#প্রহেলিকা
#পর্ব_২৫
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–
আজ জগিং থেকে ফিরে জেহের সোজা গোসলের জন্য ঢুকে গেছে। সকাল সকাল ইনশিতা যেন অন্য এক জেহেরকে দেখছে। গম্ভীর হয়ে ছিল পুরোটা সময়, মুখে একটুও হাসির দেখা মিলছিল না। অথচ কে বলবে, গতকাল রাতে একটা বাচ্চার মতো ইনশিতাকে আগলে ধরে শতশত কথা বলেছে!
জেহেরের মোবাইল টেবিলের উপর দেখে ইনশিতার ইচ্ছে জাগল বাবাকে একটু কল করার। জেহেরের গোসল করে আসতে আবার বেশি সময়ও লাগবে না। তার মধ্যে তাড়াতাড়ি কথা বলে নিলে সমস্যাও হবে না। এমনিতে যোগাযোগের কোনো উপায় রাখেনি জেহের। তার উপর জেহেরের মোবাইল সে সবসময় কাছে পায় না। তাই আর আজকের সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না।
মোবাইলের পাসওয়ার্ড ইনশিতা আগে একবার দেখে নিয়েছিল লুকিয়ে, জেহের আর তার নাম মিলিয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়া। বারান্দায় এসে দাঁড়াল। খুলে দ্রুত ফোন করল বাবার নাম্বারে। কেটে যাওয়ার আগ মুহুর্তেই ইনশিতার বাবা কল ধরে।
-“হ্যালো। কে বলছেন?”
বাবার কন্ঠ শুনে ইনশিতার কন্ঠ রোধ হয়ে এলো। কোনোরকমে ফিসফিসিয়ে বলল,
-”বাবা!”
ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ চুপ থাকল ইনশিতার বাবা। পর মুহুর্তেই উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“মা! তুই কেমন আছিস রে মা? তোর খোঁজ নেই কেন? তোর শশুরবাড়িতে কয়বার গিয়েও ফিরে এলাম। তারাও না কি জানে না তুই কোথায়। জেহের তোকে কোথায় নিয়ে গেছে?”
এখন যদি সে তার বাবাকে বলে সে এখন এইখানে বন্দী, বাবা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে মেয়ের এই অবস্থা শুনে। হয়তো তার বাবা এসে পড়বে, যা কখনোই চাইবে না জেহের। পরে দেখা যাবে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। এই ভেবে ইনশিতা বলল,
-“আমি আর জেহের এখন অন্য এক জায়গায় থাকি। এখান থেকে আসলে জেহেরের অফিস খুব কাছে তো তাই।”
-“কোথায় সেই জায়গাটা?”
ইনশিতা চুপ করে রইল। সে তো জানে না আসলে তারা কোথায়। কথা ঘুরানোর চেষ্টা করল সে।
-“মা কোথায় বাবা? কেমন আছেন? আর তোমার কন্ঠ কেমন যেন শোনাচ্ছে। তুমি ঠিক আছো?”
-“আমি ঠিক আছি রে মা। তোর মা এখন ছাদে বোধহয়। জানিস, সবসময় তোর কথা বলে। ঐতো… নয়নিকা আসছে। নে কথা বল একটু, বেচারী তোর সাথে কথা না বলতে পেরে মনটা খারাপ করে রেখেছে।”
নয়নিকা কিছুটা দূরে এসে ইনশিতার সাথে কথা বলতে লাগল।
-“তুই সত্যিই কোথায় আছিস বলতো ইতু? আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে না তোর ব্যাপারটা।”
ইনশিতা নয়নিকার কাছে লুকাতে পারল না। সে বলেই দিলো,
-“এখানে আশেপাশে অনেক জঙ্গল। এই জঙ্গলের মধ্যেই এই বাড়িটা। আমি জানি না কোথায় এটা। আর এখানেই না কি আমাকে সবসময় থাকতে হবে জেহের বলেছে।”ইনশিতা প্রায় কেঁদেই ফেলল।
-“কলেজ আসছিস না কেন?”
-“জেহের আমাকে কলেজও যেতে দিচ্ছে না।”
নয়নিকা অবাক কন্ঠে বলে,
-“কিন্তু জেহের না তোকে বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল তোকে কলেজে আসতে দিবে! তাহলে?”
-“আমিও সেটাই বলেছিলাম জেহেরকে। তবে তিনি এখন মত পাল্টে ফেলেছেন। তিনি আমাকে আর কলেজে যেতে দেবেন না। তিনি চায় না আমি কারো সাথে মিশি।”
নয়নিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
-“তুই আজকে আসতে পারবি কলেজে?”
-“সেটা কখনোই সম্ভব না রে। উনি যেতে দেবেন না।”
-“তুই পালিয়ে আয়।”
-“অসম্ভব। আমি এখানকার রাস্তাঘাট কিছুই চিনি না। বই খাতা কিছুই নেই। আর জেহের যদি জানে আমি পালিয়েছি তাহলে এখানেও আমাকে রুমে বন্দী করে ফেলবে। আমি পারবো না।”
-“ইতু, মনোযোগ দিয়ে শোন আমার কথা। তুই কোনোরকমে জেহেরের মোবাইল নিয়েই পালিয়ে আয়। বই খাতার চিন্তা করা লাগবে না। আর আঙ্কেলের শরীরটাও খারাপ করেছে।”
ইনশিতা আঁতকে উঠে বলল,
-“কীহ! কী হয়েছে বাবার?”
-“তোর খোঁজ খবর না পেয়ে ওনার প্রেশার লো হয়ে পড়েছে। খাবার-দাবারও ঠিক মতো করছেন না। কয়েকদিন উনি শয্যাতে ছিলেন। দেখলি না, কেমন করে কথা বলছে।”
-“আ-আমি আসবো। যেভাবেই হোক আমি আসব।”
বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজে ইনশিতা ফোন কেটে দিলো। কললিস্ট থেকে নাম্বার কেটে তাড়াতাড়ি রুমে ফিরতেই জেহেরের সামনে পড়ে। বিদ্যুৎ চমকানোর মতো চমকে গিয়ে মোবাইলটা ওড়নার আড়ালে নিয়ে যায় ইনশিতা।
জেহেরের কপাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মাথা মোছেনি সে। সবসময় ইনশিতাকেই তার ভেজা চুল মুছে দিতে হয়। টাওয়াল জড়িয়ে খালি গায়েই বেড়িয়েছে সে। রোজকে দেখে কপাল কুঁচকালো। দেখে মনে হয় ভয় পেয়ে আছে কত! কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমেছে। জেহের একটু এগিয়ে আসতে ইনশিতা দু’পা পিছিয়ে গেল। হাত কাঁপছে তার।
জেহের কপাল কুঁচকে রেখে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রোজকে পরখ করে নিলো। আচমকা ইনশিতার হাত ধরে সামনে আনলো। নিজের মোবাইল ইনশিতার হাতে দেখে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল তার। ইনশিতা মাথা নিচু করে রইল। জেহের মোবাইলটা টান মেরে চেক করল সব। চোখ উঠিয়ে ইনশিতার মুখোমুখি হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-“মোবাইল নিয়ে কী করছিলে?”
ইনশিতা তোতলিয়ে বলল,
-“আ-আমি, আস-আসলে… মা-মানে…”
গর্জে উঠে জেহের,
-“বলো।”
কেঁপে উঠল ইনশিতা।
-“ক-কিছু করছি-ছিলাম না। লক করা ছিল তাই কিছু ক-করতে…”
-“কী করতে চেয়েছিলে?”
-“ফ-ফোন দিতে চেয়েছিলাম।”
-“বাবা মা’কে তাই তো?”
ইনশিতা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাল। জেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খানিক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর গিয়ে খাটে বসল। ইনশিতা জানে এখন তাকে কী করতে হবে। আরেকটা টাওয়াল নিয়ে জেহেরের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছে দিতে লাগল। জেহের ইনশিতার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে মাথাটা পেটের সাথে ঠেকিয়ে রেখেছে। ইনশিতা আমতা আমতা করে বলল,
-“আমাকে কী সত্যি আর কলেজ যেতে দিবেন না?”
জেহের কপালে বিরক্তির সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে মাথা তুলে বলল,
-“তো তোমার কী মনে হয় আমি মজা করছিলাম?”
-“না মানে, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।”
একটু থেমে ইনশিতা স্বাভাবিক স্বরে বলল,
-“আসলে জেহের, আমি ভাবছিলাম আমি যদি চাকরি করি, মানে…তাহলে হয়ত আমাদের আরও বেশি আয়ের উৎস হবে। এতে ভবিষ্যতেও…”
জেহের টাওয়ালটা নিয়ে ছুঁড়ে মারল নিচে। ইনশিতা কিছুটা পিছু হটল। জেহের দাঁড়িয়ে গিয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
-“আমার যা টাকা আছে তাতে ভবিষ্যতে আরও চৌদ্দগোষ্ঠী চলতে পারবে। তোমার চাকরি করার দরকার নেই। এসব চাকরি-টাকরির নাম আর যেন না শুনি।”
ইনশিতা কিছুটা মিইয়ে গেল। তবুও বাহির থেকে নিজেকে আরেকটু স্বাভাবিক করে বলল,
-“আল্লাহ না করুক, আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তো আমাকেও চলতে হবে না কি? তখন বয়সটা যদি পেরিয়ে যায় তাহলে তো আর চাকরি-টাকরি পাবো না। তখন কী করে চলব আমি?”
জেহের চোখ গরম করে তাকাল রোজের দিকে। মুখের আদল না বদলিয়ে শান্তস্বরেই বলল,
-“তুমি কী আমার মৃত্যুর অপেক্ষা করছো?”
বিস্ফোরিত নয়নে ইনশিতা চেয়ে রইল।
-“কী যা তা বলছেন? আমি কখন বললাম সে কথা?”
-“একটু আগে কী বলেছিলে তা রিপিট করো।”
ইনশিতা মনে করতে লাগল একটু আগে সে কী বলেছিল। মনে পড়তেই জিভ কাটল। আসলেই তো সে জেহেরের মারা যাওয়ার কথাটাই বলেছিল অজান্তে। কিন্তু সেটা একটা উদাহরণ ছিল মাত্র। সেটাকে এমন সিরিয়াসলি নেওয়ার কী আছে? ওহ হো! সে তো ভুলেই গিয়েছিল জেহের সব কথাকেই সিরিয়াসলি নেয়।
-“কী? মনে পড়ল?”
ইনশিতা জেহেরকে বোঝানোর জন্য হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল,
-“আরে জেহের। আমি শুধু ওটা যাস্ট একটা উদাহরণ দিলাম আর কী। কখন কী হয়ে যায় বলা তো আর যায় না। তাই না? তাই ভবিষ্যৎ ভেবেই বললাম।”
ইনশিতা নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসল। তবে জেহের সেই আগের মতোই। বোঝাই যাচ্ছে জেহের কথাটাকে একদম সিরিয়াসলি ধরে নিয়েছে।
-“আমি মারা যাওয়ার পর নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে? এতটা স্বার্থপর হতে পারবে? কষ্ট হবে না আমি মরে গেলে।”
শেষ বাক্যটা কেন যেন ইনশিতার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধল। জেহের না থাকলে তার কী কষ্ট হবে? হবে তো। স্বামী মারা গেলে প্রতিটা স্ত্রীর-ই তো কষ্ট হয়। তবে জেহেরের শেষ কথাটাতে ইনশিতা প্রচুর আঘাত পেল মনে। জানে না কেন? জেহেরের মুখ থেকে মরার কথাটা যেন শুনতেই পারছে না ইনশিতা। ইচ্ছে করছে জেহেরের জড়িয়ে ধরে বলতে,‘আপনি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে জেহের। খুব। যেমনটা গাছ থেকে পাতা ঝরে গেলে গাছের মৃত্যু হয়, তেমনটা আপনি চলে গেলে আমারও যেন মৃত্যু হয়।’অদৃশ্য দেয়ালের মাঝে আটকা পড়ে সে আর কথাটি বলতে পারল না।
রোজের উত্তর না পেয়ে কিছুটা আহত হলো জেহের। সাথে রাগও হলো। তবে তা আড়ালে রেখে কেবিনেটের সামনে যেতে যেতে বলল,
-“বাই দ্যা ওয়ে, আমার সব প্রোপার্টির অর্ধেক মালকিন তুমি। কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সো, চাকরি করার চিন্তা ঝেড়ে ফেলো।”
বিস্ময়ে যেন ইনশিতার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল। বিস্মিত গলায় বলল,
-“মানে কী! আপনার প্রোপার্টির মালকিন আমি হতে যাবো কেন?”
স্যুট হাতে নিয়ে জেহের গভীর দৃষ্টি মেলে তাকাল ইনশিতার পানে।
-“তুমি হবে না তো কে হবে? আমার সবকিছুতেই তোমার ভাগ থাকবে। হোক সেটা প্রোপার্টি কিংবা আমি। তোমার অধিকার আছে। কারণ তুমি আমার স্ত্রী, আমার অর্ধাঙ্গিনী।”
‘তুমি আমার স্ত্রী, আমার অর্ধাঙ্গিনী।’কথাটি ঝংকার তুলে বাজতে লাগল ইনশিতার কানে। জেহেরের মুখে ইনশিতাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী বলাটা যেন খুব শোভা পায়। ইনশিতার ইচ্ছে করছে বারবার জেহেরের মুখ থেকে কথাটি শুনতে।
জেহের চেঞ্জিং রুমে চলে গেলে ইনশিতা খাবার রেডি করতে যায়। গ্লাসে পানি ঢালতেই তার মনে পড়ল তার যেতে হবে বাড়িতে। এতক্ষণ কথাটি একদম মাথাতেই ছিল না।
জেহের এসে দেখে গ্লাস থেকে অনবরত পানি পড়ছে। গ্লাস পানিতে যে ভরে গিয়ে নিচেও পানি পড়ছে সেটা রোজের খেয়াল নেই। অথচ রোজের দৃষ্টি গ্লাসের দিকেই। আশ্চর্য! চোখের সামনে পানিতে ভেসে যাচ্ছে অথচ মেয়েটার খেয়ালই নেই! জেহের গিয়ে গ্লাসটা সরিয়ে ফেলল। তবুও ইনশিতা পানি ঢালতে লাগল খালি টেবিলে। মেয়েটা কোন ধ্যানে আছে? জেহের ইনশিতার হাত ধরে ঝাঁকি দিলে ইনশিতার হুশ ফিরে। তাকিয়ে দেখে জেহের তার দিকে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিচে তাকাতেই দেখে পুরো টেবিল আর ফ্লোরে পানি ছড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে কাপড় এনে মুছে নিলো জায়গাটা। মনে মনে নিজেকে ধমকাচ্ছে সে।
জেহেরকে বসতে দিলে জেহের দৃষ্টি অপরিবর্তনীয় রেখেই বসে পড়ে চেয়ারে। ইনশিতার অস্বস্তি হতে লাগে। জেহের যেভাবে তাকিয়ে আছে সেভাবে বোধহয় ইনশিতার পালানোর প্ল্যানটাই ধরে ফেলবে।
-“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
-“তুমি কোন ধ্যানে ছিলে এতক্ষণ? পানি পড়ে সব ভেসে যাচ্ছে অথচ তোমার খেয়ালই নেই!”
ইতস্তত করে ইনশিতা বলে,
-“আমি আর কী ধ্যানে থাকব? এমনি আর কী…”
জেহের সন্দেহের চোখেই চেয়ে রইল। ইনশিতা গিয়ে অন্য একটা চেয়ারে বসলে জেহের খাবার রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। জেহেরকে খাবার খেতে না দেখে ইনশিতা ইশারায় কী হয়েছে বলল। জেহের নিরুত্তর। সে একদৃষ্টিতে দেখতে লাগে রোজকে। জেহেরের এই দৃষ্টি শান্ত হলেও ভেতরে যে পৃথিবীসম রাগের আগুন দাউদাউ করছে সেটা ইনশিতার নজর এড়ালো না। সে ভাবছে, কী এমন করল যার জন্য জেহের এভাবে তাকিয়ে আছে! ইনশিতা খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। হঠাৎ জেহের ইনশিতার খাবার প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে নিল। ইনশিতা হতভম্ব হয়ে গেছে। জেহের তো রুটি খায় না, তার জন্য আলাদা খাবার রয়েছে। তাহলে এভাবে সামনে থেকে খাবার নিয়ে নেওয়ার মানে কী?
-“আজব! এভাবে খাবার নিয়ে নিলেন কেন? আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আপনার খাবার অন্য আইটেম। এটা আমার।”
জেহের শীতল গলায় বলল,
-“আমি না হয় ভুলে গেলাম। তুমি কি কিছু ভুলে গেলে বেবি?”
জেহেরের এত শীতল কন্ঠ শুনে ইনশিতা শুকনো ঢোক গিলল। জেহের এত আদর করে কথা বলছে কেন? সে আবার কী ভুলবে? পরক্ষণেই মনে পড়ল সে আজ অন্য চেয়ারে বসেছে। ধীরে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে জেহেরের কোলে গিয়ে মাথা নিচু করে বসল। বাঁকা হাসল জেহের।
খেতে খেতে ইনশিতা শেষবারের মতো জেহেরকে মানানোর চেষ্টা করল। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, জেহের যদি কোনোভাবে না মানে তাহলে যেকোনো উপায়েই সে এখান থেকে পালাবে। তার বাবা মাকে কতটাদিন সে দেখে না। অবশ্য এখানে ফিরেও আসতে পারে সে। জেহের জোর করে আনার থেকে ভালো নিজ থেকে চলে আসা।
-“আমাকে যেতে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না নিশ্চয় জেহের?”
ঘটানটা বুঝতে জেহেরের সময় লাগল না। খাবার মুখে নিতে নিতে বলল,
-“এসব বিষয়ে কথা বলতে গতকাল রাতেই বারণ করেছিলাম।”
কিছুক্ষণ পর ইনশিতা এমন ভাব করল যাতে জেহেরের মনে কোনো সন্দেহ না জাগে। আহ্লাদী সুরে বলে,
-“আচ্ছা জেহের। আমরা যদি আজ কোথাও ঘুরে আসি। ঐ যে সেদিন নদীর পাড়ে গেলাম না, সেদিনের মতো আজ কোথাও যাই। চলুন না।”
জেহের বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল,
-“তুমি যে কৌশলে যেতে চাইছ সেটা আমি বুঝি না ভেবেছ? খাওয়ায় মন দাও। স্টুপিড!”
ইনশিতা কথা না বাড়িয়ে ভাঙ্গা মন নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। জেহের যেহেতু মানলোই না তাহলে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিতে হবে। আপাতত এখান থেকে যাওয়ার চিন্তা করতে হবে।
.
.
জেহের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল। ইনশিতা নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়াল। জেহের না তাকিয়েই বুঝতে পারল তার রোজের উপস্থিতি। তবুও কিছু বলল না। ইনশিতা কন্ঠে বিষাদ মেখে বলল,
-“আজ আপনি অফিসে না গেলে কি বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?”
জেহের আয়নার ভেতর থেকেই রোজের চেহারায় দৃষ্টিপাত করল।
-“হঠাৎ?”
-“না মানে, আপনি চলে গেলে আমি ঘরে একা থাকি, কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আজ থেকে যান না প্লিজ।”
ইনশিতার কন্ঠে মিনতি। ইনশিতা আজকে জেহেরকে থেকে যেতে বলেছে কারণ জেহের সবসময় মেইন গেট আটকে রেখে যায়। এখন যদি জেহের চলে যায় তাহলে তো সে যাওয়ার কোনো সুযোগই পাবে না। তাই জেহেরকে থেকে যেতে বলল।
জেহের ঘুরে দাঁড়িয়ে ইনশিতার কাছে এসে দাঁড়াল। জেহের খানিকটা ঝুঁকে ইনশিতার মুখে ফুঁ দিলো। ইনশিতা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল। জেহের মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
-“আজ আমার বউয়ের কী হয়েছে হঠাৎ? এত ভালোবাসা?”
ইনশিতা কম্পিত কন্ঠে বলে,
-“কী আর হবে। আপনার সাথে একটু টাইম স্পেন্ড করতে মন চাইল আর কী। আর আমার স্বামীর প্রতি আমি ভালোবাসা দেখাবো না তো কে দেখাবে? ঐ শিফা?”
জেহের ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসল। হাসির রেখা ফুটিয়েই বলল,
-“উমম, জ্বেলাস?”
ভেঙচি কেটে ইনশিতা বলল,
-“জ্বেলাস কেন হবো? যা সত্যি তাই তো বললাম। আমি আপনার বউ, তাহলে আমিই তো ভালোবাসা দেখাব তাই না? যত্তসব।”
ইনশিতা রুমের বাহিরে চলে গেল। জেহের ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে গলার টাই খুলে ফেলল।
.
.
ইনশিতা শুয়ে আছে জেহেরের বুকের উপর। জেহেরকে সে একপ্রকার জোর করেই ঘুমাতে নিয়ে এসেছে। জেহের অফিস না গেলে ইনশিতা বলেছে তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আর সে এখন জেহেরের বুকেই ঘুমাবে। বেডে আধশোয়া জেহেরের বুকে মাথা দিয়ে রয়েছিল ইনশিতা। এখন বাজতে চলেছে এগারোটা পঞ্চাস। জেহের ইনশিতার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে ঘুমে তলিয়ে গেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে জেহেরের। আর এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিল ইনশিতা। সে ধীরে ধীরে উঠে চিলেকোঠার ঘর থেকে দড়ি নিয়ে আসলো। জেহেরকে না বেঁধে চলে গেলে জেহের যে তাকে সেকেন্ডে খুঁজে নেবে তা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনশিতা। ইনশিতা দুরুদুরু করা বুকে জেহেরের এক হাত অতি সাবধানে ধরে খাটের সাথে বেঁধে দিলো। খুব শক্ত করে বেঁধে দিলো যাতে কোনোভাবেই খুলতে না পারে। জেহের একটু নড়াচড়া করে উঠলে ইনশিতা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তাতেই জেহের গাঢ় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। আরেকটা হাত বাঁধতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। জেহেরের ডান হাত খাটের বাহিরে ঝুলছে। ঐ হাত উঠাতে গেলে জেহেরের ঘুম ভেঙে যাবে নিশ্চিত। কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে ইনশিতা আগের হাতের বাঁধন আরো বেশি শক্ত করে বেঁধে দিলো আরেকটা দড়ি দিয়ে। যাতে এক হাতেও আরেক হাত খুলতে না পারে।
শেষ হলে ইনশিতা কিছু টাকা আর জেহেরের মোবাইল নিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে গেল ঘরের বাহিরে। মেইন গেটের বাহিরে আসতেই যেন মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। চারপাশে এত এত জঙ্গল যে দিনের বেলাকেও রাত ভেবে কেউ ভুল করবে না। সে গাড়ি চালাতে পারে না বিধায় হাঁটতে হবে তাকে। মোবাইল থেকে গুগল লোকেশনের সাহায্যে পথ এগোতে লাগল। যতই এগোতে লাগল ততই যেন ইনশিতার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে। জঙ্গলের গাছগুলো এতটাই লম্বা যে আকাশটাও ঢেকে গেছে।
দীর্ঘক্ষণ হাঁটার পর ইনশিতা হাইওয়েতে চলে আসলো। মোবাইলে দেখে নিলো সাড়ে বারোটা বাজে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে একটা ট্যাক্সি ধরে যেতে লাগল কাঙ্খিত জায়গায়।
.#প্রহেলিকা
#পর্ব_২৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–
ইনশিতার বাবা কাঁদছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ইনশিতার মা’ও আঁচলে মুখ গুঁজে আছে। ইনশিতা নিজের কান্না সংবরণ করে হাসি মুখে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আমি কী একেবারের জন্য চলে গেছি না কি যে এভাবে মরা কান্না কাঁদছো? মা, প্লিজ, কান্না থামাও। অনেকদিন হয়েছে তোমার হাতের খাবার খাই না। যাও তো, তাড়াতাড়ি কিছু বানিয়ে নিয়ে এসো।”
ইনশিতার মা তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে ছুটল। ইনশিতার বাবা বলল,
-“জেহেরকে আনলি না কেন?”
ইনশিতা মিথ্যে বলল,
-“জেহের অফিসে। আমাকে কলেজের সামনেই দিয়ে গেছে। ওনার অনেক কাজ তো তাই চাইলেও আসতে পারেননি।”
বাবা মায়ের সাথে দুপুরে খাবার খেয়ে বিদায় নিয়ে কলেজ গেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ইনশিতা। নয়নিকা বলেছে গেটের সামনে দাঁড়াতে। আসার সময় ইনশিতা তার আগের ভাঙা মোবাইলটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এটা লুকিয়ে রাখবে যাতে জেহের না দেখে। আর মাকেও বলেছে কোনো সমস্যা হলে এই নাম্বারেই যাতে কল করে।
মাঝ রাস্তায় হঠাৎ করে দেখা হলো জেসমিন চৌধুরীর সাথে। উনি গাড়িতে ওঠার সাথে সাথেই ইনশিতাকে দেখেন আর দৌড়ে আসেন। ইনশিতা হকচকিয়ে গেলেও পরমুহুর্তে নিজেকে সামলে নেয়। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করতে চাইল ইনশিতা। তবে তিনি দেখার সাথে সাথেই অস্থির হয়ে জেহেরের খোঁজ নেন।
-“আমার জেহের কোথায়? এতদিন তোমরা কোথায় ছিলে?”
-“আসলে জেহেরের একটা বাগানবাড়ি আছে না? ওটাতেই এখন আমাকে নিয়ে থাকে।”
জেসমিন চৌধুরী মনে করতে লাগলেন জেহেরের কোনো বাগানবাড়ি আছে কি না! জেহের কোনোকিছুর তথ্য কখনোই কাউকে দিতে চায় না। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়লেন ইনশিতাকে।
-“কোন বাগানবাড়ি?”
-“ওনার নিজস্ব একটা বাগানবাড়ি আছে যেটা না কি সবার অজান্তে কিনেছিল।”
-“ওও… ইনশিতা!”
-“জি।”
-“তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে। এতদিন তোমায় খুঁজেছিলাম অনেক, পাইনি। আজ সেই সুযোগ পেয়েছি।”
ইনশিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। জেসমিন চৌধুরী ইনশিতার হাত চেপে কাছে আনলেন। আকুল আবেদনের সুরে বললেন,
-“মা, আমার ছেলেটাকে কখনো ছেড়ে যেও না। ওর তোমাকে বড্ড প্রয়োজন। ওর মনের সব কষ্ট দূর করতে একমাত্র তুমিই পারবে। আমি দেখেছি, তোমার মাঝেই আমার জেহেরের সুখ। তুমি ও’কে কখনোই দূরে ঠেলে দিও না।”
ইনশিতা কিছু না বলে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। থেমে থেমে বলল,
-“আপনার ছেলে যে আমাকে আটকে রাখে সেটা কী কম কষ্টের? খাঁচায় বন্দী পাখির মতো অবস্থা আমার। আমার কষ্টটা কী জেহেরের কষ্ট থেকে খুবই কম?”
জেসমিন চৌধুরী কিছুক্ষণ ইনশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকলেন। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“আমি জানি তুমিও কষ্টে আছো। কিন্তু ইনশিতা, তুমি যদি একবার জেহেরের কষ্ট দূর করতে পারো, তাহলে তোমার আর এমন জীবনযাপন করতে হবে না, তুমি নিশ্চিত থাকো। ওর অস্বাভাবিকতাটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট। ও’কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে তুমি নিজেও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে আর আমার জেহেরও মুক্ত হতে পারবে। সেই ছোটবেলা থেকেই জেহেরের কষ্টের শুরু। সেই কষ্ট কেউ না দেখলেও আমি দেখি। আমি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই জেহের সম্পর্কে, যা শুনলে তুমি হয়তো চাইলেও আমার জেহেরকে দূরে রাখতে পারবে না।”
ইনশিতা উৎসুক হয়ে চেয়ে রইল। কী এমন সত্যি? জেসমিন চৌধুরী কথা শুরু করার আগে একবার আশপাশটা ভালো করে দেখে নিলেন। চাপা সুরে বললেন,
-“জেহের কোথায়? জেহের তো মনে হয় আশেপাশে কোথাও আছে। ও তো তোমাকে একা ছেড়ে দেবে না। কোথায় ও?”
ইনশিতা মাথা নিচু করে ফেলল। সে কী বলবে এখন? বলবে যে আপনার ছেলেকে আমি বেঁধে রেখে এসেছি? জেসমিন চৌধুরী কাঁধ ধরে ঝাঁকালেন ইনশিতার।
-“বলো জেহের কোথায়?”
ইনশিতা অপরাধীর মতো মুখ করে মাথাটা একটু তুলে তাকাল জেসমিন চৌধুরীর দিকে। সেই মুখ দেখেই বোধহয় জেসমিন চৌধুরী বুঝে গেছেন ইনশিতা কিছু একটা করেছে। সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
-“কী হলো? তুমি কিছু করোনি তো আমার জেহেরের সাথে?”
ইনশিতা দ্বিতীয়বারের মতো মাথা নিচু করে ফেলল। জেসমিন চৌধুরী শক্ত গলায় বললেন,
-“কী করেছো তুমি জেহেরের সাথে।”
ইনশিতা মিনমিন করে বলে ফেলল। সব শুনে জেসমিন চৌধুরী বিস্ফোরিত নয়নে চোখ বড় বড় করে তাকায় ইনশিতার দিকে।
-“কি! তুমি এটা করতে পারলে কীভাবে ইনশিতা? একবারও বুক কাঁপল না?”
ইনশিতা মিনমিনে গলায় বলল,
-“আমার আর কিছু করার ছিল না মা। ওনার কাছে শত অনুরোধ করার পরও তিনি আসতে দিতে চায়নি। এদিকে আমার বাবার শরীরটাও ভালো না আমার খোঁজ না পেয়ে। তাই…”
-“তুমি তোমার পরিবারের সাথে দেখা করেছো?”
-“জি।”
-“কেমন আছেন তোমার বাবা?”
-“আপাতত সুস্থ।”
-“আচ্ছা। আর এক্ষুনি চলে যাও জেহেরের কাছে। আমি পারলে যেতাম জেহেরের কাছে, কিন্তু জেহের আমাকে কখনো সহ্য করতে পারবে না। তুমি যাও মা, এক্ষুনি ফিরে যাও জেহেরের কাছে।”
বলে জেসমিন চৌধুরী ঘুরে চোখ মুছলেন। ইনশিতার দৃষ্টি এড়ালো না সেই দৃশ্য। সে জেসমিন চৌধুরীর বাম হাত নিজের দু’হাতে চেপে ধরে বলল,
-“আমাকে একটা কথা বলবেন মা?”
জেসমিন চৌধুরী ভ্রু জোড়া হালকা কুঁচকে তাকালেন। ইনশিতা বলল,
-“জেহের কেন আপনাকে চোখের সামনে দেখতে পারে না? কেন আপনার আর বাবার সাথে এমনকি নিজের পুরো পরিবারের সাথে তিনি মিশেন না? কী এমন হয়েছে যার কারণে তিনি এমন ব্যবহার করছেন আপনাদের সাথে?”
জেসমিন চৌধুরী হাত ছাড়িয়ে ইনশিতার গালে রাখলেন। কান্না আটকিয়ে বললেন,
-“সেই কথাটাই তো তোমাকে বলার প্রয়োজন মা। আর সেটা এখনি বলবো ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই, তুমি চলে যাও জেহেরের কাছে। আমি আসছি।”
ইনশিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। জেসমিন চৌধুরী চলে যেতে গিয়েও ফিরে এলেন। শেষবারের মতো মিনতি করে বললেন,
-“আমার ছেলেটার সুখের চাবি কিন্তু একমাত্র তুমি মা। কখনো আমার জেহেরকে কষ্ট দিও না। ও’কে খুব ভালোবেসো।”
জেসমিন চৌধুরী গাড়িতে উঠে গেলেন। ইনশিতা নির্বিকার ভঙ্গিতে চেয়ে দেখল জেসমিন চৌধুরীর চলে যাওয়া। তবে সে স্পষ্ট দেখতে পেল জেসমিন চৌধুরীর চোখে তার ছেলেকে ভালো রাখার আকুলতা।
.
.
কলেজ গেটের সামনে আসতেই নয়নিকাকে দেখা গেল। একটা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ভেতরের মানুষকে দেখা গেল না। ইনশিতাকে দেখতে পেয়ে নয়নিকা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। ইনশিতা জেসমিন চৌধুরীর সাথে দেখা হওয়াটা চেপে গেল নয়নিকার কাছে। দুজন দুজনের খবরাখবর নিয়ে হাঁটতে লাগল ফুটপাথে।
-“ইতু।”
-“হু!”
-“তোর কি মনে হয় না জেহের তোর পুরো অস্তিত্বে নিজের মালিকানা খাটাতে চাইছে?”
ইনশিতা উদাসী গলায় জবাব দিলো,
-“সে তো আমাকে দেখার পর থেকেই খাটাচ্ছে।”
নয়নিকা দাঁড়িয়ে পড়ল। ইনশিতার কনুই ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
-“জেহের তোকে সত্যিকারের ভালোবাসে না ইতু।”
-“আমারও প্রথমে তাই মনে হয়েছিল নয়ন। কিন্তু ওনার সাথে থাকতে থাকতে বুঝে গিয়েছি উনি সত্যি আমাকে ভালোবাসে। ওনার মায়াতে আমি জড়িয়ে গেছি।”
-“ওটা ভালোবাসা না। ওটা পাগলামি, অসুস্থ ভালোবাসা। তুই কেন বুঝতে চাইছিস না? জেহের চায় তোকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে নাচাতে। উঠতে বললে উঠবি, বসতে বললে বসবি। তোর সত্তার উপর নিজে রাজ করতে চায়। জেহের যদি এক’কে দুই বলে তাহলে তোকেও সেটা বলতে হবে। ও যদি তোকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে তো তোর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিতো, তাই না? তা না করে তোকে নিজের মন মতো চালাচ্ছে। এই যে তুই কলেজ আসতে চাইলি, বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে চাইলি, তোকে কি জেহের আসতে দিয়েছিল? দেয়নি তো? তাহলে কোন হিসেবে ও তোকে সত্যিকারের ভালোবাসে? আর জেহের তোকে কারো সাথে মিশতে দিতে চায় না, কারো সাথে হাসতে খেলতে দিতে চায় না, তুই কারো সাথে কথা বলিস, হাসিস, এসব জেহের কোনোভাবেই চায় না। এটা কীভাবে ভালোবাসার লক্ষণ হয়? ও চায় তুই পুরো দুনিয়া ভুলে গিয়ে ওর সাথে থাক। দেখ ইতু, তুই একটা ভুলের মাঝে আছিস। সময় আছে, বের হয়ে আয়।”
ইনশিতা অসহায় চোখে তাকাল নয়নিকার দিকে। মিনমিনে আওয়াজে বলল,
-“উনি যে অনেক বড় কষ্টে আছেন নয়ন। আমাকেই সেই কষ্ট হতে ওনাকে বের করতে হবে। আমি কখনোই পারবো না ওনাকে ছেড়ে যেতে।”
-“কিরে! কী বলছিস? বুঝতে পারছি না।”
-“কিছু না।”
-“আচ্ছা, চল তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাই।”
-“আমি যেতে পারব না নয়ন। জেহেরকে একা রেখে এসেছি।”
-“তো উনি কি বাবু না কি যে একা থাকতে পারবে না?
-“সেটা না, আমি ওনাকে ঘুমের মাঝেই বেঁধে রেখে এসেছি।”
নয়নিকা কয়েক মুহুর্ত অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল ইনশিতার দিকে। পরমুহুর্তেই ইনশিতার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,
-“ব্র্যাভো! এই না হলে ইতু! ভালোই করেছিস। এখন চল।”
ইনশিতা দাঁড়িয়ে পড়ল। কাট কাট গলায় বলল,
-“আমি ভুল করেছি ওনাকে বেঁধে। অনেক বড় ভুল। এটা করা উচিৎ হয়নি আমার। আমি যাচ্ছি জেহেরের কাছে।”
ইনশিতা উল্টো পথে হাঁটা ধরলে নয়নিকা সামনে এসে দাঁড়ায়। কঠিন গলায় বলে,
-“তুই কোথাও যাবি না ইতু। আর জেহেরের কাছে তো কোনোদিনও নয়। পাগলের কাছে গিয়ে নিজে সেধে পাগল হওয়ার দরকার কী? চল…”
নয়নিকা একপ্রকার জোর করে টেনে নিতে থাকল। ইনশিতা মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। সেই সিদ্ধান্ত নয়নিকাকে জানানোর সময় এসেছে। সে নয়নিকার হাত ধরে থামিয়ে দিলো। নয়নিকা বিরক্ত নিয়ে তাকাল। ইনশিতা তোয়াক্কা না করে বলতে আরম্ভ করল,
-“আমি জেহেরকে ভালোবাসি নয়ন। উনি যেমনই হোক না কেন, আমি ভালোবেসে ফেলেছি। এতদিন বুঝতে না পারলেও কিছুক্ষণ আগে টের পেয়েছি সেটা।”
নয়নিকা চোখ গোল গোল করে বলল,
-“ইতু, তুই নিজেও পাগল হয়ে গিয়েছিস। তুই না বলেছিলি তুই মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিস? এটা সেই মায়া। মায়া আর ভালোবাসা এক না। কয়েকদিন যাক। মায়া কেটে যাবে।”
ইনশিতা দৃঢ় গলায় বলল,
-“আমার কাছেও মায়া মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না, এটা মায়া না, এটা ভালোবাসা। আমি জেহেরকে ছেড়ে থাকতে পারব না কোনোদিন। আমি জানি না কখন কীভাবে ভালোবেসে ফেললাম। শুধু এটুকুই জানি জেহেরকে আমি ভালোবাসি।”
-“জেহের যে মানসিকভাবে অসুস্থ সেটা নিশ্চয় ভুলে যাসনি?”
-“কেউ অসুস্থ হলে তাকে আগে সুস্থ করা প্রয়োজন। তাই জেহেরকে মানসিকভাবে সুস্থ করা দরকার। আর সেই সুস্থতার দায়িত্ব আমার কাঁধে কারণ আমি তার স্ত্রী। একবার অসুস্থতার উৎসটা জানতে দে আমায়, ইন শা আল্লাহ আমি ওনাকে সুস্থ করার চেষ্টা করব।”
ওদের দুজনের কথোপকথনের মাঝেই একটা গাড়ি চলে আসলো। এটা সেই গাড়িই যেটার সামনে নয়নিকাকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখেছিল ইনশিতা। দুজনে গাড়িটার দিকে তাকালে দরজা খুলে বের হয়ে আসলো জেবা।
-“কেমন আছো ইতু?”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?”
জেবা মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-“আমিও।”
কথা সেরেই জেবা ইনশিতাকে গাড়ির মধ্যে আসতে বলল। ইনশিতা না জানালে জেবা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো নয়নিকার দিকে। নয়নিকা তৎক্ষণাৎ বলল,
-“ইতু না কি তোমার ভাই জেহেরকে ভালোবেসে ফেলেছে। আর সে না কি কোনোদিন জেহেরকে ছাড়তে পারবে না।”
এটা শুনে জেবা শান্ত দৃষ্টিতে একবার তাকায় ইনশিতার দিকে। তারপরই গাড়িতে ঢুকে যায়। নয়নিকাকে ইশারা করে ইনশিতাকে ভেতরে ঢোকাতে। নয়নিকাও ইনশিতাকে জোর করতে লাগল।
-“চল না একটু।”
ইনশিতা বারবার করে বলতে লাগল,
-“তুই বুঝতে পারছিস না নয়ন। আমার এখন যেতে হবে। জেহের অনেক রেগে আছে বোধহয়। ছাড় তুই আমায়।”
এক পর্যায়ে নয়নিকা ইনশিতাকে বলল,
-“আচ্ছা, ঠিকাছে। তুই যাস। গাড়িতে ওঠ। গাড়ি করেই না হয় তোকে দিয়ে আসা হবে। এতে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবি। ওঠ যা।”
ইনশিতা কয়েক মুহুর্ত ভেবে গাড়ির ব্যাক সিটে উঠে বসল। পাশে নয়নিকাও বসল। গাড়ি চলতে আরম্ভ করলে ইনশিতা ড্রাইভারের সিটে জিহাদকে দেখে চমকে গেল। জিহাদ তার দিকেই তাকিয়ে আছে মুখভর্তি হাসি নিয়ে। ইনশিতা পাশে বসা নয়নিকাকে জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে চুপ থাকে নয়নিকা। ইনশিতার ভালো লাগছে না কিছু। তার মন বলছে তাদের সকলের মধ্যে ঘাপলা আছে। জিহাদের হাসিটাও তার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। ইনশিতা জেবাকে বলল,
-“জেবা, গাড়ি থামাতে বলো। আমি একা যেতে পারব।”
জেবা মাথা হালকা ঘুরিয়ে বলল,
-“একা একা যাওয়ার দরকার নেই, আমরা আছি তো। পৌঁছে দিয়ে আসবো।”
নয়নিকা ইনশিতার হাত চেপে ধরে চাপা কন্ঠে ধমকে বলল,
-“নাটক করিস না তো। যখন বলেছে পৌঁছে দিবে তার মানে দিবে। চুপ থাক।”
ইনশিতার হাত পা অকারণেই কাঁপতে লাগল। বারবার চাইছে যাতে তাকে নামিয়ে দেওয়া হোক এখানে। জানালা খুলে খানিকটা দম ছাড়লো ইনশিতা। ইনশিতা মোবাইলে দেখে নিলো এখন সাড়ে চারটা বাজে। যেতে যেতে তো এক দেড় ঘন্টা লেগে যাবে। আর জেহের তো এখনও দুপুরের খাবার খায়নি। আর খাবেই বা কীভাবে, ও তো বেঁধে দিয়ে এসেছে। ভাবতেই ইনশিতার মনে কষ্টরা ভীড় জমাতে লাগল।
অনেকক্ষণ গাড়ি ছুটছে। অথচ রাস্তাটা ভিন্ন। ইনশিতা জিজ্ঞেস করলে জেবা বলে যে এটা শর্টকাট রাস্তা। এখান দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। ইনশিতার এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো, সে তো ঠিকানা বলেনি। আর ওরাও তো জানতে চায়নি। পরেই আবার মনে হলো, ওরা হয়তো জানে জেহেরের বাগানবাড়ির ঠিকানা।
.
সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। আর কিছুক্ষণ পরই মাগরিবের আজান পড়বে। তখনই গাড়িটা থামে রাস্তার সাইডে। ইনশিতা ভ্রূ কুঁচকে তাকাল সবার দিকে। এই জায়গাটা অচেনা তার কাছে। আর মানুষজন বলতে গেলে খুবই কম। চারপাশে কয়েকটা বড় বড় বিল্ডিং। সকলেই নেমে গেল গাড়ি থেকেই। জিহাদ গিয়ে ইনশিতার পাশের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইনশিতা দেখল জিহাদের মুখটা হাসি হাসি। একবার হাতের দিকে তাকিয়ে ইনশিতা পাশ কাটিয়ে নেমে গেল। জিহাদ কিছুটা অপমানিত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে ইনশিতার হাত ধরল। রাগে ইনশিতা জিহাদকে ধাক্কা মেরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
-“সমস্যাটা কী আপনার? হাত ধরছেন কেন? অনুমতি ছাড়া নিজের ভাইয়ের বউয়ের হাত ধরতে লজ্জা করে না? নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার।”
জিহাদ রেগে গিয়ে ইনশিতার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে জেবা ইশারায় থামতে বলে। নয়নিকা ইনশিতাকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
-“বেশি বেশি করছিস তুই। সামান্য হাত-ই তো ধরেছে। এতে এত রেগে যাওয়ার কী আছে?”
ইনশিতা চেঁচিয়েই বলতে থাকল,
-“রেগে যাব না তো কী পা ধরে সালাম করবো? এনাকে আমার যাস্ট সহ্য হয় না। উনি অনুমতি ছাড়া আমার হাত ধরার সাহস পায় কীভাবে?”
জেবা দেখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। রাস্তার কিছু মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ইনশিতাকে আরও বেশি রাগালে তাদের কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,
-“আচ্ছা, জিহাদ ভুল করেছে, ক্ষমা করে দেও। ও ভুলে এমন করেছে। এখন চলো আমাদের সাথে।”
ইনশিতার রাগ কমছে না। একে তো সে জেহেরকে বাঁধায় মনের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে, তার উপর জিহাদের হাত ধরা আর অচেনা জায়গায় নিয়ে আসা। বেঁধে রাখা রাগের লাগাম ছুটে গেল তার। তর্জনী উঁচিয়ে চিল্লিয়ে উঠল সে,
-“কোথায় নিয়ে এসেছ তোমরা আমায়? কোত্থাও যাবো না তোমাদের সাথে। তোমরা নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করে এনেছ আমায়, তাই না? এতক্ষণে বুঝেছি আমি। আমি-আমি চলে যাব জেহেরের কাছে, এক্ষুনি।”
ইনশিতা চলে যেতে নিলে জিহাদ সামনে এসে দাঁড়ায়। ইনশিতার দু’হাত নিজের একহাতে, আরেকহাতে ইনশিতার গাল চেপে ধরে বলে,
-“এই মুখটায় সারাদিন জেহের নাম লেগে থাকে কেন? যে এত কষ্ট দেয় তার কাছে আবার ফিরে যেতে লজ্জা করে না তোর? কী এমন করল জেহের যে তার কাছেই বারবার ছুটে যাস তুই? খুব আদর করে জেহের? এমন আদর যে অন্য কারো দিকে ফিরে তাকাতেও মন চায় না? আমিও আদর করবো তোমায়। জেহেরের থেকেও শতগুণ বেশি আদর করবো। তখন তোমার সারা শরীরে…”
জিহাদের মুখের ভাষা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যা শুনে ইনশিতার গা গুলানো শুরু করল। সে চিৎকার করে বলল,
-“চুপ করুন আপনি। অসভ্য কোথাকার। ভাইয়ের বউকে এসব বলতে লজ্জা করে না?”
জিহাদ অট্টহাসি হেসে বলল,
-“ভাইয়ের বউ? সিরিয়াসলি? তুমি নিজেকে জেহেরের বউ দাবি করলেও কেউই মানে না তোমাদের।”
-“কারো মানা না মানায় আমার কিছু যায় আসে না। জেহের আর আমি মানলেই চলবে। ছাড়ুন আমায় বেয়াদব কোথাকার। ছাড়ুন বলছি।”
-“একবার যখন পেয়েছি তখন আর ছাড়ি কীভাবে? আগে তো নিজের করে নিই। তারপর ছাড়াছাড়ির কথা উঠবে।”
কথাটা বলে জিহাদ খুব বিশ্রী হাসি হাসল। ইনশিতা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে জিহাদ আরও শক্ত করে ধরে। ইনশিতা কয়েকবার চেষ্টা করল জিহাদের মেইন পয়েন্টে হাঁটু দিয়ে লাথি মারার। তবে ব্যর্থ হলো। জিহাদ পা দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে ইনশিতার পা। তিন চারজন মানুষ এগিয়ে আসতে লাগলে ইনশিতা সাহস পায়। সকলের কাছে সাহায্যের জন্য বলে। দুয়েকজন জিহাদকে ধরতে এলে জেবা গিয়ে পুলিশের ভয় দেখায়। সকলকেই পুলিশের ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
ইনশিতা কনুই দিয়ে কয়েকবার জিহাদের বুকে আঘাত দিয়েছে। তাতে ব্যথা পেয়ে হাত আলগা করলেও ছাড়েনি ইনশিতাকে। জিহাদ ইনশিতাকে চেপে ধরে সামনের সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে লাগে। তবে ইনশিতার এত লাফঝাপে এগিয়ে নিতে পারছে না। ইনশিতা এবার কামড়ে দিলো জিহাদের হাতে। জিহাদ আর ধরে রাখতে পারছে না ইনশিতাকে। ইশারায় ওদেরকে ডাকে। নয়নিকা আর জেবাও এগিয়ে এসে শক্ত করে ইনশিতাকে চেপে ধরে। ইনশিতার খুব কান্না পাচ্ছে। এতটা অসহায় তার কোনোদিন লাগেনি। নয়নিকার দিকে করুণ চোখে তাকালেও নয়নিকা অগ্রাহ্য করে সে দৃষ্টি।
ইনশিতার এবার সকলকেই নিজের শত্রু মনে হতে লাগে। জেবার গলার কাছে আর নয়নিকার হাতে কনুই দিয়ে আঘাত করেও ছাড়া পায় না সে। কান্না করে দিলো ইনশিতা। তবে কেউ পরোয়া করলো না। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে তার। সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। তিনজনের সাথে না পেরে শরীরের শক্তিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। নিজের কাছের মানুষকে শত্রু রূপে দেখতে পেয়ে মনের জোরটাও চলে গেছে। হাত পা অবশ হয়ে আসে ইনশিতার। তবুও বৃথা চেষ্টা করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে নিজেও জানে না। সকলে মিলে জোরাজুরি করে ইনশিতাকে নিয়ে লিফটের মধ্যে ঢুকে গেল। ইনশিতার চোখের অশ্রু আর আর্তনাদ কারো মন গলাতে পারল না।
.
.
চলবে…
[