প্রথম_প্রতিশ্রুতি পর্ব ৫

#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—–০৫
মূল ভাবনা। কাহিনী। নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

চোখ মেলেই নিজেকে একটা রুমের ভেতরে আবিষ্কার করলো প্রতিশ্রুতি।মাথায় প্রচন্ড ব্যথা করছে তার….
তবে জায়গাটা ভীষণ পরিচিত মনে হলো তার কাছে,মনে হচ্ছে আগেও যেনো এই জায়গাতে এসেছে।কিন্তু এই অবস্থায় ঠিক মনে করতে পারছে না।

একটু পরে ঘরের ভেতরে কেউ এসে ঢুকলো!!লোকটাকে দেখেই মূহুর্তে চমকে উঠলো প্রতিশ্রুতি!!!!

—একি….. তুমি…..????আমি তোমার বাড়িতে এলাম কিকরে!?

—তার আগে বলো ঐ বিল্ডিংএ কি কাজ ছিলো তোমার….আর কারা ছিলো ওরা,,কেউ একটা তোমার মাথায় আঘাত করে ফেলে রেখে দিয়েছিলো!

(ক্রমে ক্রমে সবকিছু মনে পড়তে থাকে প্রতিশ্রুতির।প্রথমকে ফলো করতে করতে সেই বিল্ডিং পর্যন্ত পৌঁছানো,তাকে খুঁজতে থাকা,,তারপরে পেছন থেকে কারোর দ্বারা মাথায় আঘাত। সবকিছু পরিষ্কার হতে থাকে প্রতিশ্রুতির কাছে…..)

—কি হলো,কোনো কথা বলছো না যে…?!

—কি বলবো আর আমি…..আচ্ছা তুমি আমায় বাঁচিয়ে এনেছো তাই না…??কিন্তু তুমি ঐ জায়গাটায় কিকরে পৌঁছলে…??

—কিকরে পৌঁছলাম মানে… আমি ওখানেই ছিলাম। তুমি তো আমার পেশাটা জানো।নাকি আমার সাথে সাথে সেটাও ভুলে গেছো…

—আমি তোমাকে আজো ভুলিনি নির্জন!আর তুমি যে একজন ইঞ্জিনিয়ার সেটাও ভুলি নি।

—বাহহ!ধন্য হলাম তোমার মুখে নিজের নামটা উচ্চারিত হতে শুনে….

—ইনসাল্ট করছো আমায়….??

—তোমায় ইনসাল্ট করার স্পর্ধা আছে আমার।

—তবে কি অভিমান করছো আমার ওপরে…??

—(হাহাহাহা)অভিমান!কারোর ওপর অভিমান করার জন্য অধিকারবোধের প্রয়োজন হয় শ্রুতি… আমার কি অধিকার আছে তোমার ওপর অভিমান করার।আমি এখন কে হই তোমার….??

—আজ হয়তো অধিকার নেই,কিন্তু একদিন তো ছিলো!!!

—ও ছিলো বলছো… তাও ভালো এখন পর্যন্ত সবকিছু ভুলে যাও নি।মনে রেখে দিয়েছো।

—একদম মজা করো না আমার সাথে প্লিজ।

—ওকে,সরি সরি।বাই দ্যা ওয়ে,তুমি তো এখোনো বললে না…ঐ বিল্ডিংএ কেন গেলে তুমি,,আর ওরা কারা ছিলো… তোমায় আঘাত করে ওভাবে….

—আমি জানি ওরা কারা ছিলো!!

—হ্যাঁ, জানো না। কিন্তু একটা আন্দাজ তো করতে পারো নাকি।দেখো আমি বিল্ডিং টা দেখার কাজেই আজকে গিয়েছিলাম ওখানে। গিয়ে দেখি তুমি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছো!??আর তখন দুই বা তিনজন লোক বেরিয়ে যায় সেখান থেকে!তোমার দিকে এটেনশন দেবার কারনে ওদেরকে ধরতে পারলাম না।

নির্জন প্রতিশ্রুতির প্রাক্তন প্রেমিক।ওদের একসময় দুজনের দুজনকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু বিধি বাম,,কোনো কারনে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।প্রতিশ্রুতি আজ অন্য ঘরের বৌ।সে কিকরে নির্জনের কাছে নিজের স্বামীর ওপরে সন্দেহর কথা বলে।সেটা মোটেও সমীচীন হবে না!!তবে ঐ বিল্ডিংএ প্রথম ছিলো এটা তো নিশ্চিত।প্রতিশ্রুতিকে আঘাত কে করলো,,আর আঘাত যখন করলোই সেটা প্রথমের কোনোভাবে চোখে পড়লো না।চোখে পড়লো আজ আর এই মূহুর্তে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকের ঘরে শুয়ে থাকতে হতো না প্রতিশ্রুতিকে।

—তুমি কি কিছু ভাবছো শ্রুতি।আচ্ছা হতে পারে তোমার কোনো প্রাইভেট বিষয়।আমি আর প্রশ্ন করে বিব্রত করতে চাইছি না তোমায়।আমি শুধু চাই তুমি শুধু সুস্থ থাকো,আর ভালো থাকো।

—একটা প্রশ্ন করি তোমায়,কিছু মনে করো না।

—হুমম,বলো।

—বিয়ে করো নি,,নাকি এখনো সিঙ্গেল…??

–বিয়ে…..(হাহাহাহা)হাসালে শ্রুতি। কি মনে হয় জানো আমার ভাগ্যে সংসার করা নেই।যদি থাকতো আজকে…..

—কি থেমে গেলে কেন,,কি আজকে??

—-নাহ!কিছু না।আমার মনে তোমার এখন বেরোনো উচিত,,জানি যেতে হয়তো কষ্ট হবে। তাও যেতে হবে।

—তুমি আমায় পৌঁছে দেবে একটু….??

—তোমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন,বিশেষ করে তোমার স্বামী আমাদের একসাথে দেখলে মাইন্ড করবে না তো আবার…?

–নাহ!ওরা সেরকম মানুষ নয়।কেউ কিছু মনে করবে না।

—আচ্ছা চলো,,দেখা যাক কি হয়।

সৃজন সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ।প্রতিশ্রুতি ভাবতেও পারেনি ও বিয়ের পরেও এতোটা ভালো ব্যবহার করবে ওর সাথে।তাও আজকে এক প্রকার জীবন বাঁচালো।প্রতিশ্রুতি সৃজনের সাথে বাইরে বেরিয়ে পড়লো।ওরা দুজনে একটা ট্যাক্সি নেয়।বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগলো।নির্জন যদিও বাসা পর্যন্ত গেলো না।রাস্তার মোড়েই ছেড়ে দিয়ে আসলো প্রতিশ্রুতিকে।

মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে মাথায় ঢুকলো প্রতিশ্রুতি।প্রথম নিজের স্ত্রীকে আহত অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো।

—শ্রুতি,,কি হয়েছে তোমার!তুমি আঘাত পেলে কি করে….???

(এবার সত্যি সত্যি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না প্রতিশ্রুতি।)

—আমার কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আপনার না জানলেও চলবে।তার আগে বলুন আপনি আজকে বাসা থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন!??

—একি!কি হলো?তুমি এভাবে রেগে কথা বলছো কেন…??আমি কোথায় গিয়েছিলাম মানে??

—আমি স্পষ্ট দেখেছি আপনাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে….মিথ্যা বলার চেষ্টা একদম করবেন না।

—আমি কোথাও যায় নি শ্রুতি…বিশ্বাস করো আমায়।আর তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেন… কি হয়েছে বলবে!

(প্রথমের সাথে এখন এইভাবে কথা বলা সত্যি ঠিক হচ্ছে না,মাথা গরম করে ভুলভাল স্টেপ নিলে বিপদ আরো বাড়বে।এর থেকে যা করার ঠান্ডা মাথায়, সংযত হয়ে করাটাই উত্তম। এইভেবে নিজেকে শান্ত করলো প্রতিশ্রুতি)

—না, কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।

—কিছু হয়নি মানে,তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন…???

—বলছি,আগে এক গ্লাস পানি আনুন আমার জন্য প্লিজ।খুব তেষ্টা পেয়েছে।

প্রথম কিচেনে ছুটে যায় পানি আনার জন্য….!!প্রতিশ্রুতি প্রথমকে যতোই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে…কতোটা কেয়ারিং ও।স্ত্রীকে আহত অবস্থায় দেখে ওর চেহারাই বদলে গিয়েছে একেবারে।যেন নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে চাইছে।এমন একটা মানুষকে সন্দেহ করতেও মন বাঁধা দিচ্ছে প্রতিশ্রুতির।কিন্তু আজকে সে প্রথমকে নিজের চোখে সন্দেহজনকভাবে বেরিয়ে যেতে দেখেছে…ওর সেই দেখা মিথ্যা হয় কিকরে…????

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here