#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২|
‘ মাহতিমের মত এত সুন্দর এক ছেলের গালে তুই থা”প্পড় মারলি কিভাবে? হাত কাঁপল না, প্রিয়? ‘
প্রিয়ন্তি কঠিন চোখে দৃষ্টির দিকে চায়। যেন দু চোখ দিয়ে দৃষ্টির মনের ভেতরটা খু’বলে খেতে পারলে তার শান্তি হয়। প্রিয়ন্তি বলল,
‘ না, হয়নি। তোর হলে তুই গিয়ে তার কোলে বসে থাক। ‘
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিপা দৃষ্টির কাঁধে হালকা করে চাপড় দিয়ে বলল,
‘ থাম তো, দৃষ্টি। প্রিয়ন্তির মেজাজ ঠিক নেই। ‘
দৃষ্টির বেশ রাগ হয়েছে প্রিয়ন্তির এসব কথা শুনে। কি এমন বলেছে দৃষ্টি? শুধু একটু বুঝানোর চেষ্টা করল! সুন্দর ছেলেদের গালে থাপ্পড় দিতে নেই। চট করে এদের প্রেমে পরে যেতে হয়। আর যদি প্রেমে পরতে না পারো, তবে কাছে এনে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হয়! থা”প্পড় দেয়া আবার কি? এসব তো ম্যানারলেস মানুষরা করে! প্রিয়ন্তি করবে কেন এসব? রাগটা এবারের মত চেপে গেল দৃষ্টি। প্রিয়ন্তিকে চেনে সে। ঠোঁটকাটা, স্পষ্টভাষী মেয়ে। রাগ উঠলে যখন তখন কিছু কঠোর কথা বলে ফেলে। মুখে কথা বাজে না। এসব জেনেই প্রিয়ন্তির বন্ধুরা ওর সাথে আছে। প্রিয়ন্তি রাগ উঠলে বাজে কথা বলে ঠিকই কিন্তু পরে যখন মেজাজ নেমে আসে, তখন আবার সরি বলে তাদের কানের পোকা বের করে দিতে চায়। খুব ভালো এই মেয়ে! মনটা বেশ পরিস্কার, স্বচ্ছ। এমন মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় না। দৃষ্টি প্রিয়ন্তির কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ রাগ করিস না আর। ছেলেটা তোকে ভালোবাসে বলেই তো এমন পাগলামি করছে। ভালো না বাসলে কি এসব করত? তুই শুধু একটু শান্ত হয়ে ওকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা কর। বারবার গায়ে হাত তোলা খারাপ দেখায়। ‘
প্রিয়ন্তি চোখ বুজে লম্বা করে শ্বাস টেনে নেবার চেষ্টা করল। বাতাসে গরম রোদের তেজ। বুকের ভেতর যেন রোদের আগুনে পু”ড়ে যাচ্ছে সবকিছু। বৃষ্টি হচ্ছে না প্রায় পাঁচদিন। তাই রাস্তার বালু অব্দি উত্তপ্ত হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তির মাথা গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি হাত বাড়িয়ে ছাতা খুলে মাথার উপর ধরল। দৃষ্টি এবং নিপার দিকে চেয়ে বলল,
‘ আজ আর হেঁটে যেতে পারব না বাসায়। গরমে তালু সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। রিকশা দেখি? ‘
নিপা নিজেও ঘেমে অস্থির। দৃষ্টির বাসা আর মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। দৃষ্টি বলল,
‘ আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। তোরা দুজন রিকশা করে চলে যা। ‘
নিপা আর প্রিয়ন্তি বিদায় জানাল দৃষ্টিকে। প্রিয়ন্তি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে রিকশা খুঁজতে শুরু করল। খালি রিকশা পেলে হাত বাড়িয়ে রিকশা আটকাল। নিপা আর প্রিয়ন্তি দুজনেই রিকশায় উঠে বসল। প্রিয়ন্তি রিকশাচালককে বলল,
‘ চাচা, রিকশার হুড তুলে দিন। গরম লাগছে। ‘
রিকসাচালক হুড তুলে দিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করল। প্রিয়ন্তি যাবার আগে চোখ দিয়ে দেখল, কিছুটা দূরে ফুটপাথের উপর দাঁড়িয়ে আছে মাহতিম। জিন্সের পকেটে দু হাত গুঁজে মিষ্টি হেসে প্রিয়ন্তিকে চোখ টিপে দিল। প্রিয়ন্তি রাগে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। বেহায়া দেখেছে। কিন্তু মাহতিমের ন্যায় চূড়ান্ত রকমের বেহায়া জীবনে আর একটাও দেখেনি প্রিয়ন্তি। আজ সবার সামনে এত অপমান করল, অথচ মাহতিমকে দেখো! এখনো কি সুন্দর হেসে যাচ্ছে। যেন প্রিয়ন্তি ওকে সবার সামনে অপমান করেনি। বরং চুমু খেয়েছে। সেই চুমুর স্বাদে অন্ধ হয়ে আবার মাহতিম পিছুপিছু এসেছে প্রিয়ন্তির। কবে শুধরাবে এ ছেলে?
_______________________
মাহতিম বন্ধুদের আড্ডায় বসে সিগারেট ফুঁকছে। সিগারেটে চোখ বন্ধ করে এক টান দিয়ে, মাথা উচুঁ করে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছাড়ছে। ধোঁয়ার কুন্ডলি আকাশের দিকে উড়ে যাওয়ার আগে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। বিদঘুটে গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশে। সিগারেটের ধোঁয়ায় গন্ধটা ভীষন নেশাক্ত। তবে প্রিয়ন্তির মত নয়। মাহতিম ঠোঁটের ডগা থেকে সিগারেট হালকা সরিয়ে বন্ধুর দিকে চেয়ে বলল,
‘ সিগারেটের নেশাও তো প্রিয়ন্তিকার নেশা কাটাতে পারছে না রে। সিগারেটের চেয়েও বেশি নেশা দ্রব্যের নাম বল। ‘
ওয়াহিদ বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ মদ খা। নেশা হয়ে যাবে। ‘
‘ ধুর। মদ হারাম। না হলে খেতাম। ‘
‘ মদ হারাম হলে প্রেম কি? ‘
ওয়াহিদের কথা শুনে মাহতিম আড়চোখে তার দিকে তাকাল। আবার সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে আকাশের দিকে ধোঁয়া উড়াতে লাগল। ওয়াহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এক মেয়ের জন্যে নিজেদের প্রাণের বন্ধুকে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখে ভালো লাগছে না আর। ইচ্ছে করছে, প্রিয়ন্তিকে তুলে নিয়ে এসে বন্ধুর সাথে কাবিন করিয়ে দিতে। একবার এক প্রস্তাব তুলেছিল মাহতিমের সামনে! কিন্তু সত্যবান মাহতিম কি বলেছে?
‘ না, আমি চাই আমার প্রিয়ন্তিকা নিজ ইচ্ছায় আমাকে বিয়ে করুক। এভাবে জোড় করে আমি ওকে পেতে চাই না। ‘
কেন? জোর করলে যে প্রেম হয় না কে বলেছে তাকে? বিয়ের পর সকল মেয়েদের মনই নরম হয়ে যায়। বিয়ের আগে ছেলেকে যতই অপছন্দ করুক, বিয়ের পর স্বামীর জন্যেই পাগল হয়ে যায়। এটাই নিয়ম। অথচ আজ প্রায় দু বছর ধরে এ সামান্য কথাটা বুঝতে পারছে না মাহতিম। এ্যাহ! জোর করবে না? জোর না করলে প্রিয়ন্তি কখনো আসবে ওর কাছে? কখনো না। কি ঘাড়ত্যারা মেয়ে। একবার বলেছে ঘৃ”ণা করে অর্থাৎ ঘৃ”ণাই করে। ওর ঘৃ”ণাপূর্ন মনে ভালোবাসা ফুটাতে মাহতিমের জনম যাবে। অথচ এটা কি মাহতিম বুঝে!
‘ ওয়াহিদ, ওই শা”লাদের খবর পেয়েছিস? ‘
ওয়াহিদ বলল,
‘ কারা? ওই নেতা? ‘
‘ নেতা বলবি না। স্পষ্ট ভাষায় বলবি, কু”ত্তার বাচ্চা। সাহস কতবড় দেখেছিস? আমার প্রিয়ন্তিকাকে শাসায়? এদের চোখ যদি আমি না তুলে নিয়েছি, তবে আমার নাম মাহতিম ইয়াদ না! ‘
ওয়াহিদ একটা পাথর রাস্তা থেকে তুলে আঙ্গুল দিয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে আবার ক্যাঁচ করতে লাগল। একপ্রকার খেলতে লাগল পাথর দিয়ে। মাহতিম কিছুক্ষণ থেমে বলল,
‘ যাবি এক জায়গায়? ‘
ওয়াহিদ সঙ্গেসঙ্গে দু কদম পিছিয়ে গেল। দুহাত মাহতিমের বুকের উপর রেখে বাঁধা প্রধান করে বলল,
‘ না, ওদের মা”রবি না তুই। ডে”ঞ্জারাস কিন্তু এরা। ‘
মাহতিম মৃদু হাসল। নিজের সামনে থেকে ওয়াহিদকে সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। সিগারেটের শেষ অংশটুকু পায়ের তলায় ফেলে জুতো দ্বারা পি”ষে ওয়াহিদের কাঁধে হাত রাখল। চোখ টিপে বলল,
‘ হাতের শক্তি আরো একবার পরীক্ষা করা যাক, মামা! ‘
ওয়াহিদ আকাশের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে আবার মাহতিমের তাকাল। নিজের কাঁধে থাকা মাহতিমের হাত সরানোর চেষ্টা করে অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘ মামা, না বলছি কিন্তু আমি। তুই সত্যিই একদিন মা”রা খাবি। সঙ্গে আমারেও ফাঁ”সাবি। ‘
মাহতিম জোর করে ওয়াহিদকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল বাইকের দিকে। যেতে যেতে বলল,
‘ ফাঁসবি। সমস্যা কি? বন্ধুর জন্যে এটুকু করতে পারবি না? ‘
ওয়াহিদ নিচের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে,
‘ হ্যাঁ। পরে ওই নেতার দল আমার চৌদ্ধগুষ্টিরে ধইরা পি”টাক। আল্লাহ! এক মাইয়ার লাগি আর কতকিছু যে করতে হবে। ‘
#চলবে