প্রথম প্রেম পর্ব ১

#প্রথম_প্রেম
১ম পর্ব

উর্মির আজ পরীক্ষা শেষ, আজ তার নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সে এখন দশম শ্রেণিতে উঠবে। বেশ উত্তেজিত হয়ে আছে উর্মি কারণ, উর্মির প্রতিদিন ই মনে হয়, সে কেন দ্রুত বড় হচ্ছেনা। দশম শ্রেণিতে উঠা মানে, সে আরও এক ধাপ বড় হয়ে গেল।

দুই বেনী দুলিয়ে উর্মি তাদের কোয়ার্টারের গেইট দিয়ে বাসায় যাচ্ছে, পেছনে তার মা আসছেন। এই কোয়ার্টার অনেক বড়। তারা থাকে কোয়ার্টারের মাঝামঝি বিল্ডিং এ।

উর্মির বাবা একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। উর্মি আর তার ভাই উদয় নিয়ে ছোট্ট পরিবার তাদের।

চার তলার শেষের দিকে ফ্ল্যাট টি উর্মিদের। দরজার সামনে লিখা আছে, সৈয়দ তোফায়েল কবীর।

উর্মির মা পিছন থেকে বলছেন, উর্মি এতো দৌড়ে আসিস কেন? পিছনে মানুষ আছে ভুলে গিয়েছিস?
– তুমি হাঁটতে পার না কেন আম্মু?
– এই যে, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস, চাবি আমার কাছে, এতো দৌড়ে এসে কি লাভ?
– তুমি বুঝবেনা৷
– না, আমি বুঝিনা।

রুনা খানম, তার মেয়ের এই দৌড়ে আসা নিয়ে প্রতিদিন একবার বকেন, তবুও এই মেয়ে নিচে আসার পর, দৌড়ে চারতলা উঠবে। কি যে, পাগল হয়েছে মেয়েটা!

উর্মি এবার তার রুমের জানালার দিকে দাঁড়িয়ে কি যেন দেখছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। স্কুলের সাদা জামা নিয়ে এখনো ঘুরাঘুরি করছে।

রুনা খানম বললেন কি রে তুই কি খাবিনা?
– আমার ক্ষিদে নাই। তুমি উদয়ের কোচিং যাচ্ছ?
– হ্যা, যাচ্ছি। কিন্তু তুই ছাদে যাবিনা।
– আচ্ছা যাও।

উর্মির শাওন ভাইয়া কে দেখলেই অন্যরকম লাগে। কি যে আছে, শাওনের মাঝে, সে নিজেই জানেনা। সে প্রতিদিন নিচে থেকে দৌড়ে আসে, কারণ যদি শাওন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, এই ভেবে। কিন্তু একদিন ও তাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা থাকেনা।

শাওন হচ্ছে উর্মিদের পাশের ফ্ল্যাটের সজিব আহমেদের ছোট ভাই, অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে। খুবই পড়ুয়া ছেলে, বিশ্ববিদ্যালয়েও খুব ভালো করছে। উর্মি বেশ কয়েকবার তাকে আকার ইংগিতে অনেক কিছু বলতে চেয়েছে। কিন্তু শাওন সব সময় এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ শাওন ভাইয়ের বাসায় থাকে, তাদের আর্থিক অবস্থা ও তেমন সুবিধার নয়। তার টিউশনির টাকা আর বড় ভাই এর টাকায় তাদের গ্রামে আরও পাঁচ জনের একটা পরিবার চলে। তাছাড়া এখানে সজিবের পরিবারের অনেক খরচ। তাই শাওনেরই বেশি টাকা দিতে হয়।
তাই শাওন খুবই হিসাব করে চলে।

রুনা খানম ঘর থেকে বাহির হওয়ার পর, আবারও বসার ঘরের দরজা খুলে শাওনের বের হওয়ার অপেক্ষা করছে উর্মি। কিন্তু তাদের দরজা একবার খুলছেনা। কিন্তু এ সময় শাওন পড়ানোর জন্য বের হয় এটা উর্মি জানে।

হঠাৎ দেখলো শাওন লাল একটা শার্ট পরে, চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বেড়িয়ে যাচ্ছে। উর্মি দ্রুত পায়ে গিয়ে তাকে বললো, শাওন ভাইয়া কেমন আছেন?
– হুম ভালো আছি।
– আমি কিন্তু এখনো টেনে উঠে গিয়েছি।
– ওহ।
– এখনো কি আমি বড় হইনি?
– আচ্ছা, আমি যাচ্ছি।
– সজিব আংকেল কি বাসায়?
– না।
– তাহলে এতো তাড়াহুড়ো কেন করছেন? আন্টি নাকি বাবার বাড়ি?
– হুম।
– আপনি বলুন আমি বড় হয়েছি কিনা?
– হ্যা। আচ্ছা আমি যাই, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– সব সময় এড়িয়ে চলেন কেন? বলবেন? আমি কি বিশ্রি? কালো।
– আরে না! ভাবী কোথায়?
– প্লিজ আম্মু কে ভাবী ডাকবেন না।

শাওন আর কিছু না বলেই হন হন করে চলে গেল। উর্মি অন্য কিছু বলতে চাইলেই শাওন সব সময় বুঝিয়ে দেয় সে তার মাকে ভাবী ডাকে।

উর্মি অত্যন্ত রূপবতী একটা মেয়ে। সুন্দর গায়ের রঙ, চেহারা বেশ ধারালো। গালে সুন্দর টোল পরে।

শাওন জানে, উর্মি তাকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু যা, সম্ভব নয়, তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়না, সেজন্যই এড়িয়ে চলে। তাছাড়া উর্মির বয়স অনেক কম! সে কি বুঝে, প্রেমের! শাওন ইউনিভার্সিটিতে উঠেও কখনো প্রেম করেনি, এই ভেবে তার একটি পরিবার আছে। তাছাড়া বড় ভাই নাম মাত্র টাকা সংসারে দেন, তার টাকা আর মেজ ভাইয়ের ছোট চাকরীর উপর বাকিদের জীবন চলে।

উর্মি তার বান্দবী সিনথিয়া কে কল করেছে, তাদের ল্যান্ড ফোন থেকে।
হ্যালো সিন্থিয়া?
– উর্মি নাকি?
– হুম। প্লিজ একটা কাজ করে দিবি?
– শাওন ভাইয়া কে আরেকটা এস.এম.এস দিবি? আমাদের বাসায় তো শুধু বাবার মোবাইল আছে। মা তো ল্যান্ড লাইনে কথা সেরে নেয়।
– শোন, উনি তোকে পাত্তা দেয়না। বুঝিস না কেন? পড়শু এস.এম.এস পাঠিয়েছি। তাছাড়া আম্মু জানলে মেরে ফেলবে!
– ওহ! নিজের প্রেমিক কে তো দিনে সাতবার কল দিস! আর এখন একটা ম্যাসেজ দিতে এতো ভাব!
– উর্মি শোন সিয়াম আমাকে পছন্দ করে, আর তুই কি হ্যা? এতো বড় একজন মানুষের জন্য পাগল হয়েছিস। এই তুই না আগে উনাকে আংকেল ডাকতি?
– এখন ডাকিনা। তুই রাখ তো! বেশি কথা বলিস।

উর্মি অনেকে চেষ্টা করছে, তবুও তাকে বলতে পারছেনা। আসলে বলতে পারছে আকার ইংগিতে কিন্তু তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না।

উর্মি আজ নতুন আরেকটা উপায় পেয়েছে। তা সেটা কাল সকালেই করবে। কিন্তু তার মা সব সময় তার সাথে সাথেই থাকেন এটাই বিরাট সমস্যা। তবুও সে কাল এটাই করবে। সে শাওনের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেন যে ভালবাসে সে নিজেই জানেনা।

উর্মি খাতায় বার বার লিখছে উর্মি+ শাওন।
আবার লিখছে মৌনতা কবীর উর্মি + শাওন হোসাইন।
আবার লিখছে মৌনতা শাওন উর্মি।

খাতায় কাটাকুটি করেই যাচ্ছে, আজ পরীক্ষা শেষ। কিন্তু মন খুব অশান্ত লাগছে। শাওন কি তার মনটা শান্ত করে দিতে পারেনা? এই অবুঝ মনের সবুজ ভালবাসা কেন বুঝেনা। তবে, কাল সে বুঝিয়ে ছাড়বে, তাকে কিছু একটা উত্তর কাল দিতেই হবে, সে ভোর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে…..

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
৩০.০৬.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here