#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“কী রে? কী হয়েছে তোর? কাঁদছিলি কেন তুই? তাছাড়া চাঁদ এসব কী বলছে? কার সাথে কে এক হবে?”
নূর বিষাদভরা দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকালো। নীড় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। তাৎক্ষণিক নূরের কাঁধে হাত রেখে উত্তেজিত গলায় শুধালো,,
“কী হয়েছে তোর বলবি তো?”
নূরের চোখের কোণে আবারও অশ্রু ভরাট হয়ে এলো। মাথা নুইয়ে অস্পষ্ট গলায় বলল,,
“রোজকে আজ দেখতে আসবে ভাইয়া! বিয়েটা হয়তো এবার হয়েই যাবে!”
নীড় তাৎক্ষণিক নূরের কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের থুতনিতে হাত রাখল। মুখটা উঁচিয়ে নূরের বেদনাহত মুখমন্ডলে তাকিয়ে বলল,,
“একদিন বলেছিলাম না? তোর এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই? কারণ, রোজ হলো আমাদের চেয়েও বিশাল ধনী পরিবারের মেয়ে! তাই তাদের এক্সপেকটেশনও হাই লেভেলের হবে। পাত্র হিসেবে তারা দেশের টপ বিজনেসম্যানদের চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তোর বা আমার মতো সামান্য অফিস এমপ্লয়ি কিংবা কলেজ স্টুডেন্ট পাত্র তারা চাইবে না। অনেক হয়েছে পাগলামি নূর। এবার এসব বন্ধ কর! যা কখনো হবে না তা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। অনুশোচনা করে হেলা ফেলায় জীবনকে নষ্ট হতে দিস না। সময় থাকতে হাল ধর। এসব বিরহ ছাড় আর পড়াশোনায় ফোকাস কর। একদিন যখন পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো ভালো পর্যায়ে যেতে পারবি না? তখন দেখবি রোজের চেয়েও ভালো পরিবারের মেয়ে তোর পিছনে লাইন লাগিয়ে ঘুরবে! তখন তোকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না!”
নীড়ের হাতটা নূর এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিলো! মাটিতে সজোরে এক লাথ মেরে উচ্চ শব্দে চ্যাঁচিয়ে বলল,,
“তুমি আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছ না ভাইয়া। তাই মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলতে পারছ! জীবনে এই প্রথমবার নিজেকে খুব হেল্পলেস মনে হচ্ছে ভাইয়া। ভেতরের তিক্ত অনুভূতিগুলো বাইরে প্রকাশ করতে পারছি না! দম ফাঁটা এক নিষ্ঠুর অনুভূতি। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে ম’রে যাচ্ছি না কেন আমি? দয়া করে আমাকে আর শান্তনা দিতে এসো না ভাইয়া। তোমরা এখন আমাকে শান্তনা গুলে খাওয়ালেও আমি বুঝব না! কারণ আমি এখন ঐ পরিস্থিতিতে নেই। মানসিকভাবে কিছু বুঝার পরিস্থিতিতে নেই আমি! এই মুহূর্তে আমার ভেতরে কী চলছে তা একমাত্র আমিই জানি। একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু ভেবে দেখো না! একটা মেয়ের তিলে তিলে গড়ে ওঠা ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা, প্রত্যাশা সব এখন আমার উপরেই নির্ভর করছে। আমাকে আঁকড়ে ধরে মেয়েটি বাঁচতে চাইছে। অথচ আমাকে দেখো? হাত-পা ছেড়ে কীভাবে বসে আছি! তার জন্য কিছু করতে পারছি না। না পরিবার থেকে সাপোর্ট পাচ্ছি না নিজে সাহস যুগিয়ে কিছু একটা করতে পারছি! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু তার জন্য কষ্টই ভোগ করে যাচ্ছি। এর বেশি কিছু করতে পারছি না আমি। এই মুহূর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে ভাইয়া!”
ধপ করে নূর আবারও বেঞ্চিতে বসে পড়ল। মাথা নুইয়ে ব্যর্থ ভঙ্গিতে ভেতরে ভেতরে আর্তনাদ করতে লাগল। নীড় এবং চাঁদ অশ্রুসিক্ত চোখে নূরের দিকে তাকালো। আসলেই নূরকে এখন সামলে নেওয়ার বা শান্তনা দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে তারাও নেই। দুজনেই নূরের দুঃখে গভীরভাবে দুঃখিত। কিয়ৎক্ষণ সবার মধ্যে মৌনতা বিরাজ করল। পরিশেষে চাঁদ নীরবতা ভেঙে নাক টেনে চোখের জল সংবরণ করল। তাৎক্ষণিক নীড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,
“আপনি কী কিছুই করতে পারবেন না ভাইয়া? খালামনি বা আঙ্কেলকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু একটা করুন না প্লিজ।”
নীড় অসহায় দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ক্ষীণ গলায় বলল,,
“মা-বাবাকে বুঝিয়ে কী লাভ হবে চাঁদ? তাঁদেরও তো কিছু করার নেই। যেতে পারবে তাঁরা প্রস্তাব নিয়ে রোজের বাড়িতে? সেই অবস্থা আছে এখন আমাদের বলো? সম্পর্ক সমানে সমানে হওয়া উচিৎ চাঁদ। উঁচু-নিচু হলেই ঝামেলা। নূরকে আমি সেই প্রথম থেকেই বলছিলাম রোজকে নিয়ে বেশি সিরিয়াস হোস না। সম্পর্কটা বন্ধুত্ব পর্যন্ত রাখাই শ্রেয়। প্রেম-ভালোবাসায় পরিণত হলেই জ্বালা। নূর তখন আমার কথা শুনে নি। অগত্যাই জড়িয়ে পড়েছিল প্রেমের সম্পর্কে। এখন আমি বা আমরা কী করতে পারি বলো? কী করার আছে আমাদের? বাস্তব খুব নির্মম হয় চাঁদ। বাস্তবতার এখনো কিছুই দেখো নি তুমি বা তোমরা। যখন চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে রাস্তায় বের হবে তখন বুঝতে পারবে বাস্তবতা কতো কঠিন হয়! এই যে আমাকেই দেখো না এখন, বাস্তবতার চাপে পড়ে এখন আমি নিজের শখ আহ্লাদ ভুলে সংসারের হাল টানছি! বাস্তব এখন আমিও অনেকটা বুঝে গেছি।”
চাঁদ ব্যাকুল দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকালো। ব্যর্থ গলায় বলল,,
“তাহলে কী এখন আমাদের কিছুই করার নেই ভাইয়া?”
নীড় তব্ধ শ্বাস ছাড়ল! আশাহত গলায় বলল,,
“কিছুই করার নেই চাঁদ! শুধু অনুতাপ, অনুশোচনা আর মানিয়ে নেওয়া ছাড়া।”
হতাশ হয়ে নীড় হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। তৎক্ষনাৎ ব্যতিব্যস্ত গলায় নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে নূর। বাড়ি ফিরে চল।”
নূর কান্না থামালো। নাক টেনে বলল,,
“তুমি যাও। আমি পরে আসছি।”
“পাগল হয়েছিস তুই? তোকে ছাড়া আমি বাড়ি ফিরে যাব? এমনিতেই মন-মর্জি ভালো নেই তোর। আর তোকে এই বিধ্বস্ত অবস্থায় রেখে আমি বাড়ি ফিরে যাব?”
নূর বিরক্তি প্রকাশ করল। রূঢ় গলায় বলল,,
“আমি ঠিক আছি ভাইয়া। প্লিজ তুমি যাও। সময় হলে আমি নিজেই বাড়ি ফিরব। আমাকে নিয়ে তোমাদের কারোর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না! আমি ভালো আছি, ঠিক আছি।”
চাঁদ প্রসঙ্গ টেনে নিলো। নীড়ের দিকে নমনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বলল,,
“আর একটু থাকি না ভাইয়া। নূর ভাইয়ার মন ভালো হলে না হয় তখন আমরা তিনজন মিলে একসাথে বাড়ি ফিরব!”
নীড় মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। দ্রুত পায়ে হেঁটে নূরের পাশে বসল। নূরের নিষ্ক্রিয় মুখমন্ডলে কিছুক্ষণ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নীড় বেঞ্চির পেছনে মাথা এলিয়ে দিলো! নিরুপায় শ্বাস ছাড়ল। চোখ বুঝে দুঃশ্চিন্তায় ডুব দিলো। চাঁদ ও হেঁটে এসে নূরের অন্য পাশে বসল। নূরের ক্লেশভরা মুখমন্ডলে তাকালো। ভগ্ন গলায় বলল,,
“আজ যদি আমার কাছে আপনার জন্য কিছু করার মতো ওয়ে থাকত না? সত্যি বলছি সবটা দিয়ে আমি আপনাদের দুই হাত এক করে দিতাম! আফসোস! এখন আমার হাতে করার মতো কিছুই নেই। শূণ্য আমি, নিরুপায় আমি। আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো ভালো কোনো পথও খোলা নেই। আপনাকে এই অবস্থায় দেখতে সত্যি বলছি আমার খুব খারাপ লাগছে নূর ভাইয়া! যদিও জানি আপনি এখনো আমাকে আপন ভাবতে পারেন নি। হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যক্তিটা আপনি আমাকেই মনে করেন! তবুও বেহায়ার মতো বলছি আপনার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে নূর ভাইয়া। রোজ ভাবির জন্যও খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে করছে এখনি আপনার বুকে ভাবিকে ফিরিয়ে এনে দিই! চিৎকার করে সবাইকে বলি, “ভালোবাসা কখনো আলাদা হতে শিখায় না, ভালোবাসা একে অপরকে শক্ত বাঁধনে জুড়ে দেওয়া শিখায়! ভালোবাসা আছে বলেই পৃথিবী এখনো মানুষের বসবাসযোগ্য আছে। নয়তো সেই কবেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো!”
নূর চোখ তুলে চাঁদের দিকে তাকালো। নির্ভেজাল দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল! অতঃপর মৌণতা ভেঙে বিমূঢ় গলায় বলল,,
“আমি হয়তো এতদিন তোমাকে চিনতে ভুল করেছিলাম চাঁদ! হুট করেই কারো সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক নয়। একজন মানুষের সাথে ধীরে ধীরে মিশতে মিশতে বুঝা যায় মানুষটি আসলে কেমন! তোমাকে আমি যতটা মন্দ কিংবা বিরক্তিকর ভাবতাম তুমি আদৌতেই ততোটা মন্দ বা বিরক্তিকর নও! বরং সহজ, সরল, বোকা-সোকা, হয়তো অতিরিক্ত মিশুক ধরনের একটি মেয়ে! এই মুহূর্তে তুমি আমার জন্য যতোটা ভাবছ না? তা আমার নিজের ভাই ও ভাবছে না! দুজনের মধ্যে এখানেই বিস্তর ফারাক। ধন্যবাদ দিয়ে আমি তোমাকে ছোট করতে চাই না চাঁদ। শুধু এতটুকুই বলব, তুমি সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি আপন ভাবতে শুরু করো। ভাবো যে পৃথিবীর সবাই আপন। যা সবক্ষেত্রে উপযোগী নয়। ভালো মানুষী ছেড়ে দাও চাঁদ। তাহলে হয়তো কারো কাছ থেকে আঘাত পেতে হবে না।”
নিজের অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে নূর দীর্ঘ একটি শ্বাস ছাড়ল। তড়িৎ বেগে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জলগুলো মুছে স্বাভাবিক গলায় চাঁদ এবং নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“চলো বাড়ি ফিরে যাই। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে আমার সন্ধি রোজের সাথেই হবে! পৃথিবীর কোনো শক্তি-ই আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”
আর মুহূর্তও ব্যয় করল না নূর! আবারও চোখে ভাসমান জল নিয়ে জায়গা পরিত্যাগ করল। চাঁদ এবং নীড়ও হন্ন হয়ে নূরের পিছু পিছু হাঁটা ধরল। তিনজনই হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ির ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই নূর, চাঁদ এবং নীড় সাবরিনা আবরারের মুখোমুখি হয়ে গেল! সাবরিনা আবরার রাগী দৃষ্টিতে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের তিনজনের দিকে তাকালেেন। তেজী গলায় শুধালেন,,
“কোথায় ছিলি তোরা তিনজন হ্যাঁ? বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে বের হয়েছিলি যে তোরা তিনজন একসাথে বের হচ্ছিস?”
নীড় মাথা উঁচিয়ে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বলল,,
“বুঝতে পারি নি মা ফিরতে এতটা দেরি হয়ে যাবে। আসলে তিনজন মিলে কথা বলতে বলতে কখন যে এত বেলা হয়ে গেল টেরই পাই নি!”
সাবরিনা আবরার আর কথা বাড়াতে চাইলেন না। রাগ শান্ত করে নরম গলায় বললেন,,
“রেডি হতে যা। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া কিছুদিন পরেই তো তোর বিয়ে। তখন তো অফিসে যাওয়ার সময়ই পাবি না। এখনই অফিসের কাজ সব গুছিয়ে নে যা।”
নীড় মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। পাশ ফিরে নূরের দিকে একবার শোকাহত দৃষ্টি বুলিয়ে জায়গা পরিত্যাগ করল। নূরের বিবর্ণ মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে সাবরিনা আবরার ভ্রু কুঁচকালেন। উচাটন হয়ে নূরের দিকে খানিক এগিয়ে এলেন। সঙ্গে সঙ্গেই নূর চোখের জল ছেড়ে দিলো! সাবরিনা আবরার এবার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। অস্থির গলায় শুধালেন,,
“এই কী হয়েছে তোর হ্যাঁ? মুখটা এমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? আর কাঁদছিস-ই বা কেন তুই?”
দুঃখ সংবরণ করতে না পেরে নূর আকস্মিকভাবে সাবরিনা আবরারকে জড়িয়ে ধরল। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,,
“ভেতরে ভেতরে আমি ম’রে যাচ্ছি মা। খুব যন্ত্রণায় হচ্ছে ভেতরটায়। পারলে তোমার ছেলের জন্য কিছু একটা করো মা! আর না পারলে তোমার ছেলেকে গলা টি’পে মে’রে ফেলো প্লিজ!”
সাবরিনা আবরার হু হু করে কেঁদে উঠলেন। নূরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন। কৌতূহলী হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই নূর সাবরিনা আবরারকে ছেড়ে এক ছুটে নিজের রুমে ঢুকে গেল! ভেতর থেকে দরজার খিল আটকে দিল। সাবরিনা আবার দৌঁড়ে নূরের পিছু নিতেই চাঁদ পেছন থেকে সাবরিনা আবরারকে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
“নূর ভাইয়াকে এখন আটকানো যাবে না খালামনি। মন ভেঙেছে উনার! তুমি তো জানোই খালামনি, মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান। কিছুক্ষণের জন্য উনাকে একা ছেড়ে দাও খালামনি। মনকে স্থির করতে দাও!”
সাবরিনা আবরার মৃদু আওয়াজে চিৎকার করে বললেন,,
“কী হয়েছে বলবি তো? কে কার মন ভেঙেছে?”
চাঁদ ফার্স্ট টু লাস্ট সাবরিনা আবরারকে সব খুলে বলল। মনযোগ দিয়ে সব শুনলেন সাবরিনা আবরার। হঠাৎ উনি রূঢ় হয়ে উঠলেন! চাঁদকে এক ঝটকায় গাঁ থেকে ছাড়িয়ে চাঁদের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তটস্থ গলায় বললেন,,
“যা হয়েছে বেশ হয়েছে! ভুগতে দে এই ছেলেকে! আমি প্রথম থেকেই বারণ করেছিলাম রোজের সাথে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মেলামেশা না করতে। উচ্চ বংশের তারা। আমাদের সাথে কখন-ই তুলনা হয় না তাদের। শুনেছে সে আমার কথা? শুনে নি তো! আমার সিদ্ধান্তকে অবমূল্যায়ন সে করে গেছে না ঐ মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে? এবার বুঝুক মজা। আমার নিষেধ অগ্রাহ্য করার ফল ভুগুক।”
রাগে ফোঁস ফোঁস করে সাবরিনা আবরার রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন! হাবিব আবরার এতক্ষণ ধরে উনার রুম থেকে ড্রয়িংরুমের যাবতীয় সব কথাবার্তা শুনছিলেন! দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি। আবারও খবরের কাগজ পড়ায় মনোনিবেশ করলেন! শুনেও কিছু না শোনার ভান ধরলেন! কারণ কিছুই করার নেই এখানে উনার। সেই পাঁচমাস আগেই উনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আছেন! নীড়ের উপর ভরসা করেই এখন দিন চলছে উনার। চাকরী থাকা কালীন সময়ে যত সঞ্চয় বা পুঁজি জমিয়েছিলেন উনি! সব ভেঙে এই বাড়িটা তৈরী করেছেন। সঞ্চিত সব সম্বল উনার এখানেই শেষ! তাই চুপ করে বসে থাকা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই উনার!
চাঁদ হেঁটে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ঘুমিয়ে থাকা সোহানীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। কেঁদে কেটে সব ঘটনা সোহানীকে খুলে বলল। সোহানীও কষ্ট পেল! নূরের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করল।
,
,
কেটে গেল মাঝখানে দুই দিন। নূর এখনো নিজেকে ঘর বন্ধি করে রেখেছে! ঘর থেকে বের হচ্ছে না, কারো সাথে কথা বলছে না, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না, কারো সাথে মিশছেও না, এমনকি ঘরের দরজাটা অবধি খুলছে না! দুপুরের খাবারটা ছাড়া কিছুই মুখে তুলছে না সে। তাও আবার বেঁচে থাকার তাগিদে কোনো রকম দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছে। ভেতর থেকে দারুনভাবে ভেঙে পড়েছে সে। গত দুইদিন ধরে রোজের সাথেও কোনো রকম যোগাযোগ হচ্ছে না তার। রোজ যেন কোনো ভাবেই নূরের ফোনটা রিসিভ করতেই চাইছে না! নূরের এই বিমূঢ় অবস্থা দেখে বাড়ির পরিবেশ খুব থমথমে হয়ে আছে। কারো মুখে হাসি নেই, খুশি নেই, কথাবার্তা নেই, টাইম টু টাইম খাওয়া-দাওয়া নেই! চাঁদ ও এখন খুব মনমরা হয়ে গেছে। দুষ্টুমি কমিয়ে একদম শান্ত হয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে সুযোগ খুঁজছে নূরের সাথে একটিবার কথা বলার। তবে সেই সুযোগ কিছুতেই হয়ে উঠছে না চাঁদের। কারণ নূর কারো সাথেই কথা বলতে চাইছে না। সবকিছুতেই বিরক্তি প্রকাশ করছে। এরমধ্যেই চাঁদ সিদ্ধান্ত নিলো রোজের সাথে দেখা করার! তবে এর জন্য রোজের বাড়ির ঠিকানা বা ফোন নাম্বার প্রয়োজন। যার একটাও চাঁদের কাছে এখন নেই। তাই চাঁদ কোনো ভাবে সাদমানের সাথে যোগাযোগ করে রোজের ফোন নাম্বার কালেক্ট করল! বহু কষ্টে রোজকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই রোজের সাথে দেখা করার টাইম ফিক্সড করল! সেই প্ল্যান অনুযায়ী চাঁদ সন্ধ্যা হতেই নূরের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। রোজের সাথে দেখা করার প্রস্তাবটি নূরের কাছে রাখল। নূর যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেল! প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই সে লুফে নিলো! খুশিতে উত্তেজিত হয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে এলো। নূরের নেতিয়ে যাওয়া বিবর্ণ মুখমণ্ডল দেখে চাঁদের বুকটা তাৎক্ষণিক কেঁপে উঠল! চেহারার লাবণ্যতা কমে ফ্যাকাসে রং ধারণ করেছে নূরের। চোখের নিচে গভীর বিষাদের ছাপ! ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে রংহীন হয়ে পড়েছে। মুখটা ছোট হয়ে চুপসে আছে। মনের অজান্তেই কেন জানি না চাঁদের বুকটা ভাড় হয়ে এলো! চোখের কোণে জল জমে এলো। বহু কষ্টে চাঁদ নিজেকে সংযত করল। নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“এভাবেই যাবেন? নাকি রেডি হতে হবে?”
নূর কোনো প্রত্যত্তুর করল না। রুমে প্রবেশ করে বাইকের চাবিটি হাতে নিয়ে এক ঝটকায় চাঁদের ডান হাতটি চেপে ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা বাইকে ওঠে বসল! পেছন থেকে সাবরিনা আবরার এবং সোহানী হাজার ডেকেও তাদের দুজনকে আটকাতে পারল না! কারণ নূর এতক্ষণে বাইক স্টার্ট করে বাড়ির পাশের পার্কটির দিকে রওনা হয়ে গেছে। তাদের আটকায় আর কে? নূরের বর্তমান মরিয়া অবস্থা দেখে চাঁদ মৃদু হাসল। ছেলেদের আসলে এমন পাগলাটে রূপেই মানায়! বিষন্ন বা কাতর রূপটা তাদের সাথে একদমই যায় না। খুশিতে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে নূর বাইক চালানো অবস্থায় চাঁদকে উদ্দেশ্য করে প্রফুল্ল গলায় শুধালো,,
“রোজের ফোন নাম্বার পেলে কই?”
“সাদমান ভাইয়ার কাছ থেকে কালেক্ট করেছি।”
“সাদমানকে আবার কোথায় পেলে?”
“খালামনির কাছ থেকে সাদমান ভাইয়ার নাম্বার কালেক্ট করেছি!”
“বাঃহ! খুব বুদ্ধি দেখছি তোমার!”
“উঁহু! এতটাও বুদ্ধি নেই আমার মাথায়। তবে কেন জানি না হঠাৎ করে আমার মনে হলো রোজ ভাবির সাথে আপনার দেখা করাটা একান্তই প্রয়োজন। তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে যতোটা সম্ভব চেষ্টা করে করেছি আপনাদের দেখা করিয়ে দেওয়ার।”
“সাদমান কী এখন ঢাকায়?”
“হ্যাঁ। উনি ও আমাদের জন্য পার্কে অপেক্ষা করছেন। এইদিকে রোজ ভাবিও হয়তো চলে এসেছে!”
“কিন্তু রোজের পক্ষে তো সম্ভব না এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা!”
চাঁদ মাথা নুইয়ে নিলো। ধীর গলায় বলল,,
“রোজ ভাবি বিয়ের শপিং করতে এসেছেন শপিং মলে! ওখান থেকেই পার্কে আসবেন দেখা করতে।”
“আর একটা হেল্প করবে আমার?”
“বলুন না কী হেল্প?”
“রোজ যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তবে আমাদের এখান থেকে পালিয়ে যেতে হেল্প করবে?”
চাঁদ চমকালো! নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“তাহলে খালামনির কী হবে নূর ভাইয়া? আপনিও শেষ পর্যন্ত পালাতে চাইছেন?”
“হ্যাঁ চাইছি! হেল্প করতে পারবে কি-না বলো?”
চাঁদ কিছুক্ষণ ভাবল! অতঃপর নিস্তেজ গলায় বলল,,
“পারব!”
নূর মৃদু হাসল! খুশিতে আবেগপ্রবণ হয়ে বলল,,
“থ্যাংকস চাঁদ। ম্যানি ম্যানি থ্যাকংস!”
চাঁদ কিছু বলল না! শুধু শুকনো হাসল। কিছু সময়ের মধ্যেই নূর বাইক নিয়ে পার্কটিতে চলে এলো। বাইকটা পার্কিং এরিয়ায় পার্ক করে চাঁদের হাত ধরে নূর সোজা পার্কের ভিতর ঢুকে গেল। সারা পার্কটিতে চোখ বুলিয়ে নূর এবং চাঁদ রোজকে খুঁজতে লাগল। নূরের উৎকন্ঠা বেগতিক বাড়ছিল। বুকের ধড়ফড়ানিও বাড়ছিল। রোজকে একটি পলক দেখার জন্য সে পাগল হয়ে আছে। হন্ন হয়ে রোজকে খুঁজতে খুঁজতে তারা শেষ পর্যায়ে এসে রোজ এবং সাদমানকে পার্কের একদম শেষ কর্ণারে খুঁজে পেল! একটি নজর রোজকে দেখা মাত্রই নূরের অশান্ত মন শান্ত হয়ে উঠল! খুশিতে মৃদু হাসল৷ তাৎক্ষণিক চাঁদের হাতটি ছেড়ে সে এক দৌঁড়ে রোজের মুখোমুখি দাঁড়ালো। রোজের মুখের দিকে একদম তাকানো-ই যাচ্ছে না! নূরের মতোই প্রাণশূণ্য অবস্থা তার। নূরকে খুব কাছে থেকে এক পলক দেখেই রোজ ফটাফট চোখ নামিয়ে নিলো! ভেতরে ভেতরে হু হা করে কেঁদে উঠল। নূর আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না! নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে রোজকে জাপটে ধরল! সাদমান এবং চাঁদ পাশ থেকে তাদের দুজনকে ঘিরে রেখেছে। যেন আশেপাশের লোকজন বিশেষ কিছু আঁচ করতে না পারে। মুহূর্তের মধ্যেই রোজ নূরকে তার শরীর থেকে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিলো! নিষ্ঠুর দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ভুলে যাও আমাকে নূর! আগের মতো করে আবারও সব গুছিয়ে নাও। ভুলে যাও রোজ নামক কেউ তোমার জীবনে ছিল! যাকে তুমি শুধু ভালোবেসেছিলে, তবে তাকে নিজের করে আজীবন আগলে রাখতে পারো নি!”
নূর উতলা হয়ে উঠল। রোজের দু’কাঁধে হাত রেখে রোজকে ঝাঁকিয়ে বলল,,
“আমি তোমাকে সত্যিই আগলে রাখতে চাই রোজ। তবে নিজের দিক থেকে কিছু প্রতিকূলতার জন্য এই মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না আমি। তবে তুমি শুধু একবার হ্যাঁ বলে দেখো রোজ আমি এক্ষণি, এই মুহূর্তে তোমাকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাব!”
রোজ আর এক মুহূর্তও ব্যয় করল না। ঠাস করে নূরের গালে এক চড় মেরে বসল! চোয়াল উঁচু করে শক্ত গলায় বলল,,
“তুমি ভাবলে কীভাবে নূর? নির্বোধের মতো আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাব? নিজের বাবা-মাকে ঠকিয়ে আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাব? এত বড় জঘন্য আমার মনমানসিকতা? এত নিচু আমার বিবেক? আগামী পরশু আমার বিয়ে নূর! আগামীকাল গাঁয়ে হলুদ। আমার সারা বাড়িতে এখন বিয়ের ধুম লেগে আছে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজন কারোর কমতি নেই। সবাই কত খুশি আমার বিয়ে নিয়ে। বিশেষ করে আমার মা-বাবা। তাদের মুখ থেকে সেই খুশিটা আমি কেড়ে নিব নূর? এত বছর ধরে যে তারা আমাকে নিঃস্বার্থভাবে লালন পালন করে আসছে এই প্রতিদান দিব আমি তাদের?”
নূরসহ চাঁদ এবং সাদমান হতবাক হয়ে রোজের দিকে তাকিয়ে আছে! চক্ষুজোড়া ক্ষোভ নিয়ে রোজ নূরের দিকে তাকিয়ে আবারও রূঢ় গলায় বলল,,
“এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো নূর। আমার মতো নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করো! ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো নিয়ম কিন্তু পৃথিবীর কোনো ভালোবাসাতেই নেই। শুধুমাত্র চাঁদ আমাকে রিকুয়েস্ট করছিল বলেই আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছিলা! তাছাড়া তোমার সাথেও এই কথাগুলো বলার খুব প্রয়োজন ছিল তাই বিশেষ ভাবে আসা। বলা শেষ, এখন আমি গেলাম! আমার পিছু পিছু আসার একদম চেষ্টা করবে না নূর। বাঁধাহীনভাবে আমাকে এখান থেকে যেতে যাও!”
রোজ উপরে উপরে কথাগুলো বললেও ভেতরে ভেতরে সে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল! নূরকে চূড়ান্ত আঘাত করা ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না! মাত্র এক বছরের ভালোবাসার জন্য সে ২৪ বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারবে না! শীঘ্রই জায়গা পরিত্যাগ করল রোজ! একটিবারের জন্যও পিছু ফিরে নূরের দিকে তাকালো না। নূর এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। একই জায়গায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদ এবং সাদমান ব্যাকুল হয়ে নূরের দিকে এগিয়ে আসতেই নূর সেন্সলেস হয়ে সাদমানের কাঁধে লুটিয়ে পড়ল!
#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১২
#নিশাত_জাহান_নিশি
রোজ উপরে উপরে কথাগুলো বললেও ভেতরে ভেতরে সে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল! নূরকে চূড়ান্ত আঘাত করা ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না! মাত্র এক বছরের ভালোবাসার জন্য সে ২৪ বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারবে না! শীঘ্রই জায়গা পরিত্যাগ করল রোজ! একটিবারের জন্যও পিছু ফিরে নূরের দিকে তাকালো না। নূর এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। একই জায়গায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদ এবং সাদমান ব্যাকুল হয়ে নূরের দিকে এগিয়ে আসতেই নূর সেন্সলেস হয়ে সাদমানের কাঁধে লুটিয়ে পড়ল!
সাদমান হতবাক দৃষ্টিতে নূরের অবচেতন মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরের অকেজো শরীরটাকে আগলে ধরার মতো সামান্যতম জ্ঞানটুকুও নেই তার! অপরদিকে চাঁদ নিবার্ক ভঙ্গি কাটিয়ে বর্তমানে ফিরে এলো। শীঘ্রই উল্টো দিকে ঘুরে এসে নূরকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরল! চাপা আর্তনাদ করে সাদমানকে বলল,,
“মানুষটা অজ্ঞান হয়ে গেছে সাদমান ভাইয়া। প্লিজ উনাকে ধরুন। আমি তো একা পারছি না উনাকে সামলাতে।”
সাদমানের ধ্যান ভাঙল। উদ্বিগ্ন হয়ে নূরকে আষ্টেপৃষ্টে ধরল। চাঁদকে উদ্দেশ্য করে তৎপর গলায় বলল,,
“চাঁদ শক্ত করে ধরো নূরকে। আমাদের এক্ষণি এখান থেকে বের হতে হবে।”
নূরের মাথাটা চাঁদ তার কাঁধের উপর সযত্নে রাখল। উত্তেজিত গলায় সাদমানকে বলল,,
“আমরা কি এখন হসপিটালে যাব সাদমান ভাইয়া?”
“না চাঁদ। আমরা এখন বাড়ি ফিরব। সামান্য অজ্ঞান হয়েছে নূর। প্রাথমিক চিকিৎসাতেই ঠিক হয়ে যাবে।”
দুজনই নূরকে নিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো। চাঁদ এবং নূরকে রিকশায় বসিয়ে সাদমান হন্ন হয়ে পাশের দোকান থেকে একটি পানির বোতল কিনল। অনেকক্ষণ যাবত নূরের চোখে-মুখে পানি ছিটানোর পরেও নূরের জ্ঞান ফিরছিল না! চাঁদ সাংঘাতিক ঘাবড়ে গেল। শঙ্কিত গলায় সাদমানকে বলল,,
“ভাইয়া আমার না খুব ভয় করছে। নূর ভাইয়া ঠিক আছে তো? আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে গেল না তো?”
সাদমান রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই চাঁদ। সব ঠিক আছে। তুমি এক কাজ করো নূরকে নিয়ে এই রিকশাটা করে বাড়ি ফিরে যাও। আমি পেছনে নূরের বাইক নিয়ে আসছি। বাড়িতে পৌঁছেই তুমি ওকে বিছানায় শুইয়ে দিবে। রুমে কোনো চিৎকার চ্যাঁচামেচি বা হৈ-হট্টগোল করা চলবে না। আঙ্কেল এবং আন্টিকে বুঝাবে। আর আমি এদিকে বাড়ি ফেরার পথে নূরদের ফ্যামিলি ডক্টর হায়াত আঙ্কেলকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছি ওকে?”
চাঁদ শুকনো গলায় মাথা ঝাঁকালো। নূরকে তার কাঁধের সাথে অতি যত্নে এবং সাবধানে চেপে ধরল। রিকশাওয়ালাকে বলে সাদমান তাদের দুইজনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। অন্যদিকে সাদমান নূরের বাইকে করে প্রথমে ডক্টরের চেম্বারে গেল। ওখান থেকে ডক্টরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ডক্টরসহ নূরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
প্রায় দুঘন্টা পর। নূরের মাত্র জ্ঞান ফিরল। চারিদিকে পরিবারের সবাই ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবরিনা আবরার মুখ চেপে কাঁদতে ব্যস্ত। হাবিব আবরার মাথা নুইয়ে শোক ঢাকতে ব্যস্ত! চাঁদ এবং সোহানী রুমের দরজায় উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের চোখে এখনও আতঙ্কিত ভাব উদীয়মান। সাদমান অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে নূরের হাতের স্যালাইনের নলটি খুলে দিলো! পিটপিট চাহনিতে নূর বিস্তীর্ণ রুমটিতে চোখ বুলালো। পরক্ষণে আবার চোখ জোড়া বুজে অব্যক্ত যন্ত্রণায় চোখের জল ছেড়ে দিলো! সাবরিনা আবরার এবার ভীষণ চটে বসলেন। চোখ জোড়া লাল করে উনি নূরের পাশে বসলেন। বিনাশব্দ প্রয়োগে ঠাস করে নূরের গালে এক চড় বসিয়ে দিলেন! পরিবেশ তাৎক্ষণিক গরম হয়ে উঠল। হাবিব আবরার, চাঁদ, সোহানী এবং সাদমান উদগ্রীব ভঙ্গিতে সাবরিনা আবরারের দিকে এগিয়ে এলো। নূর টলমল দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকাতেই সাবরিনা আবরার নূরের গালে পুনরায় আরও একটি চড় মেরে বসলেন! শক্ত গলায় বললেন,,
“ঐ বাইরের মেয়েটা এখন তোর লাইফে এতটাই ইম্পর্টেন্ট হয়ে গেল নূর? যে ঐ একটা মেয়ের জন্য আজ তোর শরীরের এই দশা? নিজেকে এভাবে শেষ করে দিচ্ছিস তুই হ্যাঁ? আমি তো বলব ঐ মেয়েটা একদম ঠিক কাজ করেছে! তোকে ছেড়ে গেছে। পরিবার থেকে সে ভালো শিক্ষা পেয়েছে বলেই সে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। আফসোস, তোকে আমরা সেই সুশিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে পারি নি! আর এই কারণেই তুই আগে পরিবারের কথা না ভেবে একটা বাইরের মেয়ের কথা ভাবছিস! এই যে তোর বাপ, ভাই এবং আমি মিলে সেই ছোটোবেলা থেকে তোকে এত যত্নে, এত ভালোবেসে বুকে আগলে রেখে বড়ো করেছি সেই ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই? এতটাই মূল্যহীন আমাদের ভালোবাসা? ভেবে দেখেছিস কখনো? তোর বাপ যে এখন চাকরি বাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আছে এই গোটা সংসারটা এখন চলবে কীভাবে? কখনো মনে হয় না বাইরের মানুষদের কথা না ভেবে ভালোভাবে পড়াশোনা করে একটা ভালো পজিশনে যাই? বড় ভাইয়ের মতো নিজেও ঢাল হয়ে বাবার পাশে দাঁড়াই? একটু পরিবারের কথা ভাবী?”
নূর চোখ বুজে চোখের জল ছাড়ছে। হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না। হাবিব আবরার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাবরিনা আবরারের কাঁধে হাত রেখে বললেন,,
“বাদ দাও না এসব সাবরিনা। ছেলে বড়ো হয়েছে এখন, নিজের ভালো নিজে বুঝে। এখন তাদের গাইডলাইন দেওয়ার মতো বয়স আমাদের নেই! সময় ফুরিয়ে আসছে আমাদের। তবে আমার এই ছেলের থেকে আমি অনেক কিছু আশা রাখি! জানি না আদৌ সেই আশা পূর্ণ হবে কি-না! তার আরেক ভাই মাহিনের মতো এই ছেলেটাও কিছু একটা করে দেখাতে পারবে কি-না।”
হাবিব আবরার বিষন্ন মনে নূরের রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। সাবরিনা আবরার ফুঁপিয়ে কেঁদে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। উনি ও হাবিব আবরারের পিছু পিছু রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। তবে উনি আবারও ফিরে এলেন! চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তটস্থ গলায় বললেন,,
“খবরদার বলছি। নূরকে আর কোনোভাবে উস্কাবি না! তার কোনো অন্যায় আবদারকেও প্রশ্রয় দিবি না তুই! সাবধান করলাম তোকে। মনে থাকে যেন!”
চাঁদ কেঁপে উঠল! তাৎক্ষণিক মাথা নুইয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। সাবরিনা আবরার প্রস্থান নিলেন। ইতোমধ্যেই সোহানী চাঁদকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রাগে গজগজ করে চাঁদের হাত শক্তভাবে চেপে ধরল! চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“খালামনি কি বলে গেছে মাথায় আছে তো? নেক্সট টাইম যেন না দেখি নূরকে কোনোভাবে উস্কাতে। দয়া করে নিজের কুবুদ্ধিগুলোকে নিজের কাছেই রাখ। বাইরে প্রকাশ করিস না।”
চাঁদ কিছু বলল না। পিছু ঘুরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল! এক ছুটে বিছানার উপর ধপ করে শুয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল। অন্যদিকে সোহানী নূরের রুমে প্রবেশ করে সাদমানকে বলে আজকের রাতটা সাদমানকে নূরের কাছেই থাকতে বলল। সাদমানও এক কথায় রাজি হয়ে গেল। কিচেন থেকে খাবার দাবার সাজিয়ে এনে সোহানী নূরের রুমে রেখে গেল। সাদমান দায়িত্ব নিয়ে নূরকে জোর করে দু, এক লোকমা খাবার খাইয়ে দিলো। এরপর নূরকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো!
আজ রাতে বাড়ির অন্য সদস্যরা মুখে কিছু তুলল না। অভুক্ত অবস্থাতেই সবাই মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘড়ির কাটা রাত প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। নীড় আজ বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছে! অফিসে কাজের খুব চাপ ছিল তাই। সোহানী সজাগ ছিল বিধায় সদর দরজাটা আজ সোহানীই খুলে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই নীড়ের ক্লান্ত-শ্রান্ত এবং ঘর্মাক্ত মুখমন্ডল দেখে সোহানী বেশ ভাবুক হয়ে উঠল! নীড়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আজ ফিরতে এত দেরি হলো যে? কাজের চাপ কি খুব বেশি ছিল?”
নীড় মলিন হাসল। অফিসের ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,
“বাড়ির সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
সোহানী মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। নীড় তব্ধ শ্বাস ছেড়ে বলল,,
“নূর? নূরের কী অবস্থা?”
সোহানী মাথা নুয়ালো! ভার গলায় বলল,,
“এখন ভালো। তবে সন্ধ্যার দিকে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল!”
“মানে? কী বলছ কী তুমি?”
নীড় মরিয়া হয়ে উঠল! এক ছুটে সোহানীকে পাশ কাটিয়ে নূরের বেডরুমের দরজায় কড়া নাড়ল। উত্তেজিত হয়ে নূরের নাম ধরে বারংবার ডাকতে আরম্ভ করল। নীড় যেন এই মুহূর্তে বড্ড অধৈর্য্যে হয়ে পড়েছে! দুঃশ্চিন্তায় সে ভেঙে পড়েছে। ভাতৃত্বের টান অনুভব করছে খুব গাঢ়ভাবে! নীড়ের অবাধ্য হাঁকডাকে সাদমান উৎন্ঠিত হয়ে বিছানা থেকে উঠে এসে দৌঁড়ে দরজা খুলে দিলো। সাদমানকে দেখামাত্রই নীড় স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। অস্থিরমনা হয়ে সাদমান কিছু বলার পূর্বেই নীড় সাদমানকে পাশ কাটিয়ে ঘুমন্ত নূরের পাশে বসল। কয়েক দফা বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে নীড় নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। নিস্তেজ হয়ে থাকা নূরের বিবর্ণ মুখমন্ডলে তাকিয়ে নীড় আরও ব্যথীত হয়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে! চোখে জল নিয়ে সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“একটু খেয়াল রাখিস ওর। খাবার দাবার খেয়েছে তো?”
সাদমান নীড়ের দিকে এগিয়ে এলো৷ নীড়ের হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে তাকে অভয় দিয়ে বলল,,
“খেয়েছে ভাইয়া। ঘুমের ঔষধও খাইয়ে দিয়েছি। আই থিংক সকালে উঠে একটু বেটার ফিল করবে। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন ভাইয়া। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
নীড় আশ্বস্ত হলো। সাদমানের দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকালো। আবারও চোখ ঘুরিয়ে নূরের নেতিয়ে যাওয়া মুখমণ্ডলে তাকালো। বুকটা আবারও কেঁপে উঠল তার। তাৎক্ষণিক রুম থেকে প্রস্থান নিলো সে! পুনরায় সে সোহানীর সম্মুখীন হয়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় সোহানী থমকালো। নীড়ের অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো। শুকনো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কাঁদছেন আপনি?’
নীড় তাড়াহুড়ো করে চোখের জল মুছে নিলো। ধীর গলায় প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,
“বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেয়েছে?”
সোহানী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। নীড় হতাশ হলো৷ বিষন্ন শ্বাস ছাড়ল৷ জায়গা পরিত্যাগ করতে করতে বলল,,
“অনেক রাত হয়েছে সোহানী। এবার ঘুমিয়ে পড়ো।”
সোহানী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল! নীড়ের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর নীড়ের কথামতো তার বেডরুমে প্রবেশ করল। ঘুমন্ত চাঁদের পাশে সেও চুপটি করে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে অঢেল আদর নিয়ে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল!
,
,
পরেরদিন সকাল প্রায় নয়টা ছুঁইছুঁই। ঘুমের মধ্যেই চাঁদ হঠাৎ তার গাঁয়ে ঠাণ্ডা কিছুর অনুভূতি পেল! ফটাফট চোখ জোড়া খুলে সে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল! শঙ্কিত চোখে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই সে উদোম শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা নূরকে দেখতে পেল! টলমল শরীরে নূর চাঁদের গাঁয়ে হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে! চাঁদ অবাক হলো! ভ্রু যুগল সরু করে নূরের দিকে তাকালো। দৃষ্টি তার বিস্ফোরিত। নূর অর্ধখোলা চোখে পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে এখনও চাঁদের চোখে-মুখে ছিটাচ্ছে! চাঁদ এবার ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। মুখে লেগে থাকা পানির ছিঁটা গুলো দুহাত দিয়ে মুছে সে তেজী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কী হচ্ছেটা কী এসব? কী করছেন কী আপনি?”
নূর এবার পূর্ণ চোখ মেলে চাঁদের দিকে তাকালো। সম্বিত ফিরে পেতেই মাথা ঝাঁকালো। শক্ত গলায় বলল,,
“জায়গা দাও আমি ঘুমাব!”
চাঁদ তাজ্জব দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। গভীর এক ঘোরে তলিয়ে গেল সে। মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,
“আশ্চর্য! হলোটা কী এই লোকের? রাতারাতি এত পরিবর্তন? অতি শোকে লোকটা পাগল হয়ে গেল না তো?”
নূর রাগী দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“কী হলো? এখনও বসে আছো কেন? বললাম তো আমি ঘুমাব। কানে শুনছ না?”
চাঁদ এবার প্রচণ্ড ক্ষেপে গেল। চোখ লাল করে নূরের দিকে তাকালো। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আশ্চর্য তো! আপনি আমার বিছানায় ঘুমাবেন কেন? বিছানাটা কি আপনার?”
চাঁদের কথায় কোনোরূপ ভাবান্তর হলো না নূরের! বিনাশব্দ প্রয়োগে চাঁদকে টেনে হেছড়ে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলো! চাঁদের দিকে আঙুল তাক করে বলল,,
“কোনো রকম ডিস্টার্ব করার চেষ্টাও করবে না আমাকে। বুঝতে পেরেছ?”
চাঁদ তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজে কিছু বলার পূর্বেই নূর সটান হয়ে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল! চোখ বুজে বোধ হয় গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল! দেখে যেন মনে হচ্ছে কত রাত ঘুমায় না সে। চাঁদ ঘোর থেকে বের হয়ে এলো! চোয়াল উঁচু করে কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা নূরের দিকে তাকিয়ে সে তেড়ে এলো নূরের দিকে। ভাবুক গলায় বলল,,
“আমার রুমে এসে আমার সাথেই ফাফর? এ তো দেখছি চোরের মায়ের বড় গলা!”
চাঁদ আর এক মুহূর্ত ব্যয় করল না। নূরের করা সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে সেও ডেক্সের উপর থেকে আরও একটি পানির বোতল নিয়ে নূরের গাঁয়ে পানি ছিটাতে শুরু করল! নূর এবার নড়েচড়ে উঠল। পিটপিটে চোখে এদিক ওদিক তাকালো। অতঃপর মুখ উঁচিয়ে রক্তিম বর্ণের চোখ জোড়ায় পিছু ঘুরে চাঁদের দিকে তাকাল। তিক্ত গলায় বলল,,
“আবার শুরু করেছ না? আবার আমাকে জ্বালানো শুরু করেছ? বারণ করেছিলাম না আমাকে ডিস্টার্ব না করতে? তবুও কেন ডিস্টার্ব করলে?”
চাঁদ গর্জে উঠল। ক্ষীণ গলায় বলল,,
“কে কাকে জ্বালানো শুরু করেছে হ্যাঁ? আমি না আপনি? কে আগে কার রুমে এসেছে বলুন? কে আগে কাকে পানি ছিটিয়েছে? কে আগে কাকে নিয়ে টানা হেছড়া করেছে বলুন?”
নূর হুট করে শোয়া থেকে উঠে বসল। পা ভাজ করে বিছানার উপর বসল। কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সেট করল। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে নাক টেনে তিক্ত গলায় বলল,,
“তোমার সব ভাই-বোনরা এসে আমার রুম দখল করে রেখেছে! আমি কোথায় ঘুমাব বলো? আমার তো চোখের ঘুম এখনও ফুরায় নি। খুব জ্বলছে চোখগুলো। মাথাটাও ব্যথায় টনটন করছে। শরীরে একরত্তি শক্তিও পাচ্ছি না।”
চাঁদ খুশিতে মৃদু হাসল। নূরের দিকে পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কী বললেন আপনি? কে এসেছে?”
নূর ঘুমে বুদ হয়ে বাঁ দিকে মাথাটা বাঁকিয়ে ধীর গলায় বলল,,
“আয়মন ভাইয়া এসেছে। সাব্বির ভাইয়া এসেছে। নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি, জায়মা সবাই এসেছে। ওরা এসেই আমার রুমে অ্যাটাক করেছে! আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওরা নিজেই আমার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে।”
চাঁদ আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না! খুশিতে আত্নহারা হয়ে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিতেই নূর পেছন থেকে চাঁদকে মিনমিনে গলায় ডেকে বলল,,
“চাঁদ? আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে? প্রচণ্ড ব্যথা করছে মাথাটা। আম্মু রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। তাই আম্মুকে এখন ডাকতে ইচ্ছে করছে না।”
#চলবে…?
#চলবে…?