প্রেমে পাগল হয়েছি আমি পর্ব -০৪ ও শেষ

#প্রেমে_পাগল_হয়েছি_আমি
#পর্বঃ৪(শেষ পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা মনি

মোনালিসা এসে বলে,
‘আসলে আমার ভাইয়াকে ওয়াশরুমে,,আমরা জানতাম না ঐ ওয়াশরুমে কেউ আছে।’

মায়া মুখে ভেংচি কে’টে বলে,
‘জানো না নাকি জেনেও না জানার ভান করছ। তোমাদের ভাই বোনকে আমি ভালো করেই চিনি। সেই কবে থেকে আমার পেছনে পড়ে আছো। তোমার ভাই তো একটা পাগল। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আমায় পাগল করে দিল আমি পাত্তা দেইনি আর আজ পুরো আমার বাড়িতে চলে এলো।’

মিরাজঃতুমি ভুল বুঝছ মায়া। আমি তোমার পিছু নেইনি। অনেক আগেই আমি তোমায় ভুলে গেছি। তাই তো আজ আমি আমার মা-বাবার কথায় পাত্রী দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে এভাবে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে জানলে কোনদিনই আসতাম না।

মুনিয়া চৌধুরী,আনোয়ার চৌধুরী,মোহনার মা-বাবা সবাই অবাক হয়ে এসব কথা শোনে।

মোহনা সেরকম অবাক হয়না কারণ মায়া অনেক আগেই তাকে বলেছিল যে একটা ছেলে তার প্রেমে পুরো পাগল। তাকে রোজ বিরক্ত করে শুধু তাই নয় ছেলেটার বোনও তাকে নিজের ভাবি বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিছুদিন আগেই সে ছেলেটাকে সবার সামনে থাপ্প’র মে’রে তাকে রিফিউজ করে। এরপর থেকে ছেলেটা বা তার বোন আর কখনো মায়াকে ডিস্টার্ব করে নি। এখন সেই ছেলেই যে এভাবে মোহনাকে দেখতে আসবে সেটা সে ভাবতেই পারেনি।

মোহনা ভাবে হয়তো এই ছেলেটা সব জেনেশুনেই চলে এসেছে তার বোনকে ডিস্টার্ব করার জন্য।

মোহনাঃএক্ষুনি আপনারা সবাই আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বলছি। নাহলে সিকিউরিটি গার্ড ডেকে বের করে দেব।

‘হাত দিয়ে তো দেখুন ওনাদের গায়ে।’

কারো গলার আওয়াজে সবাই পিছনে ফিরে তাকায়। আর কেউ নয় আমির বলেছে কথাটা। মুনিয়া চৌধুরীর থেকে ঠিকানা নিয়ে সে চলে এসেছে। আমিরকে দেখেই মোহনার রাগ নিমেষেই গায়ের হয়ে যায়। তার মনে বসন্তরা এসে বাসা বাধে। কারণ এই আমিরকেই তো সে ৪ বছর ধরে একতরফাভাবে ভালোবাসে। সেই কলেজ লাইফ থেকে আমিরের উপর তার ক্রাশ। কতদিন পর আমিরকে দেখে তার মনে ফুল ফুটে ওঠে।

৭.
মোহনার মা-বাবা তাদের মেয়ের ব্যবহারের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চায়। মুনিয়া চৌধুরী কিছু বলতে চাইলেও আনোয়ার চৌধুরী ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য তাকে থামিয়ে দিয়ে চুপচাপ সবাইকে নিয়ে চলে যায়।

আমিরও চলে যেতে যাচ্ছিল মোহনা তখন পিছন থেকে ডাক দেয়,
‘কতদিন পর তোমায় দেখলাম।’

আমিরঃতোমার পাগলামিটা আজো যায়নি।

মোহনাঃতোমার প্রেমে একবার যে পাগল হবে সে আজীবন পাগলই থেকে যাবে আমির।

আমিরঃপাগলামিটা কম করো। আমি ডাক্তার এবং উকিল এই দুইজনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই পছন্দ করি। কারণ তারা দুজনেই দেয় মিথ্যা আশার বাণী।

আমির আর কোন কথা না বলে চলে যায়। মোহনা সন্তর্পণে তাকিয়ে থাকে।

বাইরে এসে মুনিয়া চৌধুরী তার সব রাগ আনোয়ারের উপর ঢালতে থাকেন।

‘ঐ মেয়েটা আমাদের কিভাবে অপমান করল আর তুমি নিজে তো কিছু বললেই না আমাকেও বলতে দিলে না।’

আনোয়ারঃএভাবে অন্যের বাড়িতে দাড়িয়ে ঝামেলা করা ভালো দেখাতো না। আর তুমি এভাবে আমায় দো’ষ দিতে পারোনা। আমি কিন্তু এই মেয়েকে দেখতে আসার কথা বলিনি। তুমি নিজেই এসেছ।

মুনিয়াঃমানছি এবার ভুলটা আমার। কিন্তু তাই বলে একটা সামান্য মেয়ে হয়ে মুনিয়া চৌধুরীর পরিবারের মানুষদের এভাবে অপমান করবে। আমি কতটা ডে’ঞ্জা’রাস এবার ঐ মেয়েটা টের পাবে।

মিরাজঃআম্মু তুমি আর শুধু শুরু কোন ঝামেলা করিও না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর এসব বলে কোন লাভ নেই।

মোনালিসাঃহ্যা আম্মি। এসব নিয়ে আর কিছু ভাবার দরকার নেই। দো’ষটা আমাদেরও ছিল। এখন ঠাণ্ডা মাথায় বাড়ি চলো।

আমিরঃমোনালিসা একটু এদিকে আসবি তোর সাথে কথা আছে।

আমিরের কথাটা শুনে মোনালিসার নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল মা। সে তার মা-বাবাকে এগিয়ে যেতে বলে ছুটে আসে আমিরের কাছে। আমির মোনালিসার হাতে কিছু একটা দিয়ে বলে,
‘বাড়িতে গিয়ে এটা খুলে দেখবি। আই হোপ তোর এটা ভালো লাগবে।’

মোনালিসা আমিরের থেকে গিফট পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আনন্দে গান গাইতে গাইতে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে আসার পর এমন একটা কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি সে। মিরাজ মায়ার ছবি দেখছে আর হাসছে। মোনালিসা তো কিছুই বুঝতে পারে না। যেই মেয়ে তার ভাইকে এত অপমান করল, তার কথাই ভাবছে। মোনালিসা তার ভাইয়ের থেকে মায়ার ছবিটা কেড়ে নিয়ে বলে,
‘তোর কি একটুও আত্মসম্মান নেই? যেই মেয়ে তোকে এতবার রিফিউজ করল তার ছবি দেখছিস?’

মিরাজঃতোর যেন খুব আত্মসম্মান আছে? আমির এত অপমান করার পরেও ছুটে যাস কেন তাহলে?

মোনালিসাঃকারণ আমি বুঝি যে আমির ভাই মুখে যাই বলুক মনে মনে সত্যিই আমায় ভালোবাসে। তাইতো,,,,

মোনালিসা আর কিছু বলে না। এখনই গিফটের ব্যাপারে বলাটা হয়তো ঠিক হবে না ভেবে সে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করে।

মিরাজঃএকতরফা ভালোবাসার জন্যই তো মানুষ পাগল হয়। আমিও নাহয় মায়ার প্রেমেই পাগল হলাম। ✨

৮.
মোনালিসা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বাড়িতে বিয়ের তোরজোর চলছে। কার বিয়ে হবে আজ সেটাই মোনালিসা বুঝতে পারছে না।

মিরাজ আচমকা মোনালিসার কাছে এসে বলে,
‘কিরে নিশ্চয়ই কার বিয়ে আজ সেটা বুঝতে পারছিস না।’

‘সত্যিই পারছি না। আজ কি তোমার বিয়ে ভাইয়া।’

‘আরে না পাগলী আজ তোর বিয়ে।’

‘কি আমার বিয়ে! কিন্তু কার সাথে? শোন আমি কিন্তু এভাবে আমির ভাই ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।’

‘আমার মনে হয় তুই কাল আমিরের দেওয়া গিফট টা খুলে দেখিস নি। তাইনা?’

‘না। কেন?’

‘খুলে দেখ।’

মোনালিসা নিজের রুমে গিয়ে গিফটটা খুলে দেখে সেখানে লেখা,
‘তোর পাগল প্রেমের কাছে শেষ অব্দি ধরা দিলাম মোনালিসা। কাল আমাদেরও বিয়ে সবটাই তোর জন্য সারপ্রাইজের মতোই ছিল।’

মোনালিসার তো এসব কিছু বিশ্বাসই হচ্ছিল না। তার মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে।

মিরাজঃতুই কোন স্বপ্ন দেখছিস না মোনা। আমি আম্মুকে তোর আমিরের প্রতি ভালোলাগার কথা জানিয়েছিলাম। সব শুনে আম্মু আমিরের সাথেও এই বিষয় নিয়ে কথা বলে।আমিরও তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। আম্মু তাই আজই তোদের বিয়ে ঠিক করেছে। ভবিষ্যত জীবনের জন্য শুভকামনা আমার বোন।

মোনালিসা খুশিমনে নাচতে থাকে।সারাদিনটা তার কাছে স্বপ্নের মতোই ছিল। বিয়ের আগ মুহুর্তে আমিরের জন্য অপেক্ষা করছিল মোনালিসা। আজ যে তার স্বপ্নপূরণের দিন।

বিয়ের সাজে বসে ছিল মোনালিসা। আজ তার অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছিল না। অবশেষে সেই সুবর্ণ সময় চলে আসে ✨ বরবেশে আমির উপস্থিত হয় তার সামনে।

আমির এসেই মোনালিসার দিকে তাকায়। তাকিয়ে বলে,
‘কোন বিয়ে হবে না। এখান থেকে উঠে পড় মোনালিসা।’

আমির কথাটা কানে আসতেই মোনালিসা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে আপনাআপনি নোনাজল গড়িয়ে পরে।সব স্বপ্ন যেন মুহুর্তে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।

মুনিয়া চৌধুরীঃএসব তুমি কি বলছ আমির? কেন বলছ? কি কারণে এরকম কথা বলছো?

আমিরঃআপনার মনে আছে মিসেস চৌধুরী একদিন আপনার জন্য আমার আম্মুও ঠিক এইভাবে বিয়ের আশায় বসে থেকে শেষপর্যন্ত অপদস্ত হয়েছিল৷ সেদিন সম্মান বাচানোর জন্য আমার আম্মুর চাচাতো ভাই মানে আমার আব্বু তাকে বিয়ে করে নেয়।

মুনিয়া চৌধুরীঃতুমি তানজিনের ছেলে?

আমিরঃহ্যা আমি সেই তানজিনের ছেলে যাকে আপনার স্বামী ভালোবাসত। আপনার করা অপরা’ধের শোধ তোলার জন্যই আপনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। আপনারও বোঝা উচিৎ ছিল।

আমির এরপর এগিয়ে এসে মোনালিসাকে বলে,
‘আমি জানি তুই আমার প্রেমে পাগল।কিন্তু জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায়না, পেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়না তাই ভালো হবে যদি তুই আমাকে ভুলে যাস। আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি রে। দেখবি তোর জীবনে এমন একজন মানুষ ঠিকই পাবি যে তোকে ভালোবাসবে।’

মোনালিসা উঠে দাড়িয়ে নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছ,
‘তুমি ঠিকই বলেছ আমির ভাই। একতরফা ভালোবাসায় কারো প্রেমে পাগল হয়ে যাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু কখনো তার মন পাওয়া যায়না।’

মোনালিসার কথাটা শুনতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য যে একতরফা ভালোবাসার বিপরীতে খুব কম সময়েই বিপরীত দিক থেকে ভালোবাসা পাওয়া যায়। একতরফা ভালোবাসায় আমরা যতই পাগল হয়ে যাই না কেন সেই ভালোবাসা পূর্ণতা না পাওয়ার বেশি ✨ তাই তো সবসময় তাকেই ভালোবাসা উচিৎ যে আমাদের ভালোবাসবে ✨
>>The End

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here