#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১৩
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
কেটে গেছে এক সপ্তাহ। আরশি মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেছে। শরীরের ক্ষত গুলোও শুকিয়ে এসেছে। তাহি দুইদিনের মধ্যেই কেস তদন্তের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে।
আনান ও আলিশাকে নিয়ে আরাফ মির্জার সবকিছুর বিষয়ে তদন্ত করে জানতে পেরেছে আজ রাত ১টার দিকে সমুদ্র পথে অবৈধ মাল পাচার করা হবে। সে হতে পারে ড্রাগস, বা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- চোখ, কিডনি। আর এটাও জেনেছে যে ট্রলার দিয়ে মানুষ নিয়ে যাওয়া হবে, যাদের কিডন্যাপ করেছে তাদের ও নিয়ে যাওয়া হবে তাদের গুপ্ত আস্তানায়, যেখানে চোখ কিডনি অপারেশন করে নেওয়া হয়। তাহি চাইলেই আরশির জবানবন্ধি নিয়ে আরাফ মির্জা ও তার বাবাকে ধরে আনতে পারে। কিন্তু সেটা করবে না তাহি। সবকিছু হাতের মুঠোয় এনে, হাতে নাতে ধরবে আরাফ মির্জা ও আরিয়ান মির্জা কে।
–
‘
‘
আরাধ্য মির্জা ও আরিফ মির্জার চোখ ছলছল করছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। আরশিও ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে বার বার। আরশির দিকে এগিয়ে আসলেন আরাফ মির্জা। তার একটা মেয়ের খুব শখ ছিলো, কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি। তিনি আরশি কে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতেন। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলেন আরশিকে। এবার আরশি শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
অনেকক্ষণ পরে কান্না বন্ধ হলো আরশির, কিন্তু মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠছে।
-এবার তাহলে আমি উঠি মিঃ মির্জা। আপনাদের তো সবই বললাম। ওকে আগলে রাখবেন। কোর্টে আরশিই হবে প্রধান সাক্ষী। এখন শুধু প্লান মতো আরিয়ান মির্জা ও তার ছেলেকে ধরার পালা।
তাহির কথা শুনে আরাধ্য এগিয়ে এলো। বিনয়ের সাথে বললো- আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না, মিস তাহি। আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি এমন কিছু একটা হবে বা হতে পারে। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছুটো করবো না। আরশিকে আমি আর বাবা আগলে রাখবো। এবং কোর্টে আরশি অবশ্যই সাক্ষী দিবে।
-ওকে আজ তাহলে আমি আসি। আমার কাজ আছে, বুঝতেই পারছেন।(তাহি)
– জ্বি আপনার সময় নষ্ট করবো না, আপনি আসতে পারেন। (আরাধ্য)
আরশির দিকে এক পলক তাকিয়ে ‘টেক কেয়ার’ বলে চলে গেলো তাহি।
আরাধ্য এগিয়ে এলো আরশির দিকে। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললো- তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে ওরা, তাই না আরু? আমি ওদের নিজের হাতে শাস্তি দিতাম। কিন্তু বাবা আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি। আমি আইন নিজের হাতে তুলে নিবো না ঠিকই, তবে ওই ক্রিমিনালদের যাতে এমন শাস্তি দেওয়া হয়, যা দেখে সবাই ভয়ে কখনো অবৈধ পথে পা বাড়াবে না, সেইরকম শাস্তি ওদের পাইয়ে দিবো।
আরিফ মির্জার দিকে তাকিয়ে আরাধ্য বলে- বাবা, আমি আজ এক্ষনি আরশিকে বিয়ে করতে চাই। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তো।
ছেলের কথা শুনে মুচকি হাসলেন আরিফ মির্জা, তিনি জানেন তার ছেলে আরশিকে ভালোবাসে।
– আমার কোনো আপত্তি নেই বাবা, তুই বিয়ে করবি, তাও আমার আরশি মাকে, সেটাতো আমার জন্য খুশির সংবাদ। আমি আগে থেকেই মনে মনে আরশিকে তোর বউ করার স্বপ্ন দেখতাম, কিন্তু কখনো তোকে বলা হয়নি।
অবাক হয়ে এদের দুজনের কথা শুনছে আরশি। হ্যা এটা ঠিক আরশিও মনে মনে আরাধ্য কে পছন্দ করতো৷ কিন্তু আরাধ্য ও যে তাকে পছন্দ করে বা করতে পারে সেটা কখনো ভাবতে পারেনি আরশি। মনের মধ্যে হাজার কষ্টের মধ্যে ও আরশির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।
আরিফ মির্জা বলেন – যা তোরা উপরে যা, আমি মেনেজার কে ফোন করে বলছি, কাজি নিয়ে আসতে। পরে নাহয় ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দিবো। বলেই নিজের রুমে চলে গেলেন আরিফ মির্জা।
‘
‘
আরশির হাত টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো আরাধ্য। আরশির তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আরশিকে লজ্জা পেতে দেখে বাঁকা হাসলো আরাধ্য। টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আরশি আরাধ্যের বুকে মাথা এলিয়ে দিলো। আরশির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে আরাধ্য বললো-, ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তাই না?
– ওদের দেয়া কষ্ট আমি ভুলে যেতে চাই, আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে নিয়ে সারাজীবন বাঁচতে চাই। যেখানে শুধু সুখ থাকবে, অভিমান থাকবে, ভালোবাসা থাকবে। থাকবে না কোনো বিশ্বাসঘাতকতা!
আরশির কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলো আরাধ্য। আরশিকে ছেড়ে দিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলো। শাড়ির আচল আরশির মাথায় দিয়ে বললো- জানো আরশি, এটা কার শাড়ি? এটা আমার মায়ের বিয়ের শাড়ি। আমি চাই আজ এটা পড়ে তোমাকে নিজের জীবনে স্ত্রীর স্থান দিতে৷ পড়বে তো?
– কেনো পড়বো না, অবশ্যই পড়বো। আপনি বাইরে যান আমি শাড়ি পড়ছি।
– আচ্ছা, আলমারির বা দিকে একটা ব্যাগে তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবে।
‘
‘
‘
রাত ১০টার কাছাকাছি সময়। খাওয়া দাওয়া অনেক আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে আরশি আরাধ্যের কোলে বসে আছে। আরশি দেখছে দূর আকাশের চাঁদ, আর আরাধ্য দেখছে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কে।
-ঘুমাবে না?
-না আর কিছুক্ষণ থাকি না এভাবে।
আরশির নিঃসংকোচ আবদারে না করতে পারলো না আরাধ্য। আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আরশি নিজের প্রিয়তম স্বামীর বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো।
আরাধ্য বুঝতে পারলো আরশি ঘুমিয়ে পড়েছে। কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আরশিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
_____
গভীর রাত, চারিদিকে প্রচন্ড বাতাসে সবকিছু উড়ছে। বর্তমানে নিজের টিমের সবাইকে নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহি।
তোমরা সবাই রেডি?(তাহি)
-জ্বি ম্যাম, আমরা সবাই প্রস্তুত। (টিমের সবাই)
-ওঁকে তোমরা সবাই চারিদিকে লুকিয়ে যাও। আমি যখন বের হবো তখন তোমাদের জানাবো। কান থেকে ব্লুটুথ খুলবেনা কেউ। মনে থাকে যেনো।
-জ্বি ম্যাম মনে থাকবে।
-গো, সবাই চারিদিকে লুকিয়ে পড়ো। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।
– আমি আপনার সাথে থাকি ম্যাম (আনান)
– না তার দরকার নেই, তুমি আলিশাকে তোমার সাথে রাখো। যাও কুইক, সবাই চারিদিকে লুকিয়ে পড়ো।
—–
ভোর রাত, হাসপাতালের চারিদিকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে উত্তেজনা ভাব বিরাজ করছে। সব ডাক্তার নার্স কর্মীরা দাঁড়িয়ে ভীড় করেছে। কলিজা কাপছে নিষ্প্রভের, বার বার মন কে বুঝ দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যেনো তাহি না হয়।
অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর থেকে রক্তাক্ত তাহিকে স্ট্রেচারে করে বের করে আনলো নার্স রা। সাথে আনান ও আলিশা আরো কিছু অফিসার রা আছেন, যারা একটু আধটু আহত হয়েছেন। তাহির রক্তাক্ত শরীর দেখে নিষ্প্রভের পৃথিবী থমকে গেলো।
তাহিকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়েছে, বুকের বা পাশে গুলি লেগেছে,
আনানের ধাক্কায় স্বাভাবিক হলো নিষ্প্রভ, আনানের দিকে তাকিয়ে বললো- আমার পাখিহহ,,,
কিছু হবে না স্যার, আপনি না ডাক্তার, আপনি কি পারবেন না আপনার পাখিকে বাঁচাতে?
– আমি পারবো না আনান, আমি তাহিকে এই অবস্থায় দেখতে পারছিনা। ওর অপারেশন করবো কিকরে?
– জানেন স্যার, ম্যাম জ্ঞান হারানোর আগে কি বলেছেন?
– ক কি বলেছে?
– ম্যাম বলেছেন, ‘দেশের জন্য দেশের মানুষকে বাচানোর জন্য যদি আমার মৃত্যু হয় তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। বরং আমি মৃত্যুকে খুশি মনে গ্রহণ করবো, আমি যদি মরে যাই আনান, তাহলে তুমি আমার ডাক্তার সাহেবকে বলে দিও তার পাখি বীরের মতো মৃত্যুবরন করেছে। শত্রুদের কে প্রতিহত করে তারপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। তুমি আমার ডাক্তার সাহেব কে বলে দিও তার অবাধ্য অপ্রেমিকা তাকে অনেক ভালোবাসে। আমি যদি আর ফিরে না আসি তাহলে আমার হয়ে ডাক্তার সাহেব কে আমার শেষ কথাগুলো বলে দিও।
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১৪
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
নদীর পাড়ে দুইটা ট্রলার পাশাপাশি অবস্থান করছে। হাক ছাড়লেন আরিয়ান মির্জা, ছেলেপেলে দের দিকে তাকিয়ে বললেন- যে ছেলে মেয়ে গুলোকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তাদের একটা ট্রলারে তুলো, আর ড্রাগস, ইয়াবা, অস্ত্র সবকিছু আরেকটাতে তুলো।
মাথা নাড়িয়ে সবাই কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আরিয়ান মির্জা নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন- কি মনে হয় আরাফ, সব ঠিকঠাক?
– ঠিকঠাকই তো লাগছে বাবা, তবুও সবাইকে সাবধানে কাজ করতে বলো। মির্জাপুরের কেসটা নতুন একজন অফিসার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে, শুনেছি সে নাকি খুবই ডেঞ্জারাস, এখন পর্যন্ত যতোটা কেস এ জড়িয়েছে, সব সমাধান করেছে।(আরাফ মির্জা)
– নাম কি সেই অফিসারের?
– তাহি মাহমুদ! একজন সিআইডি অফিসার।
– মেয়ে?
– হুম,
– হোয়াট! তুমি একটা মেয়েকে ভয় পাচ্ছো, এতো ভীতুরডিম কবে হলে?(আরিয়ান মির্জা)
– নো ডেড, আমি ভয় পাচ্ছিনা, তাহি মাহমুদের সম্পর্কে সব কিছু জেনেছি, লেডি খুবই সাহসী। মেয়ে হয়েও সাহস ও কাজের তুলনায় সব সিনিয়র ম্যান অফিসারদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে।(আরাফ মির্জা)
– তো ছাড়িয়ে যাক, সমস্যা কি? আমাদের সাথে না লাগলেই হলো। যদি আমাদের কাজের মধ্যে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে তো সোজা উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
-ডেড আমি একটা সত্যি কথা জানতে পেরেছি।
– কি কথা?
– তোমার জয়নাল মাহমুদের কথা মনে আছে?
– হুম আছে, কেনো?
– জয়নাল মাহমুদের এক মেয়ে ছিলো জানো?
– হুম জানি, বাট যেদিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেদিন তো ওর মেয়েটি ছিলো না, শুধু ও আর ওর স্ত্রী ছিলো।
– জয়নাল মাহমুদের মেয়ে তাহি মাহমুদ।
– হোয়াট!
– ইয়েস ডেড ইয়েস। পনেরো বছর আগে যাকে তুমি নিজ হাতে খুন করেছিলে, সেই জয়নাল মাহমুদের মেয়ে তাহি মাহমুদ।
– কিন্তু! তুমি এতোকিছু কিভাবে জানলে?
– আমি সিআইডি অফিসার তাহির সব ডিটেইলস জানতে গিয়ে এসব জানতে পেরেছি ডেড।
–
–
আড়াল থেকে এতোক্ষণ সবকিছু শুনছিলো তাহি ও ওর টিমের সবাই। তাহি স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে তো জানতো তার বাবা হার্টের সমস্যার কারণে মারা গেছে, স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে তার মা তারিন মাহমুদ ও স্টোক করেছিলেন। তার মনে এতোদিন সে মিথ্যা জানতো সব। তার বাবা মা কে খুন করা হয়েছে।
–
কানে ব্লুটুথে চাপ দিয়ে ফিসফিস করে তাহি বললো- আক্রমণ করো।
–
মুহুর্তের মধ্যেই চারিদিক থেকে বেরিয়ে আসলো তাহির টিমের সব অফিসার রা। শুরু হলো গুলাগুলি। আরিয়ান মির্জার লোকরা সবাই কাজে ব্যস্ত ছিলো বিধায় কেউ তেমন বিপরীত আক্রমণ করতে পারেনি। আর আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জা কথা বলতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে তাদের চারিদিকে কি হয়েছে তা বুঝতে ২০ সেকেন্ডের মতো সময় লেগেছে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাহি পিস্তল তাক করে আছে আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জার দিকে। তাহি টিমের অফিসারদের ইশারা করলো আরিয়ান মির্জার লোকদের এরেস্ট করে গাড়িতে তুলতে। ওরা সাথে আরো গাড়ি এনেছিলো, তার মধ্যে একটাতে কয়েকজন অফিসার দিয়ে আরিযান মির্জার লোকদের লোকাপে পাঠিয়ে দিলো। যে ট্রলারে কিডন্যাপ করা মানুষ গুলোকে রাখা হয়েছে, সেই ট্রলারে কিছু অফিসার ঢুকে সবাইকে বের করে আনলো। কয়েকজন অল্প বয়সী মেয়ে, কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলে, ও কয়েকজন মধ্যবয়সী নারী পুরুষ রয়েছে। তাদের আরেকটা গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেলো কিছু অফিসার রা।
আরিয়ান মির্জা ও আরাফের দিকে এখনো পিস্তল তাক করে আছে তাহি, চারিদিক থেকে সবাই ঘিরে দাড়িয়েছে,
-তোদের সব কিছু শেষ, একটু আগে যা যা বলেছিস, সব রেকর্ড হয়ে গেছে, তোদের কুকর্মের সব প্রমাণ পেয়ে গেছি। বলেই তাহি দুইজন অফিসার কে ইশারায় হাত কড়া পড়াতে বললো। দুইজন অফিসার আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জাকে টেনে গাড়িতে তুললো। তাহি, আনান ও আলিশা আরো কিছু অফিসার এগিয়ে গেলো আরেকটা ট্রলারের দিকে, যেটাতে রয়েছে সব অবৈধ মালামাল ও অস্ত্র।
হাতে হেন্ড গ্লাভস্ পড়তে পড়তে ট্রলারের ভিতরে ঢুকলো তাহি। সামনে তাকিয়েই তাহি স্তব্ধ হয়ে গেছে। আলিশা হুরমুর করে বমি করে দিয়েছে। আরেকজন লেডি অফিসার জেসি ওকে ধরে রেখেছে।
– জেসি আলিশাকে নিয়ে যাও, আর সবাই মাক্স পড়ে নাও। ফলো মি বলে তাহি সামনে রাখা বক্সের দিকে এগিয়ে গেলো।
ড্রাগস, ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র, একসাইডে ও কিডনি চোখ প্যাকেটের মতো করে রাখা। যার গন্ধেই মূলত আলিশা বমি করে দিয়েছে। পুলিশ ফোর্স কে কল করলো তাহি। তারা কিছু পুলিশ নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হলো। তাদের ট্রলাদের সবকিছু নিয়ে আসতে বলে, তাহি ওর টিমের মেম্বারদের নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। যে গাড়িতে আরিয়ান মির্জা ও আরাফ মির্জাকে তুলা হয়েছে সেই গাড়িতে তাহি ও তার টিমের বাকি অফিসার গুলো উঠে বসলো। গাড়ি কিছুদূর যেতেই পাশে বসা অফিসারের হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নেয় আরাফ। তা দেখে ড্রাইভিং করা অফিসার গাড়ি থামায়। সবাই গাড়ি থেকে নেমে বের হয়ে আসে। ওই অফিসারকে নিজের হাতে জিম্মি করে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে আরাফ। পালানোর চেষ্টা করে দৌড় দেয়। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেনি, তার আগেই আবারো তাহির টিম ও তাহি ওকে ঘিরে ধরে। পার্থক্য শুধু একটাই আগে আরাফের হাতে পিস্তল ছিলো না, এখন পিস্তল আছে। আর সেটা সামনে তাহির দিকে তাক করে রেখেছে আরাফ।
–
-তারপর? উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে নিষ্প্রভ।
– গলা শুকিয়ে গেছে স্যার, আগে একটু পানি খেয়ে নেই। বলেই আনান পাশের টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করলো। আবারো বলতে শুরু করলো—
–
-অস্ত্র নামাও অফিসার, তোমার অফিসারদের অস্ত্র নামাতে বলো। নাহলে আমি কিন্তু তোমাকে শুট করে দিবো (আরাফ)
– কেউ অস্ত্র নামাবে না, তুই অস্ত্র নামা, নাহলে,,(তাহি)
– নাহলে কি,,(আরাফ)
কিছু বললো না তাহি, পিস্তল তাক করে আরাফের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আরাফ সামনে থেকে বার বার বলছে ‘সামনে আসবে না অফিসার আমি কিন্তু শুট করে দিবো’ কিন্তু তাহি সেসব উপেক্ষা করে আরাফের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে আরাফ শুট করে দেয়, যা তাহির বুকে গিয়ে লাগে। ঠিক তখনই আনান পিছন থেকে আরাফের পিস্তল কেড়ে নেয়। কিন্তু ততোক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আনান আরাফকে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বাকি অফিসারদের বলে আরাফকে গাড়িতে তুলতে। আনান তাহির দিকে এগিয়ে যায়, আনান কে কিছু কথা বলেই অজ্ঞান হয় তাহি। তারপরই দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে কল করে তাহিকে নিয়ে ও কিছু অফিসারকে নিয়ে হাসপাতালে আসে আনান। ততক্ষণে মিডিয়া খবর পেয়ে গেছিলো। তাই সবাই ঘটনাটা জেনে যায়।
–
– আর পরে কি হয়েছে আপনি তো জানেনই স্যার।(আনান)
স্যার তাহি ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে। নার্সের কথা শুনে একমুহূর্ত ও দেরি করলো না নিষ্প্রভ। তাহির কেবিনের দিকে দৌড় লাগায়। কেবিনের সামনে এসে হাপাতে থাকে। জোরে শ্বাস নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে। আজ ৭২ ঘন্টা পর তাহির জ্ঞান ফিরেছে। বেডের সামনে টুলে বসে নিষ্প্রভ। তাহির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে ডাকে- পাখি,
চোখ বন্ধ করেছিলো তাহি, নিষ্প্রভের ডাকে চোখ খুলে তাকায়। অসুস্থতার মধ্যেও হাসার চেষ্টা করে। তা দেখে নিষ্প্রভ নিজেও হাসে। তাহির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ বলে- ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে পাখি, তোমার কিছু হলে আমার কি হতো?
আস্তে করে তাহি বলে- কি আবার হতো, আপনি আমায় ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসতেন।
চলবে, ইনশাআল্লাহ
চলবে, ইনশাআল্লাহ
[মিশনে কি হয়েছিলো তা নেক্সট পর্বে জানতে পারবেন আপনারা, আর আমার পরীক্ষা চলছে, একদিনে দুইটা পেকটিকেল পরীক্ষা, সাথে মাথা ব্যাথা তো আছেই, সবাই পড়ে মন্তব্য করবেন, তাহলে আমি লেখার আগ্রহ পাবো, হেপি রিডিং আসসালামু আলাইকুম]