#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ৩৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
রোমান এসে বসে আছে। সে আলফাজ সাহেবের সাথে কথা বলতে এসেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গিয়ে আলফাজ সাহেবের আসতে দেরি হচ্ছে। স্থির হয়ে বসে তার জন্যই অপেক্ষা করছে রোমান। রোমানের মা, বাবা নেই। একটা এতিম খানায় বড়ো হয়েছে। সেখানে থেকে লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরিও পেয়েছে। রাশেদকে যখন আয়েন্দ্রির জন্য ছেলে খুঁজতে বলেন রাজন শিকদার তখনই চট করে রোমানের চিন্তা আসে তার মাথায়। কাজের সুবাদে রোমানের সাথে পরিচয় রাশেদের। নকল মামা, মামী সাজিয়ে আনা হয় অন্য দুইজন নর-নারী কে। আয়েন্দ্রিকে দেখেই পছন্দ হয় রোমানের। তাই সে আপত্তি করেনি। কিন্তু উপর মহল থেকে এখন সে বিয়ে ভাঙার আদেশ এসেছে।
আয়েন্দ্রির মা ঝুমা আরিশাকে নিয়ে জুয়েলারি দোকানে গিয়েছেন। বিয়ে উপলক্ষ্যে কিছু গয়না পালিশ করতে দিয়েছিলেন তিনি। সেগুলোই আনতে গিয়েছেন। বাসায় রেখে গেছেন আরাজকে। কিছু সময় পর আরাজও জোর করে বেরিয়ে যায়। বিকেলবেলা মাঠে তার ম্যাচ আছে। ফাইনাল ম্যাচ। কিছুতেই মিস করা যাবে না আয়েন্দ্রির বাঁধা সত্ত্বেও বন্ধুদের লাগাতার ডাকে বাড়ি থেকে ব্যাট হাতে দৌড়ে বের হয় আরাজ।
ঘর জুড়ে নীরবতা। আয়েন্দ্রির অস্বস্তি হচ্ছে। রোমান খানিক সময় পরপর এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছে। আয়েন্দ্রির বিব্রতকর পরিস্থিতি অনুমেয় হতেই বলল—
“তুমি ঠিক আছ তো?”
আয়েন্দ্রি নৈঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল। ধোঁয়া উঠছে গরম চায়ের পেয়ালা থেকে। আয়েন্দ্রির মোবাইল বেজে উঠে। নিজের কক্ষ থেকে সে আওয়াজ ভেসে আসতেই ছুট লাগায় আয়েন্দ্রি। রোমান সুযোগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। আয়েন্দ্রির বাবা ফিরবেন সে রাত আটটার পর। এখন সবে সাড়ে ছ’টা। পকেট থেকে দুটো ট্যাবলেট বের করে জুসের গ্লাসে দিয়ে দেয়। কল করেছিল তৃণা। কাল ওদের সেই প্রোগ্রাম তা নিয়েই কিছুক্ষণ কথা বলে ফিরে আসে আয়েন্দ্রি। লোকটাকে এভাবে বসিয়ে রাখতেও খারাপ লাগছে আয়েন্দ্রির।
মৌনতা কাটিয়ে কথা বলল রোমান—
“আমি কী অন্য দিন আসব?
আয়েন্দ্রি আপত্তি করে বলল—
“আরে, না, না। আপনি বসুন না। বাবা চলে আসবে।”
“ওকে। তুমি যখন বলছ তাহলে বসতে পারি। তবে চুপ করে থাকা যাবে না। কী করে তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
আয়েন্দ্রি প্রফুল্লচিত্তে বলল—
“স্টুডেন্ট। ব্যাচমেট আমার।”
অবাক হাসল রোমান। বিস্মিত গলায় বলল—
“সেম ইয়ার! ও মাই গড! সে তো অনেক সময়?”
“না। নিষ্প্রাণ বলেছে ওকে দুই বছর সময় দিতে। ততদিনে আমাদের অনার্স শেষ হয়ে যাবে। ও কিছু একটা করে নেবে তখন।”
খুশি খুশি মেজাজে কথা বলতে বলতে জুসের গ্লাসটা হাতে নেয় আয়েন্দ্রি। নিষ্প্রাণ আর তার বন্ধুদের কথা বলতে থাকে। মাঝে একটু একটু করে গিলতে থাকে জুস। রোমানের সচেতন দৃষ্টি আয়ন্দ্রির স্বরনালিতে। যেখান দিয়ে একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে সে পানীয়।
চকিতে মাথা ধরে আয়েন্দ্রির। ঝাপসা হতে থাকে তার চোখ। কনকন করে ওঠে চোখ। রোমান ওঠে আসে কাউচ থেকে। হেলে পড়ে যাওয়া আয়েন্দ্রির হাত ধরে বলল—
“তুমি ঠিক আছ?”
আয়েন্দ্রি মৃতপ্রায় গলায় গোঙানি দিয়ে বলল—
“আআমার মাথাআআআ….।”
আর কিছু বলতে পারল না আয়েন্দ্রি। ঝুপ করে কাউচে গা ছেড়ে দেয়। রোমানের অধরে খেলে যায় পৈচাশিক হাসি। কাউচের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে রোমান। তার লোভাতুর দৃষ্টি বিচরণ করছে আয়েন্দ্রির সারা দেহে। ইতিবিতি করছে রোমানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সে আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল আয়েন্দ্রির। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে টেনে নিল লম্বা শ্বাস। মিষ্টি এক সৌরভে প্রকম্পিত হলো রোমানের পৌরষিয় সত্ত্বা। ধীর হাতে আয়েন্দ্রির বুকের উপর থেকে ওড়না সরিয়ে নেয় রোমান। তার হাতে বেশ সময়। কিন্তু ড্রাগসের নেশা বেশিক্ষণ থাকবে না। কারণ, রোমান সেই ব্যবস্থা করেছে। যদি বেশি সময় আয়েন্দ্রি নিশ্চেতন থাকে তাহলে সন্দেহ বাড়বে!
চকিতে ওঠে দাঁড়ায় রোমান। দরজায় করাঘাত পড়েছে। বুকের ভেতর দামামা বাজতে থাকে তার। মনে হচ্ছে কেউ খঞ্জর গেঁথে দিচ্ছে! এখন কে আসতে পারে! বিভ্রান্ত হয় রোমান। হড়বড় করে। বুঝতে পারছে না কী করবে সে। দরজায় চাপড় পড়েই যাচ্ছে। ঘামতে শুরু করে রোমান। শ্বাস আটকে আসাতে অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেলে। হাপড়ের মতো উঠানামা করতে থাকে তার বুক।জিহ্বা লেগে আসে গালের সাথে। চটজলদি আয়েন্দ্রিকে কোলে তুলে নেয় রোমান। তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিছানায় না শুইয়ে ডিভানে বসিয়ে রাখে। এমনভাবে বসিয়ে রাখে যেন মনে হয় বসে থাকতে থাকতে আয়েন্দ্রির চোখে ঘুম নেমে এসেছে। রোমান কক্ষ থেকে বের হয়। পকেট থেকে টিশু বের করে মুখটা মুছে তা বেসিনের সাথে থাকা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। ধাতস্থ হয়ে দরজা খুলেই অমায়িক হাসে। নিষ্প্রাণ! চমকিত গলায় বলে ওঠে রোমান।
ঘরে ঢোকে নিষ্প্রাণ। তার চোখ আটকে কাউচের সামনে পড়ে থাকা আয়েন্দ্রির ওড়নাতে। জিভ কাটে রোমান। ওড়নার কথা তার মনে- ই নেই। নিষ্প্রাণ তাকাল রোমানের দিকে। স্বাভাবিক চাহনি। বদ্ধদৃষ্টি ক্রমশ দৃঢ় হতে থাকল। রোমানের ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসে। বড়ো বড়ো ঢোক গিলতে থাকে। একটা সশব্দে শ্বাস ফেলেই রোমানের বুকে কিছু একটা ঢুকিয়ে দেয় নিষ্প্রাণ। অতর্কিতে ঘটা এই ঘটনার কিছুই বুঝতে পারে না রোমান। চেতনানাশক ড্রাগসের কারণে ঢলে পড়ে মেঝেতে।
অত্যন্ত স্বাভাবিক অভিব্যক্তিতে দরজাটা বন্ধ করে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রির ওড়নার দিকে তাকাতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। কপালে ভাঁজ পড়ে। নরম পায়ে গিয়ে ওড়নাটা হাতে নিল নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রির কক্ষে গিয়ে তাকে ডিভানে পায়। মেয়েটাকে সেখান থেকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শোয়ায় নিষ্প্রাণ। তার ঠোঁটে গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল—
“সরি ধ্রুবতারা, আসতে একটু দেরি করে ফেললাম আমি।”
আয়েন্দ্রির ওড়নাটা তার গায়ে জড়িয়ে দেয় নিষ্প্রাণ। বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। রোমানের নিঃসাড় দেহটা পড়ে আছে। তার কাছে গিয়ে আসন দিয়ে বসে নিষ্প্রাণ। নিষ্প্রভ চোখে চেয়ে বলল—
“ভুল করলি তুই। ভুল মানুষের দিকে হাত বাড়িয়েছিস তুই।”
মোলায়েম হাসে নিষ্প্রাণ। প্রায় নয় ইঞ্চির ছুরিটা বের করে আনে তার ব্যাগ থেকে। সন্তর্পনে সেইটা বসায় রোমানের গলায়। নিরুদ্বেগ গলায় বলতে থাকে—
“আমি তোকে সুযোগ দিয়েছিলাম। তুই নিলি না। এতে আমার কী দোষ বল!”
গলার উপর এক হ্যাঁচকা টান দিতেই নিষ্প্রাণের মুখমণ্ডলে ছিটকে পড়ে রোমানের উষ্ণ রক্তের নহর। গলগলিয়ে গড়াতে থাকে লহুর ধারা। তাজ রক্তে ভেসে যায় শুভ্র মেঝে। কম্পন দিয়ে ওঠে রোমানের সমাহিত দেহ। ফাঁক হওয়া মাথা আর দেহের ব্যবচ্ছেদ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের দিকে নিষ্করুণ চোখে চেয়ে রয় নিষ্প্রাণ। রঞ্জিত ছুরিটি নিয়ে একের পর এক আক্রোশিত মনে ঢুকাতে থাকে রোমানের হৃদপিন্ড বরাবর। থেতলে দেয় জায়গা টুকু। প্রতিটি আঘাতে কম্পিত হচ্ছে রোমানের দেহ। তার রক্তের ছটায় কালশে হয়ে উঠেছে নিষ্প্রাণের হলুদ শার্ট। রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে চোখে,মুখে। নিষ্প্রাণ সহজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নমনীয় গলায় বলল—
“সব তো ঠিক- ই ছিল। তোর এখানে আসা উচিত হয়নি। সাহস কী করে হলো আমার ধ্রুবতারাকে ছোঁয়ার?
তোর এই হাত আর প্রয়োজন নেই। তোর অবশ্য কষ্ট হবে না। কারণ, আমি কাউকে কষ্ট দিয়ে মারি না। আমার না এই ক্যাচক্যাচ, চিল্লাচিল্লি একদম পছন্দ না। তাই তো আগে সবাইকে শান্ত করে নেই। শুধু শুধু ঝামেলা করে কী লাভ?
তোরা সবাই বাঁচতে চাইবি। আমার তারা বাঁচতে চায়নি। তাই আমি ওকে মেরেছি। তাহলে তোদেরকে কী করে বাঁচতে দেই?”
শেষের বাক্যটা অদ্ভুত কর্কশ স্বরে নিঃসৃত করল নিষ্প্রাণ। অনবরত সেই ছুরিকাঘাতে রোমানের পেটের দিকটা বীভৎস করে ফেলল মুহূর্তেই। হাতের আঙুলের উপর উপর্যুপরি চলল ছুরিকাঘাত। রক্তের সাথে থেতলানো মাংসও লেগে থাকে সেই ছুরিতে। বিক্ষিপ্ত হলো আঙুল। ক্ষান্ত হলো নিষ্প্রাণ। গোসল সেরে নিয়েছে রক্তের সায়রে। ঘাড়টা এপাশ থেকে ওপাশে বার দুয়েক নাড়িয়ে বিয়ারের বোতল হাতে নিল নিষ্প্রাণ। আনলক করে কিছুটা তরল নিজের গলায় ঢেলে নিল। রঞ্জিত ছুরিটা দেখে বড্ড মায়া হলো নিষ্প্রাণের। ইচ্ছে হলো রোমানের চোখ খুবলে নিতে। তবে করল না সে। বিয়ারের অবশিষ্টাংশ রোমানের গায়ে ঢেলে দেয়। একরাশ প্রশান্তি ছুঁয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণকে। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় সে। তার একটুও খারাপ লাগছে না। অদ্ভুত !
রান্না ঘর থেকে দেয়াশলাই এনে স্থির হয়ে দাঁড়ায় নিষ্প্রাণ। সযত্নে একটা দেয়াশলাই জ্বালিয়ে ছুঁড়ে মারে রোমানের নিথর শরীরে। অনুপলেই জ্বলে ওঠে আগুন। পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়ার বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে। রোমানের শরীরের জায়গায় জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। কড়কড় করে শব্দ হচ্ছে তাতে। বিচলিত নয় নিষ্প্রাণ। শান্ত, নির্ভীক, নিমগ্ন।
ধোঁয়ার আস্ফালন ঘটতে থাকে। ঘরময় ছড়িয়ে যেতে থাকে কালচে, শুভ্র ধোঁয়ার কুন্ডলি। সেই মানুষ পোড়ার কটকটে গন্ধে আলাদা সুখ খুঁজে পায় নিষ্প্রাণ। বুক ভরে শ্বাস নেয় সে। এ যে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা!
ড্রাগসের সময়কাল শেষ হতেই নড়ে ওঠে আয়েন্দ্রি। জোর করে চোখের পল্লব মেলে সে। কেমন একটা অদ্ভুত, তিক্ত গন্ধ নাকে আসতেই দমবন্ধ হয়ে আসে তার। তার উপর ধোঁয়ামিশ্রিত পবনে কেঁশে উঠে সে। দম নিতে পারছে না আয়েন্দ্রি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ওঠে দাঁড়ায় সে। শরীরটা অসাড় লাগছে। তবুও চলছে সে। হেলে দুলে নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। তার তীক্ষ্ম কন্ঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নিষ্প্রাণ। আঁতকে ওঠে মুখে হাত চাপা দেয় আয়েন্দ্রি। নিষ্প্রাণের বাড়ন্ত পথযুগলে ভড়কে গিয়ে দৌড়ে গিয়ে নিজের কক্ষে ঢুকে আয়েন্দ্রি। দরজা লাগিয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। চোখ থেকে ঝরতে থাকে শীতল নহর। বিভীষিকাময় গোঙানি বের হতে থাকে মুখ থেকে। আয়েন্দ্রি শরীর ছেড়ে দেয়। মেঝেতে বসে পড়তেই নিষ্প্রাণের খরখরে কন্ঠ—
“ধ্রুবতারা দরজা খোল। কথা শোন আমার।”
আয়েন্দ্রি অনবরত কেঁপে যাচ্ছে। কী দেখেছে সে! লাশ! আগুন ! রক্ত! নিষ্প্রাণ! নিষ্প্রাণের মুখের রক্ত তার ঘামের সাথে মিশে গড়িয়ে পড়ছে। শার্টের রক্ত শুকিয়ে এসেছে। মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয় আয়েন্দ্রির। বুকে উন্মাদ ঢেউ। মাথার চুল খাঁমচে ধরে সে। ভয় জড়ানো গলায় কান্না দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। হাতড়ে যাচ্ছে অকুলপাথার। কোথায় তার শেষ। নিষ্প্রাণ চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
আয়েন্দ্রি মোবাইল খুঁজতে ওঠে। ধপাস করে পড়ে যায়। গায়ে একবিন্দু জোর পাচ্ছে না সে। উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজতে থাকে মুঠোফোন। পায় না। চিৎকার করে ওঠে আয়েন্দ্রি। নিজেকেই আঘাত করে বসে। তার গলা,বুক ভিজে জবুথবু। চোখের ধারা থামছেই না। চকিত হয় সে। নিষ্প্রাণ বলছে—-
“দরজা খোল ধ্রুবতারা। না হলে কিন্তু আমি দরজা ভেঙে ফেলব।”
আয়েন্দ্রি ভয়ে সিটিয়ে যায়। ঘরময় দৌড়াতে থাকে। টেবিলের উপর মোবাইল দেখেই ছোঁ মেরে নিয়ে কল করে আলফাজ সাহেবকে।
নিষ্প্রাণ প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে। দাদুকে কল করে সে। দাদুকে আসতেই হবে।
,
,
,
আয়েন্দ্রি যখন তার কক্ষ থেকে বের হয় তখন দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে মাথাটা হেলিয়ে বসে আছে নিষ্প্রাণ। তার পা দুটো সামনে মেলে রেখেছে। আয়েন্দ্রির শরীরে কোন জোর নেই। টিমটিমে চোখে সে চেয়ে আছে। আলফাজ সাহেবের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ইন্সপেকটর টুটুল। ঝুমা দৌড়ে মেয়ের কাছে গেলেন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন অগাধ মায়ায়। আয়েন্দ্রি সরল দৃষ্টিতে তাকাল নিষ্প্রাণের দিকে। নিষ্প্রাণ মাথাটা সোজা করে। রঞ্জিত মুখে নেই কোনো উত্তাপ। নিস্তেজ চোখে চাইল সে। আয়েন্দ্রি বড়ো বড়ো ভয়াল শ্বাস ফেলতে থাকে। থরথরিয়ে যাওয়া শরীর দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ঝুমা। ভয়চকিত গলায় বলল—-
“কী হয়েছে আয়ু? তুই ঠিক আছিস তো মা?”
নিষ্প্রাণ ওঠে দাঁড়ল। কোনোরকম ছন্দ পতন ছাড়াই আয়েন্দ্রির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়েন্দ্রির মনে হলো কোনো ক্ষুধার্ত হায়েনা এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। অবিশ্বাস্যভাবে ক্ষোভে বিস্ফোরিত আয়েন্দ্রি ঠাস ঠাস করে ছয়টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নিষ্প্রাণের দুই গালে। নিষ্প্রাণ নিরুত্তেজ। আয়েন্দ্রি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল—
“খুনি! জানোয়ার ! চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোর এই মুখ আর আমাকে দেখাবি না। চলে যা, চলে যা।”
ঝুমা মেয়েকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন। ক্রন্দনরত গলায় বললেন—
“শান্ত হ আয়ু। পুলিশ এসেছে। ওকে ওর কাজের শাস্তি দেবে।”
“ওকে চলে যেতে বলো মা, চলে যেতে বলো।”
নিষ্প্রাণের পয়েন্ট সেভেন ফাইভ পাওয়ারের চশমা ছিটকে পড়ে অদূরে। আয়েন্দ্রির কথায় মলিন হাসল নিষ্প্রাণ। প্রগাঢ় মায়ায় চাইল আয়েন্দ্রির রোদনে আচ্ছন্ন মুখটার দিকে। স্বগতোক্তি করল—
“আমি ফিরব ধ্রুবতারা। তোর কাছেই ফিরব।”
কথা বলল না নিষ্প্রাণ। ছোট ছোট পা ফেলে ইন্সপেকটরের সাথে বেরিয়ে আসলো ঘর থেকে। পায়ে পিষে এসেছে তার চশমা। প্রাবিশ একটু আগেই এসেছে। কিন্তু পুলিশ কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। ছুটে আসে সীমান্তও। নিষ্প্রাণ তাদের দুইজনকে দেখে চোখে হাসল। পাশ ঘেঁষে যেতেই বলল—
“আমার ধ্রুবতারাকে দেখিস। আসি আমি।”
জীপে গিয়ে বসে নিষ্প্রাণ। তাকে দেখেই পরিস্ফুটিত নজরে নিমেষহীন চেয়ে আছে সীমান্ত। স্ট্রেচারে করে যখন রোমানের লাশ বের করে আনছিলি তা দেখেই গা গুলিয়ে উঠল সীমান্তের। মুখ লুকাল প্রাবিশের কাঁধে। কাটা মাথা, ঝলসানো চামড়া, পোড়া গন্ধ!
সীমান্ত হতপ্রায় গলায় বলল—
“আমি ভাবতে পারছি না নিষ্প্রাণের মতো ছেলে এই কাজ করতে পারে!”
প্রাবিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মর্মাহত গলায় বলল—
“পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা ভাবতেও পারি না। তা আজ আবার প্রমাণ করল নিষ্প্রাণ।”
,
,
,
নিশুতি রাতে চলছে পুলিশের জীপ। আচমকা থমকে যায়। নিরুত্তাপ নিষ্প্রাণ মুদিত চোখ জোড়া খুলে তাকায়। ইন্সপেকটর টুটুল জীপ থেকে নেমে আসে। নিষ্প্রাণের সামনে বসা নাদাপেটা কন্সটেবল কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। নিষ্প্রাণ স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে জীপ থেকে। অনুদ্বেগ মস্তিষ্কে হেঁটে আসে জীপের সামনে। পুলিশের জীপের সামনে বিপরীত দিকে দাঁড়ানো কালো রঙের মার্সেডিজ। নিষ্প্রাণ মুক্ত হাসল। ইন্সপেকটর টুটুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাশেদ। তার দিকে মোলায়েম চাহনি রাখে নিষ্প্রাণ। পরক্ষণেই পদযুগলের তাল তুলে এগিয়ে যায় কালো রঙের মার্সেডিজের দিকে। দরজা খুলেই ভেতরে বসে নিষ্প্রাণ। ইন্সপেকটর টুটুলের হাতে ভারী খাম তুলে দিলেন রাশেদ। যাতে আছে লাখ দু’য়েক টাকা। চিত্ত দুলে ওঠে ইন্সপেকটর টুটুলের।
রাশেদ সৌজন্য হাসে। দ্রুত গিয়ে বসে ড্রাইবারের পাশের সিটে। তার কাজ শেষ। এখন শুধু নিষ্প্রাণকে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া পৌঁছে দিতে হবে রাজন শিকদারের কাছে। লম্বা শ্বাস ফেলে রাশেদ।
পেছনে বসা নিষ্প্রাণ তার অধরে ঝুলায় হাসি। গোলাকার অধরে সৃষ্ট করে সেই হৃদ কাঁপানো সিটি।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ৩৯
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
নিষ্প্রাণকে নিয়ে চিন্তিত রাজন শিকদার একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন। নিষ্প্রাণ আপত্তি করল না। তাকে পাঠানো হবে মানসিক হাসপাতালে। ডাক্তার সার্জিও এর ওপর আর ভরসা করতে পারলেন না রাজন শিকদার। কিন্তু নিষ্প্রাণ শর্তারোপ করল। সে তার চিকিৎসা করাবে বিনিময়ে তাকে তার ধ্রুবতারাকে এনে দিতে হবে। বংশের প্রদীপ রক্ষার্থে মেনে নিলেন সেই শর্ত রাজন শিকদার। শুরু হলো নিষ্প্রাণের নতুন জীবন। খাঁচায় বন্দি জীবন!
সেই ট্রমা আয়েন্দ্রিকে চুষে খাচ্ছিল। ভুলতে পারিনি সেই বিভীষিকাময় রাত! সেই দৃশ্য! সেই রঞ্জিত প্রেমিক পুরুষকে।
মেন্টালি ভেঙে পড়ে আয়েন্দ্রি। রাত- বিরাতে চিৎকার করে ওঠে। এই বুঝি নিষ্প্রাণ চলে এলো! ঘুমাতে পারে না আয়েন্দ্রি। না পারে খেতে! সেই রক্ত! গা গুলিয়ে ওঠে আয়েন্দ্রির। ছয় মাসে যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসে আয়েন্দ্রি। তাকে অবজারবেশনে রাখা হয় টানা ছয় মাস। সীমান্ত, প্রাবিশ, কুসুম সবাই মিলে তাকে আশ্বাসিত করে। ভুলে যেতে সেই ভয়ানক দিন। ভুলে যেতে নিষ্প্রাণ নামের মানুষটিকে। নিষ্প্রাণের মেসে গিয়ে বিস্মিত হয় তারা। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পদার্থ। প্র্যাকটিকেল ক্লাসগুলো কখনো মিস যেতো না নিষ্প্রাণের। হয়তো সেখান থেকেই কালেক্ট করা বিভিন্ন রাসায়নিক তরল! সীমান্ত আর প্রাবিশ অনুতপ্ত। এইজন্যই হয়তো নিষ্প্রাণ কখনো তাদের ঘরের ভেতরে আসতে দেয়নি। কতটা বোকা ছিল তারা!
ছয় মাস পর আয়েন্দ্রিকে বাসায় আনা হয়। রোজ সীমান্ত, প্রাবিশ, কুসম এসে মন ভোলাতো আয়েন্দ্রির। আয়েন্দ্রি ততক্ষণই সুস্থ থাকত যতক্ষণ তার আশেপাশে মানুষের বিচরণ থাকত। একা হলেই ভয়ে কুঁকড়ে যেতো। এই বুঝি নিষ্প্রাণ এলো!
আয়েন্দ্রির সাথেই ঘুমাত ঝুমা। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে রাখত। অন্ধকার সহ্য হয় না আয়েন্দ্রির। মাঝে মাঝে-ই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে। নিষ্প্রাণের নাম আওড়াতে থাকে। ঝুমা নিজের বুকের মাঝে নিয়ে নিতেন মেয়েকে। আবেশিত মায়ার বুক পাঁজরে গুঁজে রাখতেন। কাঁদত আয়েন্দ্রি! একটা প্রাণহীন মানুষকে ভালোবেসে হেরে গেছে সে।
আয়েন্দ্রির বাবাসহ তার বন্ধুরা খোঁজ নিয়েছিল নিষ্প্রাণের। ইন্সপেকটর জানিয়েছিল তাকে ট্রান্সপার করা হয়েছে অন্য সেলে। কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন আলফাজ সাহেব।
একবছর লেগে যায় আয়েন্দ্রির সুস্থ হতে। নিষ্প্রাণকে ভুলতে চায় সে। আসলেই কি ভালোবাসার মানুষকে ভোলা যায়? যার চলাচল রন্ধ্রে রন্ধ্রে! শিরা- উপশিরায় যার বহমানতা! হৃদপ্রকোষ্ঠে যার বসবাস! শরীরে রক্তবিন্দু যখন তার নাম জপে, তখনও কী ভোলা সম্ভব সেই মানুষটাকে? যাকে এই হৃদয় দিয়ে চেয়েছে, অন্ধকারে জ্যোৎসা করে চেয়েছে, নিগূঢ় প্রেমের প্রমত্তা ঢেউ করে চেয়েছে, তাকে কী এত সহজে ভোলা যায়? রাতভোর হতেই যার বাহুতে নিজেকে এলোমেলো আবিষ্কার করতে চেয়েছে, যার স্পর্শে নিজের তপ্ত দেহের শীতলতা চেয়েছে, অমোঘ মৃত্যু পর্যন্ত যার প্রাণস্পন্দন হয়ে বাঁচতে চেয়েছে, এত সহজে তাকে ভোলা যায়?
আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একাগ্রচিত্তে দেখছে আয়েন্দ্রি। ভাঙা চোয়াল, ডেবে যাওয়া চোখ, শুষ্ক ঠোঁট, খড়ের গাদার মতো একরাশ চুল। গলার পাশের হাড়ের উপস্থিতি বলে দিচ্ছে এক প্রাণশূন্য মানবী দাঁড়িয়ে আছে ওই আরশির বিপরীতে। নিজেকে কোনো অপার্থিব সত্ত্বা মনে হলো আয়েন্দ্রির। সব শেষ হয়ে গেছে তারা। আশা, ভরসা, ভালোবাসা ! সব। মায়া আর বাস্তবতার কষাঘাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে আয়েন্দ্রি। চকিতে গলার সেই চেইন চোখে পড়ে তার। থিতিয়ে থাকা রাগটা যেন উগরে এলো! একটানে ছিড়ে ফেলে দিলো সেই চেইন। ফোঁপাতে থাকে আয়েন্দ্রি। কী দোষ ছিল তার!
চেইন ফেলে দেওয়াতে বিপাকে পড়ে নিষ্প্রাণ। ভালোই কাটছিল তার দিন। হসপিটালের সবচেয়ে ভদ্র আর শান্ত রোগীর খেতাব অর্জন করেছে সে। নার্সরা পর্যন্ত হতবাক! নিজেই সময় মতো মেডিসিন নিয়ে নিত। যেন সুস্থ হওয়ার অনেক তাড়া তার। কিন্তু সেইসবে জল ঢেলে দিলো আয়েন্দ্রি। শান্ত নিষ্প্রাণ আবার হিংস্র হয়ে উঠল। তার মস্তিষ্ক জুড়ে চলতে থাকল আরেক খেল। একদিন হুট করেই ডাক্তারের কেবিনে পৌঁছে যায় নিষ্প্রাণ। সিনিয়র নার্সের সাথে অন্তরঙ্গ দৃশ্য ক্যাপচার করে সেখানকার এক ওয়ার্ডবয়ের মোবাইলে। ব্ল্যাকমেল করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট করীম হাসনাতকে। বাধ্য হয়ে ডাক্তার নিষ্প্রাণের প্ল্যানে হাত মেলায়। বেশিকিছু চায়নি তো সে! চেয়েছে একটা মোবাইল যাতে করে নির্বিঘ্নে সে তার ধ্রুবতারার খেয়াল রাখতে পারে। যোগাযোগ করে রাশেদের সাথে, আর বলে যেন তার দাদুকে এসব জানানো না হয়। ভীত রাশেদ তাই ই করে। নিষ্প্রাণের পাগলামো সম্পর্কে অবগত হয়েছে সে। শুরু হয় আয়েন্দ্রিকে দেওয়া নিষ্প্রাণের মানসিক যন্ত্রণা !
রোজ কেউ আয়েন্দ্রিকে কল করে! কোথাও গেলে মনে হয় কেউ তাকে ফলো করছে! আবারো শুরু হয়ে সেই বীভৎস দিন! আয়েন্দ্রির মনে ঝেঁকে বসে নিষ্প্রাণের ভয়। রং নাম্বারে কল করা অজ্ঞাত মানুষটি শুধু তীক্ষ্ম সিটির আওয়াজে আয়েন্দ্রি মন, মস্তিষ্ক কাঁপন তুলে দেয়! এরই মধ্যে শিমুল নামের একটি ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসে আলফাজ সাহেব। ছেলেটি অনাথ। একটা দোকানে কাজ করত। মিথ্যে চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঠিকানা হয় আয়েন্দ্রিদের বাসা। কিন্তু শিমুলের ইগল দৃষ্টি সর্বক্ষণ আয়েন্দ্রির ওপর। যার জন্য তাকে এখানে পাঠানো হয়েছে।
রং নাম্বারের নিরন্তর রহস্যঘন কলে অসুস্থ হয়ে পড়ে আয়েন্দ্রি। নাম্বার পরিবর্তন করেও তার থেকে পরিত্রাণ পেল না সে। অবশেষে সারক এলো সেই সমস্যার সমাধান নিয়ে। নাম্বার ট্রেস করে বের করা হলো সেই অপরিচিত লোকটিকে। কিন্তু মৃত!
নিষ্প্রাণের ভয় ঘিরে ধরে আয়েন্দ্রির পুরো পরিবারকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রং নাম্বার থেকে কল আসা বন্ধ হয়ে যায়। আয়েন্দ্রির অন্ত:করণ হতে নিষ্প্রাণের ভয় দূরীকরণে প্রগাঢ় উপস্থিতি থাকে সারকের। আয়েন্দ্রির প্রতি তার ভালো লাগাটাও প্রকাশ পায় ততদিনে। আলফাজ সাহেবকে আশ্বস্ত করেন আয়েন্দ্রিকে দেশের বাইরে নিয়ে যাবে যাতে করে এই ট্রমা থেকে সে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে।
আয়েন্দ্রি কোনোভাবেই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিল না। ততদিনে বন্ধুমহল শূন্য। আয়েন্দ্রিকে সাপোর্ট করার জন্য সারকই ছিল একমাত্র। সারক তার বদ্ধ অনুভূতির প্রস্ফুটিত করে। যা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে আয়েন্দ্রিকে।
দুই বছর লেগে যায় সমস্ত কিছু ভুলে নতুন প্রভাতের দ্বার খুলতে। পান- চিনি সম্পন্ন হয় সারক আর আয়েন্দ্রির। বিয়ের তারিখও ঠিক হয়।
ঠিক বিয়ের দুই দিন আগে ঘটে সেই অপ্রত্যাশিত, অত্যাশ্চর্য, কল্পনাতীত ঘটনা!
সান্ধ্যকালীণ অস্তাভা সূর্যের আলোক ছটায় যখন ধূসর আকাশ ক্লান্ত, নীড়ে ফেরা পত্রীরা যখন ব্যস্ত কুজনে, মেদিনীর বুকে প্রবাহিত যখন মৃদু সমীরণ, তখনই অদৃশ্য সত্ত্বার ত্রসনের ন্যায় আবির্ভাব ঘটে নিষ্প্রাণের।
বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন সাজানো আয়েন্দ্রির বুক ধড়ফড় করে উঠে নিষ্প্রাণকে দেখে! ভয়ে সিটিয়ে যায় পরিবারের বাকি লোক। নিষ্প্রাণ শান্ত, দুর্ভেদ্য, দুর্দমনীয়। তার সেই কালো ব্যাগের মধ্যে অতি যত্নের সাথে নিয়ে আসে আয়েন্দ্রির জন্য বিয়ের শাড়ি, গয়না। বাধ্য করে তাকে বধূ বেশে আসতে তার সামনে।
নিজের করে নেয় তার ধ্রুবতারাকে। বাধ্য করে তিন কবুল বলে নিজেকে সমর্পণ করতে নিষ্প্রাণের ভয়াল আগ্রাসনে। ডাক্তার করীম হাসনাত থেকে মিথ্যে সার্টিফিকেট নিয়ে দেখায় তার দাদুকে। দাদু চেয়েও থামাতে পারেনি অপ্রতিরোধ্য নিষ্প্রাণকে। নিষ্প্রাণ সত্যিই সেদিন প্রাণহীনের মতো কিছু করেছিল যার ভুক্তভোগী স্বয়ং রাজন শিকদার।
চলবে,,,
(বি.দ্র: আগামী পর্ব থেকে আসবে বর্তমান নিষ্প্রাণ। অতীত আজকেই শেষ।)
চলবে,,,