#প্রেমনগর ( It’s So funny and Romantic Story)
পর্বঃ৬
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
আকাশ অহনাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এসেছে। অহনা ছাদের একপাশে দোলনায় বসে কান্না করছিলো। আকাশ অহনার পাশে এসে দাঁড়ালো। আকাশকে দেখে অহনা চোখের পানি মুছলো।
অহনার কান্না করা দেখে আকাশ ওর ওপর ক্ষিপ্ত না হয়ে নরম গলায় বললো, তুমি যখন ওকেই ভালোবাসো তাহলে আমায় বিয়ে করলে কেন? কি দরকার ছিল আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করার! আর ভালোবাসার মানুষকেই বা তুমি বিয়ে করলে না কেন? যাকে এতো ভালোবাসো তাকে হারালে কেন! আমার ধারণা এতোটাও অবুঝ তুমি নও।
অহনার ভেতর থেকে এবার ঠেলে কান্না বেড়িয়ে এলো। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, কি করে বিয়ে করবো তাকে? তাকে কোথায় পাব আমি? সে কি এই পৃথিবীতে আর আছে! সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে। অনেক!
.
আকাশ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বলে উঠলো, মানে?
হাতে থাকা ছবিটার দিকে ইশারা করে অহনা বললো, ওর নাম মোহন সেন। আমাদের ধর্ম ছিলো আলাদা। এক সঙ্গে পড়তাম। খুব কাছের বন্ধু ছিলো আমার। ধীরে ধীরে কখন যে বন্ধুর থেকে বেশি কিছুতে পরিণত হয়েছিল বুঝতেই পারি নি। দুজনে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি। আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ ওকে ছাড়া কিছু বুঝতোই না৷ সবার মধ্যমণি ছিলো ও। সব সময় সবাইকে হাসাতো। সেও মনে মনে আমায় পছন্দ করতো। আমিও তা বুঝতে পারতাম। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ধর্ম। একজন হিন্দু ছেলে হয়ে কোনো মুসলিম মেয়েকে প্রেমের প্রপোজাল দিতে তার মন শায় দিচ্ছিলো না। সে ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ততোদিনে আমি তাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছি। আমরা একে অপরের মনের কথা অবদি বুঝে ফেলতাম। মুখে কিছু বলতেই হতো না। ওকে ছাড়া কখনো কোনো ভালো খাবার আমি খেতাম না। সেও খেতো না। যা করতাম সব কিছু ওকে সাথে নিয়েই। এই ছবি গুলো ভার্সিটি থেকে পিকনিং এ গিয়ে তোলা। ওকে ছাড়া এক মুহুর্তও যেন ভাবতে পারতাম না আমি অথচ কোনো দিন তাকে বলাই হয় নি, আমি তোকে ভালোবাসি মোহন, খুব ভালোবাসি। তুই কি আমার সারাজীবনের সঙ্গী হবি!
অহনা কাঁদতে কাঁদতে আবারও বললো, শুধুমাত্র বন্ধু হয়েই ছিলো। আমার কষ্ট সে কখনো সহ্য করতে পারতো না। আমার চোখে পানি দেখলে তার মাথা খারাপ হয়ে যেত। ধর্ম আলাদা হওয়ার কারণে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে পর্যন্ত সাহস পায় নি। জানার পর যদি আমি কোনো ভাবে কষ্ট পাই! মুখে না বললেও আমি বুঝতে পারতাম, তার চোখে ছিলো আমাকে পাওয়ার প্রবল আকুলতা। আর মনে মনে আমিও চেয়েছিলাম তাকে।
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,তারপর?
.
অহনা আবারও বলতে শুরু করলো, আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি আরও কিছু চাইছিলাম। চেয়েছিলাম তাকে সারাজীবনের জন্য পেতে। কিন্তু সে তো তার মনের কথা জানাচ্ছিলো না। তাই আমার পাগলামো গুলোও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিলো। ওর সাথে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্যই হতো না আমার,ইচ্ছে হতো তার চুলের মুটি ধরে আছাড় দেই। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো।
মোহন সব বুঝতে পারতো যে আমি তাকে খুব করে চাইছি। তাই হয়তো শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আমাকে প্রপোজ করার। কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো সেইদিনই।
.
আমি ভার্সির গেটে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আছি। সেই দিন কেন যেন সবাই মুচকি মুচকি হাসছিলো।হয়তো ওরা আগে থেকেই জানতো মোহন আজ আমায় প্রপোজ করতে চলেছে। হঠাৎ মোহনকে দেখা গেল। ও হেটে আসছে। মোহন রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে দেখলাম অনেক গুলো গোলাপ ফুল। আজ ওকে অন্য রকম সুন্দর দেখাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে সেও মুচকি মুচকি হাসছিলো। মায়া ভরা সেই হাসি। আমার মনের মধ্যে অজানা অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিলো।
.
মোহন এগিয়ে আসছে ভেবেছিলাম আমিও আজ ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দিব। কিন্তু রাস্তা পার হতেই হঠাৎ একটা বাস এসে ওকে পিসে দিয়ে গেল। এটা দেখার সাথেই আমি ওখানেই জ্ঞান হারালাম। তিন দিন আমার জ্ঞান ছিলো না। যেদিন জ্ঞান ফিরলো তখন জানতে পারলাম মোহনকে ওই দিনই তার দেশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সমাধি করা হয়েছে। মোহনের বাবা ছিলো না। মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলো মোহন । বন্ধুদের কাছে জানতে পারলাম ঘটনার আগের দিন মোহন নাকি তার বাড়িতে আমার কথা বলে ওর মাকে রাজিয়েও করিয়েছিলো। সব শুনে আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না। সব কিছু পাওয়ার মুহুর্তে যেন সব হারিয়ে ফেললাম। মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কখনো কখনো মনে হয় মোহনের মৃত্যুর কারণ আমি ৷ ভুলে থাকার শত রকম চেষ্টা চালালাম। কেটে গেল দু বছর। আস্তে আস্তে মোহনের স্মৃতি মুছে গেলেও আমার মনের কোণে সে ঠিকই রয়ে গেছে।
.
আকাশের চোখে পানি চলে এসেছে। তা দেখে অহনা বলে উঠলো,একি তুমি কাঁদছো কেন?
আকাশ চোখের কোনার পানিটা মুছে তারপর বললো, কই না তো, চোখে কি যেন পরেছিল আরকি।
অহনাও তার গাল বেয়ে পরা পানি গুলো মুছে বলে উঠলো, জানো আকাশ, মোহনের একটা কথাই আমার বার বার মনে হয়, অহনা তুই সব সময় হাসি খুশি থাকবি। তোর কষ্ট আমার সহ্য হয় না রে । তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো। এখন আমার মনে হয়, হয়তো মোহন কোথাও থেকে দেখছে, আমি ভালো আছি! খুব সুখে আছি! হাসিখুশি আছি! এটাই তো চেয়েছিলো মোহন। আমার মুখের হাসি!
.
আকাশ চুপ করে রয়েছে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। অহনা হঠাৎ করে বলে উঠলো, আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে আকাশ! আমারও বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে।
আকাশ চমকে উঠলো। থমকে দাঁড়িয়ে আছে সে।
অহনা চোখে পানি নিয়ে আবারও বলছে, কি হলো! আমাকে নেবে না?
আকাশ এবার এগিয়ে এসে অহনাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
অহনা আকাশের বুকে মাথা রাখতে রাখতে বললো, আরো শক্ত করে!
আকাশ অহনাকে আরও শক্ত করে দুই হাতের বাহুতে আবদ্ধ করে ফেললো।
অহনাঃ তুমি আমায় ছেড়ে কোনোদিন যাবে না ডক্টর আকাশ!
পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে গেছে। তাই আকাশ এবার অহনাকে হাসানোর জন্য বলে উঠলো,আরে নাহ! তোমার বাবাকে কথা দিয়েছি না? তোমাকে সুস্থ করার দায়িত্ব পুরোপুরি আমার! হাহাহা…
অহনাও আকাশের কথা শুনে এবার হেসে ফেললো।
.
এদিকে রুমের ভিতর তুলির সাথে রৌদ্রের ঝগড়া লেগে গেছে। মেঘ বললো, আরে বাদ দে না ভাই! এতো রেগে যাচ্ছিস কেন!
রৌদ্রঃ ওয়াট রাবিশ! একটা ক্ষ্যাত মেয়ে কিনা আমায় বলে আমি তার ওড়না টেনে ধরেছি। এই মিথ্যা অপবাদ আমি কেন মেনে নেব হ্যাঁ! কত কত সুন্দরী মেয়েরা আমার পিছনে ঘুর ঘুর করে। কোনো ধারণা আছে ওর!!
অহনার মা এসে বললেন, ছাড়ো না বাবা! ওর কথায় কিছু মনে করো না। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। এসব বোঝে না।
অহনার মা তুলিকে এখান থেকে নিয়ে গেলেন। তুলি চলে যাওয়ার পর মেঘ বললো, তুই একটু বেশি বেশি বলে ফেললি, দেখতেই পাচ্ছিস মেয়েটা কতোটা সহজ সরল! যা সরি বলে আয়!
রৌদ্রঃ কোনো ইচ্ছে নেই ওই মাথা খারাপ মেয়েটার সাথে কথা বলার!
মেঘঃ আবার!! যা গিয়ে সরি বল। ভুলে গেছিস এটা ভাইয়ার শশুড়বাড়ি!
বলতে বলেই মেঘের ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। শ্রাবনী ফোন করেছে। মেঘ কলটা রিসিভ করলো৷
মেঘঃ হ্যাঁ বলো!
শ্রাবনী হাফাতে হাফাতে বলছে, কি আর বলবো! নীলা তো অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলেছে। তুমি জলদি ওদের বাড়ি যাও!
মেঘঃ ওয়াট! কি বলছো এসব!
শ্রাবনীঃ নিশ্চয়ই তোমার ওপর রাগ করেই সে এমনটা করে ফেলেছে।
মেঘঃ মানে আমি এখন ওদের বাড়ি যাব? ওর বাবা মা আমাকে আবার ফাঁসিয়ে দেবে না তো!
শ্রাবনীঃ আশ্চর্য মানুষ তো তুমি! একটা মেয়ে মরতে বসেছে আর তুমি এই সময় এমন কথা বলছে?
মেঘঃ হাহাহা..আমাকে এতো মেয়ের মাঝে একা রেখে ও মরবে। ওর সহ্য হবে?
রাগে শ্রাবনী কলটা কেটে দেয়। আর মেঘ তাড়াহুড়ো করে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
চলবে….
.