প্রেমনগর পর্ব ১১

#প্রেমনগর
পর্বঃ১১
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
তুলি ভর্য়াত চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি তুলিকে খেতে বললো। তুলির হাতে পাউরুটি। তুলি কাচুমাচু হয়ে বাস স্টপের একটি বেঞ্চে বসে পাউরুটির দিকে তাকালো। সারাদিন এক ফোঁটা দানাও পেটে পরেনি। একটা রাস্তার মোড়ের কাছে এসে শুধু ট্যাপের পানিটুকু খেয়ে নিয়েছিলো। টাকা পয়সা সাথে কিছুই নেই। পরনে লাল বেনারসি শাড়ি। কপালে লাল টিপ। মাথার চুল গুলো খোলা। দুই হাত ভর্তি কাচের লাল চুড়ি আর এক জোড়া সোনার বালা।
.
পাউরুটিতে কামড় দিতেই তুলির চোখ দিয়ে টপ টিপ করে পানি পরতে শুরু করলো।
রাফিঃ এই মেয়ে কাদঁছো কেন? খাও। আর ভয় নেই।
পানি ভর্তি চোখ নিয়ে তুলি উপরের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না।
রাফির ফোন বাজতে থাকে। রৌদ্র ফোন দিয়েছে।
রাফিঃ দোস্ত আমি মোড়ের কাছে দইঘর দোকানটার সামনে আছি । মেয়েটি আমার সাথেই আছে। তুই সামনে এগোতে থাক।
.
হঠাৎ তুলির হাত থেকে পাউরুটিটা মাটিতে পরে গেলো। রেয়াকত আলীর দলবল এদিকেই ছুটে আসছে। বেঞ্চ থেকে উঠে তুলি ছুটতে শুরু করলো। ক্ষুধার্ত পেটে দৌড়াবার শক্তিও নেই। কিছুদূর যেতেই হোচট খেয়ে মাটিতে পরে যায়৷ রাফিও তুলিকে থামানোর জন্য পিছন পিছন ছুটে আসছে। তুলিকে দেখার সাথেই রৌদ্র বাইক থামিয়ে বাইক থেকে নামলো। মাটিতে পরে যাওয়া তুলিকে তোলার জন্য ওর এক হাত ধরতেই তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, ছাড়েন.. ছাড়েন আমারে…..
রৌদ্র হেলমেট খুলতেই তুলি রৌদ্রকে দেখে চিনতে পেরে বলে উঠলো, আপনে!
রৌদ্রঃ হ্যাঁ… এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন!
.
তুলি এক বার পিছন ফিরে তাকিয়ে তারপর তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো আর হাফাতে হাফাতে বলছে, ওরা আমারে দেইখা ফালাইছে, আমারে এহন ধরে লইয়া যাইবো! আমি যামু না!
রাফিও এখানে এসে দাড়ালো, ওরা কারা?
.
রেয়াকত আলীর দলের একজন ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর রেয়াকত আলীকে ফোন করলো, বস এবার পাইয়া গেছি। চইলা আসেন৷
.
রৌদ্র রাফির দিকে তাকিয়ে বললো, এখন এতো কিছু জানার সময় নেই। তুলি তুমি বাইকে উঠে বসো। রাফি তুইও আয়।
রৌদ্র বাইকে উঠে বসে। তুলি বাইকের পাশে এসে দাঁড়ালো।
রৌদ্রঃ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন! উঠে বসো।
তুলি আশেপাশে তাকিয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে রৌদ্রকেই এখন ভরসা করছে। যেভাবে হোক রেয়াকত আলীর দলের হাত থেকে আগে বাঁচতে হবে।
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা এসে ঘিরে ধরলো, ওদের মধ্য থেকে সাদ্দাম নামের একজন চেচিয়ে ওঠে, ওরে লইয়া কইজান, কেডা আপনে!
রৌদ্র ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে তুলির হাত ধরলো, তোমাকে বসে বলেছি!
রাফিঃ এই আপনারা কারা! এখানে এসে অভদ্রের মতো চেচাচ্ছেন কেন।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া গলার আওয়াজ নিচে নামান! বাঁশের কঞ্চির কোবানি খাইয়েছ কোনোদিন!
রাফিঃ হোয়াট ননসেন্স!
সাদ্দামঃ ভাগেন ভাগেন! জলদি এইহান থেইকা ভাগেন।
.
ভয়ে তুলি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
রৌদ্রঃ দেখুন আপনারা এরকম করতে পারেন না।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া আপনে কেডা!
রৌদ্রঃ আমি কে সেটা বড় বিষয় নয়। ও আপনাদের সাথে যেতে চায় না। ওকে আপনারা জোর করে নিয়ে যেতে পারেন না৷
সাদ্দামঃ এত কথার কাম নাই। জলদি ভাগেন।
রৌদ্রঃ ও আমার সাথে যাবে৷ তুলি এসো।
সাদ্দায়ঃ আপনে ভালো কথার লোক না…কোপ না খাইয়া আপনেরাও যাইবেন না দেখি!
.
রাগে রৌদ্র এবার সাদ্দামের গালে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় দিতে শুরু করলো। আর এক হাতে সাদ্দামের শার্টের কালার চেপে ধরে আছে। দলের লোকেরা এসে আটকাতে শুরু করলে ওদেরও হেলমেট দিয়ে মেরে আহত করে দিলো রাফি। এরইমধ্যে রেয়াকত আলী এখানে এসে উপস্থিত হয়। তুলি এখনো কান্না করেই যাচ্ছে৷ ভয়ে তার পুরো শরীর কাঁপছে।
.
রেয়াকত আলী তুলিকে দেখার সাথেই মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো, বহুত জ্বালালি জ্বালাইছোস ,সারাদিন মেলা খাটুনি করাইছোস এহন তোর খবর আছে, চল বাড়িত চল! বজ্জাত মাইয়া! বিয়া আসর থেইকা পালাইছোস!!
.
তুলি কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে গিয়ে রৌদ্রের এক হাত ধরলো। রৌদ্র এদিকে ফিরে রেয়াকত আলীকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
তুলিকে রৌদ্রের হাত ধরতে দেখে রেয়াকত আলী আরও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
রেয়াকত আলীঃ ওই ওই…এই পোলা কেডা…তুই ওর হাত ধরসোছ ক্যা…! হ্যাহ??
.
সাদ্দাম এগিয়ে এসে বলা শুরু করে, ওই পোলা তো ওরে লইয়া ভাইগা যাইতাছিলো। আমি ধরতেই আমারে মারছে।
রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী রৌদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ গুলো এখোনি কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। খুবই ভয়ংকর লাগছে দেখতে।
রেয়াকত আলী দাতেঁ দাঁত চেপে বলছে, আমার বউরে লইয়া ভাইগা যাইবো কেডা…! দাঁ দিয়া তার কাল্লা ফালাই দিমু।
তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে রেয়াকত আলী বললো, আমি আজই তোরে বিয়া করুম..! কেউ আটকাইবার পারবো না..!
.
রৌদ্রও চোখ গরম করে রেয়াকত আলীর দিকে তাকায়।
রৌদ্রঃ তুলি বাইকে উঠে বসো..!
রেয়াকত আলী এগিয়ে এসে তুলির আরেক হাত টেনে ধরতেই রৌদ্র হেলমেট দিয়ে রেয়াকত আলীর মাথায় বারি দেয়। রেয়াকত আলীর মাথা ফেটে রক্ত বেড়িয়ে আসে।
রেয়াকত আলী আরও ক্ষেপে গেলো। কপালে এক হাত দিয়ে হাতে রক্ত দেখেই হুংকার দিয়ে উঠলো,,ওই তোরা দা কুড়াল লইয়া আয়…রক্তারক্তি আজ এইহানেই হইবো….
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা ছুটে গেল। বাকিরা লাঠি নিয়ে এসেছে। রাফি কয়েকটাকে ধরে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রৌদ্র ইচ্ছে মতো রেয়াকত আলীর পেট পাছায় লাথি দিচ্ছে। দলের লোকেরা আটকানোর জন্য এগিয়ে আসতেই তাদেরও বুক পেটে কিল বসিয়ে দিচ্ছে।
.
রাম দা, কুড়াল নিয়ে রাস্তা দিয়ে ছুটে আসছে রেয়াকত আলীর দলবল। রাফি ওদিকে তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে উঠলো, রৌদ্র দেখ! সর্বনাশ!! এখন কি করবি?
রৌদ্রঃ ও মাই গড!
.
রৌদ্র তাড়াতাড়ি তুলির হাত টেনে ধরে তুলিকে বাইকের সামনে বসিয়ে দিলো। তুলিকে উঠেই রৌদ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়। রাফিও বাইকের পিছনে উঠে পরলো।
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা দা কুড়াল নিয়ে বাইকের পিছনে দৌঁড়াতে থাকে৷
মাটিতে পরে থাকা ভুড়ি ওয়ালা রেয়াকত চেচিয়ে বলতে থাকে, আমার বউরে লইয়া ভাউগা যাইতাছে…ওরা যেন যাইবার না পারে…ধর হেগো…বিয়া আমি আজই করুম!
.
কিছুদুর দৌড়েই রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাইকের সাথে আর দৌড়ে পারলো না। ভয়ে আর ক্ষুধায় তুলি অচেতন হয়ে গেছে। বাইক নিয়ে রৌদ্র অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন তারা শহরের ভিতর। রৌদ্র তুলিকে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁর ভিতরে গিয়ে বসলো। সঙ্গে রাফিও আছে। এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রাফির আগে কখনো হয়নি। ভয়ে গলা তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো তাই সামনে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে শুরু করে।
.
এদিকে রেয়াকত আলী এখনো হাল ছাড়েনি। সে ওই রাস্তা ধরেই দলবল সঙ্গে করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। তুলিকে তার আজ রাতেই পেতে হবে৷ মাথায় বেন্ডেজ করে প্রচন্ড রকমের ব্যথা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটে বসেছে সে।
.
রৌদ্র তুলির মুখে কয়েকবার পানি ছিটিয়ে দিতেই তুলি চোখ খুললো আর চোখ খুলে সামনে হঠাৎ করে রঙিন রঙিন আলো গুলো দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
.
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here