#প্রেমনগর
পর্বঃ১৯
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
রৌদ্র হঠাৎ তুলির দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো তুলি চোখ মুখ ভ্যাংচাচ্ছে। ওর চোখ মুখের রেখা বলে দিচ্ছে সে যথেষ্ট বিরক্তবোধ করছে। রৌদ্র মেয়েগুলোকে কেবিন থেকে চলে যেতে বললো। রৌদ্রের সুন্দরী ক্লাসমেটরা কেবিন থেকে বের হতেই রৌদ্র চোখ বুঝলো । তুলি হা করে এখন রৌদ্রের মুখের দিকে চেয়ে আছে। জেগে থাকা অবস্থায় তো লজ্জায় তার দিকে ভালো ভাবে চাওয়া যায় না। তুলি টুলটা এগিয়ে নিয়ে এসে মুখ সামনের দিকে বারিয়ে বারিয়ে রৌদ্রকে দেখছে। রৌদ্র তার বাম চোখটা হালকা একটু খুলে তারপর আবার বন্ধ করে তুলির কান্ড দেখে ফেললো কিন্তু তুলি সেটা বুঝতেই পারলো না। হঠাৎ করে রৌদ্র চোখ মেলতেই তুলি লজ্জা পেয়ে টুল ঘুরিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসলো। লজ্জায় তুলি চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। আর ঠোঁট দুটো কাঁপছে৷ রৌদ্র বললো, তুমি আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকো কেন?
.
লজ্জায় তুলি কিছু বলতে না পেরে টুল থেকে উঠে দাঁড়য়ে কেবিনের বাহিরে দৌড় দিতেই দরজার কাছে এসে রাফির সাথে ঢাক্কা খেল। রাফি তখনই কেবিনের ভিতরে ঢুকছিলো। ঢাক্কা খেয়ে তুলি পরে যেতেই রাফি তুলিকে ধরে ফেললো। সাথে সাথে তুলি রাফিকে ঢাক্কা দিয়ে দৌড়ে কেবিনের ভিতর থেকে বেড়িয়ে গেল। ঢাক্কা খেয়ে রাফি দেয়ালের সাথে ঠেকে পরে। তুলির চলে যাওয়ার পানে সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো এবং মুখে হালকা বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। তার বুকে তুলির জন্য প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই নিজের হুশ ফিরে পেয়ে রাফি কেবিনের ভিতরে ঢুকলো। কিন্তু তার মুখের হালকা হাসিটা লেগেই আছে। রৌদ্রের বেডের দিকে এগিয়ে এসে রাফি আবারও কেবিনের দরজার দিকে চেয়ে বলে উঠলো, বরোই মিষ্টি মেয়ে!
রৌদ্রঃহুম!
রৌদ্রকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফি নিজেকে সামলে নিয়ে কাশি দিয়ে উঠলো। রৌদ্র খুব চালাক ছেলে। রাফির হাবভাব দেখে সে বলেই ফেললো, প্রেমে ট্রেমে পরেছিস নাকি?
সাথে সাথে রাফির মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেল। রাফি চোরের মতো লুকাতে চেষ্টা করতে করতে মুখে জোর করে একটু হাসি আনার চেষ্টা করে বললো, এহ্ কই! আমি আবার করবো প্রেম! হাহাহা…
হাসপাতালের তিন তলায় জটলা পেকেছে। নীলার মা নীহারিকা চিল্লিয়ে বললো,মনিরা! মেঘ তোর ছেলে? আগে বলবি না!
মনিরা বেগম চোখ ঘুরিয়ে আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকালেন। নীহারিকাও এবার নীলার বাবার দিকে তাকায় তারপর মনিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো এই শুনছো, তোমাকে না বলেছিলাম। স্কুলে থাকতে আমার এক বান্ধুবি প্রেম করে পালিয়ে গিয়েছিলো! ও হচ্ছে সেই। মনিরা! আর উনি আফতাব ভাই। যার সাথে পালিয়েছিলো। আজ এত বছর পর দেখা হলো। তারপরও দেখো ওরা দুজন কত সুন্দর আছে।
মনিরা বেগম হাসতে হাসতে বললেন, কি যে বলিস, তোদের জুটিটাও তো খুব সুন্দর। অনেক সুন্দর মানিয়েছে তোদের।
নীলার বাবা রেজা খান এবার আফতাব চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেলেন৷ দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন।
মনিরা বেগম বলে উঠলেন,কিন্তু মেঘের ব্যপারটা তো বুঝলাম না!
নীহারিকাঃ আরে তোর ছেলে মেঘ আমার মেয়ে নীলার পিছনে লেগেছে!
মনিরা বেগম এবার একটু ভিমরি খেলেন। তারপর হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছেলে লেগেছে নাকি তোর মেয়েই আমার ছেলের পিছনে লেগেছে। কোনটা? মেঘ একবার অবশ্য আমাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলো। ওটা যে তোর মেয়ে আমি তা জানতাম না! ক্যাম্পাসের একটা মেয়ে নাকি ওকে খুব ভালোবাসে! সারাক্ষণ ওর পিছনে লেগে থাকে। হাহাহা….
.
নীলার বাবা এবার বলে উঠলেন, কিন্তু এখন ঘটনা যা দাঁড়িয়েছে। তাতে মেঘ যে নির্দোষ তা কিছুতেই প্রমাণ হয় না। আজ বাইকে মেঘের সাথে নীলাকে পুলিশ দেখতে পেয়েছে। কিন্তু ধরতে পারেনি। তার আগেই ওরা পালিয়েছে৷ আর সেই খবর পেয়েই আমরা এখানে ছুটে এসেছি।
.
এই কথা শুনে আফতাব চৌধুরী এবার জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলেন। সবাই অবাক হয়ে চোখ গোল গোল করে আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
আফতাব চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন, ওই তো এক হাতে কি তালি বাজে! দুই হাতের সায় আছে দেখেই বেজেছে! আমার ছেলে যেমন নির্দোষ নয় তেমনি আপনার মেয়েও নির্দোষ নয়।
নীলার বাবা এবার আস্তে করে বলে উঠলেন, তার মানে দুইজনই দুইজনের পিছনে লেগেছে!
.
আফতাব চৌধুরী হো হো করে হাসতে হাসতে আবারও বললেন, দুইজনই দুইজনের প্রেমে পরেছে!
বলেই আফতাব চৌধুরী মনিরা বেগমের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠলেন, কি গো! আমি যখন তোমার প্রেমে পরেছিলাম তুমি তখন সায় দেও নি! সায় দিয়েছিলে বলেই তো আমরা আজ এতো দূর এসেছি৷
মনিরা বেগম লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলেন। নীহারিকা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, তবে আর দেড়ি করছো কেন। দুইজনে মোলাকাত করো!
.
নীলার বাবা রেজা খান আর আফতাব চৌধুরী বুক মেলালেন। তারপর নীলার বাবা হাসতে হাসতে বলেন, আমিও নীহারিকাকে প্রথম দেখে প্রেমে পরেই সরাসরি ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম । প্রস্তাবের পর যখন ওদের বাসায় প্রথম যাই ওইদিনই আমাকে দেখে ও নাচতে নাচতে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়। হাহাহা… সায় না থাকলে কি আর বিয়ের পিড়িতে ওইদিনই বসতো! হাহাহা…
নীহারিকাঃ হয়েছে হয়েছে। ছেলেমেয়ের সামনে আর এখন এসব বলতে হবে না।
রেজা খানঃ বাচ্চা গুলো এখন কোথায় কি করছে কে জানে!
.
তখনই নীলার বাবা রেজা খানের ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। থানার ওসি সাহেব ফোন করেছেন। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই ওসি সাহেব হাসতে হাসতে বলছেন, স্যার একটা ভালো খবর আছে!
রেজা খানঃ কি খবর?
ওসিঃ ওই ছেলেসহ আর আপনার মেয়েকে ধরে ফেলেছি! মেলার মধ্য দুইজন ঝগড়া করছিলো। ঘপটি মেরে ছিলাম বুঝতেই পারে নি। সাথে সাথে ধরে হাজতে ভরেছি স্যার! হাহাহা!
.
নীলার বাবা রেজা খান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন আর চেচিয়ে বলছেন, খুব ভালো কাজ করেছেন! কাজের সময় ধরতে পারেন না আর অকাজের সময় ধরেন! আরে ওটা আমার হবু মেয়ের জামাই।
নীলার বাবা ধমক দিয়ে আবারও বললেন,যেতে দিন ওদের!
ওসি সাহেব কিছুই বুঝতে না পেরে আবুলের মতো বলে উঠলেন, আপনার হবু জামাই? তবে আপনার জামাইকে আপনি আমাদের কেন ধরতে বলেছিলেন স্যার! হাজতে তো আপনিই ভরতে বলেছিলেন! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা! কাহিনী কি স্যার!
রেজা খানঃ শাট আপ!
.
ওসি সাহেব এবার আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলো, স্যার একটা সমস্যা হয়ে গেছে! ওরা এইমাত্র থানা থেকে পালিয়েছে! আমি ফোনে কথা বলার সময়ই ফাক পেয়েছে। আর সেনট্রি টাও হয়েছে গাধার গাধা। বললাম নজর রাখতে!
রেজার খানঃ খুব ভালো হয়েছে! একটা কাজও আপনারা ঠিক মতো করতে পারেন না।
রাগে নীলার বাবা কলটা এবার কেটে দিলেন।
.
এদিকে বাড়িতে অহনা শাড়ি খুলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আকাশ বাথরুম থেকে বের হয়েই অহনার এই অবস্থা দেখে ফেললো। রুমের দরজা হা করে খোলা। আকাশ বির বির করে বলতে শুরু করলো, মেয়েটার কি কোনো আক্কেল নেই। দরজা খুলে এভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছে!
সাথে সাথে অহনা চট করে উত্তর দেয়,খুব গরম লাগছে। এসিতেও কাজ হচ্ছে না!
আকাশ চমকে উঠলো, তুমি ঘুমাও নি! এভাবে দরজা খুলে রেখে কেউ শোয়!
অহনা চোখ বন্ধ রেখেই আবারো উত্তর দেয়, বললাম তো, রুম ইস ভেরি হট! সো দরজা জানলা এখন থেকে খোলাই রাখতে হবে!
.
তখনই রুমের কাজের মহিলার গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। সে বলছে, ভাইজান খাবার কি এইখানে আনমু নাকি নিচে আইবেন?
আস্তে আস্তে গলার আওয়াজ তীব্র হতে থাকে। সম্ভবত সে এদিকেই আসছে।
আকাশ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
আকাশঃ ভাগ্যিস আজ বাড়ির সবাই হাসপাতালে। নইলে কে যে এভাবে রুমে হুট করে ঢুকে পরতো!
.
ওদিকে কাজের মহিলা রুমে ঢুকতে যাবে তখনই আকাশ জোরে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। ভিতরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ দরজা সামনে এসে পরায় কাজের মহিলা তার নাকে প্রচন্ড ভাবে ব্যথা পেলো। দরজাটা খুব জোরে নাকের সাথে বারি লেগেছে। সে নাকে ব্যথা পেয়ে, নাকটা ধরে আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে গেল।
.
অহনা শাড়ি খোলা অবস্থায় বিছানায় চিত হয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো, উমম,দরজা বন্ধ করলে কেন আকাশ! বললাম না আমার গরম লাগছে!
আকাশ চোখ তীক্ষ্ণ করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশের কথার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অহনা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মুখটা বিরক্তির ভঙ্গি করে শুয়ে থেকেই তার পরনের ব্লাউজের বোতাম গুলো এবার খুলতে শুরু করে।
.
চলবে….
.
( )