প্রেমনগর পর্ব ২০

#প্রেমনগর
পর্বঃ২০
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
আকাশ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে অহনাকে ব্লাউজ খোলা থেকে আটকালো। অহনা বিছানায় উঠে বসে চোখ খুলে তাকায় আর তারপর চোখ তীক্ষ্ণ করে বললো, তোমাকে আমি বললাম না আমার খুব গরম লাগছে! ছাড়ো আমার হাত ছাড়ো!
অহনার কথায় আকাশ অহনার হাতটা ছেড়ে দিলো।
আকাশঃএসব কি পাগলামো শুরু করেছো। নিচে চলো এখন। খেতে হবে না?
.
অহনা বিছানা থেকে উঠে ওভাবেই এগোচ্ছিলো। পিছন থেকে আকাশ অহনার হাতটা টেনে ধরে।
আকাশঃতুমি কি নিচে এভাবেই যাবে?
সাথে সাথে অহনা এবার নিজের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললো তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো, এ্যাই তুমি এখানে বসে কি করছো?
তারপর অহনা আবার নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বললো, ও আচ্ছা? তাহলে আমাকে এই অবস্থায় দেখেই তুমি দরজা লাগিয়ে দিয়েছো!
আকাশঃ মানে?
অহনাঃ মানে হলো আমাকে শাড়ি খোলা অবস্থায় দেখেই অমনি দরজা লাগিয়ে দিয়েছো। তোমার মতলবটা কি ছিল তা কি বুঝিনা ভেবেছো! শোনো এই অহনার বুদ্ধির সাথে টক্কর দিতে এসো না বুঝলে!
আকাশঃ হোয়াট!
অহনাঃ ইহ্ নেকা! এখন যেন কিচ্ছু বোঝে না!
.
অহনা কথা গুলো হাত নেড়ে নেড়ে বলছিলো।
রাগে আকাশ বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো তারপর চেচিয়ে বললো নেও তোমার দরজা হা করে খুলে দিয়ে এসেছি! এবার রক্ষা করো আমায়! কোন পাপে যে আমি তোমায় বিয়ে করে এনেছি! তোমার সাথে সাথে আমার মাথাটাও আজকাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
এই কথা শোনার সাথে সাথে অহনা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
অহনাঃ কি বললি তুই! কি বললি!
.
আকাশ বড় ধরনের একটা ঢাক্কা খালো। ওতো স্বামীকে তুই তোকারি করতে শুরু করেছে৷ আকাশ চোখ দুটো গরম করে অহনার দিকে তাকায়। তারপর এক পা এক পা করে অহনার দিকে এগোতে থাকে।
অহনা একা একাই বির বির করতে করতে এবার আকাশের চোখ দুটো দেখেই ভয় পেয়ে গলার আওয়াজ বিড়ালের মত আস্তে আস্তে নামিয়ে আনলো,তু তু তুমি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন আকাশ!
আকাশ এগোতে এগোতে অহনার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ভয় পেয়ে অহনা মনে মনে বলছে, একি মারবে নাকি!
আকাশ সামনের দিকে হাত বারিয়ে দিলো। ভয়ে অহনা দুটো বন্ধ করে ফেললো। আকাশ অহনার পিছনে থাকা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে দিলো। চমকে উঠে অহনা চোখ খুললো। আকাশ এভাবে আরও কয়েকটা কাঁচের জিনিস ভাঙলো।
.
শব্দ পেয়ে নিচে কাজের মহিলা দুটো বলাবলি করতে শুরু করেছে। রহিমা বললো, আমি ডাকবার গেছিলাম ভাইজান তখন দরজা লাগায় দিছে । ভিতরে কি হইছে দেখবার পারি নাই!
কুরমুরিঃ সেইডা বুঝলাম, ভিতরে মনে হয় নতুন ভাবীজানেই জিনিস ভাঙতাছে। কিন্তু তোর নাকে কি হইছে! ফুইলা গেছে মনে হয়। দেহি দেহি!
.
কুরমুরির কথা শুনে রহিমা কোনো কিছুর জবাব না দিয়েই ছুটে গেল ফ্রিজে থাকা বরফ নেওয়ার উদ্দেশ্য।
.
অহনা কান্নাকাটি করতে শুরু করেছে৷ কান্না করে করে বলছে, তার মানে তুমি আমায় বিয়ে করে ভুল করেছো বলছো! তুমি আমায় ভালোবাসো না আকাশ?
অহনা হাউমাউ করে কান্না করা শুরু করে দেয়। আকাশের চোখ দুটো এবার শান্ত হয়ে আসে৷ পুরুষ মানুষের দুর্বল জায়গা হচ্ছে মেয়েদের চোখের পানি। অহনা কান্না করতে করতে বিছানায় বসে পরে। আকাশ এগিয়ে গিয়ে অহনার হাত ধরলো।
আকাশঃআমি তা বলতে চাইনি জান! আমি তো তোমায় ভালোবাসি৷
.
অহনা কাঁদতে কাঁদতে এবার আকাশের বুকে মাথা রাখলো। আকাশ অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে অহনাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে৷ অহনা আকাশকে জরিয়ে ধরলো। আকাশও আস্তে আস্তে অহনার গায়ে হাত দেয়। অহনা আকাশের বুক থেকে মাথা তুলে আকাশের দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আকাশও অহনার মুখটা দেখে সব কিছু ভুলে গেল। সাথে সাথে আকাশ অহনার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে অহনাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো৷ কিন্তু দরজা যে হা করে খোলা সেদিকে দুজনের কারোই খেয়াল নেই।
.
তখনই কাজের মহিলা কুরমুরি ওদের ডাকতে এদিকেই আসছিলো। আর দরজা খোলা পেয়ে সে ভিতরে ঢুকতেই আকাশ আর অহনার চুম্বন দৃশ্যটি দেখে ফেললো।
কুরমুরিঃ ভা….
বলতে গিয়েই কুরমুরি থেমে গিয়ে সামনের দৃশ্যটা দেখেই বড় করে একটা হা করে চোখ বন্ধ করে সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। দৌড়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসাতেই সিড়ি দিয়ে নামতেই পা স্লিপ করে সিড়িতে ধপ করে পরে গিয়ে কোমড়ে ব্যথা পেল।
.
ওদিকে হাসপাতালে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে কেবিনে ভর্তি থাকা রোগী রৌদ্র চৌধুরীর পরিবার এবং সাথে রেজা খানের পরিবার।
আফতাব চৌধুরী হো হো করে হাসতে হাসতে বললেন, তাহলে ওই কথাই রইলো বেয়াই সাহেব। আমার ছেলে বাড়ি ফিরলেই বিয়ের ডেট ফাইনাল করবো!
এসব শুনে ওখানে উপস্থিত হাসপাতালের কতৃপক্ষ এবং ম্যানেজার সাহেবের মাথা ঘুরছে৷ হাসপাতালেও মানুষ বিয়ে শাদীর প্রস্তাব নিয়ে আসে!!
পাশে থেকে একজন বলে উঠলেন, এই পরিবারের ক্ষেত্রে সবই সম্ভব।
আর এরা আসার পরই তো ম্যানেজার সাহেবের ঝড়ের মতো নার্সের সাথে বিবাহ হয়ে গেল। হাসপাতালেই সোজা কাজি ডেকে বিয়ে! বাপের জন্মে এমনটা দেখি নি।হা হা হা….
.
নীলার বাবা রেজা খান আর মা নীহারিকা তাদের দলবল নিয়ে আফতাব চৌধুরীর পরিবারের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন৷
আফতাব চৌধুরী আর মনিরা বেগম হাসতে হাসতে রৌদ্রের কেবিনে ঢোকে। রৌদ্রের অবস্থা আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। তাই রৌদ্রকে কেবিন থেকে বাসাতেই শিফট করতে চাইলো। এখানে নাকি রৌদ্রের একদম ভালো লাগছে না৷
.
পার্কে দাঁড়িয়ে মেঘ শক্ত করে নীলার হাতটা ধরে নীলাকে ধমকাচ্ছে।
মেঘঃ তোর জন্যই এসব হয়েছে! তোকে এতো কাহিনী কে করতে বলেছে!
নীলাঃ তুই ই তো আমার সাথে ঝগড়া শুরু করলি!
মেঘঃ রবিনটাও পুলিশ দেখে সাথে সাথে পালিয়েছে। আমাকে একবার জানালাও না।
নীলাঃ পুলিশ ধরেছিলো তো কি হয়েছে। আমরা তো পালিয়েই এসেছি।
মেঘঃ তুই জানিস না, বাড়িতে ড্যাড এটা জানতে পারলে আমাকে আস্ত গিলে খাবে?
নীলাঃ কোনটা?
মেঘঃ ন্যাকা সাজচ্ছিস!
নীলাঃ কোনটা? তুই আমার প্রেমে পেরেছিস এটা?
মেঘঃ কি!! আমি তোর প্রেমে পরেছি! আমি? কেন তুই প্রেমে পরিস নি? আমাকে একা দোষ দিচ্ছিস কেন!
.
সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে রৌদ্রকে বাসায় নিয়ে আসা হয়৷ রৌদ্র তার ঘরে শুয়ে আছে। তুলির রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছিলো আর একটু পর পর ভিতরে উঁকি দিচ্ছিলো। তুলি রৌদ্রে ঘরে সরাসরি ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। এটা তো আর হাসপাতালের কেবিন নয় এটা বাড়ি।
হঠাৎ ভেতর থেকে রৌদ্রের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়, মা…মা…..
রৌদ্র মনিরা বেগমকে ডাকছে। রৌদ্রের গলার আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই তুলি হুড়মুড় করে রুমের ভিতরে ঢুকে পরলো।
তুলিঃ কিছু কি লাগবো আপনার? কি লাগবো কন!
রৌদ্র ঘার ঘুড়িয়ে তুলিকে দেখে চমকে উঠে।
রৌদ্রঃএকি, তুমি! তুমি তো নিচের রুমের থাকো। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলে কিভাবে!
.
রৌদ্রের কথা শুনে তুলি মাথা নিচু করে ঢোক গিললো।
রৌদ্র ভ্রু কুচকে বললো,তুমি…..
রৌদ্রের কথা শেষ না হতেই রাফি রুমের ভিতরে এসে উপস্থিত হয়।
রুমে ঢুকেই রাফি হাসতে হাসতে বলছে,কিরে এখন কেমন আছিস! এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোকে একবার দেখে যাই৷
বলেই রাফি এবার রৌদ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা তুলির দিকে তাকালো। এতোক্ষন পর তুলিকে দেখে যেন তার চোখ দুটো জোড়ালো। ওর বুকে যে তুলির জন্য প্রেমের জোয়ার ভাটা বয়ে যাচ্ছে।
রৌদ্র শুয়ে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ভ্রু কচুকে বিষয়টা খেয়াল করলো।
.
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here