প্রেমের পরশ পর্ব -১০

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বারান্দার মধ্যেই দাড়িয়ে ছিল। এখনো প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাই ছোয়া কোথাও যেতে পারছে না। ছোয়া খুব বিরক্ত ছিল এই কারণে। নাদিয়াও আজ ভার্সিটিতে আসে নি। যার কারণে ছোয়া আরো একা হয়ে গেছে। তবে শুধু ছোয়া একা নয় আরো অনেকেই বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।

ছোয়া দাড়িয়েই ছিল এমন সময় তার পাশে কেউ বলে,
‘আমি কি তোমার পাশে দাড়াবো?’

পুরুষালি কন্ঠস্বর কানে আসতেই ছোয়া নিজের ভ্রু কুচকে ফেলে। অতঃপর বাকা চোখে তার সামনে এসে দাড়ানো তোরাবকে দেখে। ছোয়া চেনে তোরাবকে। ভার্সিটিতে প্রায় সবাই তোরাবকে চেনে। কারণ সে দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি মেধাবী স্টুডেন্ট। যদিও রাজনীতির সাথে জড়িত তবে মা’রামারি হানাহানি থেকে দূরেই থাকে সে। বরং সবাইকে সাহায্যই করে।

ছোয়া তোরাবের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘এই জায়গাটা তো আমি কিনে নেই নি৷ তাই আপনি দাড়ান তাতে কোন সমস্যা নেই।’

তোরাব ছোয়ার পাশে দাড়িয়ে বলে,
‘বৃষ্টি তোমার কেমন লাগে?’

ছোয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘বৃষ্টি আমার একদম ভালো লাগে না। ছোটবেলা থেকেই আমার বৃষ্টি অপছন্দ।’

তোরাব অবাক হয়ে জানতে চায়,
‘কেন? বৃষ্টিও কারো অপছন্দ শুনতেও অবাক লাগছে!’

ছোয়া বলে,
‘আমাএ ভালো লাগে না বৃষ্টি, রাস্তাঘাট কাদায় ভড়ে যায়, ঘর থেকে বের হওয়া যায়না। এসব কারণেই আমার বৃষ্টি অপছন্দ।’

তোরাব বুকে হাত দিয়ে বলে,
‘বৃষ্টিকে অন্তর থেকে, মনের গভীর থেকে অনুভব করার চেষ্টা করো। দেখবে এই বৃষ্টির প্রেমে পড়ে যাবে।’

ছোয়া আর কিছু বলার আগেই দেখতে পায় আমান ছাতা মাথায় দিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তোরাবেরও নজর পড়ে আমানের দিকে। তোরাব আমানকে দেখেও স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে থাকে। তবে আমান ছোয়ার পাশে তোরাবকে দেখে স্বাভাবিক থাকতে পারে না। তাই একপ্রকার দৌড়ে এসে আমান ছোয়াকে বলে,
‘বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে। তুই তাড়াতাড়ি আমার সাথে চল।’

ছোয়া যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তোরাব বলে ওঠে,
‘সাবধানে যেও। আই থিংক আমাদের আবার দেখা হবে।’

আমান রাগী দৃষ্টিতে তোরাবের দিকে তাকায়। তোরাবের দৃষ্টি তখনো অনেক স্থির ছিল। আমানের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল তাই সে ছোয়ার হাত ধরে জোরে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। তোরাব তখন মনে মনে বলে,
‘ভালোবাসার মানুষের যত্ন নিতে হয়। তার গায়ে ফুলের টোকাও যাতে না পড়ে সেটা আমাদের দেখতে হয়। নাতো তাকে আরো কষ্ট দিতে হয়!’

১৯.
আমান ছোয়াকে নিজের বাইকের সামনে নিয়ে এসে বলে,
‘কি করছিলি তুই ঐ ছেলেটার সাথে? ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছা করে তাইনা?’

‘ভদ্র ভাবে কথা বলুন আমান ভাইয়া। আমি কার সাথে কথা বলব আর কার সাথে বলব না সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি এই ব্যাপারে বলার কেউ নন।’

আমান ছোয়ার কথা শুনে অনেক বেশি রেগে যায়। ফলস্বরূপ তার গায়ে হাত তুলতে গিয়েও থেমে যায়। নিজেকে শান্ত করে ছোয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আর যেন কোনদিন তোকে ঐ ছেলের আশেপাশে না দেখি।’

ছোয়া কিছু বলে না শুধু কঠোর চোখে আমানের দিকে তাকায়। সে জানে আমান কেন তাকে এভাবে বলছে। কারণ তোরাব আমানের বিরোধী পক্ষের লোক। এই কারণেই ছোয়া এই ব্যাপারে আর কিছু বলে না।

আমান বাইকে উঠে পড়ে। অতঃপর ছোয়াও বাইকে ওঠে। আমান বাইক চালানো শুরু করে। মাঝরাস্তায় যাওয়ার পর ছোয়া বুঝতে পারে আমান তাকে অন্য রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। ছোয়া উৎকন্ঠার সাথে বলে,
‘আমরা এদিকে কোথায় যাচ্ছি?’

আমান নিরুত্তর থাকে। ছোয়ার উৎকন্ঠার পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে আমান আচমকা গাড়ি ব্রেক করে। অতঃপর ছোয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘বাইক থেকে নাম।’

ছোয়া নেমে পড়ে। আমান পুনরায় বাইক স্টার্ট দেয়। ছোয়াকে মাঝরাস্তায় একা রেখে চলে যায়। ছোয়া চিৎকার করে আমানকে ডাকতে থাকে কিন্তু আমান আর ফিরেও তাকায় না। আমান নিজের মনেই বলতে থাকে,
‘তুই ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলে ভালো কাজ করিস নি। এটাই তার শাস্তি।’

ছোয়া রাস্তার মাঝেই অসহায় ভাবে দাড়িয়ে থাকে। পরে আর কোন উপায় না পেয়ে পাশের একটি দোকানের কাছে গিয়ে দাড়ায়। অপেক্ষা করতে থাকে বৃষ্টি কমার জন্য।

২০.
অনেকক্ষণ আগে বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘলা আকাশও ধীরে ধীরে পরিস্কার হতে শুরু করেছে। সৌভাগ্যবশত ছোয়া একটি রিক্সা পেয়ে গেছিল। সেই রিক্সায় করেই ভেজা শরীর নিয়ে বাড়ি ফেরে। তার অনবরত কাশি হচ্ছিল। কাশতে কাশতেই বাড়িতে প্রবেশ করে ছোয়া। তাকে এভাবে বাড়িতে ফিরতে দেখে জান্নাতুল খাতুন উদ্বীগ্ন হয়ে বলেন,
‘ইশ, কিভাবে ভিজে গেছ। তুমি যাও তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে নাও নাহলে শরীর খারাপ করবে।’

ছোয়া তড়িঘড়ি নিজের রুমে যায়। মতিয়া বেগম রুমেই ছিলেন। ছোয়াকে এভাবে কাকভেজা হয়ে ফিরতে দেখে তিনি বলেন,
‘এই ঝড়বৃষ্টির দিনে কলেজে যাওনের কি দরকারডা ছিল? তোর এত পড়াহুনার মানে আমি আমি বুইঝতে পারি না। যা করার কর, আমি আর আমি আর কিছু কইতাম না।’

ছোয়া এসব কথায় তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অতঃপর ভেজা জামাকাপড় বদলে নতুন জামা পড়ে নেয়।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ছোয়া কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে মতিয়া বেগম ছোয়ার কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারেন তার প্রচণ্ড জ্বর। যা দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। মতিয়া বেগম তাড়াতাড়ি করে জান্নাতুল খাতুনকে ছোয়ার শরীর খারাপের কথা বলেন। জান্নাতুল খাতুন প্যারাসিটামল খেতে দেয় ছোয়াকে। মতিয়া বেগম ছোয়ার কপালে জলপট্টি দিতে থাকেন।

জ্বরের ঘরে ছোয়া বলছিল,
‘আমাকে একা ছেড়ে যাবেন না ভাইয়া। আমি এই মাঝরাস্তা থেকে একা কিভাবে যাবো?’

ছোয়ার কথা শুনে জান্নাতুল খাতুন কিছু আন্দাজ করতে পারেন। তিনি শীঘ্রই আমানের রুমে চলে যান। আমান ল্যাপটপ চালাচ্ছিল। জান্নাতুল খাতুন এসে বলেন,
‘কি করেছিস তুই ছোয়ার সাথে? তুই না আজকে ছোয়াকে ভার্সিটি থেকে আনতে গিয়েছিলি তাহলে মেয়েটা একা ফিরেছে কেন? জানিস মেয়েটার জ্বরে গা পু’ড়ে যাচ্ছে।’

আমান তখন বিড়বিড় করে বলে,
‘আমার অন্তরে ছোয়া যে দহন সৃষ্টি করেছে তাতে ওরও একটু পো’ড়া উচিৎ।’

অতঃপর নিজের মায়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘জ্বর হয়েছে ডাক্তার ডাকো। আমার কাছে এসেছ কেন? আমার অনেক জরুরি কাজ আছে। যাওতো এখান থেকে ডিস্টার্ব করিও না।’

জান্নাতুল খাতুন হতাশার শ্বাস ফেলে বিদায় নেন। ছেলেটাকে মানুষ করতে না পারার আফসোস লুকিয়ে ছিল তার দীর্ঘ শ্বাসের আড়ালে।

জান্নাতুল খাতুন চলে যেতেই আমান বলে,
‘আমার প্রিয় জিনিসের পাশে আমি কারো অস্তিত্ব সহ্য করবো না। আমাকে মনে তৈরি হওয়া প্রত্যেক বিন্দু কষ্টের জবাব আমি সবার থেকে নেবো।’

অতঃপর আমান পুনরায় ল্যাপটপ টেপায় মন দেয়।


আকাশে সূর্যদয় হয়েছে। নতুন একটি দিন এলো ধরণীর বুকে। দুইদিন জ্বরে ভোগার পর ছোয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। সামনে যেহেতু পরীক্ষা তাই আর ভার্সিটির ক্লাস মিস করতে চায় না ছোয়া। আজ একটু সুস্থ অনুভব করতেই ভার্সিটির জন্য তৈরি হচ্ছে। মতিয়া বেগম তাকে সমানে বকে যাচ্ছে, তিনি বলছেন,
‘কেবল সুস্থ হইলি একটু আরাম কইরা নে। তা না আজকেই তোকে যেতে হবে।’

ছোয়া তখন বলে,
‘তুমি চিন্তা করো না আম্মু। আমি একদম ঠিক আছি।’

মতিয়া বেগম নিজের মতো বকবক করতে থাকেন। ছোয়া সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

ভার্সিটিতে গিয়েই নাদিয়ার মুখোমুখি হয়। দুই বান্ধবী মিলে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে ক্লাস করতে যায়। দুটো ক্লাস করে ছোয়া আবার একটু অসুস্থ বোধ করে। তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভার্সিটি থেকে বেরোনের উদ্দ্যেশ্যে সবে গেইটের কাছে চলে আসে ছোয়া। এমন সময় তার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ছোয়া মাটিতে পড়ে যেতে ধরে এমন সময় কেউ তাকে আগলে নেয়। ছোয়া নিভু নিভু স্বরে তাকে আগলে নেওয়া ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
‘তোরাব,,,,’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here