#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৬
ঈশিতা আর ইয়াশ সামনা- সামনি বসে আছে। প্রিয়তা ঈশিতার পাশে বসে আছে। প্রিয়তা আজকে সত্যি সত্যি নিজের ইচ্ছেতে বোরখা আর নিকাবে নিজেকে ঢেকে এসেছে কারণ সে ইয়াশকে বলেছিল তার মুখ আর ইয়াশ দেখবে না। নিজের কথা রেখেছে প্রিয়তা। সে বারবার ঈশিতাকে কনুই দিয়ে ধাক্কাচ্ছে কথা বলার জন্য। কিন্তু ঈশিতা, চুপচাপ বসে আছে ভয়ে কিছুই বলতে পারছে না। ওদিকে ইয়াশ ফোন ঘাটাঘাটি করতে করতে চোখ তুলে ঈশিতার দিকে তাকায়।
” এভাবে বসে থাকার জন্য আমি এসেছি?” ( ইয়াশ)
” না মানে… ” (ঈশিতা)
” কি মানে মানে করছো আপু তুমি যে বিয়ে করবে না সেটা সাফ সাফ বলে দাও তো। ” (প্রিয়তা)
প্রিয়তা দেখছিল ঈশিতা কোনভাবেই সাহস পাচ্ছে না ইয়াশকে কথাটা বলার। সে যতই বলুক সবাই ইয়াশকে যেমন ভয় পায় তেমন সেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই ভয় পায় সেজন্য প্রিয়তা কাজটা সহজ করে দিলো।
প্রিয়তার কথা শুনে ইয়াশ বড় বড় করে তাকায় প্রিয়তার দিকে। ওদিকে ঈশিতা চোখ বন্ধ করে আছে। ইয়াশ হাতের ফোনটা টেবিলের উপর রাখে। জিজ্ঞাসু চোখে ঈশিতার দিকে তাকায় ঈশিতা তখনো চোখ খুলে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
” তাহলে এই কথা আমি আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলাম। বিয়েতে কি সমস্যা অন্য কাউকে পছন্দ? ”
” মা.. মানে…..” (ঈশিতা)
” মানে মানে না করে স্পষ্ট করে কথা বল। আমি তো ভয়ঙ্কর কোন প্রাণী না যে আমাকে দেখে ভয় পাবি কথাই বলতে পারবি না। ”
” ভাইয়া আমার পরিবর্তে প্রিয় আপনাকে সব কিছু বলুক? ”
” প্রিয় কেন বলবে তোর কথা তুই বল! ”
” না মানে আসলেই আমার খুব ভয় লাগছে। ”
” তুই আমাকে সবকিছু ক্লিয়ার করে না বললে আমি তিন দিন পরের বিয়েটা কালকে করে নেব। ”
” না না না বলছি বলছি। ”
” হ্যাঁ বল। ”
প্রিয়তা উঠে দাঁড়ায় ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলে, ” আপু তোমরা কথা বলো আমি একটু বাহিরে থেকে আসছি। ”
ইয়েস এবার প্রিয়তার দিকে রাগী চোখে তাকায়। ধমক দিয়ে বলে, ” এই এত বড় হয়েছিস তো ছটফটে স্বভাব কোনদিন যাবেনা?একদম চুপ করে বসে এখানে। দুই বোন একসাথে এসে একজন তো কথা বলতেই পারছে না আর একজন উঠে চলে যাচ্ছে । তোদের এত বাহিরে ঘুরাঘুরি করা স্বভাব কেন? একদম চুপ করে এখানে বসে থাকবি। হ্যাঁ ঈশিতা বল তুই তোর কথা বল। ”
” সেটা বাসায় বলিস নি? তুই কাউকে পছন্দ করিস তাহলে তোর বাবা মা আমার সাথে কিভাবে বিয়ে ঠিক করে ? ”
” আপনি তাদের কাছে খুব পছন্দনীয়, আপনি নাকি আমাকে ভালো রাখতে পারবেন এজন্য। ”
” কেন যাকে ভালোবাসিস সে তোকে ভালো রাখতে পারবে না? আর তোদের বাবা-মা কি তোদের স্বাধীনতা দেয় এটার জন্য যে সুযোগ পেলেই তোরা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বি? তোদের এই জেনারেশনের সমস্যাটাই এটা যেদিকেই তাকাই সেদিকেই ছেলেমেয়ের হারাম সম্পর্কের ছড়াছড়ি। মানে অন্য ধর্মের কথা বাদই দিলাম এই কিছু নামেমাত্র মুসলিমরা বর্তমানের যা শুরু করেছে তাদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান বিন্দুমাত্র নাই। ”
” আমি জানি ভাইয়া ভুল করে ফেলেছি, আর সেটা আমি বুঝতেও পারছি কিন্তু কি করবো বলেন? আমরা নিজেরাও চাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি এই হারাম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে নতুন একটা হালাল সম্পর্কে আমাদের ভালোবাসাকে রূপান্তর করতে। আর আপনার সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।”
ইয়াশ মুখ গম্ভীর করে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর টেবিলে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ঈশিতা আর প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আমি মামার সাথে কথা বলে নেব, চিন্তা করিস না আমি মামার সাথে কথা বলে নেব। এখন দুজন এখানে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বাসায় চলে যা। আমি আসছি আমার কাজ আছে আল্লাহ হাফেজ। ”
ইয়াশ কথাগুলো বলে তাড়াতাড়ি করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে যায়। ইয়াশ চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঈশিতা আর প্রিয় তার মুখে হাসি ফুটে যায়।
” নাও এবার তোমার কাজ হয়ে গেল। আমাকে ট্রিট দাও তাড়াতাড়ি। ”
প্রিয়তা হাসিমুখে কথাটা ঈশিতাকে বলে। ঈশিতা এবার ভাবুক মুখভঙ্গিতে প্রিয়তার দিকে তাকায়।
” তোকে খাওয়াবো তো অবশ্যই তবে আমার একটা কথা জানার আছে। ” (ঈশিতা)
” কি জানার আছে?”
” তুই এত উঠেপড়ে লেগেছিলি কেন আমার বিয়ে ভাঙতে? সবসময় তো আমার বিপক্ষে অবস্থান করতি।”
” ভালো করলেও দোষ তাই না? যাই গিয়ে ইয়াশ ভাইকে বলি বিয়েটা না ভাঙতে।”
” তুই কি এটা করতে পারবি?”
” মা,, মানে?”
” তুই ইয়াশ ভাইকে পছন্দ করিস তাই না?”
” কি বলছো তুমি? আমি কেন উনাকে পছন্দ করতে যাব?”
” তোর আচরণেই বুঝেছি গতকাল যে তুই ইয়াশ ভাইকে পছন্দ করিস আবার ভালোও বাসতে পারিস, বুঝতে পারছি না আসল কাহিনীটা।”
” বাজে কথা বলো না তো। তোমার কি মনে হয় ওরকম একটা রাগী, রাজনীতিবিদ লোক, যে সবসময় নীতি শেখাতেই আছে তার সাথে আমি আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখব?”
” হ্যাঁ দেখতেই পারিস, তোর পরিবর্তন তো আমার চোখ এড়ায় নি।”
” কি পরিবর্তন? ”
” এই যে রাতে ব্যাগে দেখলাম বোরখা, নিকাব। রাতে নামাজ, ইসলামিক বই এত পরিবর্তন কেন? ইয়াশ ভাইয়ের মনের মত হওয়ার চেষ্টা করছিস?”
” মোটেও না। বইটা পড়তে ভালো লাগছে, কেমন ভয় ভয় লাগছিল, অনেক বিষয়ে আজাবের ঘটনা দেওয়া বইটাতে যে পাপগুলো আমরা অহরহ করছি সেজন্য আমার মনে হয় আমি যেভাবে চলি এভাবে চলতে থাকলে আমার জায়গাও জাহান্নামেই হবে। তার চেয়ে ভালো নিজেকে পরিবর্তন করে নেই।”
” ভোরবেলা উঠে নামাজ পড়া আজ সারাদিন বিভিন্ন কাজে খটকা লেগেছিল আমার।”
” আমার মনে হয় তোমার ও বইটা পড়া উচিৎ। ”
” তাহলে দিস, পড়ব। ”
” তুমি যারা ইসলাম বিষয়ে লেকচার দেয় ওদের কথাগুলো শুনবে দেখবে একবেলা নামাজ ছাড়তে ইচ্ছে করবে না। নিকাব বোরখা ছাড়া বাহিরে আসতে চাইবে না, পাপের শা*স্তি এতটা ভয়াবহ অথচ আমি আগে গুরুত্ব দেই নি। কত ভুল যে করেছি আপু, ভাবলেই রাত থেকে কান্না পাচ্ছে।”
” আচ্ছা এখন এসব কথা ছাড়, চল খাওয়া দাওয়া করে বাসায় যাই।”
” হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। তাড়াতাড়ি খাবার দিতে বলো”
” হ্যাঁ বলছি।”
দুজন ইচ্ছামত নিজেদের পছন্দের খাবার অর্ডার করে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় পৌঁছে যায়।
____
রাত দশটা প্রিয়তা বসে বসে কিছু দোয়া মুখস্থ করছিল এই যেমন সকালে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত কি কি কাজের আলাদা দোয়া আছে সেগুলো। সে নিজের সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিয়েছে কখন কি করবে।
ঈশিতা প্রিয়তার রুমে এসে বিছানার ওপর বসে ফোন টিপতে থাকে। প্রিয়তা তখনও কাগজ কলম নিয়ে চেয়ারে বসে দোয়াগুলো লিখে নিচ্ছে।
” এই প্রিয়…..”
ঈশিতার ডাক প্রিয়তা শুনতে পায় না। সে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করছিল। প্রথম ডাকে সাড়া না পেয়ে ঈশিতা আবার প্রিয়তাকে ডাকে।
” এই প্রিয়, শুনছিস না আমি ডাকছি?”
” হুম বলো।”
” আমার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। ”
” কেন?”
” এদিকে তাকা….”
” বলো, আমি কাজ করছি।”
” না তুই এদিকে তাকা।”
প্রিয়তা ডায়েরী আর কলম রেখে ঈশিতার দিকে ফিরে বসে।
” হ্যাঁ বলো।”
” এখন ও বাসায় কিছু হলো না!”
কথা শেষ করতে না করতেই ঈশিতার মা রুমে প্রবেশ করেন। মাকে দেখে দুজন চুপ হয়ে যায়। কারও মুখে কোন কথা নেই।
” দুইবোন আমাদের রুমে আয়, তোদের বাবা ডাকছে।”
কথাটা বলেই তিনি রুম থেকে চলে যান। দুজন দুজনের মুখের দিকে কোন কথা না বলে তাকিয়ে আছে। দুজন একসাথে বলে ওঠে “ঘটনা কি ঘটে গেল নাকি!”
চলবে….
আমার আইডি রেস্ট্রিকটেড থাকায় গল্প দিতে পারি নি কয়েকদিন এজন্য লেখার ইচ্ছেটাও কেমন চলে গেছে। প্লিজ সবাই রেস্পন্স করবেন, কেমন লাগছে জানাবেন।