#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১৬
#নিশাত_জাহান_নিশি
“খাবার খেতে আসুন বলছি। নয়তো এই পুচিটাকে এক্ষণি আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিব! ভাল্লাগবে তখন? মজা লাগবে তখন সর্দি-কাশি নিয়ে ঘরে পড়ে থাকতে?”
নূর কটমট চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকালো। শার্টের এক অংশ দ্বারা বিস্তীর্ণ মুখের আদল ঢেকে নিলো। শার্টের তলা থেকে তেজী গলায় বলল,,
“এই তুমি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছ?”
চাঁদ শীঘ্রই বিড়ালছানাটিকে নূরের মুখের কাছে ধরল! নূরকে ভয় দেখানোর জন্য ছানাটিকে হেলিয়ে দুলিয়ে শক্ত গলায় বলল,,
“হ্যাঁ করছি! তো কী হইছে হুম? আপনি জানেন? রাতে না খেয়ে থাকাটা যে শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?”
“ক্ষতি হলে আমার হবে। তোমার কী হুম? আপদটাকে নিয়ে এখান থেকে যাও বলছি।”
“আমার কিছু না বুঝেছেন? হবে তো আমার খালামনির। বেচারি খালামনি! ছেলের জন্য এখনও না খেয়ে উপোস বসে আছে। ভাবছে ছেলের সাথে এক প্লেটে বসে খাবে।”
এতেও তেমন ভাবান্তর হলো না নূরের। সে একই জেদ নিয়ে বলল,,
“আমি খাব না বললাম তো। প্লিজ তুমি যাও এখান থেকে।”
জায়গা থেকে প্রায় এক ফুট দূরত্বে এসে সরে দাঁড়ালো নূর। শার্টের উপর থেকে আড়চোখে বিড়ালটির দিকে তাকালো। বিড়ালটি এখনও চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে! মূলত চাঁদের অতিরিক্ত হাতাহাতির ফলে বিড়ালটি ঘোর তিক্ততায় রাগে ফুসছে। এইদিকে নূর ভাবছে বিড়ালটি হয়তো তার উপর রাগে ফুলছে! নূরের ভয়কে আরও প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য চাঁদ বাঁকা হেসে বিড়ালটি নিয়ে আবারও নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। বিড়ালটির পায়ে আস্তে করে একটি চিমটি কাটল! সঙ্গে সঙ্গেই বিড়ালটি প্রখর রাগে ম্যাও করে উঠল। ঘটনার আকস্মিকতায় নূরের মুখ থেকে শার্টের অংশটি পড়ে গেল! বাতাসের সঙ্গে নূরের মুখে বিড়ালের গাঁয়ের গন্ধ ঢুকে গেল! আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না নূর! ছাদ থেকে এক দৌঁড়ে পালালো! যেতে যেতে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,
“এখন যদি আমার এলার্জির প্রবলেম হয় না? সত্যি বলছি চাঁদ তোমাকে আমি ছাড়ব না! সাথে ঐ আপদটাকেও বাড়ির ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলব।”
আর পিছু ফিরে তাকালো না নূর। এক দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে গেল৷ চাঁদ সহ উপস্থিত বাকি সবাই অট্ট হাসল। নীড় হাসতে হাসতে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“চাঁদ তুমি পারো ও বটে। একমাত্র তুমিই পারবে নূরকে জব্দ করতে!”
ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো নীড়। আয়মন এবং সাদমান হাসি থামিয়ে চাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালো৷ দুজনই আহ্লাদি হয়ে বিড়ালছানাটিকে আদর করতে লাগল। আয়মন জিজ্ঞাসু হয়ে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আচ্ছা চাঁদ ছানাটিকে পেলি কোথায়?”
চাঁদ বাঁকা হাসল। দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“পাশের বাসার মেইন গেইট থেকে চুরি করেছি!”
ঘটনার আকস্মিকতায় আয়মন এবং সাদমান ভড়কে উঠল! বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। সাদমান মুখটা হা করে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“চুরি করেছ মানে?”
চাঁদ মিটিমিটি হাসল। মাথা চুলকিয়ে ধীর গলায় বলল,,
“নূর ভাইয়ার বাইকে করে যখন আমি বাড়ি ফিরেছিলাম না? তখন পাশের বাসার মেইন গেইটের পাশে বিড়ালছানাটিকে দেখেছিলাম। তখন থেকেই ছানাটির প্রতি আমার নজর ছিল। এর এক ঘণ্টা পরই আমি জায়মাকে নিয়ে উৎসুক হয়ে আবারও পাশের বাসার মেইন গেইটে যাই! তখনও গিয়ে দেখি বিড়ালটি সে আগের মতোই একই জায়গায় বসে আছে! তাই আর দেরি না করে তখনই সুযোগ বুঝে বিড়ালটিকে নিয়ে আমরা ওখান থেকে পালিয়ে আসি! অনেক কষ্টে তাকে পোষ মানাচ্ছি!”
আয়মন এবং সাদমান দুজন দুজনের মুখ দেখাদেখি করছে। চাঁদের চুরি করার ট্রিক দেখে তারা অবাক হচ্ছে! এভাবে কেউ কারো বাড়ির সামনে থেকে ওপেনলি কিছু চুরি করে আনতে পারে? নিতান্ত সাহস আছে বলেই চাঁদ এই কাজটি করতে পেরেছে। চাঁদ এখনও ইচ্ছেমতো বিড়ালছানাটিকে আদর করে চলছে। আয়মন তখনি সন্দিহান গলায় চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“ছানাটির মালিক যদি বুঝে যান ছানাটিকে তুই চুরি করেছিস তখন?”
চাঁদ মুখটা কুঁচকালো। ভাবশূণ্য হয়ে বলল,,
“ধ্যাত। বুঝবে কীভাবে? চুরি করার সময় তো কেউ আমাকে দেখি নি! মুখে তো ওড়না বাঁধা ছিল আমার।”
আয়মন ভ্রু যুগল সরু করে চাঁদের দিকে তাকালো। উদ্বেগি গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“যদি ঐ বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে তখন?”
চাঁদ এবার শুকনো ঢোক গিলল! তবুও নিজের জেদে অটল থেকে বলল,,
“যাই হয়ে যাক ভাইয়া। এই বিড়ালছানাটিকে কিন্তু আমি কাউকে দিব না বলে দিচ্ছি। চুরিতে ধরা পড়ে গেলে ও না!”
সাদমান চাঁদকে আশ্বস্ত করল। নমনীয় গলায় বলল,,
“আরেহ্..চিল। এই ছানাটিকে তোমার কাউকে দিতে হবে না। একে তুমি নিজের কাছেই রেখে দাও। থোরাই না তুমি চুরিতে ধরা পড়বে। পাশের বাড়িতে তো কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাই নেই!”
তৎক্ষনাৎ চাঁদ দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠল। সাদমানের দিকে উৎফুল্ল দৃষ্টিতে তাকালো। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলল,,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। পুচিকে হারানোর ভয় থেকে আপনি আমাকে বাঁচালেন।”
সাদমান হঠাৎ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো! কিয়ৎক্ষণ একই দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল! মগ্নতা ভেঙে প্রেমময়ী গলায় বলল,,
“বিড়ালছানাটি না? তোমার মতোই মায়াবী দেখতে চাঁদ!”
সাদমানের দিক থেকে করা উপমাকে চাঁদ তেমন গুরুত্ব দিলো না! বরং স্বাভাবিক ভাবেই নিলো! মৃদু হেসে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। সাদমানের মুগ্ধিত দৃষ্টি এখনও চাঁদের যাওয়ার পথে সীমাবদ্ধ। আয়মন ভ্রু যুগল উঁচু করে সাদমানের দিকে তাকালো। কিছু মুহূর্তের জন্য সাদমানের মুগ্ধিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অতঃপর সন্দিহান গলায় বলল,,
“এই তুই আবার চাঁদের সাথে লাইন টাইন মারার প্ল্যানিং করছিস না তো?”
সাদমান ভড়কে উঠল! ঘটনার আকস্মিকতায় মাথা দুলিয়ে না বুঝালো। আয়মন স্বস্তি পেল। ছাদ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে বলল,,
“আমার বোন কিন্তু। দেখিস আবার, সত্যি সত্যি লাইন টাইন মারতে যাস না!”
সাদমান স্মিত হেসে পেছনের চুলগুলো টেনে ধরল। প্রফুল্লিত গলায় মনে মনে আওড়ে বলল,,
“প্রেম হয়ে গেলে আর কী করার আছে? তবে চেষ্টা করব নিজেকে সামলে নেওয়ার! যদি সামলে না পারি এক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই!”
আয়মনের পিছু পিছু সাদমান ও ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো। সোজা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। ডাইনিং টেবিলে অনেক আগে থেকেই খাবার সাজিয়ে রেখেছেন সোহানী এবং সাবরিনা আবরার। বাড়ির সব সদস্যরা এসে খাবার টেবিলে বসে পড়ল। নীড় থেকে শুরু করে হাবির আবরার, সাবরিনা আবরার, সোহানী, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি, চাঁদ, আয়মন, সাব্বির, সাদমান। তবে সবার মধ্য থেকে নূর মিসিং! বেচারা শাওয়ার নিতে ব্যস্ত। বিড়াল ছানাটিকে দেখার পর থেকে গাঁ তার ঘিনঘিন করছে! হাচ্চি-কাশি থেকে শুরু করে মাথাব্যথা অবধি হচ্ছে। মোট কথা এলার্জির প্রবলেম তার এই একটু সময়ের মধ্যেই জোঁ দিয়েছে! সাবরিনা আবরারের কথামতোই নূর শাওয়ার সেরে গাঁয়ে পাতলা একটা টি-শার্ট পড়ে খাবার টেবিলে চলে এলো। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে খাবার নিয়ে বসে থাকা সবার দিকে ব্যস্ত দৃষ্টিতে তাকালো। বিশেষ করে চাঁদের দিকে কটাক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! চাঁদের কোলে এখনো বিড়ালছানাটি রয়েছে। ছানাটিকে নিয়েই সে আহ্লাদ করে খেতে বসেছে! প্রচণ্ড জেদ দেখিয়ে নূর আয়মনের পাশের চেয়ারটি টেনে বসল। সবার প্লেটে তরকারি বাড়তে থাকা সাবরিনা আবরারকে উদ্দেশ্য করে তেজী গলায় বলল,,
“আম্মু। তুমি কী এই মেয়েটাকে বলবে বিড়ালছানাটিকে এক্ষণি বাইরে রেখে আসতে? আমার সামনে ছানাটিকে নিয়ে আহ্লাদ না করতে?”
সাবরিনা আবরার দ্বিমত পোষণ করলেন। গলা ঝেড়ে নূরের প্লেটে তরকারি বেড়ে দিলেন। শান্ত গলায় বললেন,,
“এত রাগ করার কী আছে বাবা? একটা বিড়ালছানাই তো। কত কিউট দেখতে ছানাটা বল? কারো ইচ্ছে করবে এই মিষ্টি ছানাটিকে বাইরে রেখে আসতে? তুই এক কাজ কর না বাবা, ছানাটি থেকে দূরে দূরে থাক। তবেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তোরও এলার্জির প্রবলেম হয় না, আর ছানাটিও আমাদের বাড়িতে থাকতে পারে!”
নূর অসন্তোষ প্রকাশ করল। অভিযোগের স্বরে বলল,,
“তুমিও এখন ঐ মেয়েটির পক্ষ নিয়ে কথা বললে মা?”
চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো৷ বাঁকা চাহনিতে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালটির মাথায় হাত বুলিয়ে হাসিমাখা গলায় বলল,,
“আমার খালামনিরও বিড়ালছানা পছন্দ বুঝলেন? এতদিন শুধুমাত্র আপনার জন্য বিড়াল পুষতে পারেন নি! আজ যখন একটা সুযোগ পেয়েছে তখন সেই সুযোগটা হাতছাড়া করবে কেন হুম? মায়ের শখ-আহ্লাদ পূরণ করার ইচ্ছে হয় না নাকি আপনার?”
নূর আর কথা বাড়াল না। রাগে গজগজ করে খাবার মুখে তুলল। না পেরে সে খাবারগুলো চিবিয়ে খাচ্ছে! খাবারের জায়গায় পারছে না সে চাঁদকে আস্ত চিবিয়ে খেতে! নূরের অবস্থা দেখে সাবরিনা আবরার মিটিমিটি হেসে চাঁদের দিকে তাকালেন। চাঁদ চোখ টিপে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। নূরকে জব্দ করতে পেরেছে বলে চাঁদ পৈশাচিক হাসল। আড়চোখে নূর দুজনের ভাব দেখছে! ভেতরে ভেতরে জ্বলেপুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে। উপস্থিত সবাই খাওয়ায় মনযোগ দিলো। নূরকে রাগাতে চাইছে না বলে সবাই হাসি চেপে রাখতে বাধ্য হলো।
,
,
পরের দিন।
ঘড়িতে সকাল প্রায় আটটার কাছাকাছি। রাতে ঘুমানোর সময় চাঁদ বিড়ালছানাটিকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিল। ছানাটিও বেশ আরাম পেয়ে চুপটি করে চাঁদের বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়েছিল! সকাল ঠিক সাতটা বাজতেই সোহানী ঘুম থেকে ওঠে রুমের থাই গ্লাসগুলো খুলে দিয়েছিল। সেই থাই দিয়ে প্রবেশ করা সকালের মিষ্টি রোদের আলো চাঁদের চোখে-মুখে উপচে পড়তেই চাঁদ ঘুম ভেঙে ওঠে বসল। পিটপিট চাহনিতে তার ডান পাশে তাকিয়ে দেখল নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি এখনও নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। চাঁদ এবার বিরক্তি নিয়ে বাঁ পাশে তাকাল। মুহূর্তের মধ্যেই চাঁদের বিরক্তিভরা চাহনি সতেজ হয়ে উঠল! বিড়ালছানাটি অর্ধখোলা চোখে চাঁদের দিকে খুব মিষ্টিভাবে তাকিয়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ বিড়ালছানাটিকে কোলে তুলে নিলো। আদুরে হয়ে বিড়ালটির গাঁয়ে অসংখ্য চুমো খেয়ে বলল,,
“ওলে আমার পুচি সোনাটা। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় হুম? মায়া লাগে না বুঝি আমার? তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে হয় না বুঝি আমার?”
ছানাটি আদর পেয়ে ম্যাও করে উঠল। হাত-পা নাড়িয়ে জিভ চাটতে লাগল। ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইল তার ক্ষিদে পেয়েছে! চাঁদ তার ইঙ্গিত বুঝল। মুখটা গম্ভীর করে বলল,,
“তোমার ক্ষিদে পেয়েছে পুচি?”
পুচি ম্যাও শব্দে ডেকে আবারও নীল নীল চোখে কাতর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় বুঝালো হ্যাঁ, তার ক্ষিদে পেয়েছে! চাঁদ আর বসল না। তাড়াহুড়ো করে পুচিকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ব্রাশে পেস্ট নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে তড়িঘড়ি করে সোজা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। সোহানী এবং সাবরিনা আবরার কিচেনে কাজ করছেন। তাই তারা চাঁদকে ড্রয়িংরুমে আসতে তেমন একটা খেয়াল করেন নি। ব্রাশ করতে করতে চাঁদ বিড়ালছানাটিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসল। সোহানীকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ডাক ছেড়ে বলল,,
“আপু? পুচির ক্ষিদে পেয়েছে। ওকে খাওয়ানোর মতো কিছু আছে কিচেনে?”
সোহানী প্রত্যত্তুর করার পূর্বেই সদর দরজার কলিংবেল বেজে উঠল। চাঁদ বিরক্তি প্রকাশ করল। নাক সিটকে বলল,,
“এই সাত সকাল আবার কে এলো?”
চাঁদ বসা থেকে উঠতে যাবে তখনি সোহানী দৌঁড়ে এলো কিচেন রুম থেকে। চাঁদকে উপেক্ষা করে সদর দরজাটি সে খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই একজন মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা পেরেশান হয়ে সোহানীর সামনে দাঁড়ালো। বেশ উত্তেজিত গলায় বলল,,
“তোমাদের বাসায় একটা সাদা করে বিড়ালছানা এসেছিল মা? কাল রাত থেকে আমার সুমুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না! মাত্র চারমাস চলছে আমার সুমুর। ওর মা ওকে দেখতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”
চাঁদ দূর থেকে কথাটা শুনতে পেল! মুহূর্তের মধ্যেই সে শঙ্কিত হয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই সে ছানাটিকে নিয়ে ড্রয়িংরুম থেকে দৌঁড়ে পালালো! সিঁড়ি বেয়ে উঠার পথে হঠাৎ সে নূরের মুখোমুখি হয়ে গেল! নূর ঘুম থেকে ওঠে মাত্র চোখ কচলাতে কচলাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল। রাতে ঘুম হয় নি তার। রোজের কথা ভাবতে ভাবতে গোটা রাত সে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে! অতিরিক্ত কান্নার প্রভাবে চোখ জোড়া ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। পূর্ণদৃষ্টিতে সে আশেপাশে তাকাতে পারছে না। রুম থেকে বের হয়ে এসেছে শুধুমাত্র অত্যধিক মাথা যন্ত্রণার কারণে। এক কাপ গরম গরম কফি খাবে বলে। এরমধ্যেই হঠাৎ তার চাঁদের সাথে দেখা হয়ে গেল। চাঁদকে ভয়ার্ত অবস্থায় দেখে নূর এবার পূর্ণদৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চোখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে ভ্রু যুগল সরু করে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কী হলো? তোমাকে এত ভয়ার্ত দেখাচ্ছে কেন?”
এরমধ্যেই সোহানীর গলার আওয়াজ ভেসে এলো চাঁদ এবং নূরের কানে! সোহানী ছটফটে গলায় চাঁদকে ডেকে বলল,,
“চাঁদ এদিকে আয়!”
চাঁদ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে পিছু ফিরে সোহানীর দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে ভালোভাবে বুকের মাঝে জাপটে ধরল। করুন দৃষ্টিতে সোহানীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো! বুঝাতে চাইল সে বিড়ালছানাটিকে দিবে না। সোহানী রেগে উঠল। তটস্থ গলায় বলল,,
“এদিকে আয় বলছি।”
চাঁদ আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। ব্রাশ মুখে রেখে দুহাতে বিড়ালছানাটিকে আঁকড়ে ধরে জায়গা পরিত্যাগ করতেই নূর বাঁকা হেসে পেছন থেকে চাঁদের হাতটি আঁকড়ে ধরল! নূর এতক্ষণে বুঝে গেছে চাঁদ কীসের জন্য এত ছটফট করছে। চাঁদের দুর্বল জায়গা খুঁজে পাওয়া মাত্রই নূর সেই জায়গায় আঘাত করল! বিদ্রুপাত্নক হেসে বলল,,
“এবার তুমি কী করবে চাঁদ? ঐ আপদটাকে তো এবার তোমার বিদায় করতেই হবে। বুঝতে পারি নি সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে ওঠা-টা আমার লাকি চান্স হয়ে দাঁড়াবে!”
#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি
“এবার তুমি কী করবে চাঁদ? ঐ আপদটাকে তো এবার তোমার বিদায় করতেই হবে। বুঝতে পারি নি সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে উঠা-টা আমার লাকি চান্স হয়ে দাঁড়াবে!”
চাঁদ পিছু ফিরল। ভয়াল দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। এই মুহূর্তে নূরকে দেখে তার জল্লাদের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না! চাঁদের হাত খসে এতক্ষণে বিড়ালছানাটি সিঁড়িতে ধপাস করে পড়ে গেল! নূরের হাতের হেঁচকা টানে সেই অনেকক্ষণ আগেই চাঁদের শক্ত হাতের বাঁধন ঢিলে হয়ে গেছে। যার কারণে বিড়ালটি আকস্মিক ভাবেই সিঁড়িতে ছিটকে পড়ে গেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো বিড়ালটি ব্যথা পেয়েও কোনো রূপ আর্তনাদ করল না। এমনকি জায়গা থেকেও একরত্তি নড়ল না! কোমড়ে ভর করে শান্ত রূপে দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়িতে। লেজ নেড়ে নেড়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে। গোল গোল নীল চোখে আবিষ্ট দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে! ধীর গলায় ম্যাও ম্যাও বলে ডাকছে। সাথে জিভ চেটে ক্ষুধামন্দা প্রকাশ করছে। সহসা চাঁদের দৃষ্টি পড়ল বিড়ালটির দিকে। নিতান্তই মায়ার আবেশে চাঁদের চোখের কোণে অবাধ্য জলেরা চিকচিক করে উঠল! নূরের হাতটি এক ঝটকায় ছাড়িয়ে চাঁদ তড়িৎ বেগে পুচিকে কোলে তুলে নিলো। আর এক মুহূর্ত ব্যয় করল না সে। এক ছুটে জায়গা পরিত্যাগ করল! পিছু ফিরে নূরের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। পুচিকে বুকের সাথে চেপে ধরল। মাথা নাড়িয়ে নূরকে না বুঝালো। মহিলাটির ভয়ে চাঁদ মুখ খুলার সাহসটাও পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছে না। ভেতরের কামনা প্রকাশ করতে কুন্ঠাবোধ করছে। নূর কোনোদিকেই ভ্রুক্ষেপ করল না। কটমট দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,
“থামো বলছি চাঁদ।”
নূরের কথা চাঁদ কানে তুলল না! এক ছুটে নিজের রুমে ঢুকে পড়ল। ঠাস করে রুমের দরজাটি ভেতর থেকে লক করে দিলো। বিশৃঙ্খলভাবে কয়েকদফা শ্বাস ফেলে পুচিকে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে সে পুচিকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল! নাকে মুখে কাঁথা টেনে পুচিকে বুকের মাঝে চেপে ধরল। কম্পিত গলায় অসহায়ত্ব নিয়ে বলল,,
“আমি তোকে কোথাও যেতে দিব না পুচি। পৃথিবী ওলোট পালোট হয়ে গেলেও না! ঐ নূরের বাচ্চা গভীর ষড়যন্ত্র করলেও না!”
পুচিও চাঁদের বুকের সাথে একাত্নভাবে মিশে গেল। জিভ বের করে চাঁদের ওড়না চাটতে লাগল! পায়ের নখ দ্বারা চাঁদকে খোঁচাতে লাগল। প্রকাশ করতে চাইল তার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। চাঁদ নিরুপায় দৃষ্টিতে পুচির দিকে তাকালো। গলা খাদে এনে বলল,,
“আর একটু ওয়েট কর পুচি। মহিলাটি এখান থেকে বিদায় হলেই আমি তোকে অনেক অনেক খাবার দিব। তুই যতো খাবার চাইবি সব ধরনের খাবার তোকে দিব। তবুও তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস না পুচি প্লিজ!”
এরমধ্যেই দরজায় খটখট আওয়াজ হলো! নূর একনাগাড়ে দরজায় টোকা মারতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদ বিষম খেয়ে উঠল। পুচিকে আঁকড়ে ধরে শঙ্কিত দৃষ্টিতে কাঁথা ভেদ করে দরজার দিকে তাকালো। নূর প্রতিশোধপরায়ন হয়ে হিংস্র গলায় বলল,
“চাঁদ দরজাটা খোলো বলছি। মহিলাটিকে তার বিড়ালটি ফেরত দাও। বিশ্বাস না হলে দেখে যাও মহিলাটি কীভাবে বিড়ালটির জন্য কাঁদছে। বিড়ালটির মা ও বিড়ালটির জন্য কাঁদছে। এভাবে নির্দয়ের মতো মায়ের থেকে বাচ্চাকে আলাদা করতে নেই চাঁদ। এত বড় একটা মেয়ে হয়ে অবুঝের মতো কাজ করো না প্লিজ!”
চাঁদের বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না নূর নাটক করে এই সমস্ত কথাগুলো বলছে। মন থেকে সে এই নীতি কথাগুলো মোটেও বলছে না। চাঁদ বিভৎস হয়ে উঠল। একরোখা গলায় চিৎকার করে বলল,,
“আপনি যতোই আমার থেকে পুচিকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন নূর ভাইয়া। আমি কখন-ই আপনার সেই চেষ্টাকে সফল হতে দিব না। পুচিকে আমি কোথাও যেতে দিব না। পুচি আমার সাথেই থাকবে। আমার সাথে থাকতেই পুচি কমফোর্টেবল ফিল করে।”
নূর এতক্ষণে মহিলাটিকে বলে দিয়েছে পুচি এই বাড়িতেই আছে! আর পুচি এখন চাঁদের সাথে চাঁদের রুমেই রয়েছে! নূরের কথা বিশ্বাস করে মহিলাটি চরম আশাবাদী হয়ে সোহানীকে ঠেলে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেছে। নূরকে ফলো করতে করতে চাঁদের রুমের অবধি চলে এসেছে। মহিলাটির সাথে সোহানী এবং সাবরিনা আবরারও উপরে ওঠে এলেন। এসেই দেখলেন মহিলাটি নূরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যথীত গলায় চাঁদকে ডেকে বলছে,,
“আমি তোমাকে চিনি না মা। তবুও বলছি আমার সুমুকে ফিরিয়ে দাও। সুমুর মা সুমুকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সুমু খুব ছোটো তো। তাই তাকে ধরে বেঁধে রাখা যায় না। হুটহাট করে মা’কে রেখেই একা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। প্লিজ মা তুমি সুমুকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও।”
সবার হাঁক ডাকে পাশে গভীর ঘুমে ডুবে থাকা নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল। উঠেই তারা দেখল চাঁদ পুচিকে বুকের সাথে মিশিয়ে চোখের জল ছেড়ে কাঁদছে! তারা চারজনই অবাক হলো। শোয়া থেকে ওঠে চাঁদের পাশে বসল। ঘুম জড়িত গলায় নাদিয়া চাঁদের কাঁধে হাত রেখে বলল,,
“তুমি কাঁদছ আপু?”
চাঁদ কান্নাজড়িত গলায় বলল,,
“দেখ না নাদিয়া, নূর ভাইয়া কত খারাপ একটা লোক! আমার থেকে প্রতিশোধ নিবে বলে ঐ মহিলাকে আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। এখন মহিলা এসেছে আমার কাছ থেকে পুচিকে কেড়ে নেওয়ার জন্য! পুচিকে তো আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি বল? কীভাবে তাকে যেতে দিই?”
তারা চারজনই ব্যথীত হলো। তবে এই অসহিষ্ণু পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তারা কার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে তাই বুঝতে পারছে না। চাঁদের যেমন একদিনেই পুচির প্রতি এত টান, এত ভালোবাসা, এত মায়া কাজ করছে তেমনি তো ঐ মহিলাটিরও! এমনকি পুচির মায়েরও! তাঁরা তো অনেকগুলো মাস ধরে পুচিকে দেখছে। পুচিকে লালন পালন করে আসছে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে চাঁদের চেয়ে তাদের বেশি আঘাত হওয়াটাই স্বাভাবিক! এরমধ্যেই নূরের গলার স্বর আবারও ভেসে এলো! নূর আক্রমনাত্নক গলায় সাবরিনা আবরারকে বলল,,
“মা। চাঁদকে বলো বিড়ালছানাটিকে নিয়ে এক্ষণি রুম থেকে বের হয়ে আসতে। এভাবে একজন ভদ্র মহিলাকে হেনস্তা করার কোনো মানে হয়? আন্টি নিতান্ত ভালো মানুষ বলেই চাঁদের সাথে এখনো ভালো ব্যবহার করছে। আন্টির জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণে চাঁদকে চোর বলে সাবস্ত করত! তাছাড়া বিড়ালটির মাও হয়তো বিড়ালটির জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি না?”
সাবরিনা আবরার চুপ করে রইলেন। মাথা নুইয়ে পরোক্ষভাবে অসম্মতি জানালেন। মহিলাটি এবার কাকুতি মিনতি করে সাবরিনা আবরারকে বললেন,,
“প্লিজ আপা কিছু একটা করুন। সুমুর মায়ের অবস্থা খুব-ই খারাপ। আপনিও তো একজন মা। আপনার সন্তানকে যদি কেউ অগত্যা বুক থেকে কেড়ে নেয় তখন আপনার কষ্ট হবে না বলুন?”
তৎক্ষণাৎ সাবরিনা আবরারের বুকটা কেঁপে উঠল! উনি এবার আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। চাঁদের অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় না দিয়ে উনি এবার চাঁদের রুমের দরজায় টোকা মারলেন। নিরুপায় গলায় বললেন,,
“চাঁদ মা দরজাটা খোল। পুচির মা সত্যিই পুচির জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে। সামিয়ার বুক থেকে তোকে কেড়ে নিলে সামিয়ার যেমন কষ্ট হবে? ঠিক তেমনি পুচির মায়ের বুক থেকে পুচিকে কেড়ে নিলেও পুচির মায়েরও ঠিক তেমনই কষ্ট হবে।”
চাঁদ এবার বিছানা ছেড়ে দাঁড়ালো। চোখের জল মুছে পুচিকে জায়মার কাঁথার তলায় লুকিয়ে রাখল! ধীর গলায় জায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“চুপ। বলবি না পুচি এখানে আছে! আমি মহিলাটির সাথে কথা বলে আসছি।”
জায়মা নির্বোধের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। চাঁদ আশ্বস্ত হলো। দৌঁড়ে গিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। অমনি নূর ট্যারা চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকালো! দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্যভাবেই চাঁদকে এক চোখ টিপে দিলো! বাঁকা হেসে আঙুল দিয়ে চাঁদের কপালে শ্যুট করেছে বুঝালো! বাম হাতের তর্জনী এবং মধ্যমা আঙুলে ফুঁ দিয়ে সে ইশারায় বলল,,
“নূরের পেছনে লাগার ফল বুঝলে তো? ইউ আর টোটালি ফিনিশড চাঁদ!”
চাঁদ চোয়াল শক্ত করে নূরের দিকে তাকালো। গরম চোখে তাকিয়ে বিরোধীতার ইঙ্গিত করল। এর ফাঁকেই মহিলাটি চাঁদের রুমে ঢুকে পড়ল! হন্ন হয়ে রুমের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বিছানার দিকে তাকালো। নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি এবং জায়মার দিকে তাকিয়ে পেরেশানি গলায় মৃদু চিৎকার করে বলল,,
“আমার সুমু কোথায়?”
নূরের থেকে লোহিত দৃষ্টি সরিয়ে চাঁদ হন্তদন্ত হয়ে মহিলাটির দিকে রুখে এলো। তোতলামো গলায় বলল,,
“সুসুসুমু নেনেই!”
নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহিও চাঁদকে অনুসরণ করে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। চাঁদ তাদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। ইশারায় বুঝালো ভালো করেছিস। এরমধ্যেই ঘটে গেল আরেক কাণ্ড! পুচি কাঁথার ভেতর থেকে গভীর আওয়াজে ডেকে বলল,,
“ম্যাও!”
ধরা পড়ে গেল সবাই! চাঁদ মুখে হাত দিয়ে চোখ জোড়া প্রকাণ্ড করে কাঁথার দিকে তাকালো। পুচি এতক্ষণে কাঁথার ভেতর থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে এলো! মহিলাটির দিকে তাকিয়ে ম্যাও করে উঠল। নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। মহিলাটি প্রাণোচ্ছ্বল হাসল! খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে পুচিকে কোলে তুলে নিলো। চুমো খেতে খেতে বলল,,
“আমার সুমু সোনা। তোমাকে মা কত খুঁজেছি বলো? মাকে এভাবে কষ্ট দিতে হয় বুঝি?”
নূর হাসতে হাসতে প্রায় বাঁকা হয়ে যাচ্ছে! পেটে হাত রেখে সে দেয়ালের সাথে মিশে যাচ্ছে। চাঁদ রাগে ফুসফুস করে নাক ফুলিয়ে নূরের হাসি দেখছে। পারছে না সে নূরকে এক্ষণি গলা টি’পে ধরতে! সোহানীও এবার নূরের সাথে তাল মিলালো! মুখ চেপে মিটিমিটি হেসে উঠল। সাবরিনা আবরার ব্যথীত দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালেন। চাঁদের কষ্টটা উনি বুঝতে পারছেন। কারণ, বিড়াল প্রাণীর প্রতি উনারও চাঁদের মতো বেশ ঝোঁক! চাঁদ এবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো! মহিলাটির দিকে তাকিয়ে ভগ্ন গলায় বলল,,
“আন্টি প্লিজ পুচিকে আপনি নিয়ে যাবেন না। পুচিকে আমার কাছেই রেখে যান। সত্যি বলছি আমি পুচিকে খুব যত্নে রাখব, খুব আদরে রাখব। ওর কোনো অনাদর হতে দিব না।”
পুচি মহিলাটির বুকের সাথে মিশে আছে। ক্ষণে ক্ষণে মহিলাটির মুখ, গলা, ঘাড় চেটে দিচ্ছে! আহ্লাদে প্রায় আটখানা। মহিলাটি চাঁদের দিকে ম্লান দৃষ্টিতে তাকালো। নরম গলায় বলল,,
“সম্ভব না মা! সুমুর মা সুমুকে ছাড়া থাকতে পারে না। তবে তুমি এক কাজ করতে পারো, প্রতিদিন একবার, দুবার করে সুমুকে যেয়ে দেখে আসতে পারো! ওকে আদর করে আসতে পারো। আমি একটুও রাগ করব না।”
চাঁদ মাথা নুইয়ে নিলো। মহিলার দেওয়া প্রস্তাব চাঁদের পছন্দ হলো না। সাবরিনা আবরার চাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। চাঁদের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বললেন,,
“রাজি হয়ে যা মা। একেবারে না দেখার থেকে তো দিনে দু, একবার দেখে আসা ভালো।”
চাঁদ এবার বেদনাহত দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। পরক্ষণে মাথা নুইয়ে মহিলাটিকে বলল,,
“আচ্ছা ঠিক আছে। পুচিকে আপনি নিয়ে যান। আমার যখনি পুচিকে দেখতে ইচ্ছে করবে তখনি কিন্তু আমি আপনার বাড়িতে চলে যাব!”
মহিলাটি মৃদু হাসল। নমনীয় গলায় বলল,,
“ঠিক আছে মা। এখানে আমার আর কোনো আপত্তি নেই।”
পুচিকে নিয়ে মহিলাটি প্রস্থান নিলো। পুচি মায়াময় দৃষ্টিতে একবার পিছু ফিরে তাকালো! চাঁদের দিকে তাকিয়ে ম্যাও করে ডেকে উঠল। চাঁদ অশ্রুসিক্ত চোখে পুচির দিকে তাকালো। পরক্ষণে আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। চোখের জল ছেড়ে সে দুহাতে ভর দিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ল। অশ্রুসিক্ত চোখে দরজায় দাঁড়িয়ে এখনও হাসতে থাকা নূরের দিকে তাকালো। নূর এবার হাসি থামাতে বাধ্য হলো! চাঁদের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। এই পর্যায়ে এসে নূর বুঝতে পারল চাঁদ সত্যিই খুব আঘাত পেয়েছে। নূরের মনে আকস্মিক মায়াবোধ জন্ম নিলো! ধীর পায়ে হেঁটে সে চাঁদের দিকে এগিয়ে এলো। মর্মার্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“সিরিয়াসলি? তুমি সত্যিই ঐ আপদটার জন্য কাঁদছ?”
চাঁদ নাক টেনে কেঁদে নূরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। জবাবে চুপ থাকল। নূর হুট করে আবারও অট্ট হেসে উঠল! শ্লেষাত্মক গলায় বলল,,
“এই প্রথম দেখলাম কোনো প্রাণীর জন্য কাউকে এভাবে কাঁদতে! তাও আবার এত বড় একটা মেয়ে। এমন ছিঁচকাদুনি হলে না? কপালে বর জুটবে না এই বলে দিলাম!”
নূর হাসতে হাসতে জায়গা পরিত্যাগ করল। সাবরিনা আবরারের কটমট দৃষ্টিও নূরের হাসিকে থামাতে পারল না! চাঁদ একদম চুপ হয়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে পড়ল! কাঁথা দিয়ে নাক মুখ ঢেকে নিলো। উদ্বিগ্ন হয়ে নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি এবং সোহানী চাঁদকে ডাকতে নিলেই সাবরিনা আবরার তাদের চারজনকে থামিয়ে দিলেন। মন্থর গলায় বললেন,,
“থাক। চাঁদকে এখন আর ডাকিস না। বেচারি খুব কষ্ট পেয়েছে। ওকে একটু নিজের মত থাকতে দে এখন। তোরা সবাই নিচে চলে আয়। ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেছে। একটু পরে আবার নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যেতে হবে। হাতে একদম সময় নেই।”
চাঁদ নাক টেনে কেঁদে ভেতরের কষ্ট বাইরে প্রকাশ করছিল। সবাই মাথা নুইয়ে ব্যথীত মনে এক এক করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুমের পরিবেশ শান্ত হয়ে উঠতেই চাঁদ কাঁথার তলা থেকে মুখ বের করল! নাক টিপে নাকের জল বের করল। নূরের প্রতি মনে ক্ষোভ জমিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,
“একদম ঠিক হয়েছে রোজ আপু ঐ বদ’মাইশ ছেলেটাকে ছেড়ে চলে গেছে! এর মত দজ্জাল টাইপ ছেলে আমি পৃথিবীতে আর দুটো দেখি নি। মন থেকে অভিশাপ দিলাম আমি! ঐ অসভ্য ছেলের কপালে যেন বউ না জুটে! আর জুটলেও যেন একটা বিচ্চু মেয়ে ঐ দজ্জাল ছেলেটার বউ হয়ে আসে! সংসার জীবনে যেন একরত্তিও শান্তি না পায় ঐ নূর। বিচ্চু বউটা যেন উনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একদম ছাড়খাড় করে দেয়!”
,
,
সকাল প্রায় এগারোটা বাজতে চলল ঘড়িতে। নাশতা খেয়ে বাড়ির সব মেয়েরা রেডি নীড়ের হবু শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য। নীড় সকাল নয়টা নাগাদ নাশতা খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। এই কয়েকদিন যাবত অফিসের কাজ সামলাতে সামলাতে নীড়ের একদম হুশ নেই। দম ফালানোর সময়টাও পর্যন্ত এই মুহূর্তে তার নেই। ইদানিং তো বাড়ির কোনো খবরা-খবরই রাখতে পারছে না সে! ব্যস্ততা তাকে এতটাই ঘিরে ধরেছে। নিজের হবু বউয়ের সাথেও দু’দন্ড কথা বলার সময় নেই তার! তার হবু বউয়ের তরফ থেকেও ইচ্ছাকৃত কোনো ফোন কলস আসে না! তবে এই দিকে নীড়েরও কোনো অভিযোগ নেই! ব্যস্ততা কাটিয়ে যদি নীড় কল করতে পারে তবেই তার হবু বউ কল তুলে তার সাথে হালকা দু, একটা কথা বলে! এক্ষেত্রে নীড় নিজেকেই সম্পূর্ণরূপে দোষী ভাবে। কারণ, সময়ের অভাবে সে-ই তার হবু বউয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না, দেখা করতে পারে না, কথা বলতে পারে না। আর মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই একটু লজ্জাশীল হয়। হবু বরের সাথে স্ব-ইচ্ছায় তাদের কথা বলতে বা দেখা করতে জড়তা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক!
অন্যদিকে আয়মন এবং সাদমান একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। রাতে নূরের যন্ত্রণায় তাদের ঘুম হয়নি সম্পূর্ণ! সারারাত নূর পাগলের মতো চিৎকার চ্যাঁচামেচি করেছে! স্মোকিং করেছে, রাতভর বাঁচালের মতো কথা বলে গেছে। নিজের দুঃখ, কষ্টগুলো আয়মন এবং সাদমানের সাথে শেয়ার করেছে। তারাও নীরব দর্শকের মতো নূরের বকবকানি শুনে গেছে! নূরের অনর্থক পাগলামি সহ্য করেছে৷ ভোর হতেই তাদের চোখে ঘুম লেগেছিল। সেই ঘুম ভাঙতে ভাঙতে তাদের সকাল দশটা বেজে গেছে! তাই সকালে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাই তারা জানতে পারে নি৷ সকালের নাশতা সেরেই তারা নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে। এইদিকে নূর ব্রেকফাস্টে কেবলমাত্র এক কাপ হট কফি খেয়েছে। এর বেশি কিছু মুখে রুচে নি। চাঁদ ঘুমে বুদ হয়ে আছে! সকালের নাশতাটাও এখনো পর্যন্ত করে নি সে। সাবরিনা আবরার বেশ ফিটফাট হয়ে রেডি হয়ে হন্তদন্ত হয়ে নূরের রুমে প্রবেশ করলেন। নূর রেডি হয়ে মাত্র রুম থেকে বের হচ্ছিল। এর মধ্যেই সাবরিনা আবরারকে সাথে দেখা হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই সে মাথা উঁচিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। অন্যদিকর উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে সাবরিনা আবরার নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালেন! তটস্থ গলায় বললেন,,
“চাঁদ এখনও পর্যন্ত রুম থেকে বের হয় নি৷ তোর উপর রাগ করে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন তোর করণীয় কী বল?”
নূর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো। শার্টের কলার ঝেড়ে বলল,,
“এখানে আমার কী করণীয় থাকতে পারে মা?”
“আলবাদ তোর করণীয় আছে। এক্ষণি তোর চাঁদের রাগ ভাঙাতে হবে! রেডি করিয়ে তাকে নিয়ে নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যেতে হবে। চাঁদ না গেলে কিন্তু আমি কোনো ভাবেই নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যাব না এই বলে দিলাম!”
নূর এবার ফেঁসে গেল মহা ফ্যাসাদে! গলার স্বর সে খাদে এনে বলল,,
“এখন ঐ বিচ্চু মেয়েটাকে আমার মানাতে হবে মা?”
“হ্যাঁ হবে! এক্ষণি যা বলছি। চাঁদকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার রাগ ভাঙিয়ে আমাদের সাথে নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি করাবি! যা এক্ষণি।”
নূর রাগে ফোঁস করে উঠল! সাবরিনা আবরারের শক্ত দৃষ্টিতে তাকালো। নিরুপায় হয়ে সাবরিনা আবরারের ধারালো দৃষ্টি থেকে চোখ নামিয়ে নিলো। জেদ দেখিয়ে চাঁদের রুমের দিকে রওনা হলো! চাঁদের রুমের সামনে এসেই নূর সজোরে এক লাথ মারল রুমের দরজায়! অমনি চাঁদ হকচকিয়ে ঘুম ভেঙে ওঠে বসল! বুকে এক গাঁধা থু থু ছিটিয়ে ভয়াল দৃষ্টিতে রুমের দরজায় তাকালো। রাগান্বিত অবস্থায় নূরকে দেখামাত্রই সে বিষম খেলো। শুকনো গলায় বলল,,
“আপনি? আপনি এখানে?”
নূর দাঁতে দাঁত চেপে শার্টের হাতা জোড়া ফোল্ড করল। দ্রুত গতিতে হেঁটে এসে চাঁদের বিছানার মুখোমুখি দাঁড়ালো। তেজী গলায় বলল,,
“কী ব্যাপার? এখনও ঘুমিয়ে আছো কেন? সকাল কয়টা বাজছে এখন হ্যাঁ? তোমার জন্য কী আমরা নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে বসে থাকব? নীড় ভাইয়ার শ্বশুড় বাড়ি যাব না?”
#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১৮
#নিশাত_জাহান_নিশি
“কী ব্যাপার? এখনও ঘুমিয়ে আছো কেন? সকাল কয়টা বাজছে এখন হ্যাঁ? তোমার জন্য কী আমরা নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে বসে থাকব? নীড় ভাইয়ার শ্বশুড় বাড়ি যাব না?”
তৎক্ষনাৎ চাঁদ বিষন্ন মনে মাথা নুইয়ে নিলো। কিয়ৎক্ষণ সে একই নীরবতা বজায় রাখল। নূরের তীক্ষ্ণ ফোঁসফঁঁসানির আওয়াজ চাঁদের কর্ণকুহরে বাজতে লাগল! চাঁদ কিছুটা ভয়ার্ত হয়ে গলা খাদে এনে বলল,,
“আপনারা চলে যান নূর ভাইয়া। আমি কোথাও যাব না!”
নূর তীব্র রাগে চোয়াল শক্ত করল। বিছানায় এক হাঁটু মুড়ে দাঁড়ালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,
“নাটক শুরু করছ না? আবার নাটক শুরু করছ? দুইদিন তো ভালোই ছিলা। এখন আবার নাটক শুরু করছ?”
চাঁদ মাথা উঁচিয়ে আহত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। সে বুঝতেই পারছে না নূর কেন এতটা ওভার রিয়েক্ট করছে তার সাথে! মনটা আরও বিষণ্ন হয়ে উঠল চাঁদের। শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে চাঁদ ধীর গলায় বলল,,
“আমি নাটক করছি না নূর ভাইয়া। সত্যি আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।”
“ইচ্ছে করছে না মানে কী হ্যাঁ? ইচ্ছে করছে না মানে কী? তুমি জানো? তোমার জন্য আম্মু জেদ ধরে বসে আছে! তুমি না গেলে আম্মুও যাবে না। বুঝতে পারছ তো আমি কি একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছি?”
“আমি খালামনিকে বুঝিয়ে বলছি নূর ভাইয়া। আপনি প্লিজ এতোটা হাইপার হবেন না।”
“তোমার বুঝানোর কোনো দরকার নাই। আমি বুঝতে পারছি ঐ বিড়ালটাই হলো সব নষ্টের মূল! সামান্য একটা বিড়ালের জন্য তুমি সকাল থেকে কান্নাকাটি করছ? শুধু তাই নয় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রুমে বসে নাটক জুড়ে দিয়েছ? এখন আবার বলছ কোথাও যাবে না। সমস্যাটা কী তোমার হ্যাঁ? সমস্যাটা কী? অন্যের বিড়াল চুরি করে এনে আবার তার উপর অধিকার খাটাচ্ছ?”
চাঁদ বিশৃঙ্খল দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। তবে নূরের কথার বিপরীতে একটা প্রতিবাদও করল না। সত্যিই তার মনটা ভীষণ খারাপ! পুচিকে সত্যিই খুব মিস করছে। এদিকে নূরের খারাপ আচরণেও রীতিমতো বিরক্ত সে! তাই এই মুহূর্তে কারো সাথে ঝগড়া করা বা তর্কে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই সে। বাধ্য হয়ে এবার নূরের কথা মানতে হলো চাঁদের। মাথা নুইয়ে বিষণ্ন গলায় বলল,,
“আপনি যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।”
নূর অবাক হলো! চাঁদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কৌতূহলী গলায় শুধালো,,
“এই? তোমার আবার শরীর টরীর খারাপ করলাম না তো?”
চাঁদ বিছানার উপর থেকে ওঠে দাঁড়ালো। এলোমেলো চুল গুলো খোঁপায় বাঁধলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নারত মুখটা দুহাতে মুছলো। অতঃপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। শান্ত গলায় বলল,,
“আপনি যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।”
ওয়াশরুমের দরজাটা চাঁদ সশব্দে ভেতর থেকে লক করে দিলো। নূর আবারও অবাক হলো। ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দিহান গলায় বলল,,
“হঠাৎ এত শান্ত হয়ে গেল এই বিচ্চু মেয়েটা? সত্যিই কী বিড়ালটার জন্য জান বের হয়ে যাওয়ার মতো দশা হয়েছে এই মেয়েটার? কী এমন অদ্ভুত শক্তি আছে ঐ বিড়াল প্রাণীর মধ্যে? যা একজন বাচাল, ঝগড়ুটে এবং দুষ্টু ধরণের মেয়েকে এভাবে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিতে পারে? কিন্তু আমি তো ঐ বিড়াল প্রাণীর মধ্যে এলার্জি ছাড়া আর বিশেষ কিছুই দেখতে পাই না!”
এসব ভাবতে ভাবতেই ভাবুক হয়ে নূর চাঁদের রুম থেকে বের হয়ে এলো। আকস্মিকভাবেই চাঁদের রুমের সামনে আয়মনের সাথে নূরের দেখা হয়ে গেল। আয়মন ছুটে আসছিল চাঁদকে ডেকে দিতে। এর মধ্যেই নূরের সাথে দেখা হয়ে গেল। তখনি হাঁপিয়ে ওঠা গলায় আয়মন নূরকে শুধালো,,
“কী রে? চাঁদ এখনো রেডি হয় নি?”
নূর বেশ ভাবুক ভঙ্গিতে আয়মনের দিকে তাকালো। প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,
“আচ্ছা ভাই আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। বিড়াল প্রাণীর মধ্যে কী এমন ক্ষমতা আছে যা একটা চঞ্চল মেয়েকে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিতে পারে? মানে কী একটা অবস্থা ভাই! সেই প্রাণীটার জন্য মেয়েটাকে আবার কাঁদতেও হবে? কেন ভাই? কাঁদার জন্য কী ভালো আর কোনো অপশন নেই? পৃথিবীতে কী মানুষের অভাব পড়ছে? তুই কাঁদলে মানুষের জন্য কাঁদবি। বিড়ালের জন্য কেন কাঁদবি?”
আয়মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল! উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“চাঁদ কি এখনও কাঁদছে বিড়ালটার জন্য?”
“আরে ব্যাটা শুধু কাঁদছে না। কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছে। বিশ্বাস না হলে রুমে গিয়ে দেখে আয়! এই মেয়েরা যে কখন কার জন্য কাঁদবে তুই টের-ই পাবি না। এদের মন বুঝা বড় দায়!”
নূর প্রস্থান নিলো। আয়মন কপাল ঘঁষল। উদ্যোগী গলায় বলল,,
“যা বুঝা যাচ্ছে। চাঁদকে এবার একটা বিড়ালছানা কিনে দিতেই হবে! তাও যদি ওর মনটা একটু ভালো হয়।”
,
,
রৌদ্রময় দুপুর। ধরণী জুড়ে সূর্যের প্রখর উত্তাপ। চোখ মেলে তেজস্বী আকাশের দিকে তাকানো যাচ্ছে না পর্যন্ত! চোখ যেন অবিলম্বেই ঝলসে আসছে। আশেপাশেও স্বচক্ষে তাকানো যাচ্ছে না। শরীরের টেম্পারেচার বেড়ে উর্ধ্বগতিতে ছুঁই ছুঁই করছে। অসম্ভব গরমের ভাপে গাড়িতে বসে থাকা সবার অবস্থা প্রায় সূচনীয়! এসির বাতাসও যেন গাঁয়ে লাগছে না তাদের। রোদের তাপে নাজেহাল অবস্থা সবার। তবুও যেন থেমে যাচ্ছে না মানুষের জনজীবন! চারিদিকে কোলাহল, কলরব, কর্মজীবন, কর্মব্যস্ততা। সড়কে অবাধ্য যানচলাচল, সর্বস্তরের মানুষদের অতিরিক্ত ভীড়। সেই মানুষের শরীরের উত্তাপে যেন আবহাওয়া আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে! পরস্পর একই বিন্দুতে এসে মিলিতে হচ্ছে।
বড় একটি হাইএক্স ভাড়া করেছিলেন হাবিব আবরার। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য। সেই হাইএক্সে সাবরিনা আবরার, হাবিব আবরার, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি, চাঁদ এবং সোহানী বসেছে। অন্যদিকে নূর, আয়মন, সাদমান, সাব্বির তাদের বাইকে করে হাইএক্সকে অনুসরণ করছে। সাব্বির একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে! গত দুইদিন যাবত সে তার বন্ধুর বাড়িতে ছিল। ঢাকা এসেছে বলেই বন্ধুর রিকুয়েস্টে বন্ধুর বাড়িতে থাকা!
নূরের বাইকের পেছনে বসেছে আয়মন। সাদমানের বাইকের পেছনে সাব্বির। হেলম্যাট পড়ে থাকায় গরমের ভাগে যেন নূরের মাথা শুদ্ধ পুরো শরীর সিদ্ধ হয়ে আসছে! গরমের তাড়নায় অসহ্য হয়ে নূর রাস্তার পাশ ঘেঁষে বাইকটি দাঁড় করালো। হেলম্যাটটা মাথা থেকে খুলে বাইকের হ্যান্ডেলে রাখল। তড়িঘড়ি করে বাইক থেকে নেমে ঘামে চুপসে থাকা শার্টের কলারটা ঝাড়লো। এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে নিলো। নাকের ডগায় লেগে থাকা ঘামগুলো টিস্যু দিয়ে মুছলো। উত্তপ্ত শ্বাস ছাড়তেই আয়মন বাইক থেকে নেমে হঠাৎ একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটটা মুখে নিয়ে আশেপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ব্যস্ত গলায় বলল,,
“একটা ঠাণ্ডা হলে ভালো হতো। যা গরম পড়েছে ভাই! সমস্ত শরীর হিট হয়ে আছে।”
নূর তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। আয়মনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। হুট করেই আয়মনের হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটি ছিনিয়ে নিলো। সিগারেটটায় দীর্ঘ এক ফুঁক দিলো। নাক-মুখ থেকে ধোঁয়া বের করে নিঃস্ব গলায় বলল,,
“একটু পর রোজের বিয়ে!”
আয়মন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো! বাইকের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। নূরের দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হেয়ালি গলায় বলল,,
“তো?”
দুই থেকে তিন টানে সম্পূর্ণ সিগারেটটি শেষ করে ফেলল নূর! রক্তিম দু’চোখে আয়মনের দিকে তাকালো৷ আর্ত গলায় বলল,,
“আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে ভাই। ড্রাইভ করার শক্তিটাও অবশিষ্ট নাই!”
নূরের ভেতরের কষ্টটাকে প্রশ্রয় দিতে চাইল না আয়মন! জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো সে। বাইকের হ্যান্ডেল থেকে হ্যালমেটটা হাতে তুলে নিয়ে মাথায় পড়ল। তড়িঘড়ি করে বাইকে ওঠে নূরকে উদ্দেশ্য করে স্থির গলায় বলল,,
“তুই পেছনে বস। আমি ড্রাইভ করছি!”
গড়িয়ে পড়া চোখের জলগুলো মুছে নিলো নূর! এদিক ওদিক অধীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কান্নাজড়িত গলায় বলল,,
“তুই যা। আমি একটু পরে আসছি!”
আয়মন রাগান্বিত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,
“এক্ষণি আমার সাথে যাবি কি-না বল? যদি উত্তরটা না হয় তবে কিন্তু আমার কুমিল্লা রিটার্ণ করতে বেশি সময় লাগবে না!”
নূর রুক্ষ দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“রিটার্ণ করবি মানে?”
চোখে-মুখে তিক্ততার ছাপ ফুটিয়ে তুলল আয়মন! রাশভারী গলায় বলল,,
“সত্যি বলছি, বসে বসে তোর এসব ফালতু ড্রামা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না! অবুঝের মতো কাজ করছিস তুই। নির্বোধের মতো একটা স্বার্থপর মেয়ের জন্য কাঁদছিস এমনকি তার জন্য অকারণে কষ্টও পাচ্ছিস। যা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। বিতৃষ্ণা ধরে গেছে সত্যি।”
নূরের ভয়াল শ্বাস আয়মনের কর্ণকুহরে তীক্ষ্ণভাবে বিঁধে যাচ্ছিল! তবুও আয়মন তার জেদ থেকে এক দন্ড নড়ল না। একরোঁখা দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরের জেদ এবার আয়মনের কঠোর দৃষ্টির কাছে হার মানতে বাধ্য হলো! আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আয়মনের কথা মতো সে বাইকের পেছনে ওঠে বসল! আয়মন স্মিত হাসল! সঙ্গে সঙ্গেই বাইক স্টার্ট করে দিলো। আবারও তারা হাইএক্সের পেছনে ছুটল। নূর মাথা নুইয়ে রোজের জন্য ছটফট করছিল! হাত-পা কচলাচ্ছিল! ভেতরের যন্ত্রণায় জ্বলে পুড়ে সে ছাঁই হয়ে যাচ্ছিল!
প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হাইএক্সটি এসে নূরের শ্বশুড় বাড়ির সামনে থামল। এক এক করে সবাই হাইএক্স থেকে নেমে পড়ল। বাড়ির মেইন গেইটের সামনেই নীড়ের শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! বিশেষ করে নীড়ের হবু শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী, হবু শালা এবং শালীরা। নীড়ের পুরো পরিবারকে দেখামাত্রই তারা হাসিমুখে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময় করল। সাবরিনা আবরার পালাক্রমে উনার বোনের মেয়েদের সাথে নীড়ের শ্বশুড়বাড়ির প্রত্যেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আয়মন এবং সাব্বিরের সাথেও সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পর্ব শেষে এক এক করে সবাই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। এরমধ্যেই সোহানীর আকস্মিক দৃষ্টি পড়ল বাড়ির ছাদের দিকে! একটি ফর্সা দেখতে মেয়ে ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার অবাধ্য জলের আনাগোনা! দেখতে বড্ড বিষণ্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কত রাত সে ঘুমোয় না। গভীর দুঃশ্চিন্তায় ডুবন্ত সে। সোহানী এবার তৎপর দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকালো। অমনি মেয়েটি তড়িঘড়ি করে জায়গা থেকে সরে গেল! সোহানী এবার অবাক হলো। মেয়েটির যাওয়ার পথে অনেকক্ষণ ধরে একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল৷ অন্যদিকে সাবরিনা আববার সবাইকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। সবার মাঝে সোহানীকে দেখতে না পেয়ে উনি চিন্তিত হয়ে উঠলেন। সোহানীকে খুঁজতে খুঁজতে উনি বাড়ির আঙিনায় চলে এলেন। একটু দূরে সোহানীকে দেখা মাত্রই উনি স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন। হাত দিয়ে ইশারা করে সোহানীকে কাছে ডাকলেন। উচ্চ আওয়াজে বললেন,,
“কী হলো সোহানী? তুই ঐখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস?”
সোহানীর ধ্যান ভাঙল। ম্লান হেসে সে দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। সাবরিনা আবরারের পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলল,,
“কিছু হয় নি খালামনি। আসলে বাড়িটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।”
সাবরিনা আবরার মৃদু হাসলেন। সোহানীর ডান হাতটি মোলায়েম হাতে ধরলেন। কোমল গলায় বললেন,,
“আগে ভেতরে আয়। পরে না হয় পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে।”
সোহানী মিষ্টি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সাবরিনা আবরারের হাত ধরে বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়ল। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ির সবাই ব্যস্ত অতিথি অ্যাপায়নে। চা, শরবত, কফি, কয়েক পদের মিষ্টি এবং নানান ধরনের ফল সাজিয়ে দিলেন সবার সামনে। চাঁদ এখনও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ধূসর রঙের কুত্তিটাও যেন তার মন খারাপের সাথে উজ্জ্বলতা বিয়োজন করেছে! সবার মাঝখানে বসে থেকেও তার মন খারাপের বিলুপ্তি ঘটছে না একরত্তিও! অনেকক্ষণ যাবত সাদমান পাশের সোফা থেকে চাঁদকে প্রত্যক্ষণ করছে! উসখুস করছে চাঁদের সাথে দু’দন্ড কথা বলার জন্য! তবে সময় সুযোগ কোনোটাই মিলাতে পারছে না সে।
অন্যদিকে নূর বিষণ্ন মনে মাথা নুইয়ে বসে আছে। আশপাশ ফিরে তাকানোর মন মানসিকতাও তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যেই হঠাৎ চাঁদের সেলফোনটি বেজে উঠল। তড়িঘড়ি করে চাঁদ হাতে থাকা সেলফোনটির দিকে উদগ্রীব দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মুহূর্তের মধ্যেই তার চোখ দুটো চড়কগাছ হয়ে উঠল। রোজের নাম্বার থেকে কল এসেছে! চাঁদ থমকে গেল। নূরের দিকে উদ্বেগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! আকস্মিকভাবে নূরেরও দৃষ্টি পড়ল চাঁদের দিকে! সন্দিহান হয়ে নূর চাঁদের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চাঁদ বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো! কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই দ্রুত পায়ে হেঁটে সে বাড়ির আঙিনায় চলে এলো। ব্যাকুল হয়ে কলটি রিসিভ করল। সাথে সাথেই ঐ পাশ থেকে রোজ কান্নাজড়িত গলায় বলল,,
“কেমন আছো চাঁদ?”
চাঁদ শুকনো ঢোক গিলল। কম্পিত গলায় বলল,,
“ভাভাভালো আছি।”
“নূর কোথায় চাঁদ?”
“এই তো এইখানেই আছে। কেন?”
“নূর ভালো আছে তো?”
“এটা তো আমার চেয়ে তোমার ভালো জানার কথা আপু!”
“আমি জানি নূর ভালো নেই! নূর আমাকে ছাড়া ভালো থাকতেই পারে না!”
“এতোই যেহেতু জানো তাহলে ছেড়ে গেলে কেন তখন নূর ভাইয়াকে হ্যাঁ? একটিবার সুযোগ দিতে পারলে না উনাকে?”
“সুযোগ দিলাম তো! নূরকে তো আমি সুযোগ দিয়েই গেলাম!”
“মানে? কীভাবে?”
“একটা রিকুয়েস্ট করব চাঁদ?”
“কী? কী রিকুয়েস্ট?”
রোজ ডুকরে কেঁদে বলল,,
“নূরকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবে তো?”
চাঁদ তাজ্জব বনে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় শুকনো কাশতে লাগল। কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,,
“এসব তুমি কী বলছ আপু? পাগল হয়ে গেছ তুমি? নূর ভাইয়াকে আমি ভালোবেসে আগলে রাখব?”
“কেন পারবে না চাঁদ? আমার নূর কোন দিক থেকে খারাপ? আমি অনেক ভেবে দেখেছি জানো? নূরের জন্য তুমি-ই পার্ফেক্ট!”
#চলবে…?
#চলবে….?
#চলবে…?
Accha ai golpo ta puro ta nai Kano?
Puro ta din