে কী?সে কোথাও শুনেছিল বোধহয় -মানুষ যখন কাউকে মন থেকে মনে করে, উপলব্ধি করে তাকে, তাকে নিজের কাছে পেতে চায়,যখন তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।তখন সে না থাকা স্বত্তেও তাকে অনুভব করে,তার উপস্থিতি টের পায়,তাকে চোখের সামনে দেখতে পায়।”তাহলে? আমিও কি তাকে মন থেকে মনে করছি?মিস করছি প্রণয়কে?প্রণয়ে অভ্যস্ত সূচনা?এত এত প্রশ্ন মনে আসতেই ল/জ্জায় যেন কান গর/ম হয়ে গিয়েছিল সূচনার।ইশশশ সত্যি ই তাই!কিন্তু ক্ষণেই অ/ভিমান মাথা চা/ড়া দিয়ে উঠেছে। মুখ বা/কিয়ে নিজেকে আবারও বলেছে-

–‘মোটেও না আমি মিস করছি না, একটু ও না,এক রত্তি ও না। একাই শান্তি।হুহ!

মুখে বললেই কি হয়? সে নিজেও জানে নিজের মনের অবস্থা। তিনদিন কত ক/ষ্টে কে/টেছে সেই তো জানে।যেন এক একটা মুহূর্ত মাসের সমান।সময় যেন টু/কটুক করে চলছে।ধ্যা/ত!তিথিটার ও পরীক্ষা। ইরা ছে/কা খাওয়া মেয়ের মতো দরজা আ/টকে রুমে পড়ে থাকে।মিসেস আফিয়ার সাথে টুক/টাক গল্প করে আর কাজ/টাজ করে কী আর অত সময় পার হয়? তাই আজকে সূচনা নিজের বাসায় এসেছে।দুপুর তিনটার দিকেই এসেছে।এখন সন্ধ্যা সাতটা প্রায়। মিসেস আফিয়া কে বলেই এসেছে সূচনা।আজকে থাকবে সে।প্রণয় জানে কি না কে জানে?সোফায় পা গুটি/য়ে আরাম করে বসে টিভি দেখছিল সূচনা।কোলে আচারের বয়া/ম। এই সন্ধ্যা বেলা আচার খাও/য়ার জন্য অবশ্য মিসেস দিশা এক গা/দা কথা শুনিয়েছেন সূচনাকে।কিন্তু কে শোনে কার কথা।সে আরাম করে আচার খা/চ্ছে আর টিভি দেখছে।মাঝে সাঝে প্রণয়ের খেয়াল আসলেও পাত্তা না দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার আরাম হা/রাম করতে কলিংবেল বে/জে উঠলো। মেজাজ খা/রাপ হয়ে গেল একদম সূচনার।কিন্তু কলিংবেলের আওয়াজ শুনেও না শোনার ভান করে নিজের কাজ চালিয়ে গেল সূচনা।মিসেস দিশা হ/ন্তদন্ত ছুটে আসলেন রুম থেকে।দরজার দিকে এগোতে এগোতে বললেন –

–‘ কান কী খে/য়েছিস নাকি? কলিং বেলের আওয়াজ কী শুনছিস না?

সূচনা এবারও পা/ত্তা দিল না।মিসেস দিশা দরজা খুলে দাড়িয়ে রইলেন। তাকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে সূচনা জিজ্ঞেস করলো-

–‘ আম্মু কে এসেছে?দাড়িয়ে আছো কেন?

সোফা থেকে মাথা বা/কিয়ে একটু উকি মা/রলো।মাথায় ওড়না টেনে ভ্রু কু/চকে উঠে আসলো দরজার সামনে।হাসি টেনে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ চাচা আপনি?এই সময়ে?

–‘এটা কে সূচি?(মিসেস দিশা)

সূচনার নিচু স্বরে বললো-

–‘ চাচা ওনার বাসার গাড়ি ড্রাইভ করে,পরিবারের অংশই আমাদের।

–‘আচ্ছা,ভেতরে আসুন,বসুন। (মিসেস দিশা।

সূচনার কথা শুনে লোকটা কৃতজ্ঞতার সহিত হাসলো।ইতস্তত করছিলেন ভেতরে আসতে কিন্তু সূচনা জো/র করে নিয়ে আসলো।সোফায় বসেই লোকটা বললো-

–‘আম্মা তাড়াতাড়ি রেডি হন, আমি আপনারে বাসায় নিয়া যাইতে আইসি।

সূচনা ভ্রুকুটি করে অবাক চোখে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো-

–‘ চাচা আমি আজকে থাকব এখানে।কালকে সকালে যাব।

–‘ না না আম্মা, আব্বার ক/ড়া নির্দেশ আপনেরে বাসায় নিয়া যাইতে কইসে।আপনে খালাম্মারে ফোন দিয়া কথা কন।

সূচনা সাথে সাথে ই কল দিল মিসেস আফিয়া কে।মিসেস আফিয়াকে বলতেই উনি বললেন-

–‘প্রণয় অনুমতি দিয়েছিল এজন্য ই যেতে দিয়েছি রে এখন ও কল দিয়ে বললো তোকে নিয়ে আসতে এজন্য ই পাঠিয়েছি।তুই তাড়াতাড়ি এসে পড়।

সূচনা আর কিছু বলতে পারলনা। তবে রা/গ আর মন খা/রাপ দুটোই হয়েছে। এতদিন পর কত আশা নিয়ে এসেছিল মা/য়ের সাথে থাকবে অথচ প্রণয় তাও দিলনা।
_____________________________
–‘ডঃ আনান সিদ্দিকী কেমন আছেন?

এগারো তলা হোটেলের বিল্ডিং। তার ওপরের ফ্লোরে ছাদ। নিচের তলা গুলো তে লোক সমাগম অনেক তবে একেবারের ওপরের তলাগুলো তে রুম বুক করে যারা শুধু তারাই অবস্থান করেন।রুম সার্ভিস রা রুমের যাবতীয় কাজ করে দিয়ে যান সময় মতো। তেমন কো/লাহল নেই বলে যারা হ/ট্টগো/ল পছন্দ করেন না তারা ওপরের তলার রুম গুলোই বু/ক করেন।আনান সিদ্দিকী, পেশায় তো ডক্টরই।দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে তার নিজের হসপিটাল আছে একটা।এত বছর ম্যানেজারের হাতে সব দায়িত্ব দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।খবর রাখেননি কোনো।পরিবারে কেউ নেই বললেই চলে।বিয়ে করেছিলেন।কিন্তু ওনার স্ত্রী চলে গেছেন বিয়ের মাস খানেকের মা/থায়।তার প্রেমি/কের সাথে।তারপর আর বিয়ে করেননি উনি।হসপিটালের হিসাবে ঝা/মেলা হয়েছে। গণ মান্য কোনো ব্যক্তি নাকি মাম/লা করেছেন তার হসপিটাল অথোরিটির বিরু/দ্ধে,সাথে ম্যানেজারের বি/রুদ্ধে। ওনার বিশ্বাস ম্যানেজার কিছু করেনি।কিন্তু পরিস্থিতি উনি সামলাতে পারছিলেন না তাই বাধ্য হয়ে এসেছেন।অনেকটা ভ/য়ে আছেন উনি।এত বছরের রা/জ না খুলে যায় সেজন্য। হোটেলের নয়তলায় রুম নিয়েছেন উনি।রুমেই ছিলেন উনি।ওনার ম্যানেজার হাবিব সাহেব ডে/কে এনেছেন ছাদে।ছাদের এক কোণে দাড়িয়ে ছিলেন চুপচাপ।তখনই উক্ত বাক্যটুকু শুনে পেছনে ফিরলেন উনি।বর্তমানে ঘা/বড়ানো আর প্রশ্ন সূচক মুখশ্রীতে সামনে তাকিয়ে আছেন।তার সামনে দাড়ানো প্রণয় আর তন্ময়।তার কাছে অপরিচিত এই দুটো মুখশ্রী।তার দৃষ্টি পড়তে প্রণয় বা তন্ময়ের সময় লাগেনি। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোন বের করলেন হাবিব সাহেবকে কল দেয়ার জন্য কিন্তু তার আগেই উনি উপস্থিত হলেন সেখানে।আনান সাহেব ব্যতীব্যস্ত গ/লায় জিজ্ঞেস করলেন-

–‘এসব কী হাবিব?এরা কারা?আমাকে চিনে?পথ আট/কেছে কেন এভাবে?

হাবিব সাহেব নিশ্চুপ রইলেন।আনান সাহেব যেন রো/বটের ন্যায় বারবার কথাগুলো জিজ্ঞেস করলেন।কিন্তু প্রতিবারই হাবিব সাহেব চুপ।শুধু বললেন-

–‘ আমি জানিনা স্যার এনাদের সাথে আপনার কি হিসাব আপনিই জানেন।হাবিব সাহেব কথাটা বলতেই প্রণয় বলে উঠলো-

–‘ঠিক বলেছেন হাবিব সাহেব। আপনার বুদ্ধি আছে।ইউ আর ইন্টেলিজেন্ট এনাফ।তা ডঃআনান বললেন না কেমন আছেন?আনান সিদ্দিকী,বাহ কী সুন্দর নাম!আবার সাদা ফক/ফকে পায়জামা পাঞ্জাবি লাগিয়েছেন। সাদা তো শুভ্রতার প্রতীক।কত সুন্দর পবিত্র মতো নিজেকে সাজিয়ে রেখেছেন লোক সম্মুখে অথচ কাজকর্ম এত নি/চ কেন স্যার?

–‘তুমি কি বলতে চাইছো?ফা/জলামো করছো?আমার সম্পর্কে ধারণা আছে কোনো?

–‘আমার যতটুকু আছে অতটুকু যথেষ্ট কিন্তু আপনার ধারণা নেই আমি আপনার কতোবড় ক্ষ/তি করতে পারি।

–‘মানে?

–‘বছর কয়েক আগে, একজন ভদ্রমহিলার পো/স্টমর্টে/ম রি/পোর্ট বানিয়েছিলেন।ফে/ক রিপো/র্ট। তাকে মার্ডা/র করা হয়েছিল, আপনি তারই মা/র্ডারা/রের টাকা খে/য়ে ফে/ক রিপো/র্ট বানিয়েছিলেন যে রিপো/র্টে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল সে মহিলা সুই/সাইড করেছে।রাইট?মনে পড়ে কিছু?
__________________________
লট/কানো মুখ নিয়ে প্রায় আটটার দিকে বাড়ি ফিরলো সূচনা।মিসেস আফিয়া আর ইসহাক সাহেব ড্রয়িং রুমে ই বসেছিলেন।সূচনার মুখ দেখে মুখ টি/পে
হাসলেন মিসেস আফিয়া। এগিয়ে যেয়ে সূচনাকে টে/নে নিজের কাছে বসালেন।ইসহাক সাহেব গ/ম্ভী/র স্বরে বললেন-

–‘ফ্রেশ হয়ে নাও বাইরে থেকে এসেছো।আফিয়া কিছু খেতে দাও।

এতটুকু বলেই উঠে চলে গেলেন উনি। সূচনা অবাক হলোনা।ইসহাক সাহেবের কথাবার্তা এমন গ/ম্ভীর বা উনি মানুষটা ই যে গ/ম্ভী/র স্বভাবের তা এখন বুঝে গেছে সে।তবে তার গম্ভী/র মুখশ্রীর আ/ড়ালে যে মায়ার পরিমান টাও অনেক বেশি তা ও বুঝা যায়। মিসেস আফিয়া দু চার কথা বলার পর ফ্রেশ হতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন।সূচনা রুমে চলে আসলো।তিথি ইদানীং বেশিরভাগ সময় রুমেই থাকে।মেয়েটাকে কত বলে সূচনা যে একটু বাইরে আসো, সারাদিন রুমে থাকলে একঘেয়ে/মি চলে আসবে,পড়তে ও ভালো লাগবেনা তখন।কিন্তু সে রুমেই থাকে।ফ্রেশ হয়ে তিথির রুমেই গেল সূচনা।পড়ার টেবিলে বই খো/লা কিন্তু তিথির দৃষ্টি বইয়ের মধ্যে না।সামনে তাকিয়ে হাতে থাকা কলম নাড়া/চাড়া করছে।সূচনা পেছন থেকে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘সামনে কী নন্দিনী?

যেন চম/কালো তিথি।

–‘ আরে ভাবি তুমি কখন এসেছো?

–‘এই তো একটু আগেই।

–‘ভালোই করেছো এসেছো।একা একা ভালো লাগেনা।

–‘আমি আসলেই কী?তুমি সারাক্ষণ বইয়ে আর ইরা রুমে ডু/বে থাকে।আমিতো একাই থাকি।দিনাপু ই ভালো ছিল কত কথা বলতাম।হোক সেটা পড়ালেখা রিলেটেড অন্তত খালি বসে থাকতে হতনা।

–‘ইশশশ আমাদের ওপর অভিমান করেছ? শোনো আমি না এতক্ষণ ভাবলাম যে তুমি ঠিকই বলছো একটানা রুমে বসে পড়তে পড়তে একঘে/য়েমি চলে আসে আর পরতেও ভালো লাগেনা তখন। তাই পড়ার ফা/কে ফা/কে একটু ব্রে/ক নিব আর ঔ সময়টায় তুমি আর আমি আড্ডা দিব। ঠিক আছে না?

–‘ সত্যি?

–‘হুম।তবে ইরাপুর কিছু করতে হবে।কী যে হয়েছে আল্লাহ মালুম।

–‘তুমি ভেবনা সেটা নিয়ে।ছোট্ট মাথা/য় চা/প পড়বে বুঝলে।

–‘হু

–‘পড়ো তাহলে কিছু লাগলে ডে/কো।

–‘ঠিক আছে ডা/কব।

তিথির রুম থেকে ইরার রুমের দরজার সামনে দাড়ালো সূচনা। বারকয়েক ধা/ক্কা দিলে দরজা খুল/লো ইরা।সূচনার কেন যেন ইরাকে স্বাভাবিক মনে হলো না।সে হালকা করে উ/কি মা/রলো রুমে।তার রুমটা তে ও কেমন অন্ধ/কার, গুমো/ট ভাব।ইরার চোখ মুখ ফো/লা।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইরা দু/ষ্টু হাসি হেসে বললো-

–‘তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো।ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে তোমার খবর নেয় তুমি আবার আমাকে খুঁ/টিয়ে খুটি/য়ে জিজ্ঞেস করে ভাইয়ার খবর নাও।একজন আরেক জনকে কল দিয়ে ই তো জিজ্ঞেস করতে পারো।নাকি অভিমান করেছো?তোমাদের অভিমানের চক্ক/রে আমি ফোন রিসিভ করতে করতে পা/গল হয়ে যাব মনে হচ্ছে।

সূচনা কিঞ্চিৎ ল/জ্জা পেল সাথে অবাক ও হলো ব/টে।প্রণয় ইরার কাছ থেকে খবর নেয় মানে?মানে তার মতো কি সে ও তাকে ফোন না দিয়ে ইরার কাছ থেকে লুকি/য়ে তার খবর নেয়?ইশশশ ভাব কত তার, নিজে ফোন দিলে যেন হা/ইট কমে যাবে। যত্তসব!

–‘ ভাবি?

–‘হ্য,,হ্যা।

–‘কোথায় হারা/লে?

–‘কোথাও না।ইরা তোমার সাথে কথা আছে।

–‘ভাবি আমার শরীর খা/রাপ লাগছে, এখন ঘুমিয়ে থাকি সকালে বলো।প্লিজ।

সূচনা মাথা নাড়ালো শুধু আর ইরা দরজা লাগিয়ে দিলো পলকেই যেন পালি/য়ে গেল সে।হিসাব মেলাতে পারলনা সূচনা কি হয়েছে ইরার?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here