প্রেমনগর পর্ব ১৭

#প্রেমনগর
পর্বঃ১৭
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
নীলার বাবা চিৎকার করে বললেন,পালাচ্ছে আর আপনারা হা করে দেখছেন? ধরুন ওদের!
পুলিশঃ রাস্তায় জ্যাম পরেছিলো আর জ্যাম ছাড়তেই বাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
নীলা বাবাঃ তো এখনো হা করে চেয়ে আছেন কেন। যান খোঁজ লাগান। আর ওই মেঘকে আজই হাজতে দেখতে চাই।
নীলার বাবা আবারও আফতাব চৌধুরীকে ফোন দিলেন। কথা বলতে বলতে আফতাব চৌধুরী এক
পর্যায়ে খুবই ক্ষেপে গেলেন।
আফতাব চৌধুরীঃ আমার হিরের টুকরো ছেলের নামে কোনো বাজে কথা বলবেন না৷ আজই আমি আপনার নামে মান হানির মামলা করবো।
নীলার বাবাঃ আপনার হিরের টুকরো ছেলে নাকি সোনার টুকরো ছেলে সেসব আমার দেখার সময় নেই। আপনার ছেলে আমার মেয়ের পিছনে লেগেছে। ও জানেও না ও কিসে পা দিয়েছে…..ওকে আমি…..
রাগে আফতাব চৌধুরী ফোনটা কেটে দিলেন।
নীলার বাবাঃ ফোন কেটে দিলো! এতো সাহস ওই আফতাব চৌধুরীর। আমার ফোন কেটে দিলো।
.
কথা শেষ করতে না পারার জন্য নীলার বাবা আরও রেগে গেলেন। রুমে নীলার মা এসে উপস্থিত হয়।
নীলার মাঃ কি গো এখন রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো।
নীলার বাবাঃ ওই আফতাব চৌধুরী আমার ফোন কেটে দিয়েছে। এবার আমি ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলবো।
নীলার মাঃ প্রেমনগর?
নীলার বাবাঃ ওসি সাহেব বলেছেন, ওরা এখন গুষ্ঠি শুদ্ধ একটা হাসপাতালে রয়েছে। আমি ওখানেই যাব।
নীলার মাঃ আমিও যাব। আমার মেয়েকে ওদের ছেলে লুকিয়ে রেখেছে। ওর মায়ের সাথে আমি কথা বলবো। এমন লম্পট ছেলে বানালো কি করে! আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হলে ওর ছেলেকে আমিও ছাড়বো না! উনিও একজন মা৷ উনি ছেলেদের এসব মেনে নিচ্ছেন কেন!
.
এদিকে হাসপাতালে চলছে বিরাট গন্ডগোল। সব শুনে ম্যানেজারের বউ হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। চেচাতে চেচাতে ম্যানেজারকে সে জুতার বারি মারলো। নার্সটাও এখন তার অধিকার দাবি করছে। কাল রাতে তার সর্বনাশের জন্য ম্যানেজার অপরাধী। ম্যানেজার এবার মুখ খুললেন, পুলিশের কাছে তুলে ধরলেন তার বউয়ের পরকীয়ার কথা। সে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বউ অন্য পুরুষের সঙ্গ লাভ করতো। রাতের পর রাত থাকতো। সব প্রমাণ পাওয়ার পরও বউকে সে তালাক দেয়নি। তবে এখন দেবে। বউ ছিলো অর্থ লোভী। অর্থের লোভে সে বিয়ে করেছিলো।
.
ম্যানেজারের মুখে এই কথাগুলো শুনে নার্সের মনে এবার প্রেমের ফুল ফুটতে শুরু করে। নার্সের মনের আশা বুঝি এবার পূরণ হতে যাচ্ছে।
ম্যানেজার নার্সের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
ম্যানেজারঃ আমি ওকে বিবাহ করতে চাই৷
এই কথা শুনে লজ্জায় নার্স চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
.
ভয়ে ম্যানেজারের স্ত্রীর মুখ শুকিয়ে একেবারে আমসি হয়ে গেছে। তার মাথা ঘুরতে শুরু হয়। সে অজ্ঞান হয়ে পরে গেল। তার জারিজুরি আজ সবার সামনে ধরা পরেছে। সে দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। এটা সে ম্যানেজারকে জানায়নি। কয়েকজন নার্স এসে তাকে অচেতন অবস্থায় একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করালো। তার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে একজন কাজী ডেকে সবার উপস্থিতিতে ম্যানেজারের সাথে নার্সের বিয়ে হয়। ঘটনা মিটমাট হওয়ায় পুলিশ ম্যানেজারকে ছেড়ে দিলো।
.
তুলি তার পরনের শাড়ি কাপড় চেইঞ্জ করে রৌদ্রের কেবিনে আসলো। তার হাতের কাটা স্থানে ব্যান্ডেজ। কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পেল, ছোট ছোট জামা কাপড় পরা কিছু সুন্দরী মেয়েরা রৌদ্রের বেডের চারপাশে ঘিরে রয়েছে। এরা সবাই রৌদ্রের ক্লাসমেট। তুলি মনে মনে বলছে,মাইয়া গুলার লজ্জা শরম নাই! ওড়না পরে নাই। দুধ গুলান দেখা যাইতাছে। ছি ছি! আবার হাটু বাইর করা। কাপড় পিন্দে নাই। ছি ছি!
রৌদ্র ওদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
.
মেলার মধ্য স্টলে দাঁড়িয়ে নীলা জিনিসপত্র দেখছিলো। ঐতিহ্যবাহী মেলা। বিভিন্ন শো পিচ আর ঘড়ি গুলোতে হাত দিয়ে দিয়ে দেখছে সে৷ তখনই হঠাৎ করে একটা নিতে গিয়ে অন্য আরেকটা চীনা মাটির শো পিচ মাটিতে পরে দুই খন্ড হয়ে গেল। সাথে সাথে নিচের দিকে তাকিয়ে দুই ভাগ হওয়া অংশটা দেখে ভয়ে নীলার মুখ শুকিয়ে যায়। কেউ দেখার আগেই সেটা মাটি থেকে তুলে দুই ভাগ হওয়া অংশটা এক সাথে করে আবার সেখানেই রেখে দিলো।
.
পিছন থেকে হেটে আসছে মেঘ। নীলাকে কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো।
মেঘঃ কিরে কি করছিস এখানে! এগুলো পছন্দ হয়েছে?
নীলা মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দেয়৷
মেঘঃ আরে বল বল! কোনটা পছন্দ হয়েছে! নইলে এখানে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে কি করছিস। কোনটা নিবি বল।
স্টলের দোকানদার এদিকে এগিয়ে এলো। নীলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ঘামছে। একটা ঢোক গিললো।
মেঘ এবার শো পিচ গুলো তে হাত দিয়ে একটা একটা করে ওখান থেকে উঠিয়ে বলছে, কোন পছন্দ হয়েছে? এটা? ওটা? না এইটা?
.
মেঘ কয়েকটা ওঠানোর পর একটু আগের ওই দুই ভাগ হওয়া শো পিচ টায় হাত দিলো। ওটায় হাত দিতেই উপরের একটা অংশ মাটিতে পরে গেল।
এটা দেখার সাথেই নীলা দ্রুত সেখান থেকে সরে পাশের দোকানে কসমেটিকস দেখতে চলে গেল। দোকানদার এদিকে এগিয়ে এসে বলছে, আপনি এটা ভেঙে ফেললেন?
মেঘ তার হাতে থাকা শো পিচের খন্ডটার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলছে, এটা তো বোধয় আগেই ভাঙাই ছিল।
দোকানদার করা গলায় উত্তর দেয়, একটা জিনিসও এখানে ভাঙা নয়। সব চেক করে রেখেছি৷
মেঘঃ ইয়ে মানে আমি তো এটা ভাঙি নি৷
দোকানদার রেগে বলছে, আমি স্পষ্ট দেখলাম ওটা আপনার হাত থেকে পরে ভেঙে গেল! আর আপনি ভাঙেন নি!
মেঘঃ দেখুন আমি মিথ্যা বলছি না।
.
পাশের দোকান থেকে নীলা আড়চোখে ঘটনা দেখছে আর ওখানে হাতের চুড়ি দেখার ভান করছে। রবিন এগিয়ে এসে বললো, কি হয়েছে এখানে গ্যাঞ্জাম কিসের?
মেঘ শো পিচটা দেখিয়ে বললো, দেখ ভাই এটা ভাঙাই ছিল আর উনি বলছেন এটা আমি ভেঙেছি!
.
হঠাৎ মেঘ সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো নীলার চোখ মুখ হাস্যোজ্জ্বল! সে মুচকি মুচকি হাসছে। মেঘ যে ওকে হাসতে দেখছে সেটা নীলা খেয়ালই করলো না। সে পাশের দোকান থেকে হাতের চুড়ি কেনার ভান করছে৷
.
এদিকে আকাশ অহনাকে গাড়ি করে প্রেমনগরে রেখে আসছে। আকাশ নিজেই ড্রাইভ করছে। কাল থেকে হাসপাতালে আছে। বাড়ি গিয়ে এখন একটু ফ্রেস হওয়া দরকার। অহনা আকাশের পাশের সিটে বসে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
আকাশ সামনের দিকে তাকিয়েই ড্রাইভ করতে করতে বলছে, এভাবে দেখো না তো! ড্রাইভিং করতে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
অহনা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো, কি আর হবে! বেশি কিছু তো হবে না৷
.
অহনা এগিয়ে এসে আকাশের গায়ে হাত দিলো এবং আকাশের ঘাড়, কান আর গলা শুকতে থাকে । আর গালের কাছে এসে ঠোঁটটা কিসের স্টাইল করছে।
আকাশঃ আরে… আরে এ্যাই কি করছো! থামো!
আকাশ তাড়াতাড়ি গাড়িটা ব্রেক করে থামিয়ে দেয়।
গাড়ি থামিয়েই আকাশ অহনার হাতটা ধরে ফেললো।
আকাশঃ এসব কি করছিলে!
অহনা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশেরও আহনার মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিভ্রম হয়ে গেল।
আস্তে আস্তে আকাশ অহনার ঠোঁঠের কাছে চলে গেল । তারপর আকাশের ঠোঁট ডুবে যায় অহনার ঠোঁটে।
.
দশ মিনিট থেকে রাস্তায় গাড়ির লম্বা সিরিয়ালে জ্যাম পরে গেছে। সামনে একটা কালো গাড়ি সেই কতক্ষন থেকে দাঁড়িয়েছে আর সরে যাবার নাম নেই।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here