#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—০৪
মূল ভাবনা। কাহিনী। নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
বেডরুমের দরজাটা খুলতেই যেন মাথায় বাজ পড়লো প্রতিশ্রুতির…!!!প্রথম একটা ম্যাগাজিন হাতে বিছানার ওপরে শুয়ে আছে….!!!পাশেই একটা চায়ের কাপ।
—একি তুমি….এই তোমার বিকেলে আসা হলো….????
(পরম নিশ্চিন্ত মনে নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ে মারলো প্রথম, ওর কথায় খানিকটা অভিমান মাখা!!)
—আআআ……আপনি এখানে……????
আশ্চর্যের স্বরে প্রশ্ন করলো প্রতিশ্রুতি)
–হ্যাঁ, এখানে।নাতো কি অন্য কোথাও থাকার কথা ছিলো নাকি আমার!??
—নাহ!এটা হতে পারে না।এটা হতে পারে না কিছুতেই….
—বিরবির করে কি বলছো এগুলো…আমি তো বুঝতে পারছি না কিছুই।আর তুমি এভাবে আমতা আমতা করছোই বা কেন??
—আপনি কখন আসলেন ঘরে….??
—কখন আসলাম মানে কি…আমি তো সন্ধ্যা থেকেই বাসায় আছি….তুমি আসতে লেট করছো বলে ভীষণ টেনশন হচ্ছিল।ইভেন ফোনো করেছি কয়েকবার দেখো।রিসিভ করো নি তুমি….
প্রতিশ্রুতির মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু!একটু আগেই নিজের চোখে প্রথমকে দেখে এসেছে সে!!এখন কিনা প্রথম দিব্যি বসে আছে ওর সামনে।সবথেকে বড়ো কথা প্রথমের ব্যবহার দ্বারা বিন্দুমাত্র মনে হচ্ছে না ও কিছু একটা লুকাচ্ছে।সেইরকম কিছু হলে ওর চোখেমুখে সেই ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠতো!!
প্রথম যদি এখানেই থেকে থাকে তবে ওখানে ওটা কে ছিলো…!!???নাহ!বাড়ির অন্য কারো সাথে কথা বলতে হবে এই বিষয়ে।নয়তো আজকে আর পেটের ভাত হজম হচ্ছে না প্রতিশ্রুতির।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে….তারপর ড্রয়িং রুমে আসলো।ড্রয়িং রুমে প্রথমের ছোট ভাই সার্থক বসে বসে টিভি দেখছে।ভাবীকে হনহন করে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো সে…
–কি হয়েছে ভাবী…. সবকিছু ঠিক আছে তো..??তোমার আসতে এতো রাত হলো কেন…?
–সেসব কথা পরে হবে,, আগে তুমি আমার একটা কথার উত্তর দাও ভাই!
–কথা….!! কি কথা বলো??
—আজ সন্ধ্যা থেকেই তো বাসায় আছো তুমি,,তাই না…??
—হ্যাঁ,, কিন্তু কেন!??
—আচ্ছা,তোমার ভাইয়া কি কোথাও বেরিয়েছিলো… সন্ধ্যার পরে, বা তারো আগে…??
(প্রতিশ্রুতির কথা শুনে হো হো করে হাসতে থাকে সার্থক!!)
—কি হলো,তুমি হাসছো কেন…আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি!
—(হাহাহাহা)সরি…..সরি!হ্যাঁ কি বললে তুমি… ভাইয়া সন্ধ্যার পরে বাসা থেকে বেরোবে!ওর ব্যপারে কিছুই জানো না এখনো তুমি ভাবি।
—কি জানি না আমি…??
—ও হলো একটা ভীতুর হাড্ডি!সন্ধ্যার পরে বাথরুমে যেতে পর্যন্ত মানুষ লাগে ওর। একা একা যেতে পারে না।বাসা থেকে বের হওয়া তো দুঃস্বপ্ন!!
—হুম, বুঝেছি।আজকে বেরিয়েছিলো কিনা বলো??
—নাহ।আমি তো দেখি নি।সন্ধ্যার পরে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেই ছিলো।আমি দুমিনিট আগে চা দিয়ে আসলাম।
—ওহহহ!তাই!
—আচ্ছা,তুমি এই প্রশ্ন কেন করছো সেটা তো বললে না…?ভাইয়াকে বাইরে দেখেছিলে নাকি…?
— না!কিছু না।তুমি টিভি দেখো।আমি আসছি। আর আমি যেগুলো জিজ্ঞেস করেছি তোমার ভাইয়ার সাথে শেয়ার করো না আবার।
–আচ্ছা বলবো না।
সার্থক আবার টিভি দেখায় মনোনিবেশ করে!প্রতিশ্রুতি সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।।
–
–
–
–
পরেরদিন সকাল বেলা…..
টিভি খুলতেই আরো একটা ব্রেকিং নিউজ!!আবারো একটা পরিকল্পিত ধর্ষন এবং খুন।যদিও এবার অপরাধীর থেকে কোনো ক্লু শনাক্ত করা যায় নি।সবথেকে অবাক করা ব্যপার ধর্ষনটা সেই জায়গায় হয়েছে যেখানে প্রথমকে গতকাল রাতে দেখেছিলো প্রতিশ্রুতি….!!
সেই জায়গায় গতরাতে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে…পুলিশের ধারণা এটা ঐ সিরায়াল রেপিস্টের কাজ।হন্নে হয়ে পুলিশ খুঁজছে তাকে।কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। অপরাধী এতো পরিকল্পিত আর সুক্ষ্মভাবে কাজগুলো করছে পুলিশ তার পর্যন্ত পৌঁছানোর কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না!!
প্রথম খুন খারাপি,রক্তারক্তি…ধর্ষন এগুলো সহ্য করতে পারে না।প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করলো টিভি নিউজ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে আছে সে!এমন একটা মানুষ ধর্ষনের মতো কাজ করতে এটা সত্যিই বড্ড অবাস্তব আর অবিশ্বাস্য !!
–
–
–
–
বিকেলবেলা বাড়ির ছাদে বসে আছে প্রতিশ্রুতি। একা বসে বসে পুরো দিনের ঘটনাগুলোর কথা ভাবছে সে!!হঠাৎ নিচের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পায় প্রথম গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বেরিয়ে রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালো।তারপর চারদিকটা ভালো করে তাকাতে থাকে….
ওর আচরণ বড্ড সন্দেহজনক মনে হচ্ছে প্রতিশ্রুতির কাছে।কেমন জানি একটা আতংক বা লুকোচুরি ভাব দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর স্বামী।চারদিকটা চোরের মতো ঐভাবে তাকিয়েই বা দেখছে কেন….!!??
কি ঘটছে ব্যপারটা দেখতে হয়।এই ভেবে প্রতিশ্রুতি তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেমে গেলো।তারপর লিফট করে সোজা গ্রাউন্ড ফ্লোরে।ওর চোখের সামনে থেকে প্রথম একটা ক্যাবে উঠে পড়ে….!!তারপর ড্রাইভারকে নির্দেশ করতে সে এগিয়ে যায় সামনে।
—-না!কিছু তো একটা হচ্ছে….আমার এক্ষুনি প্রথমকে পিছু করতে হবে।দেখতে হবে ও ঠিক কোথায় যাচ্ছে, আর কি করতে চাইছে।এখন আর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।(মনে মনে ভাবলো প্রতিশ্রুতি)
তারপর সেও একটা ট্যাক্সি করে প্রথমকে ফলো করতে থাকে….রাস্তায় গাড়িসংখ্যা কম ছিলো বলে খুব সহজেই প্রথমকে ফলো করা যাচ্ছিলো।নয়তো এতোক্ষণে হয়তো গাড়ির ভীড়ে হারিয়ে ফেলতে হতো!!
হঠাৎ মনে হলো প্রথম গাড়িটা থেমে গেলো।কাছে এসে দেখলো সত্যিই তাই!গাড়ি থামিয়ে প্রথম একটা বিল্ডিং এর ভেতরে ঢুকলো।ঢোকার আগে চারপাশটা তাকিয়ে নিলো সে!!
এই দৃশ্য দেখে প্রতিশ্রুতিও তার গাড়ি থামিয়ে বিল্ডিংটার সামনে এসে দাঁড়ায়।সে ভাবছে এখন তার ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা!!
—কি করবো বুঝতে পারছি না,, ভেতরে যাবো না, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে ভেতরে কি হচ্ছে জানবো কিকরে। আর প্রথম ওই বা লুকিয়ে একা একা এমন একটা ফাঁকা জায়গায় কেন আসলো। জানতে হবে আমায়।
নিজের মন থেকে অনুমতি নিয়ে বিল্ডিংএর ভেতরে ঢুকলো প্রতিশ্রুতি।বিল্ডিংএর কাজ এখনো শেষ হয় নি।ভেতরে তেমন লোকজন আছে বলেও মনে হচ্ছে না। এমন একটা জায়গায় প্রথমের কি কাজ মাথাতেই ঢুকছে না….
ধীরে সন্তর্পণে পা টিপে টিপে এগিয়ে যেতে লাগলো প্রতিশ্রুতি….কোথাও প্রথমকে দেখা যাচ্ছে না।তবে এই বিল্ডিং এর ভেতরে ও ঢুকেছে এটা নিশ্চিত।
হঠাৎ একটা পায়ের আওয়াজ ভেসে আসলো প্রতিশ্রুতির ভেতর থেকে।আচমকা ভয়ে আঁতকে উঠলো সে!পেছনে তাকাতে যাবে ঠিক তখন পেছন থেকে তার মাথায় সজোরে আঘাত করলো!!
মুহুর্তেই একটা অস্ফুট চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো প্রতিশ্রুতি……!!!!!
চলবে!!