প্রেম পিয়াসী পর্ব -২৭+২৮+২৯+৩০

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব________২৭.

রাতের অন্ধকারগুলো কেমন ঘাপটি মে//রে আছে ঝোপঝাড়ে। ইলহামের এলোমেলো পদক্ষেপ উদ্দেশ্য হীন পথে অগ্রসর হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। বিয়ের সাজে সজ্জিত তার সর্বাঙ্গ। লাল বেনারসিতে মুড়ে আছে শরীর। গলায়,কানে, হাতে স্বর্ণের অলংকার গুলো ঝিলিক তুলছে ক্ষণেক্ষণে। ঠিক যখন ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলো এসে পড়ছে তারউপর। বুকের উপর ভারী এক পাথর চেপে আছে! বারবার বুক ফেটে কান্না আসছে এই ভেবে, “রাদ তাকে এই ভাবে ঠকাতে পারলো?” এখনোও সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না! মনে হচ্ছে তার চোখ তাকে ধোকা দিচ্ছে।

হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে তার চোখ তাকে সত্যি ধোঁকা দিয়েছে। তবে আজ নয়, বরং গত তিনমাস ধরে। রাদের তার প্রতি গভীর ভালোবাসা, তাকে কাছে পাওয়ার জন্য ম/রি/য়া হয়ে থাকা.. সবটাই তার চোখের ধোঁকা ছিলো। তার নিজের চোখ, নিজের মন খুব ভয়ানক রকমের ধোঁকা দিয়েছে তাকে।

হাঁটতে হাঁটতে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে পড়ে ইলহামের ক্লান্ত পা জোড়া। স্থবির হয়ে যায় তার সমস্ত অনুভূতিগুলো। আবারও ডুকরে কেঁদে ওঠে ভেতরটা। ওমনি পা জোড়া ভে//ঙে আসতে চায়। দাঁড়িয়ে থাকাও এখন দুঃসাধ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে বয়ে চলা তীব্র ঝড় গুলো উপচে আসতে চায় বারবার। আর সহ্য করতে পারেনা ইলহাম। হাঁটু মুড়ে ধপ করে বসে পড়ে খোলা প্রান্তরে। দূর-দূরান্তে একটা মানবের পদচিহ্ন অব্দি নেই। হ্যাঁ, ঠিক এমনই একটা নির্জন জায়গা খুঁজছিলো সে। যেখানে একদম একা, নিরিবিলি নিজের সঙ্গে নিজের দুঃখ গুলোকে ভাগ করতে পারবে।

»রাত সাড়ে আটটা। অনন্যার জোড়াজুড়ি এবং জীবনের সবচেয়ে স্পেশাল মুহুর্তটা স্বরন করে রাখার খাতিরে অল্পস্বল্প মেকাপ দিয়েছে ইলহাম। তাছাড়া লাল বেনারসির সাথে মিল করে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক পড়েছে। মাথার টিকলিটা বরাবর দুই আঙ্গুল জায়গা রেখে কপালে লাল টিপটা লাগাতে লাগাতে অনন্যা মুগ্ধতা নিয়ে মুচকি হাসলো।

—-“ভাইয়ার পছন্দকে লাখো-কোটি সালাম ভাবি। একেই বোধহয় বলে জহরীর চোখ। ভাইয়া সত্যি বড় ভাগ্য করে তোমায় খুঁজে পেয়েছে। নয়তো এমন লক্ষি-পুতুলের মতো বউ সবার কপালে কিন্তু হয়না।”

ইলহাম নতজানু হয়ে লজ্জা মিশ্রিত হাসলো। মাথার ঘোমটা টানার চেষ্টা করে বলল,

—-“আমি এটা মানিনা। আমার মনে হয়, আমিই ভাগ্য করে পেয়েছি তাকে। নয়তো, আমার মতো এমন একটা পো/ড়াকপালির ভাগ্যে এতো ভালোবাসা কি করে জুটলো?”

বলে মলিন হাসলো ইলহাম। অনন্যার মুখটা কালো হয়ে এলো। কিন্তু মন খারাপ মনে রাখলো না। উত্তরের ঝাপটা হাওয়া এসে মন খারাপ গুলো শুষে নিয়ে গেলো যেন। দুঃখ ভুলে আমোদিত গলায় বলে উঠলো,

—-“জানো ভাবি, আমার ভীষণ হিং//সে হয়.. আবার একরাশ মুগ্ধতায় মনটা বিগলিত হয়ে যায়। আমি মাঝেমাঝে অবাক হই, ভাইয়া তোমায় যে কি পরিমাণ ভালোবাসে! যাকে বলে ভ/য়া/ন/ক!”

ইলহামের ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হয় বিমুগ্ধতায়। লজ্জায় লাল আবরণে নিমজ্জিত হয় মুখবিবর। রাদের ভালোবাসার কোনো সংজ্ঞা হয়না। তার ভালোবাসার একটাই নাম। প্রেম পিয়াসী। আকুল প্রেমে পিয়াসু সে। উন্মাদের ন্যায় তার ভালোবাসা।

—-“তোমাকে যে কতটা সুন্দর লাগছে ভাবি, আমিই তো চোখ ফেরাতে পারছিনা। ভাইয়া দেখলে যে কি করবে!”

কথাটা বলে মুখ টিপে হাসলো অনন্যা। বাহানা এমন যেন, সাজগোজের জিনিস গুলো গোছাতে সে মহা ব্যস্ত। ইলহাম চোখ জোড়া গোলাকার করে তাকালো ওর পানে। কিন্তু সেদিকে যেন ওর কোনো খেয়ালই নেই।

—-“অনু.. একটু শুনবে?”

পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো প্রণয়ের গলা। অনন্যা একটা পালানোর পথ খুঁজে পেলো।

“যাই” (গলা উঁচিয়ে)

বলেই দৌড়ে গেলো। ইলহাম ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আপন মনেই হাসলো। অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নায় নিজেকে একবার ভালো করে দেখে মনেমনে বলল,

—-“কি আর করবে! নি/র্ঘা/ত অজ্ঞান!”

বলেই শব্দ করে হাসলো। নীচ থেকে বেশ কোলহল ভেসে আসছে। উচ্চস্বরে হাসাহাসি করছে রাদের বন্ধুরা। সবার একটাই আক্ষেপ, রাদ তার নিজের বউকে দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে করে ফেললো, অথচ তারা এখনও একবারও বিয়ের পিড়িতে বসতে পারলোনা। ওদিকে প্রণয়টাও বিয়ে করে ফেললো। রাদের বেস্ট ফ্রেন্ড, আরশাদ! সেও তার ভবিষ্যত বউকে প্রপোজ করে ফেলেছে। একমাত্র তারাই পিছিয়ে আছে।

ইলহাম নিজের ঘরে বসেই তাদের হাসি-ঠাট্টা শুনতে পাচ্ছে। তবে, নীচু স্বরে বলা কথোপকথন গুলো কানে আসতে বেশ বাঁধা পাচ্ছে। ইলহাম সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ করলোনা। এক বুক দীর্ঘশ্বাস আওড়ে চোখ বুঁজে নিজের মায়ের অস্পষ্ট মুখখানা দেখতে চেষ্টা করলো। আজ তার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ দিন। অথচ, মা কাছে নেই। কাছে নেই, কিন্তু দূরেও যে নেই। কোথাও নেই মা।

টুং করে এক শব্দ ভেসে উঠলো কানের পর্দায়। ইলহামের ঘোর কাটে সেই শব্দে। কিঞ্চিৎ চমকায় চোখের ঘন পল্লব গুলো। একাধারে বার কয়েক পলক পড়ে চোখের। পাশ ফিরে বিছানার উপর তলিয়ে থাকা ফোনটা হাতে উঠিয়ে আনতে আনতে আরও কয়েকবার একই শব্দ ভেসে ওঠে। ইলহামের কৌতূহল বেড়ে যায়। মনেমনে অদ্ভুত শিহরণ জাগে রাদের কথা ভেবে। বিয়ের কয়েক মুহুর্ত পূর্বেও বেশ কনফিডেন্স নিয়ে তাকে ম্যাসেজ করা মানুষটা রাদ ছাড়া কেউ হবেনা।

কিন্তু না! তার ভাবনা এবং অনুভূতি কোনোটিই সঠিক হলোনা। বরং উল্টো হলো। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ঠিক ২০+ ম্যাসেজ দেখা যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ লিস্টে। ইলহামের হাস্যজ্বল মুখ খানা ছেপে যায় আঁধারে। গুমোট বাঁধে মন পুকুরে। অদ্ভুত এক অস্বস্তি দলা পাকিয়ে আসে ভেতরটায়। “কে?” ছোট্ট শব্দের এই প্রশ্নটি নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে। উত্তর নেই। অধীর হয়ে উত্তরটা জানতে চায় ইলহাম। তাই কৌতূহল এবং অস্থিরতা দমাতেই স্ক্রিনে ট্যাপ করে ঢুকে পড়ে ইনবক্সে। একাধারে ২৫টি ছবি দেখাচ্ছে ওখানটায়। ইলহামের কুঁচকানো কপাল খানা আরও কুঁচকে পড়ে। বিনা বাঁধায় প্রথম ছবিতেই ট্যাপ করে ওপেন করে। কিন্তু ছবিটা ওপেন হতে হতে যা দৃশ্যমান হয়, তাতে এক মুহুর্তে ইলহামের দম আঁটকে ম//রে যাওয়াটা বেজায় সহজ করে তোলে। একের পর এক সেই একই ছবি। নিজের চোখকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নি/কৃ/ষ্ট বস্তু বলে দাবী করতে ইচ্ছে করে ইলহামের। কেন সে কৌতূহল নিয়ে এমন কিছু দেখতে গেলো। রাদের মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কারণে মেয়েটার মুখটা ব্লার করা। নীচে লেখা, “আমি রাদের বউ। আমাদের বিগত তিনবছর পূর্বে বিয়ে হয়েছে।”

ব্যস, আর কিছু পড়া হয়না ইলহামের। হাতের কেন্দ্র গলিয়ে ফোনটা পড়ে যায় মেঝেতে। বুকের ভেতরটা কেমন করতে থাকে ওর। মনে হয়, কেউ ক্রমাগত ছু/রি/কা/হত করে চলেছে! কেমন এক বি/ষা/ক্ত ব্যা/থা। দম বন্ধ হয়ে আসে ক্রমশ। কেমন অসহায় মনে হয় নিজেকে। বিরবির করে আওড়ায়, “এমন করে না ঠকালেও তো হতো!”«

—-“মাআআ..(চিৎকার করে) মা-গো! মা দেখতে পাচ্ছো তুমি? তুমি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তোমার মেয়েটা আজও একা! মিশমিশ আর তুমি তো খুব শান্তিতেই আছো! একমাত্র অভাগী করলে আমায়!! তোমার মেয়েটাকে। কি এমন পাপ ছিলো আমার? তোমার মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই পাপ ছিলো আমার? বলো না মা? এটাই কি অ/ন্যা/য় হয়েছে? কিন্তু মা, এসবে যে আমার হাত ছিলো না! কারণ, উপরওয়ালা যে এটাই চেয়েছিলেন.. তাহলে আজ এমনটা কেন হলো? কেন হলো মা?”

চোখের বাঁধ আজ মানছে যেন। বৈশাখী ঝড়ের ন্যায় তান্ডব হচ্ছে বুকের ভেতরটায়। কেমন করে বাঁচবে এই অকিঞ্চিৎকর, অত্যল্প অনুভূতিগুলো নিয়ে! বাঁচার যে আর কোনো মানে রইলোনা। ঘৃ/না হচ্ছে নিজের প্রতি! কেন, একটু ভালো থাকার লোভ সামলাতে পারেনি।

____________________________________________

রাদের ফোনটা সেই তখন থেকে বেজেই চলেছে। সেদিকে তার হুঁশ নেই। গাড়ির গতি মাত্রাতিরিক্ত! অকেজ মস্তিষ্ক এবং র/ক্তা/ক্ত হাত জোড়া এদিক সেদিক স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে কেবল একটা মানুষকেই খুঁজছে। আর সে হলো ইলহাম। গত দুই-ঘন্টা কম করে হলেও শ’মাইল পথ হন্যে হ’য়ে ঘুরেছে ইলহাম কে খোঁজার জন্য। কিন্তু কোথাও যে পেলোনা মেয়েটাকে।

কাজী সাহেবের আগমনে বর-কনেকে একসাথে হওয়ার অনুনয় জানানো হলে ইলহামকে নিখোঁজ বলে সম্মোধন করে অনন্যা। তার চোখ টলমল করছিলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কনা গুলো ঠিক দেখতে পাচ্ছিলো রাদ। একরাশ ভ/য় যে ওকে ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো তা ওর কান্না-জড়ানো গলা শুনে বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারো।

—-“ভ্ ভাবি কোথাও নেই ভাইয়া! গোটা বাড়ির এক কোনাও বাদ রাখিনি। কিন্তু ভাবি-কে কোথাও পাওয়া যায়নি।”

রাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। বন্ধুদের সাথে হাসিতে মজে থাকা মনটা হঠাৎ দু’টুকরোতে পরিণত হলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলোনা সে। এটা কি আদৌও সম্ভব কখনোও? তার ইলহাম তাকে রেখে চলে গেলো?

বিকট শব্দে কেঁপে উঠল ধরণী। গাড়ির ব্রেকে কাজ করছিলোনা অনেক্ষন। অবশ্য সেদিকে রাদের খেয়াল ছিলোনা। আকস্মাৎ একটা গাড়িতে মুখোমুখি সং/ঘ/র্ষ হতে সে তার গাড়ি থেকে ছিটকে পড়লো রোডের পাশে। হাত-পা কেটে জখম হওয়ার বাদ রাখেনি কোথাও! তবে তখনও তার হিতাহিত জ্ঞান নিতান্তই শূন্য। ঝাপসা চোখে তখনও ইলহামের মুখটাই ভেসে চলেছে অদৃষ্টে।

চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_________২৮.

প্রভাতের একফালি মিষ্টি রোদ মুখের উপর পড়তেই চোখ কুঁচকে গেলো রাদের। ফিনাইলের বিশ্রী গন্ধটা তখনই এসে বারি খেলো নাকের ডগায়। একটা ভরাট গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো তার। চোখ-মুখ কুঁচকে পাশ ফিরে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই এলেমেলো তারে টান লেগে আবারও শুয়ে পড়তে হলো তাকে। আধাআধি শোয়া যাকে বলে। একরাশ বি/র/ক্তি/র স্তূপ ঠেলে চোখ জোড়া টেনে মেলে দিলো। অতঃপর অক্ষিপটে স্পষ্ট দেখতে পেলো ক্যানেলার চিকন তারের ন্যায় পাইপটা। লাল র/ঙে আচ্ছন্ন সেই পাইপ। অর্থাৎ, তাকে র//ক্ত দেওয়া হচ্ছে। মাথার ভেতরটা যেন কেটে দু’টুকরোতে পরিণত হয়েছে ঠিক, ওমনই একটা টান লাগাতে অন্যহাতটা তুলে মাথা চাপলো। মাথা চাপতে গিয়ে আরেক প্রশ্ন.. মাথায় কি হলো?

সবটা মনে পড়তে অনেকটা সময় ঠিক এমন করেই কেটে যায়। রাদ হাতের ক্যানেলা খুলে ফেলে দেয় নীচে। অতঃপর, ধীরেধীরে সোজা হয়ে বসে। তীব্র য/ন্ত্র/ণা/য় মাথার ঘিলু-টিলু বেরিয়ে আসবে যেন। দাঁতে দাঁত চেপে হজম করছে ব্যা/থাগুলো। তার চেয়েও ভ/য়া/ন/ক রা/গ এবং তীব্র য/ন্ত্র/ণা হচ্ছে বক্ষঃপিঞ্জরে। মেয়েটা রাত থেকে নিখোঁজ! ঠিক কোথায় গেলে খুঁজে পাবে তাকে?

—-“এ-কি! তুই হাতের ক্যানেলা কেন খুললি? জানিস কতটা র/;ক্ত ঝড়েছে শরীর থেকে?”

হাতে প্রেসক্রিপশন এবং ঔষধের একটা প্যাকেট নিয়ে কেবিনে ঢুকছিলো প্রণয়। আকস্মাৎ রাদের এহেম অবস্থা দেখে ভ/য়ে কপাল ফুলে উঠলো তার। প্রণয়ের পাশে আকাশ এবং বেলীকেও দেখা যাচ্ছে। ওরা রাদের স্কুল ফ্রেন্ড। বর্তমানে এই হসপিটালের বিশিষ্ট দু’জন ডাক্তার। কথাটা আকাশ বলেছে।

—-“এসব কি রাদ? দিস ইজ সো আনফেয়ার। রাতে তোর কি অবস্থা ছিলো.. ইউ হ্যাভ ন্যো আইডিয়া!”

বলে উঠলো বেলীও। বিস্ময়ে তার কপাল সরু হয়ে আছে। অর্থাৎ কুঁচকে গেছে বেশ খানিকটা।

রাদ মাথা নীচু করে কিছু ভাবছে। ওদের কথা তার কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না।

—-“ওর প্রেশারটা চেক করে দে আকাশ! আমি ঔষধ গুলো দেখছি।”

বেলীর কথায় আকাশ হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে এগিয়ে গেলো রাদের কাছে। প্রেশার মাপার যন্ত্রটা হাতে তুলতে তুলতে রাদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। প্রণয়ের উদ্দেশ্যে বলল,

—-“ভাগ্যিস, ওর গাড়িটা জঙ্গলের পাশে ছিলো! তাই ছিটকে বেরিয়ে যেতে জঙ্গলের ভেতর পড়ে। নয়তো.. যে হালে এ/ক্সি/ডে/ন্ট/টা হয়েছে ভাই! কপালে নির্ঘাত মৃ//ত্যুই ছিলো।”

প্রণয়ের বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাসের আনাগোনা মেলে। আকাশ নিশ্চুপ হয়ে রাদের প্রেশারটা চেক করে। হাই প্রেশার। আর শরীরের যে অবস্থা, কম করে হলেও আরও ৩-৪দিন এখানে থাকতে হবে।

—-“বেলী? এমডি স্যারের সঙ্গে রাদের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছিলি? কি বললো স্যার?”

আকাশের প্রশ্নে মুখ তুলে তাকায় না বেলী। বরং ঔষধ গুলো দেখতে দেখতে মাথা ঝুঁকে রেখেই জবাব দেয়,

—-“হু বলেছি। রাদের নাম বলাতেই কাজ হয়ে গেছে। পুলিশ কেস হওয়ার চান্স নাইন্টি পার্সেন্ট থাকলেও এখন টেন পার্সেন্টও নেই।”

—-“ওকে। রাদ? মাত্র দু’টো দিন এখানে থাক প্লিজ। তোর কিন্তু প্রচুর ব্লা/ড লস হয়েছে। সেগুলো ফুলফিল করতে মিনিমান পাঁচ ব্যাগ ব্লাড দরকার। প্লিজ ভাই, মনের দুঃখ বা রা/গ এই ক্যানেলার উপর দেখাসনা!”

—-“হ্যাঁ রে রাদ! আকাশ কিন্তু একদম ঠিক কথা বলেছে! আর আমি একটা কথা বুঝতে পারছিনা, তুই হঠাৎ করে এমন বেসামাল হয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলি কবে থেকে? তুই তো এমন ইরেসপন্সিবল ছিলিস না কখনো?”

রাদ সেই থেকেই মাথা নীচু করে ভেবে যাচ্ছে ইলহামের কথা। বরাবরের মতো এবারেও সে কিছুই শুনতে পায়নি ওদের কথা। শুনতে পায়নি তেমনটা নয়, বলা বাহুল্য শুনতে চায়নি।

—-“আচ্ছা ছাড়! রেস্ট নে এখন। দুপুরে দেখা হচ্ছে।”

এই বলে চলে যায় বেলী। আকাশ ওর হাতের ক্যানেলাটা পূণরায় লাগিয় দিলো। পরক্ষনে স্মিত হেসে সেও চলে গেলো। ওরা দু’জন বেরিয়ে যেতেই ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রণয়। দরজার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে এলো রাদের কাছে। নিরাশ, ভাঙা গলায় বলল,

—-“চিন্তা করিসনা ভাই! আমরা ঠিক ভাবিকে খুঁজে পাবো।”

এতক্ষণে বোধকরি রাদের কানের পর্দায় এক তীক্ষ্ণ শব্দের আনাগোনা মিলল। অস্থির দৃষ্টি খানা প্রণয়ের পানে নিক্ষেপ করলো। কিছু বলার চেষ্টা করলো। তবে তার পূর্বেই তার মুখের কথা কেড়ে নিও বলে উঠলো প্রণয়,

—-“তবে অন্য একটা খবর পাওয়া গেছে!”

রাদ প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকালো। প্রণয় পূর্বের ন্যায় পূণরায় বলল,

—-“ভাবির ফোনে তোর আর ভাবির পুরনো কিছু ছবি পাওয়া গেছে। অনু বলল, এই ছবি গুলো তাকে কেউ হোয়াটসঅ্যাপ করেছে। কৌতুহল বশত অনু ভাবির হোয়াটসঅ্যাপ ঘাঁটলে দেখতে পায়, কেউ খুব চালাকির সাথে এই ছবি গুলো পাঠিয়েছে ভাবিকে। ভাবির মুখটা ব্লার করা। যেটাই ভাবির ভেঙে পড়ার কারণ। জানিস? ছবির নীচে সুন্দর করে লিখে দিয়েছে “আমি রাদের বউ”। কেউ খুব চালাকির সাথে করেছে এই কাজটা। আর সে খুব ভালো করেই জানে ভাবির পুরনো কথা গুলো মনে নেই। তার মুল উদ্দেশ্যই ভাবিকে আর তোকে আলাদা করা! আচ্ছা? এই কাজ টা কে করলো?”

—-“অন্তু!”

রাদের গম্ভীর কন্ঠটা ভেসে উঠলো। প্রণয় পাশ ফিরে তাকালো রাদের পানে। তিক্ত স্বরে বলল,

—-“অন্তু?”

—-”হু! অন্তু। রনিকে একটা কল দে। টানা তিনদিন কোনো খাবার ব্যাতীত অন্তুকে গোডাউনে রাখার অর্ডার করবি। বলবি আমি বলেছি।”

প্রণয় স্থীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাদের দিকে। ঘাড় কাত করে সম্মতি দেয় তার আদেশে।

____________________________________________

রাদের বড় কালো গাড়িটা একটা কুটিরের সামনে থামতেই হৈচৈ করতে লাগে বাচ্চারা। এতো বড় গাড়ি তারা আগে কোনোদিন দেখেনি। সব গুলো বাচ্চা একজোট হয়ে ছুটে এলো এদিকটায়। রাদ সেদিকে ভাবাবেগ শূন্য। তার অস্থির দৃষ্টি এঁটে আছে কুটিরের ভেতরে। দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে একটা বাচ্চাকে কাছে টেনে এনে জিজ্ঞেস করলো,

—-“এটা কি মোতালেব সাহেবের বাসা?”

বাচ্চা টা তুমুল গতিতে উপরনীচ মাথা নাড়ে। অর্থাৎ হ্যাঁ। মুখ জুড়ে তার আত্মবিশ্বাসের জোড়ালো হাসি। হেসেই জবাব দেয় পূণরায়,

—-“হ এইডাই মুত্তালেব চাচার বাড়ি।”

কথাটা শ্রবণগোচর হতেই বুকের উপর থেকে একটা ভারী বস্তু যেন গলে গেলো। রাদ একহাত কপালে চেপে বড় করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো বারকয়েক।

দু’দিন পেরিয়ে গেছে। শহরের আনাচে-কানাচে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি ইলহামকে। রাদের ভ//য় ক্রমশ বাড়ছিলো। বড় কোনো ক্ষ//তি হয়ে যায়নি তো ইলহামের? গতকালই একটা বিজ্ঞাপনে ছাপিয়েছে ইলহামের ছবি। নিখোঁজ লিখে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বিজ্ঞাপন পাবলিশড হওয়ার ১২ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাশিত কল টি পেয়েছে রাদ। ইলহাম এই মুহুর্তে একটা অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত। সেদিন রাতে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতেই ঢুকে পড়ে এই গ্রামে। অতঃপর শুরু হয় তুমুল বর্ষণ। সারারাত এক টানা ভিজতে থাকে সেই কাঁটার বর্ষণে। এক পর্যায়ে তীব্র জ্ব/রে জ্ঞান হারায় ওখানেই। ভোর হলে তাকে কয়েক জন লোক দেখতে পেয়ে নিয়ে যায় নিজেদের ঘরে। অতঃপর সেদিন থেকেই তাদের সাথে আছে ইলহাম। ওমন অজপাড়ায় ডাক্তার পাওয়াটা দূর্লভ বস্তু। তাদের চিকিৎসা তারা নিজেরাই করে। সুতরাং ইলহামের চিকিৎসাও তারা নিজেরাই করেছে ঘরোয়া উপায়ে।

রাদ এগিয়ে যায় ভা/ঙাচোরা কুটির টির দিকে। রাদ এগোতে এগোতে বেরিয়ে আসে এক বয়স্ক লোক। তার বেরিয়ে আসার কারণ অবশ্য ঘরের বাইরে বাচ্চাদের অহেতুক কোলাহল থামানো। কিন্তু বেরিয়ে আসতে এক অপরিচিত লোককে দেখে তার পা জোড়া থেমে পড়ে। এক তীক্ষ্ণ চাহনিতে খানিটা সময় পর্যবেক্ষণ করতে করতে হঠাৎ বলে ওঠে,

—-“আপনে রাদ স্যার? তাই তো!”

রাদ বয়স্ক লোকটির প্রশ্নে একটু বিভ্রান্তিতে পড়ে। আশেপাশে একবার তাকায়। চোখ ঘোরায়। অতঃপর শার্টের কলারটা টেনে ঠিক করার বাহানায় বলে,

—-“জি। আমি রাদ। মিহাদ আবরিশাম রাদ।”

লোকটা তাজ্জব বনে গেলো যেন। অবিশ্বাসের দৃষ্টি মেলে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে পূর্বের কৌতূহল নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,

—-“স্যার আপনে এইহানে! কোনো দরকার স্যার? কন, আপনেরে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?”

রাদ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করলো,

—-“আপনি কি মোতালেব সাহেব?”

লোকটা একটু ভাবনায় পড়লো। জড়তা নিয়ে জবাব দিলো,

—-“জে স্যার! আমিই মোতালেব।”

—-“আপনিই আমাকে কল করেছিলেন বিজ্ঞাপনের নাম্বার টা থেকে! তাই তো?”

মোতালেব সাহেব কপাল সরু করলেন। মনে করার চেষ্টা করে বললেন,

—-“এই নতুন বউ আপনের স্যার? যে মাইয়্যারে আমরা পরশুদিন ভোরে উদ্ধার করছি!”

রাদ অসহায় কন্ঠে বলে,

—-“জি। ও আমার বউ।”

মোতালেব সাহেবের ঝাটকা লাগা কমেনা। বরং ক্রমশ বাড়ে। তিনি হঠাৎ গলা উঁচিয়ে বললেন,

—-“কই গো হুনছনি? নতুন বউরে নিতে আইছে তার সোয়ামী।”

বলতে বলতে রাদের পানে তাকিয়ে তৃপ্তি দায়ক হাসে মোতালেব সাহেব। রাদকে ভেতরে আসার অনুরোধে বলে,

—-“দুফরের ভাত এহনো খায়নাই স্যার। আমার গিন্নি এই যে ভাত বসাইলো।”

রাদ লোকটার পেছন পেছন ঢুকে ছোট্ট কুটিরটায়। তুমুল বর্ষণের তোরজোড় কমে গেলেও তার মাটির ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব এখনও কাটেনি। কিছু জায়গায় তো পা ফেলাটাও ক/ষ্টসাধ্য।

চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______২৯

একখানা ভাঙাচোরা পুরনো খাটে লাল বেনারসি পড়ুয়া একটা মেয়ে বসে আছে পা তুলে। তার লম্বা কেশগুলো পুরোটাই বাঁধন হারা এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে তাকে ঘিরে। মাথাটা নিচু করে থাকায় এলোকেশি গুলো তার মুখের একপাশটা প্রায় ঢেকে রেখেছে। মেয়েটাকে দেখতেই স্তব্ধ হলো রাদের হৃৎস্পন্দন। টানা দুটো দিন চোখের আড়ালে ছিলো মানুষটা। ঠিক কেমন ছিলো জানেনা। আদৌও ভালো ছিলো কিনা সে কথাও জানেনা।

—-“আহেন স্যার, আহেন। কই গো, গেলা কই? দেইখ্যা যাও গো?”

মোতালেব সাহেবের আমোদিত গলা ভেসে এলো ইলহামের কানে। অন্যমনস্ক দৃষ্টি জোড়া উপরে তুলতেই চমকে উঠলো রাদকে দেখে। ব্যাপার টা নিছক তার দুঃস্বপ্ন বলে কাটিয়ে দিতে চাইছে তার মন। কিন্তু মস্তিষ্ক ঠেসে ধরলো সত্যিটা দাবী করতে।

কুটিরে মোট একখানাই কক্ষ। এক কক্ষেই সকল জোগাড়। মোতালেব সাহেবের বিবি ঘরে ঢুকলেন পেছনের দরজা থেকে। আঁচলের কোনে হাত মুছতে মুছতে ব্যস্ত পদাচারণে হেঁটে এলেন। ঘরে নিজের স্বামী ব্যতীত দ্বিতীয় পুরুষের উপস্থিতিতে স্বভাব সুলভ মাথার ঘোমটা টা টেনে দিয়ে মুখে আঁচল চেপে দিলেন। স্বামীর পানে দৃষ্টি রেখে ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলেন ‘কে?’

মোতালেব সাহেব ঠোঁটের কোনে হাসিটুকু প্রসারিত করে এগিয়ে গেলেন বউয়ের কাছে। রাদকে ইশারা করে পরক্ষনে ইলহামকে ইশারা করলেন। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন,

—-“নতুন বউয়ের সোয়ামী।”

মহিলার চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। অবাক হওয়ার চেষ্টা করে সেও স্বামীর ন্যায় গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন,

—-“কি কইতাছো? এদদিন পর কইথেইক্যা আইলো?”

—-“এদদিন কই হইলো? মাত্র দুই দিন। তোমারে কাইলকা খবরের কাগজ পইড়া কি হুনাইলাম? নতুন বউরে নিয়া কেডা জানি নিখোঁজের বিজ্ঞাপন দিছে। ভুইলা গেছো?”

—-“ও হ হ! মনে পরছে,মনে পরছে।”

হঠাৎ মনে পড়ায় তার গলার স্বরটা বেশ জোরে শোনালে। তার কন্ঠে ঘোর কাটে রাদের। কিন্তু ইলহাম এখনোও ঘোরে ডুবে আছে। চারিপাশের কোনো বাহ্যিক শব্দ তার ঘোর কাটাতে সক্ষম হয়নি।

রাদ ধাপ ফেলে এগিয়ে গেলো ইলহামের দিকে। ইলহাম ভ/য় এবং জড়তায় বিছানার চাদর খামচে ধরে নড়েচড়ে বসতে লাগলো।

—-“স্যার? আপনেরা কথা কন। দুফরের খাওন কিন্তু না খাইয়ে যাইতে দিবাম না। খাইয়ে দাইয়ে ভরা পেটে রওনা হইয়েন।”

অমায়িক হেসে মোতালেব সাহেব কথাটা বলে প্রস্থান করলেন বউকে সঙ্গে করে। রাদ শুনেছে তাদের কথা। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মৃদু হাসলো। তারা চলে যেতেই পূণরায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইলহামের পানে। ইলহামের অস্থিরতা দূর থেকেই টের পাচ্ছে রাদ। কিন্তু, তাতে এই মুহুর্তে তার কোনো ভাবাবেগ নেই।

ইলহামের পাশে চুপটি বসলো রাদ। কোনোরূপ কথা না বাড়িয়ে ইলহামের গুটিয়ে রাখা হাতটা টেনে মুঠোবন্দি করলো। ইলহাম বাঁধা দিতে চাইলে হাতের জোর বাড়িয়ে দিলো রাদ। প্রায় অনেক্ষন চুপটি করে বসে রইলো দু’জনেই। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। তবে চোখে চোখে অনেক কথা! একজনের চোখে ঘৃ/না আর অন্যজনের চোখে একরাশ অসহায়ত্বতা। একজনের চোখে রাগ তো একজনের চোখে একরাশ দুঃখ। রাদ মাথা নীচু রেখে ইলহামের হাতটা বুকের সাথে চেপে রেখে হঠাৎ নীরবতা ঠেলে কেমন ভা/ঙা গলায় বলে উঠলো,

—-“আমার অপরাধ কি, সুইটহার্ট? আমি তোমাকে ভালোবাসি! এটাই কি আমার অপরাধ?”

রাদের চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে ভিজিয়ে দিলো ইলহামের উত্তপ্ত হস্তদ্বয়। ইলহাম কেমন করে কেঁপে উঠল। বড্ড বেশি অবাক হলো রাদ কাঁদছে ভেবে। আচ্ছা? পুরুষ কি এতো সহজে কাঁদতে পারে? পুরুষের কান্না কি এতো সহজ হতে পারে? পারেনা তো! একদম পারেনা।

রাদ বুঝতে পারলো তার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর একটু খানি দূরত্ব, তাকে মৃ//ত্যুর বুকে ঠেলে দিবে! কথাটা ভাবতেই যেন দম ব/ন্ধ হয়ে এলো তার। আকস্মিক ইলহামকে কাছে টেনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। সঙ্গে সঙ্গে আরও অগুনিত চোখের জল বিসর্জন হয়ে গেলো। বুকটা হাহাকার করে কাঁদতে লাগলো। উন্মাদের ন্যায় নিজের পাঁজরের হাড়কে নিজের করে পাওয়ার তীব্র দাবী জানালো। কারন, সে আর পারবেনা এমন করে বেঁচে থাকতে।

কাঁদছে ইলহামও! রাদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা জন্মেছে। কয়েকটা দিনেই মানুষটাকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছে তার সংজ্ঞা দিতে গেলে পেরিয়ে যাবে তার শতসহস্র বছর। হয়তো এর চেয়েও অত্যধিক। কিন্তু যখন মনে পড়তো, রাদের প্রথম ভালোবাসা অন্য কেউ! তখনই আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগতো না। একদম ইচ্ছে জাগতো না। হয়তো সেই প্রথম ভালোবাসার জন্যও ছিলো রাদের অতলস্পর্শ প্রচেষ্টা, পা/গলামি। সে মেনে নিতে পারছিলো না রাদের জীবনে ইলহাম ব্যতীত অন্য কেউ থাকতে পারে!

—-“আমাকে কেন ঠকালেন, রাদ? আমি তো আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সত্যিকারের ভালোবাসা হয়েছিলো আপনার প্রতি! তাহলে কেন ঠকালেন আমাকে? আমার কি অপরাধ ছিলো?”

কাঁদতে কাঁদতে গলা বসে গেছে ইলহামের। কাতর কন্ঠে কথাগুলো বলতে ভীষণ ক/ষ্ট হচ্ছিলো তার।

ইলহামের প্রশ্নে থমকে যায় রাদ। এর জবাব কি দিবে সে? সে তো তাকে কোনোদিন ঠকায়নি। এই কথা কি করে বিশ্বাস করাবে ইলহামকে?

—-“সুইটহার্ট, আমি তোমাকে ঠকায়নি। আমি তোমাকে কোনোদিন ঠকাতে পারিনা। কেবল এটুকু জেনে রাখো আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে কোনোদিন ঠকাতে পারিনা।”

—-“কেন মিথ্যে বলছেন আপনি! আমি কিন্তু সব জেনে গেছি।”

রাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো ইলহাম। পরক্ষণেই কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো কথাটা। রাদ অসহায়ের ন্যায় তাকালো ইলহামের র/ক্তি/ম মুখশ্রীতে। ইলহাম যে বড্ড বেশি ক//ষ্ট পাচ্ছে, সেকথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা রাদের। কিন্তু যখন ও আসল সত্যিটা জানবে তখন যে এর চেয়েও ভ/য়া/ন/ক রকমের ক/ষ্ট পাবে। এখন এই ক/ষ্ট টুকু কেবল মানসিক, কিন্তু তখন কষ্ট গুলো হবে শারিরীক। পুরনো কথা মনে করাতে গিয়ে সে আর কোনো ক//ষ্ট দিতে চায়না এই অভাগী কে।

—-“আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন, রাদ! শুধু আপনি নন ও বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ আমায় মিথ্যে বলেছে। আমি জানিনা কেন? আমায় কি অপরাধে আপনারা প্রত্যেকটা মানুষ এতো বড় একটা শা//স্তি দিলেন? আমি সত্যি জানিনা।”

বলতে বলতে আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো ইলহাম। রাদ দম ব/ন্ধ করে কয়েক মুহুর্তে বসে রইলো। জানেনা কি বলে মানাবে ইলহামকে। ঠিক কি বললে, ওর মনের ক্ষত গুলো ভরাট হবে।

—-“আমি তোমাকে ভালোবাসি। এবং আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এর চেয়ে বড় সত্যি আর কি জানতে চাও তুমি?”

ইলহামের বুকের ভেতরটা অসহায়ের মতো হাহাকার করে ওঠে। কাতর কন্ঠে পূণরায় বলে,

—-“আপনি কি ঐ মেয়েটাকেও একই ভাবে ভালোবাসতেন, রাদ? আমি এই সত্যিটাও জানতে চাই। দয়া করে আমাকে মিথ্যে বলবেন না।”

—-“যদি আমি সত্যিটা বলে দেই, তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে তো? আমার সাথে সারাজীবন দ্বিধাহীন ভাবে বাঁচতে পারবে তো? কারন, সত্যি হোক কিংবা মিথ্যে.. আমি তোমাকে কোনো মূল্যেই নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবোনা, সুইটহার্ট। আমার যেকোনো মূল্যে শুধু তোমাকেই চাই। যেকোনো মূল্যে।”

ইলহাম ভেতর থেকে ভে/ঙে পড়ে রাদের উত্তর ভেবে। কেননা, সে এই টুকু তো নির্ঘাত বুঝে নিয়েছে রাদ তার প্রথম ভালোবাসাকেও ভ/য়ং/ক/র রকমের ভালোবাসে।

—-“থাকবো! সত্যিটা বললে থাকবো আমি।”

শূন্য অনুভূতিতে কথাটা বলে ইলহাম। কারণ, সে জানে রাদ ছাড়া তাকে মাথার উপর আশ্রয় দেওয়ার লোকটাও নেই এই দুনিয়াতে।

—-“হ্যাঁ, আমি তাকেও একই ভাবে ভালোবাসতাম। আজও বাসি আর সারাজীবন বাসবো। তোমাকে ছাড়া যেমন বাঁচা সম্ভব নয়, তাকে ছাড়া যে আরও নয়। আমাকে বাঁচতে হলে এই দুটো অস্তিত্বই চাই সুইটহার্ট।”

ইলহাম নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকায় রাদের পানে। ওর আর কিছু জানার নেই।

—-“ভালোবাসো আমায়?”

—-“খুব ভালোবাসি।”

—-“থাকবে সারাজীবন আমার হয়ে?”

ইলহাম তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,

—-“আর কোনো পথ খোলা নেই।”

—-“অপশন নেই বলে থাকছো?”

ইলহাম না সূচক মাথা নাড়ে। জবাবে বলে,

—-“কথা দিয়েছি। তাই..”

ইলহামের গলার স্বর কেমন পাথর হয়ে আসে। এবারেও তা বুঝতে অসুবিধা হয়না রাদের। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবে,

“তোমার সমস্ত দুঃখ গুলোর অবসান একদিন ঠিক ঘটবে, সুইটহার্ট। কেবল সময়ের অপেক্ষা। একটু সয়ে যাও প্লিজ। আমি তোমার বেলাতে বরাবর স্বার্থপর। আমি পারবোনা, তোমার দুঃখ কমাতে তোমায় দূরে ঠেলে দিতে। আমার দ্বারা সম্ভব নয়। একদম সম্ভব নয়।”

চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ৩০

আজ রাদ-ইলহামের বিয়ের একমাস হতে চললো। এই এক মাসে এক কথায় হাসতে ভুলেছে ইলহাম। হাসে না,কাঁদে না,কম কথা বলে.. সব মিলিয়ে এক পা*থ*রে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে রাদ বার কয়েক বেলী এবং আকাশের সঙ্গে ইলহামের সমস্যা টা নিয়ে কথা বলেছে। এমনকি নাম-করা শহরের বড় বড় কয়েক জন ডাক্তারের পরামর্শও নিয়েছে। সবার একই কথা,’সব কিছু মনে করাতে গিয়ে ওর লাইফটা রি//স্ক না বানানোই বুদ্ধিমানের কাজ।’ বেশি চাপ পড়লে ব্রেন অ/কে/জো হয়ে পড়ার সম্ভবনা বেশি। যদি সবটা ইলহামের নিজের থেকেই মনে পড়ে, সেটাই ওর আর সবার জন্য মঙ্গলকর।

জীবন চলছে রঙ বিহীন, ধোঁয়াশাময়। সারাদিন একা ঘরে থেকে ইলহামের একটাই ভাবনা, “রাদের প্রথম ভালোবাসা দেখতে কেমন? রাদ তাকে এ-বাড়িতে কেন নিয়ে আসেনা? কারোর সাথে পরিচয় করানোর বেলায় কেন শুধু তাকেই ” আমার ওয়াইফ” বলে আখ্যায়িত করে? মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে অথচ একদিক থেকে ভাবতে গেলে রাদ মেয়েটার সঙ্গে অ/ন্যা/য় করছে। যে অ/ন্যা/য়ে/র কোনো ক্ষমা হয়না।

—-“ভাবি? চিলেকোঠার ঘরটা তুমি পরিস্কার করবার কয়েছিলা। পরিস্কার করা হয়ে গেছে। অনেক পুরানা বই-পত্র পাইছি। খালাম্মারে কইলাম, খালাম্মা কইলো ফালায় দিতে। তুমি কি কও?”

—-“সে কি! ফালাবে কেন? বই পত্র পুরোনো হলেই ফালাতে হবে? তুমি রেখে আসো। আমি দেখে মাকে জানাবো।”

—-“আইচ্ছা।”

শিরিন কোমরে বাঁধা ওড়নার পাড়টা খুলে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে চলে গেলো। ইলহাম শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে সবে। ভেজা চুলগুলোতে একটা গামছা পেঁচিয়ে পরনের কচুপাতা রঙের টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়িটা ঠিক করলো। কুঁচি ধরে, আঁচল টা ভালোভাবে এঁটে দিলো কাঁধে। মাঝখান থেকে ভাজ তুলে আরেকটা পার্ট তুলে দিলো কাঁধে। গোসলের পর মুখটা দেখতে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগে। এটা রাদই বলে তাকে। কথাটা মনে পড়তে হঠাৎ তাচ্ছিল্য হলো নিজের প্রতি। চোখের ল্যাপ্টানো কাজল তুলে নতুন করে কাজল পড়লো। কপালে লাল রঙের ছোট্ট একটা টিপ পড়ে নিজেকে একবার দেখলো আয়নায়। বিয়ের পর থেকে নিয়ম করেই শাড়ি পড়া হয়। অবশ্য রাদেরও কড়া হু/কুম।

—-“মামী আমি আছছি।”

হাতে একটা পুতুল আর একটা লাল কাপড় নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় নিঝুম। ইলহাম আয়না থেকেই বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিঝুমের প্রতি।

—-“ঝুম পাখি আসছে?”

নিঝুম উপর নীচ করে মাথা নাড়ে। গোলগাল চোখ জোড়া আশেপাশে ঘুরতে লাগে। কিছু খুঁজছে দেখে ইলহাম পূণরায় বলে ওঠে,

—-“কি খোঁজে ঝুমপাখি?”

—-“মামা নাই?”

—-“না পাখি। মামা তো অফিসে। তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার কাছে এসো। আমি রেডি হচ্ছি।”

—-“তুমি কোথায় যাও মামী?”

—-“ছাদে। তুমি যাবে?”

—-“ওক্কে।”

ইলহাম স্মিত হেসে বলে,

—-“ওক্কে। আসো।”

নিঝুমকে নিয়ে চিলেকোঠার ঘরে আসে ইলহাম। মাসখানেক আগে দেখা ময়লার স্তুপ এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখতেই মনটা খুশি খুশি লাগলো ইলহামের। ধাপ ফেলে এগোলো বইয়ের পাহাড় করে রাখা জায়গাটায়। আগে বই গুলো দেখতে হবে। যদি কোনো কাজে না আসে তবে কোনো লাইব্রেরিতে রেখে আসা যাবে। ভাবতে ভাবতেই বই গুলো নিরীক্ষণের কাজে লেগে পড়লো। দেখে মনে হচ্ছে এগুলো রাদের ছোট বেলার বই। ক্লাস এইটের পর থেকে সকল বই আছে। দেখছে এবং একটা বস্তায় জমাট করছে। এগুলো সত্যি কোনো কাজে আসবেনা। বই গুলো ঘাঁটতে থাকার এক পর্যায়ে হঠাৎ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসের প্রতি দৃষ্টি আঁটকে গেলো ইলহামের। সেদিন চিলেকোঠায় একটা ডায়েরি পেয়েছিলো ইলহাম। সেই ডায়েরিটাই আবারও দেখতে পেয়ে মনটা বেজায় আনন্দ পেলো। উপুড় হয়ে থাকা ডায়েরিটা চটজলদি হাতে তুলে নিতে আনন্দ আরও দিগুণ হলো এই দেখে যে শিরিন তার কাজটা খুব নিখুঁত আকারেই করেছে। ডায়েরির কোথাও একটা ধুলোকনাও লেগে নেই।

ডায়েরিটা উল্টো পড়ে থাকায় ইলহাম ওভাবেই হাতে উঠিয়ে আনে। কতক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডায়েরিটা দেখতে দেখতে হঠাৎ ভাবলো, এটা কি কোনো ভাবে রাদের ডায়েরি? কথাটা ভাবতেই একঝাঁক কৌতূহল হৈ হৈ করে উঠলো বুকের ভেতর। তবে কি সে জানতে চলেছে রাদের প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কে। কিন্তু না, ডায়েরিটা উল্টে তার বুকে নিজের নামটা দেখে যেন বিস্ময়ের পাহাড় চাপলো মাথায়। মোটা অক্ষরে লেখা,”আমি ইলহাম”। ইলহামের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এটা তার ডায়েরি? এটা তার ডায়েরি হলে এই বাড়িতে কেমন করে এলো? আর যতদূর তার মনে পড়ে, সে-তো কোনোদিন ডায়েরি লেখেনি!

হাজারও একটা কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন ছুঁচোর মতো ছুটছে মস্তিষ্কে। মাথাটা আচমকাই কেমন ভার হয়ে উঠলো। শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় কেমন মড়মড় করা ভাব ছড়িয়ে পড়লো। অহেতুক প্রশ্নদের ভীড়ে অসহায় হয়ে উঠলো। নিজেকে সামলাতে হবে৷ এমন করে অনুভূতিদের ভ/য়া/ন/ক রূপের সঞ্চালন ক্রমশ ঘটতে থাকলে ম//রে যাবে সে। চটজলদি ডায়েরির প্রথম পাতাটা খুলে সম্মুখে মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো পরিচিত হাতের লেখা। ২০০৯ সাল। মোটা কালিতে সাল টা দেখে চোখ আঁটকে পড়লো ইলহামের। একটু নীচেই সুশ্রী হাতের লেখায় দেখতে পেলো,

—-“ আমার বাবা, মাকে ভীষণ মা//র//তো। তাই মা অনেকবার সু//ই//সা//ই//ড করতে চেয়েছিলো। কিন্তু করতে পারেনি। মা সবসময় বলতো, আমার জন্য নাকি মায়ের বাঁচতে ইচ্ছে করে। আমি মায়ের বাঁচার একমাত্র কারন। মা আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো। আমিও মাকে ভীষণ ভালোবাসতাম। কিন্তু মাকে আমি আমার কাছে রেখে দিতে পারিনি। বাবা মাকে মে//রে ফেলেছে। রনো আঙ্কেল? মা বলতো আমার একটা রো//গ আছে। আমি নাকি কয়েকদিন পর পর কাউকে চিনতে পারিনা। তাই মা বলেছিলো, যদি কোনোদিন তার কিছু হয় আমি যেন একটা ডায়েরিতে লিখে রাখি। আমি জানিনা আমি আবার সবটা ভুলে যাবো কিনা। যদি তুমি এই ডায়েরিটা পাও তাহলে আমার মায়ের খু//নী//কে তুমি শা//স্তি দিও।”

ডায়েরির প্রথম পাতায় এরূপ কিছু লেখা পড়তে থমকে গেলো ইলহাম। তার মা-কে তার বাবা খু//ন করেছিলো? অথচ এই কথা সে ভুলে গেছে? আজ এতো গুলো বছরেও কেউ জানতে পারেনি তার মায়ের মৃ//ত্যু//র র/হ/স্য! কিন্তু বাবা মাকে কেন মা//র//তো? এর পেছনের কি কারন ছিলো? আর রনো আঙ্কেল কে? ওর জানা মতে এমন নামের কাউকে চিনেনা! কোনোদিন শোনেওনি!

ইলহাম ডায়েরির পাতা উল্টালো। না, এই বিষয়ে আর কিচ্ছু লেখা নেই। ইলহাম ডায়েরি হাতে উঠে দাঁড়াল। তাকে উঠে যেতে দেখে নিঝুম বলল,

—-“কই যাও?”

—-“আ..আমি আসছি। ঝুমপাখি? তুমি এখন মায়ের কাছে যাও, কেমন?”

—-“ওক্কে।”

নিঝুম মাথা নেড়ে দৌড়ে চলে গেলো। ইলহামের পায়ের গতিটাও ঠিক ওমনই। দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে এসে হাজির হলো। ভেতর থেকে রুমের দরজাটা লক করে মেঝেতেই বসে পড়লো ডায়েরিটা নিয়ে।

২০১৬’
মিশমিশ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। নামটা খুব সুন্দর। আমি ওকে সবসময়ই বলি। ও শুনে হাসে। আমার মায়ের চলে যাওয়ার পর মিশমিশই আমার দুনিয়া। মামীর থেকে শুনেছি আমার মা নাকি একটা রোড এ//ক্সি//ডে//ন্টে মা//রা যায়। কিন্তু এই ডায়েরির প্রথম পাতা তো অন্য কথা বলছে। আমার মায়ের মৃ//ত্যু//টা কোনো দূ//র্ঘ//ট//নায় হয়নি। এটা একটা সাজানো গোছানো পরিকল্পনা ছিলো। যে পরিকল্পনার সমাপ্তিতে ছিলো আমার মায়ের মৃ//ত্যু। আর যে খু//নী সে আমার বাবা। মিশমিশ বলে, আমাদের বন্ধুত্বের শুরুতেও নাকি আমি ওকে এই একই কথা বলতাম। কিন্তু, আমার কেন মনে নেই? আজ মিশমিশের মৃ//ত্যু বার্ষিকী। নিয়তি মিশমিশকেও আমার থেকে কেঁ/ড়ে নিলো। আমাকে আবারও নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে। আমার বারবার মনে হয়, আমার মিশমিশকে কেউ মে//রে ফেলেছে। ঠিক মায়ের মতো। তাহলে কি আমার মিশমিশের মৃ//ত্যুর পেছনেও আমার বাবার হাত?’

ইলহামের হাত গলিয়ে পড়ে যায় ডায়েরিটা। বাবা’ এই ছোট্ট শব্দটিতে মানুষ একটা ভরসার জায়গা পায়। ভালোবাসা, ভরসা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কি না থাকে? কিন্তু তার তো মনেও পড়েনা এই নামটা। তার কারন কি? জানেনা সে। কেবল জানে, তার বাবা নামের মানুষটা তাকে চেনেনা। কোনোদিন চিনতো বলেও মনে হয় না। অবশ্য সেও তো চিনেনা তার বাবা-কে। তাহলে কি করে শাস্তি দিবে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড আর মায়ের খু//নী//কে//।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here